ক্ষমতাসীন দল পুলিশকে নিজস্ব সম্পত্তি মনে করে: সাবেক আইজিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৯ মে ২০২২, ১৮: ২১
Thumbnail image

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক শক্তি এবং আমলাতন্ত্র—এরা কখনো পুলিশের পরিবর্তন চাইবে না। রুলিং পার্টি, তারা মনে করে, পুলিশ তাদের নিজস্ব সম্পত্তি। তবে সব ছাপিয়ে পুলিশদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে।’ 

আজ শনিবার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন শহীদুল হক। 

অনুষ্ঠানে এ কে এম শহীদুল হকের লেখা আত্মজীবনীমূলক বই ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি: স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গির দমন’-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের প্রকাশনায় বইটি সম্পাদনা স্বত্বাধিকারী রাখাল রাহা। 

দীর্ঘ ৩২ বছরের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা বইটি একটি দলিল হিসেবে মূল্যায়িত হবে বলে মনে করেন লেখক এ কে এম শহীদুল হক। তিনি বলেন, সমাজে পুলিশ আছে বলেই পুলিশের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করা যায় না। পুলিশকে বোঝার জন্য অনেক বিষয় আছে এই বইয়ে। শুধু পুলিশ জীবনের স্মৃতিই নয়, বাল্যজীবন থেকে এ যাবৎকালের অনেক কথাই তুলে ধরেছেন এই বইটিতে। কর্মক্ষেত্রের নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করেছেন এই বইতে। 

সাবেক আইজিপি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক শক্তি ও আমলাতন্ত্র কখনো পুলিশের পরিবর্তন চায় না। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল চায়, তারা যা বলবে পুলিশ তা-ই করবে। সংসদ সদস্য চান, তিনি যা বলবেন, ওসি সেটাই করবেন। এসব চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে কাজ করা খুবই কঠিন।’ 

শহীদুল হক বলেন, ‘পুলিশকে স্বাধীনতা দিতে হবে, জুডিশিয়াল সার্ভিস দিতে হলে আইনের পরিবর্তন জরুরি। আমলাদের জন্য আইন করা সম্ভব হয়নি। এর জন্য পুলিশ আইনের পরিবর্তন করা দরকার।’ 

কথাসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সচিব কবি ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা। 

সেলিনা হোসেন বলেন, ‘পেশাদার লেখক না হয়েও তাঁর লেখার ভঙ্গি ও উপস্থাপন অত্যন্ত চমৎকার। আমার মনে হয়, এই বইটি সব ধরনের পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া উচিত। শুধু পুলিশ সদস্যরাই নন, সাধারণ পাঠকদের কাছেও এই বইটি সমানভাবে সমাদৃত হবে।’

সাহিত্যিক মনজুরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বইটির ভাষা শৈলী ও উপস্থাপন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘লেখক শেষ থেকে শুরু করেছেন। তিনি তাঁর পেশাগত দিনের শেষ দিনটি থেকে শুরু করে স্মৃতিচারণ করেছেন। এমন উপস্থাপন পাঠকের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে।’

সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘এই পেশার লোকদের যারা শুভ চিন্তক নন তাঁরা মনে করেন, এখানে বুদ্ধিবৃত্তির কিছু নাই। কিছু গোঁয়ার প্রকৃতির লোক এখানে এলেই চলে। কিন্তু এমন তো নয়।’

বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সমসাময়িক ইতিহাস লেখা সহজ নয়, এর অনেক বিড়ম্বনা আছে। অনেক সময় অনেক জিনিস লেখা উচিত না কিংবা পরবর্তী সময় লিখলে ভালো। তবে অকপটে কথাবার্তা বলা নিশ্চয়ই ভালো।’

লেখক তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে কী ধরনের পরিবেশে কাজ করেছেন সেটা তুলে ধরেছেন বলে উল্লেখ করেন অনুষ্ঠানের আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে অতীত বর্তমান সব সময়ই দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তাদের নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বিরোধী দলকে চাপে রাখার নীতি গ্রহণ করে। একটা কঠিন সময়ে লেখক দায়িত্ব পালন করেছেন।’

দীর্ঘ সময় ধরে নিজেই এই বইটি নিয়ে তিনি কাজ করেছেন উল্লেখ করেন ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘পাণ্ডুলিপি তৈরির পর বইয়ের প্রতিটি পর্বে লেখক আমাদের সঙ্গে থেকেছেন এবং আমাদের পরামর্শকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।’ বইটি লেখার ক্ষেত্রে সাবলীল উপস্থাপন পাঠকের ভালো লাগবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

জাতীয় সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত