মো. গোলাম রহমান
তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন থেকে এটিকে কার্যকর করার ব্যাপ্তি আমাদের দেশে প্রায় এক যুগ। এক যুগ পূর্তি হচ্ছে তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠারও। এখন এই আইনের প্রয়োগ এবং প্রশংসা করে ক্ষান্ত হলেই চলবে না। আমাদের হিসাব-নিকাশ করার সময় এসেছে যে আমরা প্রকৃতপক্ষে কী করছি। আয়নায় নিজেদের মুখ দেখার জন্য এক যুগ সময় একেবারে কম না। আমরা শুধু আমাদের কাজকর্মের ফিরিস্তি দিয়ে নিজেদের ব্যস্ত না রেখে, এই আইন প্রয়োগে বাধাবিপত্তি ও অন্তরায়গুলো নিয়ে কথা বলা জরুরি মনে করছি।
বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করার ফলে এবং বাংলাদেশে সংক্রমণ গত বছরের তুলনায় বেড়ে যাওয়ার কারণে সব ধরনের কাজকর্ম সীমিতভাবে চালু থাকে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক সব ধরনের কর্মকাণ্ড হ্রাস পায়। সারা দেশে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি-অফিস-আদালতও বন্ধ থাকে। জরুরি সেবা ব্যতীত সব ধরনের কাজকর্ম এক সময় ছিল প্রায় বন্ধ। স্বাস্থ্যসেবার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়ায়। এই সময় অফিসগুলো বন্ধ থাকায় তথ্যের আদান-প্রদান ছিল না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জানা যায়, সাংবাদিকেরা তথ্যের আবেদন করেও সফল হননি। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা চালু থাকলেও তথ্য সরবরাহের সুযোগ সেভাবে জনগণ কিংবা সাংবাদিক ততখানি গ্রহণ করতে পারেননি।
গত ৮ জুলাই ২০২১-এ সিভিল সার্জন, ঢাকা কর্তৃক জারিকৃত স্মারকে বিষয় লেখা ছিল, ‘ঢাকা জেলাধীন সরকারী হাসপাতালসমূহে রোগীর সেবা সম্পর্কীয় ও স্বাস্থ্য বিষয় কর্মকাণ্ডের উপর কোন প্রকার তথ্য আদান-প্রদান ও মন্তব্য প্রিন্ট মিডিয়াকে না দেওয়া প্রসঙ্গে।’ এবং উল্লেখ ছিল, ‘উপর্যুক্ত বিষয় এবং সূত্রের প্রেক্ষিতে ঢাকা জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিরাজমান কোভিড-১৯ মহামারীকালীন পরিস্থিতিতে সিভিল সার্জন ব্যতীত অন্য কাউকে, টিভি চ্যানেল কিংবা কোন প্রকার প্রিন্ট মিডিয়ার নিকট স্বাস্থ্য কর্মকাণ্ড অথবা রোগ ও রোগীদের সম্পর্কে কোন ধরনের তথ্য আদান-প্রদান বা মন্তব্য না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। একই সাথে প্রিন্ট মিডিয়ার ব্যক্তিবর্গকে রোগীর ছবি তোলা, ভিডিও করা অথবা সাক্ষাৎকার ধারণ করা থেকে বিরত থাকার নিমিত্ত নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর ৪ এবং ৮ ধারা এবং সংশ্লিষ্ট ৯ (৪) ধারা অনুযায়ী, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চাইলে তা প্রদান করার বিধান রয়েছে। রোগীর নাম ও পরিচয় গোপনীয়তার কারণে না দেওয়া যেতে পারে, তবে অনুমতি সাপেক্ষে তা-ও প্রদান করা যায়। সুতরাং ভাবা উচিত যে তথ্য অধিকার আইন এবং এর মৌলিক চেতনা সব সরকারি কর্মকর্তাকে আনুধাবন করতে হবে, তা বিশ্বাস করতে হবে, নইলে স্ববিরোধিতা ঘটতেই থাকবে। নাগরিকের তথ্যের অধিকার অস্বীকৃত থেকে যাবে।
১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সময়ে দেশে তথ্য অধিকার আইনে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলকৃত আবেদনের সংখ্যা ৯ হাজার ৭৯৭টি। দাখিলকৃত ৯ হাজার ৭৯৭টি আবেদনের মধ্যে ৯ হাজার ৩৮৭টির তথ্য আবেদনকারীকে সরবরাহ করা হয়েছে, যা মোট আবেদনের ৯৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। আবেদনকৃত কেইসে তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সংখ্যা ৩৫৩টি, অর্থাৎ ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০১১-২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৫৮টি অভিযোগের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে শাস্তি (ক্ষতিপূরণ/জরিমানা/ বিভাগীয় শাস্তি) প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে মাত্র দুটি অভিযোগের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অর্থ জরিমানা করা হয়েছে।
তথ্য কমিশনে গৃহীত অভিযোগের বছরওয়ারি তুলনামূলক হিসাবে দেখা যায়, কয়েক বছর অভিযোগ শুনানির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়েছিল, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই সংখ্যা আবার কমতে শুরু করেছে। ২০০৯ থেকে ২০১১ সালে অভিযোগ আসে ১০৪টি, শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয় ৪৪, যার শতকরা হার প্রায় ৪২ ভাগ। ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে প্রায় ৪৭, ৫৬ ও ৫৮।
২০১৫ সালে ৩৩৬টি অভিযোগের ২৪০টি শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়, যার শতকরা হার ৭১.৪৩। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ৬৭.৫৩ আর অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৫৩৯, শুনানির জন্য গৃহীত ৩৬৪। ২০১৭ সালে এই হার ছিল ৭৬.০৪ এবং অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৫৩০, শুনানির জন্য গৃহীত ৪০৩। ২০১৮-তে ৫৯.৮৪; ২০১৯-এ ৪৫.৫৫ এবং ২০২০-এ ৫৪.৮২। শেষ তিন বছর যথাক্রমে অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৭৩২, ৬৩০ ও ২৯০। অভিযোগকারীদের মধ্যে শুনানির পর গৃহীত সিদ্ধান্ত নিয়ে কতিপয়ের মধ্যে অসন্তোষ বিদ্যমান বলে জানা যায়। এই সংক্ষুব্ধদের কেউ কেউ ঊর্ধ্বতন আদালতে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তথ্য অধিকার আইনের ২৯ ধারায় রয়েছে, ‘২৯।
মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। এই আইনের অধীন কৃত বা কৃত বলিয়া গণ্য কোন কার্য, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে, এই আইনে উল্লিখিত আপীল কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল বা ক্ষেত্রমত, তথ্য কমিশনের নিকট অভিযোগ দায়ের ব্যতীত, কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা
যাইবে না।’
২০২০ সাল করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা অভিযোগ কম দায়ের হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ, তা সহজেই অনুমান করা যায়। ২০২০ সালে অভিযোগকারীদের মধ্যে পেশাগতভাবে প্রায় ২২ ভাগ ছিলেন সাংবাদিক।
তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হচ্ছে: দেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য সরবরাহের জন্য ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে; অধিকাংশ জেলায় তথ্য বাতায়নে তথ্য অধিকার আইন সন্নিবেশিত হয়েছে; ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি স্ব-উদ্যোগে প্রকাশ করা হয়েছে; তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের জন্য বিভাগ পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে ‘তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে অবেক্ষণ (সুপারভিশন) ও পরিবীক্ষণ বিভাগীয় কমিটি’, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ‘তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে অবেক্ষণ (সুপারভিশন) ও পরিবীক্ষণ জেলা কমিটি’ এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ‘তথ্য অধিকার বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ উপজেলা কমিটি’ গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২২ মে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে; যদিও এই কর্মকাণ্ডগুলো আশানুরূপ প্রতিপালিত হচ্ছে না। সম্প্রতি অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম সম্পর্কে জন-অবহিতকরণ করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের ৬ মার্চ অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু হয়। ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু থাকলে তথ্যের জন্য করা আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানার সুযোগ সৃষ্টি নিশ্চিত হবে। ট্র্যাকিং সিস্টেম কতটা কার্যকর হচ্ছে, সেটা পর্যালোচনা করার প্রয়োজন আছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অন্যতম নির্দেশক ১৬.১০.২ এ ক্ষমতায়নে তথ্য অধিকারকে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এটাকে নিশ্চিত করার জন্য ইউনেসকো প্রতিবেদনের সুপারিশমালায় বলা হয় যে সরকার এই আইন প্রয়োগে তদারকি ও এসডিজি মনিটরিংয়ের জন্য তথ্য কমিশনকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিয়োজিত করতে পারে। এ ছাড়া ইউনেসকো তথ্য অধিকারে জনগণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ১৬.১০.২ নিরূপণে ও পর্যবেক্ষণে মানসম্পন্ন হাতিয়ার হিসেবে আইন প্রণয়ন এবং কার্যকরণে গুরুত্ব আরোপ করেছে। এ ক্ষেত্রে ইউনেসকো সরকারি ও সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোকে উচ্চমানসম্পন্ন, সময়োপযোগী, বিশ্বাসযোগ্য তথ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়ে থাকে বলে উল্লেখ করেছে।
আমরা জানি, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক ও বাক্স্বাধীনতার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হলে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পায়, দুর্নীতি হ্রাস পায় এবং সুশাসন স্থায়ী হয়। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর কার্যকারিতার কারণে তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য গোপন করতে বা তার সহজলভ্যতাকে সংকুচিত করতে পারার কথা নয়। তথ্য অধিকার চর্চা বেগবান করার লক্ষ্যে সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতা এবং পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে কার্যক্রম হাতে নেওয়া এখন সময়ের দাবি। দেশের ১৭ কোটি মানুষের দেশে তথ্যের জন্য বছরে মাত্র আট-দশ হাজার আবেদনপত্র একান্তই নগণ্য। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে তথ্য অধিকার আদায়ের কাজে সক্রিয় থাকতে হবে। তথ্যের চাহিদা বৃদ্ধি বজায় রাখতে পারলে সামগ্রিকভাবে সুশাসন ত্বরান্বিত হবে—এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিকা ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার
তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন থেকে এটিকে কার্যকর করার ব্যাপ্তি আমাদের দেশে প্রায় এক যুগ। এক যুগ পূর্তি হচ্ছে তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠারও। এখন এই আইনের প্রয়োগ এবং প্রশংসা করে ক্ষান্ত হলেই চলবে না। আমাদের হিসাব-নিকাশ করার সময় এসেছে যে আমরা প্রকৃতপক্ষে কী করছি। আয়নায় নিজেদের মুখ দেখার জন্য এক যুগ সময় একেবারে কম না। আমরা শুধু আমাদের কাজকর্মের ফিরিস্তি দিয়ে নিজেদের ব্যস্ত না রেখে, এই আইন প্রয়োগে বাধাবিপত্তি ও অন্তরায়গুলো নিয়ে কথা বলা জরুরি মনে করছি।
বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করার ফলে এবং বাংলাদেশে সংক্রমণ গত বছরের তুলনায় বেড়ে যাওয়ার কারণে সব ধরনের কাজকর্ম সীমিতভাবে চালু থাকে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক সব ধরনের কর্মকাণ্ড হ্রাস পায়। সারা দেশে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি-অফিস-আদালতও বন্ধ থাকে। জরুরি সেবা ব্যতীত সব ধরনের কাজকর্ম এক সময় ছিল প্রায় বন্ধ। স্বাস্থ্যসেবার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়ায়। এই সময় অফিসগুলো বন্ধ থাকায় তথ্যের আদান-প্রদান ছিল না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জানা যায়, সাংবাদিকেরা তথ্যের আবেদন করেও সফল হননি। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা চালু থাকলেও তথ্য সরবরাহের সুযোগ সেভাবে জনগণ কিংবা সাংবাদিক ততখানি গ্রহণ করতে পারেননি।
গত ৮ জুলাই ২০২১-এ সিভিল সার্জন, ঢাকা কর্তৃক জারিকৃত স্মারকে বিষয় লেখা ছিল, ‘ঢাকা জেলাধীন সরকারী হাসপাতালসমূহে রোগীর সেবা সম্পর্কীয় ও স্বাস্থ্য বিষয় কর্মকাণ্ডের উপর কোন প্রকার তথ্য আদান-প্রদান ও মন্তব্য প্রিন্ট মিডিয়াকে না দেওয়া প্রসঙ্গে।’ এবং উল্লেখ ছিল, ‘উপর্যুক্ত বিষয় এবং সূত্রের প্রেক্ষিতে ঢাকা জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিরাজমান কোভিড-১৯ মহামারীকালীন পরিস্থিতিতে সিভিল সার্জন ব্যতীত অন্য কাউকে, টিভি চ্যানেল কিংবা কোন প্রকার প্রিন্ট মিডিয়ার নিকট স্বাস্থ্য কর্মকাণ্ড অথবা রোগ ও রোগীদের সম্পর্কে কোন ধরনের তথ্য আদান-প্রদান বা মন্তব্য না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। একই সাথে প্রিন্ট মিডিয়ার ব্যক্তিবর্গকে রোগীর ছবি তোলা, ভিডিও করা অথবা সাক্ষাৎকার ধারণ করা থেকে বিরত থাকার নিমিত্ত নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর ৪ এবং ৮ ধারা এবং সংশ্লিষ্ট ৯ (৪) ধারা অনুযায়ী, যেকোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চাইলে তা প্রদান করার বিধান রয়েছে। রোগীর নাম ও পরিচয় গোপনীয়তার কারণে না দেওয়া যেতে পারে, তবে অনুমতি সাপেক্ষে তা-ও প্রদান করা যায়। সুতরাং ভাবা উচিত যে তথ্য অধিকার আইন এবং এর মৌলিক চেতনা সব সরকারি কর্মকর্তাকে আনুধাবন করতে হবে, তা বিশ্বাস করতে হবে, নইলে স্ববিরোধিতা ঘটতেই থাকবে। নাগরিকের তথ্যের অধিকার অস্বীকৃত থেকে যাবে।
১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সময়ে দেশে তথ্য অধিকার আইনে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিলকৃত আবেদনের সংখ্যা ৯ হাজার ৭৯৭টি। দাখিলকৃত ৯ হাজার ৭৯৭টি আবেদনের মধ্যে ৯ হাজার ৩৮৭টির তথ্য আবেদনকারীকে সরবরাহ করা হয়েছে, যা মোট আবেদনের ৯৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। আবেদনকৃত কেইসে তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সংখ্যা ৩৫৩টি, অর্থাৎ ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০১১-২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৫৮টি অভিযোগের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে শাস্তি (ক্ষতিপূরণ/জরিমানা/ বিভাগীয় শাস্তি) প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে মাত্র দুটি অভিযোগের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অর্থ জরিমানা করা হয়েছে।
তথ্য কমিশনে গৃহীত অভিযোগের বছরওয়ারি তুলনামূলক হিসাবে দেখা যায়, কয়েক বছর অভিযোগ শুনানির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেড়েছিল, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই সংখ্যা আবার কমতে শুরু করেছে। ২০০৯ থেকে ২০১১ সালে অভিযোগ আসে ১০৪টি, শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয় ৪৪, যার শতকরা হার প্রায় ৪২ ভাগ। ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে প্রায় ৪৭, ৫৬ ও ৫৮।
২০১৫ সালে ৩৩৬টি অভিযোগের ২৪০টি শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়, যার শতকরা হার ৭১.৪৩। ২০১৬ সালে এই হার ছিল ৬৭.৫৩ আর অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৫৩৯, শুনানির জন্য গৃহীত ৩৬৪। ২০১৭ সালে এই হার ছিল ৭৬.০৪ এবং অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৫৩০, শুনানির জন্য গৃহীত ৪০৩। ২০১৮-তে ৫৯.৮৪; ২০১৯-এ ৪৫.৫৫ এবং ২০২০-এ ৫৪.৮২। শেষ তিন বছর যথাক্রমে অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৭৩২, ৬৩০ ও ২৯০। অভিযোগকারীদের মধ্যে শুনানির পর গৃহীত সিদ্ধান্ত নিয়ে কতিপয়ের মধ্যে অসন্তোষ বিদ্যমান বলে জানা যায়। এই সংক্ষুব্ধদের কেউ কেউ ঊর্ধ্বতন আদালতে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তথ্য অধিকার আইনের ২৯ ধারায় রয়েছে, ‘২৯।
মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। এই আইনের অধীন কৃত বা কৃত বলিয়া গণ্য কোন কার্য, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে, এই আইনে উল্লিখিত আপীল কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল বা ক্ষেত্রমত, তথ্য কমিশনের নিকট অভিযোগ দায়ের ব্যতীত, কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা
যাইবে না।’
২০২০ সাল করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা অভিযোগ কম দায়ের হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ, তা সহজেই অনুমান করা যায়। ২০২০ সালে অভিযোগকারীদের মধ্যে পেশাগতভাবে প্রায় ২২ ভাগ ছিলেন সাংবাদিক।
তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমগুলো হচ্ছে: দেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য সরবরাহের জন্য ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে; অধিকাংশ জেলায় তথ্য বাতায়নে তথ্য অধিকার আইন সন্নিবেশিত হয়েছে; ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি স্ব-উদ্যোগে প্রকাশ করা হয়েছে; তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের জন্য বিভাগ পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে ‘তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে অবেক্ষণ (সুপারভিশন) ও পরিবীক্ষণ বিভাগীয় কমিটি’, জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ‘তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে অবেক্ষণ (সুপারভিশন) ও পরিবীক্ষণ জেলা কমিটি’ এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ‘তথ্য অধিকার বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ উপজেলা কমিটি’ গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২২ মে ২০১৮ সালে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে; যদিও এই কর্মকাণ্ডগুলো আশানুরূপ প্রতিপালিত হচ্ছে না। সম্প্রতি অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম সম্পর্কে জন-অবহিতকরণ করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের ৬ মার্চ অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু হয়। ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু থাকলে তথ্যের জন্য করা আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানার সুযোগ সৃষ্টি নিশ্চিত হবে। ট্র্যাকিং সিস্টেম কতটা কার্যকর হচ্ছে, সেটা পর্যালোচনা করার প্রয়োজন আছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অন্যতম নির্দেশক ১৬.১০.২ এ ক্ষমতায়নে তথ্য অধিকারকে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এটাকে নিশ্চিত করার জন্য ইউনেসকো প্রতিবেদনের সুপারিশমালায় বলা হয় যে সরকার এই আইন প্রয়োগে তদারকি ও এসডিজি মনিটরিংয়ের জন্য তথ্য কমিশনকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিয়োজিত করতে পারে। এ ছাড়া ইউনেসকো তথ্য অধিকারে জনগণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ১৬.১০.২ নিরূপণে ও পর্যবেক্ষণে মানসম্পন্ন হাতিয়ার হিসেবে আইন প্রণয়ন এবং কার্যকরণে গুরুত্ব আরোপ করেছে। এ ক্ষেত্রে ইউনেসকো সরকারি ও সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোকে উচ্চমানসম্পন্ন, সময়োপযোগী, বিশ্বাসযোগ্য তথ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সহায়তা দিয়ে থাকে বলে উল্লেখ করেছে।
আমরা জানি, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক ও বাক্স্বাধীনতার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হলে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারি ও বিদেশি অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারি সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পায়, দুর্নীতি হ্রাস পায় এবং সুশাসন স্থায়ী হয়। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯-এর কার্যকারিতার কারণে তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য গোপন করতে বা তার সহজলভ্যতাকে সংকুচিত করতে পারার কথা নয়। তথ্য অধিকার চর্চা বেগবান করার লক্ষ্যে সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতা এবং পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে কার্যক্রম হাতে নেওয়া এখন সময়ের দাবি। দেশের ১৭ কোটি মানুষের দেশে তথ্যের জন্য বছরে মাত্র আট-দশ হাজার আবেদনপত্র একান্তই নগণ্য। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে তথ্য অধিকার আদায়ের কাজে সক্রিয় থাকতে হবে। তথ্যের চাহিদা বৃদ্ধি বজায় রাখতে পারলে সামগ্রিকভাবে সুশাসন ত্বরান্বিত হবে—এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
লেখক: সম্পাদক, আজকের পত্রিকা ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি পারবে না, তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে কি হবে না—এ নিয়ে গরম এখন রাজনীতির মাঠ। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক হিসেবে দাবিদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি তো আরও একধাপ বেশি। আওয়ামী লীগকে কেবল নির্বাচনের বাইরে রাখাই নয়, দাবি তাদের দেশের প্রাচী
৭ ঘণ্টা আগেহুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওনের ছেলে নিষাদ হুমায়ূনের একটা ভাইরাল ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। বেশ মজা পেলাম। সত্যি বললে মজার চেয়েও ছোট্ট বাচ্চার কথায় ভাবনার উদ্রেক হলো। চিন্তার দুয়ার উন্মুক্ত হলো।
৭ ঘণ্টা আগেপরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সার্কুলার অর্থনীতি বা বৃত্তাকার অর্থনীতি এক নবদিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বাংলাদেশে স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সার্কুলার অর্থনীতির বিকল্প নেই।
৭ ঘণ্টা আগেবগুড়ার শিবগঞ্জে ৪২০ টাকা কেজি দরে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে। আজকের পত্রিকায় খবরটি দেখা গেছে ১৮ নভেম্বর। এই দামে বেচাকেনাও হচ্ছে। ক্রেতারাও নাকি এই দামে আলু কিনতে পেরে সন্তুষ্ট!
৮ ঘণ্টা আগে