Ajker Patrika

রাশিয়া কম দামে ‘নোংরা’ ডিজেল গছাতে চাইছে

সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২২, ০৮: ২৯
রাশিয়া কম দামে ‘নোংরা’ ডিজেল গছাতে চাইছে

রাশিয়ার ডিজেলে বাংলাদেশে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি সালফারের উপস্থিতি পেয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ডিজেলের যে নমুনা রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোলিয়াম কোম্পানি রসনেফ্ট অয়েল বিপিসিকে দিয়েছে, তাতে এই সালফারের উপস্থিতি বাংলাদেশে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ১০০ গুণ বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার এই ডিজেল পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই কম দামে বাংলাদেশের কাছে গছাতে চাচ্ছে রাশিয়া।

বিপিসি ও ইস্টার্ন রিফাইনারির তিনজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, রসনেফ্ট ডিজেলের যে নমুনা দিয়েছে, তাতে সালফারের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৫ হাজার পারস পার মিলিয়ন (পিপিএম)। বাংলাদেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আমদানি করা ডিজেলে ৫০ পিপিএম পর্যন্ত সালফার উপস্থিতি অনুমোদন করে।

ডিজেলে সালফারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিএসটিআই ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর আমদানি করা ডিজেলের ক্ষেত্রে সালফারের পরিমাণ নির্ধারণ করেছে ৫০ পিপিএম। এর আগে বিএসটিআই ডিজেলে সালফারের পরিমাণ ৫০০ পিপিএম পর্যন্ত অনুমোদন করত।

বিএসটিআইয়ের উপপরিচালক (রসায়ন, মান) জহুরা শিকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, পরিবেশের দূষণ রোধে বিএসটিআই আমদানি করা ডিজেলে সালফারের মাত্রা নির্ধারণ করেছে ৫০ পিপিএম। তবে বিপিসি যে ডিজেল আমদানি করে, তাতে সালফারের মাত্রা পাওয়া যায় ১০-১৫ পিপিএম।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তথ্যমতে, দেশে বছরে ৪৫-৫০ লাখ মেট্রিক টনের মতো ডিজেলের চাহিদা আছে। এর পুরোটাই আমদানি করা হয়। মোট ডিজেলের ১০ শতাংশ ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং বাকি ৯০ শতাংশ ব্যবহার হয় যানবাহনে। বিপিসি বর্তমানে কুয়েত, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত,চীন,
থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভারত থেকে ডিজেলসহ অন্যান্য পরিশোধিত জ্বালানি পণ্য ক্রয় করে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপিসি গত আট মাসে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনেছে। ডলার সংকটে থাকা বাংলাদেশ সস্তায় জ্বালানি তেল আনার জন্য বিভিন্ন উৎসের খোঁজে রয়েছে। এমন সময় রাশিয়ার দুইটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রসনেফ্ট অয়েল ও তাতারাস্তান ট্রেড হাউস বাংলাদেশে মূল্য ছাড়ে গ্যাস ও জ্বালানি পণ্য সরবরাহের প্রস্তাব দেয়।

জানা গেছে, রসনেফ্ট অয়েল চলতি বছরের জুলাই মাসে ডিজেল, অকটেন, পেট্রল ও জেট ফুয়েল সরবরাহের আগ্রহ জানিয়ে বিপিসি কাছে চিঠি দেয়। ওই চিঠির পর বিপিসির আগ্রহের প্রেক্ষিতে রসনেফ্ট ডিজেল ও জেট ফুয়েলের স্যাম্পল ও স্পেসিফিকেশন জমা দেয়। ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ডিজেলের স্পেসিফিকেশন পরীক্ষা করে সালফারের উপস্থিতি ৫ হাজার পিপিএম পাওয়া যায়।

রাশিয়া থেকে ডিজেল ও জেট ফুয়েল ক্রয়ের জন্য বিপিসি ও রসনেফ্ট ১৯ আগস্ট আলোচনায় বসে। সভায় অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিজেলের স্পেসিফিকেশন না মেলায় আলোচনা তেমন এগোয়নি। রসনেফ্টকে বাংলাদেশে ব্যবহারের উপযোগী ডিজেলের নতুন স্পেসিফিকেশন দিতে বলা হয়েছে। নতুন স্পেসিফিকেশন পাওয়ার পরে আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া থেকে ডিজেল আমদানি নিয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাশিয়ার ডিজেলে যে পরিমাণ সালফারের উপস্থিতি আছে, তাকে ডার্টি (নোংরা) জ্বালানি বলা হয়। এই ডিজেল কোনো রকম পরিশোধন ছাড়াই তাঁরা আমাদের কাছে বিক্রি করতে চাচ্ছে। বিশ্বের কোথাও এখন ৫ হাজার পিপিএমের ডিজেল ব্যবহার হয় না। রাশিয়ার এই ডিজেল ব্যবহার করলে চরমভাবে বায়ুদূষণ হবে।’

ম তামিম আরও বলেন, ‘রাশিয়ার এই ডিজেল চরম পরিবেশ ক্ষতিকারক বলে কম দামে বাংলাদেশের কাছে গছাতে চাচ্ছে। এই ডিজেল যদি আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করত, তাহলে ৫৬ মার্কিন ডলারে দেওয়ার কথা না। এটা কোনোভাবেই কেনা উচিত হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত