বন্যাকবলিত এলাকা: বাড়ছে সংক্রমণ, বাড়ছে রোগী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
Thumbnail image

পূর্বাঞ্চলের বন্যার পানি কমতে থাকার পর আক্রান্ত জেলাগুলোয় বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর চাপ। কোনো কোনো হাসপাতালে শয্যাসংকটের কারণে মেঝেতে বিছানা পেতে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ফিল্ড হাসপাতালের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও ফেনীতে।

এলাকাবাসী, হাসপাতাল ও প্রশাসনের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
বন্যায় এখনো ভুগছে লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলার বাসিন্দারা। পানিবন্দী বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, চর্মরোগসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় কলেরা স্যালাইন, সিরাপ সালফুটামল, হিস্টাসিন ও ডায়রিয়ার অ্যান্টিবায়োটিকসহ ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায় ১৫ বেডের শিশু ওয়ার্ড। যেখানে ১৫ শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার কথা; অথচ সেখানে ভর্তি রয়েছে ১০৩ জন। একই চিত্র গাইনি, মেডিসিন, সার্জারিসহ প্রতিটি বিভাগের। ৫ দিন ধরে রোগীর চাপ বাড়ছে কয়েক গুণ।

সদর হাসপাতালের বেডের সংখ্যা ১০০। বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ৩৭৬ জন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই পানিবাহিত রোগী। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. অরুপ পাল বলেন, হাসপাতালে ভর্তি বেশির ভাগই ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর, আমাশয়সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগী। সামনে আরও রোগী বাড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। পাশাপাশি কোনো ওষুধের সংকট নেই বলেও দাবি করেন।

ফেনীতে বন্যা-পরবর্তী রোগে আক্রান্তের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ২১ শয্যার বিপরীতে শিশু রোগীর সংখ্যা ৮৮, বয়স্ক রোগী ৫৬ জনসহ হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগী ছয় শতাধিক।

গতকাল দুপুরে হাসপাতালের নতুন ভবনের ছয়তলায় গিয়ে দেখা যায়, চারটি বড় ইউনিটে ও এর আশপাশে খালি জায়গায় রোগীরা শয্যা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, জায়গা সংকুলানের অভাবে রোগীদের আপাতত ছয়তলায় নেওয়া হয়েছে।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, বন্যার পরপরই ফেনীর ৬ উপজেলা থেকে আসা ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগীদের চাপ বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের একটি অস্থায়ী ফিল্ড হাসপাতালের কাজ ইতিমধ্যে ইউনিসেফের অর্থায়নে চলমান।

চলমান বন্যার পানিতে নোয়াখালীতে প্লাবিত হয়েছে ৮টি উপজেলা ও ৭টি পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা। জেলায় বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। বন্যাকবলিত ৮ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে ৫৪৩ জন রোগী। এর মধ্যে মারা গেছে এক নারী ও এক শিশু। এ ছাড়া সাপে কাটা রোগী ভর্তি আছেন ১৫ জন।

কুমিল্লার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪টি বন্যাকবলিত হয়েছে। এসব এলাকায় গত ২১ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৮ দিনে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছেন পানিবাহিত রোগে। কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, এর মধ্যে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯৪৭ জন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৬২ জন এবং ৯১ জনকে সাপে কেটেছে। বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের, সাপেন ছোবলে মারা গেছেন একজন, পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। চোখের সমস্যায় আক্রান্ত ৩০৫ জন, ভূমিধসে আহত তিনজন ও অন্যভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ২৪ হাজার ৪৫৬ জন; এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। ফলে জেলায় মোট আক্রান্ত ৩৮ হাজার ৪০৮ জন এবং স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় এখন পর্যন্ত ২২ জনের প্রাণ গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়াতেও বাড়ছে রোগবালাই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডাইং কারখানা, চামড়া কারখানা, মেলামাইন কারখানা ও বাসাবাড়ির স্যুয়ারেজ লাইনসহ বিভিন্ন বর্জ্যযুক্ত বিষাক্ত পানি সেখানে আসছে। এ কারণে পানির রং কালো। ডায়রিয়া, কলেরা, জ্বর, চর্মরোগসহ নানা ধরনের রোগে ভুগছেন তাঁরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন ডা. মো. বেলায়েত হোসেন জানান, ত্রিপুরার বিষাক্ত পানির কারণে রোগবালাই হচ্ছে। তবে বন্যায় তাঁদের ২৫টি মেডিকেল টিম করছে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত