পর্যটনে যে বদল চাই

আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০৯: ০৪
Thumbnail image

চলছে বদলের পালা। চারদিকে এখন সংস্কারের দাবি। পর্যটন খাতের ইতিবাচক বদল বিষয়ে নিজেদের চাওয়ার কথা জানিয়েছেন এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গে সফল আরোহণকারী বাঙালি বাবর আলী এবং পর্যটক এলিজা বিনতে এলাহী

দেশের মানুষ খুব বন্ধুত্বপূর্ণ
দেশের ৬৪ জেলা আমার হাঁটার সুযোগ হয়েছে। সেসব এলাকায় যাওয়ার আগে মনে হয়েছিল যে আমি ঐতিহাসিক জায়গাগুলো দেখব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখব। ফেরার পর মনে হয়েছে, এ দেশের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য মানুষ। এটিকে তুলে ধরা যেতে পারে। আমার যত বিদেশি বন্ধু এসেছে, ফেরার পর তারা বলেছে, এ দেশের মানুষ খুব বন্ধুত্বপূর্ণ। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে।

আমি সব সময় বিশ্বাস করি, পৃথিবীটা আমরা পূর্বসূরিদের কাছ থেকে পাইনি। আমরা উত্তরসূরিদের কাছ থেকে ধার হিসেবে নিয়েছি। এটি যদি আমরা আসলেই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, তাহলে যেকোনো জায়গায় গেলে সেই জায়গাটাকে এমন করে ফেলে আসব না, যাতে পরে একজন গিয়ে বা পরের প্রজন্ম আমার মতো আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়। বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখতে হবে।

আমরা প্রকৃতিগতভাবে খানিক চ্যালেঞ্জড, এটা সত্য। আমাদের হয়তো অনেক বৈচিত্র্য নেই। কিন্তু যা আছে, যেমন, আমাদের পার্বত্য অঞ্চল। এমন বৈচিত্র্যময় জায়গা পৃথিবীর কম দেশেই আছে। আমার অভিজ্ঞতায় সেটিই মনে হয়। এসব জায়গার নিরাপত্তার বিষয়টিকে উন্নত করা দরকার। সেগুলোকে ন্যাশনাল পার্ক ঘোষণা করে, নিরাপত্তা বাড়িয়ে এতে বিভিন্ন অ্যাকটিভিটির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নেপাল বা ভারতে যেমন আছে। কিংবা আরও অন্যান্য দেশে যেমন আছে। এসব জায়গায় তারাই যায়, যারা রোমাঞ্চ ভালোবাসে। এখানকার কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করে এসব এলাকায় চার বা ছয় দিনের ট্রেকিং করানো যেতে পারে। এতে স্থানীয় মানুষও উপকৃত হবে।

বাবর আলী

জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো যেন  অতিরিক্ত পর্যটনে নষ্ট না হয়।

জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে, যাতে সেগুলো অতিরিক্ত পর্যটনে নষ্ট না হয়। ইতিমধ্যে কিছু পর্যটনকেন্দ্রে সে অবস্থা দেখা গেছে। ভবিষ্যতে যেন সেগুলোর ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকে। আমরা তো প্রকৃতিই দেখতে যাই। সেগুলোতে যেন প্রকৃতি বেশি থাকে, মানুষ কম থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।

সিন্ডিকেটের সমস্যা দূর করা জরুরি। বিশেষভাবে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে সিন্ডিকেট সমস্যা বেশি হয়। সেগুলোতে এভাবে যানবাহন ভাড়া, হোটেল ভাড়া ইত্যাদি সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়। স্থানীয় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন কারণে সেগুলো হয়। সে জন্যই হয়তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো অযৌক্তিক। এগুলো বন্ধ করা গেলে নির্দিষ্ট স্পটগুলোতে এই অযৌক্তিকতা দূর হবে বলে আশা করি। আশা করব ভবিষ্যতে সেগুলো থাকবে না।

হেরিটেজ ট্যুরিজম এগিয়ে নেওয়া হোক
দেশের সামগ্রিক ট্যুরিজমকে প্রচারে আনার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা ট্যুরিজম, ব্যবসা ট্যুরিজম, ধর্ম ট্যুরিজম, হেরিটেজ ট্যুরিজম নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করতে হবে। উন্নত বিশ্বসহ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো তাদের পর্যটনশিল্প এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও এ পথে হাঁটতে হবে।

এলিজা বিনতে এলাহী

প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব খাবার, পোশাক ও সংস্কৃতিকে হেরিটেজ ট্যুরিজমের আওতায় আনতে হবে।

ইউরোপের দেশগুলোতে আমি দেখেছি, ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য প্রচারের কাজে তারা পুরোনো শহরকে ব্যবহার করছে। পোল্যান্ড, জার্মানি, বেলজিয়ামসহ আরও নানা দেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় সব স্থাপনাই পুনর্নির্মাণ করেছে হেরিটেজ ট্যুরিজমকে বিবেচনায় রেখে। শুধু ইউরোপ নয়, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত প্রভৃতি দেশও হেরিটেজ ট্যুরিজমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। আমাদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ জরুরি।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশের দুটি স্থাপনা ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে স্থান পেয়েছে। আমাদের আরও এ রকম বহু স্থাপনা আছে, যেগুলো বিশ্বমানের। আমাদের রয়েছে হাজার বছরের পুরোনো বৌদ্ধবিহার, সংঘারাম, মেঘালিথ স্তম্ভ, মোগল আমলের স্থাপনা, সুলতানি আমলের স্থাপনা, বিভিন্ন জলদুর্গ, পর্তুগিজদের তৈরি দুর্গ, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও তাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আছে। এগুলো ধীরে ধীরে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাচ্ছে। সেগুলোকে দেখার উপযোগী করা জরুরি। এ জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।

আমাদের রয়েছে প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব খাবার, পোশাক ও সংস্কৃতি। সেগুলো হেরিটেজ ট্যুরিজমের আওতায় আনতে হবে।

বর্তমান সময়ে বিশ্ব পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য ডিজিটালাইজেশনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত