আক্তার হোসেন

বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুদৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী ’৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে চলে যাব।’
উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের হাত ধরে উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে একটি উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ। তবে এ যাত্রায় অনেক সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাড়াতে হবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। একই সঙ্গে সার্বিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৩ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩ উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সদস্যদের প্রতি বেশ কিছু মূল্যবান ও উপদেশমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একটি দক্ষ ও বিশ্বমানের “স্মার্ট পুলিশ” গড়ে তোলা।’ সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত বাংলাদেশ এবং সেটি হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা জনসাধারণ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশে নাগরিকসেবা থেকে শুরু করে সব আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো প্রশাসন। আর প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠন হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলতে প্রধানত পুলিশ সার্ভিসকেই বোঝানো হয়। পুলিশের ওপর জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেকটাই নির্ভরশীল। উন্নত বিশ্বে পুলিশ জনগণের সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত থাকে। যেকোনো সমস্যায় জনগণ পুলিশের সাহায্য কামনা করে। পুলিশ সদস্যদের কাজই হলো জনগণের যেকোনো সমস্যায় সব ধরনের সহযোগিতা করা। অসহায়, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা ও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। পাশাপাশি জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া। মোটকথা, পুলিশ সদস্যরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
উন্নত বিশ্বে সাধারণত ধরা হয়ে থাকে যে সমাজের ৯০ শতাংশ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলবে, বাকি ১০ শতাংশ মানুষ আইনের বরখেলাপ করবে অথবা বিপথগামী হবে। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে অথবা আইনের আওতায় আনবে। অন্যভাবে বললে বলা যায়, পুলিশ এই ১০ শতাংশ মানুষের কাছ থেকে সমাজের ৯০ শতাংশ শান্তিকামী মানুষকে রক্ষা করবে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ৯০ শতাংশ মানুষ কি আইন মেনে চলে বা চলার মতো পরিবেশ আছে? তবে এ কথা ঠিক, অল্প কিছু মানুষের নিয়মবহির্ভূত কাজের প্রভাব সমাজে অনেক বেশি পড়ে। পুলিশের কাজ মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং কেউ যদি অন্যায়ভাবে আটক হন, তার প্রভাবও বেশি থাকে। সামান্যতম বিচ্যুতিও মানুষকে প্রভাবান্বিত করতে পারে। পুলিশকে আইনত মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করার অধিকার দেওয়া আছে, তবে তা সম্পূর্ণ ন্যায়সংগতভাবে হতে হবে।
পুলিশের কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক আছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে, সেটা নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। প্রতিদিন দায়িত্ব বণ্টনের আগে কর্মকর্তারা পুলিশ সার্ভিসের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে কাজ করার বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। থানা থেকে শুরু করে পুলিশ লাইনস, পুলিশ ক্যাম্প, বিভাগ—সবখানেই কাউন্সেলিং করা হয়। কাউন্সেলিংকালে পুলিশ সদস্যদের কোথাও তল্লাশি চালাতে হলে কী নিয়ম মানতে হবে, কী ধরনের আচরণ করতে হবে, তা বুঝিয়ে বলা হয়। সাধারণ মানুষকে যেন সম্মান দেওয়া হয়, তাদের প্রতি যেন ভদ্র আচরণ করা হয়।
স্মার্ট পুলিশিং হলো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক পুলিশিং ব্যবস্থা, যেখানে জ্ঞানবিজ্ঞান ব্যবহৃত হয় অত্যধিক। স্মার্ট পুলিশিংয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমের উপাদানগুলো ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও গবেষণা করা হয়, যা অফিসারদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক। তা ছাড়া নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা হয় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য। অর্থাৎ, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে নির্ধারিত, বাস্তবিক ও কাঙ্ক্ষিত পুলিশিং সেবা প্রদানই হলো স্মার্ট পুলিশিং।
মানুষের ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ধাপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক প্রয়োগ ইতিমধ্যে লক্ষণীয় প্রভাব ফেলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো প্রেডিক্টিভ পুলিশিং, যা স্মার্ট পুলিশিং বাস্তবায়নে এমন এক ব্যবস্থাকে বোঝায়; যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে একটি স্বয়ংক্রিয়, দ্রুতগতিসম্পন্ন ও তুলনামূলক নির্ভুল ব্যবস্থাপনা। অপরাধ ও অপরাধীকে শনাক্ত করার মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ, বিশ্লেষণ ও প্রতিকারে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। যেমন—সিসি ক্যামেরা, সেন্সর ডিভাইস, পূর্বে তৈরিকৃত ডেটাবেইসের তথ্য বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম। আইন প্রয়োগের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এ আই) সংযোজন একটি বৈপ্লবিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা জননিরাপত্তায় ফোর্স মোবিলাইজেশন, রিসোর্স অ্যালোকেশন, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অগ্রিম তথ্য প্রদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ ঘরে বসে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি সেবা উল্লেখ না করলেই নয়। আমরা সবাই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সুবিধাভোগী। বিপদাপদ, অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা বা যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সেবার জন্য ৯৯৯-এ কল করে থাকি। এটা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং স্বাস্থ্য সমন্বয়ে একটি সেবা। সেবাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন। এটি তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত বা উদ্ভাবন। আরেকটি সেবা অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের প্রবাসে চাকরি বা অভিবাসন প্রক্রিয়ায় এই ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয়। সেবাটি চালু হয় ২০১৭ সালে। এ ধরনের আরও বহুবিদ অনলাইন সেবা রয়েছে। ডিজিটাল হওয়ার কারণে সেবা দ্রুত মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। এতে সময় ও খরচ দুই-ই কম লাগছে।
একটি তথ্য ও তথ্যভিত্তিক বা তথ্যনির্ভর সমাধান পদ্ধতি, যাকে কম্পিউটারের ভাষায় বলা হয় Algorithm। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে নাগরিকদের সেবা প্রদান করার জন্যই সেবাটি প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে ৯৯৯ ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করছে। কেউ ৯৯৯-এ কল করলে কল সেন্টারে একজন অপারেটর (Call Taker) কলটি গ্রহণ করে এবং কলারের চাহিদামতো কল সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ইউনিট, অর্থাৎ থানায় ডেসপাচ করে অথবা কনফারেন্সিংয়ের জন্য থানাকে সংযুক্ত করে দেয়। এই ব্যবস্থায় কলারের লোকেশনও জানা যায় (GPS Location)। অতঃপর থানা থেকে সেবাপ্রত্যাশীকে সাড়া প্রদান করা হচ্ছে। সাড়া প্রদানের সময় (Response Time) আরও সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত করার লক্ষ্যে পুলিশের মোবাইল পেট্রল গাড়িগুলোতে মোবাইল ডেটা টার্মিনাল (এমডিটি) বসানোর কার্যক্রমও সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। ফলে ৯৯৯ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থেকে থানায় ডেসপাচের পরিবর্তে সরাসরি ঘটনাস্থল বা সেবাপ্রত্যাশীর নিকটবর্তী কোনো এমডিটিতে কল ডেসপাচ করলে খুব দ্রুত সাড়া প্রদান করা সম্ভব হবে।
স্মার্ট ৯৯৯, যা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ তথা স্মার্ট গভর্নমেন্টেরই’ অংশ, তা আসলে কী রকম হবে? ডিজিটাল ৯৯৯ যখন স্মার্ট ৯৯৯ হবে, তখন কোনো অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা বা অপরাধ, যেমন—হাউস ট্রেসপাসিং, যৌন হয়রানি ইত্যাদিসহ যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে মানুষকে আর কল করতে হবে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসমৃদ্ধ (AI) যেকোনো IOT (Internet of Things)-এর আশপাশে কোনো ঘটনা, দুর্ঘটনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় সেবার জন্য সংকেত বা কোনো অ্যালার্ম স্মার্ট ৯৯৯ কমান্ড সেন্টারে পাঠাতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথাও সাপ্তাহিক ছুটি উদ্যাপন করতে গিয়েছেন বা আমরা যা সচরাচর করি—ঈদ, পূজার বড় ছুটি পেলে পরিবারের সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে যাই। তখন বাসায় কেউ থাকে না। সে ক্ষেত্রে আপনার বাসায় যদি IOT নামক ডিভাইসটি থাকে আর তার যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকে, তবে আপনার অনুপস্থিতিতে যে কেউ আপনার বাসা-বাড়িতে ঢুকলে বা বাসায় কোনো দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড ঘটলে স্মার্ট ৯৯৯ কমান্ড সেন্টারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল বা অ্যালার্ম বা সিগন্যাল চলে আসবে। শুধু তাই নয়, স্মার্ট ৯৯৯ অবশ্যই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসমৃদ্ধ কলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করে অগ্নিকাণ্ড হলে নিকটবর্তী ফায়ার সার্ভিসকে অথবা কোনো অপরাধসংক্রান্ত হলে নিকটবর্তী ইউনিটকে কল, সংকেত, সিগন্যাল পাঠাবে। সাড়া বা সেবা প্রদান অথবা সাড়া প্রদানকারী ঘটনাস্থলে না পৌঁছানো পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে কলটি লাইভ থাকবে।
আমরা এমন একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল সময় পার করছি, যেখানে বিশ্ব প্রতিটি মুহূর্তে প্রযুক্তিগত উন্নতির পাশাপাশি নিত্যনতুন জটিল সমস্যার সাক্ষী হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া প্রযুক্তিগত বিপ্লব পরিবর্তন করে দিচ্ছে আমাদের ধারণা, প্রস্তুতি ও কাজের ধরনকে। কালের পরিক্রমায় আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগে প্রবেশ করেছি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং বেপরোয়া গাড়ি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা হয় ৮০ শতাংশেরও বেশি। এ দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনার জন্য AI সংবলিত Automated Software Application ক্যামেরা এবং স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। মহাসড়কে ইতিমধ্যে সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হবে। তদনুসারে স্মার্ট ক্যামেরা সড়ক-মহাসড়কে প্রকাশ্য-গোপনে বসানো যেতে পারে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত ক্যামেরা গতিসীমার অতিরিক্ত গতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারবে এবং সংশ্লিষ্ট গাড়ি এবং গাড়ির মালিকের তথ্যভান্ডার (Big Data) বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণয় করতে পারবে। তদুপরি আইন অনুসারে এ অপরাধের জন্য নির্ধারিত জরিমানা সরাসরি অভিযুক্ত গাড়ির মালিকের যোগাযোগের ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর বা ই-মেইলে পাঠিয়ে দিতে পারবে। পেমেন্ট সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এটা মুলতবি দেখাবে। তা ছাড়া, ট্রাফিক সিগন্যাল যদি Automated করা যায়, তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যানজট শনাক্ত করে তদনুসারে ট্রাফিক সিগন্যাল স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে। ফলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বা ট্রাফিক সিগন্যালে যানবাহনের জট অনেকাংশে কমে যাবে। কারণ পুরো ট্রাফিক-ব্যবস্থা তখন ডিজিটাল ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে।
পুলিশিং ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের বড় সুবিধা হলো প্রেডিক্টিভ অ্যানালাইসিস। সুবিস্তর তথ্যভান্ডারের স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনার মাধ্যমে এআই অ্যালগোরিদম এমন কিছু ঘটনা ও অপরাধের লক্ষণ শনাক্ত করতে সক্ষম, যা মানুষের পর্যালোচনাশক্তি দ্বারা অসম্ভব। এই পূর্ব শনাক্তকরণ সক্ষমতা পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই অপরাধ দমনে সাহায্য করবে। এই ক্ষেত্রে এআই অপরাধীর আচরণ বিশ্লেষণ করে অপরাধপ্রবণ অঞ্চল, অপরাধের ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী রিসোর্স মোবিলাইজেশন ও প্রো-অ্যাকটিভ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্রিমিনাল ট্র্যাক ডেটা, মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করে থাকে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সমাজের ৩০-৪০ শতাংশ অপরাধ কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে জরুরি সময়ে সেবাপ্রত্যাশীর ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় ২৫-৩০ শতাংশ কমিয়ে আনে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মুখমণ্ডল শনাক্তকরণ (ফেইস রিকগনিশন) প্রযুক্তি সন্দেহভাজন অপরাধীকে চিহ্নিত ও তার গতিবিধি লক্ষ করতে সক্ষম। একই সঙ্গে এই প্রযুক্তি নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান, আত্মগোপনে থাকা অপরাধীকে খুঁজে বের করা এবং জনসমাগমে মানুষের নিরাপত্তায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অর্লিপ্স শহরের পুলিশ অপরাধী, গাড়ি ও স্থান শনাক্ত করতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার করে। রাশিয়া ও চায়নাতেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত।
স্মার্ট বাংলাদেশের পাশাপাশি স্মার্ট সিটির বিষয়টিও এখন বহুল আলোচিত হয়ে উঠেছে। স্মার্ট সিটি নাগরিকদের দ্রুত সেবা প্রদান যেমন নিশ্চিত করবে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করবে। স্মার্ট সিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত স্মার্ট পুলিশিং অপরাধী শনাক্ত-চিহ্নিতকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। অপরাধের ঘটনাস্থল ও অপরাধী দ্রুত শনাক্ত করা যাবে। পৃথিবীর উন্নত দেশের শহরগুলোতে সিসিটিভি বসিয়ে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়। সন্দিগ্ধ বা কোনো অপরাধী অথবা অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে ইন্টেলিজেন্ট ক্যামেরার সাহায্যে সহজেই শনাক্ত করতে পারে। আর এর পেছনে কাজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেটেড সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন। ২৪/৭ মনিটরিংয়ের ফলে অপরাধীদের নির্বিঘ্ন চলাচল অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং অপরাধ সংঘটনের মাত্রা কমে যায়। এই নিরবচ্ছিন্ন মনিটরিং ব্যবস্থায় একটা প্রতিরোধমূলক প্রভাব থাকে। অপরাধী যখন জানে যে অপরাধ করে পার পাবে না, তখন এমনিতেই অপরাধের হার কমে যায়।
নিরাপদ ও উন্নত শহর বাস্তবায়নে স্মার্ট পুলিশিংয়ের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয়, গতিশীল, নির্ভুল, নিরাপদ ও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে বিশ্ব্যব্যাপী নানান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। দি এআই গ্লোবাল সার্ভিল্যান্সের (এআইজিএস) ২০১৯-এর তথ্যমতে ৫৬টি দেশ ইতিমধ্যে নিরাপদ শহর গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু করেছে। এআই প্রযুক্তির সাহায্যে শহরের রাস্তায় চলমান সব গাড়ির তথ্য সংগ্রহ, ট্রাফিক ফ্লো সিমুলেশন, যানজটের পরিমাণ ও রুট ট্র্যাকিং পর্যালোচনার মাধ্যমে একটি স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব, যার ফলে জনসাধারণের যানজটের ভোগান্তি হ্রাস এবং সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলাচল, ফিটনেসবিহীন গাড়ি শনাক্তকরণ, যত্রতত্র পার্কিং, খেয়ালখুশিমতো রাস্তা পারাপারসহ সব অসংলগ্ন ও আইনবহির্ভূত কার্যক্রম রোধ করা সম্ভব হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে শহরের বাস্তবিক তথ্যের ওপর একটি সুবৃহৎ ডেটা সেট তৈরি করার মাধ্যমে ভবিষ্যমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভার্চুয়াল কার্যক্রম ও নির্ভরতা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। যেহেতু সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি খুবই সংবেদনশীল তুলনামূলক নতুন, তাই এই অপরাধ দমনে, প্রতিকারে ও জনসচেতনতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এআই প্রযুক্তি খুব দ্রুত অসংগতি শনাক্ত করতে এবং ত্বরিত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করে সম্ভাব্য ক্ষতি প্রতিহত করতে সক্ষম। এই প্রো-অ্যাকটিভ ব্যবস্থাপনা দেশের ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে স্বয়ংক্রিয় পাহারাদার হিসেবে কাজ করে। সাইবার সিকিউরিটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার স্মার্ট পুলিশিং বাস্তবায়নে কাজের ব্যাপকতা ও উপযোগিতায় একে অপরের পরিপূরক।
অধিকন্তু, স্মার্ট পুলিশিং বাস্তবায়নে কাজের ব্যাপকতা ও প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সুষ্ঠু মানবসম্পদ ও সম্পদ বরাদ্দ (রিসোর্স অ্যালোকেশন) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে পেট্রল রুটস অপটিমাইজেশন, লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনা ও মাঠ প্রশাসন ব্যবস্থাপনায় এআই অ্য্যালগোরিদম ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যমুখী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এটি শুধু সেবা প্রদানে গতিশীলতাই আনে না, বরং একই সঙ্গে সেবার মানোন্নয়ন ও জবাবদিহি সুনিশ্চিত করে। ২০১৫ সালের দিকে ৮১ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান কোনো না কোনোভাবে হত্যার শিকার হওয়ার আশঙ্কা করতেন। পরবর্তী সময়ে রিও ডি জেনেরিওর পুলিশ হত্যার ঘটনা ও হুমকি পর্যালোচনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেয় এবং উক্ত অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
আমাদের দেশের বিদ্যমান পুলিশিং ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বিশ্বের সব জনবহুল দেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করবে। স্বয়ংক্রিয় ও দ্রুত শনাক্তকরণ, সাড়াদান ও প্রতিকারের এই সক্ষমতা সামাজিকভাবে অপরাধ দমন ও বিস্তার রোধে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে ডেটা ড্রিভেন পর্যালোচনার মাধ্যমে এআই প্রদত্ত ভবিষ্যমুখী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামাজিকভাবে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে, যা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরাপদ সমাজব্যবস্থার দিকে আমাদের নিয়ে যাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ শতভাগ না হলেও বহুলাংশেই ডিজিটাল ও আধুনিক হয়ে উঠেছে। দেশের থানাগুলোকে সংযুক্ত করা হয়েছে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও ডেটাবেইসের আওতায়। অপরাধ তদন্ত, ময়নাতদন্ত, অপরাধী শনাক্তকরণেও ব্যবহৃত হচ্ছে ডিএনএ-ফরেনসিক বিশ্লেষণসহ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। স্বল্প সময়ে অপরাধীরা ধরাও পড়ছে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই পুলিশ বাহিনী। সেই প্রেক্ষাপটে দেশের পুলিশ বাহিনী সর্বদাই আইনের রক্ষকের ভূমিকায় জনবান্ধব হিসেবে অবতীর্ণ হচ্ছে।
মোটকথা, অপরাধ করে পার পাবে না কেউ পুলিশের হাত থেকে, তা সে যে ধরনের অপরাধই হোক না কেন। তবে এসবের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের জন্য থাকতে হবে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বাধিক ব্যবহার, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা, দক্ষ জনবল, স্ট্রাইকিং ফোর্স, অত্যাধুনিক যানবাহন, ট্যাকটিক্যাল বেল্ট, আনুষঙ্গিক সরঞ্জামসহ অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার—এ সবই যুক্ত করতে হবে পুলিশ বাহিনীতে।
স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট পুলিশিং হবে একটি অনিবার্য বাস্তবতা। উৎপাদন, প্রস্তুতকরণ, বিপণন থেকে শুরু করে সেবা প্রদান—সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। পরিবর্তিত এই প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে স্মার্ট পুলিশিং হবে একমাত্র নিয়ামক। এই বাস্তবতা সামনে রেখে একটি আধুনিক, দক্ষ, প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট পুলিশ গঠনে বাংলাদেশ পুলিশ এগিয়ে যাচ্ছে। নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিষয়ভিত্তিক দক্ষতার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তদুপরি আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং বাহিনীর সদস্যদের অধিকতর প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট পুলিশ ও স্মার্ট পুলিশিং ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতি গ্রহণের এখনই সময়। আমরা সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে। আর সেই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশও হবে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক স্মার্ট পুলিশ।
লেখক: পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ

বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুদৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী ’৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে চলে যাব।’
উন্নয়নের মহাসড়কে চলমান বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। ডিজিটাল বাংলাদেশের হাত ধরে উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে একটি উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ। তবে এ যাত্রায় অনেক সম্ভাবনার পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাড়াতে হবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। একই সঙ্গে সার্বিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৩ জানুয়ারি পুলিশ সপ্তাহ ২০২৩ উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সদস্যদের প্রতি বেশ কিছু মূল্যবান ও উপদেশমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একটি দক্ষ ও বিশ্বমানের “স্মার্ট পুলিশ” গড়ে তোলা।’ সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত বাংলাদেশ এবং সেটি হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা জনসাধারণ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্মার্ট বাংলাদেশে নাগরিকসেবা থেকে শুরু করে সব আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো প্রশাসন। আর প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠন হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলতে প্রধানত পুলিশ সার্ভিসকেই বোঝানো হয়। পুলিশের ওপর জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেকটাই নির্ভরশীল। উন্নত বিশ্বে পুলিশ জনগণের সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত থাকে। যেকোনো সমস্যায় জনগণ পুলিশের সাহায্য কামনা করে। পুলিশ সদস্যদের কাজই হলো জনগণের যেকোনো সমস্যায় সব ধরনের সহযোগিতা করা। অসহায়, বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা ও মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। পাশাপাশি জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া। মোটকথা, পুলিশ সদস্যরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
উন্নত বিশ্বে সাধারণত ধরা হয়ে থাকে যে সমাজের ৯০ শতাংশ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলবে, বাকি ১০ শতাংশ মানুষ আইনের বরখেলাপ করবে অথবা বিপথগামী হবে। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে অথবা আইনের আওতায় আনবে। অন্যভাবে বললে বলা যায়, পুলিশ এই ১০ শতাংশ মানুষের কাছ থেকে সমাজের ৯০ শতাংশ শান্তিকামী মানুষকে রক্ষা করবে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ৯০ শতাংশ মানুষ কি আইন মেনে চলে বা চলার মতো পরিবেশ আছে? তবে এ কথা ঠিক, অল্প কিছু মানুষের নিয়মবহির্ভূত কাজের প্রভাব সমাজে অনেক বেশি পড়ে। পুলিশের কাজ মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং কেউ যদি অন্যায়ভাবে আটক হন, তার প্রভাবও বেশি থাকে। সামান্যতম বিচ্যুতিও মানুষকে প্রভাবান্বিত করতে পারে। পুলিশকে আইনত মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করার অধিকার দেওয়া আছে, তবে তা সম্পূর্ণ ন্যায়সংগতভাবে হতে হবে।
পুলিশের কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে সতর্ক আছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে, সেটা নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিনিয়ত কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। প্রতিদিন দায়িত্ব বণ্টনের আগে কর্মকর্তারা পুলিশ সার্ভিসের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে কাজ করার বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। থানা থেকে শুরু করে পুলিশ লাইনস, পুলিশ ক্যাম্প, বিভাগ—সবখানেই কাউন্সেলিং করা হয়। কাউন্সেলিংকালে পুলিশ সদস্যদের কোথাও তল্লাশি চালাতে হলে কী নিয়ম মানতে হবে, কী ধরনের আচরণ করতে হবে, তা বুঝিয়ে বলা হয়। সাধারণ মানুষকে যেন সম্মান দেওয়া হয়, তাদের প্রতি যেন ভদ্র আচরণ করা হয়।
স্মার্ট পুলিশিং হলো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক পুলিশিং ব্যবস্থা, যেখানে জ্ঞানবিজ্ঞান ব্যবহৃত হয় অত্যধিক। স্মার্ট পুলিশিংয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমের উপাদানগুলো ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও গবেষণা করা হয়, যা অফিসারদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক। তা ছাড়া নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা হয় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য। অর্থাৎ, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে নির্ধারিত, বাস্তবিক ও কাঙ্ক্ষিত পুলিশিং সেবা প্রদানই হলো স্মার্ট পুলিশিং।
মানুষের ব্যক্তিগত থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ধাপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক প্রয়োগ ইতিমধ্যে লক্ষণীয় প্রভাব ফেলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো প্রেডিক্টিভ পুলিশিং, যা স্মার্ট পুলিশিং বাস্তবায়নে এমন এক ব্যবস্থাকে বোঝায়; যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে একটি স্বয়ংক্রিয়, দ্রুতগতিসম্পন্ন ও তুলনামূলক নির্ভুল ব্যবস্থাপনা। অপরাধ ও অপরাধীকে শনাক্ত করার মাধ্যমে অপরাধ প্রতিরোধ, বিশ্লেষণ ও প্রতিকারে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। যেমন—সিসি ক্যামেরা, সেন্সর ডিভাইস, পূর্বে তৈরিকৃত ডেটাবেইসের তথ্য বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম। আইন প্রয়োগের ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এ আই) সংযোজন একটি বৈপ্লবিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা জননিরাপত্তায় ফোর্স মোবিলাইজেশন, রিসোর্স অ্যালোকেশন, স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অগ্রিম তথ্য প্রদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ ঘরে বসে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি সেবা উল্লেখ না করলেই নয়। আমরা সবাই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সুবিধাভোগী। বিপদাপদ, অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা বা যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সেবার জন্য ৯৯৯-এ কল করে থাকি। এটা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং স্বাস্থ্য সমন্বয়ে একটি সেবা। সেবাটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন। এটি তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত বা উদ্ভাবন। আরেকটি সেবা অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের প্রবাসে চাকরি বা অভিবাসন প্রক্রিয়ায় এই ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হয়। সেবাটি চালু হয় ২০১৭ সালে। এ ধরনের আরও বহুবিদ অনলাইন সেবা রয়েছে। ডিজিটাল হওয়ার কারণে সেবা দ্রুত মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। এতে সময় ও খরচ দুই-ই কম লাগছে।
একটি তথ্য ও তথ্যভিত্তিক বা তথ্যনির্ভর সমাধান পদ্ধতি, যাকে কম্পিউটারের ভাষায় বলা হয় Algorithm। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে নাগরিকদের সেবা প্রদান করার জন্যই সেবাটি প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে ৯৯৯ ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করছে। কেউ ৯৯৯-এ কল করলে কল সেন্টারে একজন অপারেটর (Call Taker) কলটি গ্রহণ করে এবং কলারের চাহিদামতো কল সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ইউনিট, অর্থাৎ থানায় ডেসপাচ করে অথবা কনফারেন্সিংয়ের জন্য থানাকে সংযুক্ত করে দেয়। এই ব্যবস্থায় কলারের লোকেশনও জানা যায় (GPS Location)। অতঃপর থানা থেকে সেবাপ্রত্যাশীকে সাড়া প্রদান করা হচ্ছে। সাড়া প্রদানের সময় (Response Time) আরও সংক্ষিপ্ত ও দ্রুত করার লক্ষ্যে পুলিশের মোবাইল পেট্রল গাড়িগুলোতে মোবাইল ডেটা টার্মিনাল (এমডিটি) বসানোর কার্যক্রমও সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। ফলে ৯৯৯ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থেকে থানায় ডেসপাচের পরিবর্তে সরাসরি ঘটনাস্থল বা সেবাপ্রত্যাশীর নিকটবর্তী কোনো এমডিটিতে কল ডেসপাচ করলে খুব দ্রুত সাড়া প্রদান করা সম্ভব হবে।
স্মার্ট ৯৯৯, যা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ তথা স্মার্ট গভর্নমেন্টেরই’ অংশ, তা আসলে কী রকম হবে? ডিজিটাল ৯৯৯ যখন স্মার্ট ৯৯৯ হবে, তখন কোনো অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা বা অপরাধ, যেমন—হাউস ট্রেসপাসিং, যৌন হয়রানি ইত্যাদিসহ যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে মানুষকে আর কল করতে হবে না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসমৃদ্ধ (AI) যেকোনো IOT (Internet of Things)-এর আশপাশে কোনো ঘটনা, দুর্ঘটনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় সেবার জন্য সংকেত বা কোনো অ্যালার্ম স্মার্ট ৯৯৯ কমান্ড সেন্টারে পাঠাতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথাও সাপ্তাহিক ছুটি উদ্যাপন করতে গিয়েছেন বা আমরা যা সচরাচর করি—ঈদ, পূজার বড় ছুটি পেলে পরিবারের সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে যাই। তখন বাসায় কেউ থাকে না। সে ক্ষেত্রে আপনার বাসায় যদি IOT নামক ডিভাইসটি থাকে আর তার যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকে, তবে আপনার অনুপস্থিতিতে যে কেউ আপনার বাসা-বাড়িতে ঢুকলে বা বাসায় কোনো দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ড ঘটলে স্মার্ট ৯৯৯ কমান্ড সেন্টারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল বা অ্যালার্ম বা সিগন্যাল চলে আসবে। শুধু তাই নয়, স্মার্ট ৯৯৯ অবশ্যই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসমৃদ্ধ কলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করে অগ্নিকাণ্ড হলে নিকটবর্তী ফায়ার সার্ভিসকে অথবা কোনো অপরাধসংক্রান্ত হলে নিকটবর্তী ইউনিটকে কল, সংকেত, সিগন্যাল পাঠাবে। সাড়া বা সেবা প্রদান অথবা সাড়া প্রদানকারী ঘটনাস্থলে না পৌঁছানো পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে কলটি লাইভ থাকবে।
আমরা এমন একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল সময় পার করছি, যেখানে বিশ্ব প্রতিটি মুহূর্তে প্রযুক্তিগত উন্নতির পাশাপাশি নিত্যনতুন জটিল সমস্যার সাক্ষী হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া প্রযুক্তিগত বিপ্লব পরিবর্তন করে দিচ্ছে আমাদের ধারণা, প্রস্তুতি ও কাজের ধরনকে। কালের পরিক্রমায় আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগে প্রবেশ করেছি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং বেপরোয়া গাড়ি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা হয় ৮০ শতাংশেরও বেশি। এ দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনার জন্য AI সংবলিত Automated Software Application ক্যামেরা এবং স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। মহাসড়কে ইতিমধ্যে সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হবে। তদনুসারে স্মার্ট ক্যামেরা সড়ক-মহাসড়কে প্রকাশ্য-গোপনে বসানো যেতে পারে। এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত ক্যামেরা গতিসীমার অতিরিক্ত গতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারবে এবং সংশ্লিষ্ট গাড়ি এবং গাড়ির মালিকের তথ্যভান্ডার (Big Data) বিশ্লেষণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ণয় করতে পারবে। তদুপরি আইন অনুসারে এ অপরাধের জন্য নির্ধারিত জরিমানা সরাসরি অভিযুক্ত গাড়ির মালিকের যোগাযোগের ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর বা ই-মেইলে পাঠিয়ে দিতে পারবে। পেমেন্ট সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এটা মুলতবি দেখাবে। তা ছাড়া, ট্রাফিক সিগন্যাল যদি Automated করা যায়, তখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যানজট শনাক্ত করে তদনুসারে ট্রাফিক সিগন্যাল স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে। ফলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বা ট্রাফিক সিগন্যালে যানবাহনের জট অনেকাংশে কমে যাবে। কারণ পুরো ট্রাফিক-ব্যবস্থা তখন ডিজিটাল ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে।
পুলিশিং ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের বড় সুবিধা হলো প্রেডিক্টিভ অ্যানালাইসিস। সুবিস্তর তথ্যভান্ডারের স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনার মাধ্যমে এআই অ্যালগোরিদম এমন কিছু ঘটনা ও অপরাধের লক্ষণ শনাক্ত করতে সক্ষম, যা মানুষের পর্যালোচনাশক্তি দ্বারা অসম্ভব। এই পূর্ব শনাক্তকরণ সক্ষমতা পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই অপরাধ দমনে সাহায্য করবে। এই ক্ষেত্রে এআই অপরাধীর আচরণ বিশ্লেষণ করে অপরাধপ্রবণ অঞ্চল, অপরাধের ধরন ও মাত্রা অনুযায়ী রিসোর্স মোবিলাইজেশন ও প্রো-অ্যাকটিভ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্রিমিনাল ট্র্যাক ডেটা, মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য ব্যবহার করে থাকে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সমাজের ৩০-৪০ শতাংশ অপরাধ কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে জরুরি সময়ে সেবাপ্রত্যাশীর ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় ২৫-৩০ শতাংশ কমিয়ে আনে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মুখমণ্ডল শনাক্তকরণ (ফেইস রিকগনিশন) প্রযুক্তি সন্দেহভাজন অপরাধীকে চিহ্নিত ও তার গতিবিধি লক্ষ করতে সক্ষম। একই সঙ্গে এই প্রযুক্তি নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান, আত্মগোপনে থাকা অপরাধীকে খুঁজে বের করা এবং জনসমাগমে মানুষের নিরাপত্তায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অর্লিপ্স শহরের পুলিশ অপরাধী, গাড়ি ও স্থান শনাক্ত করতে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার করে। রাশিয়া ও চায়নাতেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত।
স্মার্ট বাংলাদেশের পাশাপাশি স্মার্ট সিটির বিষয়টিও এখন বহুল আলোচিত হয়ে উঠেছে। স্মার্ট সিটি নাগরিকদের দ্রুত সেবা প্রদান যেমন নিশ্চিত করবে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করবে। স্মার্ট সিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত স্মার্ট পুলিশিং অপরাধী শনাক্ত-চিহ্নিতকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। অপরাধের ঘটনাস্থল ও অপরাধী দ্রুত শনাক্ত করা যাবে। পৃথিবীর উন্নত দেশের শহরগুলোতে সিসিটিভি বসিয়ে নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়। সন্দিগ্ধ বা কোনো অপরাধী অথবা অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে ইন্টেলিজেন্ট ক্যামেরার সাহায্যে সহজেই শনাক্ত করতে পারে। আর এর পেছনে কাজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অটোমেটেড সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন। ২৪/৭ মনিটরিংয়ের ফলে অপরাধীদের নির্বিঘ্ন চলাচল অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং অপরাধ সংঘটনের মাত্রা কমে যায়। এই নিরবচ্ছিন্ন মনিটরিং ব্যবস্থায় একটা প্রতিরোধমূলক প্রভাব থাকে। অপরাধী যখন জানে যে অপরাধ করে পার পাবে না, তখন এমনিতেই অপরাধের হার কমে যায়।
নিরাপদ ও উন্নত শহর বাস্তবায়নে স্মার্ট পুলিশিংয়ের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয়, গতিশীল, নির্ভুল, নিরাপদ ও জনবান্ধব করার লক্ষ্যে বিশ্ব্যব্যাপী নানান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। দি এআই গ্লোবাল সার্ভিল্যান্সের (এআইজিএস) ২০১৯-এর তথ্যমতে ৫৬টি দেশ ইতিমধ্যে নিরাপদ শহর গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্নভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু করেছে। এআই প্রযুক্তির সাহায্যে শহরের রাস্তায় চলমান সব গাড়ির তথ্য সংগ্রহ, ট্রাফিক ফ্লো সিমুলেশন, যানজটের পরিমাণ ও রুট ট্র্যাকিং পর্যালোচনার মাধ্যমে একটি স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব, যার ফলে জনসাধারণের যানজটের ভোগান্তি হ্রাস এবং সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলাচল, ফিটনেসবিহীন গাড়ি শনাক্তকরণ, যত্রতত্র পার্কিং, খেয়ালখুশিমতো রাস্তা পারাপারসহ সব অসংলগ্ন ও আইনবহির্ভূত কার্যক্রম রোধ করা সম্ভব হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে শহরের বাস্তবিক তথ্যের ওপর একটি সুবৃহৎ ডেটা সেট তৈরি করার মাধ্যমে ভবিষ্যমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভার্চুয়াল কার্যক্রম ও নির্ভরতা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। যেহেতু সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি খুবই সংবেদনশীল তুলনামূলক নতুন, তাই এই অপরাধ দমনে, প্রতিকারে ও জনসচেতনতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এআই প্রযুক্তি খুব দ্রুত অসংগতি শনাক্ত করতে এবং ত্বরিত নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করে সম্ভাব্য ক্ষতি প্রতিহত করতে সক্ষম। এই প্রো-অ্যাকটিভ ব্যবস্থাপনা দেশের ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে স্বয়ংক্রিয় পাহারাদার হিসেবে কাজ করে। সাইবার সিকিউরিটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার স্মার্ট পুলিশিং বাস্তবায়নে কাজের ব্যাপকতা ও উপযোগিতায় একে অপরের পরিপূরক।
অধিকন্তু, স্মার্ট পুলিশিং বাস্তবায়নে কাজের ব্যাপকতা ও প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সুষ্ঠু মানবসম্পদ ও সম্পদ বরাদ্দ (রিসোর্স অ্যালোকেশন) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে পেট্রল রুটস অপটিমাইজেশন, লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনা ও মাঠ প্রশাসন ব্যবস্থাপনায় এআই অ্য্যালগোরিদম ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যমুখী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এটি শুধু সেবা প্রদানে গতিশীলতাই আনে না, বরং একই সঙ্গে সেবার মানোন্নয়ন ও জবাবদিহি সুনিশ্চিত করে। ২০১৫ সালের দিকে ৮১ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান কোনো না কোনোভাবে হত্যার শিকার হওয়ার আশঙ্কা করতেন। পরবর্তী সময়ে রিও ডি জেনেরিওর পুলিশ হত্যার ঘটনা ও হুমকি পর্যালোচনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেয় এবং উক্ত অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
আমাদের দেশের বিদ্যমান পুলিশিং ব্যবস্থাপনায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বিশ্বের সব জনবহুল দেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এক অনন্য উদাহরণ স্থাপন করবে। স্বয়ংক্রিয় ও দ্রুত শনাক্তকরণ, সাড়াদান ও প্রতিকারের এই সক্ষমতা সামাজিকভাবে অপরাধ দমন ও বিস্তার রোধে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে ডেটা ড্রিভেন পর্যালোচনার মাধ্যমে এআই প্রদত্ত ভবিষ্যমুখী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামাজিকভাবে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে, যা একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরাপদ সমাজব্যবস্থার দিকে আমাদের নিয়ে যাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ শতভাগ না হলেও বহুলাংশেই ডিজিটাল ও আধুনিক হয়ে উঠেছে। দেশের থানাগুলোকে সংযুক্ত করা হয়েছে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও ডেটাবেইসের আওতায়। অপরাধ তদন্ত, ময়নাতদন্ত, অপরাধী শনাক্তকরণেও ব্যবহৃত হচ্ছে ডিএনএ-ফরেনসিক বিশ্লেষণসহ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। স্বল্প সময়ে অপরাধীরা ধরাও পড়ছে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই পুলিশ বাহিনী। সেই প্রেক্ষাপটে দেশের পুলিশ বাহিনী সর্বদাই আইনের রক্ষকের ভূমিকায় জনবান্ধব হিসেবে অবতীর্ণ হচ্ছে।
মোটকথা, অপরাধ করে পার পাবে না কেউ পুলিশের হাত থেকে, তা সে যে ধরনের অপরাধই হোক না কেন। তবে এসবের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের জন্য থাকতে হবে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বাধিক ব্যবহার, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা, দক্ষ জনবল, স্ট্রাইকিং ফোর্স, অত্যাধুনিক যানবাহন, ট্যাকটিক্যাল বেল্ট, আনুষঙ্গিক সরঞ্জামসহ অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার—এ সবই যুক্ত করতে হবে পুলিশ বাহিনীতে।
স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট পুলিশিং হবে একটি অনিবার্য বাস্তবতা। উৎপাদন, প্রস্তুতকরণ, বিপণন থেকে শুরু করে সেবা প্রদান—সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলবে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে। পরিবর্তিত এই প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে স্মার্ট পুলিশিং হবে একমাত্র নিয়ামক। এই বাস্তবতা সামনে রেখে একটি আধুনিক, দক্ষ, প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট পুলিশ গঠনে বাংলাদেশ পুলিশ এগিয়ে যাচ্ছে। নিয়োগ থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, পদায়ন ও পদোন্নতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিষয়ভিত্তিক দক্ষতার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তদুপরি আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং বাহিনীর সদস্যদের অধিকতর প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট পুলিশ ও স্মার্ট পুলিশিং ব্যবস্থাপনা প্রস্তুতি গ্রহণের এখনই সময়। আমরা সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে। আর সেই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশও হবে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক স্মার্ট পুলিশ।
লেখক: পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
৬ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

স্মার্ট পুলিশিং হলো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক পুলিশিং ব্যবস্থা, যেখানে জ্ঞানবিজ্ঞান ব্যবহৃত হয় অত্যধিক। স্মার্ট পুলিশিংয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমের উপাদানগুলো ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও গবেষণা করা হয়, যা অফিসারদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক। তা ছাড়া নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা হয় অপ
০৩ জুলাই ২০২৪
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

স্মার্ট পুলিশিং হলো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক পুলিশিং ব্যবস্থা, যেখানে জ্ঞানবিজ্ঞান ব্যবহৃত হয় অত্যধিক। স্মার্ট পুলিশিংয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমের উপাদানগুলো ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও গবেষণা করা হয়, যা অফিসারদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক। তা ছাড়া নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা হয় অপ
০৩ জুলাই ২০২৪
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেশোয়েব সাম্য সিদ্দিক

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

স্মার্ট পুলিশিং হলো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক পুলিশিং ব্যবস্থা, যেখানে জ্ঞানবিজ্ঞান ব্যবহৃত হয় অত্যধিক। স্মার্ট পুলিশিংয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমের উপাদানগুলো ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও গবেষণা করা হয়, যা অফিসারদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক। তা ছাড়া নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা হয় অপ
০৩ জুলাই ২০২৪
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
৬ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
৬ ঘণ্টা আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

স্মার্ট পুলিশিং হলো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর একটি আধুনিক পুলিশিং ব্যবস্থা, যেখানে জ্ঞানবিজ্ঞান ব্যবহৃত হয় অত্যধিক। স্মার্ট পুলিশিংয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রমের উপাদানগুলো ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ ও গবেষণা করা হয়, যা অফিসারদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির সহায়ক। তা ছাড়া নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করা হয় অপ
০৩ জুলাই ২০২৪
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
৬ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
৬ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
৬ ঘণ্টা আগে