ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
পশুর নদে লঞ্চে উঠে শুরু হলো আমাদের সুন্দরবন ভ্রমণ। নদীতে ছোট-বড় নানান আকৃতির লঞ্চের কোনোটি দাঁড়িয়ে আছে, কোনোটি চলছে। দূর-দিগন্তে নদীর কোল ঘেঁষে শোভা পাচ্ছে সবুজ বৃক্ষরাজি। নীলাভ আকাশের নিচে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে সবাই অভিভূত।
ঘণ্টা না পেরোতেই আমাদের লঞ্চ পৌঁছে গেল সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে। পশুর নদের তীরে ৩০ হেক্টর আয়তনের আকর্ষণীয় এই পর্যটনকেন্দ্র। এক দিনে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে করমজল দারুণ জায়গা। এর শুরুতেই আছে সুন্দরবন-সম্পর্কিত বিশাল আকৃতির মানচিত্র, যা সুন্দরবন সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে সাহায্য করে। এরপর গেট পেরিয়ে সামনে এগোতেই দেখা মেলে হরিণ ও কুমির প্রজনন এবং ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের। এখানে রয়েছে চিড়িয়াখানার মতো খাঁচায় ঘেরা খোলা জায়গায় চিত্রা হরিণ। অন্যান্য খাঁচায় রয়েছে পাখি, বানর ইত্যাদি। রয়েছে ছোট ছোট অনেক চৌবাচ্চা। কোনোটিতে ডিম ফুটে বের হওয়া কুমিরছানা, কোনোটিতে মাঝারি আকৃতির আবার কোনোটিতে আরও একটু বড় বয়সের নোনা জলের কুমির শাবক। একেবারে দক্ষিণ পাশে দেয়ালঘেরা বড় পুকুরে রয়েছে রোমিও, জুলিয়েট আর পিলপিল। জেলেদের জালে ধরা পড়া এই তিন নোনাপানির কুমিরকে ২০০২ সালে সুন্দরবনের করমজলে আনা হয়। রোমিও-জুলিয়েট জুটি প্রজননক্ষম হয় ২০০৫ সালে। জুলিয়েট আকারে রোমিওর চেয়ে সামান্য ছোট। পিলপিল আরেক নারী সদস্য।
করমজলের আকর্ষণীয় বিষয় হলো আঁকাবাঁকা কাঠের তৈরি হাঁটাপথ। পথের নাম মাঙ্কি ট্রেইল। ট্রেইলজুড়ে দেখা মেলে সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা রেসাস বানরের। কারও হাতে খাবার থাকলে নিমেষেই কেড়ে নেয় এসব বানর। পথের দুই ধারে ঘন জঙ্গল। এই বনে বাইনগাছের সংখ্যা বেশি। পরিচিতির সুবিধার্থে করমজলে প্রবেশপথের শুরুতে গাছের সঙ্গে নামফলক যুক্ত আছে। এই ট্রেইলের মাঝামাঝি জায়গায় নির্মিত হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ বুরুজ। এর চূড়ায় উঠলে করমজলের চারপাশটা বেশ ভালো দেখা যায়। বুরুজের পাশে ছোট খাল। খাল পাড়ি দিয়ে আরও ট্রেইলের নির্মাণকাজ চলছে। সেগুলো অবশ্য কাঠের নয়; ইট-পাথরের। বিকেলের দিকে করমজল এলাকায় দল বেঁধে চরে বেড়ানো বন্য চিত্রল হরিণের দেখা মেলে।
সুন্দরবনের গাছগাছালির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুন্দরী, কেওড়া, বাইন, পশুর, কাঁকড়া, গেওয়া, গরান, গোলপাতা, খলিশা ইত্যাদি। বানর, হরিণ, কুমির আর বিভিন্ন জাতের পাখি দেখে বিকেলে রওনা হলাম বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে।
মসজিদটি ষাটগম্বুজ নামে পরিচিত হলেও এর মোট গম্বুজের সংখ্যা ৮১। অপূর্ব কারুকার্যখচিত দেশের বৃহত্তম আয়তাকার মসজিদ এটি। আনুমানিক ১৪৫৯ সালের আগে খানুল আজম উলুঘ খানজাহান নামে ইসলামের এক মহান সাধক এই মসজিদ নির্মাণ করেন। বর্তমানে এটি বিশ্ব ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন ও সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। মসজিদের পরিচ্ছন্ন চত্বর ও ফুলবাগানের সৌন্দর্য সবার হৃদয়ে নাড়া দেবে। বাগেরহাটে একটি জাদুঘর রয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ছয় শ বছরের পুরোনো মুসলিম আমলের সমৃদ্ধিশালী বিস্মৃত নগরী খলিফাতাবাদের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে ১৯৯২ সালে জাদুঘরটি নির্মিত হয়। পশ্চিমমুখী এক গম্বুজবিশিষ্ট জাদুঘরটির আয়তন ৫২০ বর্গমিটার।
মসজিদ ও মসজিদ চত্বরের সৌন্দর্য অনুভব করতে করতেই সন্ধ্যা নেমে আসে। সেখানেই মাগরিবের নামাজ পড়ে আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসি।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
পশুর নদে লঞ্চে উঠে শুরু হলো আমাদের সুন্দরবন ভ্রমণ। নদীতে ছোট-বড় নানান আকৃতির লঞ্চের কোনোটি দাঁড়িয়ে আছে, কোনোটি চলছে। দূর-দিগন্তে নদীর কোল ঘেঁষে শোভা পাচ্ছে সবুজ বৃক্ষরাজি। নীলাভ আকাশের নিচে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে সবাই অভিভূত।
ঘণ্টা না পেরোতেই আমাদের লঞ্চ পৌঁছে গেল সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে। পশুর নদের তীরে ৩০ হেক্টর আয়তনের আকর্ষণীয় এই পর্যটনকেন্দ্র। এক দিনে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে করমজল দারুণ জায়গা। এর শুরুতেই আছে সুন্দরবন-সম্পর্কিত বিশাল আকৃতির মানচিত্র, যা সুন্দরবন সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে সাহায্য করে। এরপর গেট পেরিয়ে সামনে এগোতেই দেখা মেলে হরিণ ও কুমির প্রজনন এবং ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের। এখানে রয়েছে চিড়িয়াখানার মতো খাঁচায় ঘেরা খোলা জায়গায় চিত্রা হরিণ। অন্যান্য খাঁচায় রয়েছে পাখি, বানর ইত্যাদি। রয়েছে ছোট ছোট অনেক চৌবাচ্চা। কোনোটিতে ডিম ফুটে বের হওয়া কুমিরছানা, কোনোটিতে মাঝারি আকৃতির আবার কোনোটিতে আরও একটু বড় বয়সের নোনা জলের কুমির শাবক। একেবারে দক্ষিণ পাশে দেয়ালঘেরা বড় পুকুরে রয়েছে রোমিও, জুলিয়েট আর পিলপিল। জেলেদের জালে ধরা পড়া এই তিন নোনাপানির কুমিরকে ২০০২ সালে সুন্দরবনের করমজলে আনা হয়। রোমিও-জুলিয়েট জুটি প্রজননক্ষম হয় ২০০৫ সালে। জুলিয়েট আকারে রোমিওর চেয়ে সামান্য ছোট। পিলপিল আরেক নারী সদস্য।
করমজলের আকর্ষণীয় বিষয় হলো আঁকাবাঁকা কাঠের তৈরি হাঁটাপথ। পথের নাম মাঙ্কি ট্রেইল। ট্রেইলজুড়ে দেখা মেলে সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা রেসাস বানরের। কারও হাতে খাবার থাকলে নিমেষেই কেড়ে নেয় এসব বানর। পথের দুই ধারে ঘন জঙ্গল। এই বনে বাইনগাছের সংখ্যা বেশি। পরিচিতির সুবিধার্থে করমজলে প্রবেশপথের শুরুতে গাছের সঙ্গে নামফলক যুক্ত আছে। এই ট্রেইলের মাঝামাঝি জায়গায় নির্মিত হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ বুরুজ। এর চূড়ায় উঠলে করমজলের চারপাশটা বেশ ভালো দেখা যায়। বুরুজের পাশে ছোট খাল। খাল পাড়ি দিয়ে আরও ট্রেইলের নির্মাণকাজ চলছে। সেগুলো অবশ্য কাঠের নয়; ইট-পাথরের। বিকেলের দিকে করমজল এলাকায় দল বেঁধে চরে বেড়ানো বন্য চিত্রল হরিণের দেখা মেলে।
সুন্দরবনের গাছগাছালির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুন্দরী, কেওড়া, বাইন, পশুর, কাঁকড়া, গেওয়া, গরান, গোলপাতা, খলিশা ইত্যাদি। বানর, হরিণ, কুমির আর বিভিন্ন জাতের পাখি দেখে বিকেলে রওনা হলাম বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে।
মসজিদটি ষাটগম্বুজ নামে পরিচিত হলেও এর মোট গম্বুজের সংখ্যা ৮১। অপূর্ব কারুকার্যখচিত দেশের বৃহত্তম আয়তাকার মসজিদ এটি। আনুমানিক ১৪৫৯ সালের আগে খানুল আজম উলুঘ খানজাহান নামে ইসলামের এক মহান সাধক এই মসজিদ নির্মাণ করেন। বর্তমানে এটি বিশ্ব ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন ও সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। মসজিদের পরিচ্ছন্ন চত্বর ও ফুলবাগানের সৌন্দর্য সবার হৃদয়ে নাড়া দেবে। বাগেরহাটে একটি জাদুঘর রয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ছয় শ বছরের পুরোনো মুসলিম আমলের সমৃদ্ধিশালী বিস্মৃত নগরী খলিফাতাবাদের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে ১৯৯২ সালে জাদুঘরটি নির্মিত হয়। পশ্চিমমুখী এক গম্বুজবিশিষ্ট জাদুঘরটির আয়তন ৫২০ বর্গমিটার।
মসজিদ ও মসজিদ চত্বরের সৌন্দর্য অনুভব করতে করতেই সন্ধ্যা নেমে আসে। সেখানেই মাগরিবের নামাজ পড়ে আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসি।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে