রূপচর্চার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবেছেন কি

সানজিদা সামরিন, ঢাকা
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ০২
Thumbnail image

গত কয়েক বছরে রূপচর্চার ধরন পুরো বিশ্বেই বদলেছে। শুধু ক্লিনজার আর ময়েশ্চারাইজারে ঠেকে নেই ত্বক সচেতনরা। ক্লিনজার থেকে ময়েশ্চারাইজারে বা সানস্ক্রিনে এসে ঠেকতে পার হতে হচ্ছে আরও দুই থেকে চার ধাপ। চুলের ক্ষেত্রে মাথার ত্বকে হট অয়েল ম্যাসাজ থেকে শুরু করে প্যাক, দুই ধাপে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার,  সেরামের পাট চুকিয়ে এখন অনেকেই টনিকে এসে থামছেন। এখানেই শেষ নয়। মেকআপ তোলার সময়ও একাধিক ধাপ মেনে চলছেন এখন বেশির ভাগ নারী। কেউ কেউ ত্বক ও চুলের সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে অনেক ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করছেন। আবার ট্রেন্ড অনুসরণ করার উদ্দেশে ড্রেসিং টেবিলের ওপর ভুরি ভুরি প্রসাধনী সাজিয়ে রাখছেন, এগুলোর সংখ্যা নেহাত কম নয়। 

মোদ্দাকথা হলো হলো, এই যে এত কিছু করেও বা এত যত্নের পরও ত্বক আর চুলের লক্ষণীয় উন্নতি যারা দেখতে পাচ্ছেন না, তাঁদের কাছে প্রশ্ন, রূপচর্চার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা কি ভেবেছেন? বিশ্বায়নের এ যুগে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালে। আবার ইউটিউব আর ইনস্টাগ্রাম খুললেই ত্বক ও চুলের যত্নবিষয়ক যেসব ভিডিও ভেসে আসে সেগুলোও পরোক্ষভাবে আমাদের উদ্বুদ্ধ করে বিভিন্ন প্রসাধনীর কেনার জন্য।

তবে যত যাই করুন না কেন, দিন শেষে আমাদের ত্বক আর চুলের চাহিদাটুকু পূরণই কিন্তু যথেষ্ট। রূপবিশেষজ্ঞ ও বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ কেয়ারের স্বত্বাধিকারী শারমিন কচি বলেন, ‘ত্বক ও চুলের নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা রয়েছে। সেসব চাহিদা আবার ত্বক ও চুলের ধরন ভেদে হয়। প্রয়োজন না থাকলে রোজ একাধিক প্রসাধনী ব্যবহারে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হতে পারে।’ ত্বকের ক্ষতি হচ্ছে কি না বুঝবেন কীভাবে
ত্বক ও চুলের অতিরিক্ত যত্ন নিতে গিয়ে অতিমাত্রায় প্রসাধনী ব্যবহার করার কারণে যে সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— 

অতিরিক্ত পরিষ্কারের কারণে ত্বক অতিমাত্রায় শুষ্ক ও চুল রুক্ষ হয়ে ওঠে। 
মাত্রাতিরিক্ত ও ত্বকের ধরন না বুঝে এক্সফলিয়েশনের কারণে অ্যালার্জি, র‍্যাশ কিংবা লালচে ভাব দেখা দেয়। 
ত্বকের ধরন না বুঝে সেরাম ব্যবহারের কারণে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব বেড়ে যায়।
চুল উপযোগী শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার বাছাইয়ে ভুল হলে বা না বুঝে হেয়ার টনিক ব্যবহার করলে চুল পড়া ও মাথার ত্বকের চুলকানি বেড়ে যায়।

করণীয়
শারমিন কচি বলেন, ‘প্রতিদিনের স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতা মেনে চললেই ত্বক ও চুলের সমস্যার ৮০ ভাগ সমাধান হয়ে যায়। তবে তাই বলে সেরাম, এক্সফলিয়েটর বা টনিকের প্রয়োজন নেই, তা নয়। এগুলো না বুঝে ব্যবহার করা যাবে না—এটা হচ্ছে আসল কথা। 

ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে এমন সেরাম, টোনার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। ত্বক, চুল ও মাথার ত্বকের সমস্যা বুঝে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে এসব প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য ডার্মাটোলজি টেস্টেড প্রসাধনী ব্যবহার করা নিরাপদ।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন পণ্য ব্যবহারের পর যদি ত্বক ও চুলে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে কিছুদিন তা ব্যবহার না করে দেখতে হবে। রোজকার ব্যবহারের জন্য শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, ক্লিনজার, টোনার, ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন বাদে বাড়তি কিছু ব্যবহার না করার পর যদি সমস্যা কমে তাহলে বাড়তি পণ্যগুলো ড্রেসিং টেবিল থেকে সরিয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার চুলে হট টাওয়েল ট্রিটমেন্ট ও মুখে গরম পানির ভাপ নিলে ত্বক ও মাথার ত্বকের ক্ষতিকর উপাদান ও ময়লা বেরিয়ে আসবে। এতে ত্বক ও চুলের অনেকটাই উপকার হবে।’ 

কোন প্রসাধনী কতবার ব্যবহার করা যাবে
দিনে দুই বার ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করলে ক্ষতি নেই। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে বা সানস্ক্রিন ব্যবহারের পর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী মুখ পরিষ্কার করতে হবে। সাধারণত সানস্ক্রিন লাগানোর দুই ঘণ্টা পর তা ধুয়ে আবার লাগানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। ত্বকের উপরিভাগের মরা কোষ দূর করার জন্য সপ্তাহে একবার স্ক্র‍্যাব ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। দিনে দুই বার ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। এসি রুমে থাকলে ত্বকের প্রয়োজন বুঝে হাত ও পায়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। ত্বকে পানি কিংবা তেলভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের আগে জানতে হবে আপনার ত্বকের ধরন কী। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সাধারণত পানিভিত্তিক বা ওয়াটার বেজড ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। চুলে সপ্তাহে তিনবার তেল দেওয়া যাবে ও শ্যাম্পু করা যাবে। হেয়ার টনিক সপ্তাহে তিন বারের বেশি ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। দেখে কেনা চাই
ত্বক ও চুলের জন্য যেসব পণ্য কেনা হচ্ছে সেগুলো যাচাই–বাছাই করে দেখতে হবে তার মধ্য়ে ক্ষতিকর কোনো রাসায়নিক আছে কি না। ফরমালডিহাইড ও প্যারাফরমালডিহাইডকে বলা হয় ক্যানসার উৎপাদক উপকরণ। মিথিলিন গ্লাইকল (ফরমালডিহাইডের একটি ধরন), কোয়াটারনিয়াম ১৫, যা ফরমালডিহাইড নিঃসরণ করে— এমন পণ্য এড়িয়ে চলা নিরাপদ। এ ছাড়া মার্কারি ও প্যারাবেন রয়েছে এমন পণ্য কেনা থেকেও বিরত থাকতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত