ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
এই ভারতবর্ষে চার এবং ব্রিটেনের মোট পাঁচ পতাকার নাগরিক ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক উল হক (২ নভেম্বর, ১৯৩৫-২৪ অক্টোবর, ২০২০)। ব্রিটিশ ভারতের (১৯৩৫-১৯৪৭), ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের (১৯৪৭-১৯৬২), ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের (১৯৬২-১৯৭০), গ্রেট ব্রিটেনের (১৯৭১-১৯৭২) এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের (১৯৭২-২০২০)। কথা প্রসঙ্গে একদিন বললেন, ‘আমার মধ্যে সর্ববাদী একটা চেতনা কাজ করে এ জন্যে। হিন্দু ল তে ডিস্টিংশনসহ ব্যারিস্টারি পাস করি এবং আমাকে দিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু লয়ের ওপর পাঠদান শুরু।’ অন্যদিকে করপোরেট এবং কোম্পানি আইনে তাঁর বিশেষ পারদর্শিতার কথা ছিল সর্বজনবিদিত। ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে দিয়ে বিভিন্ন আইনের খসড়া করান। এর মধ্যে একটি আইন ছিল ‘জাতীয়করণ আদেশ, ১৯৭২ ’। আবার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে (১৯৭৭-৮১) আমি এই আদেশ বাতিলের জন্য খসড়া তৈরিতে কাজ করেছিলাম।’ সবাই জানেন ২০০৭-০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনিই শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী হয়েছিলেন।
১৯৯৫ সালে রফিক-উল হক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুবর্ণ ক্লিনিক; পরবর্তীকালে যা বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও ডা. ফরিদা হকের স্মরণীয় নামে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত ও রূপান্তরিত হয়। ২০১৫-১৭ সালে হাসপাতালটির নির্মানকাজ তদারকি এবং ডায়াবেটিক সমিতির কার্যক্রম কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনার জন্য প্রায় শুক্রবারে আমরা চন্দ্রায় তাঁর বাগানবাড়িতে যেতাম। দুপুরে বেশ মজাদার ভুরিভোজ হতো, আর চলত নানা কথামালার ফুলঝুরি। সেখানে ব্যারিস্টার রফিক উল হকের সাক্ষাৎকার নিতে আসতেন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মানুষেরা। তাঁদের সঙ্গে আমরাও জানতে পারতাম, শুনতে পারতাম তাঁর অনেক অভিজ্ঞতার বয়ান। স্বাস্থ্য খাতের প্রতি তাঁর এমন আন্তরিক আগ্রহ কেন জানতে চাইলে তিনি বলতেন—‘আমার বাবা ডাক্তার, চাচা ডাক্তার, ভাই ডাক্তার, স্ত্রী ডাক্তার, তাদের ভিড়ে আমি এবং পরবর্তীকালে আমার একমাত্র ছেলে, আমরা শুধু আইন ব্যবসায়। আমার চাচার চোখের বড় চিকিৎসালয় ছিল; আমার আব্বা সেটা দেখাশুনা করতেন। সেই সূত্র ধরে ঢাকায় ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের উৎপত্তি। সেই থেকে স্বাস্থ্য খাতের প্রতি আমার দুর্বলতা।’
ব্যারিস্টার রফিক উল হক ছাত্রজীবনে তাঁর রাজনীতি সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতেন—‘আমার কলেজ লাইফ হচ্ছে ইসলামিয়া কলেজ। বঙ্গবন্ধুও পড়েছেন ইসলামিয়া কলেজে। থাকতাম বেকার হোস্টেলে। ওখানেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন। আমি যে রুমটাতে ছিলাম, তার পাশের দুটো রুমেই বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম হয়েছে। আমি গিয়েছিলাম উদ্বোধন করতে। ২৬ ও ২৭ নম্বর রুম এখন বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। আমি পাশের ২৪ নম্বর রুমে থাকতাম। আমার ভাইয়েরাও ওখানে থেকেছে, আমিও ওখানে থেকেছি। তার পর ইউনিভার্সিটি-জীবনে কারমাইকেল হোস্টেলে থেকেছি। ওখানেও শেখ সাহেব কিছুদিন ছিলেন।...ইউনিভার্সিটিতে আমি রাজনীতি করতাম, সোশ্যাল সেক্রেটারি ছিলাম। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করে জিতেছিলাম। তখন মুসলমান ছাত্র তো আমরা মাত্র চার-পাঁচজন। তারপরও আমি অনেক ভোটে জিতে গেলাম। এর পরেরবার সবাই মিলে আমাকে হারাবে বলে ঠিক করল। আমার কাজ ছিল ছাত্রদের বই, ক্যান্টিন, ট্যুরের ব্যবস্থা করা। তখন রাস্তার পলিটিকসে জড়িত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আর যুব কংগ্রেস করতাম। কংগ্রেস বলতে ন্যাশনাল পলিটিকস না। আমি তখন ওয়েস্ট বেঙ্গল যুব কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তখন আমার নেত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন সেন্ট্রাল যুব কংগ্রেসের সভাপতি, আর আমি ছিলাম ওয়েস্ট বেঙ্গলে। সুতরাং ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আমার বহুবার দেখা হয়েছে, বহুবার মিটিং হয়েছে, কাজ করার সুযোগ হয়েছে। একটা খুব বড় মিটিং করেছিলাম সল্টলেকে, ইন্দিরা গান্ধী, নেহরু, বিধান রায় ছিলেন। সে আরেক ইতিহাস। কলকাতায় পড়ার সময় আমার বন্ধু ছিলেন ভারতের (সাবেক এবং প্রয়াত) রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।’
১৯৭২ সালে, সম্ভবত বঙ্গবন্ধু সরকারি সফরে রাশিয়া যাবেন। দারুণ শীতের দেশে ওভারকোট পরিধান আবশ্যক। বঙ্গবন্ধুর ওভারকোট ছিল না; চটজলদি বানাবার সময়ও ছিল না। অগত্যা ব্যারিস্টার রফিক উল হকের ওভারকোটটা বঙ্গবন্ধু নিলেন। দেশে ফিরে সেটি ফেরত দিতে গেলে তিনি ফেরত নিলেন না। বললেন, বঙ্গবন্ধুর গায়ে শোভা পাওয়া কোট তিনি কীভাবে নেবেন? ওভারকোটটি তিনি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে দিয়ে দেন।
ব্যারিস্টার রফিক উল হক ছিলেন আইন কানুনের চলন্ত বিশ্বকোষ। তাঁর পরিচালিত প্রায় ৫০০ মামলা ল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। কোনো মামলায় তিনি ব্যাপক পড়ালেখা করে, প্রস্তুতি নিয়ে আসতেন। তিনি ভারতের রামজিত মালানীর মতো কোনো মামলায় হারেননি। আমরা মাঝেমধ্যে জেনেছি যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ের খসড়া ছিল তাঁর। সবার সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক ছিল, অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতেও ছাড়তেন না। স্পষ্টভাষী ছিলেন। মুখের ওপর কথা শুনিয়ে দিতেন। আত্মীয়-স্বজনদের কাছে তিনি ছিলেন ত্রাতা। অনেক শিক্ষিত আত্মীয়কে চাকরি জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁরা ধন্যবাদ দিতে এলে শুধু বলেছেন সৎ থাকতে, মাথা ঠিক রাখতে। সততাটা তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল। নিজে সততাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচেছেন। তাই তো দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে সম্মানও পেয়েছেন। তিনিই এমাত্র আইনজ্ঞ, যিনি একাধারে বহু রাস্ট্রনায়কের সম্মান ও সমীহ লাভ করেছিলেন। পাকিস্তানের প্রবাদতুল্য আইনজীবি এ কে ব্রোহি (১৯১৫-১৯৮৭) তাঁকে বেশ স্নেহ করতেন। তাঁকে দিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করিয়েছিলেন। এসব মামলায় তিনি মোটা অঙ্কের সম্মানি পেয়েছিলেন। শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী হিসেবে প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে প্রচুর টাকা আয় করেছেন ব্যারিস্টার রফিকুল হক। সেই টাকার একটা বড় অংশ ব্যয় করেছেন সমাজসেবায়, মানুষের কাজে। নানা জায়গায় হাসপাতাল, এতিমখানা, মসজিদ ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। দিয়েছেন বড় বড় অঙ্কের অনুদানও। তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে এসে কেউ ফিরে গেছে—এমন নজির নেই বললেই চলে। তিনি বলতেন, ‘আমি আমার উত্তরসূরিদের জন্য একটি টাকাও ব্যাংকে রেখে যেতে চাই না। মানবতার সেবায় সবকিছু ইনভেস্ট করতে চাই।’
২০১৭ সালে খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে আমার স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন; তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। তাঁকে দেখেই বললেন, ‘যাক স্বর্ণপদকের নিরাপত্তা বিধায়করে পাওয়া গেল।’ আমি এনবিআরে, আমার স্ত্রী তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ডিপার্টমেন্টে। দেখা হলেই বলতেন, ‘একজন রাজস্ব আয় করে, আরেকজন সেটার লন্ডারিং ঠেকায়।’ সদাসজিব ও সহাস্য ছিলেন এই প্রবীন আইনজীবী। অথচ তিনি নিজে ছিলেন একজন ক্যানসার সারভাইভার। স্টমাক ক্যানসার হয়েছিল তাঁর। ১৯৮৬ সালে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। পাকস্থলীটি অপসারণ করা হয়েছিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। একই সঙ্গে তাঁর বাঁ পাঁজরের তিনটি হাড়ও অপসারণ করতে হয়েছিল সে সময়। এর পরও আমৃত্যু তাঁর মধ্যে উচ্ছলতার কমতি ছিল না।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: সরকারের সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
এই ভারতবর্ষে চার এবং ব্রিটেনের মোট পাঁচ পতাকার নাগরিক ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক উল হক (২ নভেম্বর, ১৯৩৫-২৪ অক্টোবর, ২০২০)। ব্রিটিশ ভারতের (১৯৩৫-১৯৪৭), ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের (১৯৪৭-১৯৬২), ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের (১৯৬২-১৯৭০), গ্রেট ব্রিটেনের (১৯৭১-১৯৭২) এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের (১৯৭২-২০২০)। কথা প্রসঙ্গে একদিন বললেন, ‘আমার মধ্যে সর্ববাদী একটা চেতনা কাজ করে এ জন্যে। হিন্দু ল তে ডিস্টিংশনসহ ব্যারিস্টারি পাস করি এবং আমাকে দিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দু লয়ের ওপর পাঠদান শুরু।’ অন্যদিকে করপোরেট এবং কোম্পানি আইনে তাঁর বিশেষ পারদর্শিতার কথা ছিল সর্বজনবিদিত। ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে দিয়ে বিভিন্ন আইনের খসড়া করান। এর মধ্যে একটি আইন ছিল ‘জাতীয়করণ আদেশ, ১৯৭২ ’। আবার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে (১৯৭৭-৮১) আমি এই আদেশ বাতিলের জন্য খসড়া তৈরিতে কাজ করেছিলাম।’ সবাই জানেন ২০০৭-০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনিই শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী হয়েছিলেন।
১৯৯৫ সালে রফিক-উল হক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সুবর্ণ ক্লিনিক; পরবর্তীকালে যা বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও ডা. ফরিদা হকের স্মরণীয় নামে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত ও রূপান্তরিত হয়। ২০১৫-১৭ সালে হাসপাতালটির নির্মানকাজ তদারকি এবং ডায়াবেটিক সমিতির কার্যক্রম কর্মপরিকল্পনা পর্যালোচনার জন্য প্রায় শুক্রবারে আমরা চন্দ্রায় তাঁর বাগানবাড়িতে যেতাম। দুপুরে বেশ মজাদার ভুরিভোজ হতো, আর চলত নানা কথামালার ফুলঝুরি। সেখানে ব্যারিস্টার রফিক উল হকের সাক্ষাৎকার নিতে আসতেন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মানুষেরা। তাঁদের সঙ্গে আমরাও জানতে পারতাম, শুনতে পারতাম তাঁর অনেক অভিজ্ঞতার বয়ান। স্বাস্থ্য খাতের প্রতি তাঁর এমন আন্তরিক আগ্রহ কেন জানতে চাইলে তিনি বলতেন—‘আমার বাবা ডাক্তার, চাচা ডাক্তার, ভাই ডাক্তার, স্ত্রী ডাক্তার, তাদের ভিড়ে আমি এবং পরবর্তীকালে আমার একমাত্র ছেলে, আমরা শুধু আইন ব্যবসায়। আমার চাচার চোখের বড় চিকিৎসালয় ছিল; আমার আব্বা সেটা দেখাশুনা করতেন। সেই সূত্র ধরে ঢাকায় ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের উৎপত্তি। সেই থেকে স্বাস্থ্য খাতের প্রতি আমার দুর্বলতা।’
ব্যারিস্টার রফিক উল হক ছাত্রজীবনে তাঁর রাজনীতি সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতেন—‘আমার কলেজ লাইফ হচ্ছে ইসলামিয়া কলেজ। বঙ্গবন্ধুও পড়েছেন ইসলামিয়া কলেজে। থাকতাম বেকার হোস্টেলে। ওখানেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন। আমি যে রুমটাতে ছিলাম, তার পাশের দুটো রুমেই বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম হয়েছে। আমি গিয়েছিলাম উদ্বোধন করতে। ২৬ ও ২৭ নম্বর রুম এখন বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। আমি পাশের ২৪ নম্বর রুমে থাকতাম। আমার ভাইয়েরাও ওখানে থেকেছে, আমিও ওখানে থেকেছি। তার পর ইউনিভার্সিটি-জীবনে কারমাইকেল হোস্টেলে থেকেছি। ওখানেও শেখ সাহেব কিছুদিন ছিলেন।...ইউনিভার্সিটিতে আমি রাজনীতি করতাম, সোশ্যাল সেক্রেটারি ছিলাম। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করে জিতেছিলাম। তখন মুসলমান ছাত্র তো আমরা মাত্র চার-পাঁচজন। তারপরও আমি অনেক ভোটে জিতে গেলাম। এর পরেরবার সবাই মিলে আমাকে হারাবে বলে ঠিক করল। আমার কাজ ছিল ছাত্রদের বই, ক্যান্টিন, ট্যুরের ব্যবস্থা করা। তখন রাস্তার পলিটিকসে জড়িত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। আর যুব কংগ্রেস করতাম। কংগ্রেস বলতে ন্যাশনাল পলিটিকস না। আমি তখন ওয়েস্ট বেঙ্গল যুব কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তখন আমার নেত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন সেন্ট্রাল যুব কংগ্রেসের সভাপতি, আর আমি ছিলাম ওয়েস্ট বেঙ্গলে। সুতরাং ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আমার বহুবার দেখা হয়েছে, বহুবার মিটিং হয়েছে, কাজ করার সুযোগ হয়েছে। একটা খুব বড় মিটিং করেছিলাম সল্টলেকে, ইন্দিরা গান্ধী, নেহরু, বিধান রায় ছিলেন। সে আরেক ইতিহাস। কলকাতায় পড়ার সময় আমার বন্ধু ছিলেন ভারতের (সাবেক এবং প্রয়াত) রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।’
১৯৭২ সালে, সম্ভবত বঙ্গবন্ধু সরকারি সফরে রাশিয়া যাবেন। দারুণ শীতের দেশে ওভারকোট পরিধান আবশ্যক। বঙ্গবন্ধুর ওভারকোট ছিল না; চটজলদি বানাবার সময়ও ছিল না। অগত্যা ব্যারিস্টার রফিক উল হকের ওভারকোটটা বঙ্গবন্ধু নিলেন। দেশে ফিরে সেটি ফেরত দিতে গেলে তিনি ফেরত নিলেন না। বললেন, বঙ্গবন্ধুর গায়ে শোভা পাওয়া কোট তিনি কীভাবে নেবেন? ওভারকোটটি তিনি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে দিয়ে দেন।
ব্যারিস্টার রফিক উল হক ছিলেন আইন কানুনের চলন্ত বিশ্বকোষ। তাঁর পরিচালিত প্রায় ৫০০ মামলা ল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। কোনো মামলায় তিনি ব্যাপক পড়ালেখা করে, প্রস্তুতি নিয়ে আসতেন। তিনি ভারতের রামজিত মালানীর মতো কোনো মামলায় হারেননি। আমরা মাঝেমধ্যে জেনেছি যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ের খসড়া ছিল তাঁর। সবার সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক ছিল, অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতেও ছাড়তেন না। স্পষ্টভাষী ছিলেন। মুখের ওপর কথা শুনিয়ে দিতেন। আত্মীয়-স্বজনদের কাছে তিনি ছিলেন ত্রাতা। অনেক শিক্ষিত আত্মীয়কে চাকরি জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁরা ধন্যবাদ দিতে এলে শুধু বলেছেন সৎ থাকতে, মাথা ঠিক রাখতে। সততাটা তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল। নিজে সততাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচেছেন। তাই তো দল-মত নির্বিশেষে সবার কাছে সম্মানও পেয়েছেন। তিনিই এমাত্র আইনজ্ঞ, যিনি একাধারে বহু রাস্ট্রনায়কের সম্মান ও সমীহ লাভ করেছিলেন। পাকিস্তানের প্রবাদতুল্য আইনজীবি এ কে ব্রোহি (১৯১৫-১৯৮৭) তাঁকে বেশ স্নেহ করতেন। তাঁকে দিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করিয়েছিলেন। এসব মামলায় তিনি মোটা অঙ্কের সম্মানি পেয়েছিলেন। শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী হিসেবে প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে প্রচুর টাকা আয় করেছেন ব্যারিস্টার রফিকুল হক। সেই টাকার একটা বড় অংশ ব্যয় করেছেন সমাজসেবায়, মানুষের কাজে। নানা জায়গায় হাসপাতাল, এতিমখানা, মসজিদ ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। দিয়েছেন বড় বড় অঙ্কের অনুদানও। তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে এসে কেউ ফিরে গেছে—এমন নজির নেই বললেই চলে। তিনি বলতেন, ‘আমি আমার উত্তরসূরিদের জন্য একটি টাকাও ব্যাংকে রেখে যেতে চাই না। মানবতার সেবায় সবকিছু ইনভেস্ট করতে চাই।’
২০১৭ সালে খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। পদক প্রদান অনুষ্ঠানে আমার স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন; তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। তাঁকে দেখেই বললেন, ‘যাক স্বর্ণপদকের নিরাপত্তা বিধায়করে পাওয়া গেল।’ আমি এনবিআরে, আমার স্ত্রী তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং ডিপার্টমেন্টে। দেখা হলেই বলতেন, ‘একজন রাজস্ব আয় করে, আরেকজন সেটার লন্ডারিং ঠেকায়।’ সদাসজিব ও সহাস্য ছিলেন এই প্রবীন আইনজীবী। অথচ তিনি নিজে ছিলেন একজন ক্যানসার সারভাইভার। স্টমাক ক্যানসার হয়েছিল তাঁর। ১৯৮৬ সালে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। পাকস্থলীটি অপসারণ করা হয়েছিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। একই সঙ্গে তাঁর বাঁ পাঁজরের তিনটি হাড়ও অপসারণ করতে হয়েছিল সে সময়। এর পরও আমৃত্যু তাঁর মধ্যে উচ্ছলতার কমতি ছিল না।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: সরকারের সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
একদিন ভোরবেলা জাকারবার্গ লক্ষ করলেন যে পৃথিবীতে একটা ছোট্ট দেশে তাঁর সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হচ্ছে। সামনের ফ্লোরটায় দেখলেন দেশটা ছোট বটে, কিন্তু জনসংখ্যা বেশি। আর এই দেশের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুকে দেখতে পেলেন অসংখ্য বার্তা—সবই রাজনৈতিক এবং ছবিতে এ বিষয়ে বিপুল জনগণের
৬ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৩ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাদের নেতা-কর্মীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে অসংখ্য আন্দোলনকারীকে হত্যা ও অনেকের জীবন বি
৬ ঘণ্টা আগেবেশ কিছুদিন ধরেই অস্থির হয়ে আছে মোহাম্মদপুর। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপর এই অঞ্চলে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে না থাকায় একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী বাড়িতে বাড়িতে ডাকাতি করতে উৎসাহী হয়ে উঠেছিল। এলাকাবাসী তখন রাত জেগে নিজেদের এলাকা পাহারা দিয়েছিলেন।
৬ ঘণ্টা আগে৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে সংস্কারের আহ্বান শোনা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরেই। সব ক্ষেত্রে। চলচ্চিত্রাঙ্গনেও এই সংস্কারের জোয়ার এসে লেগেছে। জোয়ারের আগে মূলধারার চলচ্চিত্রের লোকজন নানাভাবে জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে। অভ্যুত্থান শুরুর পর তাঁদের মনে হয়েছে ভবিষ্যৎ বুঝি অন্ধকারে প্রবেশ করতে যাচ্
১ দিন আগে