বিভুরঞ্জন সরকার

সাপ্তাহিক চলতিপত্রে (১৯৯৬ সালে প্রকাশিত) আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ মকবুল হোসেন এবং তাঁর এক ছেলেকে নিয়ে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। রিপোর্টটি তৈরি করেছিলেন আহসান কবির। এখন বৈশাখী টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান। কবির সম্পর্কে লিখলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। কবির সেই যায়যায়দিন থেকেই আমার সঙ্গে ছিলেন। ওর লেখার স্টাইল আমি পছন্দ করতাম। তাই বিশেষ কিছু মাথায় এলে ডাকতাম কবিরকে। সামান্য ব্রিফ করলেই কবির বুঝে যেতেন, আমি কি চাই। তিনি তথ্য সংগ্রহে অত্যন্ত পটু ছিলেন। আবার গল্প লেখার হাত ছিল বলে একটি নীরস প্রতিবেদনকেও কবির রসে টইটম্বুর করে পরিবেশন করতে পারতেন। তাঁর লেখা সরেজমিন প্রতিবেদন ছিল এফোঁড়–ওফোঁড় করা।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে কবিরের প্রতিবেদন হলো মৌচাকে ঢিল ছোড়ার মতো। হুল কীভাবে আমাকে বিঁধল সেটাই বলছি।
তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মকবুল সাহেব ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত দাপুটে এমপি। তাঁকে নিন্দামন্দ করেই সেই প্রতিবেদন। চলতিপত্র বাজারে যাওয়ার পর মনে হলো একটি প্রচণ্ড বোমা ফাটল, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকায়।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে চলতিপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নানাজন নানাভাবে আমাকে সাবধান-সতর্ক করতে লাগলেন। পত্রিকা যেদিন বাজারে যায়, সে রাতে বাসার ল্যান্ডফোনটি বেজে উঠলে রিসিভার তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই অপর প্রান্ত থেকে শুনলাম অত্যন্ত মোলায়েম কিন্তু অপরিচিত একটি কণ্ঠ।
‘ভালো আছেন দাদা?’ আমি ‘ভালো আছি’ বলতেই ওদিকের কণ্ঠ—‘ছোট ভাইকে বিপদে ফেলে ভালো তো থাকবেনই।’
আমি জানতে চাইলাম, ‘কার সঙ্গে কথা বলছি?’ এবার সরাসরি জবাব—‘দাদা, ছোট ভাইয়ের নাম মকবুল, আলহাজ মকবুল হোসেন, এমপি।’
আমার গলা একটু শুকিয়ে এল। তিনি আমার ছোট ভাই? বিগ ব্রাদার বললে না জুতসই হতো! ‘খাইছে আমারে’, মনে মনে বলে উঠলাম। চলতিপত্রের প্রতিবেদন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বললেন, ‘এই কাজটা ভালো করেননি দাদা। আমি যে আপনার কী ক্ষতি করতে পারি, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকলে আপনি এমন কাজ করতেন না।’
তিনি আমার কাছে প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা চাইলেন এবং বললেন, ‘তার “ছেলেরা” ওই প্রতিবেদককে ধরে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে।’ পেলে বেচারার কী যে অবস্থা হবে, আল্লাই মালুম। আমি আহসান কবিরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলাম। মকবুল সাহেবের ‘ছেলে’রা ওকে সামনে পেলে যে কিমা বানাবে, সেটা বুঝতে পারলাম। ঝামেলা না বাড়িয়ে আমি আত্মসমর্পণ করার ভঙ্গিতে বললাম, ‘যা হওয়ার হয়েছে, সব ভুলে যান। একটি প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে দিন, পরের সংখ্যায় ছাপিয়ে দেব।’
মকবুল সাহেব বলেন, ‘এত সহজে তো ঘটনা শেষ হবে না দাদা। যেভাবে আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের চরিত্রহানি করা হয়েছে, সুনামহানি করা হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ কি একটি প্রতিবাদপত্রে শেষ হতে পারে? আপনি আমাদের পক্ষের লোক। তাই আপনার প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। তারপরও আমি আপনার এবং আপনার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কিছু না করে পারব না। “ছেলেরা” কখন কোথায় কী করে ফেলবে, তা হয়তো আমি জানবও না!’ এমন কথা শুনে বুকের ভেতরে একটু মোচড় দিয়ে না উঠে পারে?
প্রতিবেদনটিতে এমন সব তথ্য আছে যেগুলো ‘অসত্য’ বলা যাবে না। আবার প্রমাণ করাও সহজ নয়। দুর্নীতি-অনিয়ম কেউ সাক্ষী-সাবুদ রেখে করে না। তাই মকবুল সাহেব ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো করা হয়েছিল এম আর আখতারের ‘শোনা যায়’, ‘জানা যায়’ স্টাইলে।
মকবুল সাহেব বলেন, ‘আমি যদি এখন আমার দৈনিকে আপনার বিরুদ্ধে লিখি যে, গতরাতে চলতিপত্র সম্পাদককে টানবাজার থেকে মদ্যপ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে “জানা যায়”, তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা?’
আমি কিছুটা অসহায় বোধ করি। মকবুল সাহেব ইচ্ছা করলে পারেন না, এমন কী আর আছে। দৈনিক আল-আমিন নামে তাঁর একটি পত্রিকা ছিল, যার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন আবার ‘বঙ্গবীর’ বলে পরিচিত টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী। ওই দৈনিকে সত্যি যদি আমার নামে কোনো একটা ‘শোনা যায়’ নিউজ ছেপে দেয়? এবার ভয় আমাকে পেয়ে বসে। আমি বেশ বুঝতে পারি মকবুল সাহেব আমাকে ভয়ই দেখাতে চান। আমি ভয় পেয়ে ভেতরে-ভেতরে মুশকিল আসানের পথ খুঁজতে থাকি!
পথ একটা পেয়েছিলাম বলেই আজও পাঠকদের সামনে হাজির হতে পারছি। কিন্তু পথটি কী পেলাম? মকবুল হোসেন এমপি আমাকে কথার প্যাঁচে ফেলতে চান বুঝতে পেরে আমিও রেহাই পাওয়ার উপায় খুঁজতে থাকি। তিনি ক্ষমতাবান, বিত্তবান মানুষ। শাসক দলের সংসদ সদস্য। তাঁর ‘সমর্থক’ বাহিনী আছে। তাঁর ছেলেও ‘বাপকা বেটা’। এসব চলতিপত্রের প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে। মকবুল সাহেব ইচ্ছে করলে আমাকে যা খুশি, তাই করতে পারেন।
তিনি আমাকে বারবার চাপ দিতে থাকেন প্রতিবেদকের ঠিকানা দেওয়ার জন্য। আমি আহসান কবিরের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ি। নিজের জন্যও একটু চিন্তা হয়। আবার মনে হয়, ক্ষমতায় যেহেতু আওয়ামী লীগ, আমাকে বেশি হেনস্তা করার ঝুঁকি হয়তো তিনি নেবেন না।
আমি তাঁকে বলি, ‘ভাই, আপনি এত বড় মনের এবং বড় মাপের একজন মানুষ—কোথাকার কোন আহসান কবিরের এক রিপোর্ট, যা কিনা ছাপা হয়েছে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়, এটা নিয়ে হইচই করা কি আপনার মানায়? আপনি হলেন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আপনার পক্ষে-বিপক্ষে কত কথা বলা হয়, হবে। সব কথা কি সত্য? আর সব কথা কি ধরতে হয়?’
মকবুল হোসেন একটু নরম হন। তারপরও বলেন, ‘আপনার কাগজের প্রতিবেদনে আমার মানহানি হয়েছে। আমি একটা মানহানির মামলা করব।’ আমি মামলার ঝামেলা এড়াতে চাই। হঠাৎ জোঁকের মুখে লবণ দিলে জোঁক শেষ! মকবুল সাহেবকে ঠান্ডা করার জন্য আমি একটা গল্প ফাঁদি। বলি, ‘কাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা তখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন) এবং অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবের সঙ্গে আমার একটি বৈঠক আছে...।’
আমার বাক্য শেষ হওয়ার আগেই মকবুল সাহেব বিগলিত কণ্ঠে বলেন, ‘এই তো দেখেন দাদা। আমরা হলাম এক মত-পথের লোক। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকা উচিত নয়!’ বুঝতে পারি ওষুধ কাজে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার মিটিংয়ের কথা শুনে মকবুল সাহেব হয়তো ভেবেছেন তাঁর প্রসঙ্গ যদি আমি সেখানে তুলি!
আমার মিটিং ছিল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর কথা বলেছিলাম জোঁকের মুখে নুনের ছিটা দেওয়ার জন্য এবং সত্যি তাতে কাজ হয়। মকবুল সাহেব ভয় দেখানো বন্ধ করে বললেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে দাদা। আপনি আর এটা বাড়াইয়েন না। আমিও পোলাপানগো ঠান্ডা থাকতে কমু।’ আমি বলি, ‘সেটাই ভালো। আপনি এটা নিয়ে কিছু করতে গেলে পত্রিকায় খবর ছাপা হবে। এখন যে বিষয়টি কম লোকে জানে, তখন নানাভাবে বেশি লোকে জানবে। এটা আপনার জন্যই অসম্মানজনক হবে।’ মকবুল সাহেব বলেন, ‘আপনার পত্রিকা ভালো হচ্ছে দাদা। চালিয়ে যান।’ পরস্পরকে শুভকামনা জানিয়ে আমাদের ফোনালাপ শেষ হয়। আমি আমার বুক থেকে ভয়ের বোঝা নামিয়ে ফেলে স্বস্তি বোধ করি।
বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

সাপ্তাহিক চলতিপত্রে (১৯৯৬ সালে প্রকাশিত) আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ মকবুল হোসেন এবং তাঁর এক ছেলেকে নিয়ে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। রিপোর্টটি তৈরি করেছিলেন আহসান কবির। এখন বৈশাখী টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান। কবির সম্পর্কে লিখলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। কবির সেই যায়যায়দিন থেকেই আমার সঙ্গে ছিলেন। ওর লেখার স্টাইল আমি পছন্দ করতাম। তাই বিশেষ কিছু মাথায় এলে ডাকতাম কবিরকে। সামান্য ব্রিফ করলেই কবির বুঝে যেতেন, আমি কি চাই। তিনি তথ্য সংগ্রহে অত্যন্ত পটু ছিলেন। আবার গল্প লেখার হাত ছিল বলে একটি নীরস প্রতিবেদনকেও কবির রসে টইটম্বুর করে পরিবেশন করতে পারতেন। তাঁর লেখা সরেজমিন প্রতিবেদন ছিল এফোঁড়–ওফোঁড় করা।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে কবিরের প্রতিবেদন হলো মৌচাকে ঢিল ছোড়ার মতো। হুল কীভাবে আমাকে বিঁধল সেটাই বলছি।
তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মকবুল সাহেব ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত দাপুটে এমপি। তাঁকে নিন্দামন্দ করেই সেই প্রতিবেদন। চলতিপত্র বাজারে যাওয়ার পর মনে হলো একটি প্রচণ্ড বোমা ফাটল, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকায়।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে চলতিপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নানাজন নানাভাবে আমাকে সাবধান-সতর্ক করতে লাগলেন। পত্রিকা যেদিন বাজারে যায়, সে রাতে বাসার ল্যান্ডফোনটি বেজে উঠলে রিসিভার তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই অপর প্রান্ত থেকে শুনলাম অত্যন্ত মোলায়েম কিন্তু অপরিচিত একটি কণ্ঠ।
‘ভালো আছেন দাদা?’ আমি ‘ভালো আছি’ বলতেই ওদিকের কণ্ঠ—‘ছোট ভাইকে বিপদে ফেলে ভালো তো থাকবেনই।’
আমি জানতে চাইলাম, ‘কার সঙ্গে কথা বলছি?’ এবার সরাসরি জবাব—‘দাদা, ছোট ভাইয়ের নাম মকবুল, আলহাজ মকবুল হোসেন, এমপি।’
আমার গলা একটু শুকিয়ে এল। তিনি আমার ছোট ভাই? বিগ ব্রাদার বললে না জুতসই হতো! ‘খাইছে আমারে’, মনে মনে বলে উঠলাম। চলতিপত্রের প্রতিবেদন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বললেন, ‘এই কাজটা ভালো করেননি দাদা। আমি যে আপনার কী ক্ষতি করতে পারি, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকলে আপনি এমন কাজ করতেন না।’
তিনি আমার কাছে প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা চাইলেন এবং বললেন, ‘তার “ছেলেরা” ওই প্রতিবেদককে ধরে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে।’ পেলে বেচারার কী যে অবস্থা হবে, আল্লাই মালুম। আমি আহসান কবিরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলাম। মকবুল সাহেবের ‘ছেলে’রা ওকে সামনে পেলে যে কিমা বানাবে, সেটা বুঝতে পারলাম। ঝামেলা না বাড়িয়ে আমি আত্মসমর্পণ করার ভঙ্গিতে বললাম, ‘যা হওয়ার হয়েছে, সব ভুলে যান। একটি প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে দিন, পরের সংখ্যায় ছাপিয়ে দেব।’
মকবুল সাহেব বলেন, ‘এত সহজে তো ঘটনা শেষ হবে না দাদা। যেভাবে আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের চরিত্রহানি করা হয়েছে, সুনামহানি করা হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ কি একটি প্রতিবাদপত্রে শেষ হতে পারে? আপনি আমাদের পক্ষের লোক। তাই আপনার প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। তারপরও আমি আপনার এবং আপনার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কিছু না করে পারব না। “ছেলেরা” কখন কোথায় কী করে ফেলবে, তা হয়তো আমি জানবও না!’ এমন কথা শুনে বুকের ভেতরে একটু মোচড় দিয়ে না উঠে পারে?
প্রতিবেদনটিতে এমন সব তথ্য আছে যেগুলো ‘অসত্য’ বলা যাবে না। আবার প্রমাণ করাও সহজ নয়। দুর্নীতি-অনিয়ম কেউ সাক্ষী-সাবুদ রেখে করে না। তাই মকবুল সাহেব ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো করা হয়েছিল এম আর আখতারের ‘শোনা যায়’, ‘জানা যায়’ স্টাইলে।
মকবুল সাহেব বলেন, ‘আমি যদি এখন আমার দৈনিকে আপনার বিরুদ্ধে লিখি যে, গতরাতে চলতিপত্র সম্পাদককে টানবাজার থেকে মদ্যপ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে “জানা যায়”, তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা?’
আমি কিছুটা অসহায় বোধ করি। মকবুল সাহেব ইচ্ছা করলে পারেন না, এমন কী আর আছে। দৈনিক আল-আমিন নামে তাঁর একটি পত্রিকা ছিল, যার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন আবার ‘বঙ্গবীর’ বলে পরিচিত টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী। ওই দৈনিকে সত্যি যদি আমার নামে কোনো একটা ‘শোনা যায়’ নিউজ ছেপে দেয়? এবার ভয় আমাকে পেয়ে বসে। আমি বেশ বুঝতে পারি মকবুল সাহেব আমাকে ভয়ই দেখাতে চান। আমি ভয় পেয়ে ভেতরে-ভেতরে মুশকিল আসানের পথ খুঁজতে থাকি!
পথ একটা পেয়েছিলাম বলেই আজও পাঠকদের সামনে হাজির হতে পারছি। কিন্তু পথটি কী পেলাম? মকবুল হোসেন এমপি আমাকে কথার প্যাঁচে ফেলতে চান বুঝতে পেরে আমিও রেহাই পাওয়ার উপায় খুঁজতে থাকি। তিনি ক্ষমতাবান, বিত্তবান মানুষ। শাসক দলের সংসদ সদস্য। তাঁর ‘সমর্থক’ বাহিনী আছে। তাঁর ছেলেও ‘বাপকা বেটা’। এসব চলতিপত্রের প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে। মকবুল সাহেব ইচ্ছে করলে আমাকে যা খুশি, তাই করতে পারেন।
তিনি আমাকে বারবার চাপ দিতে থাকেন প্রতিবেদকের ঠিকানা দেওয়ার জন্য। আমি আহসান কবিরের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ি। নিজের জন্যও একটু চিন্তা হয়। আবার মনে হয়, ক্ষমতায় যেহেতু আওয়ামী লীগ, আমাকে বেশি হেনস্তা করার ঝুঁকি হয়তো তিনি নেবেন না।
আমি তাঁকে বলি, ‘ভাই, আপনি এত বড় মনের এবং বড় মাপের একজন মানুষ—কোথাকার কোন আহসান কবিরের এক রিপোর্ট, যা কিনা ছাপা হয়েছে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়, এটা নিয়ে হইচই করা কি আপনার মানায়? আপনি হলেন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আপনার পক্ষে-বিপক্ষে কত কথা বলা হয়, হবে। সব কথা কি সত্য? আর সব কথা কি ধরতে হয়?’
মকবুল হোসেন একটু নরম হন। তারপরও বলেন, ‘আপনার কাগজের প্রতিবেদনে আমার মানহানি হয়েছে। আমি একটা মানহানির মামলা করব।’ আমি মামলার ঝামেলা এড়াতে চাই। হঠাৎ জোঁকের মুখে লবণ দিলে জোঁক শেষ! মকবুল সাহেবকে ঠান্ডা করার জন্য আমি একটা গল্প ফাঁদি। বলি, ‘কাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা তখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন) এবং অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবের সঙ্গে আমার একটি বৈঠক আছে...।’
আমার বাক্য শেষ হওয়ার আগেই মকবুল সাহেব বিগলিত কণ্ঠে বলেন, ‘এই তো দেখেন দাদা। আমরা হলাম এক মত-পথের লোক। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকা উচিত নয়!’ বুঝতে পারি ওষুধ কাজে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার মিটিংয়ের কথা শুনে মকবুল সাহেব হয়তো ভেবেছেন তাঁর প্রসঙ্গ যদি আমি সেখানে তুলি!
আমার মিটিং ছিল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর কথা বলেছিলাম জোঁকের মুখে নুনের ছিটা দেওয়ার জন্য এবং সত্যি তাতে কাজ হয়। মকবুল সাহেব ভয় দেখানো বন্ধ করে বললেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে দাদা। আপনি আর এটা বাড়াইয়েন না। আমিও পোলাপানগো ঠান্ডা থাকতে কমু।’ আমি বলি, ‘সেটাই ভালো। আপনি এটা নিয়ে কিছু করতে গেলে পত্রিকায় খবর ছাপা হবে। এখন যে বিষয়টি কম লোকে জানে, তখন নানাভাবে বেশি লোকে জানবে। এটা আপনার জন্যই অসম্মানজনক হবে।’ মকবুল সাহেব বলেন, ‘আপনার পত্রিকা ভালো হচ্ছে দাদা। চালিয়ে যান।’ পরস্পরকে শুভকামনা জানিয়ে আমাদের ফোনালাপ শেষ হয়। আমি আমার বুক থেকে ভয়ের বোঝা নামিয়ে ফেলে স্বস্তি বোধ করি।
বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিভুরঞ্জন সরকার

সাপ্তাহিক চলতিপত্রে (১৯৯৬ সালে প্রকাশিত) আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ মকবুল হোসেন এবং তাঁর এক ছেলেকে নিয়ে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। রিপোর্টটি তৈরি করেছিলেন আহসান কবির। এখন বৈশাখী টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান। কবির সম্পর্কে লিখলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। কবির সেই যায়যায়দিন থেকেই আমার সঙ্গে ছিলেন। ওর লেখার স্টাইল আমি পছন্দ করতাম। তাই বিশেষ কিছু মাথায় এলে ডাকতাম কবিরকে। সামান্য ব্রিফ করলেই কবির বুঝে যেতেন, আমি কি চাই। তিনি তথ্য সংগ্রহে অত্যন্ত পটু ছিলেন। আবার গল্প লেখার হাত ছিল বলে একটি নীরস প্রতিবেদনকেও কবির রসে টইটম্বুর করে পরিবেশন করতে পারতেন। তাঁর লেখা সরেজমিন প্রতিবেদন ছিল এফোঁড়–ওফোঁড় করা।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে কবিরের প্রতিবেদন হলো মৌচাকে ঢিল ছোড়ার মতো। হুল কীভাবে আমাকে বিঁধল সেটাই বলছি।
তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মকবুল সাহেব ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত দাপুটে এমপি। তাঁকে নিন্দামন্দ করেই সেই প্রতিবেদন। চলতিপত্র বাজারে যাওয়ার পর মনে হলো একটি প্রচণ্ড বোমা ফাটল, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকায়।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে চলতিপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নানাজন নানাভাবে আমাকে সাবধান-সতর্ক করতে লাগলেন। পত্রিকা যেদিন বাজারে যায়, সে রাতে বাসার ল্যান্ডফোনটি বেজে উঠলে রিসিভার তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই অপর প্রান্ত থেকে শুনলাম অত্যন্ত মোলায়েম কিন্তু অপরিচিত একটি কণ্ঠ।
‘ভালো আছেন দাদা?’ আমি ‘ভালো আছি’ বলতেই ওদিকের কণ্ঠ—‘ছোট ভাইকে বিপদে ফেলে ভালো তো থাকবেনই।’
আমি জানতে চাইলাম, ‘কার সঙ্গে কথা বলছি?’ এবার সরাসরি জবাব—‘দাদা, ছোট ভাইয়ের নাম মকবুল, আলহাজ মকবুল হোসেন, এমপি।’
আমার গলা একটু শুকিয়ে এল। তিনি আমার ছোট ভাই? বিগ ব্রাদার বললে না জুতসই হতো! ‘খাইছে আমারে’, মনে মনে বলে উঠলাম। চলতিপত্রের প্রতিবেদন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বললেন, ‘এই কাজটা ভালো করেননি দাদা। আমি যে আপনার কী ক্ষতি করতে পারি, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকলে আপনি এমন কাজ করতেন না।’
তিনি আমার কাছে প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা চাইলেন এবং বললেন, ‘তার “ছেলেরা” ওই প্রতিবেদককে ধরে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে।’ পেলে বেচারার কী যে অবস্থা হবে, আল্লাই মালুম। আমি আহসান কবিরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলাম। মকবুল সাহেবের ‘ছেলে’রা ওকে সামনে পেলে যে কিমা বানাবে, সেটা বুঝতে পারলাম। ঝামেলা না বাড়িয়ে আমি আত্মসমর্পণ করার ভঙ্গিতে বললাম, ‘যা হওয়ার হয়েছে, সব ভুলে যান। একটি প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে দিন, পরের সংখ্যায় ছাপিয়ে দেব।’
মকবুল সাহেব বলেন, ‘এত সহজে তো ঘটনা শেষ হবে না দাদা। যেভাবে আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের চরিত্রহানি করা হয়েছে, সুনামহানি করা হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ কি একটি প্রতিবাদপত্রে শেষ হতে পারে? আপনি আমাদের পক্ষের লোক। তাই আপনার প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। তারপরও আমি আপনার এবং আপনার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কিছু না করে পারব না। “ছেলেরা” কখন কোথায় কী করে ফেলবে, তা হয়তো আমি জানবও না!’ এমন কথা শুনে বুকের ভেতরে একটু মোচড় দিয়ে না উঠে পারে?
প্রতিবেদনটিতে এমন সব তথ্য আছে যেগুলো ‘অসত্য’ বলা যাবে না। আবার প্রমাণ করাও সহজ নয়। দুর্নীতি-অনিয়ম কেউ সাক্ষী-সাবুদ রেখে করে না। তাই মকবুল সাহেব ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো করা হয়েছিল এম আর আখতারের ‘শোনা যায়’, ‘জানা যায়’ স্টাইলে।
মকবুল সাহেব বলেন, ‘আমি যদি এখন আমার দৈনিকে আপনার বিরুদ্ধে লিখি যে, গতরাতে চলতিপত্র সম্পাদককে টানবাজার থেকে মদ্যপ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে “জানা যায়”, তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা?’
আমি কিছুটা অসহায় বোধ করি। মকবুল সাহেব ইচ্ছা করলে পারেন না, এমন কী আর আছে। দৈনিক আল-আমিন নামে তাঁর একটি পত্রিকা ছিল, যার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন আবার ‘বঙ্গবীর’ বলে পরিচিত টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী। ওই দৈনিকে সত্যি যদি আমার নামে কোনো একটা ‘শোনা যায়’ নিউজ ছেপে দেয়? এবার ভয় আমাকে পেয়ে বসে। আমি বেশ বুঝতে পারি মকবুল সাহেব আমাকে ভয়ই দেখাতে চান। আমি ভয় পেয়ে ভেতরে-ভেতরে মুশকিল আসানের পথ খুঁজতে থাকি!
পথ একটা পেয়েছিলাম বলেই আজও পাঠকদের সামনে হাজির হতে পারছি। কিন্তু পথটি কী পেলাম? মকবুল হোসেন এমপি আমাকে কথার প্যাঁচে ফেলতে চান বুঝতে পেরে আমিও রেহাই পাওয়ার উপায় খুঁজতে থাকি। তিনি ক্ষমতাবান, বিত্তবান মানুষ। শাসক দলের সংসদ সদস্য। তাঁর ‘সমর্থক’ বাহিনী আছে। তাঁর ছেলেও ‘বাপকা বেটা’। এসব চলতিপত্রের প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে। মকবুল সাহেব ইচ্ছে করলে আমাকে যা খুশি, তাই করতে পারেন।
তিনি আমাকে বারবার চাপ দিতে থাকেন প্রতিবেদকের ঠিকানা দেওয়ার জন্য। আমি আহসান কবিরের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ি। নিজের জন্যও একটু চিন্তা হয়। আবার মনে হয়, ক্ষমতায় যেহেতু আওয়ামী লীগ, আমাকে বেশি হেনস্তা করার ঝুঁকি হয়তো তিনি নেবেন না।
আমি তাঁকে বলি, ‘ভাই, আপনি এত বড় মনের এবং বড় মাপের একজন মানুষ—কোথাকার কোন আহসান কবিরের এক রিপোর্ট, যা কিনা ছাপা হয়েছে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়, এটা নিয়ে হইচই করা কি আপনার মানায়? আপনি হলেন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আপনার পক্ষে-বিপক্ষে কত কথা বলা হয়, হবে। সব কথা কি সত্য? আর সব কথা কি ধরতে হয়?’
মকবুল হোসেন একটু নরম হন। তারপরও বলেন, ‘আপনার কাগজের প্রতিবেদনে আমার মানহানি হয়েছে। আমি একটা মানহানির মামলা করব।’ আমি মামলার ঝামেলা এড়াতে চাই। হঠাৎ জোঁকের মুখে লবণ দিলে জোঁক শেষ! মকবুল সাহেবকে ঠান্ডা করার জন্য আমি একটা গল্প ফাঁদি। বলি, ‘কাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা তখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন) এবং অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবের সঙ্গে আমার একটি বৈঠক আছে...।’
আমার বাক্য শেষ হওয়ার আগেই মকবুল সাহেব বিগলিত কণ্ঠে বলেন, ‘এই তো দেখেন দাদা। আমরা হলাম এক মত-পথের লোক। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকা উচিত নয়!’ বুঝতে পারি ওষুধ কাজে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার মিটিংয়ের কথা শুনে মকবুল সাহেব হয়তো ভেবেছেন তাঁর প্রসঙ্গ যদি আমি সেখানে তুলি!
আমার মিটিং ছিল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর কথা বলেছিলাম জোঁকের মুখে নুনের ছিটা দেওয়ার জন্য এবং সত্যি তাতে কাজ হয়। মকবুল সাহেব ভয় দেখানো বন্ধ করে বললেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে দাদা। আপনি আর এটা বাড়াইয়েন না। আমিও পোলাপানগো ঠান্ডা থাকতে কমু।’ আমি বলি, ‘সেটাই ভালো। আপনি এটা নিয়ে কিছু করতে গেলে পত্রিকায় খবর ছাপা হবে। এখন যে বিষয়টি কম লোকে জানে, তখন নানাভাবে বেশি লোকে জানবে। এটা আপনার জন্যই অসম্মানজনক হবে।’ মকবুল সাহেব বলেন, ‘আপনার পত্রিকা ভালো হচ্ছে দাদা। চালিয়ে যান।’ পরস্পরকে শুভকামনা জানিয়ে আমাদের ফোনালাপ শেষ হয়। আমি আমার বুক থেকে ভয়ের বোঝা নামিয়ে ফেলে স্বস্তি বোধ করি।
বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

সাপ্তাহিক চলতিপত্রে (১৯৯৬ সালে প্রকাশিত) আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য আলহাজ মকবুল হোসেন এবং তাঁর এক ছেলেকে নিয়ে একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। রিপোর্টটি তৈরি করেছিলেন আহসান কবির। এখন বৈশাখী টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রধান। কবির সম্পর্কে লিখলে লেখা অনেক বড় হয়ে যাবে। কবির সেই যায়যায়দিন থেকেই আমার সঙ্গে ছিলেন। ওর লেখার স্টাইল আমি পছন্দ করতাম। তাই বিশেষ কিছু মাথায় এলে ডাকতাম কবিরকে। সামান্য ব্রিফ করলেই কবির বুঝে যেতেন, আমি কি চাই। তিনি তথ্য সংগ্রহে অত্যন্ত পটু ছিলেন। আবার গল্প লেখার হাত ছিল বলে একটি নীরস প্রতিবেদনকেও কবির রসে টইটম্বুর করে পরিবেশন করতে পারতেন। তাঁর লেখা সরেজমিন প্রতিবেদন ছিল এফোঁড়–ওফোঁড় করা।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে কবিরের প্রতিবেদন হলো মৌচাকে ঢিল ছোড়ার মতো। হুল কীভাবে আমাকে বিঁধল সেটাই বলছি।
তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মকবুল সাহেব ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত দাপুটে এমপি। তাঁকে নিন্দামন্দ করেই সেই প্রতিবেদন। চলতিপত্র বাজারে যাওয়ার পর মনে হলো একটি প্রচণ্ড বোমা ফাটল, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকায়।
মকবুল হোসেন ও তাঁর ছেলেকে নিয়ে চলতিপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নানাজন নানাভাবে আমাকে সাবধান-সতর্ক করতে লাগলেন। পত্রিকা যেদিন বাজারে যায়, সে রাতে বাসার ল্যান্ডফোনটি বেজে উঠলে রিসিভার তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই অপর প্রান্ত থেকে শুনলাম অত্যন্ত মোলায়েম কিন্তু অপরিচিত একটি কণ্ঠ।
‘ভালো আছেন দাদা?’ আমি ‘ভালো আছি’ বলতেই ওদিকের কণ্ঠ—‘ছোট ভাইকে বিপদে ফেলে ভালো তো থাকবেনই।’
আমি জানতে চাইলাম, ‘কার সঙ্গে কথা বলছি?’ এবার সরাসরি জবাব—‘দাদা, ছোট ভাইয়ের নাম মকবুল, আলহাজ মকবুল হোসেন, এমপি।’
আমার গলা একটু শুকিয়ে এল। তিনি আমার ছোট ভাই? বিগ ব্রাদার বললে না জুতসই হতো! ‘খাইছে আমারে’, মনে মনে বলে উঠলাম। চলতিপত্রের প্রতিবেদন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বললেন, ‘এই কাজটা ভালো করেননি দাদা। আমি যে আপনার কী ক্ষতি করতে পারি, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকলে আপনি এমন কাজ করতেন না।’
তিনি আমার কাছে প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা চাইলেন এবং বললেন, ‘তার “ছেলেরা” ওই প্রতিবেদককে ধরে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে।’ পেলে বেচারার কী যে অবস্থা হবে, আল্লাই মালুম। আমি আহসান কবিরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলাম। মকবুল সাহেবের ‘ছেলে’রা ওকে সামনে পেলে যে কিমা বানাবে, সেটা বুঝতে পারলাম। ঝামেলা না বাড়িয়ে আমি আত্মসমর্পণ করার ভঙ্গিতে বললাম, ‘যা হওয়ার হয়েছে, সব ভুলে যান। একটি প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে দিন, পরের সংখ্যায় ছাপিয়ে দেব।’
মকবুল সাহেব বলেন, ‘এত সহজে তো ঘটনা শেষ হবে না দাদা। যেভাবে আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের চরিত্রহানি করা হয়েছে, সুনামহানি করা হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ কি একটি প্রতিবাদপত্রে শেষ হতে পারে? আপনি আমাদের পক্ষের লোক। তাই আপনার প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। তারপরও আমি আপনার এবং আপনার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কিছু না করে পারব না। “ছেলেরা” কখন কোথায় কী করে ফেলবে, তা হয়তো আমি জানবও না!’ এমন কথা শুনে বুকের ভেতরে একটু মোচড় দিয়ে না উঠে পারে?
প্রতিবেদনটিতে এমন সব তথ্য আছে যেগুলো ‘অসত্য’ বলা যাবে না। আবার প্রমাণ করাও সহজ নয়। দুর্নীতি-অনিয়ম কেউ সাক্ষী-সাবুদ রেখে করে না। তাই মকবুল সাহেব ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো করা হয়েছিল এম আর আখতারের ‘শোনা যায়’, ‘জানা যায়’ স্টাইলে।
মকবুল সাহেব বলেন, ‘আমি যদি এখন আমার দৈনিকে আপনার বিরুদ্ধে লিখি যে, গতরাতে চলতিপত্র সম্পাদককে টানবাজার থেকে মদ্যপ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে বলে “জানা যায়”, তাহলে কেমন হবে ব্যাপারটা?’
আমি কিছুটা অসহায় বোধ করি। মকবুল সাহেব ইচ্ছা করলে পারেন না, এমন কী আর আছে। দৈনিক আল-আমিন নামে তাঁর একটি পত্রিকা ছিল, যার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন আবার ‘বঙ্গবীর’ বলে পরিচিত টাঙ্গাইলের কাদের সিদ্দিকী। ওই দৈনিকে সত্যি যদি আমার নামে কোনো একটা ‘শোনা যায়’ নিউজ ছেপে দেয়? এবার ভয় আমাকে পেয়ে বসে। আমি বেশ বুঝতে পারি মকবুল সাহেব আমাকে ভয়ই দেখাতে চান। আমি ভয় পেয়ে ভেতরে-ভেতরে মুশকিল আসানের পথ খুঁজতে থাকি!
পথ একটা পেয়েছিলাম বলেই আজও পাঠকদের সামনে হাজির হতে পারছি। কিন্তু পথটি কী পেলাম? মকবুল হোসেন এমপি আমাকে কথার প্যাঁচে ফেলতে চান বুঝতে পেরে আমিও রেহাই পাওয়ার উপায় খুঁজতে থাকি। তিনি ক্ষমতাবান, বিত্তবান মানুষ। শাসক দলের সংসদ সদস্য। তাঁর ‘সমর্থক’ বাহিনী আছে। তাঁর ছেলেও ‘বাপকা বেটা’। এসব চলতিপত্রের প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে। মকবুল সাহেব ইচ্ছে করলে আমাকে যা খুশি, তাই করতে পারেন।
তিনি আমাকে বারবার চাপ দিতে থাকেন প্রতিবেদকের ঠিকানা দেওয়ার জন্য। আমি আহসান কবিরের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ি। নিজের জন্যও একটু চিন্তা হয়। আবার মনে হয়, ক্ষমতায় যেহেতু আওয়ামী লীগ, আমাকে বেশি হেনস্তা করার ঝুঁকি হয়তো তিনি নেবেন না।
আমি তাঁকে বলি, ‘ভাই, আপনি এত বড় মনের এবং বড় মাপের একজন মানুষ—কোথাকার কোন আহসান কবিরের এক রিপোর্ট, যা কিনা ছাপা হয়েছে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়, এটা নিয়ে হইচই করা কি আপনার মানায়? আপনি হলেন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আপনার পক্ষে-বিপক্ষে কত কথা বলা হয়, হবে। সব কথা কি সত্য? আর সব কথা কি ধরতে হয়?’
মকবুল হোসেন একটু নরম হন। তারপরও বলেন, ‘আপনার কাগজের প্রতিবেদনে আমার মানহানি হয়েছে। আমি একটা মানহানির মামলা করব।’ আমি মামলার ঝামেলা এড়াতে চাই। হঠাৎ জোঁকের মুখে লবণ দিলে জোঁক শেষ! মকবুল সাহেবকে ঠান্ডা করার জন্য আমি একটা গল্প ফাঁদি। বলি, ‘কাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা তখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন) এবং অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবের সঙ্গে আমার একটি বৈঠক আছে...।’
আমার বাক্য শেষ হওয়ার আগেই মকবুল সাহেব বিগলিত কণ্ঠে বলেন, ‘এই তো দেখেন দাদা। আমরা হলাম এক মত-পথের লোক। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকা উচিত নয়!’ বুঝতে পারি ওষুধ কাজে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আমার মিটিংয়ের কথা শুনে মকবুল সাহেব হয়তো ভেবেছেন তাঁর প্রসঙ্গ যদি আমি সেখানে তুলি!
আমার মিটিং ছিল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর কথা বলেছিলাম জোঁকের মুখে নুনের ছিটা দেওয়ার জন্য এবং সত্যি তাতে কাজ হয়। মকবুল সাহেব ভয় দেখানো বন্ধ করে বললেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে দাদা। আপনি আর এটা বাড়াইয়েন না। আমিও পোলাপানগো ঠান্ডা থাকতে কমু।’ আমি বলি, ‘সেটাই ভালো। আপনি এটা নিয়ে কিছু করতে গেলে পত্রিকায় খবর ছাপা হবে। এখন যে বিষয়টি কম লোকে জানে, তখন নানাভাবে বেশি লোকে জানবে। এটা আপনার জন্যই অসম্মানজনক হবে।’ মকবুল সাহেব বলেন, ‘আপনার পত্রিকা ভালো হচ্ছে দাদা। চালিয়ে যান।’ পরস্পরকে শুভকামনা জানিয়ে আমাদের ফোনালাপ শেষ হয়। আমি আমার বুক থেকে ভয়ের বোঝা নামিয়ে ফেলে স্বস্তি বোধ করি।
বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
৬ ঘণ্টা আগে
ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন...
৬ ঘণ্টা আগে
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে...
৭ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির...
৭ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মকবুল সাহেব ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত দাপুটে এমপি। তাঁকে নিন্দামন্দ করেই সেই প্রতিবেদন। চলতিপত্র বাজারে যাওয়ার পর মনে হলো একটি প্রচণ্ড বোমা ফাটল, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকায়।
০৫ আগস্ট ২০২১
ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন...
৬ ঘণ্টা আগে
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে...
৭ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির...
৭ ঘণ্টা আগেরাজিউল হাসান

ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন আগেও বেশ কম ছিল।
বহু বছর ধরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই-মার্ক্সবাদী) নেতৃত্বে বাম মতাদর্শের জোট লেফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ) ভাগাভাগি করে কেরালা শাসন করছে। কিন্তু সে দুর্ভেদ্য রাজ্যে এবার বিজেপি চমক দেখিয়েছে। ৯ ডিসেম্বর কেরালার তিরুবনন্তপুরাম পৌরসভায় ভোট হয়েছে। এখানকার ১০১টি আসনের মধ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জিতেছে ৫০টিতে। আগের পর্ষদের চেয়ে এবার এই জোট ১৫টি বেশি আসন দখলে নিয়েছে। এলডিএফ বিজয়ী হয়েছে ২৯টি আসনে। আগেরবারের তুলনায় এবার তাদের আসন কমেছে ২৩টি। ইউডিএফ জিতেছে ১৯টি আসনে। আগেরবারের চেয়ে এবার তাদের ঝুলিতে আসন বেড়েছে ৯টি। দুটি আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ভূখণ্ডের আয়তনের বিচারে ভারত বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম দেশ। আর জনসংখ্যার বিচারে দেশটি এখন বিশ্বের শীর্ষে। ২৮টি রাজ্য আর ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের এমন বড় একটি দেশের একটি রাজ্যের একটি পৌরসভায় বিজেপির এমন বিজয় হয়তো সাদা চোখে খুব বড় কোনো সাফল্য নয়। তবে এ কথা একেবারে অনস্বীকার্য যে বামদের দুর্গে এবার খুব ছোট করে হলেও বিজেপির পদ্মফুল ফুটেছে। এ বিজয় বিজেপির জন্য যেমন উদ্যাপনের একটি মুহূর্ত নিয়ে এসেছে, একই সঙ্গে দেশটির অন্যান্য রাজনৈতিক দলের জন্যও নতুন করে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের উপলক্ষ তৈরি করেছে।
ভারতের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এখন ২৪টিই বিজেপি ও তার জোটের দখলে। এগুলো হলো অন্ধ্র প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, দিল্লি, গোয়া, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ওডিশা, পদুচেরি, রাজস্থান, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখন্ড। কংগ্রেস, তার মিত্র ও কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের শাসন চলছে সাতটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। পাঞ্জাবে চলছে আম আদমি পার্টির এবং মিজোরামে চলছে জোরাম পিপলস মুভমেন্ট (জেডপিএম) পার্টির শাসন। পশ্চিমবঙ্গ অনেক বছর ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস শাসন করছে।
অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি জোট যখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় আসে, তখনো দলটির এতটা বিস্তার ছিল না। দিনে দিনে দেশজুড়ে তাদের প্রভাব বেড়েছে, নিয়ন্ত্রণে এসেছে নতুন নতুন এলাকা। সে হিসাবে হয়তো বামদের দুর্গে বিজেপির ছোট্ট হানা স্বাভাবিক মনে হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গসহ আরও যেসব রাজ্য বিজেপির নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে, সেসব রাজ্যের শাসক দলের জন্য এটি একটি অশনিসংকেত। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য কেরালার তিরুবনন্তপুরাম পৌর নির্বাচন আশু দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। কারণ, আর কয়েক মাস পরই এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন।
যে কেরালা নিয়ে আজকের আলোচনা, সেখানেও আগামী এপ্রিলে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসাবে তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচনের ফলাফল বড় একটি বার্তা দিয়েছে বামদের। এ নির্বাচনে এলডিএফ বড় মার খেয়েছে। ১০১ আসনের এই পৌর কাউন্সিলে ৫১ আসনে জিতলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়। বিজেপি মাত্র এক আসন কম পেয়েছে। এলডিএফ হারিয়েছে ২৩ আসন। অবশ্য কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ পৌরসভা ও পঞ্চায়েতগুলোয় বেশ ভালো করেছে।
কেরালায় হয়তো আজও এলডিএফ এবং ইউডিএফ জোটই বড় রাজনৈতিক খেলোয়াড়। তবে বিজেপিও যে আর তুচ্ছ নয়, তা তিরুবনন্তপুরামের ফলাফল বুঝিয়ে দিয়েছে। রাজ্যটি এলডিএফ এবং ইউডিএফ ভাগাভাগি করে শাসন করলেও তিরুবনন্তপুরাম ৪৫ বছর ধরে রেখেছিল বামেরাই। সেই দুর্গ এবার ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। শুধু তিরুবনন্তপুরামই নয়, কেরালার পালাক্কাড় পৌরসভা এবং ত্রিপুনিথুরা পৌরসভাও এখন বিজেপির দখলে।
কেরালায় আগের বিধানসভা নির্বাচনে ১৪০ আসনের মধ্যে ৯৯টিই দখলে নিয়েছিল এলডিএফ। বাকি ৪১টি আসন পেয়েছিল ইউডিএফ। তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচন বলে দিচ্ছে, এবার ফলাফলটা এমন হবে না। এলডিএফ জোট ২০১৬ সাল থেকে টানা এ রাজ্যের ক্ষমতায়।
রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, কেরালার পঞ্চায়েতগুলোর মধ্যে দেড় হাজারের মতো ওয়ার্ড এখন বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের দখলে। তিরুবনন্তপুরামে জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য ছিল, ‘চোখে জল আনার মতো মুহূর্ত এটি।’
বিজেপির নেতাদের দাবি, কেরালায় ভবিষ্যতে বিজেপির অবস্থান আরও পোক্ত হবে এবং একসময় এখানে ইউডিএফ ও কংগ্রেসের ভোটাররা বিজেপিকেই সমর্থন করবেন। তাঁরা এ জন্য আগেভাগেই বিজেপির কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে রেখেছেন।
কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচনের ফলাফলের পর স্বীকার করেছেন, কেরালায় ভোটারদের পছন্দে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে।
অবশ্য তিরুবনন্তপুরামে কিন্তু রাতারাতি বিজেপি এমন বিজয় অর্জন করেনি। বরং ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা ধীরে ধীরে অগ্রগতি অর্জন করেছে। শুধু কেরালায়ই নয়, অন্যান্য রাজ্যেও বিজেপির পদ্মফুল ফুটেছে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায়। আমরা শুধু জানি, বিজেপি ধর্মকে সামনে রেখে রাজনীতি করে চলেছে। সেটা হয়তো ঠিক। কিন্তু এই ইস্যুটি ছাড়াও বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের ঝুলিতে আরও অনেক কিছু আছে। বিজেপির সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হলো, তারা যে রাজ্যের জন্য যে কৌশল প্রয়োজন, ঠিক সেটাই প্রয়োগ করছে। যেমন কেরালায় বামদের হটাতে তারা যে কৌশল প্রয়োগ করছে, আসাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিন্তু সেই একই কৌশলে তারা হাঁটছে না। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোয় বিজেপিতে আস্থা বাড়াতে যে পথে হাঁটছে তারা, দেশের মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় সে পথে তারা নেই। কাশ্মীরে তাদের যে কৌশল, তামিলনাড়ুতে গিয়ে দেখা যাবে, ঠিক তার বিপরীত কৌশল বিজেপির। এবং এই যে রাজ্যভেদে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল, সেটা নির্ধারণ করা হচ্ছে একেবারে শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে। এই শীর্ষ নেতৃত্ব কিন্তু একজনের হাতে কুক্ষিগত নয়, বরং একদল বর্ষীয়ান-অভিজ্ঞ রাজনীতিক একসঙ্গে গড়ে তুলেছেন সে নেতৃত্ব।
ঠিক এই জায়গায় কংগ্রেস কিংবা অন্য দলগুলোর সঙ্গে বিজেপির ফারাক। কংগ্রেসের কথাই ধরা যাক। দলটি এখনো গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। পারিবারিক নেতৃত্ব থেকে দলটি বের হতে না পারার খেসারত দিচ্ছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। এ ছাড়া ভারতের বেশির ভাগ দলেও পরিবারতন্ত্র বেশ বহাল তবিয়তে রাজত্ব করছে। আর ঠিক এ সুযোগেই বিজেপি ভারতজুড়ে ধীরে ধীরে পদ্মফুল ফুটিয়ে চলেছে।

ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন আগেও বেশ কম ছিল।
বহু বছর ধরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই-মার্ক্সবাদী) নেতৃত্বে বাম মতাদর্শের জোট লেফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ) ভাগাভাগি করে কেরালা শাসন করছে। কিন্তু সে দুর্ভেদ্য রাজ্যে এবার বিজেপি চমক দেখিয়েছে। ৯ ডিসেম্বর কেরালার তিরুবনন্তপুরাম পৌরসভায় ভোট হয়েছে। এখানকার ১০১টি আসনের মধ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জিতেছে ৫০টিতে। আগের পর্ষদের চেয়ে এবার এই জোট ১৫টি বেশি আসন দখলে নিয়েছে। এলডিএফ বিজয়ী হয়েছে ২৯টি আসনে। আগেরবারের তুলনায় এবার তাদের আসন কমেছে ২৩টি। ইউডিএফ জিতেছে ১৯টি আসনে। আগেরবারের চেয়ে এবার তাদের ঝুলিতে আসন বেড়েছে ৯টি। দুটি আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ভূখণ্ডের আয়তনের বিচারে ভারত বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম দেশ। আর জনসংখ্যার বিচারে দেশটি এখন বিশ্বের শীর্ষে। ২৮টি রাজ্য আর ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের এমন বড় একটি দেশের একটি রাজ্যের একটি পৌরসভায় বিজেপির এমন বিজয় হয়তো সাদা চোখে খুব বড় কোনো সাফল্য নয়। তবে এ কথা একেবারে অনস্বীকার্য যে বামদের দুর্গে এবার খুব ছোট করে হলেও বিজেপির পদ্মফুল ফুটেছে। এ বিজয় বিজেপির জন্য যেমন উদ্যাপনের একটি মুহূর্ত নিয়ে এসেছে, একই সঙ্গে দেশটির অন্যান্য রাজনৈতিক দলের জন্যও নতুন করে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের উপলক্ষ তৈরি করেছে।
ভারতের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এখন ২৪টিই বিজেপি ও তার জোটের দখলে। এগুলো হলো অন্ধ্র প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, দিল্লি, গোয়া, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ওডিশা, পদুচেরি, রাজস্থান, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখন্ড। কংগ্রেস, তার মিত্র ও কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের শাসন চলছে সাতটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। পাঞ্জাবে চলছে আম আদমি পার্টির এবং মিজোরামে চলছে জোরাম পিপলস মুভমেন্ট (জেডপিএম) পার্টির শাসন। পশ্চিমবঙ্গ অনেক বছর ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস শাসন করছে।
অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি জোট যখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় আসে, তখনো দলটির এতটা বিস্তার ছিল না। দিনে দিনে দেশজুড়ে তাদের প্রভাব বেড়েছে, নিয়ন্ত্রণে এসেছে নতুন নতুন এলাকা। সে হিসাবে হয়তো বামদের দুর্গে বিজেপির ছোট্ট হানা স্বাভাবিক মনে হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গসহ আরও যেসব রাজ্য বিজেপির নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে, সেসব রাজ্যের শাসক দলের জন্য এটি একটি অশনিসংকেত। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য কেরালার তিরুবনন্তপুরাম পৌর নির্বাচন আশু দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। কারণ, আর কয়েক মাস পরই এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন।
যে কেরালা নিয়ে আজকের আলোচনা, সেখানেও আগামী এপ্রিলে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসাবে তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচনের ফলাফল বড় একটি বার্তা দিয়েছে বামদের। এ নির্বাচনে এলডিএফ বড় মার খেয়েছে। ১০১ আসনের এই পৌর কাউন্সিলে ৫১ আসনে জিতলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়। বিজেপি মাত্র এক আসন কম পেয়েছে। এলডিএফ হারিয়েছে ২৩ আসন। অবশ্য কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ পৌরসভা ও পঞ্চায়েতগুলোয় বেশ ভালো করেছে।
কেরালায় হয়তো আজও এলডিএফ এবং ইউডিএফ জোটই বড় রাজনৈতিক খেলোয়াড়। তবে বিজেপিও যে আর তুচ্ছ নয়, তা তিরুবনন্তপুরামের ফলাফল বুঝিয়ে দিয়েছে। রাজ্যটি এলডিএফ এবং ইউডিএফ ভাগাভাগি করে শাসন করলেও তিরুবনন্তপুরাম ৪৫ বছর ধরে রেখেছিল বামেরাই। সেই দুর্গ এবার ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। শুধু তিরুবনন্তপুরামই নয়, কেরালার পালাক্কাড় পৌরসভা এবং ত্রিপুনিথুরা পৌরসভাও এখন বিজেপির দখলে।
কেরালায় আগের বিধানসভা নির্বাচনে ১৪০ আসনের মধ্যে ৯৯টিই দখলে নিয়েছিল এলডিএফ। বাকি ৪১টি আসন পেয়েছিল ইউডিএফ। তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচন বলে দিচ্ছে, এবার ফলাফলটা এমন হবে না। এলডিএফ জোট ২০১৬ সাল থেকে টানা এ রাজ্যের ক্ষমতায়।
রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, কেরালার পঞ্চায়েতগুলোর মধ্যে দেড় হাজারের মতো ওয়ার্ড এখন বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের দখলে। তিরুবনন্তপুরামে জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য ছিল, ‘চোখে জল আনার মতো মুহূর্ত এটি।’
বিজেপির নেতাদের দাবি, কেরালায় ভবিষ্যতে বিজেপির অবস্থান আরও পোক্ত হবে এবং একসময় এখানে ইউডিএফ ও কংগ্রেসের ভোটাররা বিজেপিকেই সমর্থন করবেন। তাঁরা এ জন্য আগেভাগেই বিজেপির কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে রেখেছেন।
কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচনের ফলাফলের পর স্বীকার করেছেন, কেরালায় ভোটারদের পছন্দে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে।
অবশ্য তিরুবনন্তপুরামে কিন্তু রাতারাতি বিজেপি এমন বিজয় অর্জন করেনি। বরং ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা ধীরে ধীরে অগ্রগতি অর্জন করেছে। শুধু কেরালায়ই নয়, অন্যান্য রাজ্যেও বিজেপির পদ্মফুল ফুটেছে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায়। আমরা শুধু জানি, বিজেপি ধর্মকে সামনে রেখে রাজনীতি করে চলেছে। সেটা হয়তো ঠিক। কিন্তু এই ইস্যুটি ছাড়াও বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের ঝুলিতে আরও অনেক কিছু আছে। বিজেপির সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হলো, তারা যে রাজ্যের জন্য যে কৌশল প্রয়োজন, ঠিক সেটাই প্রয়োগ করছে। যেমন কেরালায় বামদের হটাতে তারা যে কৌশল প্রয়োগ করছে, আসাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিন্তু সেই একই কৌশলে তারা হাঁটছে না। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোয় বিজেপিতে আস্থা বাড়াতে যে পথে হাঁটছে তারা, দেশের মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় সে পথে তারা নেই। কাশ্মীরে তাদের যে কৌশল, তামিলনাড়ুতে গিয়ে দেখা যাবে, ঠিক তার বিপরীত কৌশল বিজেপির। এবং এই যে রাজ্যভেদে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল, সেটা নির্ধারণ করা হচ্ছে একেবারে শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে। এই শীর্ষ নেতৃত্ব কিন্তু একজনের হাতে কুক্ষিগত নয়, বরং একদল বর্ষীয়ান-অভিজ্ঞ রাজনীতিক একসঙ্গে গড়ে তুলেছেন সে নেতৃত্ব।
ঠিক এই জায়গায় কংগ্রেস কিংবা অন্য দলগুলোর সঙ্গে বিজেপির ফারাক। কংগ্রেসের কথাই ধরা যাক। দলটি এখনো গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। পারিবারিক নেতৃত্ব থেকে দলটি বের হতে না পারার খেসারত দিচ্ছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। এ ছাড়া ভারতের বেশির ভাগ দলেও পরিবারতন্ত্র বেশ বহাল তবিয়তে রাজত্ব করছে। আর ঠিক এ সুযোগেই বিজেপি ভারতজুড়ে ধীরে ধীরে পদ্মফুল ফুটিয়ে চলেছে।

তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মকবুল সাহেব ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত দাপুটে এমপি। তাঁকে নিন্দামন্দ করেই সেই প্রতিবেদন। চলতিপত্র বাজারে যাওয়ার পর মনে হলো একটি প্রচণ্ড বোমা ফাটল, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকায়।
০৫ আগস্ট ২০২১
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
৬ ঘণ্টা আগে
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে...
৭ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির...
৭ ঘণ্টা আগেরাফায়েল আহমেদ শামীম

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে; তবে ফিলিস্তিনি নেতাদের বেছে বেছে হত্যা করা উচিত। এটি কোনো উগ্রমনা ব্যক্তির অযৌক্তিক মন্তব্য নয়, এটি একজন রাষ্ট্রীয় মন্ত্রীর মুখ থেকে আসা রাজনৈতিক নির্দেশ, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের জন্য এক চরম হুমকি।
এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে রুখে দেওয়ার জন্য সুগঠিত নীতি অনুসরণ করছে, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের দমন, ভূখণ্ড দখল, বসতি সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে গাজা উপত্যকার স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনী গঠনের প্রস্তাব, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠনের সহায়তা ইসরায়েলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মানে তাদের রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা, যা পশ্চিম তীরের দখলনীতি ও বসতি সম্প্রসারণকে আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এই ভীতিই বেন-গভিরের মতো উগ্র নেতাদের প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিতে প্রলুব্ধ করছে।
বেন-গভিরের বক্তব্যে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে অস্তিত্বহীন বলা, তাদের অন্য আরব দেশ থেকে আগত অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা এবং সন্ত্রাসমূলক আখ্যায়িত করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও জাতিগত স্বীকৃতির নীতির পরিপন্থী। ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে কোনো জাতিকে অবৈধ বা অস্তিত্বহীন হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে তার ওপর সহিংসতা প্রয়োগ করা হয়েছে। যেমন রুয়ান্ডার তুতসিদের ক্ষেত্রে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর এবং নাৎসি জার্মানিতে ইহুদিদের বিরুদ্ধে। তাই এই ধরনের বক্তব্য কেবল হুমকি নয়, বরং বাস্তবায়নের প্রস্তুতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। তবে এই সহযোগিতাও ইসরায়েলের কাছে রাষ্ট্র স্বীকৃতির জন্য যথেষ্ট নয়। নেতানিয়াহু সরকারের ডানপন্থী জোটের নেতারা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বেনজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্র করার চেষ্টা করছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন, যাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়। এই কৌশল দেখাচ্ছে, ইসরায়েলের নীতি কেবল নিরাপত্তার কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার অংশ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি নীরব থাকে, তবে এটি আন্তর্জাতিক আইনের জন্য একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে। যে রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে হত্যার হুমকি দিতে পারে, তাকে আইনি ও নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ করার কোনো কার্যকর ক্ষমতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেই, এটাই সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের জন্য আলাদা কারাগারের কক্ষ প্রস্তুত রাখার কথাও ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এটি শুধু হুমকি নয়, বরং সম্ভাব্য বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনার ইঙ্গিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে ইসরায়েল তার কৌশলগত লক্ষ্য পূরণের জন্য চরম হুমকি ও সহিংসতা ব্যবহারে প্রস্তুত।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গাজা পুনর্গঠন, পিএর সংস্কার কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনী—সবই ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র গঠনের পথকে সহায়তা করছে। এই প্রক্রিয়ায় ইসরায়েল উদ্বিগ্ন, কারণ এটি তাদের একতরফা দখল নীতি ও বসতি সম্প্রসারণকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। বেন-গভিরের মন্তব্য কেবল হুমকি নয়, বরং এই প্রক্রিয়ার প্রতি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
ইসরায়েলি নেতাদের উগ্র প্রতিক্রিয়ার কারণ হলো, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তাদের দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও নিরাপত্তাকাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা এটিকে ‘রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একবার জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে, পশ্চিম তীরের দখল, জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ এবং গাজার ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এই পরিস্থিতিই বেন-গভিরকে হত্যার হুমকি দিতে প্রলুব্ধ করেছে।
আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বেন-গভিরের বক্তব্য স্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আদালতের কার্যকর পদক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা কার্যকর হচ্ছে না। ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্র যখন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মিত্র শক্তির আশ্রয়ে থাকে, তখন আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে জাতিসংঘের মতো সংস্থা কার্যকর হুমকি প্রতিরোধ করতে পারছে না। ফিলিস্তিনের জনগণ এই হুমকির প্রভাবে ভয় ও অনিশ্চয়তায় দগ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না, তাতে ইসরায়েল আরও বেপরোয়া হচ্ছে। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, রাষ্ট্রীয় হুমকি এবং নীরব আন্তর্জাতিক সমাজ মিলিত হলে অত্যাচারী নীতি বাস্তবায়িত হয়। রুয়ান্ডা, মিয়ানমার, ইউক্রেন—সবই এই প্যাটার্নের উদাহরণ। তাই ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো সুরক্ষিত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ অপরিহার্য।
ইসরায়েলি রাজনীতির উগ্রতা, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সীমিত প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন এক সংকট তৈরি করেছে, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা ধ্বংসের মুখে। এই অবস্থা শুধু ফিলিস্তিনের জন্য বিপজ্জনক নয়; এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্য, কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক আইনকে চ্যালেঞ্জ করছে। রাষ্ট্রীয় হত্যার হুমকি, ফিলিস্তিনের জনগণের অস্তিত্ব অস্বীকৃতি এবং জাতিসংঘকে হুমকি—সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পরীক্ষা করছে। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরব থাকে, জাতিসংঘ কার্যকর পদক্ষেপ না নিক, তবে ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্ররা জানবে যে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এতে ফিলিস্তিনিরা রাষ্ট্রহীন হবে, তাদের নেতৃত্ব দুর্বল হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের ধারণা অন্ধকারে ঢাকা পড়বে। এই সংকট কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি বৈশ্বিক নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের কাঠামোর জন্য বড় পরীক্ষা।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি কেবল ভূরাজনৈতিক নয়; এটি নৈতিক, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ না করে, পরিস্থিতি আরও সংকীর্ণ ও বিপজ্জনক হবে। রাষ্ট্রীয় হত্যার হুমকি, জাতিসংঘের ওপর চাপ, ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব অস্বীকার—সব মিলিয়ে বিশ্বকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি করছে। এই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নইলে শুধু ফিলিস্তিন নয়, বৈশ্বিক নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের ভিত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সর্বোপরি ইসরায়েলের এই হুমকি শুধু একটি উগ্রমনা নেতার বক্তৃতা নয়; এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তির অমোঘ প্রভাবের উদাহরণ। এটি রাষ্ট্রীয় নীতি, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের কার্যকারিতা পুনর্মূল্যায়নের তাগিদ দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রাধান্য কি তারা নিশ্চিত করবে, নাকি শক্তিশালী রাষ্ট্রের উসকানি ও হত্যার হুমকি নিয়ে নীরব থাকবে?

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে; তবে ফিলিস্তিনি নেতাদের বেছে বেছে হত্যা করা উচিত। এটি কোনো উগ্রমনা ব্যক্তির অযৌক্তিক মন্তব্য নয়, এটি একজন রাষ্ট্রীয় মন্ত্রীর মুখ থেকে আসা রাজনৈতিক নির্দেশ, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের জন্য এক চরম হুমকি।
এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে রুখে দেওয়ার জন্য সুগঠিত নীতি অনুসরণ করছে, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের দমন, ভূখণ্ড দখল, বসতি সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে গাজা উপত্যকার স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনী গঠনের প্রস্তাব, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠনের সহায়তা ইসরায়েলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মানে তাদের রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা, যা পশ্চিম তীরের দখলনীতি ও বসতি সম্প্রসারণকে আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এই ভীতিই বেন-গভিরের মতো উগ্র নেতাদের প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিতে প্রলুব্ধ করছে।
বেন-গভিরের বক্তব্যে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে অস্তিত্বহীন বলা, তাদের অন্য আরব দেশ থেকে আগত অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা এবং সন্ত্রাসমূলক আখ্যায়িত করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও জাতিগত স্বীকৃতির নীতির পরিপন্থী। ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে কোনো জাতিকে অবৈধ বা অস্তিত্বহীন হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে তার ওপর সহিংসতা প্রয়োগ করা হয়েছে। যেমন রুয়ান্ডার তুতসিদের ক্ষেত্রে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর এবং নাৎসি জার্মানিতে ইহুদিদের বিরুদ্ধে। তাই এই ধরনের বক্তব্য কেবল হুমকি নয়, বরং বাস্তবায়নের প্রস্তুতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। তবে এই সহযোগিতাও ইসরায়েলের কাছে রাষ্ট্র স্বীকৃতির জন্য যথেষ্ট নয়। নেতানিয়াহু সরকারের ডানপন্থী জোটের নেতারা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বেনজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্র করার চেষ্টা করছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন, যাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়। এই কৌশল দেখাচ্ছে, ইসরায়েলের নীতি কেবল নিরাপত্তার কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার অংশ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি নীরব থাকে, তবে এটি আন্তর্জাতিক আইনের জন্য একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে। যে রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে হত্যার হুমকি দিতে পারে, তাকে আইনি ও নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ করার কোনো কার্যকর ক্ষমতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেই, এটাই সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের জন্য আলাদা কারাগারের কক্ষ প্রস্তুত রাখার কথাও ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এটি শুধু হুমকি নয়, বরং সম্ভাব্য বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনার ইঙ্গিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে ইসরায়েল তার কৌশলগত লক্ষ্য পূরণের জন্য চরম হুমকি ও সহিংসতা ব্যবহারে প্রস্তুত।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গাজা পুনর্গঠন, পিএর সংস্কার কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনী—সবই ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র গঠনের পথকে সহায়তা করছে। এই প্রক্রিয়ায় ইসরায়েল উদ্বিগ্ন, কারণ এটি তাদের একতরফা দখল নীতি ও বসতি সম্প্রসারণকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। বেন-গভিরের মন্তব্য কেবল হুমকি নয়, বরং এই প্রক্রিয়ার প্রতি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
ইসরায়েলি নেতাদের উগ্র প্রতিক্রিয়ার কারণ হলো, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তাদের দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও নিরাপত্তাকাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা এটিকে ‘রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একবার জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে, পশ্চিম তীরের দখল, জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ এবং গাজার ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এই পরিস্থিতিই বেন-গভিরকে হত্যার হুমকি দিতে প্রলুব্ধ করেছে।
আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বেন-গভিরের বক্তব্য স্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আদালতের কার্যকর পদক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা কার্যকর হচ্ছে না। ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্র যখন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মিত্র শক্তির আশ্রয়ে থাকে, তখন আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে জাতিসংঘের মতো সংস্থা কার্যকর হুমকি প্রতিরোধ করতে পারছে না। ফিলিস্তিনের জনগণ এই হুমকির প্রভাবে ভয় ও অনিশ্চয়তায় দগ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না, তাতে ইসরায়েল আরও বেপরোয়া হচ্ছে। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, রাষ্ট্রীয় হুমকি এবং নীরব আন্তর্জাতিক সমাজ মিলিত হলে অত্যাচারী নীতি বাস্তবায়িত হয়। রুয়ান্ডা, মিয়ানমার, ইউক্রেন—সবই এই প্যাটার্নের উদাহরণ। তাই ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো সুরক্ষিত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ অপরিহার্য।
ইসরায়েলি রাজনীতির উগ্রতা, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সীমিত প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন এক সংকট তৈরি করেছে, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা ধ্বংসের মুখে। এই অবস্থা শুধু ফিলিস্তিনের জন্য বিপজ্জনক নয়; এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্য, কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক আইনকে চ্যালেঞ্জ করছে। রাষ্ট্রীয় হত্যার হুমকি, ফিলিস্তিনের জনগণের অস্তিত্ব অস্বীকৃতি এবং জাতিসংঘকে হুমকি—সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পরীক্ষা করছে। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরব থাকে, জাতিসংঘ কার্যকর পদক্ষেপ না নিক, তবে ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্ররা জানবে যে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এতে ফিলিস্তিনিরা রাষ্ট্রহীন হবে, তাদের নেতৃত্ব দুর্বল হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের ধারণা অন্ধকারে ঢাকা পড়বে। এই সংকট কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি বৈশ্বিক নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের কাঠামোর জন্য বড় পরীক্ষা।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি কেবল ভূরাজনৈতিক নয়; এটি নৈতিক, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ না করে, পরিস্থিতি আরও সংকীর্ণ ও বিপজ্জনক হবে। রাষ্ট্রীয় হত্যার হুমকি, জাতিসংঘের ওপর চাপ, ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব অস্বীকার—সব মিলিয়ে বিশ্বকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি করছে। এই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নইলে শুধু ফিলিস্তিন নয়, বৈশ্বিক নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের ভিত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সর্বোপরি ইসরায়েলের এই হুমকি শুধু একটি উগ্রমনা নেতার বক্তৃতা নয়; এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তির অমোঘ প্রভাবের উদাহরণ। এটি রাষ্ট্রীয় নীতি, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের কার্যকারিতা পুনর্মূল্যায়নের তাগিদ দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রাধান্য কি তারা নিশ্চিত করবে, নাকি শক্তিশালী রাষ্ট্রের উসকানি ও হত্যার হুমকি নিয়ে নীরব থাকবে?

তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মকবুল সাহেব ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত দাপুটে এমপি। তাঁকে নিন্দামন্দ করেই সেই প্রতিবেদন। চলতিপত্র বাজারে যাওয়ার পর মনে হলো একটি প্রচণ্ড বোমা ফাটল, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকায়।
০৫ আগস্ট ২০২১
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
৬ ঘণ্টা আগে
ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন...
৬ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির...
৭ ঘণ্টা আগেড. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রচলিত নীতিমালার ওপর সরাসরি প্রতিফলিত হচ্ছে। শিল্পায়ন-উত্তর বিশ্বব্যবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন আজ এমন এক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে, যা আধুনিক রাষ্ট্রের অস্তিত্বগত ভিত্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিশেষত, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে সমুদ্রস্তরের ক্রমবর্ধমান উত্থান বিশ্বের বহু নিম্নভূমি ও দ্বীপরাষ্ট্রের জন্য এক গভীর অস্তিত্ববাদী সংকটের জন্ম দিয়েছে। উপকূলীয় ক্ষয়, লবণাক্ততার বিস্তার, পানযোগ্য পানির ঘাটতি এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস—এই সম্মিলিত প্রভাব দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জনবসতি, কৃষি উৎপাদনব্যবস্থা ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করছে। এর ফলে নিরাপত্তা-ধারণা আর শুধু সামরিক সক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা কৌশলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং খাদ্যনিরাপত্তা, মানবনিরাপত্তা এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য উপাদানে পরিণত হচ্ছে।
মালদ্বীপ, কিরিবাতি, টুভালু, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ কিংবা বঙ্গোপসাগরীয় দ্বীপাঞ্চলের মতো অঞ্চলগুলোতে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ভূমি হারানোর আশঙ্কা নিছক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচ্য নয়; বরং এটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমানা, নাগরিকত্বের ধারাবাহিকতা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মতো মৌলিক রাষ্ট্রীয় প্রশ্ন উত্থাপন করছে। কোনো রাষ্ট্রের ভূখণ্ড যদি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়, তবে সেই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, তার সমুদ্রসীমা, এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (ইইজেড) এবং সামুদ্রিক সম্পদের ওপর অধিকার কীভাবে সংরক্ষিত থাকবে—এই প্রশ্নগুলোর সুস্পষ্ট উত্তর আন্তর্জাতিক আইনের বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে এখনো অনুপস্থিত।
পরিবেশগত সংকট থেকে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা
আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেলের বিভিন্ন মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয়েছে যে গত এক শতাব্দীতে বৈশ্বিক সমুদ্রস্তর উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও ত্বরান্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বরফগলন, তাপীয় সম্প্রসারণ এবং চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাবলির ফলে উপকূলীয় ক্ষয় ও লবণাক্ততার বিস্তার দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর কৃষি, পানীয় জল এবং মানববসতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর পরিণতিতে কিছু রাষ্ট্র কার্যত ‘ডুবে যাওয়া রাষ্ট্র’তে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
দ্বীপরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সংকট
রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদান—ভূখণ্ড, জনসংখ্যা, সরকার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি—এর মধ্যে ভূখণ্ড যদি স্থায়ীভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তবে রাষ্ট্রের আইনগত অস্তিত্ব ও মর্যাদা কীভাবে নির্ধারিত হবে—এই প্রশ্ন আন্তর্জাতিক আইনের জন্য এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ। সমুদ্রস্তরের উত্থানের ফলে দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর স্থায়ী ভূখণ্ড সংকুচিত হলে তাদের সামুদ্রিক সীমানা, বিশেষত ইইজেড ও সামুদ্রিক সম্পদের অধিকার নিয়ে নতুন ধরনের আইনি ও ভূরাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সীমান্ত ও সম্পদকেন্দ্রিক বিরোধ এবং শক্তির পুনর্বিন্যাস অনিবার্য হয়ে ওঠে।
জলবায়ু শরণার্থী
সমুদ্রস্তরের উচ্চতার অন্যতম গভীর মানবিক পরিণতি হলো জলবায়ু শরণার্থী সংকটের উদ্ভব। দ্বীপ ও উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠী যখন নিজ ভূমিতে বসবাসের সক্ষমতা হারায়, তখন তারা অভ্যন্তরীণ অথবা আন্তর্জাতিক অভিবাসনে বাধ্য হয়। তবে আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনে ‘জলবায়ু শরণার্থী’ নামে কোনো স্বীকৃত শ্রেণি না থাকায় এসব বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী আইনি সুরক্ষা, নাগরিক অধিকার ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে একধরনের আইনগত শূন্যতার মুখোমুখি হয়।
এই বাস্তুচ্যুতি শুধু মানবিক সংকটেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং এটি গন্তব্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য সামাজিক চাপ, অর্থনৈতিক বোঝা এবং ক্ষেত্রবিশেষে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাঝুঁকিরও সৃষ্টি করে। দক্ষিণ এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকার উপকূলীয় দেশগুলোতে এর ভূরাজনৈতিক অভিঘাত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা
জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় জোট জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নীতিকাঠামো ও অর্থনৈতিক তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও, দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর অস্তিত্ব সংকট মোকাবিলায় এখনো কোনো বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক আইনগত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর ঐতিহাসিক কার্বন নিঃসরণের দায় স্বীকার এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবির মধ্যে দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে প্রায়ই অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে কিছু দ্বীপরাষ্ট্র বিকল্প কূটনৈতিক কৌশল অনুসরণ করছে—যেমন ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের ধারণা, বিদেশে ভূমি ক্রয়, কিংবা ‘রাষ্ট্র নির্বাসনে’ থাকার তাত্ত্বিক প্রস্তাব। এসব উদ্যোগ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাকে নতুনভাবে পুনর্বিবেচনার সুযোগ সৃষ্টি করছে।
ভবিষ্যৎ ভূরাজনৈতিক অভিঘাত
সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি বিশ্বরাজনীতিতে শক্তির ভারসাম্য পুনর্গঠনের সম্ভাবনা বহন করে। সামুদ্রিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ, নৌপথের নিরাপত্তা, সামরিক ঘাঁটির কৌশলগত অবস্থান এবং মানবিক হস্তক্ষেপ—সব ক্ষেত্রেই জলবায়ু পরিবর্তন এক নীরব কিন্তু গভীর ভূরাজনৈতিক চালিকাশক্তিতে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ ও কূটনীতির প্রচলিত ধারণার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ‘জলবায়ু নিরাপত্তা’ নামক নতুন এক কৌশলগত বাস্তবতা।
কাজেই, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য নিছক পরিবেশগত দুর্যোগ নয়; এটি তাদের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব, নিরাপত্তাকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মৌলিক ভিত্তিকে গভীরভাবে চ্যালেঞ্জ করছে। জলবায়ু শরণার্থী সংকট এবং সমুদ্রসীমা ঘিরে উদ্ভূত বিরোধ ভবিষ্যৎ ভূরাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ও অনিবার্য অধ্যায়ে পরিণত হবে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব সহানুভূতিশীল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কার্যকর ও বাধ্যতামূলক আইনগত কাঠামো, ন্যায্য কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং দায়বদ্ধ বৈশ্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দ্বীপরাষ্ট্রগুলো ইতিহাসের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে না গিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের পূর্ণ মর্যাদাসম্পন্ন অংশ হিসেবে টিকে থাকতে পারে।

একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রচলিত নীতিমালার ওপর সরাসরি প্রতিফলিত হচ্ছে। শিল্পায়ন-উত্তর বিশ্বব্যবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন আজ এমন এক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে, যা আধুনিক রাষ্ট্রের অস্তিত্বগত ভিত্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিশেষত, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে সমুদ্রস্তরের ক্রমবর্ধমান উত্থান বিশ্বের বহু নিম্নভূমি ও দ্বীপরাষ্ট্রের জন্য এক গভীর অস্তিত্ববাদী সংকটের জন্ম দিয়েছে। উপকূলীয় ক্ষয়, লবণাক্ততার বিস্তার, পানযোগ্য পানির ঘাটতি এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস—এই সম্মিলিত প্রভাব দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জনবসতি, কৃষি উৎপাদনব্যবস্থা ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করছে। এর ফলে নিরাপত্তা-ধারণা আর শুধু সামরিক সক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা কৌশলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং খাদ্যনিরাপত্তা, মানবনিরাপত্তা এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য উপাদানে পরিণত হচ্ছে।
মালদ্বীপ, কিরিবাতি, টুভালু, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ কিংবা বঙ্গোপসাগরীয় দ্বীপাঞ্চলের মতো অঞ্চলগুলোতে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ভূমি হারানোর আশঙ্কা নিছক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচ্য নয়; বরং এটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমানা, নাগরিকত্বের ধারাবাহিকতা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মতো মৌলিক রাষ্ট্রীয় প্রশ্ন উত্থাপন করছে। কোনো রাষ্ট্রের ভূখণ্ড যদি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়, তবে সেই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, তার সমুদ্রসীমা, এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (ইইজেড) এবং সামুদ্রিক সম্পদের ওপর অধিকার কীভাবে সংরক্ষিত থাকবে—এই প্রশ্নগুলোর সুস্পষ্ট উত্তর আন্তর্জাতিক আইনের বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে এখনো অনুপস্থিত।
পরিবেশগত সংকট থেকে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা
আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেলের বিভিন্ন মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয়েছে যে গত এক শতাব্দীতে বৈশ্বিক সমুদ্রস্তর উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও ত্বরান্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বরফগলন, তাপীয় সম্প্রসারণ এবং চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাবলির ফলে উপকূলীয় ক্ষয় ও লবণাক্ততার বিস্তার দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর কৃষি, পানীয় জল এবং মানববসতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর পরিণতিতে কিছু রাষ্ট্র কার্যত ‘ডুবে যাওয়া রাষ্ট্র’তে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
দ্বীপরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সংকট
রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদান—ভূখণ্ড, জনসংখ্যা, সরকার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি—এর মধ্যে ভূখণ্ড যদি স্থায়ীভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তবে রাষ্ট্রের আইনগত অস্তিত্ব ও মর্যাদা কীভাবে নির্ধারিত হবে—এই প্রশ্ন আন্তর্জাতিক আইনের জন্য এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ। সমুদ্রস্তরের উত্থানের ফলে দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর স্থায়ী ভূখণ্ড সংকুচিত হলে তাদের সামুদ্রিক সীমানা, বিশেষত ইইজেড ও সামুদ্রিক সম্পদের অধিকার নিয়ে নতুন ধরনের আইনি ও ভূরাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সীমান্ত ও সম্পদকেন্দ্রিক বিরোধ এবং শক্তির পুনর্বিন্যাস অনিবার্য হয়ে ওঠে।
জলবায়ু শরণার্থী
সমুদ্রস্তরের উচ্চতার অন্যতম গভীর মানবিক পরিণতি হলো জলবায়ু শরণার্থী সংকটের উদ্ভব। দ্বীপ ও উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠী যখন নিজ ভূমিতে বসবাসের সক্ষমতা হারায়, তখন তারা অভ্যন্তরীণ অথবা আন্তর্জাতিক অভিবাসনে বাধ্য হয়। তবে আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনে ‘জলবায়ু শরণার্থী’ নামে কোনো স্বীকৃত শ্রেণি না থাকায় এসব বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী আইনি সুরক্ষা, নাগরিক অধিকার ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে একধরনের আইনগত শূন্যতার মুখোমুখি হয়।
এই বাস্তুচ্যুতি শুধু মানবিক সংকটেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং এটি গন্তব্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য সামাজিক চাপ, অর্থনৈতিক বোঝা এবং ক্ষেত্রবিশেষে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাঝুঁকিরও সৃষ্টি করে। দক্ষিণ এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকার উপকূলীয় দেশগুলোতে এর ভূরাজনৈতিক অভিঘাত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা
জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় জোট জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নীতিকাঠামো ও অর্থনৈতিক তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও, দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর অস্তিত্ব সংকট মোকাবিলায় এখনো কোনো বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক আইনগত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর ঐতিহাসিক কার্বন নিঃসরণের দায় স্বীকার এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবির মধ্যে দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে প্রায়ই অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে কিছু দ্বীপরাষ্ট্র বিকল্প কূটনৈতিক কৌশল অনুসরণ করছে—যেমন ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের ধারণা, বিদেশে ভূমি ক্রয়, কিংবা ‘রাষ্ট্র নির্বাসনে’ থাকার তাত্ত্বিক প্রস্তাব। এসব উদ্যোগ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাকে নতুনভাবে পুনর্বিবেচনার সুযোগ সৃষ্টি করছে।
ভবিষ্যৎ ভূরাজনৈতিক অভিঘাত
সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি বিশ্বরাজনীতিতে শক্তির ভারসাম্য পুনর্গঠনের সম্ভাবনা বহন করে। সামুদ্রিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ, নৌপথের নিরাপত্তা, সামরিক ঘাঁটির কৌশলগত অবস্থান এবং মানবিক হস্তক্ষেপ—সব ক্ষেত্রেই জলবায়ু পরিবর্তন এক নীরব কিন্তু গভীর ভূরাজনৈতিক চালিকাশক্তিতে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ ও কূটনীতির প্রচলিত ধারণার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ‘জলবায়ু নিরাপত্তা’ নামক নতুন এক কৌশলগত বাস্তবতা।
কাজেই, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য নিছক পরিবেশগত দুর্যোগ নয়; এটি তাদের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব, নিরাপত্তাকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মৌলিক ভিত্তিকে গভীরভাবে চ্যালেঞ্জ করছে। জলবায়ু শরণার্থী সংকট এবং সমুদ্রসীমা ঘিরে উদ্ভূত বিরোধ ভবিষ্যৎ ভূরাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ও অনিবার্য অধ্যায়ে পরিণত হবে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব সহানুভূতিশীল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কার্যকর ও বাধ্যতামূলক আইনগত কাঠামো, ন্যায্য কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং দায়বদ্ধ বৈশ্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দ্বীপরাষ্ট্রগুলো ইতিহাসের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে না গিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের পূর্ণ মর্যাদাসম্পন্ন অংশ হিসেবে টিকে থাকতে পারে।

তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। মকবুল সাহেব ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত দাপুটে এমপি। তাঁকে নিন্দামন্দ করেই সেই প্রতিবেদন। চলতিপত্র বাজারে যাওয়ার পর মনে হলো একটি প্রচণ্ড বোমা ফাটল, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর এলাকায়।
০৫ আগস্ট ২০২১
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
৬ ঘণ্টা আগে
ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন...
৬ ঘণ্টা আগে
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে...
৭ ঘণ্টা আগে