ইশতিয়াক হাসান
বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয়নি এখনো। তবে বান্দরবান সদর, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদমে যেতে বাধা নেই। এখন আলীকদম, লামা যাওয়া সহজ কক্সবাজারের চকরিয়া হয়ে। এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির অবস্থানও কক্সবাজারের কাছে। ধরুন এ পরিস্থিতিতে দুই দিনের জন্য বান্দরবান শহরে গেলেন আপনি, সেক্ষেত্রে তো ঘুরে দেখার মতো কিছু জায়গা দরকার। এদিকে নীলগিরি, চিম্বুক, শৈলপ্রপাত, নীলাচলের মতো জায়গা ভ্রমণ করে ভাজা ভাজা ভাজা করে ফেলেছেন। এখন বান্দরবানেই একটু ভিড়-বাট্টা কম এমন কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখতে চান, উপভোগ করতে চান প্রকৃতি। তাহলে আজকের এই লেখাটি আপনার জন্য।
ইটের মোরাম বিছানো পথটা ধরে হাঁটছি। দুই পাশে উঁচু গাছ, একটু দূরেই পাহাড়ের ঢেউখেলানো শরীর। লোকজন নেই খুব একটা, একজন-দুজন পর্যটককে কেবল দেখা যাচ্ছে, উল্টো দিক থেকে আসছে। পথটায় হালকা চড়াই-উতরাই। পাহাড়টা এখন পাশে চলে এসেছে, কিংবা পথটা পাহাড়ের কাছে। তারপর একটা ঢাল পেরোতেই চলে এলাম প্রিয় সে জায়গাটিতে। মারমাদের ছোট্ট এক বাজার। বেশ কয়েকটা দোকান। ডাব, কলা, পাহাড়ি কমলাসহ হরেক জাতের ফল, আচার-চকলেট সব কিছুই আছে। আমরা বসে বসে ডাবের জল খেলাম। দোকানে বসা এক মারমা নারী আমার মেয়ে ওয়াফিকাকে আদর করল। বান্দরবানের মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র বেশ জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে। পর্যটক কম থাকলে আমারও ভালো লাগে জায়গাটা, ঝুলন্ত সেতু দুটি বিশেষ করে, ছোট্ট একটা কেবল কারও আছে।
তবে কথা হলো ভিড় বেশি থাকলে? তখনই আমি মেঘলার চিড়িয়াখানাটি পেরিয়ে ওই সড়কটায় হাঁটতে থাকি। এখান থেকে ডান পাশের পাহাড়ের যে দৃশ্য পাবেন এক কথায় অসাধারণ। খুব বেশি রোদ না থাকলে, দারুণ এক আনন্দদায়ক হাঁটা, আর সবশেষে মারমা নারীদের পরিচালিত বাজারে ডাবের পানি খেয়ে প্রাণটা জুড়িয়ে নিতে পারেন। বিশেষ করে এখন যখন হালকা শীত পড়তে শুরু করেছে, রোদে এই পথে হাঁটার অভিজ্ঞতার কোনো তুলনা হয় না।
মেঘলার সামনের পাকা রাস্তা ধরে (ঢাকা-বান্দরবান সড়ক) কতকটা হেঁটে এক পাশে দাঁড়ালে ওপর থেকে এখানকার পাহাড় কে কী যে সুন্দর লাগে! এখানটায় একটা রেস্তোরাঁয় এক বৃষ্টিতে আটকা পড়েছিলাম লাঞ্চের পর, রেস্তোরাঁর কাঠের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচের, দূরের ওই পাহাড়গুলো দেখতে দেখতে কীভাবে যে সময় কেটে গিয়েছিল!
লোকজনের ভিড় এড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে যেতে পারেন প্রান্তিক লেকেও। মেঘলার ওখান থেকে বেশি না, পাহাড়ি পথে এই ঘণ্টা-সোয়া ঘণ্টার মতো লাগে। পাহাড়ের মধ্যে, গাছপালা ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক লেক। অনেক পর্যটকই সুন্দর এই লেকটির কথা জানেন না। সিঁড়ি ধরে আমরা নেমে পড়েছিলাম নিচে। এখান থেকে দেখেছিলাম এক মাঝি নৌকা নিয়ে লেকে ধরে হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের আড়ালে। যেখান থেকে দেখছিলাম বেশ রহস্যময় লাগছিল, মনে হচ্ছিল মাঝি যেন নৌকাটা নিয়ে পাহাড়রাজ্যের অচেনা কোনো জগতে চলে যাচ্ছে জলকেটে।
কেয়ারটেকার বলল, লেকের ওপাশের পাহাড়ে মায়া হরিণ, মেছো বিড়াল আছে। কখনো হাতির পালও নামে। ভাগ্য ভালো থাকলে পাড়ে নৌকাও পেয়ে যাবেন, সঙ্গে যদি মাঝিও থাকে অল্প টাকাতেই জলভ্রমণ হয়ে যাবে। আবার যারা বগা লেক যাওয়ার সময় করতে পারবেন না তাদের জন্য হাতের নাগালে সুন্দর বিকল্প হতে পারে এই হ্রদ।
নীলাচল বান্দরবানের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পটগুলোর একটা। আমার বিবেচনায় ওখানে পর্যটকের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আপনারও আমার মতো মানুষের এত ভিড় পছন্দ নয়? ঠিকই তো ঢাকা বা বড় যে কোনো শহরে থাকলে প্রায় গোটা সময়টাই মানুষজনের পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতে হয়, এখন ঘুরতে এসেও এটা কার ভালো লাগে?
তাহলে সমাধান আছে। ভোরে, এখনকার এই চমৎকার আবহাওয়ায় শীতকালেও যেতে পারেন, দেখবেন অনেকটাই সুনসান নীলাচল। ওপর থেকে নিচের পাহাড়রাজ্য কী যে সুন্দর লাগবে! তবে আমার অবশ্য নীলাচলের ওপর থেকে তাকালে খুব আফসোস হয়! মনে হয় আহ্ এই মাইলের পর মাইল পাহাড়! এখানে তো বাঘ, চিতা বাঘ, হাতিদের আনাগোনা থাকার কথা ছিল। একসময় ছিলও! এখন নেই কেন?
কিন্তু আপনি নীলাচলেই সূর্যাস্ত দেখতে চান? তাহলেও কিছুটা হলেও গ্যাঞ্জাম এড়াবার সুযোগ আছে। নীলাচলের মূল যে চত্বরটা ওটা পরোলে নিচে নামার সিঁড়ি, ওই সিঁড়ি পথ ব্যবহার করেই নেমে হাঁটতে থাকুন। মিনিট দশেক পা চালালেই পৌঁছে যাবেন পাহাড়ের কিনারে। এখানটা থেকেও চারপাশের গিরি, সূর্যাস্ত দারুণ উপভোগ করা যায়। কপালের ফেরে এখানটায়ও যদি কোনো বড় দল হাজির হয়, তখন একটা শুড়ি পথ ধরে এক পাশে নেমে মাটির ওপর বসে পড়ুন। চারপাশে তাকালেই পাহাড় জগতের দুয়ার মেলে যাবে সামনে, আলাদা হয়ে যাবেন গোটা পৃথিবী থেকে! চমকে গিয়ে, হঠাৎ দেখবেন পিঁপড়ের মতো একটা-দুটো গাড়ি চলছে নিচের পথে।
এবার মানুষের তুলনামূলক কম চেনা একটি জায়গার গল্প। চিম্বুক পেরোনোর পর তবে নীলিগিরির বেশ আগেই হাতের বামে পড়ে জায়গাটি। ঢালু পথ ধরে উঠে যাবেন পাহাড়ে। আমিও এ বছরের বর্ষায় প্রথম যাই সেখানে। সামনের মূল পথটা আটকানো। তবে মূল সড়ক থেকে বামের পাহাড়ে ওঠার পর একটি পায়ে চলা পথ পেয়ে যাবেন। এই পাহাড়টি চিতার পাহাড় নামেই বেশি পরিচিত। শুরুতে এই ভেবে খুশি হয়েছিলাম যে, এখন না থাকলেও কোনো এক সময় নিশ্চয় চিতা বাঘের আস্তানা ছিল পাহাড়টি। তবে পরে স্থানীয় একজনের কাছে পরে জানলাম এটার আসল নাম নাকি সীতার পাহাড়।
পাহাড়টিতে ওঠার পর প্রথম যে বিষয়টি মুগ্ধ করবে তা হলো মাঝখানে লম্বা ঘাসের রাজ্য। হঠাৎ মনে হতে পারে আফ্রিকার সাভানা এলাকায় চলে এসেছেন। ছবি তোলার জন্য জায়গাটির জুড়ি মেলা ভার। ওপরে একটি অর্ধ নির্মিত দালানও দেখতে পাবেন। যার জায়গা তিনি নাকি একটি রিসোর্ট বানানো শুরু করেছিলেন। কোনো একটা ঝামেলা হওয়ায় কাজ এগুয়নি আর। আবার পাহাড়টির দুই পাশ থেকে ম্রোদের দুটি পাড়ার দেখা পাওয়া যায়। পাহাড়ের ওপর থেকে সবুজ গালিচা বিছানো চারপাশের পাহাড় রাজ্যও ধরা দেয় আশ্চর্য সুন্দর চেহারায়।
তেমনি নীলগিরির দিকে যাওয়ার সময় চলার পথে হয়তো পাহাড়ের বেশ নিচে পেয়ে যাবেন কোনো জুম ঘর। চাইলে শুধু দেখে প্রাণ জুড়াতে পারেন। না হয় পকদণ্ডী পথে কিছুটা হেঁটে জুমঘরে গিয়ে, বাঁশের তৈরি বারান্দায় বসে দু-দণ্ড জিরানোর ফাঁকে চারপাশের প্রকৃতিকে দেখতে পারেন অপলক!
আবার পাহাড়ি পথে চলার সময় ফলমূল নিয়ে বসে থাকতে দেখবেন স্থানীয়দের। পেঁপে, জাম্বুরা, কলা, আনারস, ডাব, কমলা সিজন ভেদে পাবেন অনেক কিছু। পাহাড়ি ফল খাওয়া থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না।
কিংবা চলে আসবেন বান্দরবান শহরের ভেতর সাঙ্গু ব্রিজে। ওটার ওপর দাঁড়িয়ে নিচে তর তর করে বয়ে চলা সাঙ্গু, ওর দু-পাশের পাহাড় দেখতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় সেতুর ঠিক আগে, মাটির পথ ধরে নদী পর্যন্ত নেমে গেলে। ওখান থেকে একটা নৌকা ভাড়া করে বেরিয়ে পড়বেন। নদী, পাহাড় দুটোই যাদের পছন্দ তাদের জন্য এটা হবে এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। তা ছাড়া আপাতত যেহেতু সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে যেতে পারছেন না, এটা হতে পারে আপনার ট্যুরের বড় আকর্ষণ। নদীর দুই পাশে পাহাড়, মাঝে মাঝে একটা-দুটো কুঁড়ে, জুম ঘর মুগ্ধ করবে। যাওয়ার পথে হাতের ডানে মারমাদের পাড়াও পাবেন। নেমে পাড়ায় ঘুরে-ফিরে কাটাতে পারেন অনেকটা সময়।
সব কথার শেষ কথা ভ্রমণে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখি, পাহাড়-জঙ্গলকে ভালোবাসি, ওখানকার জীবনধারাকে শ্রদ্ধা করি, বন্যপ্রাণী রক্ষা করি।
বান্দরবানের রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয়নি এখনো। তবে বান্দরবান সদর, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদমে যেতে বাধা নেই। এখন আলীকদম, লামা যাওয়া সহজ কক্সবাজারের চকরিয়া হয়ে। এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির অবস্থানও কক্সবাজারের কাছে। ধরুন এ পরিস্থিতিতে দুই দিনের জন্য বান্দরবান শহরে গেলেন আপনি, সেক্ষেত্রে তো ঘুরে দেখার মতো কিছু জায়গা দরকার। এদিকে নীলগিরি, চিম্বুক, শৈলপ্রপাত, নীলাচলের মতো জায়গা ভ্রমণ করে ভাজা ভাজা ভাজা করে ফেলেছেন। এখন বান্দরবানেই একটু ভিড়-বাট্টা কম এমন কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখতে চান, উপভোগ করতে চান প্রকৃতি। তাহলে আজকের এই লেখাটি আপনার জন্য।
ইটের মোরাম বিছানো পথটা ধরে হাঁটছি। দুই পাশে উঁচু গাছ, একটু দূরেই পাহাড়ের ঢেউখেলানো শরীর। লোকজন নেই খুব একটা, একজন-দুজন পর্যটককে কেবল দেখা যাচ্ছে, উল্টো দিক থেকে আসছে। পথটায় হালকা চড়াই-উতরাই। পাহাড়টা এখন পাশে চলে এসেছে, কিংবা পথটা পাহাড়ের কাছে। তারপর একটা ঢাল পেরোতেই চলে এলাম প্রিয় সে জায়গাটিতে। মারমাদের ছোট্ট এক বাজার। বেশ কয়েকটা দোকান। ডাব, কলা, পাহাড়ি কমলাসহ হরেক জাতের ফল, আচার-চকলেট সব কিছুই আছে। আমরা বসে বসে ডাবের জল খেলাম। দোকানে বসা এক মারমা নারী আমার মেয়ে ওয়াফিকাকে আদর করল। বান্দরবানের মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র বেশ জনপ্রিয় পর্যটকদের কাছে। পর্যটক কম থাকলে আমারও ভালো লাগে জায়গাটা, ঝুলন্ত সেতু দুটি বিশেষ করে, ছোট্ট একটা কেবল কারও আছে।
তবে কথা হলো ভিড় বেশি থাকলে? তখনই আমি মেঘলার চিড়িয়াখানাটি পেরিয়ে ওই সড়কটায় হাঁটতে থাকি। এখান থেকে ডান পাশের পাহাড়ের যে দৃশ্য পাবেন এক কথায় অসাধারণ। খুব বেশি রোদ না থাকলে, দারুণ এক আনন্দদায়ক হাঁটা, আর সবশেষে মারমা নারীদের পরিচালিত বাজারে ডাবের পানি খেয়ে প্রাণটা জুড়িয়ে নিতে পারেন। বিশেষ করে এখন যখন হালকা শীত পড়তে শুরু করেছে, রোদে এই পথে হাঁটার অভিজ্ঞতার কোনো তুলনা হয় না।
মেঘলার সামনের পাকা রাস্তা ধরে (ঢাকা-বান্দরবান সড়ক) কতকটা হেঁটে এক পাশে দাঁড়ালে ওপর থেকে এখানকার পাহাড় কে কী যে সুন্দর লাগে! এখানটায় একটা রেস্তোরাঁয় এক বৃষ্টিতে আটকা পড়েছিলাম লাঞ্চের পর, রেস্তোরাঁর কাঠের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচের, দূরের ওই পাহাড়গুলো দেখতে দেখতে কীভাবে যে সময় কেটে গিয়েছিল!
লোকজনের ভিড় এড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে যেতে পারেন প্রান্তিক লেকেও। মেঘলার ওখান থেকে বেশি না, পাহাড়ি পথে এই ঘণ্টা-সোয়া ঘণ্টার মতো লাগে। পাহাড়ের মধ্যে, গাছপালা ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক লেক। অনেক পর্যটকই সুন্দর এই লেকটির কথা জানেন না। সিঁড়ি ধরে আমরা নেমে পড়েছিলাম নিচে। এখান থেকে দেখেছিলাম এক মাঝি নৌকা নিয়ে লেকে ধরে হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের আড়ালে। যেখান থেকে দেখছিলাম বেশ রহস্যময় লাগছিল, মনে হচ্ছিল মাঝি যেন নৌকাটা নিয়ে পাহাড়রাজ্যের অচেনা কোনো জগতে চলে যাচ্ছে জলকেটে।
কেয়ারটেকার বলল, লেকের ওপাশের পাহাড়ে মায়া হরিণ, মেছো বিড়াল আছে। কখনো হাতির পালও নামে। ভাগ্য ভালো থাকলে পাড়ে নৌকাও পেয়ে যাবেন, সঙ্গে যদি মাঝিও থাকে অল্প টাকাতেই জলভ্রমণ হয়ে যাবে। আবার যারা বগা লেক যাওয়ার সময় করতে পারবেন না তাদের জন্য হাতের নাগালে সুন্দর বিকল্প হতে পারে এই হ্রদ।
নীলাচল বান্দরবানের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পটগুলোর একটা। আমার বিবেচনায় ওখানে পর্যটকের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আপনারও আমার মতো মানুষের এত ভিড় পছন্দ নয়? ঠিকই তো ঢাকা বা বড় যে কোনো শহরে থাকলে প্রায় গোটা সময়টাই মানুষজনের পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতে হয়, এখন ঘুরতে এসেও এটা কার ভালো লাগে?
তাহলে সমাধান আছে। ভোরে, এখনকার এই চমৎকার আবহাওয়ায় শীতকালেও যেতে পারেন, দেখবেন অনেকটাই সুনসান নীলাচল। ওপর থেকে নিচের পাহাড়রাজ্য কী যে সুন্দর লাগবে! তবে আমার অবশ্য নীলাচলের ওপর থেকে তাকালে খুব আফসোস হয়! মনে হয় আহ্ এই মাইলের পর মাইল পাহাড়! এখানে তো বাঘ, চিতা বাঘ, হাতিদের আনাগোনা থাকার কথা ছিল। একসময় ছিলও! এখন নেই কেন?
কিন্তু আপনি নীলাচলেই সূর্যাস্ত দেখতে চান? তাহলেও কিছুটা হলেও গ্যাঞ্জাম এড়াবার সুযোগ আছে। নীলাচলের মূল যে চত্বরটা ওটা পরোলে নিচে নামার সিঁড়ি, ওই সিঁড়ি পথ ব্যবহার করেই নেমে হাঁটতে থাকুন। মিনিট দশেক পা চালালেই পৌঁছে যাবেন পাহাড়ের কিনারে। এখানটা থেকেও চারপাশের গিরি, সূর্যাস্ত দারুণ উপভোগ করা যায়। কপালের ফেরে এখানটায়ও যদি কোনো বড় দল হাজির হয়, তখন একটা শুড়ি পথ ধরে এক পাশে নেমে মাটির ওপর বসে পড়ুন। চারপাশে তাকালেই পাহাড় জগতের দুয়ার মেলে যাবে সামনে, আলাদা হয়ে যাবেন গোটা পৃথিবী থেকে! চমকে গিয়ে, হঠাৎ দেখবেন পিঁপড়ের মতো একটা-দুটো গাড়ি চলছে নিচের পথে।
এবার মানুষের তুলনামূলক কম চেনা একটি জায়গার গল্প। চিম্বুক পেরোনোর পর তবে নীলিগিরির বেশ আগেই হাতের বামে পড়ে জায়গাটি। ঢালু পথ ধরে উঠে যাবেন পাহাড়ে। আমিও এ বছরের বর্ষায় প্রথম যাই সেখানে। সামনের মূল পথটা আটকানো। তবে মূল সড়ক থেকে বামের পাহাড়ে ওঠার পর একটি পায়ে চলা পথ পেয়ে যাবেন। এই পাহাড়টি চিতার পাহাড় নামেই বেশি পরিচিত। শুরুতে এই ভেবে খুশি হয়েছিলাম যে, এখন না থাকলেও কোনো এক সময় নিশ্চয় চিতা বাঘের আস্তানা ছিল পাহাড়টি। তবে পরে স্থানীয় একজনের কাছে পরে জানলাম এটার আসল নাম নাকি সীতার পাহাড়।
পাহাড়টিতে ওঠার পর প্রথম যে বিষয়টি মুগ্ধ করবে তা হলো মাঝখানে লম্বা ঘাসের রাজ্য। হঠাৎ মনে হতে পারে আফ্রিকার সাভানা এলাকায় চলে এসেছেন। ছবি তোলার জন্য জায়গাটির জুড়ি মেলা ভার। ওপরে একটি অর্ধ নির্মিত দালানও দেখতে পাবেন। যার জায়গা তিনি নাকি একটি রিসোর্ট বানানো শুরু করেছিলেন। কোনো একটা ঝামেলা হওয়ায় কাজ এগুয়নি আর। আবার পাহাড়টির দুই পাশ থেকে ম্রোদের দুটি পাড়ার দেখা পাওয়া যায়। পাহাড়ের ওপর থেকে সবুজ গালিচা বিছানো চারপাশের পাহাড় রাজ্যও ধরা দেয় আশ্চর্য সুন্দর চেহারায়।
তেমনি নীলগিরির দিকে যাওয়ার সময় চলার পথে হয়তো পাহাড়ের বেশ নিচে পেয়ে যাবেন কোনো জুম ঘর। চাইলে শুধু দেখে প্রাণ জুড়াতে পারেন। না হয় পকদণ্ডী পথে কিছুটা হেঁটে জুমঘরে গিয়ে, বাঁশের তৈরি বারান্দায় বসে দু-দণ্ড জিরানোর ফাঁকে চারপাশের প্রকৃতিকে দেখতে পারেন অপলক!
আবার পাহাড়ি পথে চলার সময় ফলমূল নিয়ে বসে থাকতে দেখবেন স্থানীয়দের। পেঁপে, জাম্বুরা, কলা, আনারস, ডাব, কমলা সিজন ভেদে পাবেন অনেক কিছু। পাহাড়ি ফল খাওয়া থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না।
কিংবা চলে আসবেন বান্দরবান শহরের ভেতর সাঙ্গু ব্রিজে। ওটার ওপর দাঁড়িয়ে নিচে তর তর করে বয়ে চলা সাঙ্গু, ওর দু-পাশের পাহাড় দেখতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় সেতুর ঠিক আগে, মাটির পথ ধরে নদী পর্যন্ত নেমে গেলে। ওখান থেকে একটা নৌকা ভাড়া করে বেরিয়ে পড়বেন। নদী, পাহাড় দুটোই যাদের পছন্দ তাদের জন্য এটা হবে এক দুর্লভ অভিজ্ঞতা। তা ছাড়া আপাতত যেহেতু সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে যেতে পারছেন না, এটা হতে পারে আপনার ট্যুরের বড় আকর্ষণ। নদীর দুই পাশে পাহাড়, মাঝে মাঝে একটা-দুটো কুঁড়ে, জুম ঘর মুগ্ধ করবে। যাওয়ার পথে হাতের ডানে মারমাদের পাড়াও পাবেন। নেমে পাড়ায় ঘুরে-ফিরে কাটাতে পারেন অনেকটা সময়।
সব কথার শেষ কথা ভ্রমণে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখি, পাহাড়-জঙ্গলকে ভালোবাসি, ওখানকার জীবনধারাকে শ্রদ্ধা করি, বন্যপ্রাণী রক্ষা করি।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
২ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
২ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
২ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
২ দিন আগে