Ajker Patrika

বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর সমীক্ষার শেষ কবে

  • বৈদ্যুতিক ট্রেন চালুর সমীক্ষার চুক্তি সই ২০২৩ সালের ১৫ জুন।
  • সমীক্ষার কাজ করছে তুরস্কের প্রতিষ্ঠান তুমাস তুর্কি ইঞ্জিনিয়ারিং।
  • দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও প্রকল্প শেষ হয়নি। তৃতীয় দফা মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব।
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৫৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশে বৈদ্যুতিক ট্রেন চালানো যায় কি না, তার জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর অংশ হিসেবে শুরুতে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এবং টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর অংশে সমীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের শেষ সময়ে এসে আরও দুটি সেকশনে ১৭ দশমিক ৪ কিলোমিটার রুট সমীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। এতে তৃতীয় দফায় বাড়বে প্রকল্পের মেয়াদ।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথের দৈর্ঘ্য ৩৩৬ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার। আর টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেলপথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ২৭ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে ৩৪৮ কিমি রেলপথ ইলেকট্রিক ট্র‍্যাকশনের আওতায় আনতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে। এখন এই অংশের সঙ্গে চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত এবং পুবাইল থেকে ধীরাশ্রম পর্যন্ত অংশে বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন ওভারহেড ক্যাটেনারি ও সাবস্টেশন যুক্ত করা হয়েছে। এই দুই সেকশনে প্রায় ১৭ দশমিক ৪ কিলোমিটার রেলপথ নতুন করে সমীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। এতে সমীক্ষা প্রকল্পের আওতায় সব মিলিয়ে রেলপথের দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ৩৬৫ দশমিক ৪ কিলোমিটার।

প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা সূত্রে জানা গেছে, ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও ডিটেইলস ডিজাইন প্রকল্পের চুক্তি শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ১ নভেম্বর। কিন্তু সময়মতো তা করতে পারেনি রেলওয়ে। ওই সময়ে এ কাজে খরচ ধরা হয়েছিল ৮ কোটি টাকা। পরবর্তীকালে ২০২৩ সালের ১৫ জুন সমীক্ষার চুক্তি সই হয়। সমীক্ষা প্রকল্পের কাজ করছে তুরস্কের প্রতিষ্ঠান তুমাস তুর্কি ইঞ্জিনিয়ারিং। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা প্রায় ১৫ কোটি টাকা, আর মেয়াদ ধরা হয় ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। পরে প্রকল্পের মেয়াদ এক দফা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত করা হয়। এরপর প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় নতুন করে দুটি সেকশন যুক্ত করায় এবং প্রকল্পের কাজ বাকি থাকায় মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। এই সময়ের মধ্যেও সম্ভাব্যতা সমীক্ষার শেষ না হওয়ার আশঙ্কা থাকায় গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও চার মাস বাড়িয়ে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

এদিকে প্রকল্পের কার্যপরিধি বৃদ্ধির ফলে পরামর্শক সেবার ব্যয়ও বেড়েছে। আগে প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। এখন এটি বেড়ে হবে ১৬ কোটি ৮ লাখ টাকা।

বারবার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আমরা একটা প্রস্তাব করেছি, সেটা এখনো অনুমোদন হয়নি। আরও চার মাস ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছি। মেয়াদ বাড়ানোর পেছনে কিছু কারণ আছে। নতুন করে দুটি অংশে আরও ১৭ কিলোমিটার ফিজিবিলিটির আওতা বাড়ানো হয়েছে। সেখানে কাজ বাকি আছে। এজন্যই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।’

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৈদ্যুতিক রেললাইনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ বেশির ভাগ কোনো রকেট সায়েন্স না। এটার জন্য রেলেলাইনের দুই পাশে পর্যাপ্ত জায়গা আছে কি না—সেটা সার্ভে করতে হয়, যেটা খুব কঠিন কিছু না। সেখানে ট্রাফিকের কোনো চাপ নেই। ফলে বারবার সময় বাড়ানোয় প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নষ্ট করে এবং জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। আমাদের আশপাশের দেশ সবাই মোটামুটি বৈদ্যুতিক রেললাইনে চলে গেছে। সেখানে আমরা অনেক পিছিয়ে। একটা ফিজিবিলিটি স্টাডি করতেই যদি বারবার সময় বাড়াতে হয়, তখন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার ক্যাপাসিটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত