বিচ্ছেদে বিধ্বস্ত প্রিন্সেস ডায়ানার অবলম্বন হয়েছিলেন ৭ প্রেমিক

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ৫৩
Thumbnail image

‘আমি যাকে ভালোবাসি, সে ছাড়া পুরো বিশ্ব আমাকে ভালোবেসেছিল’—বিচ্ছেদের সময় প্রিন্সেস ডায়ানার এই উক্তি থেকেই বোঝা যায়, ভগ্নহৃদয় সামলে উঠতে তাঁর বেশ কষ্টই হচ্ছিল। গুঞ্জন আছে, প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটার পর দুঃসময়টা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন ডায়ানার প্রেমিকেরা। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিররের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিচ্ছেদের পর ডায়ানার সাত প্রেমিকের কথা। 

অলিভার হোর
১৯৯৬ সালের আগস্টে ডিভোর্সের আগে চার্লসের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের সময় আলাদা থাকছিলেন ডায়ানা। রাজপরিবার থেকে দূরে থাকার সময় বেশ কয়েকজন প্রেমিকের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন ডায়ানা। ধারণা করা হয়, ১৯৯২ সাল থেকে বিবাহিত অলিভার হোরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ডায়ানা। তখন অলিভার তিন সন্তানের বাবা। চার বছর আগে ৭৩ বছর বয়সে ক্যানসারে মারা গেছেন অলিভার। প্রিন্সেসের চেয়ে বয়সে ১৬ বছরের বড় ছিলেন তিনি। স্ত্রীর ডিভোর্সের হুমকির মুখে ডায়ানার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

চার্লসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন অলিভার। প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করার পর ডায়ানার কাছ থেকে প্রায় ৩০০ ফোনকল পেয়েছিলেন তিনি। 

ব্যারি ম্যানাকি
ব্যারি ম্যানাকি ছিলেন রাজপরিবারের নিরাপত্তা দলের একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং ডায়ানার দেহরক্ষী। পরে তাঁকে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে নিরাপত্তা কর্মকর্তার ভূমিকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। রেকর্ড করা এক বার্তায় ডায়ানাকে স্বীকার করতে শোনা যায়, ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তাঁর আশপাশে কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে গভীর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। সে টেপ রেকর্ডে নাম না নিলেও ধারণা করা হয়, তিনি ম্যানাকির কথাই বলছিলেন। বন্ধুদের ডায়ানা বলেন, ‘তিনি আমার পিতৃতুল্য ছিলেন এবং আমার দেখাশোনা করতেন।’ ১৯৮৭ সালে এক মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ৩৭ বছর বয়সে ম্যানাকি নিহত হন। 

জেমস গিলবি
জেমস গিলবি ছিলেন ডায়ানার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। স্নেহের বশে ডায়ানার নাম দিয়েছিলেন ‘স্কুইডগি’, বাংলা অর্থ কমনীয়। ১৯৮৯ সালে গোপনে রেকর্ড করা টেপ থেকে তাঁর আর ডায়ানার কথোপকথন ফাঁস হয়। চার্লসের সঙ্গে বিয়ের আগে থেকেই জেমসের সঙ্গে পরিচয় ছিল ডায়ানার। রেকর্ড করা এই টেপ তখন বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। আর কীভাবে এ কথোপকথন ফাঁস হয়েছে, তা নিয়েও অনেক প্রশ্ন ওঠে। ধারণা করা হয়, ১৯৮৯ সালের দিকে জেমসের সঙ্গে ডায়ানার সম্পর্ক তুঙ্গে ছিল। 

উইল কার্লিং
রাগবি লিজেন্ড উইল কার্লিংয়ের সঙ্গে প্রিন্সেস ডায়ানার দেখা হয় একটি জিমে। ১৯৯৫ সালে তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে, উইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন ডায়ানা। ইংল্যান্ডের হয়ে রাগবি খেলে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন উইল। প্রিন্সেসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চলাকালে বিবাহিত ছিলেন উইল। সম্পর্কের ছাড়াছাড়ির সময়টাতে ডায়ানার ব্যবহার নিয়ে নিন্দা জানিয়েছিলেন উইলের স্ত্রী। ডায়ানা বলেছিলেন, ‘উইল কুকুরছানার মতো তাঁর পিছু নিয়েছেন।’ 

হাসনাত খান
হার্ট সার্জন হাসনাত খানের সঙ্গে ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রায় দুই বছরের সম্পর্ক ছিল ডায়ানার। হাসনাতকে ‘মি. ওয়ান্ডারফুল’ বলে ডাকতেন ডায়ানা। বিয়ে করার কথাও ভাবছিলেন এ জুটি। বলা হয়, হাসনাতকে ‘জীবনের সেরা প্রেম’ আখ্যা দিয়েছিলেন ডায়ানা। হাসনাতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পাকিস্তানের লাহোরেও এসেছিলেন তিনি। ডায়ানার মৃত্যুর পর কখনো তাঁদের সম্পর্কের অন্তরঙ্গ কোনো তথ্য নিয়ে কথা বলেননি হাসনাত। ১৯৯৭ সালের জুনে হাসনাতের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ইতি টানেন ডায়ানা। 

জেমস হেউইট
অশ্বারোহী সেনা কর্মকর্তা এবং রাজপরিবারের এ রাইডিং প্রশিক্ষকের সঙ্গে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রেমের সম্পর্ক ছিল ডায়ানার। ১৯৯৫ সালে বিবিসির প্যানারোমার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রেমের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডায়ানা। ২০০৩ সালে হেউইট ডায়ানার দেওয়া ৬৪টি ব্যক্তিগত প্রেমপত্র ১ কোটি পাউন্ডে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন।

ডায়ানার সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা কেন হোয়ার্ফ তাঁর লেখা বই ‘ডায়ানা: ক্লোজলি গার্ডেড সিক্রেট’–এ হেউইটের সঙ্গে ডায়ানার প্রেমের কথা উল্লেখ করেছেন। বইয়ে তিনি লেখেন, হেউইটের প্রবৃত্তিই ছিল নারীঘেঁষা। তিনি ডায়ানাকে যেভাবে গুরুত্ব দিতেন ও স্নেহ করতেন— ডায়ানা সেটিরই কাঙাল ছিলেন।

হোয়ার্ফ লেখেন, প্রথমে ডায়ানা তাঁদের সম্পর্কের কথা আমার কাছে স্বীকার করতে চাননি। প্রসঙ্গ উঠলেই লজ্জায় লাল হয়ে তিনি বলতেন, ‘আমাদের মধ্যে কিছুই নেই।’ 

দোদি ফায়েদ
দোদি ফায়েদ ছিলেন ডায়ানার প্রেমিকদের মধ্যে সর্বশেষ। প্যারিসে ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট ডায়না ও দোদি তাঁদের গাড়িচালকসহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাঁদের মধ্যে পরিচয় হয় দোদির বাবা মোহাম্মদ আল-ফায়েদের আয়োজিত এক ভোজ অনুষ্ঠানে। প্যালাশিয়াল ভিলার সেই অনুষ্ঠানে অনেকের মধ্যে ৪২ বছর বয়সী দোদিও উপস্থিত ছিলেন। বিপুল ধনসম্পদ আর বাবার দেওয়া জেট প্লেনের মালিক দোদি প্লেবয় হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। ডায়ানা ও দোদি প্রিন্স হ্যারি, উইলিয়ামসহ একসঙ্গে এক গ্রীষ্মের অবকাশ কাটিয়েছিলেন। গ্রীষ্মের ছুটিতে তাঁরা দোদির ব্যক্তিগত ইয়টে করে সারডিনিয়া ও সেন্ট ট্রপেজে ঘুরেছেন।

দুর্ঘটনার দিন ডায়ানা ও দোদি প্যারিসের রিজে নৈশভোজ করে ফিরছিলেন। এক আবেগঘন ফুটেজে দেখা যায়, মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে তাঁরা বাড়ি ফেরার জন্য পরস্পরকে বিদায় দেওয়ার সময় একে অপরকে আলিঙ্গন করছেন। কে জানত এটাই হবে তাঁদের শেষ আলিঙ্গন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত