বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। সময় বিকেল প্রায় সাড়ে ৪টা। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। আজ সেই বিজয়ের গৌরবময় দিন।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে পাওয়া নতুন দেশে সব বৈষম্যের বিলোপ চেয়েছিল মানুষ। কিন্তু হয়েছে বিপরীত। ১৯৭১ থেকে ২০২৪—অর্থনীতি বড় হয়েছে, সঙ্গে বেড়েছে বৈষম্যও। রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে ৫৩ বছর ধরে চলে আসা বৈষম্য ও বঞ্চনা থেকে মানুষকে মুক্ত করতে আবার একটি অভ্যুত্থান ঘটে দেশে, ছাত্র-জনতা যার নাম দিয়েছে ‘জুলাই বিপ্লব’। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। তারুণ্যের বিজয়গাথা লেখার এই সময়ে আজ দেশবাসী উদ্যাপন করবে বিজয়ের ৫৩তম বার্ষিকী। বিজয়ের এই আনন্দের দিনে জাতি পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর সন্তানদের। শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
শহীদদের স্মরণ আর বিজয়ের আনন্দ উদ্যাপনে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। উৎসবের আবহে লাল-সবুজের বর্ণিল সাজে সেজেছে দেশ। বিজয় দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনা, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের করুণ ইতিহাস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম ও কৃষিবিপ্লবের শুরু হয়। কিন্তু বিজয়ের পাঁচ দশক পার হলেও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো অর্জিত হয়নি। বারবার আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথচলা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি কখনোই থেমে যায়নি।’ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতার স্বাদ এবং জাতি হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি। লাখ লাখ শহীদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়ে যাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করছে। আমাদের দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট, ১০ টাকা মূল্যমানের উদ্বোধনী খাম ও পাঁচ টাকা মূল্যমানের একটি ডেটাকার্ড অবমুক্ত করেছেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনাকেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। ঢাকা থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সড়কে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
‘অনুভূতি বদল হয়নি’
বদলে যাওয়া সময়ে এবারের বিজয় দিবস উদ্যাপিত হলেও যে উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিজয়ের অনুভূতির বদল হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মূল কথাটা হচ্ছে মানুষে মানুষে অধিকার এবং সুযোগের সাম্য। সেই স্বপ্ন নিয়েই আমরা দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছি। স্বাধীনতা এসেছে দুবার; কিন্তু সাতচল্লিশের স্বাধীনতা তো স্বাধীনতা নয় বলেই বুঝেছি। সে জন্য আমাদের সংগ্রাম ছিল মুক্তির জন্য। মুক্তির মানেই হচ্ছে একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা; আমরা ওই দিকে এগোতে পারিনি। শাসনকর্তা বদল হয়েছে, এ এসেছে, ওই দল গেছে, সামরিক-বেসামরিক, নির্বাচিত-অনির্বাচিত নানান ধরনের শাসক ৫৩ বছরে আসা-যাওয়া করেছে; কিন্তু উন্নতির ধারা ছিল একই, সেটি ছিল পুঁজিবাদীর ধারা। পাকিস্তানেও ওই ধারা চলছিল। এই উন্নতির ফল সকলে পায়নি। শতকরা ২০ জন লাভবান হয়েছেন, ৮০ জন বঞ্চিত হয়েছেন। ওই ৮০ জনই কিন্তু একাত্তরে জনযুদ্ধে বেশি অংশ নিয়েছেন। তাঁদের স্বপ্ন তো সফল হলো না।’
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের মতো এ দেশের শাসকেরাও লুটপাট করে সম্পদ পাচার করেছেন। এই সম্পদ সৃষ্টি করেছেন মেহনতি মানুষ। ফলে দারিদ্র্য ঘোচেনি। পুঁজিবাদী উন্নয়নের যে ফল, তাতে বৈষম্য ও বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পায়। তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতিটা ভিন্ন কিন্তু ধারাবাহিকতা একই। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, সেই চেতনা বাস্তবায়িত হয়নি, স্বপ্ন অর্জিত হয়নি। রাজনৈতিক পরিবর্তনটা হলো, রাষ্ট্র ভাঙল-গড়ল; কিন্তু সমাজে কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়নি। মানুষে মানুষে সম্পর্কটা বদল হয়নি, এটিই হচ্ছে দুঃখের বিষয়।’
কর্মসূচি
মহান বিজয় দিবসের প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনৈতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাবেন।
বিজয় দিবসে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে।
আজ বিকেলে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারগুলোকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। সিনেমা হলে বিনা মূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখানো হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী বিজয়মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। সময় বিকেল প্রায় সাড়ে ৪টা। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। আজ সেই বিজয়ের গৌরবময় দিন।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে পাওয়া নতুন দেশে সব বৈষম্যের বিলোপ চেয়েছিল মানুষ। কিন্তু হয়েছে বিপরীত। ১৯৭১ থেকে ২০২৪—অর্থনীতি বড় হয়েছে, সঙ্গে বেড়েছে বৈষম্যও। রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে ৫৩ বছর ধরে চলে আসা বৈষম্য ও বঞ্চনা থেকে মানুষকে মুক্ত করতে আবার একটি অভ্যুত্থান ঘটে দেশে, ছাত্র-জনতা যার নাম দিয়েছে ‘জুলাই বিপ্লব’। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। তারুণ্যের বিজয়গাথা লেখার এই সময়ে আজ দেশবাসী উদ্যাপন করবে বিজয়ের ৫৩তম বার্ষিকী। বিজয়ের এই আনন্দের দিনে জাতি পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর সন্তানদের। শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
শহীদদের স্মরণ আর বিজয়ের আনন্দ উদ্যাপনে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। উৎসবের আবহে লাল-সবুজের বর্ণিল সাজে সেজেছে দেশ। বিজয় দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ অর্জনের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনা, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের করুণ ইতিহাস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম ও কৃষিবিপ্লবের শুরু হয়। কিন্তু বিজয়ের পাঁচ দশক পার হলেও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো অর্জিত হয়নি। বারবার আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক মুক্তির পথচলা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি কখনোই থেমে যায়নি।’ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতার স্বাদ এবং জাতি হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি। লাখ লাখ শহীদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়ে যাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করছে। আমাদের দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট, ১০ টাকা মূল্যমানের উদ্বোধনী খাম ও পাঁচ টাকা মূল্যমানের একটি ডেটাকার্ড অবমুক্ত করেছেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনাকেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। ঢাকা থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সড়কে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদাপোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
‘অনুভূতি বদল হয়নি’
বদলে যাওয়া সময়ে এবারের বিজয় দিবস উদ্যাপিত হলেও যে উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিজয়ের অনুভূতির বদল হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মূল কথাটা হচ্ছে মানুষে মানুষে অধিকার এবং সুযোগের সাম্য। সেই স্বপ্ন নিয়েই আমরা দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছি। স্বাধীনতা এসেছে দুবার; কিন্তু সাতচল্লিশের স্বাধীনতা তো স্বাধীনতা নয় বলেই বুঝেছি। সে জন্য আমাদের সংগ্রাম ছিল মুক্তির জন্য। মুক্তির মানেই হচ্ছে একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা; আমরা ওই দিকে এগোতে পারিনি। শাসনকর্তা বদল হয়েছে, এ এসেছে, ওই দল গেছে, সামরিক-বেসামরিক, নির্বাচিত-অনির্বাচিত নানান ধরনের শাসক ৫৩ বছরে আসা-যাওয়া করেছে; কিন্তু উন্নতির ধারা ছিল একই, সেটি ছিল পুঁজিবাদীর ধারা। পাকিস্তানেও ওই ধারা চলছিল। এই উন্নতির ফল সকলে পায়নি। শতকরা ২০ জন লাভবান হয়েছেন, ৮০ জন বঞ্চিত হয়েছেন। ওই ৮০ জনই কিন্তু একাত্তরে জনযুদ্ধে বেশি অংশ নিয়েছেন। তাঁদের স্বপ্ন তো সফল হলো না।’
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের মতো এ দেশের শাসকেরাও লুটপাট করে সম্পদ পাচার করেছেন। এই সম্পদ সৃষ্টি করেছেন মেহনতি মানুষ। ফলে দারিদ্র্য ঘোচেনি। পুঁজিবাদী উন্নয়নের যে ফল, তাতে বৈষম্য ও বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পায়। তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতিটা ভিন্ন কিন্তু ধারাবাহিকতা একই। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, সেই চেতনা বাস্তবায়িত হয়নি, স্বপ্ন অর্জিত হয়নি। রাজনৈতিক পরিবর্তনটা হলো, রাষ্ট্র ভাঙল-গড়ল; কিন্তু সমাজে কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়নি। মানুষে মানুষে সম্পর্কটা বদল হয়নি, এটিই হচ্ছে দুঃখের বিষয়।’
কর্মসূচি
মহান বিজয় দিবসের প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনৈতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাবেন।
বিজয় দিবসে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে।
আজ বিকেলে বঙ্গভবনে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারগুলোকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। সিনেমা হলে বিনা মূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখানো হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী বিজয়মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
৫ ঘণ্টা আগেবিভিন্ন দেশে বসবাস করা দেড় কোটি বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। অনলাইন ভোটিং পদ্ধতির মাধ্যমে এটি করা সম্ভব বলে তাঁরা কারিগরি একটি ব্যবস্থাও তুলে ধরেন।
৫ ঘণ্টা আগেক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার অনেককে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশন। হত্যার পর লাশ ডুবিয়ে দিতে সিমেন্টের ব্যাগের সঙ্গে বেঁধে তিনটি সেতু থেকে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়া হতো।
৫ ঘণ্টা আগেআজ আমাদের বিজয় দিবস। তিপ্পান্ন বছর আগে ৯ মাসের একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয়ের সূর্যকে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম। পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন দেশ—বাংলাদেশ। বিজয় দিবস তাই বাংলাদেশের জন্য আনন্দের, উৎসবের।
৫ ঘণ্টা আগে