
‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন এক দশকের বেশি সময় ধরে। দলীয় ফোরামে সংস্কার ও একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে পর্যালোচনার দাবি তুললে তাঁকে ২০১৯ সালে জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তাঁর নেতৃত্বে এবি পার্টি গঠিত হয়। জামায়াত থেকে বেরিয়ে এসে নতুন দল গঠন, সংস্কার ও রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

আপনি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন প্রায় ১৪ বছর। কেন জামায়াতের রাজনীতি ত্যাগ করলেন?
প্রথমত, আমি জামায়াত ত্যাগ করিনি। ২০১৯ সালে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। জামায়াত আমাকে বহিষ্কার করায় আমি আর সেই দলে ফিরে যাইনি। জামায়াতের একটা নিয়ম হচ্ছে, কারও যদি সদস্যপদ বাতিল করা হয়, তাহলে তাঁর সদস্যপদ গ্রহণের সুযোগ আছে। কেউ যদি ভুল-ত্রুটির জন্য মাফ চেয়ে ফিরে যেতে চান, তাহলে জামায়াত তাঁকে গ্রহণ করে থাকে।
কী কারণে আপনাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল?
যে কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে আমি আর দ্বিতীয়বার তাঁদের সঙ্গে কথা বলিনি। কারণ, আমাকে যে অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সেটা হলো আমি জামায়াতের মধ্যে সংস্কার ও পরিবর্তনের কিছু বিষয়ে আলোচনা তুলেছিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল বিষয়টি নিয়ে পার্টি ফোরামে আলোচনা করা হোক। জামায়াত সেটা ঠিক মনে করেনি। কারণ, তারা মনে করেছে এসব পার্টির শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ। সে কারণে তারা আমাকে বহিষ্কার করেছে।
তবে আজকে আমার যে রাজনীতির পথপরিক্রমা, সেটার সঙ্গে জামায়াতের রাজনীতির কোনো প্রসঙ্গ নেই। আমরা সম্পূর্ণ নতুন একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্কও সেই।
আপনার সংস্কার প্রস্তাবগুলো কী ছিল?
সুস্পষ্টত তিনটি বিষয় নিয়ে আমার কথা ছিল। জামায়াত একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল আবার ইসলামিক দলও। একটা ইসলামিক দল যখন ট্র্যাডিশনাল রাজনীতি করে, তখন সেটা সাংঘর্ষিক হয়। জামায়াতের মূল বক্তব্য হলো, ‘মানব রচিত মতবাদ হলো হারাম’। আমরা যখন এ রাজনীতিটা করতে গিয়েছি, তখন অনেকগুলো খটকা আমাদের লাগত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোথাও ত্রাণ বিতরণ করা হয় বা তারা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তখন সেই দলের নেতার পক্ষে স্লোগান দিতে হয়। সেই দলের নেতা যখন ত্রাণ বিতরণ করেন, সেটা তিনি প্রদর্শন করেন। এটা দিয়ে তারা বোঝাতে চায়, তার দল জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে প্রচার করে দান করাতে নিষেধাজ্ঞা আছে। মানে কাউকে দান করলে, সেটা কাউকে প্রদর্শন করিও না। সেটা গোপনে করো। কিন্তু একটা রাজনৈতিক দল তো দেখিয়ে করবে। এটাই তার কাজ। এখানেই ধর্ম আর আমাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থার মধ্যে দ্বন্দ্বটা দেখা দেয়।
আমরা যখন জামায়াতের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে যেতাম, তখন দেখতাম আমরা নিজেরাই নিজেদের পার্টি ও নেতাদের সম্পর্কে প্রচার করছি। আমাদের নেতা খুব ভালো, তাঁকে ভোট দেন। ভোট চাওয়ার ব্যাপারটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শুদ্ধ না। জামায়াত একটা ইসলামিক দল হিসেবে একদিকে তারা শেখায় নিজেকে প্রচার করা, তুলে ধরা, বাহাদুরি প্রকাশ করা যাবে না, নিজে কিছু দান করলে সেটা প্রচার করা যাবে না, আবার যখন তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে যেসব কাজ করে থাকে, সেসব ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিষেধ। তারা আবার সেটাই করে থাকে। এটাই হলো তাদের বড় চারিত্রিক দ্বন্দ্ব। আমরা পার্টিতে এসব ফেস করেছিলাম। আমি নিজে কীভাবে এ দ্বন্দ্ব দূর করতে পারি, সেটা নিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। কারণ, এই দ্বন্দ্বের কারণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজনীতিটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। আমরা চেয়েছিলাম পার্টির মধ্যে এ আলোচনাটা হোক। জামায়াত একটা খাঁটি ইসলামি দল হিসেবে থাকবে নতুবা পরিপূর্ণ একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকবে। এ জায়গায় একটা দ্বন্দ্ব ছিল। আমরা সেটা নিয়ে আলোচনা তুলেছিলাম। কিন্তু জামায়াত সেটা পছন্দ করেনি। বরং নিরুৎসাহিত করেছে।
এরপর ছিল ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে। আমাদের কাছে মনে হয়েছিল, এ জায়গায় জামায়াতের একটা অস্পষ্টতা আছে। তারা একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাসংগ্রামকে সম্মান জানায় ও স্বীকৃতি দেয়। তারা বলে থাকে, একাত্তর সালে আমাদের ভূমিকা সঠিক ছিল। আপনাদের ভূমিকা যদি সঠিক থাকে, তাহলে বাংলাদেশের জন্মটা ভুল ছিল, সেটাই তো দাঁড়ায়। একই সঙ্গে দুটি বিষয় সঠিক হতে পারে না। এ দ্বন্দ্বটা নিয়েও পার্টি ফোরামে আলোচনা করা হোক। কিন্তু নেতারা মনে করেছেন, আমরা ষড়যন্ত্র করছি এবং পার্টি ভাঙতে চাইছি। এ কারণে তারা আমাকে বহিষ্কার করেছে। সেই সময় কেউ কেউ জামায়াত থেকে পদত্যাগও করেছেন। এখন তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা নতুন রাজনৈতিক দল শুরু করেছি সম্পূর্ণ নতুন চিন্তাধারা নিয়ে।
জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে আপনাদের পার্টির আদর্শগত পার্থক্য কোথায়?
পার্থক্যটা তো খুবই পরিষ্কার। পার্টি গঠনের প্রথম দিন থেকে আমরা বলেছি, এ দলটা কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক মতবাদভিত্তিক হবে না। আমাদের দলটা হলো নাগরিক অধিকারভিত্তিক। সেই জায়গা থেকে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করব। ধরেন কোনো একটা সড়ক ভেঙে গেছে। নাগরিক অধিকারের জায়গা থেকে এটাকে মেরামত করতে কী লাগবে, এটা সংস্কারের জন্য অর্থ কোথা থেকে আসবে—আমরা এসব ধরে প্রস্তাব দেব। কিন্তু আমরা বলব না যে এটা ইসলামিক পদ্ধতিতে বা শেখ মুজিব বা জিয়ার আদর্শ অথবা সমাজতান্ত্রিক আদর্শে এ সড়কটিকে সংস্কার করা হবে।
আমরা কোনো মতাদর্শিক জায়গায় যাব না। আমরা প্রতিটি সমস্যার সঠিক সমাধানের জন্য প্রোপোজ করব। এই সড়কটা ঠিক করতে সরকারের কোন কোষাগার থেকে অর্থ আসবে এবং এটি আরও সুন্দরভাবে মেরামত করা যায়, সেটাই বলব।
এ রকম নাগরিক জীবনের প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য বাস্তব জ্ঞান প্রয়োগ করব। আমাদের নাগরিক জীবনের অনেক সমস্যা আছে। যেমন দুর্নীতি দূর করার জন্য একটা ধর্মীয় দল বলবে, ধর্মীয় নির্দেশ পালনের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে। এটা তাদের প্রস্তাব। আমাদের প্রস্তাব এ রকম হবে না। আমাদের প্রস্তাব হলো, দুর্নীতি কোথায় কোথায় হচ্ছে এবং এটা নির্মূলের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সেটার জন্য আমরা গবেষণাভিত্তিক প্রস্তাব হাজির করব। যেটাতে জনগণ সহজে অবহিত হবে, সমস্যা এবং সমাধান কী? আমাদের রাজনীতির মূল বক্তব্য হলো, ‘সলিউশন প্রোপোজাল পলিটিকস’।
কিন্তু মতাদর্শের বাইরে কি কোনো রাজনীতি হয়?
মতাদর্শ ছাড়া রাজনীতি হয় না, সেটা সত্য। কিন্তু মতাদর্শটা কী? সেটাই আমাদের কথা। রাষ্ট্রের মতাদর্শের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের মতাদর্শও একই হওয়া উচিত। আমাদের রাষ্ট্রের মতাদর্শ হলো, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের মাধ্যমে নাগরিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত করা। কোনো রাজনৈতিক দল যদি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে একটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হবে। এটাকেই আমরা মূল ভিত্তি হিসেবে ধরছি। কিন্তু আমরা যদি বলি হিন্দু, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করব। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার খ্রিষ্টানধর্ম গ্রহণ করে, হিন্দুধর্মও এটাকে সমর্থন করে আর ইসলাম ধর্ম তো এর ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত। তবে কেউ যখন ধর্মটাকে সামনে নিয়ে আসবে, তখন একটা বিভক্তি তৈরি হতে পারে নাগরিকদের মধ্যে। কিন্তু আমি যখন এই নীতির কথা বলব, তখন নাগরিকদের মধ্যে কোনো বিভক্তি তৈরি হবে না। এতে সব ধর্মের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এ জন্য আমরা কোনো ধর্মীয় মতাদর্শের মাধ্যমে বিভক্তি আনতে চাই না।
জুলাই আন্দোলন নানা মতের মানুষকে এক কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছিল। অথচ ছয় মাস পেরোতে না পেরোতেই এখন দেশজুড়ে প্রবল রাজনৈতিক বিভক্তির কারণ কী?
এই আন্দোলনের সময় সবাই কিন্তু বসে একমত হয়ে এটা শুরু করেনি। রাজপথেই ঐক্যটা তৈরি হয়েছিল। সাধারণত অপরিকল্পিতভাবে যখন ঐক্যটা তৈরি হয়, পরবর্তী সময়ে সেই ঐক্যটাকে ফলোআপ করতে হয়।
আমাদের ব্যর্থতা হচ্ছে, যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেছেন তাঁরা পরবর্তী সময়ে ঐক্যটাকে বজায় রাখার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সাধারণভাবে এটা সত্য যে বিজয় হয়ে যাওয়ার পরে মানুষের মধ্যে একটা অনৈক্য, আন্দোলনে কার কতটা ভূমিকা ছিল—এসব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। কিন্তু কোনো একটা কর্তৃপক্ষ থাকতে হয় যারা বলে যে, এগুলো নিয়ে আমাদের বিতর্ক করার সুযোগ নেই। সামনে আমরা একটা ভালো লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হব। সে দায়িত্বটা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের। সরকার সে দায়িত্বটা পালন করেনি। না করার কারণে যেটা হয়েছে, সরকার কারও কারও পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নতুন পার্টি গঠিত হচ্ছে। সেই পার্টি নিয়ে আপনাদের মূল্যায়ন কী?
ছাত্ররা যেহেতু এত বড় একটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, সে কারণে আমরা মনে করি, তাদের হাত দিয়ে একটা নতুন রাজনীতির উন্মেষ ঘটানোর সুযোগ আছে। মুক্তিযুদ্ধের পরে যখন দেশ স্বাধীন হয়েছে, তখন কিন্তু নেতৃত্বদানকারী দলের মাধ্যমে দেশটা পরিচালিত হয়েছে। পরে তারা সফল হয়েছে নাকি ব্যর্থ হয়েছে, সেটা আলাদা বিতর্ক। সে জন্য ছাত্রদের প্রতি জনগণের একটা বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও সম্মান তৈরি হয়েছে। এ জায়গা থেকে তারা রাজনীতি করতে পারে। এটা খারাপ না। কারণ তাদের নেতৃত্বেই তো দেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছে। বাংলাদেশের মানুষের অনেক দিনের প্রত্যাশা বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টির যে পুরোনো রাজনৈতিক ধাঁচ, সেটা বদলিয়ে একটা নতুন পার্টি গঠিত হলে সেটা নতুন ধাঁচ পাবে। একই সঙ্গে সেটা গণতান্ত্রিক এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাবে। সেই বিবেচনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, সেটাতে আমরা খুশিই হব, উৎসাহ বোধ করব।
তাদের সফলতার বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
সফলতার বিষয়টা নির্ভর করে মানুষ যখন কোনো কাজ করতে যায়, সেখানে ভুল হলে সংশোধন করে। তারা যখন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাবে, তাদের অনেক ভুল-ত্রুটি দেখা দেবে। যদি তারা সেগুলোকে সংশোধন করে এগোতে পারে, তাহলে অবশ্যই তারা সফল হবে। কারণ, তারা তো নানা বিপত্তির পরেও আন্দোলনটাকে সফল করতে পেরেছে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করে। আমি তাদের সফলতার ব্যাপারে আশাবাদী। তারা যদি বয়স্কদের পরামর্শ নেয়, যোগ্যদের নেতৃত্ব অন্তর্ভুক্ত করে এবং সমালোচনাকে ভালোভাবে গ্রহণ করে, তাহলে তারা সফল হতে পারবে।
একদিকে নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে বিএনপি, অন্যদিকে সরকার সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে। আপনাদের অবস্থান কী?
আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা বলেছি, সংস্কার ও নির্বাচন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর মধ্যে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করা এবং খুন, হত্যা ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে যে সাড়ে ১৬ বছর কাটিয়েছি তার একটা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা। তাই সংস্কার, নির্বাচন, বিচার এবং রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার দায়িত্ব হলো এ সরকারের। সুতরাং কোনোটাকে বাদ দিয়ে কোনোটাকে গুরুত্ব দিতে পারি না। মনে করেন, সবকিছুকে বাদ দিয়ে সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে যাঁরা নির্বাচিত হবেন এই কাজগুলো তাঁদের ওপর বর্তাবে এবং তাঁদের ওপর চাপটা পড়বে। কিন্তু সংস্কারের কাজটা খুব কঠিন। এটা হলো অজনপ্রিয় কাজ। আর এই কাজটা এ ধরনের সরকারকেই করতে হয়। কারণ তাদেরকে দল-মতনির্বিশেষে সবাই সমর্থন করে। সে জন্য আমরা গুরুত্ব আরোপ করছি, এই সরকারকে অবশ্যই মেজর কিছু সংস্কারে হাত দিতে হবে। মেজর সংস্কারগুলো করেই তাদেরকে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু নির্বাচিত সরকার ছাড়া এসব সংসদে আইন আকারে পাস করা সম্ভব না। ’৯০-এর আন্দোলনের পরে যে দল ক্ষমতায় এসেছিল, তারা কোনো কিছুই করেনি। নির্বাচিত সরকার এসব সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে গুরুত্ব কি দেবে?
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যে সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে সবাই একমত হবেন, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করব। আর যেগুলোর ব্যাপারে অনৈক্য থাকবে সেগুলোর ব্যাপারে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করব এবং পরবর্তী সরকারের কাছে সেগুলো অর্পণ করব। সুতরাং এসব নিয়ে একটা দীর্ঘ সময়ের প্রসেস থাকবে। যারা নতুন সরকার গঠন করবে তারাও কিছু সংস্কার নিয়ে চাপে থাকবে। আর অন্য দলগুলো এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকবে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য। তাই এ বিষয়টাকে নিয়ে জটিল করার কিছু নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার ৬ মাসে নানা ক্ষেত্রে সফল নয়। আপনাদের সরকার সম্পর্কে মূল্যায়ন কী?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ব্যর্থতা হচ্ছে, তারা ছাত্র-জনতার ঐক্যটার দিকে মনোযোগ দেয়নি। দেশে একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ছিল। একটা রক্তপাতময় আন্দোলনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হলো তারা কিন্তু জনগণকে আস্থায় নিতে পারেনি। এটা তাদের একটা ভুল হয়েছে। ভুল হতেই পারে। কারণ তারা অপ্রস্তুত, পরিকল্পনাহীন অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছে। এখন আমরা এ সরকারকে সমালোচনার পাশাপাশি সহায়তা করছি এবং আমাদের আস্থা ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।
আপনি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন প্রায় ১৪ বছর। কেন জামায়াতের রাজনীতি ত্যাগ করলেন?
প্রথমত, আমি জামায়াত ত্যাগ করিনি। ২০১৯ সালে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। জামায়াত আমাকে বহিষ্কার করায় আমি আর সেই দলে ফিরে যাইনি। জামায়াতের একটা নিয়ম হচ্ছে, কারও যদি সদস্যপদ বাতিল করা হয়, তাহলে তাঁর সদস্যপদ গ্রহণের সুযোগ আছে। কেউ যদি ভুল-ত্রুটির জন্য মাফ চেয়ে ফিরে যেতে চান, তাহলে জামায়াত তাঁকে গ্রহণ করে থাকে।
কী কারণে আপনাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল?
যে কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে আমি আর দ্বিতীয়বার তাঁদের সঙ্গে কথা বলিনি। কারণ, আমাকে যে অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সেটা হলো আমি জামায়াতের মধ্যে সংস্কার ও পরিবর্তনের কিছু বিষয়ে আলোচনা তুলেছিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল বিষয়টি নিয়ে পার্টি ফোরামে আলোচনা করা হোক। জামায়াত সেটা ঠিক মনে করেনি। কারণ, তারা মনে করেছে এসব পার্টির শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ। সে কারণে তারা আমাকে বহিষ্কার করেছে।
তবে আজকে আমার যে রাজনীতির পথপরিক্রমা, সেটার সঙ্গে জামায়াতের রাজনীতির কোনো প্রসঙ্গ নেই। আমরা সম্পূর্ণ নতুন একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্কও সেই।
আপনার সংস্কার প্রস্তাবগুলো কী ছিল?
সুস্পষ্টত তিনটি বিষয় নিয়ে আমার কথা ছিল। জামায়াত একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল আবার ইসলামিক দলও। একটা ইসলামিক দল যখন ট্র্যাডিশনাল রাজনীতি করে, তখন সেটা সাংঘর্ষিক হয়। জামায়াতের মূল বক্তব্য হলো, ‘মানব রচিত মতবাদ হলো হারাম’। আমরা যখন এ রাজনীতিটা করতে গিয়েছি, তখন অনেকগুলো খটকা আমাদের লাগত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোথাও ত্রাণ বিতরণ করা হয় বা তারা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তখন সেই দলের নেতার পক্ষে স্লোগান দিতে হয়। সেই দলের নেতা যখন ত্রাণ বিতরণ করেন, সেটা তিনি প্রদর্শন করেন। এটা দিয়ে তারা বোঝাতে চায়, তার দল জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে প্রচার করে দান করাতে নিষেধাজ্ঞা আছে। মানে কাউকে দান করলে, সেটা কাউকে প্রদর্শন করিও না। সেটা গোপনে করো। কিন্তু একটা রাজনৈতিক দল তো দেখিয়ে করবে। এটাই তার কাজ। এখানেই ধর্ম আর আমাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থার মধ্যে দ্বন্দ্বটা দেখা দেয়।
আমরা যখন জামায়াতের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে যেতাম, তখন দেখতাম আমরা নিজেরাই নিজেদের পার্টি ও নেতাদের সম্পর্কে প্রচার করছি। আমাদের নেতা খুব ভালো, তাঁকে ভোট দেন। ভোট চাওয়ার ব্যাপারটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শুদ্ধ না। জামায়াত একটা ইসলামিক দল হিসেবে একদিকে তারা শেখায় নিজেকে প্রচার করা, তুলে ধরা, বাহাদুরি প্রকাশ করা যাবে না, নিজে কিছু দান করলে সেটা প্রচার করা যাবে না, আবার যখন তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে যেসব কাজ করে থাকে, সেসব ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিষেধ। তারা আবার সেটাই করে থাকে। এটাই হলো তাদের বড় চারিত্রিক দ্বন্দ্ব। আমরা পার্টিতে এসব ফেস করেছিলাম। আমি নিজে কীভাবে এ দ্বন্দ্ব দূর করতে পারি, সেটা নিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। কারণ, এই দ্বন্দ্বের কারণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজনীতিটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। আমরা চেয়েছিলাম পার্টির মধ্যে এ আলোচনাটা হোক। জামায়াত একটা খাঁটি ইসলামি দল হিসেবে থাকবে নতুবা পরিপূর্ণ একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকবে। এ জায়গায় একটা দ্বন্দ্ব ছিল। আমরা সেটা নিয়ে আলোচনা তুলেছিলাম। কিন্তু জামায়াত সেটা পছন্দ করেনি। বরং নিরুৎসাহিত করেছে।
এরপর ছিল ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে। আমাদের কাছে মনে হয়েছিল, এ জায়গায় জামায়াতের একটা অস্পষ্টতা আছে। তারা একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাসংগ্রামকে সম্মান জানায় ও স্বীকৃতি দেয়। তারা বলে থাকে, একাত্তর সালে আমাদের ভূমিকা সঠিক ছিল। আপনাদের ভূমিকা যদি সঠিক থাকে, তাহলে বাংলাদেশের জন্মটা ভুল ছিল, সেটাই তো দাঁড়ায়। একই সঙ্গে দুটি বিষয় সঠিক হতে পারে না। এ দ্বন্দ্বটা নিয়েও পার্টি ফোরামে আলোচনা করা হোক। কিন্তু নেতারা মনে করেছেন, আমরা ষড়যন্ত্র করছি এবং পার্টি ভাঙতে চাইছি। এ কারণে তারা আমাকে বহিষ্কার করেছে। সেই সময় কেউ কেউ জামায়াত থেকে পদত্যাগও করেছেন। এখন তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা নতুন রাজনৈতিক দল শুরু করেছি সম্পূর্ণ নতুন চিন্তাধারা নিয়ে।
জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে আপনাদের পার্টির আদর্শগত পার্থক্য কোথায়?
পার্থক্যটা তো খুবই পরিষ্কার। পার্টি গঠনের প্রথম দিন থেকে আমরা বলেছি, এ দলটা কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক মতবাদভিত্তিক হবে না। আমাদের দলটা হলো নাগরিক অধিকারভিত্তিক। সেই জায়গা থেকে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করব। ধরেন কোনো একটা সড়ক ভেঙে গেছে। নাগরিক অধিকারের জায়গা থেকে এটাকে মেরামত করতে কী লাগবে, এটা সংস্কারের জন্য অর্থ কোথা থেকে আসবে—আমরা এসব ধরে প্রস্তাব দেব। কিন্তু আমরা বলব না যে এটা ইসলামিক পদ্ধতিতে বা শেখ মুজিব বা জিয়ার আদর্শ অথবা সমাজতান্ত্রিক আদর্শে এ সড়কটিকে সংস্কার করা হবে।
আমরা কোনো মতাদর্শিক জায়গায় যাব না। আমরা প্রতিটি সমস্যার সঠিক সমাধানের জন্য প্রোপোজ করব। এই সড়কটা ঠিক করতে সরকারের কোন কোষাগার থেকে অর্থ আসবে এবং এটি আরও সুন্দরভাবে মেরামত করা যায়, সেটাই বলব।
এ রকম নাগরিক জীবনের প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য বাস্তব জ্ঞান প্রয়োগ করব। আমাদের নাগরিক জীবনের অনেক সমস্যা আছে। যেমন দুর্নীতি দূর করার জন্য একটা ধর্মীয় দল বলবে, ধর্মীয় নির্দেশ পালনের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে। এটা তাদের প্রস্তাব। আমাদের প্রস্তাব এ রকম হবে না। আমাদের প্রস্তাব হলো, দুর্নীতি কোথায় কোথায় হচ্ছে এবং এটা নির্মূলের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সেটার জন্য আমরা গবেষণাভিত্তিক প্রস্তাব হাজির করব। যেটাতে জনগণ সহজে অবহিত হবে, সমস্যা এবং সমাধান কী? আমাদের রাজনীতির মূল বক্তব্য হলো, ‘সলিউশন প্রোপোজাল পলিটিকস’।
কিন্তু মতাদর্শের বাইরে কি কোনো রাজনীতি হয়?
মতাদর্শ ছাড়া রাজনীতি হয় না, সেটা সত্য। কিন্তু মতাদর্শটা কী? সেটাই আমাদের কথা। রাষ্ট্রের মতাদর্শের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের মতাদর্শও একই হওয়া উচিত। আমাদের রাষ্ট্রের মতাদর্শ হলো, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের মাধ্যমে নাগরিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত করা। কোনো রাজনৈতিক দল যদি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে একটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হবে। এটাকেই আমরা মূল ভিত্তি হিসেবে ধরছি। কিন্তু আমরা যদি বলি হিন্দু, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করব। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার খ্রিষ্টানধর্ম গ্রহণ করে, হিন্দুধর্মও এটাকে সমর্থন করে আর ইসলাম ধর্ম তো এর ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত। তবে কেউ যখন ধর্মটাকে সামনে নিয়ে আসবে, তখন একটা বিভক্তি তৈরি হতে পারে নাগরিকদের মধ্যে। কিন্তু আমি যখন এই নীতির কথা বলব, তখন নাগরিকদের মধ্যে কোনো বিভক্তি তৈরি হবে না। এতে সব ধর্মের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এ জন্য আমরা কোনো ধর্মীয় মতাদর্শের মাধ্যমে বিভক্তি আনতে চাই না।
জুলাই আন্দোলন নানা মতের মানুষকে এক কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছিল। অথচ ছয় মাস পেরোতে না পেরোতেই এখন দেশজুড়ে প্রবল রাজনৈতিক বিভক্তির কারণ কী?
এই আন্দোলনের সময় সবাই কিন্তু বসে একমত হয়ে এটা শুরু করেনি। রাজপথেই ঐক্যটা তৈরি হয়েছিল। সাধারণত অপরিকল্পিতভাবে যখন ঐক্যটা তৈরি হয়, পরবর্তী সময়ে সেই ঐক্যটাকে ফলোআপ করতে হয়।
আমাদের ব্যর্থতা হচ্ছে, যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেছেন তাঁরা পরবর্তী সময়ে ঐক্যটাকে বজায় রাখার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সাধারণভাবে এটা সত্য যে বিজয় হয়ে যাওয়ার পরে মানুষের মধ্যে একটা অনৈক্য, আন্দোলনে কার কতটা ভূমিকা ছিল—এসব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। কিন্তু কোনো একটা কর্তৃপক্ষ থাকতে হয় যারা বলে যে, এগুলো নিয়ে আমাদের বিতর্ক করার সুযোগ নেই। সামনে আমরা একটা ভালো লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হব। সে দায়িত্বটা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের। সরকার সে দায়িত্বটা পালন করেনি। না করার কারণে যেটা হয়েছে, সরকার কারও কারও পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নতুন পার্টি গঠিত হচ্ছে। সেই পার্টি নিয়ে আপনাদের মূল্যায়ন কী?
ছাত্ররা যেহেতু এত বড় একটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, সে কারণে আমরা মনে করি, তাদের হাত দিয়ে একটা নতুন রাজনীতির উন্মেষ ঘটানোর সুযোগ আছে। মুক্তিযুদ্ধের পরে যখন দেশ স্বাধীন হয়েছে, তখন কিন্তু নেতৃত্বদানকারী দলের মাধ্যমে দেশটা পরিচালিত হয়েছে। পরে তারা সফল হয়েছে নাকি ব্যর্থ হয়েছে, সেটা আলাদা বিতর্ক। সে জন্য ছাত্রদের প্রতি জনগণের একটা বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও সম্মান তৈরি হয়েছে। এ জায়গা থেকে তারা রাজনীতি করতে পারে। এটা খারাপ না। কারণ তাদের নেতৃত্বেই তো দেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছে। বাংলাদেশের মানুষের অনেক দিনের প্রত্যাশা বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টির যে পুরোনো রাজনৈতিক ধাঁচ, সেটা বদলিয়ে একটা নতুন পার্টি গঠিত হলে সেটা নতুন ধাঁচ পাবে। একই সঙ্গে সেটা গণতান্ত্রিক এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাবে। সেই বিবেচনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, সেটাতে আমরা খুশিই হব, উৎসাহ বোধ করব।
তাদের সফলতার বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
সফলতার বিষয়টা নির্ভর করে মানুষ যখন কোনো কাজ করতে যায়, সেখানে ভুল হলে সংশোধন করে। তারা যখন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাবে, তাদের অনেক ভুল-ত্রুটি দেখা দেবে। যদি তারা সেগুলোকে সংশোধন করে এগোতে পারে, তাহলে অবশ্যই তারা সফল হবে। কারণ, তারা তো নানা বিপত্তির পরেও আন্দোলনটাকে সফল করতে পেরেছে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করে। আমি তাদের সফলতার ব্যাপারে আশাবাদী। তারা যদি বয়স্কদের পরামর্শ নেয়, যোগ্যদের নেতৃত্ব অন্তর্ভুক্ত করে এবং সমালোচনাকে ভালোভাবে গ্রহণ করে, তাহলে তারা সফল হতে পারবে।
একদিকে নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে বিএনপি, অন্যদিকে সরকার সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে। আপনাদের অবস্থান কী?
আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা বলেছি, সংস্কার ও নির্বাচন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর মধ্যে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করা এবং খুন, হত্যা ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে যে সাড়ে ১৬ বছর কাটিয়েছি তার একটা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা। তাই সংস্কার, নির্বাচন, বিচার এবং রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার দায়িত্ব হলো এ সরকারের। সুতরাং কোনোটাকে বাদ দিয়ে কোনোটাকে গুরুত্ব দিতে পারি না। মনে করেন, সবকিছুকে বাদ দিয়ে সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে যাঁরা নির্বাচিত হবেন এই কাজগুলো তাঁদের ওপর বর্তাবে এবং তাঁদের ওপর চাপটা পড়বে। কিন্তু সংস্কারের কাজটা খুব কঠিন। এটা হলো অজনপ্রিয় কাজ। আর এই কাজটা এ ধরনের সরকারকেই করতে হয়। কারণ তাদেরকে দল-মতনির্বিশেষে সবাই সমর্থন করে। সে জন্য আমরা গুরুত্ব আরোপ করছি, এই সরকারকে অবশ্যই মেজর কিছু সংস্কারে হাত দিতে হবে। মেজর সংস্কারগুলো করেই তাদেরকে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু নির্বাচিত সরকার ছাড়া এসব সংসদে আইন আকারে পাস করা সম্ভব না। ’৯০-এর আন্দোলনের পরে যে দল ক্ষমতায় এসেছিল, তারা কোনো কিছুই করেনি। নির্বাচিত সরকার এসব সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে গুরুত্ব কি দেবে?
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যে সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে সবাই একমত হবেন, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করব। আর যেগুলোর ব্যাপারে অনৈক্য থাকবে সেগুলোর ব্যাপারে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করব এবং পরবর্তী সরকারের কাছে সেগুলো অর্পণ করব। সুতরাং এসব নিয়ে একটা দীর্ঘ সময়ের প্রসেস থাকবে। যারা নতুন সরকার গঠন করবে তারাও কিছু সংস্কার নিয়ে চাপে থাকবে। আর অন্য দলগুলো এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকবে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য। তাই এ বিষয়টাকে নিয়ে জটিল করার কিছু নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার ৬ মাসে নানা ক্ষেত্রে সফল নয়। আপনাদের সরকার সম্পর্কে মূল্যায়ন কী?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ব্যর্থতা হচ্ছে, তারা ছাত্র-জনতার ঐক্যটার দিকে মনোযোগ দেয়নি। দেশে একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ছিল। একটা রক্তপাতময় আন্দোলনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হলো তারা কিন্তু জনগণকে আস্থায় নিতে পারেনি। এটা তাদের একটা ভুল হয়েছে। ভুল হতেই পারে। কারণ তারা অপ্রস্তুত, পরিকল্পনাহীন অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছে। এখন আমরা এ সরকারকে সমালোচনার পাশাপাশি সহায়তা করছি এবং আমাদের আস্থা ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
২১ মিনিট আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
২৩ মিনিট আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
২৬ মিনিট আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন এক দশকের বেশি সময় ধরে।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
২৩ মিনিট আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
২৬ মিনিট আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন এক দশকের বেশি সময় ধরে।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
২১ মিনিট আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
২৬ মিনিট আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেশোয়েব সাম্য সিদ্দিক

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন এক দশকের বেশি সময় ধরে।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
২১ মিনিট আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
২৩ মিনিট আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন এক দশকের বেশি সময় ধরে।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
২১ মিনিট আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
২৩ মিনিট আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
২৬ মিনিট আগে