সরকারি স্থাপনায় হামলা থানা থেকে অস্ত্র লুট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১০: ৫০
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২: ০২

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর নিশ্চিত হওয়ার পর একদিকে যেমন চলে আনন্দ উল্লাস, আরেক দিকে হামলা। দুর্বৃত্তরা গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতির বাসভবন, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে আগুন, পুলিশ সদর দপ্তর ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভবনে হামলা চালিয়েছে। এ ছাড়া দেশের ২৪ জেলায় সরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। শেরপুরে হামলা হয়েছে কারাগারে। পালিয়েছেন বন্দীরা। রাজশাহীতে ব্যাংক ও বুথ লুটের ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল দুপুরের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানায়ই হামলার ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেওয়া হয়েছে অন্তত সাতটি থানায় এবং ভাঙচুর ও হামলা চালানো হয়েছে ৪৩টিতে। এ সময় থানায় আটকে পড়া পুলিশ সদস্যরা বাঁচার জন্য আকুতি জানান।

পুলিশ সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী পুলিশ সদর দপ্তরের প্রধান ফটক ভেঙে ঢুকে পড়ে। পরে তারা ভবনটিতে ভাঙচুর চালায়। এ সময় পুলিশ কর্মকর্তারা লাইট বন্ধ করে নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান নেন।
প্রধান বিচারপতির কাকরাইল বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ মানুষ ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকে। তারা ভবন থেকে বিভিন্ন আসবাব বের করে নিয়ে যায়।

ঢাকায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙচুর করা হয়েছে একাত্তর টেলিভিশন, ডিবিসি, সময় টেলিভিশনে। এ ছাড়া হামলা হয়েছে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন, এটিএন বাংলায়। এ ছাড়া একাধিক টেলিভিশনের গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এ সময় গণমাধ্যমের ভেতরে প্রবেশ করে কম্পিউটার ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ
 মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। গতকাল বিকেলে আগুন দেওয়া হয়। 
শেরপুরে গতকাল বিকেলে জেলা কারাগারে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় জেলা কারাগারে থাকা ৫২৭ বন্দীর সবাই পালিয়েছেন। এ ছাড়া শেরপুর সদর থানা, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের ডরমিটরি, শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শ্রীবরদীতে হামলা চালিয়ে উপজেলা পরিষদ ভবন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে (ইউএনও) ভাঙচুর করা হয়েছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সদর দপ্তরে দুর্বৃত্তরা আগুন দিলে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি পুড়ে যায়। আগুন দেওয়া হয় আরএমপির মালোপাড়া ও কাটাখালী পুলিশ ফাঁড়িতে। নগর ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফায় এ ভবনে আগুন দেওয়া হয়। তখন নগর ভবনে অবশিষ্ট থাকা চেয়ার-টেবিলও লুট করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

নগর ভবনের নিচতলায় আগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখায়ও আগুন লেগে যায়। ব্যাংকেও ব্যাপক লুটপাট চলে। নগর ভবনের পশ্চিম পাশে মিডল্যান্ড ব্যাংকের এটিএম বুথ লুট করা হয়। রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ও রিসোর্টে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলা চালাতে গেলে সেনাসদস্যরা তা প্রতিহত করেন। 
এ ছাড়া সরকারের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহীর দুর্গাপুরে কিছু অতি উৎসাহী দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে গেট ও খাদ্য গোডাউনের ভাঙচুর করেন।

গতকাল বেলা সোয়া ৩টার দিকে সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকায় সিলেটের পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় পার্শ্ববর্তী বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হয়। বিকেলে হামলা ও লুটপাট করা হয় সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয় সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার, নগরের উপশহরের এসএমপি কমিশনার, উপকমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ে। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমা, মোগলাবাজার, কোতোয়ালি থানা, বন্দরবাজার, লামাবাজার ফাঁড়িতে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় হামলার চেষ্টা করা হয় সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। কারারক্ষী ও নিরাপত্তাকর্মীরা তা প্রতিহত করেছেন।

চট্টগ্রামে ১৬টি থানার মধ্যে সব কটি থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এগুলোর মধ্যে চান্দগাঁও, কোতোয়ালি থানা, পতেঙ্গা থানা, ইপিজেড থানা, হালিশহর থানা ও বন্দর থানায় অগ্নিসংযোগ করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। হামলাকারীরা থানায় ভাঙচুর ও অস্ত্র, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন আসবাব লুটের পর আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় থানার ভেতরে থাকা পুলিশের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকারি আরও কিছু স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

সরকারের পদত্যাগের খবর পেয়ে ফেনী সদরের পৌরসভা ভাঙচুর করা হয়।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, উপজেলা চৌমুহনায় ময়না চত্বর, মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন ও কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থানা ও শ্রীমঙ্গল থানায় হামলা হয়েছে।

সরকারের পদত্যাগের খবর নিশ্চিত হওয়ার পর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থানায় হামলা হয়। এ সময় ওসি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দুটি সরকারি গাড়ি ও পুলিশ সদস্যদের ১১টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া থানার কক্ষে ঢুকে কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ নানা জিনিসপত্র ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের এনএক্স ভবন কাযালয়, শাহান আরা বেগম পার্ক, বরিশাল ক্লাব, সার্কিট হাউস ও প্রেসক্লাবে ভাঙচুর ও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।

বরগুনা শহরে গতকাল বিকেল ৪টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এলাকায় অবস্থিত নৌকা জাদুঘরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। এ সময় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্স ভাঙচুর করে তারা। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। পটুয়াখালীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। বরগুনার আমতলীতে পৌরসভা কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।

খুলনায় গতকাল বেতার ভবন, জেলা পরিষদ ভবন, খুলনা প্রেসক্লাব, দৈনিক দেশ সংযোগ কার্যালয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।

কুষ্টিয়া সদরের মডেল থানায় হামলা হয় সন্ধ্যার দিকে। সেখানে লুটপাট হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ ছাড়া কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে।

সাতক্ষীরা জেলা শহরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ট্রাফিক অফিসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্যামনগর থানায় আগুন দেওয়া হয়েছে।

মেহেরপুরে ঐতিহাসিক মুজিবনগর কমপ্লেক্সে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ স্বাধীনতার ইতিহাসসংবলিত ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। 
দিনাজপুরের বিরামপুরে থানায় ভাঙচুর, প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা এবং পুলিশের ব্যবহৃত দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। 
সরকারের পদত্যাগের খবর নিশ্চিত হওয়ার পর কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদ ভবনে ভাঙচুর করা হয়।

পাবনার সাঁথিয়ায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।

কক্সবাজারে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়, সদর থানা, পাউবো, বিদ্যুৎ অফিসে হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাজার অংশে কয়েক হাজার মানুষ নেমে পড়ে। মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা চৌদ্দগ্রাম থানায় হামলা করে। এ ছাড়া নাঙ্গলকোটে রেলস্টেশন, থানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে দুর্বৃত্তরা ফরিদগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয় ভাঙচুর করে।

রাঙামাটিতে ভাঙচুর করা করা হয় রাঙামাটি জেলা পরিষদের কার্যালয়।

মানিকগঞ্জের ঘিওরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, প্রেসক্লাব, উপজেলা দলিল লেখক সমিতির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। 
ঢাকার সাভারের ধামরাই থানায় গতকাল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটেছে।

কিশোরগঞ্জে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় হামলা হয়েছে।

ফরিদপুরে কোতোয়ালি থানায় হামলা হয়েছে। এ সময় থানায় থাকা অস্ত্রও লুট করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে আসবাবপত্রে আগুন দেওয়া হয়েছে। সদরপুর থানা, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত