মোজাম্মেল হোসেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে এখন সাংস্কৃতিক আবেদন মুখ্য। বঙ্গাব্দের মাসগুলো ঋতুচক্রের ও কিছুটা কৃষির তত্ত্বতালাশে কাজে লাগাই। আর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষাগত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন-তারিখ ও সময়ের হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হয় খ্রিষ্টাব্দের বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিষ্টাব্দ সর্বজনীন ও আন্তর্জাতিক হয়ে গেলে ক্রিশ্চিয়ান এরার পরিবর্তে কমন এরা বা সাধারণ সাল বলা হয়।
২০২৩ শেষ হয়ে শুরু হলো ২০২৪ সাল। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
নতুন বছরটি কেমন যাবে? একটি বছর শেষে প্রায় সব মানুষের মনে এ প্রশ্নটি আনাগোনা করে। ব্যক্তি ও পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সম্পদ-আপদ, সুযোগ-দুর্যোগ প্রভৃতি ছাপিয়ে অবশ্যই প্রশ্নটি স্পর্শ করে সার্বিক জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন থাকবে, সেই বিন্দুকে।
আমরা এমন একটি বছর অতিক্রম করলাম, যে বছরে কী কী ঘটতে পারে তা একরকম আগেই জানা ছিল। নতুন ঘটনা ঘটেছে খুব কম। আর যে বছরটি শুরু হলো, সেই বছর সম্পর্কে অনিশ্চয়তা ও সংশয় বেশি। স্থির করেই বলা যায়, এ বছরটি হবে অস্থিরতার। নিশ্চিত বলা যায়, বছরটি হবে অনিশ্চয়তার।
একনজর দেখে নেওয়া যাক ২০২৩ কেমন গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে চমকপ্রদ উন্নয়ন অভিযাত্রায় একাধিক মেগা প্রকল্পের সমাপ্তি ও নির্মাণ অগ্রগতিতে বছরটিও নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। আগের বছর পদ্মা সেতু চালুর পরে এই তালিকায় যুক্ত হলো কর্ণফুলী টানেল, এল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়ামের চালান, চালু হলো ঢাকা-কক্সবাজার নতুন রেলপথ, ঢাকা সিটিতে প্রথম মেট্রোরেলের সব স্টেশন চালু হলো, খুলল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং আংশিক উদ্বোধন হলো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের। এগুলো তো আকস্মিক ঘটনা নয়, জানাই ছিল।
উন্নয়নের পাশে নেতিবাচক ঘটনা হলো নিয়ন্ত্রণহীন বাজারদরে সীমিত আয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থা, হঠাৎ হঠাৎ পেঁয়াজ, ডিম, আলু, মুরগি ও গো-মাংসের দামে অযৌক্তিক উল্লম্ফন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উদ্বেগজনক হ্রাস, ডলারের অভাব ও মূল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলায় আমদানি-বাণিজ্যে সংকট, সারা বছরই সংবাদমাধ্যমে নজিরবিহীন দুর্নীতি এবং পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকে স্বাভাবিক লেনদেন বিঘ্নিত হওয়াসহ ব্যাংক প্রশাসনে শৈথিল্য ও বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের খবর ইত্যাদি।
এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণের বিস্তার এবং এই রোগে মৃত্যুতে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বছরটিতে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৭০১ এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৯৪৫ জন। হাসপাতালে ভর্তির সরকারি তথ্যের বাইরে রোগী ও মৃত্যু আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। এবার গ্রামেও ছড়িয়েছে।
বছরজুড়েই চলেছে দেশের বড় দুই দলের একটি বিএনপি ও সমমনা কিছু দলের ডাকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন। অন্যথায় নির্বাচন বর্জন তাদের ধনুর্ভঙ্গ পণ। একই দাবিতে আন্দোলনে ২০১৩-১৪ সালে জনগণের ওপর জোর খাটানোসহ লাগাতার হরতাল-অবরোধের ব্যর্থ কৌশল বাদ দিয়ে এবার বিএনপি শান্তিপূর্ণ গণজমায়েতের মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করার কৌশল নিয়ে অনেক অগ্রগতি সাধন করে। বছরব্যাপী ইউনিয়ন-উপজেলা স্তর থেকে কেন্দ্রে রাজধানী পর্যন্ত কর্মসূচিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের দৃষ্টি আকর্ষণকারী বড় বড় জমায়েত হয়। কিন্তু তারা কর্মী-সমর্থকের বাইরে ব্যাপক জনতা নয়। বাস্তবে প্রতীয়মান হয়, ব্যাপকসংখ্যক দেশবাসী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিতে চায় কিন্তু সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির মতো চরম লক্ষ্যকে সমর্থন করে না এবং সে জন্য বিএনপির ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব নয়। মাঠের এই পাঠ গ্রহণে বিএনপি নেতারা সক্ষম হননি। বছরের শেষভাগে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ বিভিন্ন কৌশল ও পুলিশি শক্তিপ্রয়োগে ভেঙে দিতে সরকারকে খুব বেগ পেতে হয়নি। বিএনপির মূল নেতারা কয়েকজনসহ সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও ঢালাওভাবে দায়ের করা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে পুরতে সরকার সক্ষম হয়েছে।
দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বন্ধনে জড়িত পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলো আমাদের উপর্যুপরি বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচন ও মানবাধিকার প্রতিপালন নিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রশ্ন তুলছে। বিদায়ী বছরটিতে এ বিষয়ে দৃশ্যমান চাপ দিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম প্রভৃতি আইন ও মানবাধিকার ইস্যুতে আগের বছরের ডিসেম্বরে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরে ২০২৩-এর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নির্বাচন-প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার নীতি ঘোষণা করেছে। দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। পশ্চিমের এই চাপকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, চীন ও বাংলাদেশের আন্তসম্পর্ক, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বাংলাদেশের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়েও দেখা হচ্ছে।
বিদায়ী বছরের এই পটভূমি অতিক্রম করে ২০২৪ শুরুই হতে যাচ্ছে জাতীয় পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জাতীয় সংসদের নির্বাচন দিয়ে। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রম যে সুস্থভাবে অগ্রসর হচ্ছে না, তা আমরা সবাই জানি। প্রকৃত নির্বাচনের জন্য যতগুলো উপাদান আবশ্যক তার প্রায় সবই অনুপস্থিত। রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মসূচির প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশে থাকলেও এই নির্বাচনে নেই। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ তাদের সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ কয়েকটি অনুল্লেখ্য দল নির্বাচনে আছে। একতরফা হওয়ার বিপরীতে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে, নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে শেখ হাসিনার নির্দেশিত ‘ডামি’ প্রার্থী দেওয়ার বিচিত্র কৌশল অনুযায়ী প্রভাবশালী দল আওয়ামী লীগেরই অনেকে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগ ডামির মতো আচরণ না করে সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত হানাহানি, মারামারি হচ্ছে। একদিকে নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের পরিস্থিতিতে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা বাস ও রেলে নাশকতা এবং অন্যদিকে নির্বাচনী হানাহানিতে সাধারণ নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে।
দেশে সরকারি প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের যৌথভাবে আপাত একতরফা নিয়ন্ত্রণ থাকায় এই হ-য-ব-র-ল পরিবেশেও ৭ জানুয়ারির ভোট গ্রহণ হয়ে যাবে, কম ভোট পড়লেও। এটা অনুমান করা যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হবে, তারপর কী? নতুন বছরটা কেমন যাবে? এরূপ একটি অগ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচনের ফলাফল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুধু প্রত্যাখ্যানই করবে না, অবজ্ঞা করবে। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের নৈতিক মনোবল থাকবে না। জনসাধারণ সংসদের প্রতি মনোযোগী ও শ্রদ্ধাশীল হবে না।
সামনের দিনগুলোতে আসছে অর্থনৈতিক সংকট, যা বিদায়ী বছরে আমাদেরও দাঁত দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধজনিত কারণে অর্থনীতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুর সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হওয়া শ্রম অধিকার প্রশ্ন পশ্চিমা দেশগুলোর অসন্তোষের হুমকি তৈরি করেছে, যা থেকে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা পর্যন্ত প্রকাশ করা হচ্ছে।
যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক মোকাবিলা করতে জাতীয় ঐক্য দরকার, সরকারের পদক্ষেপের প্রতি রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন দরকার। ৭ জানুয়ারির মতো নির্বাচন থেকে কোনো সরকার তা আশা করতে পারে না। তাই এই নির্বাচনের রাজনৈতিক সংশোধনের জন্য আবার আলাপ-আলোচনা, সমঝোতার পথেই সমাধান বের করতে হবে। সে পথে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা এ বছরেই উঠতে পারে। অন্যথায় সংঘাতের পথে সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে যাবে।
২০২৩-এর ঘটনাধারা আমাদের অনেকটা পূর্ব-অনুমিত ছিল। জানা ছিল। সেই জানার মধ্য থেকে ২০২৪-এ অনেক অজানার পথে আমরা পা বাড়াচ্ছি।
বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে এখন সাংস্কৃতিক আবেদন মুখ্য। বঙ্গাব্দের মাসগুলো ঋতুচক্রের ও কিছুটা কৃষির তত্ত্বতালাশে কাজে লাগাই। আর আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষাগত সব প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দিন-তারিখ ও সময়ের হিসাব রাখতে ব্যবহৃত হয় খ্রিষ্টাব্দের বর্তমানে প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিষ্টাব্দ সর্বজনীন ও আন্তর্জাতিক হয়ে গেলে ক্রিশ্চিয়ান এরার পরিবর্তে কমন এরা বা সাধারণ সাল বলা হয়।
২০২৩ শেষ হয়ে শুরু হলো ২০২৪ সাল। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
নতুন বছরটি কেমন যাবে? একটি বছর শেষে প্রায় সব মানুষের মনে এ প্রশ্নটি আনাগোনা করে। ব্যক্তি ও পরিবারের আশা-আকাঙ্ক্ষা, সম্পদ-আপদ, সুযোগ-দুর্যোগ প্রভৃতি ছাপিয়ে অবশ্যই প্রশ্নটি স্পর্শ করে সার্বিক জাতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন থাকবে, সেই বিন্দুকে।
আমরা এমন একটি বছর অতিক্রম করলাম, যে বছরে কী কী ঘটতে পারে তা একরকম আগেই জানা ছিল। নতুন ঘটনা ঘটেছে খুব কম। আর যে বছরটি শুরু হলো, সেই বছর সম্পর্কে অনিশ্চয়তা ও সংশয় বেশি। স্থির করেই বলা যায়, এ বছরটি হবে অস্থিরতার। নিশ্চিত বলা যায়, বছরটি হবে অনিশ্চয়তার।
একনজর দেখে নেওয়া যাক ২০২৩ কেমন গেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে চমকপ্রদ উন্নয়ন অভিযাত্রায় একাধিক মেগা প্রকল্পের সমাপ্তি ও নির্মাণ অগ্রগতিতে বছরটিও নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল। আগের বছর পদ্মা সেতু চালুর পরে এই তালিকায় যুক্ত হলো কর্ণফুলী টানেল, এল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ইউরেনিয়ামের চালান, চালু হলো ঢাকা-কক্সবাজার নতুন রেলপথ, ঢাকা সিটিতে প্রথম মেট্রোরেলের সব স্টেশন চালু হলো, খুলল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং আংশিক উদ্বোধন হলো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের। এগুলো তো আকস্মিক ঘটনা নয়, জানাই ছিল।
উন্নয়নের পাশে নেতিবাচক ঘটনা হলো নিয়ন্ত্রণহীন বাজারদরে সীমিত আয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থা, হঠাৎ হঠাৎ পেঁয়াজ, ডিম, আলু, মুরগি ও গো-মাংসের দামে অযৌক্তিক উল্লম্ফন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উদ্বেগজনক হ্রাস, ডলারের অভাব ও মূল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলায় আমদানি-বাণিজ্যে সংকট, সারা বছরই সংবাদমাধ্যমে নজিরবিহীন দুর্নীতি এবং পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকে স্বাভাবিক লেনদেন বিঘ্নিত হওয়াসহ ব্যাংক প্রশাসনে শৈথিল্য ও বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের খবর ইত্যাদি।
এ বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণের বিস্তার এবং এই রোগে মৃত্যুতে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বছরটিতে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৭০১ এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৯৪৫ জন। হাসপাতালে ভর্তির সরকারি তথ্যের বাইরে রোগী ও মৃত্যু আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। এবার গ্রামেও ছড়িয়েছে।
বছরজুড়েই চলেছে দেশের বড় দুই দলের একটি বিএনপি ও সমমনা কিছু দলের ডাকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন। অন্যথায় নির্বাচন বর্জন তাদের ধনুর্ভঙ্গ পণ। একই দাবিতে আন্দোলনে ২০১৩-১৪ সালে জনগণের ওপর জোর খাটানোসহ লাগাতার হরতাল-অবরোধের ব্যর্থ কৌশল বাদ দিয়ে এবার বিএনপি শান্তিপূর্ণ গণজমায়েতের মাধ্যমে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করার কৌশল নিয়ে অনেক অগ্রগতি সাধন করে। বছরব্যাপী ইউনিয়ন-উপজেলা স্তর থেকে কেন্দ্রে রাজধানী পর্যন্ত কর্মসূচিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের দৃষ্টি আকর্ষণকারী বড় বড় জমায়েত হয়। কিন্তু তারা কর্মী-সমর্থকের বাইরে ব্যাপক জনতা নয়। বাস্তবে প্রতীয়মান হয়, ব্যাপকসংখ্যক দেশবাসী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিতে চায় কিন্তু সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির মতো চরম লক্ষ্যকে সমর্থন করে না এবং সে জন্য বিএনপির ঘোষিত লক্ষ্য অনুযায়ী গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব নয়। মাঠের এই পাঠ গ্রহণে বিএনপি নেতারা সক্ষম হননি। বছরের শেষভাগে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ বিভিন্ন কৌশল ও পুলিশি শক্তিপ্রয়োগে ভেঙে দিতে সরকারকে খুব বেগ পেতে হয়নি। বিএনপির মূল নেতারা কয়েকজনসহ সারা দেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও ঢালাওভাবে দায়ের করা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে পুরতে সরকার সক্ষম হয়েছে।
দেশের সঙ্গে স্বাভাবিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক ও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক বন্ধনে জড়িত পশ্চিমের গণতান্ত্রিক দেশগুলো আমাদের উপর্যুপরি বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচন ও মানবাধিকার প্রতিপালন নিয়ে কয়েক বছর ধরে প্রশ্ন তুলছে। বিদায়ী বছরটিতে এ বিষয়ে দৃশ্যমান চাপ দিয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম প্রভৃতি আইন ও মানবাধিকার ইস্যুতে আগের বছরের ডিসেম্বরে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরে ২০২৩-এর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নির্বাচন-প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারী ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার নীতি ঘোষণা করেছে। দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে অবাধ, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। পশ্চিমের এই চাপকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, চীন ও বাংলাদেশের আন্তসম্পর্ক, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বাংলাদেশের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকানোর ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়েও দেখা হচ্ছে।
বিদায়ী বছরের এই পটভূমি অতিক্রম করে ২০২৪ শুরুই হতে যাচ্ছে জাতীয় পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জাতীয় সংসদের নির্বাচন দিয়ে। ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। নির্বাচনী কার্যক্রম যে সুস্থভাবে অগ্রসর হচ্ছে না, তা আমরা সবাই জানি। প্রকৃত নির্বাচনের জন্য যতগুলো উপাদান আবশ্যক তার প্রায় সবই অনুপস্থিত। রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মসূচির প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশে থাকলেও এই নির্বাচনে নেই। বিএনপিসহ অধিকাংশ দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ তাদের সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ কয়েকটি অনুল্লেখ্য দল নির্বাচনে আছে। একতরফা হওয়ার বিপরীতে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক দেখাতে, নিরুৎসাহিত হয়ে পড়া ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে শেখ হাসিনার নির্দেশিত ‘ডামি’ প্রার্থী দেওয়ার বিচিত্র কৌশল অনুযায়ী প্রভাবশালী দল আওয়ামী লীগেরই অনেকে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগ ডামির মতো আচরণ না করে সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। ফলে প্রতিনিয়ত হানাহানি, মারামারি হচ্ছে। একদিকে নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের পরিস্থিতিতে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা বাস ও রেলে নাশকতা এবং অন্যদিকে নির্বাচনী হানাহানিতে সাধারণ নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে।
দেশে সরকারি প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের যৌথভাবে আপাত একতরফা নিয়ন্ত্রণ থাকায় এই হ-য-ব-র-ল পরিবেশেও ৭ জানুয়ারির ভোট গ্রহণ হয়ে যাবে, কম ভোট পড়লেও। এটা অনুমান করা যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হবে, তারপর কী? নতুন বছরটা কেমন যাবে? এরূপ একটি অগ্রহণযোগ্য, বিশ্বাসযোগ্যতাহীন নির্বাচনের ফলাফল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুধু প্রত্যাখ্যানই করবে না, অবজ্ঞা করবে। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের নৈতিক মনোবল থাকবে না। জনসাধারণ সংসদের প্রতি মনোযোগী ও শ্রদ্ধাশীল হবে না।
সামনের দিনগুলোতে আসছে অর্থনৈতিক সংকট, যা বিদায়ী বছরে আমাদেরও দাঁত দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধজনিত কারণে অর্থনীতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুর সঙ্গে ইদানীং যুক্ত হওয়া শ্রম অধিকার প্রশ্ন পশ্চিমা দেশগুলোর অসন্তোষের হুমকি তৈরি করেছে, যা থেকে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা পর্যন্ত প্রকাশ করা হচ্ছে।
যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক মোকাবিলা করতে জাতীয় ঐক্য দরকার, সরকারের পদক্ষেপের প্রতি রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন দরকার। ৭ জানুয়ারির মতো নির্বাচন থেকে কোনো সরকার তা আশা করতে পারে না। তাই এই নির্বাচনের রাজনৈতিক সংশোধনের জন্য আবার আলাপ-আলোচনা, সমঝোতার পথেই সমাধান বের করতে হবে। সে পথে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা এ বছরেই উঠতে পারে। অন্যথায় সংঘাতের পথে সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে যাবে।
২০২৩-এর ঘটনাধারা আমাদের অনেকটা পূর্ব-অনুমিত ছিল। জানা ছিল। সেই জানার মধ্য থেকে ২০২৪-এ অনেক অজানার পথে আমরা পা বাড়াচ্ছি।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাঁদের অভ্যর্থনা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, এবং আইওএমের কর্মকর্তারা। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মোস্তফা জামিল খান ফেরত আসা বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন।
৫ ঘণ্টা আগেজাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোট গ্রহণ, প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার সুযোগসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছেন সংবাদপত্রের সম্পাদকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন তাঁরা।
৬ ঘণ্টা আগেপরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান এখন সময়ের দাবি। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের চাওয়া দ্রুত নির্বাচন। এ অবস্থায় নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন দলগুলোর নেতারা। তাঁরা বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়
৬ ঘণ্টা আগেনির্বাচন কমিশনে আড়াই মাসের শূন্যতা কাটল অবশেষে। গতকাল বৃহস্পতিবার অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
৬ ঘণ্টা আগে