কারিগরি ত্রুটির কারণে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৩, ১২: ৫৫
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৩, ১৪: ৪২

কয়লার সংকট কাটতে না কাটতেই এবার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে কারিগরি ত্রুটির কারণে। বাণিজ্যিক উৎপাদনে আশা এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে ইলেকট্রিক্যাল জেনারেটর ইউনিট প্রোটেকশনে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় গত ৩০ জুন রাত ৮টা ৪৬ মিনিট থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন গত চার দিন ধরে বন্ধ আছে। এই কারিগরি ত্রুটি সারিয়ে পুনরায় উৎপাদনে আসতে কমপক্ষে আরও তিন থেকে চার দিন সময় লাগবে বলে জানা গেছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন কর্মকর্তার সূত্রে। পিডিবি বলছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হলেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সমস্যা হবে না।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরামুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত ৩০ জুন রাতে প্রথম ইউনিটের ইলেকট্রিক্যাল জেনারেটর ইউনিট প্রোটেকশনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ত্রুটি সারানোর কাজ করা হচ্ছে। আগামী পাঁচ অথবা ছয় তারিখের দিকে প্রথম ইউনিট থেকে আবারও উৎপাদন শুরু করা হবে।

কারিগরি ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ আছে জানিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার আজকের পত্রিকা বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হতে পারে এ মাসের ৫-৬ তারিখের দিকে।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন এমন সময় বন্ধ হলো, যখন কোরবানির ছুটি শেষে অফিস-আদালত শিল্প কলকারখানা আবারও সচল হতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদাও।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে গত দেড় মাসে গড়ে সাড়ে ৩০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছিল, যা দেশে চলমান লোডশেডিং ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিল।

ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত ২ ইউনিট-বিশিষ্ট ১৩২০ মেগাওয়াটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বর। এরপর থেকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বিভিন্ন সময়ে কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া কয়লার সংকট তো ছিলই। সর্বশেষ গত ৩০ জুন রাতে কারিগরি ত্রুটিতে পড়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিট এখনো বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসেনি। জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বরের দিকে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হতে পারে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম আজকের পত্রিকাকে বলেছিলেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়নি, যেটা করা হয়েছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে। সে জন্য আমরা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঘন ঘন কারিগরি ত্রুটি দেখতে পাচ্ছি।’

এর আগে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বয়লার টিউব ফেটে যাওয়া কুলিং হিটারে ছিদ্রসহ অন্যান্য কারিগরি ত্রুটির কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বেশ কয়েকবার বন্ধ হয়েছিল।

রামপালের উৎপাদন বন্ধ হওয়ার কারণে লোডশেডিং বাড়বে কি না, জানতে চাইলে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার বলেন, ‘রামপাল থেকে আমরা যে বিদ্যুৎ পাচ্ছি, সেটা বন্ধ হওয়ার পরও বর্তমানে দেশে যে বিদ্যুতের চাহিদা আছে তা পূরণ করতে কোনো সমস্যা হবে না।’

এস এম ওয়াজেদ আলী সরদার বলেন, ‘শিল্প কলকারখানা ও অফিস-আদালত পুরোপুরি সচল না হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা আগের তুলনায় প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট কম। আমাদের এখন পিক আওয়ারে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট। ঈদের আগেও যেটা ছিল প্রায় সাড়ে ১২ হাজারের বেশি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত