Ajker Patrika

ভালোবাসার ভারে ভেঙে পড়েছিল সেতু

মইনুল হাসান, ফ্রান্স
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ৩৬
ভালোবাসার ভারে ভেঙে পড়েছিল সেতু

ভালোবাসার রাজধানী, তীর্থ বলে খ্যাত প্যারিসের রাস্তায় ‘ভালোবাসা’ নিয়ে ভাবতে ভাবতে আপনি যখন কল্পনার রোম্যান্টিক ফানুস উড়িয়ে দিয়েছেন, ঠিক তখনই অনেকটা কাকতালীয়ভাবে আবিষ্কার করলেন সেন নদীর ওপর প্রসারিত একটি ধাতব সেতুতে দাঁড়িয়ে আছেন আপনি। এ সময় পড়ন্ত বিকেলের ঝকঝকে রোদ্দুরে চকমকিয়ে একরাশ আলোর ঝিলিক আপনার দৃষ্টি কাড়বে সেতুর রেলিং জুড়ে নানান আকার ও ধরনের রাজ্যের রাশি রাশি চাবিহীন তালা। একটিকে জড়িয়ে আরেকটি, কোনো ফাঁকফোকর নেই, গভীর আলিঙ্গন।

লুভ্‌র জাদুঘরের সামনে এবং নোত্র্‌দাম দ্য পারির পেছনে এমন দুটো সেতু আছে। সেখানে বহু প্রেমিকযুগল এসে ‘সুখে-দুঃখে চিরদিন একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা করে একটি তালা আটকে চাবিটি নদীর অথই জলে ফেলে দিয়ে যান। দুটি প্রাণের প্রেমের উচ্ছ্বাস, আজীবন একে অন্যের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার প্রতিজ্ঞার সাক্ষী হয়ে ঝুলতে থাকে তালা। ধাতব তালার কঠিন বাহুতে চিরবন্দী ভালোবাসা!

২০১৪ সালে প্রায় ১০ লাখ তালার ভারে সেতুর একাংশ ভেঙে সেন নদীতে পড়ে যায়। তাতে পৌর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। ভালোবাসার ভার সইতে না পেরে পুরো সেতুটি ধসে পড়তে পারে আশঙ্কায় সেখান থেকে সরিয়ে নেয় প্রায় ৬৫ টন তালা! কদিন পরেই আবারও তালার বিশাল সমাহারে সেতুর হাড় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। এরপর থেকে নানানভাবে চেষ্টা করা হয় তালা প্রতিরোধ করার জন্য। প্রতিরোধ করা যায় না। ভালোবাসা সংক্রামক রোগের মতো, নগরীর আনাচেকানাচে দেখা মেলে ভালোবাসার চাবিহীন তালা। এমনকি আইফেল টাওয়ারেও পাওয়া গেছে প্রায় ৪০টি তালা।

‘ভালোবাসার তালা’ সংস্কৃতি কবে, কোথা থেকে শুরু হয়েছিল, তা কেউ বলতে পারে না। পৃথিবীর বহু দেশে তা ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপের অনেক শহর, বন্দরে এমন তালার দেখা পাওয়া যায়। তবে রোমের হৃদয়হীন পৌর কর্তৃপক্ষ তালার জ্বালা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য জরিমানার খড়্গ হাতে ঘাটে ঘাটে পাইক-পেয়াদা বসিয়েছে। কাউকে হাতেনাতে ধরতে পারলেই করা হয় ৫০ ইউরো অর্থদণ্ড।  

বাংলাদেশে এমন সংস্কৃতি চালু হয়েছে বলে জানা যায় না। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার বা ৩ দশমিক ৮২ মাইল। সেখানে ভালোবাসার তালা ঝুলতে শুরু করলে, তা হবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভালোবাসার তালাসেতু পর্যটকদের আকর্ষণ। 

সে যাই হোক, ভালোবাসায় তালা-চাবির অস্তিত্ব নেই, জোর-জবরদস্তির কোনো জায়গা নেই। কারণ প্রতিটি মানুষের মনের জগতে, ভাবনার জগতে একেকটা অদৃশ্য সিন্দুক থাকে। সেই সিন্দুকের চাবি শুধু নিজের কাছেই থাকে। সারাটি জীবন সেই সিন্দুক যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখে মানুষ। অদৃশ্য সেই জাদুর সিন্দুকে কার জন্য ভালোবাসা গচ্ছিত আছে তা তার কাছের মানুষটিও জানে না, কোনো দিনও জানতে পারে না। 

ভালোবাসা ধরাছোঁয়া যায় না, তালাবন্দী করা যায় না। তবে এটা ঠিক, সত্যিকারের ভালোবাসা পালিয়ে যায় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত