Ajker Patrika

রেলের রানিং স্টাফের পর কন্ট্রোলারদের আন্দোলন, ট্রেনে বিপর্যয়ের শঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক
রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। গতকাল ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশনে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। গতকাল ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশনে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাইলেজ ভাতা এবং মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। শ্রমিক অসন্তোষে নতুন করে যুক্ত হয়েছে রেলওয়ে ট্রেন কন্ট্রোলারদের ভাতা বন্ধের বিষয়টি। একাধিকবার দাবি উত্থাপনের পরও কোনো সমাধান না পেয়ে কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেন কন্ট্রোলারস অ্যাসোসিয়েশন।

গতকাল বুধবার কন্ট্রোলারস অ্যাসোসিয়েশন এই ঘোষণা দেয়। এতে সারা দেশে ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় দেখা দেবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

কন্ট্রোলারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রেন কন্ট্রোল অফিসে কর্মরতরা ১৯৮০ সাল থেকে বেতনের অংশ হিসেবে ৪টি অগ্রিম ইনক্রিমেন্ট এবং এর ওপর নানা ভাতা পেতেন। কিন্তু ২০০৪ সালে রেলওয়ে অডিট অধিদপ্তর এই সুবিধা বন্ধ করে দেয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যান কর্মচারীরা। পরে সর্বোচ্চ আদালত শ্রমিকদের পক্ষে রায় দেন।

কন্ট্রোলাররা ছাড়াও বিভাগীয় রেলযান নিয়ন্ত্রক (ডিটিএনএল), চিফ ট্রেন কন্ট্রোলারসহ (সিটিএনএল) রেলের অস্থায়ী কর্মচারীরা এ সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। তবে ২০২২ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় আবার এই সুবিধা বাতিল করে দেয়। এরপর থেকে রেলের কন্ট্রোলাররা নিয়মিত বিরতিতে আন্দোলন করছেন।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে লেখা এক চিঠিতে রেলওয়ে ট্রেন কন্ট্রোলারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ও ভাতার দাবি জানিয়ে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নভেম্বর মাসে একাধিক বৈঠক করেছেন তাঁরা। কিন্তু তাতেও আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় তাঁরা কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন।

সমিতির সদস্যরা বলেন, ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন বা শিডিউল বিপর্যয় ঘটলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে। ট্রেন কন্ট্রোলাররা এর দায়ভার নেবেন না।

তবে গতকাল থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা থাকলেও তাঁরা তা করেননি। যেকোনো সময় কর্মবিরতিতে যেতে পারেন বলে জানা গেছে।

রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মাইলেজের দাবিতে আমরা এখনো কর্মবিরতিতে যাইনি। তবে আউটার স্টেশনে বিশ্রামের যে আট ঘণ্টার সময়সীমা আগে ছিল, সেটি আমরা এখন বহাল রাখছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু আশানুরূপ কোনো সাড়া পাচ্ছি না।’

এর আগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রেলপথে নানা সংকটের কথা জানিয়ে রেলওয়েকে চিঠি দিয়েছিলেন রানিং স্টাফরা। এতে বলা হয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভ দিয়ে ট্রেন চালানো হচ্ছে। পথিমধ্যে লোকোমোটিভ বিকল হলে দায়ভার রানিং কর্মচারীর ওপর চাপানো হয়। নতুন ৩০০০ সিরিজসহ অনেক লোকোতে জ্বালানি খরচ বেশি হয়। এসব লোকোমোটিভ চালকদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল।

শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লোকোমোটিভ ইস্যু, আমাদের বিশ্রামের ইস্যু নিয়ে অনেকবার রেলওয়েতে কথা বলেছি। কিন্তু সবাই আশ্বাস দিয়ে আমাদের ফেরত পাঠায়। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও এই চিঠি রেলওয়েকে আবার দিয়েছি; কিন্তু সমাধানের পথ দেখতে পাচ্ছি না।’

এদিকে শ্রমিকদের বিক্ষোভে রেলওয়েতে শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেওয়া শুরু করেছে বলে জানান কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বুধবার সব কটি আন্তনগর ট্রেন দেরি করে কমলাপুর স্টেশন ছেড়েছে। তবে কোনো ট্রেনের যাত্রা বাতিল হয়নি। রেলের রানিং স্টাফ ও কর্মচারীরা খুব বেশি সময় কর্মবিরতিতে থাকছেন না। তাই এখনো শিডিউলে বড় বিপর্যয় ঘটছে না।

এ বিষয়ে জানতে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) এ এম সালাহ উদ্দীনকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

লোকাল ট্রেন বন্ধ, যাত্রীদের দুর্ভোগ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি চলায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের সব লোকাল ট্রেন বন্ধ রয়েছে। এতে শত শত যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। গতকাল দুপুরে রেলওয়ে জংশনে গিয়ে দেখা যায়, সত্তর বছরের খোদেজা খাতুন ময়মনসিংহ থেকে বাবার বাড়ি নেত্রকোনায় যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করছিলেন ট্রেনের জন্য। মাত্র ১০ টাকা নিয়ে এসেছেন লোকালে ট্রেনে যাবেন বলে। তাই বাসেও যেতে পারছেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত