ইয়াসির আরাফাত
শরীরে তখন অ্যাড্রিনালিন রাশ! প্রাচীন সিল্ক রোডের তিন প্রধান শহর সমরখন্দ, বুখারা ও খিভার বাতাস আমার গায়ে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। বুখারা দেখে অভূতপূর্ব আনন্দ হয়েছে, খিভা দেখে মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে। আর সমরখন্দ! স্রেফ নির্বাক করেছে।
সমরখন্দ ছিল সে সময় উজবেকিস্তানের সমরখন্দ প্রদেশের রাজধানী, বুখারা ছিল শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র আর খিভা ছিল মরভূমির দরজা। যাঁরা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যেতেন তাঁদের জন্য খিভা ছিল দীর্ঘ মরুভূমিতে প্রবেশের পূর্বে শেষ শহর, যেখানে কাফেলাগুলো থামত মালপত্র ভরপুর করার জন্য। আর যাঁরা পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে আসতেন, তাঁদের জন্য খিভা ছিল দীর্ঘ মরুভূমি পাড়ি দেওয়ার পর প্রথম শহর, যেখানে কাফেলা বিশ্রাম নিত।
সমরখন্দ
আমির তৈমুর নির্মিত তিমুরিদ সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল সমরখন্দ। সেটি ছিল মধ্য এশিয়া এবং উজবেক জাতির সোনালি যুগ। আমির তৈমুর একজন যাযাবর এবং দুর্ধর্ষ যোদ্ধা হলেও শিল্প, সাহিত্য, জ্ঞান ও বিজ্ঞানের প্রতি ছিলেন প্রচণ্ড উৎসাহী। যখন যেখানে যে যুদ্ধ জয় করতেন, সেখান থেকেই নিয়ে আসতেন সেখানকার বরেণ্য বিজ্ঞানী, শিল্পী ও প্রকৌশলীদের।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেরা বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলীদের জড়ো করে তিনি গড়ে তোলেন রাজধানী সমরখন্দ। সে শহরকে সাজান মনের মতো করে। তৈমুর স্বয়ং নির্দেশ দিতেন কর্মচারীদের। প্রায় সময়ই একই ভবন তিনি বানাতেন, ভাঙতেন এবং আবার বানাতেন যতক্ষণ না মনের মতো হতো। কাস্তিয়ার রাজা হেনরি ৩-এর দূত রুই গঞ্জালেজ, যিনি ১৪০৩ থেকে ১৪০৬ সাল পর্যন্ত সমরখন্দ শহরে কাটিয়েছিলেন, সমরখন্দ শহরে কীভাবে সারা বছর নির্মাণকাজ চলে তার বিস্তারিত বিবরণ তিনি রাজা হেনরির কাছে পাঠিয়েছিলেন।
তৈমুরের মৃত্যুর পর তাঁর নাতি উলুগ বেগও দাদার দেখানো পথে হাঁটতে থাকেন এবং শহরের সৌন্দর্য আরও সমৃদ্ধ করেন। উলুগ বেগের আমলে নির্মিত হয় রেজিস্তান স্কয়ার, যেটি ছিল রাজধানী সমরখন্দের প্রাণকেন্দ্র। সেখান থেকে দেওয়া হতো রাজকীয় সব ভাষণ। ইসলামি বিশ্বে উজবেকিস্তান একসময় ছিল গবেষণার কেন্দ্র। ইতিহাসখ্যাত অনেক আলেম, হাদিস বিশেষজ্ঞ, গবেষক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানীর জন্ম হয়েছে এই ভূমিতে। সেই সব মানুষের মধ্যে অন্যতম ইমাম বুখারি, ইমাম তিরমিজি, ইবনে সিনা।
বুখারা
উজবেকিস্তানের ভ্রমণ সম্পূর্ণ হয় মধ্য এশিয়ার পবিত্র শহর, ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বুখারা ভ্রমণ ছাড়া। কয়েক শ বছর বুখারা ছিল মুসলিম বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর, যেখানে চর্চা হতো জ্ঞান-বিজ্ঞানের, যেখানে বসবাস করতেন বিশ্বসেরা আলেমরা, যেখানে চলত রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য। ছিল বিশাল মসজিদ ও মাদ্রাসা, আকাশছোঁয়া মিনার, কিছুক্ষণ পরপর হাম্মাম, প্রতিটি রাস্তার কোণে কাভার্ড মার্কেট—যেগুলোকে বর্তমানের শপিং মলের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এই সবের উপস্থিতি দেখেই অনুমান করা যায়, কয়েক শ বছর আগে এ শহর ছিল সিল্ক রোডের মধ্যমণি।
সেই গৌরবোজ্জ্বল অতীত এখন না থাকলেও রয়ে গেছে তার স্মৃতিচিহ্ন। শহরের প্রধান প্রতীক প্রায় ৪৬ মিটার বা ১৫২ ফুট উঁচু কালিয়ান মিনার, যেটি বুখারার সবচেয়ে পুরোনো স্তম্ভ। ১১২৭ সালে নির্মিত এই মিনার শহরের একমাত্র পুরোনো ভবন, যা নতুন করে তৈরি করা হয়নি। ১৩ শতকে চেঙ্গিস খান বুখারা দখল করে শহরের প্রতিটি বাড়িঘর ও স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেও মিনারটি ধ্বংস করেননি। এই মিনারের সৌন্দর্য তাঁকে অভিভূত করেছিল বলে শোনা যায়। অথচ একসময় এই মিনারের চূড়া থেকে ফেলে দিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দণ্ড কার্যকর করা হতো। ফলে কালিয়ান মিনারের অন্য নাম হয়ে গিয়েছিল টাওয়ার অব ডেথ। কে বলতে পারে, এই দণ্ড কাহিনিই চেঙ্গিস খানকে আকর্ষণ করেছিল কি না।
খিভা
সিল্ক রোডের যত শহর ছিল সেগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে সুন্দরতম শহর হচ্ছে খিভা। এ কারণেই আমি এ শহরকে বলি উজবেকিস্তান ট্যুরের হাইলাইট। এই খিভা শহর শুধু উজবেকিস্তানেরই নয়, বরং পুরো মধ্য এশিয়ার প্রথম ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছিল। কেউ যদি উজবেকিস্তানের শুধু একটি শহর দেখতে চান, তাহলে সেটি খিভা হওয়াই সমীচীন। এ শহর না দেখে উজবেকিস্তান থেকে ফিরে আসা মানে সিল্ক রোডের আসল সৌন্দর্য অদেখা থাকা।
যোগাযোগ
উজবেকিস্তানে এক শহর থেকে আরেক শহরে চলাচল করার চমৎকার মাধ্যম ট্রেন। এ দেশের ট্রেনযাত্রার অভিজ্ঞতা এককথায় অপূর্ব।
উজবেকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো পড়েছে দেশটির পূর্ব প্রান্তে। এ কারণে রাজধানী তাশকেন্ত বা তাসখন্দ শহরটিও দেশটির একেবারে পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ শহর পূর্ব দিকে হওয়ার কারণে দেশটির পূর্ব অংশ অত্যাধুনিক ট্রেন যোগাযোগে খুবই ভালো। রাজধানী তাশকেন্ত থেকে বুখারা পর্যন্ত হাইস্পিড ট্রেন চলাচল করে। এই ট্রেন সার্ভিসে সময়ের হেরফের নেই। তবে বুখারার পর থেকে হাইস্পিড ট্রেন সার্ভিস চালু হয়নি।
লেখক: লন্ডনপ্রবাসী পর্যটক
শরীরে তখন অ্যাড্রিনালিন রাশ! প্রাচীন সিল্ক রোডের তিন প্রধান শহর সমরখন্দ, বুখারা ও খিভার বাতাস আমার গায়ে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। বুখারা দেখে অভূতপূর্ব আনন্দ হয়েছে, খিভা দেখে মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে। আর সমরখন্দ! স্রেফ নির্বাক করেছে।
সমরখন্দ ছিল সে সময় উজবেকিস্তানের সমরখন্দ প্রদেশের রাজধানী, বুখারা ছিল শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র আর খিভা ছিল মরভূমির দরজা। যাঁরা প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে যেতেন তাঁদের জন্য খিভা ছিল দীর্ঘ মরুভূমিতে প্রবেশের পূর্বে শেষ শহর, যেখানে কাফেলাগুলো থামত মালপত্র ভরপুর করার জন্য। আর যাঁরা পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে আসতেন, তাঁদের জন্য খিভা ছিল দীর্ঘ মরুভূমি পাড়ি দেওয়ার পর প্রথম শহর, যেখানে কাফেলা বিশ্রাম নিত।
সমরখন্দ
আমির তৈমুর নির্মিত তিমুরিদ সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল সমরখন্দ। সেটি ছিল মধ্য এশিয়া এবং উজবেক জাতির সোনালি যুগ। আমির তৈমুর একজন যাযাবর এবং দুর্ধর্ষ যোদ্ধা হলেও শিল্প, সাহিত্য, জ্ঞান ও বিজ্ঞানের প্রতি ছিলেন প্রচণ্ড উৎসাহী। যখন যেখানে যে যুদ্ধ জয় করতেন, সেখান থেকেই নিয়ে আসতেন সেখানকার বরেণ্য বিজ্ঞানী, শিল্পী ও প্রকৌশলীদের।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেরা বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলীদের জড়ো করে তিনি গড়ে তোলেন রাজধানী সমরখন্দ। সে শহরকে সাজান মনের মতো করে। তৈমুর স্বয়ং নির্দেশ দিতেন কর্মচারীদের। প্রায় সময়ই একই ভবন তিনি বানাতেন, ভাঙতেন এবং আবার বানাতেন যতক্ষণ না মনের মতো হতো। কাস্তিয়ার রাজা হেনরি ৩-এর দূত রুই গঞ্জালেজ, যিনি ১৪০৩ থেকে ১৪০৬ সাল পর্যন্ত সমরখন্দ শহরে কাটিয়েছিলেন, সমরখন্দ শহরে কীভাবে সারা বছর নির্মাণকাজ চলে তার বিস্তারিত বিবরণ তিনি রাজা হেনরির কাছে পাঠিয়েছিলেন।
তৈমুরের মৃত্যুর পর তাঁর নাতি উলুগ বেগও দাদার দেখানো পথে হাঁটতে থাকেন এবং শহরের সৌন্দর্য আরও সমৃদ্ধ করেন। উলুগ বেগের আমলে নির্মিত হয় রেজিস্তান স্কয়ার, যেটি ছিল রাজধানী সমরখন্দের প্রাণকেন্দ্র। সেখান থেকে দেওয়া হতো রাজকীয় সব ভাষণ। ইসলামি বিশ্বে উজবেকিস্তান একসময় ছিল গবেষণার কেন্দ্র। ইতিহাসখ্যাত অনেক আলেম, হাদিস বিশেষজ্ঞ, গবেষক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানীর জন্ম হয়েছে এই ভূমিতে। সেই সব মানুষের মধ্যে অন্যতম ইমাম বুখারি, ইমাম তিরমিজি, ইবনে সিনা।
বুখারা
উজবেকিস্তানের ভ্রমণ সম্পূর্ণ হয় মধ্য এশিয়ার পবিত্র শহর, ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বুখারা ভ্রমণ ছাড়া। কয়েক শ বছর বুখারা ছিল মুসলিম বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর, যেখানে চর্চা হতো জ্ঞান-বিজ্ঞানের, যেখানে বসবাস করতেন বিশ্বসেরা আলেমরা, যেখানে চলত রমরমা ব্যবসা-বাণিজ্য। ছিল বিশাল মসজিদ ও মাদ্রাসা, আকাশছোঁয়া মিনার, কিছুক্ষণ পরপর হাম্মাম, প্রতিটি রাস্তার কোণে কাভার্ড মার্কেট—যেগুলোকে বর্তমানের শপিং মলের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এই সবের উপস্থিতি দেখেই অনুমান করা যায়, কয়েক শ বছর আগে এ শহর ছিল সিল্ক রোডের মধ্যমণি।
সেই গৌরবোজ্জ্বল অতীত এখন না থাকলেও রয়ে গেছে তার স্মৃতিচিহ্ন। শহরের প্রধান প্রতীক প্রায় ৪৬ মিটার বা ১৫২ ফুট উঁচু কালিয়ান মিনার, যেটি বুখারার সবচেয়ে পুরোনো স্তম্ভ। ১১২৭ সালে নির্মিত এই মিনার শহরের একমাত্র পুরোনো ভবন, যা নতুন করে তৈরি করা হয়নি। ১৩ শতকে চেঙ্গিস খান বুখারা দখল করে শহরের প্রতিটি বাড়িঘর ও স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেও মিনারটি ধ্বংস করেননি। এই মিনারের সৌন্দর্য তাঁকে অভিভূত করেছিল বলে শোনা যায়। অথচ একসময় এই মিনারের চূড়া থেকে ফেলে দিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দণ্ড কার্যকর করা হতো। ফলে কালিয়ান মিনারের অন্য নাম হয়ে গিয়েছিল টাওয়ার অব ডেথ। কে বলতে পারে, এই দণ্ড কাহিনিই চেঙ্গিস খানকে আকর্ষণ করেছিল কি না।
খিভা
সিল্ক রোডের যত শহর ছিল সেগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে সুন্দরতম শহর হচ্ছে খিভা। এ কারণেই আমি এ শহরকে বলি উজবেকিস্তান ট্যুরের হাইলাইট। এই খিভা শহর শুধু উজবেকিস্তানেরই নয়, বরং পুরো মধ্য এশিয়ার প্রথম ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেয়েছিল। কেউ যদি উজবেকিস্তানের শুধু একটি শহর দেখতে চান, তাহলে সেটি খিভা হওয়াই সমীচীন। এ শহর না দেখে উজবেকিস্তান থেকে ফিরে আসা মানে সিল্ক রোডের আসল সৌন্দর্য অদেখা থাকা।
যোগাযোগ
উজবেকিস্তানে এক শহর থেকে আরেক শহরে চলাচল করার চমৎকার মাধ্যম ট্রেন। এ দেশের ট্রেনযাত্রার অভিজ্ঞতা এককথায় অপূর্ব।
উজবেকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো পড়েছে দেশটির পূর্ব প্রান্তে। এ কারণে রাজধানী তাশকেন্ত বা তাসখন্দ শহরটিও দেশটির একেবারে পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ শহর পূর্ব দিকে হওয়ার কারণে দেশটির পূর্ব অংশ অত্যাধুনিক ট্রেন যোগাযোগে খুবই ভালো। রাজধানী তাশকেন্ত থেকে বুখারা পর্যন্ত হাইস্পিড ট্রেন চলাচল করে। এই ট্রেন সার্ভিসে সময়ের হেরফের নেই। তবে বুখারার পর থেকে হাইস্পিড ট্রেন সার্ভিস চালু হয়নি।
লেখক: লন্ডনপ্রবাসী পর্যটক
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে