দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন

ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯: ২৬
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯: ৫৩
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি আজ সোমবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আগস্টে বাংলাদেশের নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর এটাই প্রথম কোনো শীর্ষ ভারতীয় কর্মকর্তার ঢাকা সফর।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বিক্রম মিশ্রি ফরেন অফিস কনসালটেশনসের জন্য বাংলাদেশ সফরে যাবেন এবং তিনি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর আগে, তৌহিদ হোসেন সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

আজ সোমবার এক দিনের সফরে বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশে আসবেন এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মুহাম্মদ জসীম উদ্দিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয়, বাণিজ্য এবং অন্যান্য সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করবেন। তিনি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশের ভারতীয় প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবেন।

আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি তদন্ত এবং এ-সম্পর্কিত ট্যারিফ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভারতীয় কোম্পানি এয়ারটেলের সঙ্গে করা একটি বেসরকারি চুক্তি বাতিলের দিকে এগোচ্ছে। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে বিক্রম মিশ্রির এই সফরকে ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপ’ হিসেবে উল্লেখ করে জানিয়েছিল, সরকার এই বৈঠকের জন্য ‘অপেক্ষায় রয়েছে।’ উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই আলোচনা নিয়মিত বৈঠকের অংশ, যেখানে দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগি, গঙ্গা ব্যারেজ নিয়ে আলোচনা, ভূমি কর্মকর্তাদের বৈঠক এবং পেট্রাপোল স্থলবন্দরে নতুন একটি স্থাপনা খোলার মতো বিষয়গুলো ওঠে আসতে পারে। এসব বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দ্য হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করা হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি হবে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পর্যায়ে প্রথম সফর, যা ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও তিক্ততার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হবে।’

তবে আলোচনার যেসব এজেন্ডা আনুষ্ঠানিকভাবে ঠিক করা হয়েছে সেগুলো ছাপিয়ে সাম্প্রতিক সমস্যাগুলো প্রাধান্য পেতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গত রোববার বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ‘গুণগত পরিবর্তনের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘যদি আমরা সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই, তাহলে প্রথমে সমস্যা স্বীকার করতে হবে।’ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) পুনর্জাগরণবিষয়ক একটি সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতকেও প্রভাবিত করছে। কলকাতার ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’ তিনি মূলত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, চলাচল, ভিসা এবং যোগাযোগ কার্যক্রমে গত চার মাসে ধীরগতির বিষয়ে ইঙ্গিত করেই এ কথা বলেন।

যদিও গত মাসে দেওয়া এক বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় বর্মা বলেছেন, উভয় পক্ষ বাণিজ্যে ‘ইতিবাচক গতিশীলতা বজায় রেখেছে’, তবে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা উভয় পক্ষের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, গতকাল রোববার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের তিনটি যুব সংগঠন ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দিকে পদযাত্রা করে প্রতিবাদ জানায়। ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে একদল জনতার হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের পতাকা ছেঁড়া নিয়ে এই প্রতিবাদ হয়।

এদিকে, আজকের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের আলোচনায় বাংলাদেশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতকে অনুরোধ করতে পারে। হাসিনা তাঁর শাসনামলে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের বিরুদ্ধে পুলিশি দমন এবং দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলার মুখোমুখি। তবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে তাঁর প্রত্যর্পণের আবেদন করেনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত