যে কারণে কিনমেমাই বিশ্বের সবচেয়ে দামি চাল, এক কেজি ১৮ হাজার টাকা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৪, ১৯: ০৮
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ৫৪

বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। ফলে সর্বোচ্চ পুষ্টি নিশ্চিত করতে নতুন নতুন জাত আবিষ্কারে গবেষণা চলছে। বাংলাদেশেও জিংক ও ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ধানের জাত এসেছে। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে জাপান। 

জাপানি চালের একটি ব্র্যান্ড কিনমেমাই। পুষ্টি ও সুবাসের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে দামি চালের তকমা পেয়েছে এটি। অবশ্য সব দেশে এই চাল পাওয়া যায় না। কিনমেমাইয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই চাল এখন শুধু জাপান ও সিঙ্গাপুরে পাওয়া যায়। 

জাপানি এই চাল প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৬ সালে। ওই সময় সারা বিশ্ব থেকে ৬ হাজার জাতের চাল নিয়ে জাপানে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেটি ছিল মূলত ভাতের স্বাদ পরখ করে দেখার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সেই প্রতিযোগিতায় সেরা চালের তকমা পায় কিনমেমাই। সেখানেই এই চালকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি চাল বলে আখ্যা দেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। 

কিনমেমাই প্রিমিয়াম চাল উৎপাদন করা হয় জাপানের গুনমা, নাগানো ও নিগাতার মতো কয়েকটি প্রিফেকচারে। এটি মূলত পাঁচটি জাতের সংমিশ্রণ। এর মধ্যে কোশিহিকারি এবং পিকামারু জাত অন্যতম। কিনমেমাই ধানের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ওয়াকায়ামাভিত্তিক টয়ো রাইস করপোরেশন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি ধরনের স্বাদের ওপর নির্ভর করে এই মিশ্রণটি প্রতিবছর পরিবর্তিত হতে পারে। 

এক কেজি কিনমেমাই চালের দাম ১০৯ মার্কিন ডলার। তবে সিঙ্গাপুরের ক্রেতাদের জন্য দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫৫ মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১৮ হাজার ১৮৯ টাকা! 

কিনমেমাই প্রিমিয়াম চালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি রান্নার আগে ধোয়ার প্রয়োজন হয় না। এই চালের উৎপাদক ও বিপণন কোম্পানির মতে, এই চাল এমন সূক্ষ্মভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, এতে কোনো ভুসি থাকে না, অপাচ্য মোমের স্তর অপসারণ করা হয়, কিন্তু উপকারী উপাদান, ভিটামিন এবং স্বাদ অক্ষত থাকে। ধান থেকে চাল তৈরির প্রক্রিয়াও পেটেন্ট করেছে কোম্পানি। অনন্য প্রযুক্তিতে চাল উৎপাদন ও পোলিশ করা হয় বলে তাদের দাবি। 

মিশ্রণের মাধ্যমে কিনমেমাই চাল প্রস্তুত করার আগে এর টেক্সচার (আকার–আকৃতি ও রং) এবং স্বাদ বাড়াতে ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়। জাপানের প্রচলিত চালের তুলনায় কিনমেমাই প্রিমিয়ামের স্বাদ, মিষ্টতা এবং পুষ্টিগুণ উচ্চতর বলে দাবি করা হয়। আর ভাত থেকে পাওয়া যায় বাদামের ঘ্রাণ! 

কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদকদের কাছ থেকে সাধারণ ধানের চেয়ে আট গুণ দাম দিয়ে এই ধান সংগ্রহ করা হয়। আর রং, স্বাদ, গন্ধ ও দরকারি খাদ্য উপাদান অক্ষত রাখতে চাল ছয় মাস সংরক্ষণের যে কৌশল অবলম্বন করা হয়, সেই কৌশল তারা উদ্ভাবন করেছে কমপক্ষে ১৭ বছর আগে। 

এ ছাড়া এই চালের ভাতে ছয় গুণ বেশি লাইপোপলিস্যাকারাইড (এলপিএস) রয়েছে। এটি একধরনের এন্ডোটক্সিন, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রাকৃতিক বুস্টার হিসেবে কাজ করে। 

চাল ধোয়ার প্রয়োজন না হলেও টয়ো রাইস করপোরেশনের গ্লোবাল বিজনেস ডেভেলপমেন্টের প্রধান চিকাকো ইয়ামাওয়াকি, সর্বোত্তম স্বাদ পেতে রান্নার আগে চাল ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখার পরামর্শ দেন। 

কিনমেমাইয়ের সুলভ মূল্যের দুটি ভ্যারাইটি রয়েছে—কিনমেমাই বেটার হোয়াইট এবং কিনমেমাই বেটার ব্রাউন। কিনমেমাই বেটার হোয়াইটের এক কেজির ব্যাগের খুচরা মূল্য ৯ দশমিক ৪০ ডলার। আর কিনমেমাই বেটার ব্রাউনের দাম ৯ দশমিক ৮০ ডলার। হংকং এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কিনমেমাই প্রিমিয়াম চাল বিক্রি শুরু করতে চায় কোম্পানি। 

এই চালের পুষ্টিগুণের বর্ণনায় বলা হয়েছে, কিনমেমাই বেটার হোয়াইটে সাধারণ চালের তুলনায়: ৭ গুণ ভিটামিন বি১, ১.৮ গুণ ভিটামিন বি৬, ফোলিক অ্যাসিড ১.৪ গুণ, ১.৮ গুণ ফাইবার, ৬ গুণ এলপিএস, ১৭ শতাংশ কম ক্যালরি এবং ১৪ শতাংশ কম চিনি বা শর্করা রয়েছে। আর কিনমেমাই বেটার ব্রাউনে ৩০ শতাংশ কম ক্যালরি থাকে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত