ইশতিয়াক হাসান
দক্ষিণ আমেরিকার পেরু আর বলিভিয়ার সীমান্তে অবস্থান লেক টিটিকাকা বা টিটিকাকা হ্রদের। এটি পর্যটকদের বেশি টানে এর ওপরের ভাসমান দ্বীপগুলোর জন্য। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হলো, এই দ্বীপগুলো কৃত্রিম। ওই এলাকায় বাস করা উরো বা উরোজ গোত্রের মানুষ দ্বীপগুলো তৈরি করেছে। টটোরা নামের পানিতে ভেসে থাকতে পারে এমন একধরনের নলখাগড়া দিয়ে তাঁরা বানায় এই দ্বীপগুলো।
উরোরা বাস করে হ্রদের পেরুর অংশে। অর্থাৎ দ্বীপগুলোর অবস্থান লেকের পেরুর সীমানায়। লেকের তীরের বড় শহর পুনো থেকে খুব বেশি দূরে নয় এই ভাসমান বসতিগুলো। একটা সময় পর্যন্ত হ্রদের মাঝখানে এই ভাসমান দ্বীপগুলো বানানো হতো। তবে ১৯৮৬ সালে হওয়া বড় এক ঝড়ের পর তীরের কাছে এ ধরনের দ্বীপ বানানো শুরু করে।
শত শত বছর ধরে এভাবে দ্বীপ বানিয়ে বসবাস করছে উরো গোত্রের লোকেরা। এই কৃত্রিম ভাসমান দ্বীপ আর এখানকার ঘর-বাড়ি তৈরি করার চলটা আসে নিরাপত্তার কথা ভেবে। একটা সময় পর্যন্ত বাইরের নানা ধরনের শত্রু ও দস্যুদের আক্রমণের ঘটনা ঘটত। কোনো বিপদ ঘটলে সহজেই এই আবাস গুটিয়ে নেওয়া যেত। অর্থাৎ, আস্ত দ্বীপটাই সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল। এখন এ ধরনের ভয় কমে গেলেও এই রীতি থেকে বের হয়ে আসেনি উরোরা। এ ধরনের বড় দ্বীপে এমনকি নলখাগড়া দিয়ে তৈরি ওয়াচ টাওয়ারও আছে।
টটোরা নামের এই উদ্ভিদ হয় হ্রদের মধ্যেই। এই নলখাগড়ার ঘন আগাছা সাধারণত দ্বীপের ওপরের স্তর হিসেবে কাজ করে। এটি পচে গেলে আবার নতুন করে টটোরা দিতে হয়। এভাবে বানানো দ্বীপের মেঝে একটু অসমতলই হয়।
কীভাবে দ্বীপগুলো বানানো হয় আর একটু পরিষ্কারভাবে বলা যাক। প্রথমে টটোরার শিকড় একটার সঙ্গে আরেকটা বেঁধে একটি পাতলা কিন্তু মজবুত ভিত্তি তৈরি করা হয়। এমনিতে বর্ষার সময় অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত লেকে এ ধরনের নলখাগড়া ভেসে থাকে হ্রদে। উরো পুরুষ আর নারীরা দ্বীপ তৈরির জন্য সেরা শিকড় বা নলখাগড়াগুলো সংগ্রহ করে। শিকড়ের সঙ্গে যেন বেশি মাটি না থাকে তা খেয়াল করতে হয়, কারণ ভারী হলে ওটা ডুবে যেতে পারে।
টটোরার শিকড়ের এই ভিত্তির ওপর টটোরা নলখাগড়ার একটির পর একটি স্তর বসানো হয়। হ্রদের পানির নিচে রাখা ইউকেলিপ্টাসের খুঁটি ও দড়ি দিয়ে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় সাধারণত নোঙর করে বা স্থির রাখা হয় ভাসমান দ্বীপকে। এভাবে যত্ন নিয়ে ৩০ বছর পর্যন্ত টিকিয়ে রাখে এক একটি দ্বীপ। শুকনো মৌসুমে মাসে একবার ও বর্ষায় সপ্তাহে একবার নলখাগড়ার নতুন স্তর যোগ করা হয়।
উরো গোত্রের লোকদের খাবার এমনকি ওষুধের বড় একটি অংশ আসে এই টটোরা নলখাগড়া থেকেই। যখন কোনো একটি উদ্ভিদ সংগ্রহ করা হয়, এর ওপরের সাদা অংশ আয়োডিনের জন্য খাওয়া হয়। কোনো জায়গায় ব্যথা হলে ওই জায়গাটা টটোরা দিয়ে পেঁচিয়ে দেওয়া হয় ব্যথা লাঘবের জন্য। উরো বা উরোজদের বাড়ি-ঘরও তৈরি হয় টটোরা দিয়েই। এমনকি নৌকা তৈরিতেও কাজে লাগে উদ্ভিদটি।
কিন্তু এই নলখাগড়ার তৈরি দ্বীপে রান্নাবান্না হয় কীভাবে? প্রথমে কিছু পাথর বসানো হয়। তারপর ওই পাথরের ওপর চুলা বানিয়ে আগুন ধরিয়ে চলে রান্নাবান্নার কাজ।
টিটিকাকা হ্রদের ভাসমান দ্বীপগুলোয় মোটামুটি হাজার দুয়েক উরোর বাস। মাছ ধরে ও নানা সামগ্রী বুনে এই গোত্রের লোকেরা জীবন ধারণ করে। অবশ্য এখন পর্যটন থেকেও তাদের কিছু আয় হয়। তারা যেসব মাছ ধরে, এর কিছু খায়, বাড়তি অংশ মূল ভূমিতে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। অবশ্য গাঙচিল, হাঁসসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি শিকার করে উরোরা। তেমনি নলখাগড়া থেকে ডিম সংগ্রহ করে। যেসব পর্যটক ভাসমান দ্বীপগুলো দেখতে আসেন, তাঁদের কাছে বিক্রির জন্য হস্তশিল্প সামগ্রীর দোকান পেতেও বসেন উরোজরা দ্বীপের মধ্যে।
এ ধরনের ভাসমান দ্বীপ টিকিয়ে রাখার জন্য বেশ পরিশ্রম করতে হয়। এদিকে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ায় তাঁদের সময় দেওয়ার পাশাপাশি দ্বীপ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হয় উরোদের। সংক্ষেপে বলা যায়, পর্যটনের বিস্তার উরোদের আর্থিক সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে নিজেদের সব স্বকীয় বৈশিষ্ট্য টিকিয়ে রাখাটা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁদের জন্য।
এখন দ্বীপে ৬০ থকে ১০০ মানুষের তৈরি এমন দ্বীপ আছে। তবে সংখ্যাটি বদলায়। কারণ অনেক সময় একটি দ্বীপের সঙ্গে আরেকটি জোড়া লাগানো হয়। কখনো আবার একটি দ্বীপ ভেঙে দুই টুকরো করা হয়। নতুন নতুন দ্বীপ তৈরিও করা হয়।
দ্বীপে যাওয়ার সহজ উপায় হলো পুনোতে চলে যাওয়া। সেখান থেকে বিভিন্ন ট্যুর কোম্পানি পর্যটকদের ভাসমান দ্বীপে নিয়ে যায়। হ্রদের তীর থেকে নৌকায় চেপে মোটামুটি ২০ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারবেন ভাসমান দ্বীপগুলোর কাছে। পেরুর কাসকো ও এরেকুইপা এবং বলিভিয়ার লা পাজ থেকে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় পুনোতে। অর্থাৎ পেরু বা বলিভিয়ায় পৌঁছাতে পারলে ভাসমান দ্বীপগুলোতে যাওয়া মোটেই কঠিন হবে না।
সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, পেরু ফর লেস ডট কম
দক্ষিণ আমেরিকার পেরু আর বলিভিয়ার সীমান্তে অবস্থান লেক টিটিকাকা বা টিটিকাকা হ্রদের। এটি পর্যটকদের বেশি টানে এর ওপরের ভাসমান দ্বীপগুলোর জন্য। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হলো, এই দ্বীপগুলো কৃত্রিম। ওই এলাকায় বাস করা উরো বা উরোজ গোত্রের মানুষ দ্বীপগুলো তৈরি করেছে। টটোরা নামের পানিতে ভেসে থাকতে পারে এমন একধরনের নলখাগড়া দিয়ে তাঁরা বানায় এই দ্বীপগুলো।
উরোরা বাস করে হ্রদের পেরুর অংশে। অর্থাৎ দ্বীপগুলোর অবস্থান লেকের পেরুর সীমানায়। লেকের তীরের বড় শহর পুনো থেকে খুব বেশি দূরে নয় এই ভাসমান বসতিগুলো। একটা সময় পর্যন্ত হ্রদের মাঝখানে এই ভাসমান দ্বীপগুলো বানানো হতো। তবে ১৯৮৬ সালে হওয়া বড় এক ঝড়ের পর তীরের কাছে এ ধরনের দ্বীপ বানানো শুরু করে।
শত শত বছর ধরে এভাবে দ্বীপ বানিয়ে বসবাস করছে উরো গোত্রের লোকেরা। এই কৃত্রিম ভাসমান দ্বীপ আর এখানকার ঘর-বাড়ি তৈরি করার চলটা আসে নিরাপত্তার কথা ভেবে। একটা সময় পর্যন্ত বাইরের নানা ধরনের শত্রু ও দস্যুদের আক্রমণের ঘটনা ঘটত। কোনো বিপদ ঘটলে সহজেই এই আবাস গুটিয়ে নেওয়া যেত। অর্থাৎ, আস্ত দ্বীপটাই সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল। এখন এ ধরনের ভয় কমে গেলেও এই রীতি থেকে বের হয়ে আসেনি উরোরা। এ ধরনের বড় দ্বীপে এমনকি নলখাগড়া দিয়ে তৈরি ওয়াচ টাওয়ারও আছে।
টটোরা নামের এই উদ্ভিদ হয় হ্রদের মধ্যেই। এই নলখাগড়ার ঘন আগাছা সাধারণত দ্বীপের ওপরের স্তর হিসেবে কাজ করে। এটি পচে গেলে আবার নতুন করে টটোরা দিতে হয়। এভাবে বানানো দ্বীপের মেঝে একটু অসমতলই হয়।
কীভাবে দ্বীপগুলো বানানো হয় আর একটু পরিষ্কারভাবে বলা যাক। প্রথমে টটোরার শিকড় একটার সঙ্গে আরেকটা বেঁধে একটি পাতলা কিন্তু মজবুত ভিত্তি তৈরি করা হয়। এমনিতে বর্ষার সময় অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত লেকে এ ধরনের নলখাগড়া ভেসে থাকে হ্রদে। উরো পুরুষ আর নারীরা দ্বীপ তৈরির জন্য সেরা শিকড় বা নলখাগড়াগুলো সংগ্রহ করে। শিকড়ের সঙ্গে যেন বেশি মাটি না থাকে তা খেয়াল করতে হয়, কারণ ভারী হলে ওটা ডুবে যেতে পারে।
টটোরার শিকড়ের এই ভিত্তির ওপর টটোরা নলখাগড়ার একটির পর একটি স্তর বসানো হয়। হ্রদের পানির নিচে রাখা ইউকেলিপ্টাসের খুঁটি ও দড়ি দিয়ে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় সাধারণত নোঙর করে বা স্থির রাখা হয় ভাসমান দ্বীপকে। এভাবে যত্ন নিয়ে ৩০ বছর পর্যন্ত টিকিয়ে রাখে এক একটি দ্বীপ। শুকনো মৌসুমে মাসে একবার ও বর্ষায় সপ্তাহে একবার নলখাগড়ার নতুন স্তর যোগ করা হয়।
উরো গোত্রের লোকদের খাবার এমনকি ওষুধের বড় একটি অংশ আসে এই টটোরা নলখাগড়া থেকেই। যখন কোনো একটি উদ্ভিদ সংগ্রহ করা হয়, এর ওপরের সাদা অংশ আয়োডিনের জন্য খাওয়া হয়। কোনো জায়গায় ব্যথা হলে ওই জায়গাটা টটোরা দিয়ে পেঁচিয়ে দেওয়া হয় ব্যথা লাঘবের জন্য। উরো বা উরোজদের বাড়ি-ঘরও তৈরি হয় টটোরা দিয়েই। এমনকি নৌকা তৈরিতেও কাজে লাগে উদ্ভিদটি।
কিন্তু এই নলখাগড়ার তৈরি দ্বীপে রান্নাবান্না হয় কীভাবে? প্রথমে কিছু পাথর বসানো হয়। তারপর ওই পাথরের ওপর চুলা বানিয়ে আগুন ধরিয়ে চলে রান্নাবান্নার কাজ।
টিটিকাকা হ্রদের ভাসমান দ্বীপগুলোয় মোটামুটি হাজার দুয়েক উরোর বাস। মাছ ধরে ও নানা সামগ্রী বুনে এই গোত্রের লোকেরা জীবন ধারণ করে। অবশ্য এখন পর্যটন থেকেও তাদের কিছু আয় হয়। তারা যেসব মাছ ধরে, এর কিছু খায়, বাড়তি অংশ মূল ভূমিতে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। অবশ্য গাঙচিল, হাঁসসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি শিকার করে উরোরা। তেমনি নলখাগড়া থেকে ডিম সংগ্রহ করে। যেসব পর্যটক ভাসমান দ্বীপগুলো দেখতে আসেন, তাঁদের কাছে বিক্রির জন্য হস্তশিল্প সামগ্রীর দোকান পেতেও বসেন উরোজরা দ্বীপের মধ্যে।
এ ধরনের ভাসমান দ্বীপ টিকিয়ে রাখার জন্য বেশ পরিশ্রম করতে হয়। এদিকে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ায় তাঁদের সময় দেওয়ার পাশাপাশি দ্বীপ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হয় উরোদের। সংক্ষেপে বলা যায়, পর্যটনের বিস্তার উরোদের আর্থিক সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে নিজেদের সব স্বকীয় বৈশিষ্ট্য টিকিয়ে রাখাটা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁদের জন্য।
এখন দ্বীপে ৬০ থকে ১০০ মানুষের তৈরি এমন দ্বীপ আছে। তবে সংখ্যাটি বদলায়। কারণ অনেক সময় একটি দ্বীপের সঙ্গে আরেকটি জোড়া লাগানো হয়। কখনো আবার একটি দ্বীপ ভেঙে দুই টুকরো করা হয়। নতুন নতুন দ্বীপ তৈরিও করা হয়।
দ্বীপে যাওয়ার সহজ উপায় হলো পুনোতে চলে যাওয়া। সেখান থেকে বিভিন্ন ট্যুর কোম্পানি পর্যটকদের ভাসমান দ্বীপে নিয়ে যায়। হ্রদের তীর থেকে নৌকায় চেপে মোটামুটি ২০ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারবেন ভাসমান দ্বীপগুলোর কাছে। পেরুর কাসকো ও এরেকুইপা এবং বলিভিয়ার লা পাজ থেকে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় পুনোতে। অর্থাৎ পেরু বা বলিভিয়ায় পৌঁছাতে পারলে ভাসমান দ্বীপগুলোতে যাওয়া মোটেই কঠিন হবে না।
সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, পেরু ফর লেস ডট কম
১৯৬০ সালের দিকে স্যাম পানাপুলোস এবং তাঁর ভাই ঐতিহ্যবাহী পিৎজায় এক নতুন উপাদান যোগ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পিৎজার উপাদানের সঙ্গে যুক্ত হলো প্যাকেটজাত আনারস। এর নাম রাখা হয় হাওয়াইয়ান পিৎজা। মাসখানেকের...
২ দিন আগেঅ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য নেপাল উপযুক্ত জায়গা। উঁচু পাহাড়ে ট্রেকিং থেকে শুরু করে প্যারাগ্লাইডিং কিংবা বাঞ্জি জাম্পিংয়ের মতো দুর্দান্ত সব কর্মকাণ্ডের জন্য এক নামে পরিচিত দেশটি। তবে এসব অ্যাকটিভিটি ছাড়াও সব ধরনের ভ্রমণপিয়াসির জন্য নেপালে কিছু না কিছু কর্মকাণ্ড রয়েছে।
৩ দিন আগেপাহাড় বলতে বান্দরবানই আমাকে বেশি মুগ্ধ করে। এর নৈসর্গিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুখে বলে কিংবা ছবিতে দেখিয়ে শেষ করা যাবে না।
৩ দিন আগেপঞ্চাশ হাজার ফুলের বীজ থেকে তৈরি হয়েছে ৩৬০ বর্গমিটার দীর্ঘ একটি কার্পেট। এতে আরও যোগ হয়েছে ঐতিহ্যবাহী জ্যামিতিক নকশা ও মার্বেল পাথর। সেটি দেখতে ভিড় জমেছে পর্যটকের।
৩ দিন আগে