Ajker Patrika

ভোটের মাঠে প্রায় ২ লাখ পুলিশ, দাগি আসামিরা নজরদারিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮: ৪৬
ভোটের মাঠে প্রায় ২ লাখ পুলিশ, দাগি আসামিরা নজরদারিতে

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সারা দেশে প্রায় দুই লাখ পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকছেন। নির্বাচনের দায়িত্বে, মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং টিম, ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গেও ডিউটিতে থাকবে পুলিশ সদস্য। এমনকি ওই দিন যিনি থানার সিসি লেখেন, তিনিও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। 

আজ শনিবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশন) আনোয়ার হোসেন এই তথ্য জানান। 

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সারা দেশে ১ লাখ ৮৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকছেন। নির্বাচনী এলাকা থেকে পুলিশ যে কোনো অভিযোগ পেলে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করছে। পুলিশের কাছে সব প্রার্থী সমান। প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে সব প্রার্থী যেন সমান সুযোগ পান, সেটির নির্দেশনা দেওয়া আছে। জামিন পাওয়া আসামিদের বিষয়ে পুলিশের বিশেষ নজরদারি অব্যাহত আছে। 

ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনী এলাকার রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো অভিযোগ পেলে সেগুলোর প্রতিকারের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পুলিশ তাদের সহযোগিতা করছে। কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারেরা যেভাবে নিরাপত্তা নির্দেশনা দেবেন পুলিশ সেভাবে কাজ করবে। 

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র সম্পর্কে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। কোনো কোনো দুর্গম এলাকার কেন্দ্রও ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। সেগুলোর বিষয়েও পুলিশ বাড়তি ফোর্স দিয়ে কাজ করছে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সর্বাত্মক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। 

এ ছাড়া সারা দেশে প্রতিদিন নিয়মিত মামলায় ১৮ শ থেকে ১৯শ জনকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা রাজনৈতিক কর্মী নয়, আসামি বলে জানিয়েছেন আনোয়ার হোসেন। 

তিনি বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের কতজন নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটা একেবারে সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে প্রতিদিন নিয়মিত মামলায় সারা দেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ নানা কারণে ১৮ শ থেকে ১৯শ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বাইরে যেটা বলা হয় শুধু রাজনৈতিক কারণে, আসলে রাজনৈতিক কারণে কোনো গ্রেপ্তার হয় না।’ 

এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যখন একটি জায়গায় মারামারি, বাসে অগ্নিসংযোগ, অবরোধ হয়, তখন সেই সংক্রান্ত একটা মামলা হয়। মামলায় যারা আসামি হয় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। যেই সংখ্যাটা বাইরে বলা হয়, এটা একেবারেই অতিরঞ্জিত। আপনারা দেখেছেন গ্রেপ্তারবাণিজ্য শব্দ কিন্তু এবার গণমাধ্যমে নাই। আমরা গ্রেপ্তার করার আগে বারবার চিন্তা করি যে-ই জড়িত শুধু তার তাকেই গ্রেপ্তার করা হয়।’ 

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছিল। সেদিনের পরিস্থিতি আমরা মোকাবিলা করেছি। সেখানে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিল। পুলিশের অনেকগুলো অস্ত্র ছিনতাই হয়েছিল। এই ঘটনার পর থেকে যেটা বলা হয় রাজনৈতিক কর্মী। আমরা যখন গ্রেপ্তার করি, তখন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয় না। আমরা দেখি কোনো একটা ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত থাকে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হয়। যেন পরিস্থিতির আর অবনতি না ঘটে।’ 

নির্বাচনবিরোধী লিফলেট বিতরণে বাধা দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবে কি না বা ভোট দেওয়া-না দেওয়ার অধিকার ভোটারের আছে। কিন্তু ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অধিকার কারও নেই।’ 

লিফলেট বিতরণকারীদেরও কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে প্রতিরোধ করা, নির্বাচনী কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করাটা কিন্তু অপরাধ। আমরা যদি নির্বাচনী আইনবিধি এই বিষয়গুলো দেখি, তাহলে দেখবেন-একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে বাধার সৃষ্টি করা যাবে না। বাধা সৃষ্টি করতে গেলেই সেখানে সংগত কারণেই একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে আরও বড় ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’ 

বিভিন্ন এলাকায় বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এই ডিআইজি বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে আমাদের বিশেষ অভিযান চলমান। বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও বহন নিষিদ্ধ করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। নির্বাচনকালে কেউ বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন বা বহন করতে পারবে না। আমাদের কাছে নির্দিষ্ট এলাকায় বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের দুটি অভিযোগ এসেছে। আমরা তদন্ত করে দেখেছি সেগুলো ছিল খেলনা অস্ত্র।’ 

দাগি আসামি ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা জামিনে বেরিয়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কোনো আসামি জামিনে বেরিয়ে আসলে সে যদি নতুন করে অপরাধে না জড়ায় তাহলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ নেই। জামিন পাওয়া আসামিদের বিষয়ে পুলিশের বিশেষ নজরদারি অব্যাহত আছে। তারা কোনো অপরাধ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত