অন্তবর্তী সরকারের সামনে প্রধান যে পাঁচ চ্যালেঞ্জ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০৯: ৪১
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১১: ২২

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শেখ হাসিনার পতনের এক দফা আন্দোলন সফল হয়েছে। কয়েক শ মানুষের প্রাণহানির পর পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। পতন হয়েছে তাঁর কর্তৃত্ববাদী সরকারের। তবে সামনের দিনগুলো বাংলাদেশের জন্য খুব একটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। 

গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সেই ঘটনায় প্রায় চার দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি এক বিশ্লেষণে বলছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রধান পাঁচটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। 

সেনাবাহিনী
শেখ হাসিনার পতন ও তাঁর দেশত্যাগের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী একটি সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা পালন করেছে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালিত হবে বেসামরিক নেতৃত্বে। তবে এই সরকারের ওপর সেনাবাহিনীর প্রভাব কতটা থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, আনুষ্ঠানিকভাবে না থাকলেও এই সরকারে সামরিক বাহিনীর বড় প্রভাব থাকবে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেকের আশঙ্কা, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ হলে সরকারে নিজেদের কর্তৃত্ব দৃঢ় করার সুযোগ পাবে সেনাবাহিনী। তবে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, সেনাবাহিনী সরকারে সক্রিয় ভূমিকা ও রাজনীতির কেন্দ্রে থাকার বিষয়ে অতটা আগ্রহী নয়, যেমনটা কয়েক দশক আগে দেখা গিয়েছিল।’ 

আইনশৃঙ্খলা
শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা আন্দোলনে চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। হামলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপরো। হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর তাঁর দলের নেতাকর্মীদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা হচ্ছে। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার খবরও পাওয়া গেছে। মানবাধিকার গোষ্ঠী ও কূটনীতিকেরা এসব হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। 

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্মৃতি সিং বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হবে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি বাক্‌স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পথ তৈরি করা। একই সঙ্গে নতুন করে যাতে আর কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।’ 

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজের মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে সরকারকে সহযোগিতা করে, তাহলে পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হয়ে আসবে। 

অর্থনীতি
নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশের বেশি। ২০২১ সালে মাথাপিছু আয়ে ভারতকেও ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ; কিন্তু এর পরও দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সবাই সমানভাবে পায়নি। 

সাম্প্রতিক অস্থিরতা দেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাতকে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। সহিংসতার সময় পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। বাংলাদেশে পোশাক কারখানা আছে সাড়ে ৩ হাজার। দেশটির বার্ষিক সাড়ে ৫ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানির মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে পোশাক রপ্তানি থেকে। 

বিশ্বের শীর্ষ খুচরা পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক অস্থিরতার মধ্যে মার্কিন প্রতিষ্ঠান হুলা গ্লোবাল জানিয়েছে, কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশের বদলে অন্য দেশে দিয়েছে তারা। 

নির্বাচন
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যে নির্বাচনের মাধ্যমে—যে নির্বাচনটি বিরোধীরা বয়কট করেছিল—শেখ হাসিনা পঞ্চম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন, সেই নির্বাচন দেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছেই অগ্রহণযোগ্য ছিল। ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক টমাস কিনের মতে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ যে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছিল, তার একটি বড় কারণ এটি। 

সংস্থাটি বলছে, গত ১৫ বছরে দেশটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কোনো নির্বাচন হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য দীর্ঘ মেয়াদে কাজ শুরু করা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটিতে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। 

এ প্রসঙ্গে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে, কবে নির্বাচন হবে এবং নির্বাচনে কারা অংশ নিতে পারবেন, সেসব সম্পর্কে এখনো কিছুই জানা যাচ্ছে না। 

ন্যায়বিচার
শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে আন্দোলন দমনে ব্যর্থ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে পুলিশপ্রধান এবং একজন শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিক্ষোভের সময় গ্রেপ্তার ছাত্র-জনতা ছাড়াও রাজনৈতিক বন্দীদেরও ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। 

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের মতে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে কাজ শুরু করবে বলে আশা করছি এবং নতুন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি হবে, যেই ব্যবস্থার ওপর আস্থা থাকবে মানুষের। একই সঙ্গে সরকার জনগণকে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।’ 

ক্রাইসিস গ্রুপের টমাস কিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার মতো দায়িত্ব নিতে হবে নতুন সরকারকে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত