ফের খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, এবারও জটিলতা সময়সীমার

  • কৃষি খাতে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মী নেওয়া হবে
  • চাহিদাপত্র সত্যায়নের শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর
  • কর্মীর খরচ ৭৯ হাজার টাকা বেঁধে দিয়েছে মন্ত্রণালয়
  • কাজের মেয়াদ তিন বছর, বেতন দেড় হাজার রিঙ্গিত
মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
Thumbnail image
ফাইল ছবি

মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার আবার খুলেছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ শ্রমবাজারে এবার প্ল্যান্টেশন অর্থাৎ কৃষি খাতে কর্মী নেওয়া হচ্ছে। তবে এবারও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ জানুয়ারি। জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা বলছেন, সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কারণে এবারও সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, এ সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে সব কর্মীর জন্য উড়োজাহাজের টিকিট সংগ্রহ করা জটিল হতে পারে।

গত ৩১ মে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার আগে সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও কেবল উড়োজাহাজের টিকিট না পাওয়ায় দেশটিতে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর। অবশ্য এবার সমস্যা এড়াতে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজার গত অক্টোবরের শেষ দিকে আবার খুলেছে। তবে এটি খুলেছে শুধু কৃষি খাতের জন্য। দেশটি ইতিমধ্যে এ খাতে বিভিন্ন দেশের ২৫ হাজার কর্মী নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা। এই কর্মীদের বয়স হতে হবে ২২ বছর থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। কাজের মেয়াদ হবে তিন বছর। গতবারের অভিজ্ঞতায় এবার সে জটিলতা এড়াতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে গত ২৬ অক্টোবর ওই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কৃষি খাতের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের পর কোনো চাহিদাপত্র সত্যায়ন করবে না মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নিতে হবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, নিয়োগকর্তার চাহিদাপত্রগুলো মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে সত্যায়িত হয়ে আসার পর দ্রুত ছাড়পত্র দিচ্ছে বিএমইটি। ইতিমধ্যে পাঁচটি কোম্পানিতে নিয়োগ পাওয়া ৪৬১ কর্মীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের মাসিক বেতন ১ হাজার ৫০০ রিঙ্গিত (মালয়েশিয়ার মুদ্রা)।

মন্ত্রণালয় কৃষি খাতে কর্মী পাঠানোর খরচও নির্ধারণ করে দিয়েছে। ৩ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রিক্রুটিং এজেন্টরা কর্মীদের কাছ থেকে সরকারনির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার অতিরিক্ত অর্থ নিতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্ট নির্ধারিত তারিখের আগে কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভিসা, বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র এবং উড়োজাহাজের টিকিট, প্রাক্-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশনসহ সব প্রস্তুতি নিশ্চিত করবে।

মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, বিএমইটির চলমান তথ্যভান্ডার থেকে মালয়েশিয়ার কৃষি খাতের জন্য কর্মীদের নির্বাচন করতে হবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে। কর্মীর যাওয়া-আসার উড়োজাহাজের টিকিট বহন করবেন নিয়োগকর্তা।

জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) বর্তমানে কমিটি নেই। বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, মালয়েশিয়া কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সব সময় প্রাধান্য দেয়। তবে বাংলাদেশ থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মী পাঠানোই বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, মালয়েশিয়ার নিয়োগ-কর্তার কাছ থেকে চাহিদাপত্র পাওয়ার পর কর্মীদের তথ্যসহ সেগুলো মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে সত্যায়ন করতে হয়। এতে সপ্তাহখানেক লাগে।

এরপর প্রত্যেক কর্মীর ভিসা সংগ্রহ ও অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টার থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়। পরে বিএমইটি থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নেওয়ার পরই উড়োজাহাজের টিকিট কাটা যায়। এরপর হয় প্রাক্-বহির্গমন ওরিয়েন্টেশন। এসব কাজেও কয়েক দিন লাগে। এ কারণে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে কর্মী পাঠানোর বাধ্যবাধকতা থাকায় অনেকে সুযোগটি নিতে পারবেন না।

শামীম আহমেদ চৌধুরী বলেন, মন্ত্রণালয় কর্মী পাঠানোর যে খরচ নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেটি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কারণ, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী উড়োজাহাজের টিকিটসহ মালয়েশিয়া প্রান্তের সব খরচ নিয়োগকারীর দেওয়ার কথা থাকলেও তা হয় না। এ জন্য টিকিটের টাকাসহ আরও কিছু খরচ কর্মীকেই বহন করতে হয়।

জানা গেছে, কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়নের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে হাইকমিশনে প্রায় ১৫ ধরনের তথ্য জমা দিতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে কোম্পানির অনুমোদনপত্র, সত্যায়ন ফির মূল ব্যাংক স্লিপ, চার-পাঁচজন কর্মীর নমুনা বেতন স্লিপ, নিয়োগকর্তার প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান কর্মীর (দেশি ও বিদেশি) সংখ্যা, শ্রমিকদের দু-তিনজনের ফোন নম্বর, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিগত তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট (যেখানে ১০০ শ্রমিকের জন্য ন্যূনতম ব্যালেন্স থাকতে হবে ২ লাখ রিঙ্গিত)। এ ছাড়া কর্মসংস্থান চুক্তি, রিক্রুটিং এজেন্ট এবং নিয়োগকর্তার মধ্যে চুক্তি ও মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোটা অনুমোদনপত্র।

এর আগে ৩১ মে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের কর্মীদের জন্য বন্ধ হয়। ওই সময়সীমার কারণে ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও মালয়েশিয়ায় যেতে ব্যর্থ হন প্রায় ১৮ হাজার বাংলাদেশি কর্মী। সেবার কর্মী যাওয়ার চাপে শেষমুহূর্তে উড়োজাহাজের টিকিটের সংকট দেখা দেয়। অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেও তাঁদের পাঠানো যায়নি। আশার কথা হলো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ৪ অক্টোবর ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে তাঁদের বিষয়টি বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অবশ্যই সব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ওই কর্মীদের যত দ্রুত সম্ভব মালয়েশিয়ায় প্রবেশের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

বিএমইটি সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় আছেন। গত বছর সেখানে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গেছেন ৯২ হাজার ৯০৬ জন। ২০১৮ সালে শ্রমবাজারটি বন্ধের চার বছর পর ২০২২ সালে চালু হয়েছিল। সে বছর গিয়েছিলেন ৫০ হাজার ৯০ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা: সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত