রজত কান্তি রায়, ঢাকা
প্রেম আর জীবনের গূঢ় রসের খোঁজে বারবার ফিরে যেতে হয় মির্জা গালিবের কাছে। কিন্তু তাঁকে বোঝা যায় কীভাবে? উর্দু ও ফারসি কবিতা আর সুবাসিত তাজা ফুলে। কিন্তু ‘এজিদের মতো থালায় বায়জিদের মতো’ খানা খাওয়া মানুষটিকে কি এ দুইয়েই চেনা হয়ে যায়? আরও নিদান আছে তাঁকে চেনার। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মুর্শিদাবাদের সুপক্ব সুস্বাদু আম আর কাবাব। কবিতা, তাজা ফুল, সুস্বাদু আম আর কাবাব—এগুলোকে না বুঝলে মির্জা গালিব অধরা থেকে যায়।
মির্জা গালিব বলেছিলেন, আমের দুটি গুণ থাকতে হবে—প্রথমত, হতে হবে প্রচুর মিষ্টি এবং দ্বিতীয়ত, থাকতে হবে অসংখ্য।
অভিধান বলছে, মধুমাস হলো চৈত্র। আর সাধারণ মানুষ আমরা মধুমাস বলতে বুঝি জ্যৈষ্ঠ। আমরা যারা জিব ও হাত বাড়িয়ে তালগাছের মতো এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকি জ্যৈষ্ঠের দিকে, তাদের জন্য জ্যৈষ্ঠই মধুমাস। এ ক্ষেত্রে আমরা ‘ব্যাকরণ মানি না’র দলে। এখন আমাদের আমসত্ত্ব দুধে ফেলে খাওয়ার দিন।
কিন্তু খেয়াল করেছেন কি, পাকা আম তো বটেই, আমাদের স্মৃতিতে খুব গেঁথে আছে কাঁচা আম খাওয়ার স্মৃতি। বরং এই স্মৃতিই আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায় বড়বেলায়। এই তাড়িয়ে বেড়ানোটা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সংস্কৃতিই বটে। খেয়াল করলে দেখবেন, গাছে তো বটেই, আমাদের প্রাচীন টেরাকোটায়, আমাদের রান্নাঘরে, শোয়ার ঘরের দেরাজ কিংবা আলমারিতে আমের নিঃশব্দ কিন্তু সুস্বাদু উপস্থিতি আছে। এর নাম আচার, আমের আচার।
পাকা আম খাওয়ার বাইরে আম নিয়ে আমাদের দুরন্ত যে স্মৃতি আছে, তার বড় অংশের প্রধান চরিত্র আমের আচার। সেই যে বৈশাখের মাঝামাঝিতে আম কিছুটা সোমত্ত হয়ে উঠলে পেড়ে এনে তেলে আর মসলায় ডুবিয়ে কাচের বয়ামবন্দী করার বিচিত্র সেই প্রক্রিয়া! মনে পড়ে না? আমার তো খুব মনে পড়ে। হ্যাঁ, গ্রামেই হোক আর শহরে, আচার বানানো ছিল বাড়ির নারীদের মধ্যদুপুরের বিলাস। সে এক শিল্পই বটে। আচারের ধরন তো ছিল অনেক, কোন আমের আচার কেমন হবে, সেটা নির্ধারণ করতেন বাড়ির অভিজ্ঞ নারীটি। তারপর চলত আম কাটা আর মসলা পেষার তুমুল আয়োজন। বাড়িতে তখন মাসকাবারি তেলের বাইরে কয়েক সের তেলের বাড়তি খরচের ধাক্কা।
কে তার তোয়াক্কা করে? ফালি ফালি করে আম কেটে কিংবা কুচি কুচি করে তার জৈবিক শরীরের ভূগোল বদলে দেওয়া হতো খানিক। তারপর পাঁচফোড়ন, জিরা, মৌরি, কালিজিরা, সাদা সরিষা, কালো সরিষা, ধনে, শুকনা মরিচের গুঁড়ার যে অত্যাশ্চর্য মিশ্রণ, তাতে গড়িয়ে নেওয়া হতো বিশেষভাবে কেটে রাখা আম। সব শেষে ডুবিয়ে দেওয়া হতো কাচের বয়ামভর্তি সরিষার তেলের মধ্যে। তারপর তাকে শুকাতে দেওয়া হয় পাকা বাড়ির কার্নিশে কিংবা আঙিনায়। এরপর সে জগতের একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞীর ভূমিকায় দেখা যেত বাড়ির বয়স্ক নারীটিকে। বয়াম থেকে আচার চুরি করার কত যে ফন্দি! এই যে পুরো প্রক্রিয়া, প্রত্যেক নারীর জীবনে কোনো না কোনো সময় এটি চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে আসত। এ এক আজব চক্র!
ছোট করে বলে রাখি, আচার তৈরি জন্য পাঁচফোড়ন, জিরা, মৌরি, কালিজিরা, সাদা সরিষা, কালো সরিষা, ধনে, শুকনা মরিচ ইত্যাদি দিয়ে যে বিশেষ মসলা তৈরি করা হয়, সে মসলা দিয়ে যে মাংস রান্না হয়, তা-ই কিন্তু আচারি মাংস। আচারের তেল দিয়ে রান্না করা মাংস আচারি মাংস নয়। এই আচারি মাংস আমাদের খাদ্যসংস্কৃতিতে এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। সে যাক।
এখন আমের দিন। হরেক রকম আমের সুগন্ধে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাজার ম-ম করতে শুরু করেছে। পছন্দের আম খান আর স্মরণ করুন রবীন্দ্রনাথ আর মির্জা গালিবকে। সেই সঙ্গে মনে রাখুন, সময়ের আম সময়েই খেতে হয়—আগেও নয়, পরেও নয়।
প্রেম আর জীবনের গূঢ় রসের খোঁজে বারবার ফিরে যেতে হয় মির্জা গালিবের কাছে। কিন্তু তাঁকে বোঝা যায় কীভাবে? উর্দু ও ফারসি কবিতা আর সুবাসিত তাজা ফুলে। কিন্তু ‘এজিদের মতো থালায় বায়জিদের মতো’ খানা খাওয়া মানুষটিকে কি এ দুইয়েই চেনা হয়ে যায়? আরও নিদান আছে তাঁকে চেনার। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মুর্শিদাবাদের সুপক্ব সুস্বাদু আম আর কাবাব। কবিতা, তাজা ফুল, সুস্বাদু আম আর কাবাব—এগুলোকে না বুঝলে মির্জা গালিব অধরা থেকে যায়।
মির্জা গালিব বলেছিলেন, আমের দুটি গুণ থাকতে হবে—প্রথমত, হতে হবে প্রচুর মিষ্টি এবং দ্বিতীয়ত, থাকতে হবে অসংখ্য।
অভিধান বলছে, মধুমাস হলো চৈত্র। আর সাধারণ মানুষ আমরা মধুমাস বলতে বুঝি জ্যৈষ্ঠ। আমরা যারা জিব ও হাত বাড়িয়ে তালগাছের মতো এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকি জ্যৈষ্ঠের দিকে, তাদের জন্য জ্যৈষ্ঠই মধুমাস। এ ক্ষেত্রে আমরা ‘ব্যাকরণ মানি না’র দলে। এখন আমাদের আমসত্ত্ব দুধে ফেলে খাওয়ার দিন।
কিন্তু খেয়াল করেছেন কি, পাকা আম তো বটেই, আমাদের স্মৃতিতে খুব গেঁথে আছে কাঁচা আম খাওয়ার স্মৃতি। বরং এই স্মৃতিই আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায় বড়বেলায়। এই তাড়িয়ে বেড়ানোটা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সংস্কৃতিই বটে। খেয়াল করলে দেখবেন, গাছে তো বটেই, আমাদের প্রাচীন টেরাকোটায়, আমাদের রান্নাঘরে, শোয়ার ঘরের দেরাজ কিংবা আলমারিতে আমের নিঃশব্দ কিন্তু সুস্বাদু উপস্থিতি আছে। এর নাম আচার, আমের আচার।
পাকা আম খাওয়ার বাইরে আম নিয়ে আমাদের দুরন্ত যে স্মৃতি আছে, তার বড় অংশের প্রধান চরিত্র আমের আচার। সেই যে বৈশাখের মাঝামাঝিতে আম কিছুটা সোমত্ত হয়ে উঠলে পেড়ে এনে তেলে আর মসলায় ডুবিয়ে কাচের বয়ামবন্দী করার বিচিত্র সেই প্রক্রিয়া! মনে পড়ে না? আমার তো খুব মনে পড়ে। হ্যাঁ, গ্রামেই হোক আর শহরে, আচার বানানো ছিল বাড়ির নারীদের মধ্যদুপুরের বিলাস। সে এক শিল্পই বটে। আচারের ধরন তো ছিল অনেক, কোন আমের আচার কেমন হবে, সেটা নির্ধারণ করতেন বাড়ির অভিজ্ঞ নারীটি। তারপর চলত আম কাটা আর মসলা পেষার তুমুল আয়োজন। বাড়িতে তখন মাসকাবারি তেলের বাইরে কয়েক সের তেলের বাড়তি খরচের ধাক্কা।
কে তার তোয়াক্কা করে? ফালি ফালি করে আম কেটে কিংবা কুচি কুচি করে তার জৈবিক শরীরের ভূগোল বদলে দেওয়া হতো খানিক। তারপর পাঁচফোড়ন, জিরা, মৌরি, কালিজিরা, সাদা সরিষা, কালো সরিষা, ধনে, শুকনা মরিচের গুঁড়ার যে অত্যাশ্চর্য মিশ্রণ, তাতে গড়িয়ে নেওয়া হতো বিশেষভাবে কেটে রাখা আম। সব শেষে ডুবিয়ে দেওয়া হতো কাচের বয়ামভর্তি সরিষার তেলের মধ্যে। তারপর তাকে শুকাতে দেওয়া হয় পাকা বাড়ির কার্নিশে কিংবা আঙিনায়। এরপর সে জগতের একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞীর ভূমিকায় দেখা যেত বাড়ির বয়স্ক নারীটিকে। বয়াম থেকে আচার চুরি করার কত যে ফন্দি! এই যে পুরো প্রক্রিয়া, প্রত্যেক নারীর জীবনে কোনো না কোনো সময় এটি চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে আসত। এ এক আজব চক্র!
ছোট করে বলে রাখি, আচার তৈরি জন্য পাঁচফোড়ন, জিরা, মৌরি, কালিজিরা, সাদা সরিষা, কালো সরিষা, ধনে, শুকনা মরিচ ইত্যাদি দিয়ে যে বিশেষ মসলা তৈরি করা হয়, সে মসলা দিয়ে যে মাংস রান্না হয়, তা-ই কিন্তু আচারি মাংস। আচারের তেল দিয়ে রান্না করা মাংস আচারি মাংস নয়। এই আচারি মাংস আমাদের খাদ্যসংস্কৃতিতে এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। সে যাক।
এখন আমের দিন। হরেক রকম আমের সুগন্ধে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, বাজার ম-ম করতে শুরু করেছে। পছন্দের আম খান আর স্মরণ করুন রবীন্দ্রনাথ আর মির্জা গালিবকে। সেই সঙ্গে মনে রাখুন, সময়ের আম সময়েই খেতে হয়—আগেও নয়, পরেও নয়।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
৩ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
৩ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
৩ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
৩ দিন আগে