জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা
দুনিয়ার শাসকেরা এখন অনেক চালাক, তারা ন্যায্যমূল্যের খোলাবাজারে লাফিং গ্যাস বেচে। বোকা জনতা হাসতে হাসতে বুকে খিল লেগে মরে যায়! পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দেখানো হয় হার্ট অ্যাটাক অথবা আত্মহত্যা। বৃহৎ পরিসংখ্যান বড়জোর বিবেকের তাড়না অথবা অসন্তোষের শঙ্কা জাগায়, তাই বণ্টিত হয় কাগজে ছাপা আনুষ্ঠানিক শোক। বহু হম্বিতম্বির পর শেষ বিচারে দেখা যায় ‘কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়’!
ওদিকে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমিতে রক্তের বন্যায় প্রমোদতরি ভাসিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের ধ্বজা উড়িয়ে চলেছে এক সম্প্রদায়। ত্রাণের জন্য হাত বাড়ানো বুভুক্ষু শিশুর বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছে বোমার শার্পনেল অথবা আকাশ থেকে ছুটে আসা বুলেট। অপরাধবোধ আত্মাহুতির উসকানি দিচ্ছে অ্যারন বুশনেলদের। দেশে দেশে বিক্ষোভ। শাসকদের বিরুদ্ধে বিরক্তি উৎপাদন করে চলেছে বেয়াড়া তরুণেরা।
এর মধ্যেই বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করছে ইরাস ট্যুর। লাইভ কনসার্টে ভক্তদের উল্লাসে ভূমি কাঁপছে। রাতারাতি বিলিয়নিয়ার বনে যাচ্ছে কোনো আধুনিক বাইজি। কোটি কোটি অভুক্তের দেশে-বিদেশি বাইজি এনে প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠানে নাচানো হচ্ছে, সেই সঙ্গে কয়েক হাজার পদে রসনা বিলাস। পত্রিকার পাতাজুড়ে রঙিন ছবি। কারা এল, কারা নাচল—সেসবের আদ্যোপান্ত নিয়ে ব্যস্ত মিডিয়াগুলো।
আর দেশে, মর্গে লাশ রেখে লাইভ কনসার্টে চলছে উদ্দাম, উল্লাস। ডলারসংকটে আমদানি সংকোচনের সময়ে বিদেশি শিল্পী এনে চলছে কনসার্ট। জনপ্রিয় দেশীয় ব্যান্ড মাতাচ্ছে বন্দরনগরী। মিরপুরের মাঠ কাঁপাচ্ছে ভাড়াটে খেলোয়াড়েরা। টেলিভিশন আর মোবাইল স্ক্রিনে মুখ গুঁজে ভেতরে-ভেতরে আনন্দ আর উত্তেজনায় কাঁপছে দুনিয়ার তাবৎ বিষয়ে অনাগ্রহী ক্রীড়ামোদীরা।
আরেক দিকে লেগে গেছে দুই গোষ্ঠীর কাইজ্যা। ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তড়পাতে তড়পাতে মরে যাওয়া তরুণীর লাশ পড়ে আছে মর্গে। কাদের বিশ্বাস জিতবে সেই কাইজ্যার মধ্যে হিমঘরে মুখ গুঁজে আরও কিছুদিন তাঁকে দেখে যেতে হবে তাঁর জীবদ্দশায় দেখে যাওয়া দমবন্ধ পৃথিবী। যে মেয়েটি হয়তো কোনো এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে পালাতে চেয়েছিলেন। দিগ্ভ্রান্ত হয়ে নূপুর ভেবে পায়ে পরেছিল আরেক শিকল।
আসলে তার লাশের দায়িত্ব দুই গোষ্ঠীর কেউ-ই নিতে রাজি নয়। আসলে তারা জিততে চায়। ওদিকে সন্তানের অকাল মৃত্যুতে মায়ের বুক ফেটে যায়! শেষবার তাজা মুখটাও আর দেখার সাধ মিটবে না তাঁর।
এই মৃত্যুর দায় কার? এ নিয়ে চলছে অনেক জ্ঞানগর্ভ স্ট্যাটাস প্রসবের প্রতিযোগিতা। ফুড ভ্লগারদের রেস্টুরেন্টের ফায়ার সেফটি নিয়েও কথা বলা উচিত কি না, এ নিয়ে চলছে তুমুল তরজা। মাঝখান থেকে ‘কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়’ গোছের একটা পরিণতির দিকেই এগোচ্ছে আয়োজন।
যেমন, টেলর সুইফটের এশিয়া ট্যুর নিয়ে লেগে গেছে সিঙ্গাপুর আর ফিলিপাইন। ইরোটিক ইরাস ট্যুরের রাজস্ব সম্ভাবনা কেউ হাতছাড়া করতে চায় না।
সব দেশেই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। বাড়ছে বিনোদন ব্যবসা। সোশ্যাল মিডিয়াতে মনোরঞ্জন বাণিজ্য এখন রমরমা। লোক হাসিয়ে মাসে এক হাজার ডলার কামানো ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ে সম্মেলন করেন এ দেশের এমপি-মন্ত্রীরা। সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রিটি থেকে হওয়া যায় জনপ্রতিনিধি। ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে ঘাম ছুটে যায়, কিন্তু বিদেশি শিল্পীদের আনাগোনা থামে না। বিপ্লবী ব্যান্ড দলগুলো সেই মওকা লুফে নেয়, বহুদিন কনসার্টের খরায় থাকা পারফরমাররা খেপ মারার লোভ সামলাতে পারে না।
এই উন্মাতাল আনন্দ আয়োজন আর সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে জাহির করা, জ্ঞানী প্রমাণের প্রতিযোগিতা—এই প্রবণতা আমাদের কখনো বাস্তব প্রয়োজনের ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ করতে দেবে না। সেই সঙ্গে ব্যর্থ বিপ্লবীদের পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের (রাজনৈতিক শুদ্ধতা) বয়ান তত্ত্বের ফাঁদে বুদ্ধিবৃত্তিক বিলাসিতার লোভ দেখায়। এই বহুমাত্রিক নিয়ন্ত্রণের যুগে এমন চর্চা ও প্রবণতায় যারপরনাই খুশি দণ্ডধারীরা।
শুধু ঘরে-বাইরে, রাস্তার মোড়ে, হাতের মুঠোয় ঠাসা ডিভাইসে ঘাপটি মেরে থাকা নীল ক্যামেরার চোখ দিয়ে আর হচ্ছে না; ‘প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’ আপ্তবাক্য শুনিয়ে শ্রেণি বৈষম্যের ন্যায্যতা বিধান আর নিয়ন্ত্রণের মানসে অবাধ আনন্দের আয়োজন- এই কৌশল বেশ রপ্ত করেছেন তাঁরা। দুনিয়াজুড়ে শাসক মহলে অরওয়েল আর হাক্সলি দুটোই বেশ ভালো চর্চা হচ্ছে, শুধু বইমেলাতে পাঠকের হাহাকার!
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
দুনিয়ার শাসকেরা এখন অনেক চালাক, তারা ন্যায্যমূল্যের খোলাবাজারে লাফিং গ্যাস বেচে। বোকা জনতা হাসতে হাসতে বুকে খিল লেগে মরে যায়! পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দেখানো হয় হার্ট অ্যাটাক অথবা আত্মহত্যা। বৃহৎ পরিসংখ্যান বড়জোর বিবেকের তাড়না অথবা অসন্তোষের শঙ্কা জাগায়, তাই বণ্টিত হয় কাগজে ছাপা আনুষ্ঠানিক শোক। বহু হম্বিতম্বির পর শেষ বিচারে দেখা যায় ‘কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়’!
ওদিকে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমিতে রক্তের বন্যায় প্রমোদতরি ভাসিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্রের ধ্বজা উড়িয়ে চলেছে এক সম্প্রদায়। ত্রাণের জন্য হাত বাড়ানো বুভুক্ষু শিশুর বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছে বোমার শার্পনেল অথবা আকাশ থেকে ছুটে আসা বুলেট। অপরাধবোধ আত্মাহুতির উসকানি দিচ্ছে অ্যারন বুশনেলদের। দেশে দেশে বিক্ষোভ। শাসকদের বিরুদ্ধে বিরক্তি উৎপাদন করে চলেছে বেয়াড়া তরুণেরা।
এর মধ্যেই বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করছে ইরাস ট্যুর। লাইভ কনসার্টে ভক্তদের উল্লাসে ভূমি কাঁপছে। রাতারাতি বিলিয়নিয়ার বনে যাচ্ছে কোনো আধুনিক বাইজি। কোটি কোটি অভুক্তের দেশে-বিদেশি বাইজি এনে প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠানে নাচানো হচ্ছে, সেই সঙ্গে কয়েক হাজার পদে রসনা বিলাস। পত্রিকার পাতাজুড়ে রঙিন ছবি। কারা এল, কারা নাচল—সেসবের আদ্যোপান্ত নিয়ে ব্যস্ত মিডিয়াগুলো।
আর দেশে, মর্গে লাশ রেখে লাইভ কনসার্টে চলছে উদ্দাম, উল্লাস। ডলারসংকটে আমদানি সংকোচনের সময়ে বিদেশি শিল্পী এনে চলছে কনসার্ট। জনপ্রিয় দেশীয় ব্যান্ড মাতাচ্ছে বন্দরনগরী। মিরপুরের মাঠ কাঁপাচ্ছে ভাড়াটে খেলোয়াড়েরা। টেলিভিশন আর মোবাইল স্ক্রিনে মুখ গুঁজে ভেতরে-ভেতরে আনন্দ আর উত্তেজনায় কাঁপছে দুনিয়ার তাবৎ বিষয়ে অনাগ্রহী ক্রীড়ামোদীরা।
আরেক দিকে লেগে গেছে দুই গোষ্ঠীর কাইজ্যা। ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তড়পাতে তড়পাতে মরে যাওয়া তরুণীর লাশ পড়ে আছে মর্গে। কাদের বিশ্বাস জিতবে সেই কাইজ্যার মধ্যে হিমঘরে মুখ গুঁজে আরও কিছুদিন তাঁকে দেখে যেতে হবে তাঁর জীবদ্দশায় দেখে যাওয়া দমবন্ধ পৃথিবী। যে মেয়েটি হয়তো কোনো এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে পালাতে চেয়েছিলেন। দিগ্ভ্রান্ত হয়ে নূপুর ভেবে পায়ে পরেছিল আরেক শিকল।
আসলে তার লাশের দায়িত্ব দুই গোষ্ঠীর কেউ-ই নিতে রাজি নয়। আসলে তারা জিততে চায়। ওদিকে সন্তানের অকাল মৃত্যুতে মায়ের বুক ফেটে যায়! শেষবার তাজা মুখটাও আর দেখার সাধ মিটবে না তাঁর।
এই মৃত্যুর দায় কার? এ নিয়ে চলছে অনেক জ্ঞানগর্ভ স্ট্যাটাস প্রসবের প্রতিযোগিতা। ফুড ভ্লগারদের রেস্টুরেন্টের ফায়ার সেফটি নিয়েও কথা বলা উচিত কি না, এ নিয়ে চলছে তুমুল তরজা। মাঝখান থেকে ‘কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়’ গোছের একটা পরিণতির দিকেই এগোচ্ছে আয়োজন।
যেমন, টেলর সুইফটের এশিয়া ট্যুর নিয়ে লেগে গেছে সিঙ্গাপুর আর ফিলিপাইন। ইরোটিক ইরাস ট্যুরের রাজস্ব সম্ভাবনা কেউ হাতছাড়া করতে চায় না।
সব দেশেই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। বাড়ছে বিনোদন ব্যবসা। সোশ্যাল মিডিয়াতে মনোরঞ্জন বাণিজ্য এখন রমরমা। লোক হাসিয়ে মাসে এক হাজার ডলার কামানো ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ে সম্মেলন করেন এ দেশের এমপি-মন্ত্রীরা। সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রিটি থেকে হওয়া যায় জনপ্রতিনিধি। ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে ঘাম ছুটে যায়, কিন্তু বিদেশি শিল্পীদের আনাগোনা থামে না। বিপ্লবী ব্যান্ড দলগুলো সেই মওকা লুফে নেয়, বহুদিন কনসার্টের খরায় থাকা পারফরমাররা খেপ মারার লোভ সামলাতে পারে না।
এই উন্মাতাল আনন্দ আয়োজন আর সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে জাহির করা, জ্ঞানী প্রমাণের প্রতিযোগিতা—এই প্রবণতা আমাদের কখনো বাস্তব প্রয়োজনের ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ করতে দেবে না। সেই সঙ্গে ব্যর্থ বিপ্লবীদের পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের (রাজনৈতিক শুদ্ধতা) বয়ান তত্ত্বের ফাঁদে বুদ্ধিবৃত্তিক বিলাসিতার লোভ দেখায়। এই বহুমাত্রিক নিয়ন্ত্রণের যুগে এমন চর্চা ও প্রবণতায় যারপরনাই খুশি দণ্ডধারীরা।
শুধু ঘরে-বাইরে, রাস্তার মোড়ে, হাতের মুঠোয় ঠাসা ডিভাইসে ঘাপটি মেরে থাকা নীল ক্যামেরার চোখ দিয়ে আর হচ্ছে না; ‘প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’ আপ্তবাক্য শুনিয়ে শ্রেণি বৈষম্যের ন্যায্যতা বিধান আর নিয়ন্ত্রণের মানসে অবাধ আনন্দের আয়োজন- এই কৌশল বেশ রপ্ত করেছেন তাঁরা। দুনিয়াজুড়ে শাসক মহলে অরওয়েল আর হাক্সলি দুটোই বেশ ভালো চর্চা হচ্ছে, শুধু বইমেলাতে পাঠকের হাহাকার!
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে!’ এটি একটি প্রবাদ বাক্য। আমরা অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বোঝাতে গিয়ে প্রবাদ বাক্য ব্যবহার করে থাকি। যে বাক্য বা উক্তি সংক্ষিপ্ত আকারে এবং রূপক আকারে বিশেষ অর্থ বহন করে, যার মাঝে কোনো বাস্তব সত্য নিহিত রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে লোকের মুখে মুখে চলে আসছে, তাকেই আমরা প্রবাদ...
১৬ ঘণ্টা আগেটানাপোড়েন যে একটা সৃষ্টি হবে, সে ইঙ্গিত শুরু থেকেই ছিল। সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিকতায় এখন তা স্পষ্টতর হয়েছে। মূল প্রতিপাদ্য একটাই। সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচন, নাকি জাতীয় নির্বাচনের পরে সংস্কার? যদি সংস্কার করে নির্বাচন হয়, তাহলে সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য সব সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার পরে নির্বাচন...
১৬ ঘণ্টা আগেবার্ধক্য হলো ষাটোর্ধ্ব জীবন। সারকোপেনিয়া হলো একধরনের পেশি ক্ষয় যা সাধারণত বার্ধক্যে ঘটে। সারকোপেনিয়া সাধারণত বয়স্ক বা পরিশ্রম না করে বসে থাকা জনগণ এবং রোগীদের প্রভাবিত করে, যাদের অন্যান্য অসুস্থতা রয়েছে। এটা মানব দেহের পেশির সিস্টেমকে প্রভাবিত করে বা শারীরিক কার্যকলাপকে ব্যাহত করে।
১৬ ঘণ্টা আগেদেশজুড়ে এখন সবচেয়ে মুখরোচক আলোচনা হচ্ছে নির্বাচন ঘিরে। কেউ চাইছে নির্বাচন হোক সংস্কারের পর, কেউ চাইছে এ বছরের মাঝামাঝি। কেউ বলছে আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ নির্বাচন হবে। অভিজ্ঞ মহল বলছে, সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া, নির্বাচন হওয়ার পরও তা চলতে থাকবে। সুতরাং সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন আটকে রাখা...
১৬ ঘণ্টা আগে