প্রেমের সম্পর্কে বৈচিত্র্য আনা জরুরি

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২: ৩২
Thumbnail image

সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদি করতে আজকাল টোটকা পাওয়া যায় এথায়-সেথায়। বলা হয় নিজেকে উজাড় না করে রোজ একটু একটু করে খরচ করতে। কুয়া থেকে রোজ ঘড়ায় তোলা জলের মতো। নিজেকে উজাড় করা বলতে নিজের সমস্ত হৃদয় মেলে না ধরে চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেওয়ার কথাই তো হয় আজকাল। কারণ হৃদয়ের দাম অত সস্তা নয় এখনো! যেটা নিয়ে কথা হচ্ছিল, বৈচিত্র্য। সম্পর্কের এই বৈচিত্র্য হারিয়ে গেলে আগ্রহ কমে যেতে পারে। তবে সম্পর্কটা গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গা থেকে সরে আসা যাবে না।

সম্পর্কে বিনিয়োগ করুন
পরস্পরের কাজে প্রশংসা, ধন্যবাদ বলা, মনোযোগ দেওয়া, সহযোগিতা করা সম্পর্কের জন্য এক কথায় বিনিয়োগ। বিয়ে করেছে বলে একজন আরেকজনের ওপর আধিপত্য় বিস্তার করবে, সেটা করা যাবে না। কারণ বিয়ে যেহেতু চুক্তি, তাই যেকোনো সময় চুক্তি ভাঙাও সম্ভব।

কথা শুনুন
এখানে একটা ব্যাপার আছে। দম্পতিরা কি আসলে মনোযোগ দিয়ে নিজেদের কথাগুলো শোনেন? আমরা বলি বেশি, শুনি কম এবং শুনতে চাইও না। গবেষণা বলছে, একটা নেতিবাচক আচরণ ইমোশনাল ব্যাংক থেকে পাঁচ গুণ ইতিবাচক আচরণের টাকা খরচ করিয়ে দেয়; অর্থাৎ একটা খারাপ আচরণ পাঁচটা ভালো আচরণকে নষ্ট করে দেয়।

মডেল: সোহান ও প্রিতি, পোশাক: কে ক্রাফট, মেকআপ:শোভন মেকওভার, ছবি: হাসান রাজাপ্রতিদিন সম্পর্কের যত্ন নিন
আমরা ব্যাংকে টাকা জমিয়ে রাখি, যাতে বিপদে কাজে লাগে। প্রতিদিন মাটির ব্যাংকে যেমন অল্প অল্প করে পয়সা জমাই, সে রকম আজ থেকে শুরু করুন। জিজ্ঞেস করুন, তোমার দিনটা কেমন ছিল। ৩৬৫ দিনের এক দিন হিরার নেকলেস দেওয়ার চেয়ে প্রতিদিনের ছোট ছোট যত্ন অনেক বেশি মূল্যবান। প্রতিদিনকার ছোট ছোট যত্ন মানে আমি আমার সম্পর্কে প্রতিদিন বিনিয়োগ করছি। আমি থেকে আমরায় পরিবর্তিত হচ্ছি। সম্পর্ক প্রতিদিন যত্ন করতে হয় চারাগাছের মতো। না হলে সম্পর্ক মরে যায়। এই যত্ন প্রতিদিন চর্চার ব্যাপার।

প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটানকোয়ালিটি টাইম কাটান
আমরা সব থেকে কম কোয়ালিটি টাইম দিই জীবনসঙ্গীকে। প্রথম দেখা করতে যাওয়ার, সুন্দর করে নিজেকে উপস্থাপন করার জায়গাটা থেকে নারী-পুরুষ উভয়েই বিয়ের পর অনেক দূরে সরে আসি। আবার ঘন ঘন দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলি—আহা, ও কেন বদলাল? আমি নিজেও যে বদলে গেছি, সেই আয়নাটা নিজের চোখের সামনে আদতে আমরা ধরি না। একটু খেয়াল করে দেখুন, কোথায় কোথায় বদলেছেন প্রেমের দিনগুলো থেকে বর্তমান বিবাহিত দিনগুলোতে।

মডেল: সোহান ও প্রিতি, পোশাক: কে ক্রাফট, মেকআপ:শোভন মেকওভার, ছবি: হাসান রাজাযা করবেন
⦁    চোখে চোখ রেখে কথা বলুন।
⦁    কথা শুরু হলে হাতের মোবাইল ফোন বা অন্যান্য ডিভাইস কিংবা টিভির রিমোট দূরে রাখুন। 
⦁    আপনার ভালোবাসার মানুষটা কী বলছে, সেটা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
⦁    কথা বলার জন্য কথা বলবেন না। আপনার পাশের মানুষটি কী বলতে চাইছি সেটা বুঝুন, সেটাকে নিয়ে দ্বিতীয়বার নিজের মনেই চিন্তা করুন। আপনার সঙ্গে তেমনটা হলে আপনার নিজের কী মনে হতো, সেটা ভাবুন। আপনার ভালোবাসার মানুষটির সব অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। তারপরে মুখ খুলুন। কিছু একটা বলতে হবে বলেই কথা বলবেন না। সেটা একদম গ্রহণযোগ্য নয়।
⦁    একসঙ্গে দুজনেই পছন্দ করেন এমন কিছু কাজ সাপ্তাহিক তালিকায় রাখুন। যেমন—হাঁটতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, বই পড়া ইত্যাদি।
⦁    পাশের মানুষটি যখন আপনাকে কিছু বোঝাচ্ছেন, তখন তার প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করুন।
⦁    নিজস্ব মতামতের অংশীদারত্বে রুটিন ঠিক করুন।
⦁    কোনো প্রসঙ্গে আপনার সঙ্গে আপনার জীবনসঙ্গী বা ভালোবাসার মানুষটি আলোচনা করতে চাইলে এড়িয়ে যাবেন না। এড়িয়ে যাওয়া জিনিসটি সবাই বোঝে। সেটা সম্পর্কের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকারক।
⦁    উপদেশ দেওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।
⦁    আপনি যদি কোনো বিষয়ে মনে করেন যে আপনি তাঁকে সাহায্য করতে সক্ষম, সেটা জানান।মডেল: সোহান ও প্রিতি, পোশাক: কে ক্রাফট, মেকআপ:শোভন মেকওভার, ছবি: হাসান রাজামনে রাখতে হবে
দাম্পত্য একটা মাধুর্যপূর্ণ সম্পর্ক। এই সম্পর্কে কীভাবে ইতিবাচক ভারসাম্য বাড়বে, সেটা নিয়ে কমবেশি আমরা সবাই ভাবি। ছোট ছোট কাজে যত্ন দেখানো, আমি তোমার পাশে আছি বোঝানো, বের হওয়ার আগে বলে যাওয়া অথবা সারা দিন কাজ করে সে যখন ক্লান্ত, তখন তাকে এক কাপ চা বানিয়ে পাশে বসা— এগুলো ধীরে ধীরে আস্থা বাড়ায়। তবে এই কাজগুলো কিন্তু দুজনকেই করতে হবে, শুধু একজন করলে কাজ হবে না।

লেখক: চিকিৎসক ও সাইকোথেরাপি প্র‍্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত