রজত কান্তি রায়, ঢাকা
চালিভাংগা গ্রামটি দ্বীপের মতো। এর চারদিকে মেঘনা নদী। বর্ষায় এর রূপ ভয়ংকর হয়ে ওঠে, সেটা না বললেও বোঝা যায়। শীতে এর অবস্থা ভয়াবহ থাকে কুয়াশার কারণে। এই দ্বীপের মতো গ্রামটিতে জন্ম এবং বর্ষায় মেঘনার ভয়ংকর রূপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে ওঠা মো. আল-আমিন আকিকের। সে জন্যই হয়তো এই ত্রিশ না হয়ে ওঠা বয়সে অভিযাত্রার রোমাঞ্চ নেচে ওঠে তাঁর রক্তে। তিনি পাড়ি দেন পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্রের মতো বড় বড় নদ-নদী, সাইকেলে ঘোরেন চৌষট্টি জেলা, ম্যারাথন দৌড়াতে চলে যান মেঘালয়ের মাওয়ালিং কিংবা ট্রেকিং করতে নাগাল্যান্ডের জুকো ভ্যালি। আর স্বপ্ন দেখেন আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার।
বললাম, প্রেম করার সময় পান? বয়স তো এখন প্রেম করারই! হাসলেন আকিক। জানালেন, তাঁর কোনো ‘গার্লফ্রেন্ড’ নেই। সাইকেল চালাতে বা দৌড়াতে গিয়ে যাতে পেশি শক্ত হয়ে না যায়, টান না পড়ে তাতে, সে জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হয়। তার ওপর বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেওয়া তো আছেই। এত কাজের বাইরে তাঁর সময় কোথায় প্রেম করার! এই একহারা গড়নের তরুণটির কথায় কষ্ট পাওয়া উচিত, নাকি হাসা—সেটা ভাবতে না পেরে পরের প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম তাঁর দিকে।
ভয়ংকর মেঘনার গল্প
আবদুল মতিন মাস্টার ও পেয়ারা বেগম দম্পতির তিন ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে বড় মো. আল-আমিন আকিক। জন্ম ১৯৯৪ সালে। আকিকের গ্রামের বাড়ি প্রশাসনিকভাবে কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলায় হলেও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ সহজ। সেই সূত্রে আকিক গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হন সোনারগাঁয়ের বৈদ্দার বাজার এন এ এম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে। স্কুলটি ছিল সোনারগাঁ জাদুঘরের কাছাকাছি এলাকায়। বর্ষায় উত্তাল আর শীতে কুয়াশায় দৃষ্টি আটকে যাওয়া মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে সপ্তাহে ছয় দিন তাঁকে স্কুলে যেতে হতো। সে এক দুর্ধর্ষ যাত্রা! এমনও হয়েছে, শীতের কুয়াশায় নৌকা পথ হারিয়ে চলে গেছে অন্যদিকে। স্কুল যাওয়া হয়নি আর। দুপুর পেরিয়ে ফিরতে হয়েছে বাড়ি। কিশোরকালের এই ‘অভিযাত্রা’ই আকিককে সাহসী করে তোলে ভ্রমণ, সাঁতার কিংবা সাইক্লিংয়ে।
ভ্রমণের শুরু
আকিক বলছিলেন, ভ্রমণের শুরুটা তাঁর স্কুল পালানো থেকে। উচ্চমাধ্যমিক স্কুল সোনারগাঁ জাদুঘর আর পানাম সিটির কাছাকাছি হওয়ায় স্কুল পালিয়ে সেসব জায়গায় ঘোরাঘুরি দিয়েই ভ্রমণের হাতেখড়ি। তবে এটা জোরালো হয় ২০১৩ সাল থেকে। সে সময় তিনি কলেজশিক্ষার্থী। পড়েন দনিয়া কলেজে। ‘স্কুল পালানো টাইপ’ মানুষ হওয়ায় বন্ধুবান্ধব জুটে যায় বিস্তর। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ শুরু করেন আকিক। তারপর সিদ্ধেশ্বরী কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে বিবিএতে ভর্তি হন। এ সময় থেকে শুরু করেন টিউশনি এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন বিখ্যাত কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেওয়া। সেসব করে কিছু অর্থ আসে হাতে। সেই অর্থ নিয়মিত ব্যয় হতে থাকে ভ্রমণের পেছনে। এভাবেই তিনি একসময় এমবিএ শেষ করেন। টিউশনি ও কোচিংয়ে লেকচার দেওয়ার অর্থই এখনো তাঁর মূল রোজগারের জায়গা। সেই টাকা দিয়েই চলে ঘোরাঘুরি। অবশ্য এখন ইউটিউব, টিকটক ও ফেসবুকে কনটেন্ট বানিয়ে অল্প কিছু রোজগার করেন আকিক।
সাঁতার
আকিকের ঘোরাঘুরি এবং সাঁতার, সাইক্লিং, ম্যারাথন আর ট্রেকিংয়ের তালিকা বেশ দীর্ঘ। ২০২১ সালের মে মাসে আকিক প্রথম মেঘনা নদী পাড়ি দেন। সেই পথ ছিল ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। এরপরেই তিনি ওই বছরের ডিসেম্বরের ২০ তারিখে অংশ নেন বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া প্রতিযোগিতায়। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার তিনি সাঁতরে পার হন ৫ ঘণ্টা ৪৭ মিনিটে। সেদিন সাগর ছিল ভীষণ উত্তাল। খাবি খেতে খেতে তিনি ছুঁতে পেরেছিলেন সেন্ট মার্টিনের ফিনিশিং পয়েন্ট। লবণপানি আর ঠান্ডায় ঠোঁট সাদা হয়ে গিয়েছিল আকিকের। দুই দিন ঠিকমতো খেতে পারেননি, কিন্তু শান্তি পেয়েছিলেন ভীষণ। বৈরী পরিবেশে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সেই ঘটনা মেঘনাপাড়ের ছেলেটির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল অনেকখানি। এরপর তিনি কুড়িগ্রাম জেলা ক্রীড়া অফিসের আয়োজনে ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র নদ সাঁতরে পাড়ি দেন। ব্রহ্মপুত্রের বরফগলা ঠান্ডা পানি শরীর ও আত্মায় কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল সে-যাত্রা। এরপর গত ১৮ মার্চ সিলেটের লালাখালের সারি নদীতে ১০ কিলোমিটার সাঁতরে ফিরেছেন। সিলেট জেলা ক্রীড়া অফিসের আয়োজনে সেই প্রতিযোগিতায় তিনি চতুর্থ হন।
তবে হ্যাঁ, বাংলা চ্যানেল বা অন্যান্য নদী নয়, আকিক মনে করেন, নদীর মধ্যে পদ্মা পাড়ি দেওয়া কঠিন কাজ। ২০২২ সালের ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জে পদ্মার মৈনটঘাট থেকে ১৩ কিলোমিটার সাঁতরে পৌঁছান ফরিদপুরের শয়তানখালী ঘাটে, সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট।
সাইক্লিং
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার ১ হাজার ১০ কিলোমিটার পথ এমটিবি সাইকেলে চড়ে মাত্র ৪ দিনে পাড়ি দেন আকিক। সেই যাত্রায় শেষ পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন আলিফ ও শান্ত। সময়টা ২০২০ সাল।
এ ছাড়া ২০২২ সালে আখাউড়া থেকে মুজিবনগর ৩৯৫ কিলোমিটার, একই বছর হালুয়াঘাট থেকে কুয়াকাটা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার ক্রশকান্ট্রি সাইকেল চালান আকিক। তাঁর ৬৪ জেলা সাইকেলে ভ্রমণ শুরু হয় ২০২১ সালের শেষ থেকে। ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি সেটা শেষ করেন। এই দীর্ঘ সময় তিনি নিয়েছেন বিশেষ কারণে। আকিক বছরের একেক ঋতুতে একেক অঞ্চলে সাইকেল চালান। ছয়টি ঋতু ধরেই তিনি পুরো দেশ সাইকেলে সফর করেন। এ ছাড়া তিনি ত্রিপুরা ট্যুরিজম বোর্ড আয়োজিত ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ রাইডে অংশ নেন ২০২২ সালে।
ম্যারাথন
আকিক ম্যারাথন শুরু করেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা হাফ ম্যারাথন দিয়ে। ২০২২ সালে মেঘালয়ের মাউলিং গ্রামে ফুল ম্যারাথন। এ ছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ফুল ম্যারাথনে অংশ নেন।
জুকো ভ্যালির নিঃসঙ্গ ট্র্যাকে
সেটা ছিল ভয়ংকর সুন্দর! বলতে গিয়ে আকিকের চোখ বন্ধ হয়ে এল সেই স্বর্গীয় দৃশ্যের কথা মনে করে। খুব কম তথ্য
নিয়ে তিনি নাগাল্যান্ডে গিয়েছিলেন। আর গিয়েই জুকো ভ্যালির ৪০ কিলোমিটারের এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রায় নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। ভয় তাড়াতে জোরে জোরে কথা বলা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল
না আল-আমিনের।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা আকিকের স্বপ্নের পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম। ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সাঁতার, ১৮০ কিলোমিটার সাইক্লিং আর ফুল ম্যারাথন মিলিয়ে ১৭ ঘণ্টা স্থায়ী এক বিশাল উত্তেজনায় কাঁপা সেই চ্যাম্পিয়নশিপ। সেই বিশ্বমঞ্চে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে আগামী বছর মালয়েশিয়ার আঞ্চলিক আয়োজনে যেতে চান আকিক।
চালিভাংগা গ্রামটি দ্বীপের মতো। এর চারদিকে মেঘনা নদী। বর্ষায় এর রূপ ভয়ংকর হয়ে ওঠে, সেটা না বললেও বোঝা যায়। শীতে এর অবস্থা ভয়াবহ থাকে কুয়াশার কারণে। এই দ্বীপের মতো গ্রামটিতে জন্ম এবং বর্ষায় মেঘনার ভয়ংকর রূপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে ওঠা মো. আল-আমিন আকিকের। সে জন্যই হয়তো এই ত্রিশ না হয়ে ওঠা বয়সে অভিযাত্রার রোমাঞ্চ নেচে ওঠে তাঁর রক্তে। তিনি পাড়ি দেন পদ্মা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্রের মতো বড় বড় নদ-নদী, সাইকেলে ঘোরেন চৌষট্টি জেলা, ম্যারাথন দৌড়াতে চলে যান মেঘালয়ের মাওয়ালিং কিংবা ট্রেকিং করতে নাগাল্যান্ডের জুকো ভ্যালি। আর স্বপ্ন দেখেন আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার।
বললাম, প্রেম করার সময় পান? বয়স তো এখন প্রেম করারই! হাসলেন আকিক। জানালেন, তাঁর কোনো ‘গার্লফ্রেন্ড’ নেই। সাইকেল চালাতে বা দৌড়াতে গিয়ে যাতে পেশি শক্ত হয়ে না যায়, টান না পড়ে তাতে, সে জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হয়। তার ওপর বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেওয়া তো আছেই। এত কাজের বাইরে তাঁর সময় কোথায় প্রেম করার! এই একহারা গড়নের তরুণটির কথায় কষ্ট পাওয়া উচিত, নাকি হাসা—সেটা ভাবতে না পেরে পরের প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম তাঁর দিকে।
ভয়ংকর মেঘনার গল্প
আবদুল মতিন মাস্টার ও পেয়ারা বেগম দম্পতির তিন ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে বড় মো. আল-আমিন আকিক। জন্ম ১৯৯৪ সালে। আকিকের গ্রামের বাড়ি প্রশাসনিকভাবে কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলায় হলেও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ সহজ। সেই সূত্রে আকিক গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হন সোনারগাঁয়ের বৈদ্দার বাজার এন এ এম পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে। স্কুলটি ছিল সোনারগাঁ জাদুঘরের কাছাকাছি এলাকায়। বর্ষায় উত্তাল আর শীতে কুয়াশায় দৃষ্টি আটকে যাওয়া মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে সপ্তাহে ছয় দিন তাঁকে স্কুলে যেতে হতো। সে এক দুর্ধর্ষ যাত্রা! এমনও হয়েছে, শীতের কুয়াশায় নৌকা পথ হারিয়ে চলে গেছে অন্যদিকে। স্কুল যাওয়া হয়নি আর। দুপুর পেরিয়ে ফিরতে হয়েছে বাড়ি। কিশোরকালের এই ‘অভিযাত্রা’ই আকিককে সাহসী করে তোলে ভ্রমণ, সাঁতার কিংবা সাইক্লিংয়ে।
ভ্রমণের শুরু
আকিক বলছিলেন, ভ্রমণের শুরুটা তাঁর স্কুল পালানো থেকে। উচ্চমাধ্যমিক স্কুল সোনারগাঁ জাদুঘর আর পানাম সিটির কাছাকাছি হওয়ায় স্কুল পালিয়ে সেসব জায়গায় ঘোরাঘুরি দিয়েই ভ্রমণের হাতেখড়ি। তবে এটা জোরালো হয় ২০১৩ সাল থেকে। সে সময় তিনি কলেজশিক্ষার্থী। পড়েন দনিয়া কলেজে। ‘স্কুল পালানো টাইপ’ মানুষ হওয়ায় বন্ধুবান্ধব জুটে যায় বিস্তর। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ শুরু করেন আকিক। তারপর সিদ্ধেশ্বরী কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে বিবিএতে ভর্তি হন। এ সময় থেকে শুরু করেন টিউশনি এবং ঢাকা শহরের বিভিন্ন বিখ্যাত কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেওয়া। সেসব করে কিছু অর্থ আসে হাতে। সেই অর্থ নিয়মিত ব্যয় হতে থাকে ভ্রমণের পেছনে। এভাবেই তিনি একসময় এমবিএ শেষ করেন। টিউশনি ও কোচিংয়ে লেকচার দেওয়ার অর্থই এখনো তাঁর মূল রোজগারের জায়গা। সেই টাকা দিয়েই চলে ঘোরাঘুরি। অবশ্য এখন ইউটিউব, টিকটক ও ফেসবুকে কনটেন্ট বানিয়ে অল্প কিছু রোজগার করেন আকিক।
সাঁতার
আকিকের ঘোরাঘুরি এবং সাঁতার, সাইক্লিং, ম্যারাথন আর ট্রেকিংয়ের তালিকা বেশ দীর্ঘ। ২০২১ সালের মে মাসে আকিক প্রথম মেঘনা নদী পাড়ি দেন। সেই পথ ছিল ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। এরপরেই তিনি ওই বছরের ডিসেম্বরের ২০ তারিখে অংশ নেন বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া প্রতিযোগিতায়। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার তিনি সাঁতরে পার হন ৫ ঘণ্টা ৪৭ মিনিটে। সেদিন সাগর ছিল ভীষণ উত্তাল। খাবি খেতে খেতে তিনি ছুঁতে পেরেছিলেন সেন্ট মার্টিনের ফিনিশিং পয়েন্ট। লবণপানি আর ঠান্ডায় ঠোঁট সাদা হয়ে গিয়েছিল আকিকের। দুই দিন ঠিকমতো খেতে পারেননি, কিন্তু শান্তি পেয়েছিলেন ভীষণ। বৈরী পরিবেশে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সেই ঘটনা মেঘনাপাড়ের ছেলেটির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল অনেকখানি। এরপর তিনি কুড়িগ্রাম জেলা ক্রীড়া অফিসের আয়োজনে ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র নদ সাঁতরে পাড়ি দেন। ব্রহ্মপুত্রের বরফগলা ঠান্ডা পানি শরীর ও আত্মায় কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল সে-যাত্রা। এরপর গত ১৮ মার্চ সিলেটের লালাখালের সারি নদীতে ১০ কিলোমিটার সাঁতরে ফিরেছেন। সিলেট জেলা ক্রীড়া অফিসের আয়োজনে সেই প্রতিযোগিতায় তিনি চতুর্থ হন।
তবে হ্যাঁ, বাংলা চ্যানেল বা অন্যান্য নদী নয়, আকিক মনে করেন, নদীর মধ্যে পদ্মা পাড়ি দেওয়া কঠিন কাজ। ২০২২ সালের ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জে পদ্মার মৈনটঘাট থেকে ১৩ কিলোমিটার সাঁতরে পৌঁছান ফরিদপুরের শয়তানখালী ঘাটে, সময় লাগে ২ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট।
সাইক্লিং
টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার ১ হাজার ১০ কিলোমিটার পথ এমটিবি সাইকেলে চড়ে মাত্র ৪ দিনে পাড়ি দেন আকিক। সেই যাত্রায় শেষ পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন আলিফ ও শান্ত। সময়টা ২০২০ সাল।
এ ছাড়া ২০২২ সালে আখাউড়া থেকে মুজিবনগর ৩৯৫ কিলোমিটার, একই বছর হালুয়াঘাট থেকে কুয়াকাটা প্রায় ৫০০ কিলোমিটার ক্রশকান্ট্রি সাইকেল চালান আকিক। তাঁর ৬৪ জেলা সাইকেলে ভ্রমণ শুরু হয় ২০২১ সালের শেষ থেকে। ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি সেটা শেষ করেন। এই দীর্ঘ সময় তিনি নিয়েছেন বিশেষ কারণে। আকিক বছরের একেক ঋতুতে একেক অঞ্চলে সাইকেল চালান। ছয়টি ঋতু ধরেই তিনি পুরো দেশ সাইকেলে সফর করেন। এ ছাড়া তিনি ত্রিপুরা ট্যুরিজম বোর্ড আয়োজিত ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ রাইডে অংশ নেন ২০২২ সালে।
ম্যারাথন
আকিক ম্যারাথন শুরু করেন ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা হাফ ম্যারাথন দিয়ে। ২০২২ সালে মেঘালয়ের মাউলিং গ্রামে ফুল ম্যারাথন। এ ছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক ফুল ম্যারাথনে অংশ নেন।
জুকো ভ্যালির নিঃসঙ্গ ট্র্যাকে
সেটা ছিল ভয়ংকর সুন্দর! বলতে গিয়ে আকিকের চোখ বন্ধ হয়ে এল সেই স্বর্গীয় দৃশ্যের কথা মনে করে। খুব কম তথ্য
নিয়ে তিনি নাগাল্যান্ডে গিয়েছিলেন। আর গিয়েই জুকো ভ্যালির ৪০ কিলোমিটারের এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রায় নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। ভয় তাড়াতে জোরে জোরে কথা বলা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল
না আল-আমিনের।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আয়রনম্যান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা আকিকের স্বপ্নের পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম। ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার সাঁতার, ১৮০ কিলোমিটার সাইক্লিং আর ফুল ম্যারাথন মিলিয়ে ১৭ ঘণ্টা স্থায়ী এক বিশাল উত্তেজনায় কাঁপা সেই চ্যাম্পিয়নশিপ। সেই বিশ্বমঞ্চে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে আগামী বছর মালয়েশিয়ার আঞ্চলিক আয়োজনে যেতে চান আকিক।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে