হায় পাসপোর্ট অফিস, হায় ব্যাকরণ ক্লাস!

ফজলুল কবির
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২২, ১৪: ২৭
Thumbnail image

কেরানীগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের গেটে থাকা নিরাপত্তারক্ষী জানালেন, ফরম জমা দিতে হবে দোতলায়। সঙ্গে কক্ষ নম্বরও জানালেন। কিন্তু দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখেই দুজনের ডাকে থমকে যেতে হলো। বললেন, ‘ভাই এটাই লাইন।’ অগত্যা তাঁদের পেছনে দাঁড়াতে হলো। যদিও মনে কেমন ‘কিন্তু কিন্তু’ করছিল। দেখতে দেখতে লাইনের শেষ ব্যক্তির পরিচয়ও ঘুচে গেল। পেছনে ততক্ষণে পাঁচ-সাতজন দাঁড়িয়ে গেছেন। নারী-পুরুষ সবাই এক লাইনে। তখনো জানি না, এমন লাইন আরও কপালে আছে। আর লাইনের শেষে অপেক্ষা করছে ‘ব্যাকরণ ক্লাস’।

মনে ঘাঁটি গাড়া ওই ‘কিন্তু কিন্তু’র কাছে হার মানতে হলো শেষে। সামনে ও পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজনকে জায়গাটা দেখার কথা বলে সিঁড়ি ধরে প্রথমবারের মতো দোতলায় গিয়ে এক হুজ্জতের দেখা মিলল। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত কিছু লোক পুরো দেশ-জাতি উদ্ধারে ব্যস্ত। তাঁরা আর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে আগ্রহী নন। জটলা পাকিয়ে ‘নষ্ট হয়ে যাওয়া ব্যবস্থার’ গোষ্ঠী উদ্ধার করছেন। এর মধ্যেই সবাইকে লাইনে দাঁড়াতে বেশ চোটপাট করতে দেখা গেল একজন আনসার সদস্যকে। বেলা তখন ১২টা ৫০। লাইনে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে উত্তেজনা। কারণ, কিছুক্ষণের মধ্যেই মধ্যাহ্নভোজের বিরতি শুরু হবে। আশঙ্কা সত্যি হলো। বিরতি শুরু হলো, কিন্তু শেষ হলো না। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত লাইনে ‘নো নড়ন-চড়ন’।

এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই অনেকে দুশ্চিন্তায় জেরবার হয়ে গেল। কারণ, প্রত্যেকেরই আবেদন ফরমে একটা নির্দিষ্ট সময়ের উল্লেখ আছে, যা অনেক আগেই অতিক্রান্ত। আর যাঁদের সময় হয়েছে, তাঁরা পড়েছেন অনেক পেছনে। এক কথায় মোটা দাগে সবাই হতবিহ্বল। এর মধ্য আরেকটি অংশ পাওয়া গেল, যাঁরা টানা কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়ে বেশ অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। নিজ দায়িত্বে তাঁরা বাকিদের এখানকার নিয়ম-রীতি বিষয়ে নসিহত করছেন।

আড়াইটায় লাইন সচল হওয়ার পর অবশ্য বেশ অল্প সময়েই ভেতরে ডাক পড়ল। সেখানে একজন কর্মকর্তা ফরম দেখছেন। প্রতি দফায় দুজন করে ভেতরে ডাক পাচ্ছেন। একজন দাঁড়িয়ে থাকছেন, অন্যজনের কাগজপত্র দেখে দিচ্ছেন ওই কর্মকর্তা। অনেকটা হেডমাস্টারের রুমে ছাত্র-ছাত্রীরা যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, সেভাবে। বেশ লাগল। ডাক পড়তেই এগিয়ে দিলাম ফরমসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র। সেগুলো দেখে ওই কর্মকর্তা জানালেন, এনআইডি ও আগের পাসপোর্টে মায়ের নাম আলাদা আছে। ঠিক করতে হবে। আরেকটি কক্ষ থেকে এ সম্পর্কিত ফরম নিয়ে তা পূরণ করে জমা দিতে বললেন। দ্রুত ছুটতে হলো। কিন্তু সহজ ছিল না। কারণ, ওই রুম থেকে বেরোতেই দু-তিনজন ছেঁকে ধরলেন। তাঁদের সরাসরি প্রস্তাব—এত টাকার বিনিময়ে সব ঠিক করে দেওয়া হবে। সঙ্গে অভয়—ভাববেন না। যদিও সভয়ে তখন মনে পড়ল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সম্প্রতি প্রকাশিত খানা জরিপে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাতের তালিকার শীর্ষ তিনে পাসপোর্ট দপ্তরের অবস্থানের কথা।

সেসব ডিঙিয়ে অন্য কক্ষ থেকে সংশোধনীর আবেদন ফরম নেওয়ার সময় তাঁর কাছ থেকেই জেনে নিলাম, মায়ের নামের প্রমাণপত্র হিসেবে কী কী জমা দিতে হবে? সব জেনে বোঝা গেল, এর জন্য নিজের একাডেমিক সনদ ও মায়ের এনআইডি জমা দিলেই হবে। সেসব সঙ্গে নেই। কিন্তু এতেই হবে কি না, জানতে আবার আগের কক্ষে যেতে হলো। বলার অপেক্ষা রাখে না, এবারও সেই একই লাইন, যার লেজ কেন যেন সব সময় সিঁড়িতেই থাকে। যখন ওই কক্ষে প্রবেশের সৌভাগ্য হলো, তখন বিকেল পৌনে ৫টা। সেখানকার কর্মকর্তা তখন যাই যাই করছেন। এক ঝলক কাগজপত্র দেখে যা জানালেন, তাতে বোঝা গেল যে আগের জানা-বোঝায় কোনো গরমিল নেই।

পরদিন আবার যাত্রা। সুদূর কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রজেক্টের পাসপোর্ট অফিসে, যেখানে ঢাকা দক্ষিণের নাগরিকদের পাসপোর্টের কাজ করা হয়। আবারও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হলো। দেখে-শুনে মনে হলো—এখানে লোকে শুধু লাইন দিতে ভোরে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন, যার সঙ্গে তাল মেলানো সহজ নয়। সে যাক। এবার সব কাগজ হাতে আছে। সংশ্লিষ্ট অন্য সবকিছু সঙ্গে নিয়ে এসেছি; ফলত কিছুটা নির্ভয় বলা যায়। এর মধ্যেই বেশ একটা হট্টগোল শুরু হলো। এক উত্তেজিত তরুণ বেশ ইংরেজিতে বকছে। তরুণটিকে চিনি। রাজধানীর যে এলাকায় থাকি, সেখানকারই অনুজ। ঠিক-ভুল ইংরেজিতে সে যা বলছে, তা হলো—সে একজন ফার্স্টক্লাস গেজেটেড কর্মকর্তা (জানামতে তথ্যটি ভুল) হয়েও এমন হেনস্তার শিকার কেন হতে হবে? দায়িত্বরত আনসার সদস্যটিকে বেশ নরম হতে দেখা গেল। তিনি এবার স্বভাবের (অন্তত দুই দিনে যেমনটা দেখেছি তাঁকে) বাইরে গিয়ে ওই তরুণকে ম্যানেজ করতে ব্যস্ত। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেককেই তরুণের এই প্রশ্নকে খুবই যৌক্তিক বলে মেনে নিতে দেখা গেল। কিন্তু কেউ এই প্রশ্ন করলেন না যে, হয়রানি যদি সাধারণের বাস্তবতা হয়, তবে ফার্স্টক্লাস গেজেটেড কর্মকর্তা কেন সেই বাস্তবতায় থাকবেন না? যাক, এই গ্যাঞ্জাম নিয়ে দু-একজন অবশ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উদাস। তরুণটির সঙ্গে চোখাচোখি হলো একবার। ছেলেটি লজ্জা পেল।

দীর্ঘ লাইন শেষে আবার সেই কর্মকর্তার কক্ষে ছাত্ররূপ দাঁড়িয়ে। তাঁর কপালে বিরক্তির ভাঁজ। লহমার বিরতিতে মনে হলো—তবে কি পোশাক বা চেহারায় কোনো গড়বড়? একটা আয়না থাকলে বেশ হতো। কিন্তু হায়, পাসপোর্ট অফিসে তো আর আয়না থাকে না।

সে যাক, আবার ওই কর্মকর্তা সব কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখলেন। দেখে বললেন—
-এমনিতে ঠিক আছে সব। তবে অ্যাফিডেভিট লাগবে।
-আমি তো সনদ দিলাম। সেখানে সব ঠিক আছে।
-যা বলছি করেন।
-এই নিয়ে তিনবার এলাম। প্রতিবার একটি করে অসংগতির কথা বলছেন। একবারে কেন বলেন না? আর যাদের প্রমাণ দেওয়ার মতো কাগজ নেই বা থাকলেও সেখানে একেকটিতে একেক রকম তথ্য, তাদের জন্য অ্যাফিডেভিট লাগতে পারে। আমার কেন লাগবে? 
-ঠিক আছে। আপনি পাঁচতলায় পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি যদি লিখে দেন, তাহলে লাগবে না।

বেশ বিরক্তি নিয়েই শেষ কথাগুলো বললেন ওই কর্মকর্তা। বের হতেই এবার অ্যাফিডেভিট করে দেওয়ার জন্য কয়েকজন সাহায্যের হাত বাড়াল। দু-একজন তাদের কার্ড গছিয়ে দিল হাতে। বুঝলাম, পাসপোর্ট অফিসের রাস্তায় ঢোকার মুখে যে ফটোকপি দোকানগুলো আছে, যারা পাসপোর্ট ফিসহ নানা কাজে গায়ে পড়ে সাহায্য করতে উদ্‌গ্রীব থাকে, তাদেরই প্রতিনিধি এরা। নিজের কিছু কাগজ ফটোকপি করানোর সময় তাদের বিস্তর সেবা-তালিকা নজরে পড়েছে। কিন্তু আমিও নাছোড়। কার্ড নিলাম, কিন্তু কথা দিলাম না।

এবার সেই পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, নাতিদীর্ঘ লাইন ডিঙিয়েই ঢুকতে হলো সেই কক্ষে। অবশ্য সেই কক্ষের ভেতরেও একটি বাচ্চা-লাইন আছে। বেলাইন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই একেবারে। কাচে ঘেরা বিরাট টেবিল নিয়ে পরিচালক বসে আছেন। কক্ষটি সুপরিসর। সোফায় বেশ কয়েকজন বসে আছেন। তাঁদের সঙ্গে আলাপের ফাঁকে সেবাগ্রহীতাদের সেবা দিচ্ছেন তিনি। বোঝা গেল, সোফায় উপবিষ্টরা পরিচালকের বন্ধুস্থানীয়।

অবশেষে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ এল। ফরমটি দেখালাম। উদাসভাবে বললেন—
-অ্যাফিডেভিট কই?
-কেন লাগবে?
-লাগবে।
-তাহলে সংশোধনের আবেদন ফরমে তার উল্লেখ নেই কেন?
-বাংলা পড়তে পারেন না? পরিষ্কার লেখা আছে।
-ফরমে বলা আছে, সংশোধনের প্রমাণপত্র হিসেবে তালিকায় থাকা ছয়টি বিকল্পের যেকোনোটি দিলেই হবে। আমি দুটি দিয়েছি।
-সেখানে অ্যাফিডেভিটের কথাও বলা আছে।
-কিন্তু এটা যে অবশ্যই দিতে হবে—এমন বলা নেই। আমি তিনবার লাইনে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয়তলা থেকে জেনেছি, এটা লাগবে। এটা একবারে বলা যাবে না কেন? 
-আপনি বাংলা কথা বোঝেন না? এটা লাগবে।
-কেন? যদি লাগেই, তবে কেন তা স্পষ্ট ভাষায় লেখা থাকবে না? নির্দেশনাটি কেন ঠিকভাবে লেখা হবে না?? এর জন্য হয়রানি হচ্ছে। অনেকেই এমন হয়রানির শিকার।
-আমরা হয়রানি করি না।
-কিন্তু আমি তো হয়রান বোধ করছি।
-আপনি হয়রানি হননি।
-আশ্চর্য! আমি হয়রান হয়েছি কি না, তাও আপনি ঠিক করে দেবেন?
-আমি বাংলায় লেটার পাওয়া ছাত্র। আপনার চেয়ে ভালো বাংলা জানি।

আচমকা এ কথায় একটু দমে যেতে হলো। বিরাট বিপদে পড়েছি বলে মনে হলো। পেছনে লোক জমে যাচ্ছে। সোফায় উপবিষ্ট পরিচালকের বন্ধুস্থানীয়রা উসখুস করছেন। এসব দেখেও মুখ ফসকেই বেরিয়ে গেল—
-আপনি ভালো বাংলা জানেন—এই দাবি আপনি করতে পারেন। কিন্তু আমার চেয়ে ভালো কি না, সে দাবি আপনি করতে পারেন না। কারণ, আমি কতটা জানি, তা আপনি জানেন না।
-আমি বাংলায় লেটার পেয়েছি।
-সে আপনি পেতেই পারেন। কিন্তু আমি পেয়েছিলাম কি না, তা তো আপনি জানেন না। যখন জানেন না, তখন তুলনা কীভাবে করবেন?
-বলেন—এক পাল হাতি আকাশে উড়ে যাচ্ছে। এই বাক্যে ভুল কোথায়?
-যোগ্যতায়।

এবার মহামান্য সেই পরিচালক রীতিমতো অগ্নিশর্মা। তিনি ভুল বুঝে হয়তো ভেবে নিলেন—আমি তাঁর যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছি। কিন্তু আদতে তাঁর বলা বাক্যটিতে ব্যাকরণ বিবেচনায় ‘যোগ্যতা’রই অভাব। এবার তাঁর বন্ধুস্থানীয়রা মঞ্চে হাজির হলেন। পাশের কক্ষ থেকে আরেক কর্মকর্তা এলেন। পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। এর মধ্যেই বলে ফেললাম, ‘আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি দিয়েছি। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।’ আন্তরিক সেই পরিচালক বললেন, ‘বলুন।’

মনে ততক্ষণে যথেষ্ট ক্ষোভ জমা হয়েছে, যা বিক্ষোভে রূপান্তরের অপেক্ষায়। ফলে প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম—
-বিক্ষোভ শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে? 
-কী? 
-বিক্ষোভ শব্দটি কোথা থেকে এসেছে?

কিছুক্ষণ ভাবলেন পরিচালক মহোদয়। তারপর তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বললেন, ‘গ্রিক থেকে।’ উত্তরে আমি শুধু নই, অনেকেই নড়ে উঠলেন বলে মনে হলো। আমার চোখ বিস্ফারিত। আবার প্রশ্ন—কী? তিনি অটল—গ্রিক থেকে। এমন উত্তরে আমার পায়ে যেন খিল পড়ে গেছে। নড়া যাচ্ছে না। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তবে ভুল বলেছেন! এমন নানা কিছু যখন ভাবছি, পাশের কক্ষ থেকে আসা অন্য কর্মকর্তাটি তখন আমাকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন, ‘স্যার, দেখি কী সমস্যা? আমি দেখে দিচ্ছি।’ আমার মুখে তখন কি একটু হাসির রেখা দেখা দিয়েছিল—সেটা অন্যরা বলতে পারবে। তবে তাদের অস্বস্তি আমি প্রত্যক্ষ করেছি।

ঘটনা এখানে শেষ নয়। এরপর পরিচালকের পাশের ঘরে বসা অন্য কর্মকর্তাটি আমাকে বললেন, ‘অ্যাফিডেভিট ছাড়া দিলেও হয়। তবে হেড অফিস ঝামেলা করতে পারে। আপনি অ্যাফিডেভিট ছাড়াই জমা দিন। ওরা চাইলে পরে আপনাকে অবশ্য এসে অ্যাফিডেভিট জমা দিতে হবে।’ বললাম, ‘আমি আজই জমা দেব।’

এরপর গন্তব্য জমাকক্ষের সামনে। সেখানে তখন বিস্তর লোক গোমড়া মুখে বসে ও দাঁড়িয়ে। একটা টেবিলে ফরম জমা হচ্ছে। তারপর সেখান থেকে সিরিয়াল করে ভেতরে ডাক পড়ে। সুতরাং ওই টেবিলে জমা দিয়ে এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ানো গেল। কিন্তু ডাক আর আসে না। সন্ধ্যা পেরিয়ে ছবি তোলার কক্ষে প্রবেশ। সেখানে পাঁচ-সাতজন লাইনে দাঁড়ানো। ছবি তোলার জন্য চারটি টেবিল দেখা গেল। যদিও লোক আছেন দুজন। দুজন মিলেই এত লোককে সামাল দিচ্ছেন। দিন বৃহস্পতিবার বলে তাঁদের মধ্যেও তাড়া দেখা গেল। অফিস আওয়ার আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু লাইনে থাকা লোকেদের সবারটা শেষ করে তবেই তাঁরা যেতে পারবেন। আমার পালা এল—কাগজ দেখে বললেন—করেছেন কী? আপনাকে তো আরও টাকা জমা দিতে হবে। কেউ বলেনি?
-না। 
-এখন তো ব্যাংক বন্ধ। পারবেন না। আহা, পুরা দিন দাঁড়াইলেন!
-এখন? 
-আপনি রোববার আসেন। আপনার ফরম আমার কাছেই থাক। ওই দিন লাইন ধরবেন না। গেটে বলবেন, ভেতরে আপনার ফরম আছে।

তর্ক বা অন্য কিছুর আর প্রবৃত্তি হলো না। নিজেকে গাড়ল মনে হলো। বেরিয়ে আসছি, এ সময় ওই ব্যক্তি ডেকে আমিসহ আরও কয়েকজনকে বললেন, ‘আপনারা একসঙ্গে যাবেন। বের হয়ে একসঙ্গে গিয়ে সিএনজি বা অটোতে উঠবেন।’
-কেন? 
-এলাকা ভালো না। ছিনতাই হয়। বাইরেই দাঁড়ানো থাকে। পুলিশও থাকে না। একলা থাকলে বিপদ হতে পারে। আমরাও রাতে যারা বের হই, একসাথে বের হই।

কারও মুখে আর কথা সরল না। তখন রাত পৌনে ৮টা। আমার সঙ্গে যাঁরা বের হলেন, তাঁরা একই পরিবারের। দুটি মেয়ে ও একটি ছেলেসন্তান নিয়ে মা-বাবা এসেছেন পাসপোর্ট করাতে। তাঁদের চোখে ভয়। আর আমি ভাবছি—এটুকুই বাকি ছিল কপালে। বেরিয়ে তাঁদের অটো ঠিক করে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। আমার গন্তব্য আলাদা। মনে তখন গ্রিক দেশ থেকে আগত ‘বিক্ষোভ’ শব্দটি কেবলই নড়ছে।

লেখক: সহকারী বার্তা সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত