রমজানে সুলভ মূল্যে সরকারের মাছ বিক্রি, এখনো পুরো টাকা পাননি চাষিরা

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩: ০০
Thumbnail image

রমজানে রাজধানীবাসীর কাছে সুলভ মূল্যে মাছ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল মৎস্য অধিদপ্তর। সেই মাছ সরবরাহ করেছে চাষিদের সংগঠন ফিশ ফার্ম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ফোয়াব)। সংগঠনটির নেতারা অভিযোগ করছেন, সাড়ে পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও তাঁরা মাছ বিক্রির সব টাকা বুঝে পাননি। বকেয়া পরিশোধ নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর গড়িমসি করছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রমজানে রাজধানীতে ৩০টি স্থানে ২৮ রমজান পর্যন্ত মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম সুলভমূল্যে সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ১০ মার্চ খামারবাড়ির প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চত্বরে বেশ ঘটা করে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে টানা ১৫ দিন রুই ১৪০ টাকা, পাঙাশ ১৩০, তেলাপিয়া ১৩০, পাবদা ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় ঢাকা মহানগরের আটটি স্থানে। স্থানগুলো হলো—ফার্মগেট (খামারবাড়ি মোড়), মিরপুর–১, সেগুনবাগিচা বাজার, মেরুল বাড্ডা বাজার, মুগদাপাড়া, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল ও পলাশী মোড়। 

ফোয়াবের তথ্য অনুসারে, দেশের বিভিন্ন এলাকার চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে এই মাছ তুলনামূলক কম দামে সরবরাহ করেছিল ফোয়াব। ১০ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৭ হাজার ২৪০ কেজি রুই, ৭ হাজার ৫৪৩ কেজি পাঙাশ, ১১ হাজার ৫৩১ কেজি তেলাপিয়া ও ১ হাজার ৪৪৫ কেজি পাবদা মাছ বিক্রি হয়েছিল। সরবরাহ করা মাছের টাকা কিছু পেলেও এখনো ২১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা মৎস্য অধিদপ্তর দেয়নি। 

ফোয়াব থেকে মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতেও এসব তথ্য রয়েছে। সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বদলের পর বকেয়া টাকা চাষিরা আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। 

ঢাকায় সুলভ মূল্যে বিক্রি হওয়া মাছের বড় অংশ এসেছে খুলনা, বাগেরহাট, ময়মনসিংহ ও নাটোর থেকে। খুলনার মাছ চাষি মনিরুজ্জামান রমজানে ফোয়াবের মাধ্যমে ঢাকায় মাছ সরবরাহ করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিজের চাষের ও অন্য চাষিদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করে পাঠিয়েছিলাম। সেই মাছের আড়াই লাখ টাকা এখনো হাতে পাইনি।’ 

মাছ চাষিদের সংগঠন ফোয়াব ভর্তুকি মূল্যে মাছ সরবরাহের পাশাপাশি গাড়ি, বরফসহ আনুষঙ্গিক মালামালও সরবরাহ করে। ফোয়াবের সভাপতি মোল্লা সামছুর রহমান শাহীন বলেন, ‘মৎস্য অধিদপ্তরের আহ্বানে রমজান মাসে প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করেছি। রমজান মাসের মধ্যেই টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু কর্মকর্তারা সেই কথা রাখেননি। ফলে প্রান্তিক অনেক চাষি মাছ বিক্রির পুরো টাকাটা এখনো পাননি।’ 

তিনি অভিযোগ করেন, মৎস্য অধিদপ্তর মোট মাছের ওজন ৯০০ কেজি কমিয়ে ধরেছে। এ ছাড়া মাছ বিক্রির সময় ঢাকা উত্তর মৎস্যজীবী লীগকে তখন ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়েছিল। 

রাজধানীতে আটটি স্থানে মাছ বিক্রি করে সরকার। ছবি: সংগৃহীতসাশ্রয়ী মূল্যে মাছ বিক্রয়ের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের গঠিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের তৎকালীন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবদুর রউফ। বর্তমানে তিনি অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। আবদুর রউফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিক্রি ব্যবস্থাপনার তদারকির দায়িত্ব ছিল আমার। টাকা–পয়সা লেনদেনের বিষয়টা আগের ডিজি স্যার দেখতেন। তবে পুরো টাকা পরিশোধ হয়নি, কিছু বকেয়া থাকতে পারে।’ 

তখন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন সৈয়দ মো. আলমগীর। অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক মো. জিল্লুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁদের সঙ্গে লেনদেন কিছু থাকলে তা পরিশোধ হয়েছে বলে জানি। আদৌ পাওনা আছে কিনা আমার জানা নেই। তাঁদের (ফোয়াব) কোনো বক্তব্য থাকলে মৎস্য অধিদপ্তরে এসে কথা বলতে পারেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত