ড্যানিয়েল বাইম্যান
ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের শাসন থেকে মুক্ত উচ্ছ্বসিত সিরিয়ানদের মূর্তি ভাঙার ছবি দেখার এবং বন্দীদের আনন্দধ্বনি শোনার সময় ভালো না লাগাটা কঠিন। বন্দিশালায় এদের অনেকেই হয়তো অত্যাচারিত ও ক্ষুধার্ত ছিলেন। এখন অন্ধকূপ থেকে তাঁরা মুক্তি পেয়েছেন। বাশার আল-আসাদের সিরিয়া বিরোধীদের জন্য নৃশংস ছিল। ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ ও চৌর্যবৃত্তির শাসনে সিরিয়ার সাধারণ নাগরিকদের জীবন বিপজ্জনক ও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। মানুষের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হওয়া ঠেকানোর পাশাপাশি বাশার আল-আসাদের পতন মধ্যপ্রাচ্যের দাবা বোর্ড থেকে ইরান-সমর্থিত, আমেরিকা-বিরোধী এবং ইসরায়েল-বিরোধী একনায়ককে সরিয়ে দিল।
এত কিছুর পরেও অস্বস্তি বোধ না করাটাও কঠিন। ২০০১ সালে তালেবানের সহিংস শাসন থেকে মুক্ত হওয়া আফগানদের এবং সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ২০০৩ সালে উল্লসিত ইরাকিদের অনুরূপ চিত্র দেখার পর আজ সিরিয়াবাসীর গভীর স্বস্তির মধ্যে কেউ কেউ অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। কারণ, না জানি আগামীকাল নতুন কোনো ভয়াবহতার মুখোমুখি হতে হয়!
সিরিয়া ও এর প্রতিবেশীদের মূল অনিশ্চয়তা হলো তাদের মুক্তিদাতাদের প্রকৃত পরিচয়। হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) বাশারবিরোধী আক্রমণের সর্বশেষ রাউন্ডকে জয়ের দিকে নিয়ে গেছে। ২৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বাশার আল-আসাদকে বিদায় করার পর তারাই বিভিন্ন বিরোধীপক্ষের মধ্যে প্রভাবশালী। যুক্তরাষ্ট্র এইচটিএস ও এর নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানিকে সন্ত্রাসী বলেই মনে করে। জোলানির মাথার দাম এক কোটি ডলার।
এইচটিএস অনেকটা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো। এর বেড়ে ওঠা জাভাত আল-নুসরা থেকে। এই নুসরা আবার উদ্ভূত হয়েছিল ইরাকের আল-কায়েদা থেকে। জোলানিও প্রাথমিকভাবে আল-কায়েদার প্রতি অনুগত ছিলেন, এমনকি আইএসআইএসের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও। কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি প্রকাশ্যে আল-কায়েদার সংস্রব ত্যাগ করে এইচটিএস গঠন করেন। এক বছর পরে জোলানি বারবার বলতে থাকেন যে তিনি বিদেশি সন্ত্রাসী হামলার বিরোধিতা করেন এবং আইএসআইএসের মতো খিলাফতের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। পাশাপাশি এইচটিএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তিনি আল-কায়েদা এবং আইএসআইএসের অনুগত যোদ্ধাদের দমন করার চেষ্টা করেছেন। এটি উৎসাহজনক শোনালেও আসলে এইচটিএসের এই নেতা বাস্তববাদী। ক্ষমতার জন্য সাময়িকভাবে এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। ভবিষ্যতে আবার তাদের সঙ্গে কাজ করতেও পারেন।
সিরিয়ার বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকে সরকার কীভাবে শাসন করবে, তা একটি লাখ টাকার প্রশ্ন। জোলানি খ্রিষ্টান, দ্রুস এবং অন্য সংখ্যালঘু নেতাদের বলেছেন, তাঁরা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারবেন। কিন্তু তাঁর অনুসারীরা ইসলামের কট্টরপন্থায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাঁদের গ্রুপের ট্র্যাক রেকর্ড মিশ্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রিপোর্ট বলছে, এইচটিএস সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বাস্তুচ্যুত খ্রিষ্টানদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দেশের কিছু অংশে খ্রিষ্টধর্ম প্রকাশ্য পালনের ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা দিয়ে রেখেছে।
এখন এইচটিএস যদি তাদের কট্টর সমর্থকদের রাশ টানার চেষ্টা করে, তাহলে ইসলামিক স্টেটের ক্ষমতা বাড়তে পারে। সর্বশেষ হামলার আগে, ইসলামিক স্টেট ২০২৪ সালে তার আগের বছরের তুলনায় হামলার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। এখন ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের আনুমানিক আড়াই হাজার যোদ্ধা রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে। সিরিয়ায় হাজার হাজার ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাকেও আটক করা হয়েছে। তবে কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। যেহেতু বিভিন্ন বিরোধী দল ক্ষমতার জন্য কামড়াকামড়ি করতে পারে, সেই সুযোগে ইসলামিক স্টেট তার কার্যক্রমকে জোরদার করে আরও বেশি এলাকায় ছড়িয়ে দিতে পারে।
এইচটিএস ক্ষমতা সুসংহত করতে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে এবং একটি স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। যদিও তারা এখন সিরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী বিরোধী দল, তবে একমাত্র নয়। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কুর্দি-অধ্যুষিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) সঙ্গে কাজ করছে। সেখানে প্রায় ৯০০ মার্কিন সেনা রয়েছে। সুযোগ বুঝে এসডিএফও আরও এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন অংশে স্থানীয় মিলিশিয়ারাও বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়েছে। এসবের মধ্য থেকে একটি ঐক্যবদ্ধ সরকার হতে পারে। আর না হলে তারা ক্ষমতার জন্য পরস্পরের দিকে বন্দুক তাক করতে পারে।
এটা সম্ভব যে এইচটিএসসহ বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা বাশার আল-আসাদের সমর্থক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে আলাউইতদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারে। এরাই আসাদ সরকারের মূল অংশ। নিজের ক্ষমতা বাড়াতে বাশার আল-আসাদ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানদের দাবিয়ে রেখেছিলেন। আর এটা করতে গিয়ে আলাউইত, খ্রিষ্টান, দ্রুস ও অন্য সংখ্যালঘুদের একটি জোটকে একত্র করেছিলেন। এখন যেহেতু দেশের বেশির ভাগ ক্ষমতা সুন্নিদের হাতে ফিরে এসেছে, ফলে উল্টো ঘটনা ঘটতে পারে। এটি আগেও ঘটেছে—২০০৩ সালে বাথ পার্টির সদস্যরা ইরাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়াদের হামলার শিকার হয়েছিলেন, কারণ শিয়ারা বাথ পার্টির শাসনামলে নৃশংসতার জন্য তাদের দায়ী করেছিল। সিরীয়দের কাছে এমন লোকদের ঘৃণা করার উপযুক্ত কারণ রয়েছে।
যদি বিশৃঙ্খলা, প্রতিশোধ ও অন্তর্দ্বন্দ্ব সিরিয়ার কিছু অংশ গ্রাস করে তবে পরিস্থিতি ভালোর বদলে আরও খারাপ হতে পারে। যুদ্ধের ফলে সিরিয়ার মধ্যে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ৫০ লাখের বেশি অন্য দেশে শরণার্থী হয়েছে। সুসংবাদটি হলো যে এই শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই যারা তুরস্ক, লেবানন ও অন্যান্য দেশে বসবাস করছে, তারা ফিরে আসতে পারে। তবে বাশার আল-আসাদের সমর্থক গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হলে তারা ব্যাপকহারে পালাতে পারে। তাদের তখন কোনো আশ্রয়দাতা দেশের প্রয়োজন হবে। সম্ভাব্য যেসব দেশ হতে পারে তারা ইতিমধ্যে চাপে রয়েছে। আর বর্তমান উদ্বাস্তুরা ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরগুলোতে ফিরে এলেও একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনর্নির্মাণ করতে কয়েক দশক লাগবে।
তবে বৈশ্বিক সাহায্যের কোনো লক্ষণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেছেন, সিরিয়ায় তাঁরা ‘জড়িত হবেন না’! ইউক্রেন, সুদান ও গাজার যুদ্ধগুলো সমস্ত বিশ্বের সাহায্য দাবি করে। কিন্তু পশ্চিমা সরকাররা এইচটিএসের সঙ্গে কাজ করতে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন হবে, এমনকি মানবিক কারণেও।
ওয়াশিংটনের বিদায়ী ও ভাবী প্রশাসন যদি আরও আঞ্চলিক ছায়াযুদ্ধ, একটি নতুন মানবিক সংকট এড়াতে চায় তাহলে আগামী কয়েক মাস সতর্ক কূটনৈতিক তৎপরতা ও এই এলাকায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে হবে। সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করার এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি আদায়ে এইচটিএসকে চাপ দিতে মার্কিন নেতাদের তাঁদের মিত্রদের সঙ্গে কাজ করা উচিত। তুরস্ক ও ইসরায়েলের মতো আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে তাদের হস্তক্ষেপকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
আমরা সবাই আশা করতে পারি যে সিরিয়া তার ভয়ংকর অতীতকে পেছনে ফেলে এসেছে। কিন্তু আশা কোনো নীতি নয়। নৃশংস শাসন ও ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধের দীর্ঘ উত্তরাধিকার রয়েছে দেশটির। একটি সুনির্দিষ্ট মার্কিন প্রচেষ্টা সিরিয়ার সব সমস্যার সমাধান না করতে পারলেও কিছু সমস্যার সমাধান করতে পারে।
লেখক: ড্যানিয়েল বাইম্যান
অধ্যাপক, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি
(নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)
ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের শাসন থেকে মুক্ত উচ্ছ্বসিত সিরিয়ানদের মূর্তি ভাঙার ছবি দেখার এবং বন্দীদের আনন্দধ্বনি শোনার সময় ভালো না লাগাটা কঠিন। বন্দিশালায় এদের অনেকেই হয়তো অত্যাচারিত ও ক্ষুধার্ত ছিলেন। এখন অন্ধকূপ থেকে তাঁরা মুক্তি পেয়েছেন। বাশার আল-আসাদের সিরিয়া বিরোধীদের জন্য নৃশংস ছিল। ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধ ও চৌর্যবৃত্তির শাসনে সিরিয়ার সাধারণ নাগরিকদের জীবন বিপজ্জনক ও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। মানুষের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হওয়া ঠেকানোর পাশাপাশি বাশার আল-আসাদের পতন মধ্যপ্রাচ্যের দাবা বোর্ড থেকে ইরান-সমর্থিত, আমেরিকা-বিরোধী এবং ইসরায়েল-বিরোধী একনায়ককে সরিয়ে দিল।
এত কিছুর পরেও অস্বস্তি বোধ না করাটাও কঠিন। ২০০১ সালে তালেবানের সহিংস শাসন থেকে মুক্ত হওয়া আফগানদের এবং সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ২০০৩ সালে উল্লসিত ইরাকিদের অনুরূপ চিত্র দেখার পর আজ সিরিয়াবাসীর গভীর স্বস্তির মধ্যে কেউ কেউ অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। কারণ, না জানি আগামীকাল নতুন কোনো ভয়াবহতার মুখোমুখি হতে হয়!
সিরিয়া ও এর প্রতিবেশীদের মূল অনিশ্চয়তা হলো তাদের মুক্তিদাতাদের প্রকৃত পরিচয়। হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) বাশারবিরোধী আক্রমণের সর্বশেষ রাউন্ডকে জয়ের দিকে নিয়ে গেছে। ২৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বাশার আল-আসাদকে বিদায় করার পর তারাই বিভিন্ন বিরোধীপক্ষের মধ্যে প্রভাবশালী। যুক্তরাষ্ট্র এইচটিএস ও এর নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানিকে সন্ত্রাসী বলেই মনে করে। জোলানির মাথার দাম এক কোটি ডলার।
এইচটিএস অনেকটা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতো। এর বেড়ে ওঠা জাভাত আল-নুসরা থেকে। এই নুসরা আবার উদ্ভূত হয়েছিল ইরাকের আল-কায়েদা থেকে। জোলানিও প্রাথমিকভাবে আল-কায়েদার প্রতি অনুগত ছিলেন, এমনকি আইএসআইএসের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও। কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি প্রকাশ্যে আল-কায়েদার সংস্রব ত্যাগ করে এইচটিএস গঠন করেন। এক বছর পরে জোলানি বারবার বলতে থাকেন যে তিনি বিদেশি সন্ত্রাসী হামলার বিরোধিতা করেন এবং আইএসআইএসের মতো খিলাফতের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। পাশাপাশি এইচটিএস-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তিনি আল-কায়েদা এবং আইএসআইএসের অনুগত যোদ্ধাদের দমন করার চেষ্টা করেছেন। এটি উৎসাহজনক শোনালেও আসলে এইচটিএসের এই নেতা বাস্তববাদী। ক্ষমতার জন্য সাময়িকভাবে এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। ভবিষ্যতে আবার তাদের সঙ্গে কাজ করতেও পারেন।
সিরিয়ার বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকে সরকার কীভাবে শাসন করবে, তা একটি লাখ টাকার প্রশ্ন। জোলানি খ্রিষ্টান, দ্রুস এবং অন্য সংখ্যালঘু নেতাদের বলেছেন, তাঁরা স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে পারবেন। কিন্তু তাঁর অনুসারীরা ইসলামের কট্টরপন্থায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাঁদের গ্রুপের ট্র্যাক রেকর্ড মিশ্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রিপোর্ট বলছে, এইচটিএস সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বাস্তুচ্যুত খ্রিষ্টানদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দেশের কিছু অংশে খ্রিষ্টধর্ম প্রকাশ্য পালনের ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা দিয়ে রেখেছে।
এখন এইচটিএস যদি তাদের কট্টর সমর্থকদের রাশ টানার চেষ্টা করে, তাহলে ইসলামিক স্টেটের ক্ষমতা বাড়তে পারে। সর্বশেষ হামলার আগে, ইসলামিক স্টেট ২০২৪ সালে তার আগের বছরের তুলনায় হামলার সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। এখন ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের আনুমানিক আড়াই হাজার যোদ্ধা রয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে। সিরিয়ায় হাজার হাজার ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধাকেও আটক করা হয়েছে। তবে কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। যেহেতু বিভিন্ন বিরোধী দল ক্ষমতার জন্য কামড়াকামড়ি করতে পারে, সেই সুযোগে ইসলামিক স্টেট তার কার্যক্রমকে জোরদার করে আরও বেশি এলাকায় ছড়িয়ে দিতে পারে।
এইচটিএস ক্ষমতা সুসংহত করতে, প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে এবং একটি স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। যদিও তারা এখন সিরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী বিরোধী দল, তবে একমাত্র নয়। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কুর্দি-অধ্যুষিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) সঙ্গে কাজ করছে। সেখানে প্রায় ৯০০ মার্কিন সেনা রয়েছে। সুযোগ বুঝে এসডিএফও আরও এলাকা নিজেদের দখলে নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন অংশে স্থানীয় মিলিশিয়ারাও বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়েছে। এসবের মধ্য থেকে একটি ঐক্যবদ্ধ সরকার হতে পারে। আর না হলে তারা ক্ষমতার জন্য পরস্পরের দিকে বন্দুক তাক করতে পারে।
এটা সম্ভব যে এইচটিএসসহ বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা বাশার আল-আসাদের সমর্থক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে আলাউইতদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারে। এরাই আসাদ সরকারের মূল অংশ। নিজের ক্ষমতা বাড়াতে বাশার আল-আসাদ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলমানদের দাবিয়ে রেখেছিলেন। আর এটা করতে গিয়ে আলাউইত, খ্রিষ্টান, দ্রুস ও অন্য সংখ্যালঘুদের একটি জোটকে একত্র করেছিলেন। এখন যেহেতু দেশের বেশির ভাগ ক্ষমতা সুন্নিদের হাতে ফিরে এসেছে, ফলে উল্টো ঘটনা ঘটতে পারে। এটি আগেও ঘটেছে—২০০৩ সালে বাথ পার্টির সদস্যরা ইরাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়াদের হামলার শিকার হয়েছিলেন, কারণ শিয়ারা বাথ পার্টির শাসনামলে নৃশংসতার জন্য তাদের দায়ী করেছিল। সিরীয়দের কাছে এমন লোকদের ঘৃণা করার উপযুক্ত কারণ রয়েছে।
যদি বিশৃঙ্খলা, প্রতিশোধ ও অন্তর্দ্বন্দ্ব সিরিয়ার কিছু অংশ গ্রাস করে তবে পরিস্থিতি ভালোর বদলে আরও খারাপ হতে পারে। যুদ্ধের ফলে সিরিয়ার মধ্যে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ৫০ লাখের বেশি অন্য দেশে শরণার্থী হয়েছে। সুসংবাদটি হলো যে এই শরণার্থীদের মধ্যে অনেকেই যারা তুরস্ক, লেবানন ও অন্যান্য দেশে বসবাস করছে, তারা ফিরে আসতে পারে। তবে বাশার আল-আসাদের সমর্থক গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হলে তারা ব্যাপকহারে পালাতে পারে। তাদের তখন কোনো আশ্রয়দাতা দেশের প্রয়োজন হবে। সম্ভাব্য যেসব দেশ হতে পারে তারা ইতিমধ্যে চাপে রয়েছে। আর বর্তমান উদ্বাস্তুরা ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরগুলোতে ফিরে এলেও একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনর্নির্মাণ করতে কয়েক দশক লাগবে।
তবে বৈশ্বিক সাহায্যের কোনো লক্ষণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেছেন, সিরিয়ায় তাঁরা ‘জড়িত হবেন না’! ইউক্রেন, সুদান ও গাজার যুদ্ধগুলো সমস্ত বিশ্বের সাহায্য দাবি করে। কিন্তু পশ্চিমা সরকাররা এইচটিএসের সঙ্গে কাজ করতে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন হবে, এমনকি মানবিক কারণেও।
ওয়াশিংটনের বিদায়ী ও ভাবী প্রশাসন যদি আরও আঞ্চলিক ছায়াযুদ্ধ, একটি নতুন মানবিক সংকট এড়াতে চায় তাহলে আগামী কয়েক মাস সতর্ক কূটনৈতিক তৎপরতা ও এই এলাকায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে হবে। সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করার এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি আদায়ে এইচটিএসকে চাপ দিতে মার্কিন নেতাদের তাঁদের মিত্রদের সঙ্গে কাজ করা উচিত। তুরস্ক ও ইসরায়েলের মতো আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে তাদের হস্তক্ষেপকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
আমরা সবাই আশা করতে পারি যে সিরিয়া তার ভয়ংকর অতীতকে পেছনে ফেলে এসেছে। কিন্তু আশা কোনো নীতি নয়। নৃশংস শাসন ও ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধের দীর্ঘ উত্তরাধিকার রয়েছে দেশটির। একটি সুনির্দিষ্ট মার্কিন প্রচেষ্টা সিরিয়ার সব সমস্যার সমাধান না করতে পারলেও কিছু সমস্যার সমাধান করতে পারে।
লেখক: ড্যানিয়েল বাইম্যান
অধ্যাপক, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি
(নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে এসেছে। ১৩ বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার যদিও বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরলে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা সম্ভব হবে না, কিন
১১ মিনিট আগেএই ভরা মৌসুমে একটা ফুলকপির দাম ৪০/৫০/৬০ টাকা। কিছুদিন আগে আরও বেশি ছিল বলে শুনেছি। প্রশ্ন—এতে কী অসুবিধা? যার টাকা আছে সে কিনে খাবে, যার নেই সে খাবে না। দাম-দর করতে করতে দোকানের পাশ দিয়ে চলে যাবে। দেখা যাচ্ছে, এখানে প্রশ্নটা দামের নয়, ৪০/৫০/৬০ টাকার নয়। প্রশ্নটা ক্রয়ক্ষমতার। এই আলোচনাটা কম।
১ দিন আগেবিসিএসের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে সারদায় পুলিশ একাডেমিতে এক বছরের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। রীতি-নীতি অনুযায়ী, এক বছরের এক দিন বেশিও প্রশিক্ষণে রাখার সুযোগ নেই। ৪০তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া এএসপিদের এক বছর শেষ হয়েছে আরও দুই মাস আগে। কিন্তু এখনো এই ব্যাচের পাসিং
১ দিন আগেযুদ্ধ চলাকালে সংবাদপত্রে সেন্সরশিপ আরোপ ও তার মধ্যে কাজ করা নিয়ে একটু কথা বলে নেওয়া যাক। অবরুদ্ধ বাংলার জীবন ছিল বিচিত্র। দুই ধরনের মনোভঙ্গি গড়ে উঠেছিল সে সময়ের নাগরিকদের মধ্যে। একটি হলো, প্রতি মুহূর্তে ছিল অনিশ্চয়তা। কখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হতে হবে কিংবা নিহত হতে হবে, তা ছিল..
১ দিন আগে