Ajker Patrika

জাতীয় জনসংখ্যা দিবস ২০২৫: ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের পথে চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

মো. সাজ্জাদুল ইসলাম
Thumbnail image
মো. সাজ্জাদুল ইসলাম

বাংলাদেশের জাতীয় জনসংখ্যা দিবস প্রতিবছর ২ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। এই দিবসটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব, পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্যসেবা এবং টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পালন করা হয়। ২০২৫ সালে এই দিবসটি আমাদের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলো বর্তমানে আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।

প্রতিটি দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে তার জনসংখ্যার একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনসংখ্যাকে দেশের সম্পদে পরিণত করা যায়, অন্যদিকে অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সংকট সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ, বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ হিসেবে, এই বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।

জাতীয় জনসংখ্যা দিবস প্রতিবছর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জনসংখ্যা শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং এটি দেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ উভয়কেই প্রতিনিধিত্ব করে। এই দিবসটির মূল লক্ষ্য হলো জনসংখ্যা-সংক্রান্ত সমস্যা ও এর সমাধানের উপায় সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ২০২৫ সালে এই দিবসটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশ এমন একসময়ে প্রবেশ করছে, যখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য আমাদের জনসংখ্যাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন।

বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি ছাড়িয়ে গেছে এবং এটি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে এটি ভবিষ্যতে বাসস্থান সংকট, খাদ্যনিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। তাই, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কেবল একটি সামাজিক বা অর্থনৈতিক ইস্যু নয়, বরং এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান, কর্মসংস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। নগরায়ণের দ্রুত বৃদ্ধি এবং ভূমির অপ্রতুলতা পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে।

পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম বাংলাদেশে স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই শুরু হয়। প্রথমে বেসরকারি পর্যায়ে এই কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীকালে তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে এই কার্যক্রমে বেশ সফলতা আসে। তবে সাম্প্রতিককালে এই কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারে সচেতনতা নেই বললেই চলে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষিত-সচেতন দম্পতিও অধিক সন্তান নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখা অপরিহার্য। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, দারিদ্র্য বিমোচন, মানসম্পন্ন শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, সুস্থ জীবনযাপন ইত্যাদি লক্ষ্য অর্জনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য গণমাধ্যম, সামাজিক মাধ্যম এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে, যাতে তাঁরা পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হন। গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন পরিবার পরিকল্পনা সেবা সহজে পেতে পারেন। তরুণ প্রজন্মকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ, তারাই ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। সরকারকে একটি সুস্পষ্ট জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করতে হবে এবং তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

জাতীয় জনসংখ্যা দিবস ২০২৫ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ একটি জাতির টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে আমরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি সমৃদ্ধ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

লেখক: পাবলিক রিলেশন অফিসার, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

নারী সহকর্মীর সঙ্গে রাতযাপন: হাইটেক পার্কের ডিডি আতিক বরখাস্ত

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত