Ajker Patrika

জীবদ্দশায় জাতীয় পুরস্কার দিতে চায় সরকার, স্বাধীনতা পদক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৫, ১৪: ২৩
স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: আজকের পত্রিকা।
স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: আজকের পত্রিকা।

জীবদ্দশায় পুরস্কার পেলে দেশ, ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য যে আনন্দ, তা মরণোত্তর পুরস্কারে পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমরা যেন আগামীতে একটা নিয়ম করতে পারি, মরণোত্তরদের পালা শেষ করে দিয়ে জীবিত অবস্থায় যাঁরা আছেন তাঁদের পুরস্কার দিই। তাঁদের প্রতি সম্মানটা দিই।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁদের কাজ যুগ যুগ ধরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তরুণদের মধ্যে অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দেবে।

তিনি আরও বলেন, ‘তাঁরা আমাদের জাতিকে মহান উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। পুরস্কার দিয়ে শুধু তাঁদের সম্মানিত করছি না, বরং জাতি হিসেবে নিজেদের সম্মান তাঁদের মাধ্যমে পাচ্ছি। তাঁরা প্রত্যেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহুল পরিচিত। তাঁরা জাতির জন্য অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। তাঁদের কথা জীবদ্দশায় স্মরণ করতে না পারলে অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাব। যাদের এই সম্মান দিতে চাই, যথা সময়ে সেটা যেন দিই।’

এ বছর ছয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন যাঁরা—বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)। প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের ‘বাংলার সূর্যসন্তান’ বলে অভিহিত করেন।

বদরুদ্দীন উমর পুরস্কার গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করায় তাঁর জন্য পদক তৈরি করা হয়নি। তবে পদকের রেপ্লিকা জাতীয় জাদুঘরের সংরক্ষিত করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ।

বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তিনি সব সময় প্রকৃতি ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন।’ কবি আল মাহমুদের সাহিত্যকর্মের কথা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, ‘তাঁর কবিতা বহু কবি, লেখক ও পাঠককে অনুপ্রাণিত করেছে।’

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ও পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লন্ডনের ফ্ল্যাট বিক্রির টাকা দিয়ে তিনি ব্র্যাক গড়েছিলেন। প্রান্তিক গরিব মানুষের জীবনমান উন্নয়নসহ বহুমুখী কাজে ব্র্যাক এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’

পদকপ্রাপ্ত ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
পদকপ্রাপ্ত ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিতে পেরে গর্বিত উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁর সম্মাননা স্মারক আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকবে।’

বাংলা সংগীত ও ভাস্কর্য জগতে আজম খান ও নভেরা আহমেদের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘পূর্ব বাংলায় নভেরার হাতেই প্রথম ভাস্কর্যের উদ্বোধন হয়। তিনি আধুনিক ভাস্কর্যের পথিকৃৎ। আজম খান মুক্তিযুদ্ধ ও সমাজের বঞ্চিত মানুষের জন্য গানে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

বুয়েটশিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নতুন প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘যে জেন-জি প্রজন্ম, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে তাঁদের অনুপ্রেরণার নাম বুয়েটশিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। সে ন্যায়বিচারের জন্য, বাকস্বাধীনতার জন্য জোরালো প্রতিবাদ করে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছিল। তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানাতে পেরে আমরা গর্বিত।’

পদকপ্রাপ্ত ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
পদকপ্রাপ্ত ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

জামাল নজরুল ইসলামের পক্ষ থেকে তাঁর মেয়ে সাদাফ সাদ সিদ্দিকী, আল মাহমুদের মেয়ে বেগম আতিয়া মীর, ফজলে হাসান আবেদের ছেলে শামেরান আবেদ, আজম খানের মেয়ে অরণী খান এবং আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন পুরস্কার গ্রহণ করেন। নভেরা আহমেদের পুরস্কার প্যারিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

বাবার পদকপ্রাপ্তিতে আনন্দিত উল্লেখ করে আজম খানের মেয়ে অরণী খান বলেন, ‘বাবা জীবিত অবস্থায় এ সম্মাননা পেলে আমাদের আনন্দ অনেক গুণ বাড়ত। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, যেসব মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য বরেণ্য ব্যক্তি জীবিত আছেন, জীবিত অবস্থায় তাঁদের যেন যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজকের (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠান আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়ার চাইতে জীবদ্দশায় পুরস্কারটা পেলে যে আনন্দ দেশের জন্য, পরিবারের জন্য, ব্যক্তির জন্য, তা মরণোত্তর পুরস্কারে পাওয়া যায় না। যাঁকে আমরা সম্মান দেখাচ্ছি, তিনি আমাদের সঙ্গে নেই।’

পদকপ্রাপ্ত ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
পদকপ্রাপ্ত ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

তিনি আরও বলেন, ‘আজ যাঁরা স্বাধীনতা পদক পেলেন, তাঁরা জীবদ্দশায় এই সম্মান দেখতে পাননি, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তবে জাতি তাঁদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছে।’

অনুষ্ঠানে ২৫ মার্চের কালরাতের কথা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে আইনের শাসন থাকবে, মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত হবে ও একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের মানুষকে তাঁদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। দুর্নীতি, লুটপাটতন্ত্র ও গুম-খুনের রাজত্ব চালিয়ে দেশে একটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তাঁদের কারণে আমরা একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখার সুযোগ পেয়েছি। এ সুযোগ আমরা কোনোক্রমেই বৃথা যেতে দেব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত