নাজমুল করিম ফারুক
ভোরবেলা ঢাকা থেকে সিলেট মাজার গেটে এসে নামল শওকত হোসেন, সিদ্দিক ব্যাপারী, তাসকিনুর পূর্ণ ও ইমন ইশতিয়াক। রনি নামের এক বন্ধুর জন্য এক ঘণ্টা অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত জাফলংয়ের গাড়ি ধরে লালাখাল বাসস্ট্যান্ড। অটোরিকশায় চড়ে ছয়জনে মিলে রওনা লালাখালের নৌকাঘাটে। পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেলা ১১টা। তার ওপর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ সারি নদী। লালাখালে সারি ও গোয়াইন নদ মিলিত হয়েছে। দুটি নদ-নদীর পানির রং ভিন্ন। ট্রলারের মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে মাথায় বাজ পড়ল। তাঁরা জানিয়ে দিলেন, সম্ভব নয়। অনেকগুলো খাল ও ছোট ছোট নদী পড়বে পথে। যেগুলো সাঁতার কেটে যেতে হবে। আমাদের মধ্যে তাসকিনুর পূর্ণ ও ইমন ইশতিয়াক সাঁতার জানে না। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, রাংপানি যাব— যত বাধাই থাকুক।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সারি সারি পাহাড় ঘেরা সিলেটের জৈন্তাপুর। এসব পাহাড় থেকে বৃষ্টি কিংবা পাহাড়ি পানিপ্রবাহে আমাদের দেশে সৃষ্টি হয়েছে অনেক নদী কিংবা ছড়া। বিছনাকান্দি, সাদা পাথর, জাফলং, পান্থমাই, সংগ্রামপুঞ্জির মতো দর্শনীয় স্থান সেগুলোর মধ্যে উল্লখযোগ্য। তবে এগুলোর মতো আরেকটি পর্যটন গন্তব্য জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামসংলগ্ন মোকামপুঞ্জির রাংপানি।
আবার ফিরতে হলো লালাখাল বাসস্ট্যান্ডে। এসে জাফলংয়ের বাস ধরলাম। জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে শ্রীপুর বাজার পার হয়ে ছোট মোকামপুঞ্জি স্ট্যান্ডে নেমে পড়লাম। এখানে ছোট্ট একটি যাত্রীছাউনি আছে। স্থানীয় কয়েকজনকে রাংপানি যাওয়ার পথের হদিস দিতে অনুরোধ করলাম আমরা। সবাই জানালেন, তাঁরা জায়গাটা চেনেন না। আমরা তো নাছোড়বান্দা। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম মোকামপুঞ্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। এর এক ধারে সবুজ চা-বাগান, আরেক ধারে স্বচ্ছ সবুজ গাছগাছালি ঘেরা বসতি। মোকামপুঞ্জি গ্রামে প্রবেশের দুটি গেট। গেটের সামনে খেলা করছিল ৭ থেকে ৮ বছরের তিনটি ছেলে। তাদের রাংপানির কথা জিজ্ঞাসা করতেই নিজেরা নিয়ে যেতে রাজি হলো।
বাঁ দিকের লোহার গেট দিয়ে প্রবেশ করলাম মোকামপুঞ্জি গ্রামে। সেখানে নামফলকে লেখা, ‘মোকামপুঞ্জি খাসিয়া আদিবাসী, আমাদের পেশা সুপারি আর পান।’ সতর্কতামূলক একটি দেয়ালচিত্রে লেখা, ‘রাত ৮টার পর পুঞ্জির মধ্যে বহিরাগত প্রবেশ বা থাকা নিষেধ।’ ভেতরে প্রবেশ করে লেখার সঙ্গে পরিবেশের মিল পাওয়া গেল। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় সারি সারি সুপারিগাছ; গাছগুলোর গোড়া থেকে আকাশ অবধি লতায় জড়ানো পান। গাছগুলোজুড়ে বিভিন্ন আকারের পান শোভা পাচ্ছে। অনেকে আবার সেগুলোর পরিচর্যা করছেন। আদিবাসীদের পরিবেশের সঙ্গে কখন যেন মনটা মিলিয়ে গেল, টেরই পেলাম না। গ্রামের এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্তে গিয়ে যখন হাজির হলাম, তখন চোখ ছানাবড়া!
বিশাল জলরাশির এক পাশে আরেক বিছানাকান্দি, আরেক পাশে সাদা পাথর! সামনে এগোতেই স্থানীয় অনেকে সেখানে যেতে বারণ করলেন। জানালেন, রাংপানি মূলত ভারতের এলাকা। তাই সেখানে যাওয়া নিষেধ। অনেকে আবার ছবি তুলতে নিষেধ করলেন। এসব ছবি নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁদের পাথর বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের গন্তব্যে যাওয়া চাই। কখনো কোমর আর কখনো বুকসমান পানি পার করে অবশেষে রাংপানির রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করলাম। মেঘালয় পাহাড় থেকে ঝরনা হয়ে ধেয়ে আসছে পানির ঢল, সেই সঙ্গে নিয়ে আসছে পাথর। পাথর তুলে নৌকায় ভর্তি করতে ব্যস্ত স্থানীয় লোকজন। জৈন্তা পাহাড়ের রংহংকং জলপ্রপাত থেকে স্বচ্ছ জলের রাংপানির উৎপত্তি। আশি ও নব্বইয়ের দশকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের একাধিক ছবির শুটিং হয়েছে এখানে। জানা গেল এমন তথ্য। বিশেষ করে শাবনাজ-নাঈম জুটির প্রথম ছবি ‘চাঁদনী’র জনপ্রিয় গান ‘ও আমার জান, তোর বাঁশি যেন জাদু জানে রে’-এর বেশ কিছু দৃশ্য এখানে ধারণ করা। দূরের পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে পড়া প্রাকৃতিক ঝরনাটি আমাদের দৃষ্টি কাড়ে। মন চাইছিল ছুঁয়ে দেখি। কিন্তু বিধি বাম। সেটা মেঘালয় রাজ্যের অনেক ভেতরে। শেষ পর্যন্ত রাংপানির দর্শন নিয়ে সেই দূরের ঝরনা স্পর্শের মনোবাসনা অপূর্ণ রেখে ফিরতে হলো। ততক্ষণে ক্ষুধার রাজ্য গদ্যময় হঠে উঠেছে।
কীভাবে যাবেন
দেশের যেকোনো জায়গা থেকে প্রথমে আসতে হবে সিলেটে। শহর থেকে সিলেট-তামাবিল সড়কে বাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা ব্যক্তিগত গাড়িতে সরাসরি যাওয়া যায় জৈন্তাপুরের শ্রীপুরে। শ্রীপুরের চা-বাগানের উল্টো দিক ধরে সরু পথ পাড়ি দিলেই মোকামপুঞ্জি। খাসিয়াদের মোকামপুঞ্জির ভেতর দিয়ে গেলেই পেয়ে যাবেন রাংপানি নদী।
কোথায় খাবেন
সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর বাজার, জাফলং মামার বাজারে বেশ কিছু মধ্যম মানের খাবারের হোটেল পাবেন। দুপুরের খাবার সেখানে সেরে নিতে পারেন। বর্তমানে জাফলং জিরো পয়েন্টেও বেশ কিছু খাবারের হোটেল রয়েছে।
ভোরবেলা ঢাকা থেকে সিলেট মাজার গেটে এসে নামল শওকত হোসেন, সিদ্দিক ব্যাপারী, তাসকিনুর পূর্ণ ও ইমন ইশতিয়াক। রনি নামের এক বন্ধুর জন্য এক ঘণ্টা অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত জাফলংয়ের গাড়ি ধরে লালাখাল বাসস্ট্যান্ড। অটোরিকশায় চড়ে ছয়জনে মিলে রওনা লালাখালের নৌকাঘাটে। পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেলা ১১টা। তার ওপর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ সারি নদী। লালাখালে সারি ও গোয়াইন নদ মিলিত হয়েছে। দুটি নদ-নদীর পানির রং ভিন্ন। ট্রলারের মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে মাথায় বাজ পড়ল। তাঁরা জানিয়ে দিলেন, সম্ভব নয়। অনেকগুলো খাল ও ছোট ছোট নদী পড়বে পথে। যেগুলো সাঁতার কেটে যেতে হবে। আমাদের মধ্যে তাসকিনুর পূর্ণ ও ইমন ইশতিয়াক সাঁতার জানে না। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, রাংপানি যাব— যত বাধাই থাকুক।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সারি সারি পাহাড় ঘেরা সিলেটের জৈন্তাপুর। এসব পাহাড় থেকে বৃষ্টি কিংবা পাহাড়ি পানিপ্রবাহে আমাদের দেশে সৃষ্টি হয়েছে অনেক নদী কিংবা ছড়া। বিছনাকান্দি, সাদা পাথর, জাফলং, পান্থমাই, সংগ্রামপুঞ্জির মতো দর্শনীয় স্থান সেগুলোর মধ্যে উল্লখযোগ্য। তবে এগুলোর মতো আরেকটি পর্যটন গন্তব্য জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর গ্রামসংলগ্ন মোকামপুঞ্জির রাংপানি।
আবার ফিরতে হলো লালাখাল বাসস্ট্যান্ডে। এসে জাফলংয়ের বাস ধরলাম। জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে শ্রীপুর বাজার পার হয়ে ছোট মোকামপুঞ্জি স্ট্যান্ডে নেমে পড়লাম। এখানে ছোট্ট একটি যাত্রীছাউনি আছে। স্থানীয় কয়েকজনকে রাংপানি যাওয়ার পথের হদিস দিতে অনুরোধ করলাম আমরা। সবাই জানালেন, তাঁরা জায়গাটা চেনেন না। আমরা তো নাছোড়বান্দা। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম মোকামপুঞ্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। এর এক ধারে সবুজ চা-বাগান, আরেক ধারে স্বচ্ছ সবুজ গাছগাছালি ঘেরা বসতি। মোকামপুঞ্জি গ্রামে প্রবেশের দুটি গেট। গেটের সামনে খেলা করছিল ৭ থেকে ৮ বছরের তিনটি ছেলে। তাদের রাংপানির কথা জিজ্ঞাসা করতেই নিজেরা নিয়ে যেতে রাজি হলো।
বাঁ দিকের লোহার গেট দিয়ে প্রবেশ করলাম মোকামপুঞ্জি গ্রামে। সেখানে নামফলকে লেখা, ‘মোকামপুঞ্জি খাসিয়া আদিবাসী, আমাদের পেশা সুপারি আর পান।’ সতর্কতামূলক একটি দেয়ালচিত্রে লেখা, ‘রাত ৮টার পর পুঞ্জির মধ্যে বহিরাগত প্রবেশ বা থাকা নিষেধ।’ ভেতরে প্রবেশ করে লেখার সঙ্গে পরিবেশের মিল পাওয়া গেল। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় সারি সারি সুপারিগাছ; গাছগুলোর গোড়া থেকে আকাশ অবধি লতায় জড়ানো পান। গাছগুলোজুড়ে বিভিন্ন আকারের পান শোভা পাচ্ছে। অনেকে আবার সেগুলোর পরিচর্যা করছেন। আদিবাসীদের পরিবেশের সঙ্গে কখন যেন মনটা মিলিয়ে গেল, টেরই পেলাম না। গ্রামের এক প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অন্য প্রান্তে গিয়ে যখন হাজির হলাম, তখন চোখ ছানাবড়া!
বিশাল জলরাশির এক পাশে আরেক বিছানাকান্দি, আরেক পাশে সাদা পাথর! সামনে এগোতেই স্থানীয় অনেকে সেখানে যেতে বারণ করলেন। জানালেন, রাংপানি মূলত ভারতের এলাকা। তাই সেখানে যাওয়া নিষেধ। অনেকে আবার ছবি তুলতে নিষেধ করলেন। এসব ছবি নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে তাঁদের পাথর বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমাদের গন্তব্যে যাওয়া চাই। কখনো কোমর আর কখনো বুকসমান পানি পার করে অবশেষে রাংপানির রাজ্যে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করলাম। মেঘালয় পাহাড় থেকে ঝরনা হয়ে ধেয়ে আসছে পানির ঢল, সেই সঙ্গে নিয়ে আসছে পাথর। পাথর তুলে নৌকায় ভর্তি করতে ব্যস্ত স্থানীয় লোকজন। জৈন্তা পাহাড়ের রংহংকং জলপ্রপাত থেকে স্বচ্ছ জলের রাংপানির উৎপত্তি। আশি ও নব্বইয়ের দশকে ঢাকাই চলচ্চিত্রের একাধিক ছবির শুটিং হয়েছে এখানে। জানা গেল এমন তথ্য। বিশেষ করে শাবনাজ-নাঈম জুটির প্রথম ছবি ‘চাঁদনী’র জনপ্রিয় গান ‘ও আমার জান, তোর বাঁশি যেন জাদু জানে রে’-এর বেশ কিছু দৃশ্য এখানে ধারণ করা। দূরের পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে পড়া প্রাকৃতিক ঝরনাটি আমাদের দৃষ্টি কাড়ে। মন চাইছিল ছুঁয়ে দেখি। কিন্তু বিধি বাম। সেটা মেঘালয় রাজ্যের অনেক ভেতরে। শেষ পর্যন্ত রাংপানির দর্শন নিয়ে সেই দূরের ঝরনা স্পর্শের মনোবাসনা অপূর্ণ রেখে ফিরতে হলো। ততক্ষণে ক্ষুধার রাজ্য গদ্যময় হঠে উঠেছে।
কীভাবে যাবেন
দেশের যেকোনো জায়গা থেকে প্রথমে আসতে হবে সিলেটে। শহর থেকে সিলেট-তামাবিল সড়কে বাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা ব্যক্তিগত গাড়িতে সরাসরি যাওয়া যায় জৈন্তাপুরের শ্রীপুরে। শ্রীপুরের চা-বাগানের উল্টো দিক ধরে সরু পথ পাড়ি দিলেই মোকামপুঞ্জি। খাসিয়াদের মোকামপুঞ্জির ভেতর দিয়ে গেলেই পেয়ে যাবেন রাংপানি নদী।
কোথায় খাবেন
সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর বাজার, জাফলং মামার বাজারে বেশ কিছু মধ্যম মানের খাবারের হোটেল পাবেন। দুপুরের খাবার সেখানে সেরে নিতে পারেন। বর্তমানে জাফলং জিরো পয়েন্টেও বেশ কিছু খাবারের হোটেল রয়েছে।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে