কম্বোডিয়ায় দেখার আছে অনেক কিছু

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৭: ২৬
Thumbnail image

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া ভ্রমণে দিন দিন মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি স্থাপনা দুই দিক থেকেই সমৃদ্ধ দেশটি। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর মন্দির, বন্য প্রাণীতে ভরপুর গহিন অরণ্য, পাহাড়, সমুদ্রসৈকত—কী নেই সেখানে! চলুন তবে পরিচিত হওয়া যাক কম্বোডিয়ার ভ্রমণে অবশ্যই যাওয়া উচিত এমন কিছু ভ্রমণ গন্তব্যের সঙ্গে। 

অ্যাংকরের মন্দির
খেমার রাজ্যের রাজধানী ছিল অ্যাংকর। এখানকার মন্দিরগুলোর টানে প্রচুর পর্যটক পাড়ি জমান কম্বোডিয়ায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত অ্যাংকর ওয়াট। এই কমপ্লেক্সে চমৎকার স্থাপত্য রীতির বেশ কটি মন্দির আছে। মধ্যযুগে জঙ্গল সাফ করে তৈরি করা হয়েছিল মন্দিরগুলো। পাথরে খোদাই করা মুখের অবয়বের জন্য বিখ্যাত বেয়ন মন্দিরটিও আকৃষ্ট করে দর্শনার্থীদের। তা প্রোমকেও তালিকা থেকে বাদ দিলে চলবে না, নানা খোদাই শোভিত প্রাচীন মন্দিরে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছে গাছের মোটা শিকড়-বাকড়।

প্রাচীন খেমারদের স্থাপিত মন্দিরগুলো বিশাল এলাকা নিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। তাই সময় নিয়ে দেখতে হয়। বিশেষ করে বলতে হয় বান্তিয়ায় স্রেই মন্দির, বেং মিয়ালিয়ার ধ্বংসাবশেষ এবং মায়ানশৈলীর পিরামিড মন্দির প্রাসাত থমের কথা। 

নমপেনের রয়েল প্যালেসের সামনে হাঁটছেন বৌদ্ধভিক্ষুরাদক্ষিণের দ্বীপ
থাইল্যান্ড কিংবা ইন্দোনেশিয়ার সৈকতগুলোর মতো এতটা বিখ্যাত না হলেও কম্বোডিয়ার দক্ষিণের দ্বীপগুলোতে আপনার চমৎকার সময় কাটবে। এখানে পর্যটকের চাপও কম। কোহ রং এবং কোহ রং সেনলোয়েম এসব সৈকতের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত। কোহ সদাচ দ্বীপপুঞ্জ এবং এখনো সে অর্থে উন্নয়নের ছোঁয়া না পাওয়া কোহ কং দ্বীপও আলাদা সময় পাওয়ার দাবি রাখে। 

নমপেন
যুদ্ধবিধ্বস্ত অতীতের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসা চমৎকার এক শহর কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন। এখানকার বিলাসবহুল সব হোটেল আর মুখরোচক সব খাবারের জন্য বিখ্যাত রেস্তোরাঁগুলো পর্যটকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। তিনটি বড় নদীর মিলনস্থলে তৈরি হওয়া শহরটির আকর্ষণ আরও বাড়িয়েছে। ফরাসি উপনিবেশ থাকার সময় তৈরি হওয়া বাড়িগুলোও দেখার মতো। 

কার্ডামম পর্বতমালায় ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটককেমপোত ও কেপ
এই প্রদেশ দুটির অবস্থান পাশাপাশি। কেমপোতে একাকী কম খরচে ভ্রমণে বের হওয়া পর্যটকদের জন্য যেমন হোস্টেলের ব্যবস্থা আছে, তেমনি আছে নদীর ধারের রিসোর্ট ও বিলাসবহুল হোটেল। নদীতে কায়াকিং করতে পারেন। তেমনি সাইকেল ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতে পারেন গ্রামীণ জনপদে। 

সাগরের তীরে অবস্থিত কেপের আলাদা নাম আছে তার কাঁকড়ার বাজারের জন্য। যারা নিভৃতে প্রকৃতির কাছে কিছুটা সময় কাটাতে চান, তাঁরা ঘুরে আসতে পারেন কেপ ন্যাশনাল পার্ক ও কাছের কোহ তোনসে (রেবিট আইল্যান্ড) এলাকায়। 

কার্ডামম পর্বতমালা
কার্ডামম পর্বতমালার ২০ হাজার ৭৪৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে কার্ডামম রেইনফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ। শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত একটি এলাকা এটি। এই অঞ্চলের স্টাং এরেং উপত্যকা, খানং খার অসমতল ঘাসবহুল জমি, বোতাম সাঁকোর জাতীয় উদ্যানের চমৎকার সব ইকো লজ আর তাতাই বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের জীবজন্তু ও জলপ্রপাত মন্ত্রমুগ্ধ করবে আপনাকে। 

অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত মনদালকিরিসিয়েম রিয়াপ
অ্যাংকরের মন্দিরগুলো প্রবেশপথ হিসেবেই সিয়েম রিয়াপকে অনেক চেনেন। তবে এই শহরটির অসাধারণ একটি ভ্রমণ গন্তব্য হওয়ার জন্য নিজ গুণই যথেষ্ট। এখানকার দুর্দান্ত সব হোটেল, রেস্তোরাঁ আকৃষ্ট করবে আপনাকে। শহর থেকে বেরোলেই তনলে সাপ হ্রদে কয়েকটি ভাসমান গ্রামের দেখা পেয়ে যাবেন। 

এখানকার নাইট মার্কেট বা রাতের বাজার, রেশমের খামার, ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের দোকানেরও আলাদা নাম আছে।

মনদালকিরি
এই প্রদেশে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপনাকে স্বাগত জানাবে ঢেউখেলানো সবুজ পাহাড়, গহিন অরণ্য ও নানা ধরনের বন্য প্রাণী। এখানকার কেই সেইমা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে ঘুরে বেড়ানোর সময় দেখা পেয়ে যেতে পারেন হনুমান, উল্লুক, সাম্বার হরিণ কিংবা বন গরুর। পাহাড়ি এলাকায় বাস করা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনও উপভোগের সুযোগ মিলবে। চোখ জুড়ানো কয়েকটি জলপ্রপাতের জন্যও পরিচিত জায়গাটি। 

বেতমবং শহরের বাঁশের ট্রেনবেতমবাং
সাংকের নদীর তীরে অবস্থিত বেতমবং শহরে এখানো সেই পুরোনো ফরাসি ঔপনিবেশিক শহরের ছাপ পাবেন। রেস্তোরাঁ, আর্ট গ্যালারি সবকিছুই ফরাসি স্থাপত্যের চিহ্ন। শহর থেকে বেরোলেই চমৎকার কিছু মন্দিরের দেখা পাবেন।

এখানকার বিখ্যাত ব্যাম্বু ট্রেন বা বাঁশের ট্রেনে চড়ার সুযোগও হাতছাড়া করেন না পর্যটকেরা। রেললাইন ধরে ছুটে চলা জিনিসটা দেখলেই চমকে উঠবেন এলাকায় নতুন যে কেউ। ছোট্ট একটা বাঁশের কাঠামোর ওপর বসে আছে ১০-১২ জন। ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে অবলীলায় চলে যাচ্ছে অদ্ভুত এই যান। হ্যাঁ, এটিই কম্বোডিয়ার বিখ্যাত বাঁশের ট্রেন বা নরি। 

প্রিয়াহ ভিহিয়ার মন্দিরের অবস্থান একটি পর্বতের ওপরপ্রিয়াহ ভিহিয়ার মন্দির
প্রিয়াহ ভিহিয়ার মন্দিরটি দাঁড়িয়ে আছে ডাংক্রেক পর্বতমালার ওপরে। খামেরদের তৈরি করা এই মন্দিরটি বিভিন্ন শাসকের সময় সম্প্রসারিত হয়। এটি ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। মন্দির কমপ্লেক্স থেকে আশপাশের বড় একটি এলাকার বন-পাহাড়ময় শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ মিলে। 

ক্রাতিয়ে
মেকং নদীতে স্বাদু পানির ইরবাতি ডলফিন দেখার জন্য জায়গাটির আলাদা নাম আছে। নমপেন থেকে উত্তর-পূর্ব কম্বোডিয়া কিংবা লাওসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী বা জংশন হিসেবেও পরিচিতি আছে জায়গাটির। এখান থেকে মেকং নদীতে সূর্য ডোবার দৃশ্যও উপভোগ্য। কাছের কোহ ত্রং দ্বীপে ঘুরে আসার সুযোগটাও হাতছাড়া করা উচিত নয়। ক্রাতিয়ের উত্তর অংশে চমৎকার কিছু হোম স্টে বা ঘরোয়া পরিবেশে থাকার জায়গা পাবেন। ইচ্ছা করলে সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াতে পারেন শহর ও আশপাশের গ্রামে কিংবা নৌকা নিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন মেকং নদীতে। 

সূত্র: লোনলি প্ল্যানেট, ট্রাভেল ট্রায়াঙ্গল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত