সৌগত বসু, ঢাকা
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ খাতের পাঁচটি মেগা প্রকল্পে সব মিলে ব্যয় বেড়েছে ৫৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের এসব প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রাথমিক খরচের চেয়ে অনেক বেশি।
দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরা শ্বেতপত্রে মেগা প্রকল্পের খরচের এমন চিত্র উঠে এসেছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলেছে, কয়েকটি প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি। ফলে খরচ আরও বাড়তে পারে। এই পাঁচ প্রকল্পের অপর তিনটি হলো পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ।
অভিযোগ উঠেছে, পরিকল্পনায় অদক্ষতা, কেনাকাটায় অস্বচ্ছতা ও অতিরিক্ত খরচের কারণে প্রকল্পগুলোর খরচ বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় প্রকল্পে বড় অঙ্কের খরচ বাড়া দুর্নীতির আশঙ্কার আভাস দেয়।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর গত অক্টোবরের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, যা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা।
শ্বেতপত্রের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ও সময় বৃদ্ধি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। খুব প্রয়োজন না হলে ব্যয় বাড়ানো হবে না। আবার বাড়ানো হলে সেটা যেন যুক্তিসংগত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু ডলারের বিনিময় হারের কারণে যে ব্যয় বৃদ্ধি, সেটিই করা হচ্ছে। এর বাইরে ভূমি অধিগ্রহণে যে ব্যয় বৃদ্ধি, এটাও বিবেচনা করা হচ্ছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার আগস্টের শেষ সপ্তাহে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি করে। এই কমিটি বিভিন্ন দলিলপত্র পর্যালোচনা করে ও অংশী-জনদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্বেতপত্র জমা দিয়েছে।
ওই শ্বেতপত্রে সড়ক, সেতু ও রেল যোগাযোগ খাত নিয়ে উল্লেখ করা হয়, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া, অদূরদর্শী নীতি এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে প্রকল্পগুলোর ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে। পদ্মা সেতুসহ ওই পাঁচ বড় প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে মোট ব্যয় ছিল ৭৭ হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। পরে এসব প্রকল্পে ধাপে ধাপে ব্যয় আরও ৫৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বৃদ্ধি, পরিকল্পনায় পরিবর্তন এবং সঠিক পূর্বাভাসের অভাবে এই ব্যয় বেড়েছে। সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সময় ও ব্যয়ের পরিবর্তনগুলো উল্লেখ থাকলেও, প্রকৃত পরিসংখ্যান ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলেছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের কেনাকাটায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) মানা হয়নি। প্রকল্পের কেনাকাটায় অস্বচ্ছতা ও অতিরিক্ত ব্যয়ের অভিযোগও উঠেছে। অনেক ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান না করে সরাসরি বরাদ্দ দেওয়ার নজির রয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয়ের বৃদ্ধি এবং দুর্নীতির আশঙ্কা বাড়িয়েছে। সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপির ভিত্তিতে হিসাব করা হয়েছে।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ এবং মেট্রোরেলে প্রাথমিক ডিপিপি এবং সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপির মধ্যে ব্যয়ের ব্যবধান ৫৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। কিছু প্রকল্প অসম্পূর্ণ থাকায় চূড়ান্ত ব্যয় আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে কিছু ক্ষেত্রে বৈধ কারণ থাকতে পারে। তবে প্রকল্প শুরুর পরপরই যদি ডিজাইনের বড় পরিবর্তন প্রয়োজন হয়, তাহলে তা আগেই অনুমান করা উচিত ছিল। পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরে রেল সংযোগ এবং ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথ যুক্ত করা হয়। কক্সবাজার-দোহাজারী রেল প্রকল্পে প্রাথমিক নকশার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩ লাখ টাকা, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। এই বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৮৪৭ শতাংশ।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সংযোগ সড়ক এবং টোল প্লাজার জন্য বরাদ্দ ছিল ১২৭ কোটি টাকা, যা ২০১৫ সালে পুনঃসংযোজনের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৯ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। এই প্রকল্পের সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়ে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করায় খরচ দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
২০০৭ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্প নেওয়ার সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে ২০০৯ সালে প্রথম সংশোধনীতেই তা বাড়িয়ে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়। পরে ব্যয় আরও বাড়ানো হয়।
২০১৬ সালে একনেক সভায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে ২০১৮ সালে প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা করে প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়।
শুরুতে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার মূল দৈর্ঘ্যের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে হয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।
মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) প্রকল্পে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরে ব্যয় সংশোধন করে হয় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কাজ চলছে।
শ্বেতপত্র কমিটি বলছে, দেশে চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণের ব্যয় ভারতের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ গুণ এবং পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি। রংপুর-হাটিকুমরুল চার লেন মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় নানাবিধ অনিয়মের পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণে। ভূমির দাম প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাস্তবের তুলনায় অনেক বেশি ধরা হয়েছে। এতে প্রকল্প খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প বারবার সংশোধনের ফলে খরচ প্রাক্কলনের তুলনায় ১২ গুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবহন খাতের ৩২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশে সময় ও ব্যয় উভয় বেড়েছে। ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রকল্পে সময় বা ব্যয়ের যেকোনো একটি বেড়েছে। গড়ে প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সময় ৯৪ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও যোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শ্বেতপত্রে উল্লেখিত অভিযোগগুলো প্রায় প্রমাণিত হয়েছে। আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে প্রকল্পের খরচ অনেক বেশি বলে বেরিয়ে এসেছে। প্রকল্পের অপচয়ের কিছু অর্থ পুনরুদ্ধারের সুযোগ অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে আছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত, যাতে এসব মেগা প্রকল্প থেকে জনগণ উপকার পায় এবং এগুলো আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।
পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ খাতের পাঁচটি মেগা প্রকল্পে সব মিলে ব্যয় বেড়েছে ৫৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের এসব প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রাথমিক খরচের চেয়ে অনেক বেশি।
দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরা শ্বেতপত্রে মেগা প্রকল্পের খরচের এমন চিত্র উঠে এসেছে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলেছে, কয়েকটি প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি। ফলে খরচ আরও বাড়তে পারে। এই পাঁচ প্রকল্পের অপর তিনটি হলো পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ।
অভিযোগ উঠেছে, পরিকল্পনায় অদক্ষতা, কেনাকাটায় অস্বচ্ছতা ও অতিরিক্ত খরচের কারণে প্রকল্পগুলোর খরচ বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় প্রকল্পে বড় অঙ্কের খরচ বাড়া দুর্নীতির আশঙ্কার আভাস দেয়।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর গত অক্টোবরের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ দুর্নীতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা থেকে ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, যা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা।
শ্বেতপত্রের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গত রোববার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ও সময় বৃদ্ধি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। খুব প্রয়োজন না হলে ব্যয় বাড়ানো হবে না। আবার বাড়ানো হলে সেটা যেন যুক্তিসংগত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু ডলারের বিনিময় হারের কারণে যে ব্যয় বৃদ্ধি, সেটিই করা হচ্ছে। এর বাইরে ভূমি অধিগ্রহণে যে ব্যয় বৃদ্ধি, এটাও বিবেচনা করা হচ্ছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার আগস্টের শেষ সপ্তাহে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি করে। এই কমিটি বিভিন্ন দলিলপত্র পর্যালোচনা করে ও অংশী-জনদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে ১ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্বেতপত্র জমা দিয়েছে।
ওই শ্বেতপত্রে সড়ক, সেতু ও রেল যোগাযোগ খাত নিয়ে উল্লেখ করা হয়, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া, অদূরদর্শী নীতি এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে প্রকল্পগুলোর ব্যয় ক্রমাগত বাড়ছে। পদ্মা সেতুসহ ওই পাঁচ বড় প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে মোট ব্যয় ছিল ৭৭ হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। পরে এসব প্রকল্পে ধাপে ধাপে ব্যয় আরও ৫৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বৃদ্ধি, পরিকল্পনায় পরিবর্তন এবং সঠিক পূর্বাভাসের অভাবে এই ব্যয় বেড়েছে। সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সময় ও ব্যয়ের পরিবর্তনগুলো উল্লেখ থাকলেও, প্রকৃত পরিসংখ্যান ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বলেছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের কেনাকাটায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) মানা হয়নি। প্রকল্পের কেনাকাটায় অস্বচ্ছতা ও অতিরিক্ত ব্যয়ের অভিযোগও উঠেছে। অনেক ক্রয় প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান না করে সরাসরি বরাদ্দ দেওয়ার নজির রয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয়ের বৃদ্ধি এবং দুর্নীতির আশঙ্কা বাড়িয়েছে। সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপির ভিত্তিতে হিসাব করা হয়েছে।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ এবং মেট্রোরেলে প্রাথমিক ডিপিপি এবং সর্বশেষ সংশোধিত ডিপিপির মধ্যে ব্যয়ের ব্যবধান ৫৬ হাজার ৬০৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। কিছু প্রকল্প অসম্পূর্ণ থাকায় চূড়ান্ত ব্যয় আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে কিছু ক্ষেত্রে বৈধ কারণ থাকতে পারে। তবে প্রকল্প শুরুর পরপরই যদি ডিজাইনের বড় পরিবর্তন প্রয়োজন হয়, তাহলে তা আগেই অনুমান করা উচিত ছিল। পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরে রেল সংযোগ এবং ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথ যুক্ত করা হয়। কক্সবাজার-দোহাজারী রেল প্রকল্পে প্রাথমিক নকশার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩ লাখ টাকা, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। এই বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ৮৪৭ শতাংশ।
শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সংযোগ সড়ক এবং টোল প্লাজার জন্য বরাদ্দ ছিল ১২৭ কোটি টাকা, যা ২০১৫ সালে পুনঃসংযোজনের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৯ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। এই প্রকল্পের সর্বশেষ প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়ে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা সাশ্রয় করায় খরচ দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
২০০৭ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্প নেওয়ার সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে ২০০৯ সালে প্রথম সংশোধনীতেই তা বাড়িয়ে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়। পরে ব্যয় আরও বাড়ানো হয়।
২০১৬ সালে একনেক সভায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে ২০১৮ সালে প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা করে প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়।
শুরুতে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার মূল দৈর্ঘ্যের কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বেড়ে হয় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।
মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) প্রকল্পে শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরে ব্যয় সংশোধন করে হয় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের কাজ চলছে।
শ্বেতপত্র কমিটি বলছে, দেশে চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণের ব্যয় ভারতের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ গুণ এবং পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি। রংপুর-হাটিকুমরুল চার লেন মহাসড়কে প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় নানাবিধ অনিয়মের পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণে। ভূমির দাম প্রায় সব ক্ষেত্রেই বাস্তবের তুলনায় অনেক বেশি ধরা হয়েছে। এতে প্রকল্প খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প বারবার সংশোধনের ফলে খরচ প্রাক্কলনের তুলনায় ১২ গুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবহন খাতের ৩২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশে সময় ও ব্যয় উভয় বেড়েছে। ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রকল্পে সময় বা ব্যয়ের যেকোনো একটি বেড়েছে। গড়ে প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সময় ৯৪ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও যোগাযোগ খাতের বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শ্বেতপত্রে উল্লেখিত অভিযোগগুলো প্রায় প্রমাণিত হয়েছে। আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে প্রকল্পের খরচ অনেক বেশি বলে বেরিয়ে এসেছে। প্রকল্পের অপচয়ের কিছু অর্থ পুনরুদ্ধারের সুযোগ অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে আছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের একটি পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত, যাতে এসব মেগা প্রকল্প থেকে জনগণ উপকার পায় এবং এগুলো আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।
নির্বাচনে মনোনয়ন-বাণিজ্য ও অদৃশ্য নির্বাচনী ব্যয় বা কালোটাকার ব্যবহার বন্ধ করার উপায় খুঁজে পাচ্ছে না নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। অংশীজনদের সঙ্গে এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনায়ও এর সমাধান মেলেনি। কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের পক্ষে। এ ছাড়া সংস্কার কমিশন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো এবং
৬ ঘণ্টা আগেদেশের স্বাস্থ্য খাতের সিংহভাগ অবকাঠামো, রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয় পাঁচ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা বা অপারেশনাল প্ল্যানের (ওপি) মাধ্যমে। বর্তমানে ওপি চলমান না থাকায় পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় একরকম স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। গত জুলাইয়ে ‘পঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্য
৭ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থা আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ধর্মের বিষয়ে বাংলাদেশের তরুণেরা খুবই পক্ষপাতহীন উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তরুণেরা দেশকে নতুন করে গড়তে চান।
১০ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিশন। দুই দেশের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের কার্যক্রম এবং আটক ব্যক্তিদের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে কমিশন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ‘বাংলাদেশে গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা জনসমক্ষে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে...
১২ ঘণ্টা আগে