ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুর ভরণপোষণ কে দেবে?

সুলতান মাহমুদ
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২৩, ২৩: ০৫
আপডেট : ৩০ জুন ২০২৩, ২৩: ৩১

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় ধর্ষণের শিকার ১৩ বছরের এক কিশোরী পুত্রসন্তানের জন্ম দেয়। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তি শিশুটির পিতৃত্ব অস্বীকার করলে ২০১৬ সালের ১৫ মে তাঁর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করে ওই কিশোরী। 

আদালত জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। তবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন ওসি। কিন্তু প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন মামলার ওই কিশোরী। তখন আদালত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। 

পরে শিশুটির মায়ের বিশেষ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনএ পরীক্ষা করলে প্রমাণিত হয়, শিশুটির বাবা মামলার আসামি। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক ফেরদৌস আরা এই ধর্ষণ মামলার রায় দেন। রায়ে আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। 

আদালত রায়ে আরও বলেন, ওই শিশুর সব ব্যয়ভার রাষ্ট্র বহন করবে। আসামির সম্পত্তি থেকে ব্যয়ভার বহন করা হবে। এ জন্য সরকার আসামির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সে ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া আসামি শিশুটির বাবা হিসেবে সমাজে পরিচিত হবে। 

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ১৩(১) ধারামতে, ধর্ষণের কারণে কোনো শিশুর জন্ম হলে—
 (ক) শিশুটিকে তার মা বা মায়ের স্বজনের তত্ত্বাবধানে রাখা যাবে। 
 (খ) শিশুটি তার বাবা বা মা, কিংবা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার অধিকারী হবে। 
 (গ) শিশুর ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে। 
 (ঘ) শিশুর ভরণপোষণের ব্যয় তার বয়স ২১ বছর না হওয়া পর্যন্ত দেওয়া হবে। তবে ২১ বছরের বেশি বয়স্ক কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে তার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত এবং পঙ্গু সন্তানের ক্ষেত্রে নিজের ভরণপোষণের সক্ষমতা অর্জন না করা পর্যন্ত পাবে। 
 
(২) বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ওই সন্তানের ভরণপোষণ বাবদ প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করবে সরকার।

(৩) এই ধারার অধীন কোনো সন্তানকে ভরণপোষণের জন্য প্রদেয় অর্থ সরকার ধর্ষণকারীর কাছ থেকে আদায় করতে পারবে। ধর্ষণকারীর বিদ্যমান সম্পদ থেকে ওই অর্থ আদায় করা সম্ভব না হলে, ভবিষ্যতে তিনি যে সম্পদের (উত্তরাধিকার সূত্রে বা অন্য কোনোভাবে প্রাপ্ত সম্পদ) মালিক হবেন সেই সম্পদ থেকে আদায় করা যাবে। 

অর্থদণ্ড বা ক্ষতিপূরণ আদায়ের পদ্ধতি
 ১৬ ধারামতে, এই আইনের অধীনে কোনো অর্থদণ্ড দেওয়া হলে, ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট জেলার কালেক্টরকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বা বিধি না থাকলে, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে অপরাধীর স্থাবর বা অস্থাবর বা উভয় সম্পত্তির তালিকা প্রস্তুত করবেন। এরপর জব্দ ও নিলামে বিক্রি বা জব্দ ছাড়াই সরাসরি নিলামে বিক্রি করবেন। বিক্রির ফলে পাওয়া অর্থ ট্রাইব্যুনালে জমা করার নির্দেশ দিতে পারবেন আদালত। ট্রাইব্যুনাল ওই অর্থ অপরাধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। 

বিধি প্রণয়নে হাইকোর্টের রুল
ধর্ষণে জন্ম নেওয়া শিশুর ভরণপোষণ দিতে সংশ্লিষ্ট আইনে বিধিমালা প্রণয়নে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর অধীনে বিধিমালা প্রণয়নের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা চার সপ্তাহের মধ্যে ব্যাখ্যা করতে আদালত ২০২২ সালের ১৬ মার্চ সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। রুলে কুড়িগ্রামে ধর্ষণে জন্ম নেওয়া এক শিশুর ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তার কারণ দর্শানোর নির্দেশও দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীর পক্ষে দুই আইনজীবীর রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন আদালত। 

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই রিটের চূড়ান্ত শুনানি এখনো হয়নি। চূড়ান্ত শুনানির জন্য আমরা চেষ্টা করব। হাইকোর্টে রিটের শুনানি দুভাবে হয়; এক. প্রাথমিক শুনানি, দুই. চূড়ান্ত শুনানি। প্রাথমিক শুনানিতে যদি আদালত মনে করেন যে মামলায় মেরিট আছে তখন অপর পক্ষকে রুল দেন। অপর পক্ষ হচ্ছে সরকার। যদি সরকার রুলের জবাব দেয় তো ভালো। যদি জবাব না দেয় তাহলে আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বা সরকার পক্ষে যারা থাকেন তাঁদের উপস্থিতিতে একটি চূড়ান্ত শুনানি হবে। আমরা চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় আছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত