আপনি চাপা স্বভাবের, নাকি মিশুক—কোনটি সেরা? 

তুষার মিয়া
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩, ১৮: ৫৮
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৩, ১৯: ১৯

আপনি খুব হাসিখুশি থাকেন বলেই মানুষ আপনাকে ভেবে নেয়—আহ্ মানুষটা কী ভালো! খুব মিশুক। 

কিন্তু ভেতরে-ভেতরে আপনি আসলে উপলব্ধি করেন—মানুষ যা ভাবে তা আপনি নন। মানুষের সামনে হয়তো কোনোরকমে মানিয়ে নেন। কিন্তু এত হাঙ্গামা আসলে আপনার পছন্দ নয়। আপনি নিজের সীমিত সার্কেল কিংবা নিজস্ব ভুবনে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন। 

আবার এমনও দেখা যায়, মানুষ আপনাকে যতটা চাপা স্বভাবের ভাবে, ততটা চাপা আপনি নন। জুতসই জায়গা পেলে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারেন। 

এই যে দ্বৈত স্বভাব নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকে এটাকে কী বলে? এমনটা কেন হয়? এই ধরনের মানুষগুলো আসলে না চাপা স্বভাবের, না মিশুক। তারা মাঝামাঝি একটা অবস্থানে থাকেন। 

মজার বিষয় হলো-প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে, মিশুক বা এক্সট্রোভার্টেরা যোগাযোগ স্থাপনে খুব ভালো হন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে উল্টো চিত্র। তিন শ বিক্রয়কর্মীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণা দেখা গেছে, যারা ইনট্রোভার্ট এবং এক্সট্রোভার্টের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকেন তারাই প্রতিষ্ঠানের সেরা। 

গবেষণায় দেখা গেছে, চাপা স্বভাব কিংবা ইনট্রোভার্ট মানুষেরা নিজের সঙ্গই সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন। কিছুটা স্বার্থপরের মতো নিজেকে খুশি করেই তাঁরা বেছে থাকতে পছন্দ করেন। কোনো যানবাহনে চড়লে তাঁদের বেশির ভাগই জানালার পাশের সিটে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। গাড়ি জোরে চলছে নাকি ধীরে, স্পিকারে কোন গান বাজছে কিংবা যাত্রীরা কি নিয়ে কথা বলছেন—এসব বিষয় জানার চেয়ে বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্যে মন দেওয়াটাই তাঁরা বেশি উপভোগ করেন। এ ধরনের মানুষ শ্রোতা হিসেবে বেশ ভালো। নিজেদের গুটিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। সাধারণত চুপচাপ, লাজুক এবং স্বল্পভাষী হন। বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন। তবে বন্ধুর জন্য এরা বড় ধরনের ত্যাগ স্বীকারেও প্রস্তুত থাকেন। কোনো কাজ করার আগে অনেক চিন্তা ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেন। 

এরা সামাজিক অনুষ্ঠান সযত্নে এড়িয়ে চলেন। বেশির ভাগই পড়ুয়া স্বভাবের হন। খুব সহজে নিজের বিষয়ে কথা বলেন না। তবে মন মতো কাউকে পেলে তাঁর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেই কাটিয়ে দিতে পারেন। 

অন্যদিকে যারা এক্সট্রোভার্ট বা মিশুক স্বভাবের—তাঁরা একদম অপরিচিত কারও সঙ্গেও প্রথম দেখায়ই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আলাপ জুড়ে দিতে পারেন। রাজনীতি, ক্রিকেট, বাজারের হালচাল—আলাপের বিষয় যা-ই হোক না কেন কথা চালিয়ে যেতে তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। এমনকি সামনের লোকটি মনোযোগ দিয়ে কথা না শুনলেও তাঁদের কিছু যায় আসে না। 

এ ধরনের ব্যক্তিরা মিশুক স্বভাবের হয়। ফলে সবার সঙ্গেই খুব সহজেই মিশতে পারেন। হুজুগে এরা নানা কাণ্ডকারখানা ঘটিয়ে ফেলেন। যেকোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন হুট হাট। এ জন্য অবশ্য তাঁরা অনেক সময় ঝামেলায়ও পড়েন। এরা একা থাকতে পারেন না মোটেও। এমনকি প্রয়োজনে কোথাও একা যেতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। সব সময় সঙ্গী হিসেবে তাঁদের কাউকে না কাউকে লাগবেই। 

তবে মিশুক মানুষের নেতৃত্বগুণ অনেক বেশি হয়। আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়াও তাঁদের স্বভাব। সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করে বিপদে পড়েন। কোনো কথা পেটের ভেতর রাখতে পারে না। 

সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক্সট্রোভার্টদের উপস্থিতি খুব বেশি হয়। এরা নিজেদের প্রতিভাকে মানুষের সামনে প্রকাশ করতে ভালোবাসেন। এক্সট্রোভার্ট এবং ইনট্রোভার্টের বাইরের আর এক প্রজাতির মানুষ আছে যাদের বলা হয় অ্যাম্বিভার্ট। 

এরা নতুন মানুষের সঙ্গে সহজেই পরিচিত হতে পারে তবে সহজেই কাউকে ঘনিষ্ঠ বানায় না। বাইরে যেতে এদের কোনো আপত্তি নেই। তবে ঘরে ফেরাটা তাঁদের কাছে অনেক স্বস্তিদায়ক। অ্যাম্বিভার্টেরা খুব দ্রুত পরিস্থিতি বুঝতে পারেন এবং ভেতরে যেমনই হোক দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। পেশাদার জীবনে তাঁরা প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুনের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নিতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে নিজের রং বদলে ফেলতে তাঁদের কোনো সমস্যা হয় না। তবে নিজের বন্ধুদের সামনে তারা আবার একদম রিয়েল। 

আবার ধরুন একজন মানুষ অনলাইনে খুব অ্যাকটিভ। একের পর এক ফেসবুক পোস্ট দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি দারুণ জনপ্রিয়। সেই লোকটা বাস্তব জীবনে হয়তো ভীষণ চাপা স্বভাবের। ফেসবুক ফ্রেন্ড বা অনুসারীদের সঙ্গে কোথাও দেখা হলে নিজের পরিচয়টাও দেন না। কেউ চিনে ফেললে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে চান। 

এসব বিষয় চিন্তা করলে মানসিকতার দিক দিয়ে আপনি চাপা স্বভাব, নাকি মিশুক, নাকি দুটিরই সংমিশ্রণে অ্যাম্বিভার্ট—এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন। কেউ হয় তো কোনো একটি অংশে নিজেকে কল্পনা করে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকার অনুভূতি নিচ্ছেন। তাঁদের উত্তেজনায় পানি ঢেলে বলতে হচ্ছে, এই তিন ধরনের মানুষের মধ্যে আসলে কেউই সেরা নয়। কেউ কারও চেয়ে এগিয়ে নয়। প্রত্যেকটা মানুষ আসলে ভিন্ন রকম। 

আপনি যদি ইনট্রোভার্ট হন, তারপরও আপনার জন্য কোনো অনুপ্রেরণা কিংবা মোটিভেশনের প্রয়োজন নেই। কারণ আপনার ব্যক্তিত্বই চাপা স্বভাবের। এটা কোনো অস্বাভাবিকতা নয়। তাই নিজেকে বদলানোর মোটিভেশন না নিলেও তাঁদের দিব্যি চলে যায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত