বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৪, ০৮: ৪২

৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় হিসেবে আপাতত আগস্ট মাস নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন। উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার জন্য নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দিয়েছেন ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. শরীফুল ইসলাম। 

বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ
বাংলা: বাংলা ব্যাকরণ অংশের জন্য সন্ধি, প্রকৃতি ও প্রত্যয়, উপসর্গ, সমাস, দ্বিরুক্তিসহ শব্দ গঠনের বিভিন্ন পদ্ধতি ভালো করে পড়ুন। পাশাপাশি বাক্যের প্রকারভেদ, সরল-জটিল ও যৌগিক বাক্যের রূপান্তর, বাগ্‌ধারা ও প্রবাদ-প্রবচন দেখে নিন। তৎসম ও অতৎসম শব্দের বানান, ‘শ-স-ষ’-এর বানান, ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান গুরুত্ব অনুসারে পড়ুন। সারাংশ-সারমর্ম, ভাব সম্প্রসারণ, সংলাপ, চিঠি-প্রতিবেদন বা আবেদনপত্রের ক্ষেত্রে শুধু ফরম্যাট দেখে নিলেই যথেষ্ট। বাকিটা আপনার লেখার দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। গ্রন্থ সমালোচনা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। উইকিপিডিয়া থেকে বিখ্যাত লেখকদের প্রসিদ্ধ সাহিত্যকর্মটির মূলভাব দেখে নিন এবং চরিত্রগুলো নোট করে রাখুন। রচনার জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার হয় না। এ অংশে জানাশোনা বিষয় থেকেই প্রশ্ন আসে। আপনাকে শুধু ভাষাগত দক্ষতার প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

ইংরেজি: ইংরেজি ভালো করার জন্য ভোকাবুলারিতে সমৃদ্ধ হতে হবে ও গ্রামারে দক্ষ হতে হবে। যাঁরা ভোকাবুলারি কম জানেন, তাঁদের গ্রামার অংশে জোর দেওয়া উচিত। Thematic Question-এ Passage থেকে হুবহু কপি করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে বড় বাক্যকে ভেঙে Simple Sentence দিয়ে উত্তর করবেন। পাশাপাশি Summary, Letter to Editor এবং Essay-তে Passive, Compound ও Complex বাক্য ব্যবহার করে লেখাকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করতে হবে। 

বাংলাদেশ বিষয়াবলি: বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ভালো করার জন্য সংবিধানের ওপর ভালো দখল রাখতে হবে। বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের মানচিত্র আঁকা রপ্ত করতে হবে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যা, জাতীয় সম্পদ, নির্বাচনের ব্যবস্থা, সরকারের অঙ্গসমূহ—এসব বিষয়ে বিস্তারিতভাবে পড়তে হবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ও মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কেও পূর্ণাঙ্গ ধারণা রাখা জরুরি। বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে মূলত সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তাই পড়ার পাশাপাশি লেখার কৌশলেও গুরুত্ব দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি: আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ক্ষেত্রে কনসেপচুয়াল অংশের জন্য প্রস্তুতি হবে কনসেপ্টের ওপর নির্ভর। বাজারে প্রচলিত বইগুলো থেকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে জানতে হবে। প্রয়োজনে গুগলের সহায়তাও নিতে পারেন। মূলত সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর সূক্ষ্ম ধারণা থাকলেই আপনি কনসেপচুয়াল প্রশ্নের উত্তর করতে পারবেন। আর ইমপেরিক্যাল অংশের জন্য আন্তর্জাতিক বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহের নিয়মিত খোঁজখবর রাখার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে পত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতা গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে এবং বিষয়ভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত ও উক্তিগুলো নির্দিষ্ট খাতায় নোট করে রাখুন। যথাসম্ভব উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্যের মানচিত্র আঁকা রপ্ত করুন। ইদানীং নীতিপত্র বা প্রবলেম সলভিং-সংক্রান্ত প্রশ্ন আসছে না। তবু ফরম্যাট দেখে রাখতে পারেন।

সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: সাধারণ বিজ্ঞান অংশের জন্য ‘আলো, শব্দ, খাদ্য ও পুষ্টি, রোগব্যাধি, মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডল, জৈবপ্রযুক্তি’ বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তি অংশের জন্য কম্পিউটার সংগঠন, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, কার্শফের সূত্র, ট্রানজিস্টর, ট্রান্সফরমার, পাওয়ার জেনারেশন, রোধ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে মুখস্থভিত্তিক প্রস্তুতি না নেওয়াই ভালো। কারণ, এ বিষয়ে ছোট আকারে প্রশ্ন করা হয়। তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখাই যথেষ্ট।

গণিত: মাধ্যমিক পর্যায়ের সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিতের পুরোনো সিলেবাসের বই সংগ্রহ করে সেট ও ভেনচিত্র, বাস্তব সংখ্যা, বীজ গাণিতিক রাশি, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত-সমানুপাত, ধারা, স্থানাঙ্ক জ্যামিতি, দ্বিপদী উপপাদ্য, ত্রিকোণমিতি, পরিমিতি, সূচক ও লগারিদম অনুশীলন করুন। জ্যামিতির জন্য বেছে বেছে উপপাদ্য চর্চা করুন। অনুশীলনী থেকেও গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্য শিখে রাখুন। উচ্চমাধ্যমিকের গণিত বই থেকে বিন্যাস, সমাবেশ ও সম্ভাবনার প্রশ্নগুলো সমাধান করুন।

মানসিক দক্ষতা: মানসিক দক্ষতার বিষয়ে প্রস্তুতির প্রাথমিক ধাপ হলো বিগত বছরগুলোতে আসা সব প্রশ্ন সমাধান করা। পাশাপাশি IndiaBIX, Examveda, Sawaal থেকে অনুশীলন করে নিজের মানসিক দক্ষতা যাচাই করতে পারেন।

সাধারণ পরামর্শ:

  • বেশি বেশি লেখার অনুশীলন করুন। এর মধ্য দিয়ে লেখার গতি বাড়বে।
  • লেখায় ডেটা, কোটেশন, ম্যাপ, চার্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লেখার সময় এ বিষয়গুলো ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
  • প্রাঞ্জল ভাষা, নির্ভুল বানান ও ঘষামাজাহীন লেখার ওপর জোর দিন।
  • অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা দিয়ে অনেক লেখার পরিবর্তে অল্প লেখায় প্রাসঙ্গিক তথ্য ফুটিয়ে তুলুন।
  • একই নম্বরের সব প্রশ্নের উত্তর যেন একই মাপের হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। ১০ নম্বরের একটি প্রশ্নের উত্তর ভালো পারেন বলে চার পৃষ্ঠা লিখলেন, আবার অন্য প্রশ্নের উত্তর কম পারার কারণে দুই পৃষ্ঠা লিখলেন, এটি হবে না। কারণ, এটি পরীক্ষকের কাছে আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দেয়।
  • মুখস্থভিত্তিক প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় ভালো করা কঠিন। তাই প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে যান। পরীক্ষার হলে প্রশ্ন দেখে উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগের মাধ্যমে উত্তর করে আসতে হবে। আর আপনার পড়াশোনা যত বেশি হবে, পরীক্ষার হলে মস্তিষ্ক তত ভালো সাড়া দেবে। 

অনুলিখন: শাহ বিলিয়া জুলফিকার।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত