
আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক গবেষক। নানা বিষয়ে গবেষণাধর্মী তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী: ইতিহাসের পুনপাঠ’, ‘মাওলানা মওদূদীর রাষ্ট্রচিন্তা’, ‘শ্রীলঙ্কার তামিল ইলম্’, ‘বার্মা: জাতিগত সংঘাতের সাত দশক’, ‘সোহরাওয়ার্দী ও বাংলায় মুসলমানের রাষ্ট্রসাধনা’ প্রভৃতি। সম্প্রতি মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

মিয়ানমারের সামগ্রিক পরিস্থিতি এখন কোন পর্যায়ে আছে?
ব্যাপক গৃহযুদ্ধের শিকার মিয়ানমার। সেখানে দুই ধরনের গৃহযুদ্ধ চলছে। একটা হচ্ছে বিভিন্ন অ-বামার জাতিসত্তার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বামারদের। বামাররা হচ্ছে মিয়ানমারের প্রধান জাতি। এই যুদ্ধের একদিকে আছে কারেন, কাচিন, শান, তাঙ, রাখাইন ইত্যাদি জাতিসত্তার গেরিলা দলগুলো এবং অপরদিকে আছে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী—যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘টাটমা-দো’। এ রকম গেরিলা সংঘাত চলছে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রান্তিক প্রদেশগুলোতে প্রায় পঞ্চাশ বছর। তবে এখন তা আগের চেয়ে বেশি তীব্র।
আরেক ধরনের গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে দুই-তিন বছর হলো। এটা শুরু হয় গণতন্ত্রের দাবিতে, সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে। খোদ বামার আর্মির বিরুদ্ধে বামার তরুণ-তরুণীরা এই যুদ্ধে নেমেছে। যারা মূলত বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডির নেতা-কর্মী-সমর্থক।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী দুই ধরনের গৃহযুদ্ধে লড়ছে। একদিকে তাদের প্রতিপক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলোর বিভিন্ন সশস্ত্র গেরিলা দল। এরা মূলত স্বায়ত্তশাসন চায়। অন্য যুদ্ধে টাটমা-দোর সঙ্গে লড়ছে গণতন্ত্রপন্থী মানুষেরা। টাটমা দোর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষ আবার কোথাও কোথাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। তবে সেটা সব জায়গায় নয়। যেমন আরাকানে রাখাইনরা টাটমা-দোর সঙ্গে যুদ্ধ করলেও গণতন্ত্রপন্থীদের সঙ্গে আরাকান আর্মির কোনো সমঝোতা নেই।
১১ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এতে বাংলাদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা আছে কি?
এ প্রশ্নের উত্তর জটিল, যা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। প্রথমত, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের পুরোটা নিয়ন্ত্রণে নেয়নি। তবে প্রায় ৮০ ভাগের মতো তাদের নিয়ন্ত্রণে। এর মাঝে তারা যে অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে তার পুরোটাই বাংলাদেশ লাগোয়া। সুতরাং বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সীমান্ত, সেটা এখন পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এর মানে হলো, বাংলাদেশের সঙ্গে এখন মিয়ানমারের সরাসরি আর সীমানা নেই। মিয়ানমারের কেউ আর সেখানে পাহারা দিচ্ছে না। এই অর্থে এটা একটা বিপজ্জনক অবস্থাই বটে। প্রচুর অবৈধ ব্যবসাপাতির সুযোগ অবারিত হয়েছে এখানে। যার মাঝে মাদকের চোরাচালানও হতে পারে। এ অবস্থায় এই সীমান্তের ব্যবস্থাপনার জন্য অপরদিকের নতুন বাহিনী আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশকে এখন যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। সেটা করা গেলে বাংলাদেশের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা থাকবে না বা কমবে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ সেটা করতে পারবে কি না বা করছে কি না। তা ছাড়া, এই সীমানার দুই দিকেই আরেক সম্প্রদায় রোহিঙ্গারা আছে। যাদের সঙ্গে এই মুহূর্তে আরাকান আর্মির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে আমি বলব, বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তে একটা সম্পূর্ণ নতুন অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশকে এখন এই নতুন অবস্থাকে নতুনভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এতদিনকার পুরোনো কূটনীতিক বুঝ বা পুরোনো কূটনৈতিক বোঝাপড়া দিয়ে এই নতুন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা দুরূহ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু সম্প্রতি বলেছেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি শোচনীয় পর্যায়ে যেতে পারে। এ নিয়ে তাঁরা বাংলাদেশ ও ভারতকে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন। এ সতর্ক করার ব্যাপারটি আসলে কী?
মিয়ানমারের পরিস্থিতি ইতিমধ্যে যথেষ্ট শোচনীয়। আরও শোচনীয় হলে তো সেটা আসলে বিপদের কথাই। আমি দেখিনি তিনি কোথায় সেটা বলেছেন। তবে কথাটা মিথ্যা নয়। এখানে তিন ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে। প্রথমত, দেশটা কয়েক খণ্ডে ভাগ হয়ে যেতে পারে। যে ভাগগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার ব্যাপক সাংস্কৃতিক ফারাক আছে। দ্বিতীয় শঙ্কা হলো, দেশটায় গৃহযুদ্ধ আরও বেড়ে মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে। আরাকানে যেটা এখনই দেখা গেছে। তৃতীয় হলো, গৃহযুদ্ধ এভাবেই চলবে, কোনো পক্ষ কাউকে পরাজিত করতে পারবে না। কিন্তু পুরো দেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হতে থাকবে। মানুষ কিন্তু তখনো পালাতে চাইবে। অর্থাৎ মিয়ানমারে সামনে যা-ই ঘটুক, সেটাই প্রতিবেশীদের জন্য শঙ্কার। বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য শঙ্কার দিক হলো, বিপদে পড়ে আরও মানুষ ওই দিক থেকে এদিকে চলে আসতে পারে। ভারতের মিজোরামে মিয়ানমারের চিন প্রদেশ থেকে এবং বাংলাদেশে আরাকান প্রদেশ থেকে মানুষ আসতে পারে। সেটা আসছেও। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে ৬০ হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে। এই সংখ্যাটা তো কম নয়। ইতিমধ্যে মিজোরামেও মিয়ানমারের অনেকে আছে। এ রকম ব্যাপারগুলো আরও বাড়বে। আরেকটি বিপদ হলো, ভারত ও বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে অস্ত্র চোরাচালান বাড়তে পারে। যেমন আরাকানে টাটমা-দো বিপুল অস্ত্র খুইয়েছে বা রেখে চলে গেছে। এসবের একাংশ অবৈধ বাজারে চলে আসবে। সেখান থেকে এসব অস্ত্র আশপাশের বিভিন্ন দেশে ঢুকতে পারে।
শেষ পর্যন্ত কি মিয়ানমার ভেঙে যাবে? এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
আসলে সত্য হলো এই, মিয়ানমার এখনই একটা বহুভাবে বিভক্ত দেশ। আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটা বিভক্ত না হলেও তার একাংশের সঙ্গে অন্য অংশের সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক তেমন যোগাযোগ নেই। দেশটির প্রতিটি প্রদেশ এবং কয়েকটি বিভাগও পৃথক পৃথক সশস্ত্র দল দ্বারা শাসিত হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের ব্যবস্থাপনা আলাদা। দেশটির সবদিকের প্রতিবেশী দেশগুলোতে মিয়ানমারের শরণার্থী আছেই। আবার এই দেশটি নিয়ে তার প্রতিটি প্রতিবেশী উদ্বিগ্ন। সেই উদ্বেগ হলো মিয়ানমার অখণ্ড দেশ হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি না। আসলে বর্তমান সংবিধান ও বর্তমান শাসকদের অধীনে এই দেশের টিকে থাকার শর্ত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক প্রদেশগুলো স্বায়ত্তশাসনের জন্য এতটাই মরিয়া যে কেবল সেনাবাহিনী দিয়ে এতগুলো জাতিকে জোর করে দশকের পর দশক এক রাখার চেষ্টা বাস্তবসম্মত নয়। আবার দ্বিতীয় আরেকটি কারণেও মিয়ানমার ঝুঁকিতে আছে। সেটা হলো, দেশের মানুষের কাছ থেকে গণতন্ত্র কেড়ে নিয়ে এবং রোহিঙ্গাসহ অনেক জাতিসত্তার ওপর ক্রমাগত অত্যাচার চালিয়ে এখানকার সেনাবাহিনী বিশ্বসমাজকে তার বিরুদ্ধে নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বহু দেশ মিয়ানমারে পরিবর্তন দেখতে চায়। চীন আবার চায় উল্টোটা। এর ফলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার নিয়ে একটা বিরোধ বাধতে যাচ্ছে। এটাও মিয়ানমারের অখণ্ডতাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বের বলি হতে পারে মিয়ানমারের অখণ্ডতা। যে বাস্তবতায় আবার দেশটির সেনাবাহিনীই জ্বালানি জোগাচ্ছে নিজ জনগণের বিরুদ্ধে অবিরত যুদ্ধ জারি রেখে।
আমরা জানি, জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে চীন। এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ‘বার্মা অ্যাক্ট’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করেছে। এতে করে চীনের মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ কি খর্ব হবে না?
আসলে মিয়ানমারের মানুষ চীনকে তেমন পছন্দ করে না। কিন্তু তারপরও দেশটিতে চীনের ব্যাপক প্রভাব। এর কয়েকটি কারণ আছে। নিজেদের বিভিন্ন নীতিকৌশলের কারণে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এখন। এই বিচ্ছিন্নতার মাঝে কেবল গণচীনের নেতারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন এবং সাহায্য করেন। এর ফলে টাটমা-দো চীনকে খুব পছন্দ করে। চীনের নেতাদের কথা শোনে তারা। এভাবে মিয়ানমারের প্রশাসনে চীনের একচেটিয়া প্রভাব আছে। রাশিয়ারও কিছুটা আছে। মিয়ানমারে চীনের প্রভাব থাকার আরেক কারণ অর্থনৈতিক। দেশটিতে চীনের বিনিয়োগ অনেক। আবার মিয়ানমারের চীন সীমান্তসংলগ্ন অনেক এলাকায় চীনের মুদ্রা, চীনের বিদ্যুৎ, চীনের পণ্য চলছে। এর বাইরেও একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। মিয়ানমারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তাতে উভয় পক্ষের অস্ত্রের বড় এক জোগানদার চীন। তারা সরকারকে যেমন অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে, তেমনি অনেক গেরিলা দলকেও তারা অস্ত্র দিচ্ছে। এভাবে যুদ্ধরত উভয় পক্ষকে তারা নির্ভরশীল করে রেখেছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক মসৃণ না হওয়ার কারণ কী?
মিয়ানমার ও বাংলাদেশ প্রতিবেশী হলেও সম্পর্ক ভালো নয়। এর জন্য দেশটির সেনাবাহিনী প্রধানত দায়ী। টাটমা-দোর রোহিঙ্গাবিরোধী নীতিকৌশল বাংলাদেশকে বেশ বিপদে ফেলেছে। ১০-১১ লাখ মানুষ বাংলাদেশে গত সাড়ে সাত বছর ধরে রয়েছে। আবার প্রতিনিয়ত নতুন মানুষ আসছে। বাংলাদেশের জন্য এটা তো বড় এক সমস্যা। এমনিতে বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ। তার মাঝে এভাবে যদি লাখ লাখ নতুন মানুষকে বনজঙ্গল কেটে থাকতে দেওয়া হয়, সেটা একটা খারাপ ফলই বয়ে আনবে। এক দশক পর এই জনগোষ্ঠী আরও কয়েক লাখ বাড়বে। ধরা যাক, তারা ২০ লাখ হলো। এত বিপুল মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান দেওয়া তো সহজ হবে না। আবার কোনো দুষ্ট মহল চাইলে এদের ব্যবহার করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক-সামাজিক অস্থিতিশীলতাও তৈরি করতে পারে। এ রকম একটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করেছে বাংলাদেশে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। তারাই আবার সেখানে সরকার চালায়। এ রকম একটা শক্তি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় কীভাবে সম্পর্ক ভালো হবে? তবে আরাকানে নতুন শক্তি আধিপত্য বিস্তার করায় এখন অন্তত সীমান্তে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা স্বস্তি তৈরি হলো। মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী আর এই সীমান্তে জোর-জুলুম করতে পারবে না। সেটা আপাতত ইতিহাস হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিকভাবে করণীয় কী?
বাংলাদেশের প্রথম করণীয় হলো প্রকাশ্যে না হলেও অপ্রকাশ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং একটা সমঝোতায় উপনীত হওয়া। সেই সমঝোতাটা হবে—তাদের কিছু সাহায্য-সহযোগিতার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জন্মভিটায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি। এটা যত সহজে বললাম, তত সহজে করার উপায় নেই। কারণ, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির সম্পর্ক ভালো নয়। রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে এই সম্পর্ককে তিক্ত করেছে। বাংলাদেশকে উদ্যোগী হয়ে এখন এই তিক্ততার অবসান ঘটিয়ে দিতে হবে। আরাকান আর্মি প্রদেশে কর্তৃত্ব পেলেও তাদের এখন অনেক ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দরকার। বাংলাদেশ চাইলে মানবিক সহায়তাগুলো দিতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার সুযোগও চাইতে পারে আরাকান আর্মির কাছে। অর্থাৎ উভয়ে লাভবান হয় এমন একটা সমঝোতা তাদের সঙ্গে লাগবে এখন। বাংলাদেশকে আপাতত এই কাজটাই জোরের সঙ্গে করতে হবে বা করা দরকার। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের ভেতরে রাজনৈতিক ঐকমত্য লাগবে। সেটা কীভাবে হবে?
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
মিয়ানমারের সামগ্রিক পরিস্থিতি এখন কোন পর্যায়ে আছে?
ব্যাপক গৃহযুদ্ধের শিকার মিয়ানমার। সেখানে দুই ধরনের গৃহযুদ্ধ চলছে। একটা হচ্ছে বিভিন্ন অ-বামার জাতিসত্তার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বামারদের। বামাররা হচ্ছে মিয়ানমারের প্রধান জাতি। এই যুদ্ধের একদিকে আছে কারেন, কাচিন, শান, তাঙ, রাখাইন ইত্যাদি জাতিসত্তার গেরিলা দলগুলো এবং অপরদিকে আছে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী—যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘টাটমা-দো’। এ রকম গেরিলা সংঘাত চলছে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রান্তিক প্রদেশগুলোতে প্রায় পঞ্চাশ বছর। তবে এখন তা আগের চেয়ে বেশি তীব্র।
আরেক ধরনের গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে দুই-তিন বছর হলো। এটা শুরু হয় গণতন্ত্রের দাবিতে, সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে। খোদ বামার আর্মির বিরুদ্ধে বামার তরুণ-তরুণীরা এই যুদ্ধে নেমেছে। যারা মূলত বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডির নেতা-কর্মী-সমর্থক।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী দুই ধরনের গৃহযুদ্ধে লড়ছে। একদিকে তাদের প্রতিপক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলোর বিভিন্ন সশস্ত্র গেরিলা দল। এরা মূলত স্বায়ত্তশাসন চায়। অন্য যুদ্ধে টাটমা-দোর সঙ্গে লড়ছে গণতন্ত্রপন্থী মানুষেরা। টাটমা দোর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষ আবার কোথাও কোথাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। তবে সেটা সব জায়গায় নয়। যেমন আরাকানে রাখাইনরা টাটমা-দোর সঙ্গে যুদ্ধ করলেও গণতন্ত্রপন্থীদের সঙ্গে আরাকান আর্মির কোনো সমঝোতা নেই।
১১ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এতে বাংলাদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা আছে কি?
এ প্রশ্নের উত্তর জটিল, যা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। প্রথমত, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের পুরোটা নিয়ন্ত্রণে নেয়নি। তবে প্রায় ৮০ ভাগের মতো তাদের নিয়ন্ত্রণে। এর মাঝে তারা যে অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে তার পুরোটাই বাংলাদেশ লাগোয়া। সুতরাং বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সীমান্ত, সেটা এখন পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এর মানে হলো, বাংলাদেশের সঙ্গে এখন মিয়ানমারের সরাসরি আর সীমানা নেই। মিয়ানমারের কেউ আর সেখানে পাহারা দিচ্ছে না। এই অর্থে এটা একটা বিপজ্জনক অবস্থাই বটে। প্রচুর অবৈধ ব্যবসাপাতির সুযোগ অবারিত হয়েছে এখানে। যার মাঝে মাদকের চোরাচালানও হতে পারে। এ অবস্থায় এই সীমান্তের ব্যবস্থাপনার জন্য অপরদিকের নতুন বাহিনী আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশকে এখন যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। সেটা করা গেলে বাংলাদেশের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা থাকবে না বা কমবে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ সেটা করতে পারবে কি না বা করছে কি না। তা ছাড়া, এই সীমানার দুই দিকেই আরেক সম্প্রদায় রোহিঙ্গারা আছে। যাদের সঙ্গে এই মুহূর্তে আরাকান আর্মির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে আমি বলব, বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তে একটা সম্পূর্ণ নতুন অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশকে এখন এই নতুন অবস্থাকে নতুনভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এতদিনকার পুরোনো কূটনীতিক বুঝ বা পুরোনো কূটনৈতিক বোঝাপড়া দিয়ে এই নতুন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা দুরূহ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু সম্প্রতি বলেছেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি শোচনীয় পর্যায়ে যেতে পারে। এ নিয়ে তাঁরা বাংলাদেশ ও ভারতকে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন। এ সতর্ক করার ব্যাপারটি আসলে কী?
মিয়ানমারের পরিস্থিতি ইতিমধ্যে যথেষ্ট শোচনীয়। আরও শোচনীয় হলে তো সেটা আসলে বিপদের কথাই। আমি দেখিনি তিনি কোথায় সেটা বলেছেন। তবে কথাটা মিথ্যা নয়। এখানে তিন ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে। প্রথমত, দেশটা কয়েক খণ্ডে ভাগ হয়ে যেতে পারে। যে ভাগগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার ব্যাপক সাংস্কৃতিক ফারাক আছে। দ্বিতীয় শঙ্কা হলো, দেশটায় গৃহযুদ্ধ আরও বেড়ে মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে। আরাকানে যেটা এখনই দেখা গেছে। তৃতীয় হলো, গৃহযুদ্ধ এভাবেই চলবে, কোনো পক্ষ কাউকে পরাজিত করতে পারবে না। কিন্তু পুরো দেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হতে থাকবে। মানুষ কিন্তু তখনো পালাতে চাইবে। অর্থাৎ মিয়ানমারে সামনে যা-ই ঘটুক, সেটাই প্রতিবেশীদের জন্য শঙ্কার। বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য শঙ্কার দিক হলো, বিপদে পড়ে আরও মানুষ ওই দিক থেকে এদিকে চলে আসতে পারে। ভারতের মিজোরামে মিয়ানমারের চিন প্রদেশ থেকে এবং বাংলাদেশে আরাকান প্রদেশ থেকে মানুষ আসতে পারে। সেটা আসছেও। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে ৬০ হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে। এই সংখ্যাটা তো কম নয়। ইতিমধ্যে মিজোরামেও মিয়ানমারের অনেকে আছে। এ রকম ব্যাপারগুলো আরও বাড়বে। আরেকটি বিপদ হলো, ভারত ও বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে অস্ত্র চোরাচালান বাড়তে পারে। যেমন আরাকানে টাটমা-দো বিপুল অস্ত্র খুইয়েছে বা রেখে চলে গেছে। এসবের একাংশ অবৈধ বাজারে চলে আসবে। সেখান থেকে এসব অস্ত্র আশপাশের বিভিন্ন দেশে ঢুকতে পারে।
শেষ পর্যন্ত কি মিয়ানমার ভেঙে যাবে? এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
আসলে সত্য হলো এই, মিয়ানমার এখনই একটা বহুভাবে বিভক্ত দেশ। আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটা বিভক্ত না হলেও তার একাংশের সঙ্গে অন্য অংশের সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক তেমন যোগাযোগ নেই। দেশটির প্রতিটি প্রদেশ এবং কয়েকটি বিভাগও পৃথক পৃথক সশস্ত্র দল দ্বারা শাসিত হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের ব্যবস্থাপনা আলাদা। দেশটির সবদিকের প্রতিবেশী দেশগুলোতে মিয়ানমারের শরণার্থী আছেই। আবার এই দেশটি নিয়ে তার প্রতিটি প্রতিবেশী উদ্বিগ্ন। সেই উদ্বেগ হলো মিয়ানমার অখণ্ড দেশ হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি না। আসলে বর্তমান সংবিধান ও বর্তমান শাসকদের অধীনে এই দেশের টিকে থাকার শর্ত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক প্রদেশগুলো স্বায়ত্তশাসনের জন্য এতটাই মরিয়া যে কেবল সেনাবাহিনী দিয়ে এতগুলো জাতিকে জোর করে দশকের পর দশক এক রাখার চেষ্টা বাস্তবসম্মত নয়। আবার দ্বিতীয় আরেকটি কারণেও মিয়ানমার ঝুঁকিতে আছে। সেটা হলো, দেশের মানুষের কাছ থেকে গণতন্ত্র কেড়ে নিয়ে এবং রোহিঙ্গাসহ অনেক জাতিসত্তার ওপর ক্রমাগত অত্যাচার চালিয়ে এখানকার সেনাবাহিনী বিশ্বসমাজকে তার বিরুদ্ধে নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বহু দেশ মিয়ানমারে পরিবর্তন দেখতে চায়। চীন আবার চায় উল্টোটা। এর ফলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার নিয়ে একটা বিরোধ বাধতে যাচ্ছে। এটাও মিয়ানমারের অখণ্ডতাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বের বলি হতে পারে মিয়ানমারের অখণ্ডতা। যে বাস্তবতায় আবার দেশটির সেনাবাহিনীই জ্বালানি জোগাচ্ছে নিজ জনগণের বিরুদ্ধে অবিরত যুদ্ধ জারি রেখে।
আমরা জানি, জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে চীন। এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ‘বার্মা অ্যাক্ট’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করেছে। এতে করে চীনের মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ কি খর্ব হবে না?
আসলে মিয়ানমারের মানুষ চীনকে তেমন পছন্দ করে না। কিন্তু তারপরও দেশটিতে চীনের ব্যাপক প্রভাব। এর কয়েকটি কারণ আছে। নিজেদের বিভিন্ন নীতিকৌশলের কারণে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এখন। এই বিচ্ছিন্নতার মাঝে কেবল গণচীনের নেতারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন এবং সাহায্য করেন। এর ফলে টাটমা-দো চীনকে খুব পছন্দ করে। চীনের নেতাদের কথা শোনে তারা। এভাবে মিয়ানমারের প্রশাসনে চীনের একচেটিয়া প্রভাব আছে। রাশিয়ারও কিছুটা আছে। মিয়ানমারে চীনের প্রভাব থাকার আরেক কারণ অর্থনৈতিক। দেশটিতে চীনের বিনিয়োগ অনেক। আবার মিয়ানমারের চীন সীমান্তসংলগ্ন অনেক এলাকায় চীনের মুদ্রা, চীনের বিদ্যুৎ, চীনের পণ্য চলছে। এর বাইরেও একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। মিয়ানমারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তাতে উভয় পক্ষের অস্ত্রের বড় এক জোগানদার চীন। তারা সরকারকে যেমন অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে, তেমনি অনেক গেরিলা দলকেও তারা অস্ত্র দিচ্ছে। এভাবে যুদ্ধরত উভয় পক্ষকে তারা নির্ভরশীল করে রেখেছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক মসৃণ না হওয়ার কারণ কী?
মিয়ানমার ও বাংলাদেশ প্রতিবেশী হলেও সম্পর্ক ভালো নয়। এর জন্য দেশটির সেনাবাহিনী প্রধানত দায়ী। টাটমা-দোর রোহিঙ্গাবিরোধী নীতিকৌশল বাংলাদেশকে বেশ বিপদে ফেলেছে। ১০-১১ লাখ মানুষ বাংলাদেশে গত সাড়ে সাত বছর ধরে রয়েছে। আবার প্রতিনিয়ত নতুন মানুষ আসছে। বাংলাদেশের জন্য এটা তো বড় এক সমস্যা। এমনিতে বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ। তার মাঝে এভাবে যদি লাখ লাখ নতুন মানুষকে বনজঙ্গল কেটে থাকতে দেওয়া হয়, সেটা একটা খারাপ ফলই বয়ে আনবে। এক দশক পর এই জনগোষ্ঠী আরও কয়েক লাখ বাড়বে। ধরা যাক, তারা ২০ লাখ হলো। এত বিপুল মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান দেওয়া তো সহজ হবে না। আবার কোনো দুষ্ট মহল চাইলে এদের ব্যবহার করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক-সামাজিক অস্থিতিশীলতাও তৈরি করতে পারে। এ রকম একটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করেছে বাংলাদেশে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। তারাই আবার সেখানে সরকার চালায়। এ রকম একটা শক্তি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় কীভাবে সম্পর্ক ভালো হবে? তবে আরাকানে নতুন শক্তি আধিপত্য বিস্তার করায় এখন অন্তত সীমান্তে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা স্বস্তি তৈরি হলো। মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী আর এই সীমান্তে জোর-জুলুম করতে পারবে না। সেটা আপাতত ইতিহাস হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিকভাবে করণীয় কী?
বাংলাদেশের প্রথম করণীয় হলো প্রকাশ্যে না হলেও অপ্রকাশ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং একটা সমঝোতায় উপনীত হওয়া। সেই সমঝোতাটা হবে—তাদের কিছু সাহায্য-সহযোগিতার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জন্মভিটায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি। এটা যত সহজে বললাম, তত সহজে করার উপায় নেই। কারণ, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির সম্পর্ক ভালো নয়। রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে এই সম্পর্ককে তিক্ত করেছে। বাংলাদেশকে উদ্যোগী হয়ে এখন এই তিক্ততার অবসান ঘটিয়ে দিতে হবে। আরাকান আর্মি প্রদেশে কর্তৃত্ব পেলেও তাদের এখন অনেক ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দরকার। বাংলাদেশ চাইলে মানবিক সহায়তাগুলো দিতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার সুযোগও চাইতে পারে আরাকান আর্মির কাছে। অর্থাৎ উভয়ে লাভবান হয় এমন একটা সমঝোতা তাদের সঙ্গে লাগবে এখন। বাংলাদেশকে আপাতত এই কাজটাই জোরের সঙ্গে করতে হবে বা করা দরকার। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের ভেতরে রাজনৈতিক ঐকমত্য লাগবে। সেটা কীভাবে হবে?
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক গবেষক। নানা বিষয়ে গবেষণাধর্মী তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী: ইতিহাসের পুনপাঠ’, ‘মাওলানা মওদূদীর রাষ্ট্রচিন্তা’, ‘শ্রীলঙ্কার তামিল ইলম্’, ‘বার্মা: জাতিগত সংঘাতের সাত দশক’, ‘সোহরাওয়ার্দী ও বাংলায় মুসলমানের রাষ্ট্রসাধনা’ প্রভৃতি। সম্প্রতি মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

মিয়ানমারের সামগ্রিক পরিস্থিতি এখন কোন পর্যায়ে আছে?
ব্যাপক গৃহযুদ্ধের শিকার মিয়ানমার। সেখানে দুই ধরনের গৃহযুদ্ধ চলছে। একটা হচ্ছে বিভিন্ন অ-বামার জাতিসত্তার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বামারদের। বামাররা হচ্ছে মিয়ানমারের প্রধান জাতি। এই যুদ্ধের একদিকে আছে কারেন, কাচিন, শান, তাঙ, রাখাইন ইত্যাদি জাতিসত্তার গেরিলা দলগুলো এবং অপরদিকে আছে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী—যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘টাটমা-দো’। এ রকম গেরিলা সংঘাত চলছে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রান্তিক প্রদেশগুলোতে প্রায় পঞ্চাশ বছর। তবে এখন তা আগের চেয়ে বেশি তীব্র।
আরেক ধরনের গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে দুই-তিন বছর হলো। এটা শুরু হয় গণতন্ত্রের দাবিতে, সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে। খোদ বামার আর্মির বিরুদ্ধে বামার তরুণ-তরুণীরা এই যুদ্ধে নেমেছে। যারা মূলত বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডির নেতা-কর্মী-সমর্থক।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী দুই ধরনের গৃহযুদ্ধে লড়ছে। একদিকে তাদের প্রতিপক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলোর বিভিন্ন সশস্ত্র গেরিলা দল। এরা মূলত স্বায়ত্তশাসন চায়। অন্য যুদ্ধে টাটমা-দোর সঙ্গে লড়ছে গণতন্ত্রপন্থী মানুষেরা। টাটমা দোর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষ আবার কোথাও কোথাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। তবে সেটা সব জায়গায় নয়। যেমন আরাকানে রাখাইনরা টাটমা-দোর সঙ্গে যুদ্ধ করলেও গণতন্ত্রপন্থীদের সঙ্গে আরাকান আর্মির কোনো সমঝোতা নেই।
১১ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এতে বাংলাদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা আছে কি?
এ প্রশ্নের উত্তর জটিল, যা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। প্রথমত, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের পুরোটা নিয়ন্ত্রণে নেয়নি। তবে প্রায় ৮০ ভাগের মতো তাদের নিয়ন্ত্রণে। এর মাঝে তারা যে অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে তার পুরোটাই বাংলাদেশ লাগোয়া। সুতরাং বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সীমান্ত, সেটা এখন পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এর মানে হলো, বাংলাদেশের সঙ্গে এখন মিয়ানমারের সরাসরি আর সীমানা নেই। মিয়ানমারের কেউ আর সেখানে পাহারা দিচ্ছে না। এই অর্থে এটা একটা বিপজ্জনক অবস্থাই বটে। প্রচুর অবৈধ ব্যবসাপাতির সুযোগ অবারিত হয়েছে এখানে। যার মাঝে মাদকের চোরাচালানও হতে পারে। এ অবস্থায় এই সীমান্তের ব্যবস্থাপনার জন্য অপরদিকের নতুন বাহিনী আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশকে এখন যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। সেটা করা গেলে বাংলাদেশের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা থাকবে না বা কমবে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ সেটা করতে পারবে কি না বা করছে কি না। তা ছাড়া, এই সীমানার দুই দিকেই আরেক সম্প্রদায় রোহিঙ্গারা আছে। যাদের সঙ্গে এই মুহূর্তে আরাকান আর্মির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে আমি বলব, বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তে একটা সম্পূর্ণ নতুন অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশকে এখন এই নতুন অবস্থাকে নতুনভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এতদিনকার পুরোনো কূটনীতিক বুঝ বা পুরোনো কূটনৈতিক বোঝাপড়া দিয়ে এই নতুন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা দুরূহ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু সম্প্রতি বলেছেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি শোচনীয় পর্যায়ে যেতে পারে। এ নিয়ে তাঁরা বাংলাদেশ ও ভারতকে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন। এ সতর্ক করার ব্যাপারটি আসলে কী?
মিয়ানমারের পরিস্থিতি ইতিমধ্যে যথেষ্ট শোচনীয়। আরও শোচনীয় হলে তো সেটা আসলে বিপদের কথাই। আমি দেখিনি তিনি কোথায় সেটা বলেছেন। তবে কথাটা মিথ্যা নয়। এখানে তিন ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে। প্রথমত, দেশটা কয়েক খণ্ডে ভাগ হয়ে যেতে পারে। যে ভাগগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার ব্যাপক সাংস্কৃতিক ফারাক আছে। দ্বিতীয় শঙ্কা হলো, দেশটায় গৃহযুদ্ধ আরও বেড়ে মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে। আরাকানে যেটা এখনই দেখা গেছে। তৃতীয় হলো, গৃহযুদ্ধ এভাবেই চলবে, কোনো পক্ষ কাউকে পরাজিত করতে পারবে না। কিন্তু পুরো দেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হতে থাকবে। মানুষ কিন্তু তখনো পালাতে চাইবে। অর্থাৎ মিয়ানমারে সামনে যা-ই ঘটুক, সেটাই প্রতিবেশীদের জন্য শঙ্কার। বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য শঙ্কার দিক হলো, বিপদে পড়ে আরও মানুষ ওই দিক থেকে এদিকে চলে আসতে পারে। ভারতের মিজোরামে মিয়ানমারের চিন প্রদেশ থেকে এবং বাংলাদেশে আরাকান প্রদেশ থেকে মানুষ আসতে পারে। সেটা আসছেও। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে ৬০ হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে। এই সংখ্যাটা তো কম নয়। ইতিমধ্যে মিজোরামেও মিয়ানমারের অনেকে আছে। এ রকম ব্যাপারগুলো আরও বাড়বে। আরেকটি বিপদ হলো, ভারত ও বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে অস্ত্র চোরাচালান বাড়তে পারে। যেমন আরাকানে টাটমা-দো বিপুল অস্ত্র খুইয়েছে বা রেখে চলে গেছে। এসবের একাংশ অবৈধ বাজারে চলে আসবে। সেখান থেকে এসব অস্ত্র আশপাশের বিভিন্ন দেশে ঢুকতে পারে।
শেষ পর্যন্ত কি মিয়ানমার ভেঙে যাবে? এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
আসলে সত্য হলো এই, মিয়ানমার এখনই একটা বহুভাবে বিভক্ত দেশ। আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটা বিভক্ত না হলেও তার একাংশের সঙ্গে অন্য অংশের সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক তেমন যোগাযোগ নেই। দেশটির প্রতিটি প্রদেশ এবং কয়েকটি বিভাগও পৃথক পৃথক সশস্ত্র দল দ্বারা শাসিত হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের ব্যবস্থাপনা আলাদা। দেশটির সবদিকের প্রতিবেশী দেশগুলোতে মিয়ানমারের শরণার্থী আছেই। আবার এই দেশটি নিয়ে তার প্রতিটি প্রতিবেশী উদ্বিগ্ন। সেই উদ্বেগ হলো মিয়ানমার অখণ্ড দেশ হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি না। আসলে বর্তমান সংবিধান ও বর্তমান শাসকদের অধীনে এই দেশের টিকে থাকার শর্ত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক প্রদেশগুলো স্বায়ত্তশাসনের জন্য এতটাই মরিয়া যে কেবল সেনাবাহিনী দিয়ে এতগুলো জাতিকে জোর করে দশকের পর দশক এক রাখার চেষ্টা বাস্তবসম্মত নয়। আবার দ্বিতীয় আরেকটি কারণেও মিয়ানমার ঝুঁকিতে আছে। সেটা হলো, দেশের মানুষের কাছ থেকে গণতন্ত্র কেড়ে নিয়ে এবং রোহিঙ্গাসহ অনেক জাতিসত্তার ওপর ক্রমাগত অত্যাচার চালিয়ে এখানকার সেনাবাহিনী বিশ্বসমাজকে তার বিরুদ্ধে নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বহু দেশ মিয়ানমারে পরিবর্তন দেখতে চায়। চীন আবার চায় উল্টোটা। এর ফলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার নিয়ে একটা বিরোধ বাধতে যাচ্ছে। এটাও মিয়ানমারের অখণ্ডতাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বের বলি হতে পারে মিয়ানমারের অখণ্ডতা। যে বাস্তবতায় আবার দেশটির সেনাবাহিনীই জ্বালানি জোগাচ্ছে নিজ জনগণের বিরুদ্ধে অবিরত যুদ্ধ জারি রেখে।
আমরা জানি, জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে চীন। এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ‘বার্মা অ্যাক্ট’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করেছে। এতে করে চীনের মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ কি খর্ব হবে না?
আসলে মিয়ানমারের মানুষ চীনকে তেমন পছন্দ করে না। কিন্তু তারপরও দেশটিতে চীনের ব্যাপক প্রভাব। এর কয়েকটি কারণ আছে। নিজেদের বিভিন্ন নীতিকৌশলের কারণে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এখন। এই বিচ্ছিন্নতার মাঝে কেবল গণচীনের নেতারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন এবং সাহায্য করেন। এর ফলে টাটমা-দো চীনকে খুব পছন্দ করে। চীনের নেতাদের কথা শোনে তারা। এভাবে মিয়ানমারের প্রশাসনে চীনের একচেটিয়া প্রভাব আছে। রাশিয়ারও কিছুটা আছে। মিয়ানমারে চীনের প্রভাব থাকার আরেক কারণ অর্থনৈতিক। দেশটিতে চীনের বিনিয়োগ অনেক। আবার মিয়ানমারের চীন সীমান্তসংলগ্ন অনেক এলাকায় চীনের মুদ্রা, চীনের বিদ্যুৎ, চীনের পণ্য চলছে। এর বাইরেও একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। মিয়ানমারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তাতে উভয় পক্ষের অস্ত্রের বড় এক জোগানদার চীন। তারা সরকারকে যেমন অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে, তেমনি অনেক গেরিলা দলকেও তারা অস্ত্র দিচ্ছে। এভাবে যুদ্ধরত উভয় পক্ষকে তারা নির্ভরশীল করে রেখেছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক মসৃণ না হওয়ার কারণ কী?
মিয়ানমার ও বাংলাদেশ প্রতিবেশী হলেও সম্পর্ক ভালো নয়। এর জন্য দেশটির সেনাবাহিনী প্রধানত দায়ী। টাটমা-দোর রোহিঙ্গাবিরোধী নীতিকৌশল বাংলাদেশকে বেশ বিপদে ফেলেছে। ১০-১১ লাখ মানুষ বাংলাদেশে গত সাড়ে সাত বছর ধরে রয়েছে। আবার প্রতিনিয়ত নতুন মানুষ আসছে। বাংলাদেশের জন্য এটা তো বড় এক সমস্যা। এমনিতে বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ। তার মাঝে এভাবে যদি লাখ লাখ নতুন মানুষকে বনজঙ্গল কেটে থাকতে দেওয়া হয়, সেটা একটা খারাপ ফলই বয়ে আনবে। এক দশক পর এই জনগোষ্ঠী আরও কয়েক লাখ বাড়বে। ধরা যাক, তারা ২০ লাখ হলো। এত বিপুল মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান দেওয়া তো সহজ হবে না। আবার কোনো দুষ্ট মহল চাইলে এদের ব্যবহার করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক-সামাজিক অস্থিতিশীলতাও তৈরি করতে পারে। এ রকম একটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করেছে বাংলাদেশে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। তারাই আবার সেখানে সরকার চালায়। এ রকম একটা শক্তি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় কীভাবে সম্পর্ক ভালো হবে? তবে আরাকানে নতুন শক্তি আধিপত্য বিস্তার করায় এখন অন্তত সীমান্তে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা স্বস্তি তৈরি হলো। মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী আর এই সীমান্তে জোর-জুলুম করতে পারবে না। সেটা আপাতত ইতিহাস হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিকভাবে করণীয় কী?
বাংলাদেশের প্রথম করণীয় হলো প্রকাশ্যে না হলেও অপ্রকাশ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং একটা সমঝোতায় উপনীত হওয়া। সেই সমঝোতাটা হবে—তাদের কিছু সাহায্য-সহযোগিতার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জন্মভিটায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি। এটা যত সহজে বললাম, তত সহজে করার উপায় নেই। কারণ, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির সম্পর্ক ভালো নয়। রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে এই সম্পর্ককে তিক্ত করেছে। বাংলাদেশকে উদ্যোগী হয়ে এখন এই তিক্ততার অবসান ঘটিয়ে দিতে হবে। আরাকান আর্মি প্রদেশে কর্তৃত্ব পেলেও তাদের এখন অনেক ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দরকার। বাংলাদেশ চাইলে মানবিক সহায়তাগুলো দিতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার সুযোগও চাইতে পারে আরাকান আর্মির কাছে। অর্থাৎ উভয়ে লাভবান হয় এমন একটা সমঝোতা তাদের সঙ্গে লাগবে এখন। বাংলাদেশকে আপাতত এই কাজটাই জোরের সঙ্গে করতে হবে বা করা দরকার। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের ভেতরে রাজনৈতিক ঐকমত্য লাগবে। সেটা কীভাবে হবে?
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
মিয়ানমারের সামগ্রিক পরিস্থিতি এখন কোন পর্যায়ে আছে?
ব্যাপক গৃহযুদ্ধের শিকার মিয়ানমার। সেখানে দুই ধরনের গৃহযুদ্ধ চলছে। একটা হচ্ছে বিভিন্ন অ-বামার জাতিসত্তার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বামারদের। বামাররা হচ্ছে মিয়ানমারের প্রধান জাতি। এই যুদ্ধের একদিকে আছে কারেন, কাচিন, শান, তাঙ, রাখাইন ইত্যাদি জাতিসত্তার গেরিলা দলগুলো এবং অপরদিকে আছে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী—যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘টাটমা-দো’। এ রকম গেরিলা সংঘাত চলছে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রান্তিক প্রদেশগুলোতে প্রায় পঞ্চাশ বছর। তবে এখন তা আগের চেয়ে বেশি তীব্র।
আরেক ধরনের গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে দুই-তিন বছর হলো। এটা শুরু হয় গণতন্ত্রের দাবিতে, সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে। খোদ বামার আর্মির বিরুদ্ধে বামার তরুণ-তরুণীরা এই যুদ্ধে নেমেছে। যারা মূলত বিরোধী দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডির নেতা-কর্মী-সমর্থক।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী দুই ধরনের গৃহযুদ্ধে লড়ছে। একদিকে তাদের প্রতিপক্ষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলোর বিভিন্ন সশস্ত্র গেরিলা দল। এরা মূলত স্বায়ত্তশাসন চায়। অন্য যুদ্ধে টাটমা-দোর সঙ্গে লড়ছে গণতন্ত্রপন্থী মানুষেরা। টাটমা দোর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষ আবার কোথাও কোথাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে। তবে সেটা সব জায়গায় নয়। যেমন আরাকানে রাখাইনরা টাটমা-দোর সঙ্গে যুদ্ধ করলেও গণতন্ত্রপন্থীদের সঙ্গে আরাকান আর্মির কোনো সমঝোতা নেই।
১১ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এতে বাংলাদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা আছে কি?
এ প্রশ্নের উত্তর জটিল, যা ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। প্রথমত, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের পুরোটা নিয়ন্ত্রণে নেয়নি। তবে প্রায় ৮০ ভাগের মতো তাদের নিয়ন্ত্রণে। এর মাঝে তারা যে অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে তার পুরোটাই বাংলাদেশ লাগোয়া। সুতরাং বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সীমান্ত, সেটা এখন পুরোটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এর মানে হলো, বাংলাদেশের সঙ্গে এখন মিয়ানমারের সরাসরি আর সীমানা নেই। মিয়ানমারের কেউ আর সেখানে পাহারা দিচ্ছে না। এই অর্থে এটা একটা বিপজ্জনক অবস্থাই বটে। প্রচুর অবৈধ ব্যবসাপাতির সুযোগ অবারিত হয়েছে এখানে। যার মাঝে মাদকের চোরাচালানও হতে পারে। এ অবস্থায় এই সীমান্তের ব্যবস্থাপনার জন্য অপরদিকের নতুন বাহিনী আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশকে এখন যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। সেটা করা গেলে বাংলাদেশের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা থাকবে না বা কমবে। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ সেটা করতে পারবে কি না বা করছে কি না। তা ছাড়া, এই সীমানার দুই দিকেই আরেক সম্প্রদায় রোহিঙ্গারা আছে। যাদের সঙ্গে এই মুহূর্তে আরাকান আর্মির সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে আমি বলব, বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তে একটা সম্পূর্ণ নতুন অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশকে এখন এই নতুন অবস্থাকে নতুনভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এতদিনকার পুরোনো কূটনীতিক বুঝ বা পুরোনো কূটনৈতিক বোঝাপড়া দিয়ে এই নতুন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা দুরূহ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু সম্প্রতি বলেছেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি শোচনীয় পর্যায়ে যেতে পারে। এ নিয়ে তাঁরা বাংলাদেশ ও ভারতকে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন। এ সতর্ক করার ব্যাপারটি আসলে কী?
মিয়ানমারের পরিস্থিতি ইতিমধ্যে যথেষ্ট শোচনীয়। আরও শোচনীয় হলে তো সেটা আসলে বিপদের কথাই। আমি দেখিনি তিনি কোথায় সেটা বলেছেন। তবে কথাটা মিথ্যা নয়। এখানে তিন ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে। প্রথমত, দেশটা কয়েক খণ্ডে ভাগ হয়ে যেতে পারে। যে ভাগগুলোর একটার সঙ্গে আরেকটার ব্যাপক সাংস্কৃতিক ফারাক আছে। দ্বিতীয় শঙ্কা হলো, দেশটায় গৃহযুদ্ধ আরও বেড়ে মানবিক সংকট তৈরি হতে পারে। আরাকানে যেটা এখনই দেখা গেছে। তৃতীয় হলো, গৃহযুদ্ধ এভাবেই চলবে, কোনো পক্ষ কাউকে পরাজিত করতে পারবে না। কিন্তু পুরো দেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে নিঃস্ব হতে থাকবে। মানুষ কিন্তু তখনো পালাতে চাইবে। অর্থাৎ মিয়ানমারে সামনে যা-ই ঘটুক, সেটাই প্রতিবেশীদের জন্য শঙ্কার। বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য শঙ্কার দিক হলো, বিপদে পড়ে আরও মানুষ ওই দিক থেকে এদিকে চলে আসতে পারে। ভারতের মিজোরামে মিয়ানমারের চিন প্রদেশ থেকে এবং বাংলাদেশে আরাকান প্রদেশ থেকে মানুষ আসতে পারে। সেটা আসছেও। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে ৬০ হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে। এই সংখ্যাটা তো কম নয়। ইতিমধ্যে মিজোরামেও মিয়ানমারের অনেকে আছে। এ রকম ব্যাপারগুলো আরও বাড়বে। আরেকটি বিপদ হলো, ভারত ও বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে অস্ত্র চোরাচালান বাড়তে পারে। যেমন আরাকানে টাটমা-দো বিপুল অস্ত্র খুইয়েছে বা রেখে চলে গেছে। এসবের একাংশ অবৈধ বাজারে চলে আসবে। সেখান থেকে এসব অস্ত্র আশপাশের বিভিন্ন দেশে ঢুকতে পারে।
শেষ পর্যন্ত কি মিয়ানমার ভেঙে যাবে? এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
আসলে সত্য হলো এই, মিয়ানমার এখনই একটা বহুভাবে বিভক্ত দেশ। আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটা বিভক্ত না হলেও তার একাংশের সঙ্গে অন্য অংশের সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক তেমন যোগাযোগ নেই। দেশটির প্রতিটি প্রদেশ এবং কয়েকটি বিভাগও পৃথক পৃথক সশস্ত্র দল দ্বারা শাসিত হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের ব্যবস্থাপনা আলাদা। দেশটির সবদিকের প্রতিবেশী দেশগুলোতে মিয়ানমারের শরণার্থী আছেই। আবার এই দেশটি নিয়ে তার প্রতিটি প্রতিবেশী উদ্বিগ্ন। সেই উদ্বেগ হলো মিয়ানমার অখণ্ড দেশ হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি না। আসলে বর্তমান সংবিধান ও বর্তমান শাসকদের অধীনে এই দেশের টিকে থাকার শর্ত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক প্রদেশগুলো স্বায়ত্তশাসনের জন্য এতটাই মরিয়া যে কেবল সেনাবাহিনী দিয়ে এতগুলো জাতিকে জোর করে দশকের পর দশক এক রাখার চেষ্টা বাস্তবসম্মত নয়। আবার দ্বিতীয় আরেকটি কারণেও মিয়ানমার ঝুঁকিতে আছে। সেটা হলো, দেশের মানুষের কাছ থেকে গণতন্ত্র কেড়ে নিয়ে এবং রোহিঙ্গাসহ অনেক জাতিসত্তার ওপর ক্রমাগত অত্যাচার চালিয়ে এখানকার সেনাবাহিনী বিশ্বসমাজকে তার বিরুদ্ধে নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বহু দেশ মিয়ানমারে পরিবর্তন দেখতে চায়। চীন আবার চায় উল্টোটা। এর ফলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ানমার নিয়ে একটা বিরোধ বাধতে যাচ্ছে। এটাও মিয়ানমারের অখণ্ডতাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বের বলি হতে পারে মিয়ানমারের অখণ্ডতা। যে বাস্তবতায় আবার দেশটির সেনাবাহিনীই জ্বালানি জোগাচ্ছে নিজ জনগণের বিরুদ্ধে অবিরত যুদ্ধ জারি রেখে।
আমরা জানি, জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে চীন। এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ‘বার্মা অ্যাক্ট’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করেছে। এতে করে চীনের মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণ কি খর্ব হবে না?
আসলে মিয়ানমারের মানুষ চীনকে তেমন পছন্দ করে না। কিন্তু তারপরও দেশটিতে চীনের ব্যাপক প্রভাব। এর কয়েকটি কারণ আছে। নিজেদের বিভিন্ন নীতিকৌশলের কারণে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী বিশ্ব থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এখন। এই বিচ্ছিন্নতার মাঝে কেবল গণচীনের নেতারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন এবং সাহায্য করেন। এর ফলে টাটমা-দো চীনকে খুব পছন্দ করে। চীনের নেতাদের কথা শোনে তারা। এভাবে মিয়ানমারের প্রশাসনে চীনের একচেটিয়া প্রভাব আছে। রাশিয়ারও কিছুটা আছে। মিয়ানমারে চীনের প্রভাব থাকার আরেক কারণ অর্থনৈতিক। দেশটিতে চীনের বিনিয়োগ অনেক। আবার মিয়ানমারের চীন সীমান্তসংলগ্ন অনেক এলাকায় চীনের মুদ্রা, চীনের বিদ্যুৎ, চীনের পণ্য চলছে। এর বাইরেও একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। মিয়ানমারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের যে গৃহযুদ্ধ চলছে, তাতে উভয় পক্ষের অস্ত্রের বড় এক জোগানদার চীন। তারা সরকারকে যেমন অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে, তেমনি অনেক গেরিলা দলকেও তারা অস্ত্র দিচ্ছে। এভাবে যুদ্ধরত উভয় পক্ষকে তারা নির্ভরশীল করে রেখেছে।
মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক মসৃণ না হওয়ার কারণ কী?
মিয়ানমার ও বাংলাদেশ প্রতিবেশী হলেও সম্পর্ক ভালো নয়। এর জন্য দেশটির সেনাবাহিনী প্রধানত দায়ী। টাটমা-দোর রোহিঙ্গাবিরোধী নীতিকৌশল বাংলাদেশকে বেশ বিপদে ফেলেছে। ১০-১১ লাখ মানুষ বাংলাদেশে গত সাড়ে সাত বছর ধরে রয়েছে। আবার প্রতিনিয়ত নতুন মানুষ আসছে। বাংলাদেশের জন্য এটা তো বড় এক সমস্যা। এমনিতে বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ। তার মাঝে এভাবে যদি লাখ লাখ নতুন মানুষকে বনজঙ্গল কেটে থাকতে দেওয়া হয়, সেটা একটা খারাপ ফলই বয়ে আনবে। এক দশক পর এই জনগোষ্ঠী আরও কয়েক লাখ বাড়বে। ধরা যাক, তারা ২০ লাখ হলো। এত বিপুল মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জোগান দেওয়া তো সহজ হবে না। আবার কোনো দুষ্ট মহল চাইলে এদের ব্যবহার করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক-সামাজিক অস্থিতিশীলতাও তৈরি করতে পারে। এ রকম একটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করেছে বাংলাদেশে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। তারাই আবার সেখানে সরকার চালায়। এ রকম একটা শক্তি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় কীভাবে সম্পর্ক ভালো হবে? তবে আরাকানে নতুন শক্তি আধিপত্য বিস্তার করায় এখন অন্তত সীমান্তে বাংলাদেশের জন্য কিছুটা স্বস্তি তৈরি হলো। মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী আর এই সীমান্তে জোর-জুলুম করতে পারবে না। সেটা আপাতত ইতিহাস হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কূটনৈতিকভাবে করণীয় কী?
বাংলাদেশের প্রথম করণীয় হলো প্রকাশ্যে না হলেও অপ্রকাশ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং একটা সমঝোতায় উপনীত হওয়া। সেই সমঝোতাটা হবে—তাদের কিছু সাহায্য-সহযোগিতার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জন্মভিটায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি। এটা যত সহজে বললাম, তত সহজে করার উপায় নেই। কারণ, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির সম্পর্ক ভালো নয়। রোহিঙ্গারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে এই সম্পর্ককে তিক্ত করেছে। বাংলাদেশকে উদ্যোগী হয়ে এখন এই তিক্ততার অবসান ঘটিয়ে দিতে হবে। আরাকান আর্মি প্রদেশে কর্তৃত্ব পেলেও তাদের এখন অনেক ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দরকার। বাংলাদেশ চাইলে মানবিক সহায়তাগুলো দিতে পারে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার সুযোগও চাইতে পারে আরাকান আর্মির কাছে। অর্থাৎ উভয়ে লাভবান হয় এমন একটা সমঝোতা তাদের সঙ্গে লাগবে এখন। বাংলাদেশকে আপাতত এই কাজটাই জোরের সঙ্গে করতে হবে বা করা দরকার। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের ভেতরে রাজনৈতিক ঐকমত্য লাগবে। সেটা কীভাবে হবে?
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
৬ ঘণ্টা আগে
ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন...
৬ ঘণ্টা আগে
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে...
৭ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির...
৭ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

ব্যাপক গৃহযুদ্ধের শিকার মিয়ানমার। সেখানে দুই ধরনের গৃহযুদ্ধ চলছে। একটা হচ্ছে বিভিন্ন অ-বামার জাতিসত্তার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বামারদের। বামাররা হচ্ছে মিয়ানমারের প্রধান জাতি। এই যুদ্ধের একদিকে আছে কারেন, কাচিন, শান, তাঙ, রাখাইন ইত্যাদি জাতিসত্তার গেরিলা দলগুলো এবং অপরদিকে আছে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয়
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন...
৬ ঘণ্টা আগে
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে...
৭ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির...
৭ ঘণ্টা আগেরাজিউল হাসান

ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন আগেও বেশ কম ছিল।
বহু বছর ধরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই-মার্ক্সবাদী) নেতৃত্বে বাম মতাদর্শের জোট লেফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ) ভাগাভাগি করে কেরালা শাসন করছে। কিন্তু সে দুর্ভেদ্য রাজ্যে এবার বিজেপি চমক দেখিয়েছে। ৯ ডিসেম্বর কেরালার তিরুবনন্তপুরাম পৌরসভায় ভোট হয়েছে। এখানকার ১০১টি আসনের মধ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জিতেছে ৫০টিতে। আগের পর্ষদের চেয়ে এবার এই জোট ১৫টি বেশি আসন দখলে নিয়েছে। এলডিএফ বিজয়ী হয়েছে ২৯টি আসনে। আগেরবারের তুলনায় এবার তাদের আসন কমেছে ২৩টি। ইউডিএফ জিতেছে ১৯টি আসনে। আগেরবারের চেয়ে এবার তাদের ঝুলিতে আসন বেড়েছে ৯টি। দুটি আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ভূখণ্ডের আয়তনের বিচারে ভারত বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম দেশ। আর জনসংখ্যার বিচারে দেশটি এখন বিশ্বের শীর্ষে। ২৮টি রাজ্য আর ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের এমন বড় একটি দেশের একটি রাজ্যের একটি পৌরসভায় বিজেপির এমন বিজয় হয়তো সাদা চোখে খুব বড় কোনো সাফল্য নয়। তবে এ কথা একেবারে অনস্বীকার্য যে বামদের দুর্গে এবার খুব ছোট করে হলেও বিজেপির পদ্মফুল ফুটেছে। এ বিজয় বিজেপির জন্য যেমন উদ্যাপনের একটি মুহূর্ত নিয়ে এসেছে, একই সঙ্গে দেশটির অন্যান্য রাজনৈতিক দলের জন্যও নতুন করে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের উপলক্ষ তৈরি করেছে।
ভারতের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এখন ২৪টিই বিজেপি ও তার জোটের দখলে। এগুলো হলো অন্ধ্র প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, দিল্লি, গোয়া, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ওডিশা, পদুচেরি, রাজস্থান, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখন্ড। কংগ্রেস, তার মিত্র ও কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের শাসন চলছে সাতটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। পাঞ্জাবে চলছে আম আদমি পার্টির এবং মিজোরামে চলছে জোরাম পিপলস মুভমেন্ট (জেডপিএম) পার্টির শাসন। পশ্চিমবঙ্গ অনেক বছর ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস শাসন করছে।
অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি জোট যখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় আসে, তখনো দলটির এতটা বিস্তার ছিল না। দিনে দিনে দেশজুড়ে তাদের প্রভাব বেড়েছে, নিয়ন্ত্রণে এসেছে নতুন নতুন এলাকা। সে হিসাবে হয়তো বামদের দুর্গে বিজেপির ছোট্ট হানা স্বাভাবিক মনে হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গসহ আরও যেসব রাজ্য বিজেপির নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে, সেসব রাজ্যের শাসক দলের জন্য এটি একটি অশনিসংকেত। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য কেরালার তিরুবনন্তপুরাম পৌর নির্বাচন আশু দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। কারণ, আর কয়েক মাস পরই এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন।
যে কেরালা নিয়ে আজকের আলোচনা, সেখানেও আগামী এপ্রিলে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসাবে তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচনের ফলাফল বড় একটি বার্তা দিয়েছে বামদের। এ নির্বাচনে এলডিএফ বড় মার খেয়েছে। ১০১ আসনের এই পৌর কাউন্সিলে ৫১ আসনে জিতলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়। বিজেপি মাত্র এক আসন কম পেয়েছে। এলডিএফ হারিয়েছে ২৩ আসন। অবশ্য কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ পৌরসভা ও পঞ্চায়েতগুলোয় বেশ ভালো করেছে।
কেরালায় হয়তো আজও এলডিএফ এবং ইউডিএফ জোটই বড় রাজনৈতিক খেলোয়াড়। তবে বিজেপিও যে আর তুচ্ছ নয়, তা তিরুবনন্তপুরামের ফলাফল বুঝিয়ে দিয়েছে। রাজ্যটি এলডিএফ এবং ইউডিএফ ভাগাভাগি করে শাসন করলেও তিরুবনন্তপুরাম ৪৫ বছর ধরে রেখেছিল বামেরাই। সেই দুর্গ এবার ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। শুধু তিরুবনন্তপুরামই নয়, কেরালার পালাক্কাড় পৌরসভা এবং ত্রিপুনিথুরা পৌরসভাও এখন বিজেপির দখলে।
কেরালায় আগের বিধানসভা নির্বাচনে ১৪০ আসনের মধ্যে ৯৯টিই দখলে নিয়েছিল এলডিএফ। বাকি ৪১টি আসন পেয়েছিল ইউডিএফ। তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচন বলে দিচ্ছে, এবার ফলাফলটা এমন হবে না। এলডিএফ জোট ২০১৬ সাল থেকে টানা এ রাজ্যের ক্ষমতায়।
রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, কেরালার পঞ্চায়েতগুলোর মধ্যে দেড় হাজারের মতো ওয়ার্ড এখন বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের দখলে। তিরুবনন্তপুরামে জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য ছিল, ‘চোখে জল আনার মতো মুহূর্ত এটি।’
বিজেপির নেতাদের দাবি, কেরালায় ভবিষ্যতে বিজেপির অবস্থান আরও পোক্ত হবে এবং একসময় এখানে ইউডিএফ ও কংগ্রেসের ভোটাররা বিজেপিকেই সমর্থন করবেন। তাঁরা এ জন্য আগেভাগেই বিজেপির কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে রেখেছেন।
কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচনের ফলাফলের পর স্বীকার করেছেন, কেরালায় ভোটারদের পছন্দে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে।
অবশ্য তিরুবনন্তপুরামে কিন্তু রাতারাতি বিজেপি এমন বিজয় অর্জন করেনি। বরং ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা ধীরে ধীরে অগ্রগতি অর্জন করেছে। শুধু কেরালায়ই নয়, অন্যান্য রাজ্যেও বিজেপির পদ্মফুল ফুটেছে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায়। আমরা শুধু জানি, বিজেপি ধর্মকে সামনে রেখে রাজনীতি করে চলেছে। সেটা হয়তো ঠিক। কিন্তু এই ইস্যুটি ছাড়াও বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের ঝুলিতে আরও অনেক কিছু আছে। বিজেপির সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হলো, তারা যে রাজ্যের জন্য যে কৌশল প্রয়োজন, ঠিক সেটাই প্রয়োগ করছে। যেমন কেরালায় বামদের হটাতে তারা যে কৌশল প্রয়োগ করছে, আসাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিন্তু সেই একই কৌশলে তারা হাঁটছে না। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোয় বিজেপিতে আস্থা বাড়াতে যে পথে হাঁটছে তারা, দেশের মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় সে পথে তারা নেই। কাশ্মীরে তাদের যে কৌশল, তামিলনাড়ুতে গিয়ে দেখা যাবে, ঠিক তার বিপরীত কৌশল বিজেপির। এবং এই যে রাজ্যভেদে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল, সেটা নির্ধারণ করা হচ্ছে একেবারে শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে। এই শীর্ষ নেতৃত্ব কিন্তু একজনের হাতে কুক্ষিগত নয়, বরং একদল বর্ষীয়ান-অভিজ্ঞ রাজনীতিক একসঙ্গে গড়ে তুলেছেন সে নেতৃত্ব।
ঠিক এই জায়গায় কংগ্রেস কিংবা অন্য দলগুলোর সঙ্গে বিজেপির ফারাক। কংগ্রেসের কথাই ধরা যাক। দলটি এখনো গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। পারিবারিক নেতৃত্ব থেকে দলটি বের হতে না পারার খেসারত দিচ্ছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। এ ছাড়া ভারতের বেশির ভাগ দলেও পরিবারতন্ত্র বেশ বহাল তবিয়তে রাজত্ব করছে। আর ঠিক এ সুযোগেই বিজেপি ভারতজুড়ে ধীরে ধীরে পদ্মফুল ফুটিয়ে চলেছে।

ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন আগেও বেশ কম ছিল।
বহু বছর ধরে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই-মার্ক্সবাদী) নেতৃত্বে বাম মতাদর্শের জোট লেফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ) ভাগাভাগি করে কেরালা শাসন করছে। কিন্তু সে দুর্ভেদ্য রাজ্যে এবার বিজেপি চমক দেখিয়েছে। ৯ ডিসেম্বর কেরালার তিরুবনন্তপুরাম পৌরসভায় ভোট হয়েছে। এখানকার ১০১টি আসনের মধ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট জিতেছে ৫০টিতে। আগের পর্ষদের চেয়ে এবার এই জোট ১৫টি বেশি আসন দখলে নিয়েছে। এলডিএফ বিজয়ী হয়েছে ২৯টি আসনে। আগেরবারের তুলনায় এবার তাদের আসন কমেছে ২৩টি। ইউডিএফ জিতেছে ১৯টি আসনে। আগেরবারের চেয়ে এবার তাদের ঝুলিতে আসন বেড়েছে ৯টি। দুটি আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ভূখণ্ডের আয়তনের বিচারে ভারত বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম দেশ। আর জনসংখ্যার বিচারে দেশটি এখন বিশ্বের শীর্ষে। ২৮টি রাজ্য আর ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের এমন বড় একটি দেশের একটি রাজ্যের একটি পৌরসভায় বিজেপির এমন বিজয় হয়তো সাদা চোখে খুব বড় কোনো সাফল্য নয়। তবে এ কথা একেবারে অনস্বীকার্য যে বামদের দুর্গে এবার খুব ছোট করে হলেও বিজেপির পদ্মফুল ফুটেছে। এ বিজয় বিজেপির জন্য যেমন উদ্যাপনের একটি মুহূর্ত নিয়ে এসেছে, একই সঙ্গে দেশটির অন্যান্য রাজনৈতিক দলের জন্যও নতুন করে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের উপলক্ষ তৈরি করেছে।
ভারতের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে এখন ২৪টিই বিজেপি ও তার জোটের দখলে। এগুলো হলো অন্ধ্র প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, দিল্লি, গোয়া, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ওডিশা, পদুচেরি, রাজস্থান, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখন্ড। কংগ্রেস, তার মিত্র ও কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের শাসন চলছে সাতটি রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে। পাঞ্জাবে চলছে আম আদমি পার্টির এবং মিজোরামে চলছে জোরাম পিপলস মুভমেন্ট (জেডপিএম) পার্টির শাসন। পশ্চিমবঙ্গ অনেক বছর ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস শাসন করছে।
অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি জোট যখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় আসে, তখনো দলটির এতটা বিস্তার ছিল না। দিনে দিনে দেশজুড়ে তাদের প্রভাব বেড়েছে, নিয়ন্ত্রণে এসেছে নতুন নতুন এলাকা। সে হিসাবে হয়তো বামদের দুর্গে বিজেপির ছোট্ট হানা স্বাভাবিক মনে হবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গসহ আরও যেসব রাজ্য বিজেপির নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে, সেসব রাজ্যের শাসক দলের জন্য এটি একটি অশনিসংকেত। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য কেরালার তিরুবনন্তপুরাম পৌর নির্বাচন আশু দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। কারণ, আর কয়েক মাস পরই এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন।
যে কেরালা নিয়ে আজকের আলোচনা, সেখানেও আগামী এপ্রিলে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসাবে তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচনের ফলাফল বড় একটি বার্তা দিয়েছে বামদের। এ নির্বাচনে এলডিএফ বড় মার খেয়েছে। ১০১ আসনের এই পৌর কাউন্সিলে ৫১ আসনে জিতলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়। বিজেপি মাত্র এক আসন কম পেয়েছে। এলডিএফ হারিয়েছে ২৩ আসন। অবশ্য কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ পৌরসভা ও পঞ্চায়েতগুলোয় বেশ ভালো করেছে।
কেরালায় হয়তো আজও এলডিএফ এবং ইউডিএফ জোটই বড় রাজনৈতিক খেলোয়াড়। তবে বিজেপিও যে আর তুচ্ছ নয়, তা তিরুবনন্তপুরামের ফলাফল বুঝিয়ে দিয়েছে। রাজ্যটি এলডিএফ এবং ইউডিএফ ভাগাভাগি করে শাসন করলেও তিরুবনন্তপুরাম ৪৫ বছর ধরে রেখেছিল বামেরাই। সেই দুর্গ এবার ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। শুধু তিরুবনন্তপুরামই নয়, কেরালার পালাক্কাড় পৌরসভা এবং ত্রিপুনিথুরা পৌরসভাও এখন বিজেপির দখলে।
কেরালায় আগের বিধানসভা নির্বাচনে ১৪০ আসনের মধ্যে ৯৯টিই দখলে নিয়েছিল এলডিএফ। বাকি ৪১টি আসন পেয়েছিল ইউডিএফ। তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচন বলে দিচ্ছে, এবার ফলাফলটা এমন হবে না। এলডিএফ জোট ২০১৬ সাল থেকে টানা এ রাজ্যের ক্ষমতায়।
রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, কেরালার পঞ্চায়েতগুলোর মধ্যে দেড় হাজারের মতো ওয়ার্ড এখন বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের দখলে। তিরুবনন্তপুরামে জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্তব্য ছিল, ‘চোখে জল আনার মতো মুহূর্ত এটি।’
বিজেপির নেতাদের দাবি, কেরালায় ভবিষ্যতে বিজেপির অবস্থান আরও পোক্ত হবে এবং একসময় এখানে ইউডিএফ ও কংগ্রেসের ভোটাররা বিজেপিকেই সমর্থন করবেন। তাঁরা এ জন্য আগেভাগেই বিজেপির কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে রেখেছেন।
কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও তিরুবনন্তপুরামের নির্বাচনের ফলাফলের পর স্বীকার করেছেন, কেরালায় ভোটারদের পছন্দে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে।
অবশ্য তিরুবনন্তপুরামে কিন্তু রাতারাতি বিজেপি এমন বিজয় অর্জন করেনি। বরং ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা ধীরে ধীরে অগ্রগতি অর্জন করেছে। শুধু কেরালায়ই নয়, অন্যান্য রাজ্যেও বিজেপির পদ্মফুল ফুটেছে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায়। আমরা শুধু জানি, বিজেপি ধর্মকে সামনে রেখে রাজনীতি করে চলেছে। সেটা হয়তো ঠিক। কিন্তু এই ইস্যুটি ছাড়াও বিজেপির রাজনৈতিক কৌশলের ঝুলিতে আরও অনেক কিছু আছে। বিজেপির সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হলো, তারা যে রাজ্যের জন্য যে কৌশল প্রয়োজন, ঠিক সেটাই প্রয়োগ করছে। যেমন কেরালায় বামদের হটাতে তারা যে কৌশল প্রয়োগ করছে, আসাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিন্তু সেই একই কৌশলে তারা হাঁটছে না। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোয় বিজেপিতে আস্থা বাড়াতে যে পথে হাঁটছে তারা, দেশের মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় সে পথে তারা নেই। কাশ্মীরে তাদের যে কৌশল, তামিলনাড়ুতে গিয়ে দেখা যাবে, ঠিক তার বিপরীত কৌশল বিজেপির। এবং এই যে রাজ্যভেদে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল, সেটা নির্ধারণ করা হচ্ছে একেবারে শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে। এই শীর্ষ নেতৃত্ব কিন্তু একজনের হাতে কুক্ষিগত নয়, বরং একদল বর্ষীয়ান-অভিজ্ঞ রাজনীতিক একসঙ্গে গড়ে তুলেছেন সে নেতৃত্ব।
ঠিক এই জায়গায় কংগ্রেস কিংবা অন্য দলগুলোর সঙ্গে বিজেপির ফারাক। কংগ্রেসের কথাই ধরা যাক। দলটি এখনো গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। পারিবারিক নেতৃত্ব থেকে দলটি বের হতে না পারার খেসারত দিচ্ছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। এ ছাড়া ভারতের বেশির ভাগ দলেও পরিবারতন্ত্র বেশ বহাল তবিয়তে রাজত্ব করছে। আর ঠিক এ সুযোগেই বিজেপি ভারতজুড়ে ধীরে ধীরে পদ্মফুল ফুটিয়ে চলেছে।

ব্যাপক গৃহযুদ্ধের শিকার মিয়ানমার। সেখানে দুই ধরনের গৃহযুদ্ধ চলছে। একটা হচ্ছে বিভিন্ন অ-বামার জাতিসত্তার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বামারদের। বামাররা হচ্ছে মিয়ানমারের প্রধান জাতি। এই যুদ্ধের একদিকে আছে কারেন, কাচিন, শান, তাঙ, রাখাইন ইত্যাদি জাতিসত্তার গেরিলা দলগুলো এবং অপরদিকে আছে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয়
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
৬ ঘণ্টা আগে
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে...
৭ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির...
৭ ঘণ্টা আগেরাফায়েল আহমেদ শামীম

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে; তবে ফিলিস্তিনি নেতাদের বেছে বেছে হত্যা করা উচিত। এটি কোনো উগ্রমনা ব্যক্তির অযৌক্তিক মন্তব্য নয়, এটি একজন রাষ্ট্রীয় মন্ত্রীর মুখ থেকে আসা রাজনৈতিক নির্দেশ, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের জন্য এক চরম হুমকি।
এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে রুখে দেওয়ার জন্য সুগঠিত নীতি অনুসরণ করছে, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের দমন, ভূখণ্ড দখল, বসতি সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে গাজা উপত্যকার স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনী গঠনের প্রস্তাব, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠনের সহায়তা ইসরায়েলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মানে তাদের রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা, যা পশ্চিম তীরের দখলনীতি ও বসতি সম্প্রসারণকে আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এই ভীতিই বেন-গভিরের মতো উগ্র নেতাদের প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিতে প্রলুব্ধ করছে।
বেন-গভিরের বক্তব্যে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে অস্তিত্বহীন বলা, তাদের অন্য আরব দেশ থেকে আগত অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা এবং সন্ত্রাসমূলক আখ্যায়িত করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও জাতিগত স্বীকৃতির নীতির পরিপন্থী। ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে কোনো জাতিকে অবৈধ বা অস্তিত্বহীন হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে তার ওপর সহিংসতা প্রয়োগ করা হয়েছে। যেমন রুয়ান্ডার তুতসিদের ক্ষেত্রে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর এবং নাৎসি জার্মানিতে ইহুদিদের বিরুদ্ধে। তাই এই ধরনের বক্তব্য কেবল হুমকি নয়, বরং বাস্তবায়নের প্রস্তুতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। তবে এই সহযোগিতাও ইসরায়েলের কাছে রাষ্ট্র স্বীকৃতির জন্য যথেষ্ট নয়। নেতানিয়াহু সরকারের ডানপন্থী জোটের নেতারা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বেনজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্র করার চেষ্টা করছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন, যাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়। এই কৌশল দেখাচ্ছে, ইসরায়েলের নীতি কেবল নিরাপত্তার কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার অংশ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি নীরব থাকে, তবে এটি আন্তর্জাতিক আইনের জন্য একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে। যে রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে হত্যার হুমকি দিতে পারে, তাকে আইনি ও নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ করার কোনো কার্যকর ক্ষমতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেই, এটাই সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের জন্য আলাদা কারাগারের কক্ষ প্রস্তুত রাখার কথাও ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এটি শুধু হুমকি নয়, বরং সম্ভাব্য বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনার ইঙ্গিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে ইসরায়েল তার কৌশলগত লক্ষ্য পূরণের জন্য চরম হুমকি ও সহিংসতা ব্যবহারে প্রস্তুত।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গাজা পুনর্গঠন, পিএর সংস্কার কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনী—সবই ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র গঠনের পথকে সহায়তা করছে। এই প্রক্রিয়ায় ইসরায়েল উদ্বিগ্ন, কারণ এটি তাদের একতরফা দখল নীতি ও বসতি সম্প্রসারণকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। বেন-গভিরের মন্তব্য কেবল হুমকি নয়, বরং এই প্রক্রিয়ার প্রতি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
ইসরায়েলি নেতাদের উগ্র প্রতিক্রিয়ার কারণ হলো, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তাদের দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও নিরাপত্তাকাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা এটিকে ‘রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একবার জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে, পশ্চিম তীরের দখল, জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ এবং গাজার ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এই পরিস্থিতিই বেন-গভিরকে হত্যার হুমকি দিতে প্রলুব্ধ করেছে।
আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বেন-গভিরের বক্তব্য স্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আদালতের কার্যকর পদক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা কার্যকর হচ্ছে না। ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্র যখন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মিত্র শক্তির আশ্রয়ে থাকে, তখন আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে জাতিসংঘের মতো সংস্থা কার্যকর হুমকি প্রতিরোধ করতে পারছে না। ফিলিস্তিনের জনগণ এই হুমকির প্রভাবে ভয় ও অনিশ্চয়তায় দগ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না, তাতে ইসরায়েল আরও বেপরোয়া হচ্ছে। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, রাষ্ট্রীয় হুমকি এবং নীরব আন্তর্জাতিক সমাজ মিলিত হলে অত্যাচারী নীতি বাস্তবায়িত হয়। রুয়ান্ডা, মিয়ানমার, ইউক্রেন—সবই এই প্যাটার্নের উদাহরণ। তাই ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো সুরক্ষিত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ অপরিহার্য।
ইসরায়েলি রাজনীতির উগ্রতা, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সীমিত প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন এক সংকট তৈরি করেছে, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা ধ্বংসের মুখে। এই অবস্থা শুধু ফিলিস্তিনের জন্য বিপজ্জনক নয়; এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্য, কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক আইনকে চ্যালেঞ্জ করছে। রাষ্ট্রীয় হত্যার হুমকি, ফিলিস্তিনের জনগণের অস্তিত্ব অস্বীকৃতি এবং জাতিসংঘকে হুমকি—সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পরীক্ষা করছে। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরব থাকে, জাতিসংঘ কার্যকর পদক্ষেপ না নিক, তবে ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্ররা জানবে যে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এতে ফিলিস্তিনিরা রাষ্ট্রহীন হবে, তাদের নেতৃত্ব দুর্বল হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের ধারণা অন্ধকারে ঢাকা পড়বে। এই সংকট কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি বৈশ্বিক নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের কাঠামোর জন্য বড় পরীক্ষা।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি কেবল ভূরাজনৈতিক নয়; এটি নৈতিক, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ না করে, পরিস্থিতি আরও সংকীর্ণ ও বিপজ্জনক হবে। রাষ্ট্রীয় হত্যার হুমকি, জাতিসংঘের ওপর চাপ, ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব অস্বীকার—সব মিলিয়ে বিশ্বকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি করছে। এই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নইলে শুধু ফিলিস্তিন নয়, বৈশ্বিক নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের ভিত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সর্বোপরি ইসরায়েলের এই হুমকি শুধু একটি উগ্রমনা নেতার বক্তৃতা নয়; এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তির অমোঘ প্রভাবের উদাহরণ। এটি রাষ্ট্রীয় নীতি, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের কার্যকারিতা পুনর্মূল্যায়নের তাগিদ দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রাধান্য কি তারা নিশ্চিত করবে, নাকি শক্তিশালী রাষ্ট্রের উসকানি ও হত্যার হুমকি নিয়ে নীরব থাকবে?

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে; তবে ফিলিস্তিনি নেতাদের বেছে বেছে হত্যা করা উচিত। এটি কোনো উগ্রমনা ব্যক্তির অযৌক্তিক মন্তব্য নয়, এটি একজন রাষ্ট্রীয় মন্ত্রীর মুখ থেকে আসা রাজনৈতিক নির্দেশ, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের জন্য এক চরম হুমকি।
এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে রুখে দেওয়ার জন্য সুগঠিত নীতি অনুসরণ করছে, যেখানে রাজনৈতিক নেতাদের দমন, ভূখণ্ড দখল, বসতি সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে গাজা উপত্যকার স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনী গঠনের প্রস্তাব, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠনের সহায়তা ইসরায়েলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মানে তাদের রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা, যা পশ্চিম তীরের দখলনীতি ও বসতি সম্প্রসারণকে আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এই ভীতিই বেন-গভিরের মতো উগ্র নেতাদের প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিতে প্রলুব্ধ করছে।
বেন-গভিরের বক্তব্যে ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে অস্তিত্বহীন বলা, তাদের অন্য আরব দেশ থেকে আগত অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা এবং সন্ত্রাসমূলক আখ্যায়িত করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও জাতিগত স্বীকৃতির নীতির পরিপন্থী। ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে কোনো জাতিকে অবৈধ বা অস্তিত্বহীন হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে তার ওপর সহিংসতা প্রয়োগ করা হয়েছে। যেমন রুয়ান্ডার তুতসিদের ক্ষেত্রে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর এবং নাৎসি জার্মানিতে ইহুদিদের বিরুদ্ধে। তাই এই ধরনের বক্তব্য কেবল হুমকি নয়, বরং বাস্তবায়নের প্রস্তুতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। তবে এই সহযোগিতাও ইসরায়েলের কাছে রাষ্ট্র স্বীকৃতির জন্য যথেষ্ট নয়। নেতানিয়াহু সরকারের ডানপন্থী জোটের নেতারা একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বেনজালেল স্মোট্রিচ পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্র করার চেষ্টা করছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন, যাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়। এই কৌশল দেখাচ্ছে, ইসরায়েলের নীতি কেবল নিরাপত্তার কারণে নয়, বরং রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার অংশ। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি নীরব থাকে, তবে এটি আন্তর্জাতিক আইনের জন্য একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে। যে রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে হত্যার হুমকি দিতে পারে, তাকে আইনি ও নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ করার কোনো কার্যকর ক্ষমতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেই, এটাই সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের জন্য আলাদা কারাগারের কক্ষ প্রস্তুত রাখার কথাও ইসরায়েলি সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এটি শুধু হুমকি নয়, বরং সম্ভাব্য বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনার ইঙ্গিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে ইসরায়েল তার কৌশলগত লক্ষ্য পূরণের জন্য চরম হুমকি ও সহিংসতা ব্যবহারে প্রস্তুত।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গাজা পুনর্গঠন, পিএর সংস্কার কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক শান্তিবাহিনী—সবই ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র গঠনের পথকে সহায়তা করছে। এই প্রক্রিয়ায় ইসরায়েল উদ্বিগ্ন, কারণ এটি তাদের একতরফা দখল নীতি ও বসতি সম্প্রসারণকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। বেন-গভিরের মন্তব্য কেবল হুমকি নয়, বরং এই প্রক্রিয়ার প্রতি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
ইসরায়েলি নেতাদের উগ্র প্রতিক্রিয়ার কারণ হলো, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তাদের দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও নিরাপত্তাকাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা এটিকে ‘রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। একবার জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে, পশ্চিম তীরের দখল, জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রণ এবং গাজার ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এই পরিস্থিতিই বেন-গভিরকে হত্যার হুমকি দিতে প্রলুব্ধ করেছে।
আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে বেন-গভিরের বক্তব্য স্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আদালতের কার্যকর পদক্ষেপ থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা কার্যকর হচ্ছে না। ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্র যখন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মিত্র শক্তির আশ্রয়ে থাকে, তখন আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে জাতিসংঘের মতো সংস্থা কার্যকর হুমকি প্রতিরোধ করতে পারছে না। ফিলিস্তিনের জনগণ এই হুমকির প্রভাবে ভয় ও অনিশ্চয়তায় দগ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না, তাতে ইসরায়েল আরও বেপরোয়া হচ্ছে। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, রাষ্ট্রীয় হুমকি এবং নীরব আন্তর্জাতিক সমাজ মিলিত হলে অত্যাচারী নীতি বাস্তবায়িত হয়। রুয়ান্ডা, মিয়ানমার, ইউক্রেন—সবই এই প্যাটার্নের উদাহরণ। তাই ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো সুরক্ষিত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ অপরিহার্য।
ইসরায়েলি রাজনীতির উগ্রতা, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সীমিত প্রতিক্রিয়া মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন এক সংকট তৈরি করেছে, যেখানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা ধ্বংসের মুখে। এই অবস্থা শুধু ফিলিস্তিনের জন্য বিপজ্জনক নয়; এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্য, কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক আইনকে চ্যালেঞ্জ করছে। রাষ্ট্রীয় হত্যার হুমকি, ফিলিস্তিনের জনগণের অস্তিত্ব অস্বীকৃতি এবং জাতিসংঘকে হুমকি—সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পরীক্ষা করছে। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরব থাকে, জাতিসংঘ কার্যকর পদক্ষেপ না নিক, তবে ইসরায়েলের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্ররা জানবে যে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এতে ফিলিস্তিনিরা রাষ্ট্রহীন হবে, তাদের নেতৃত্ব দুর্বল হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের ধারণা অন্ধকারে ঢাকা পড়বে। এই সংকট কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি বৈশ্বিক নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের কাঠামোর জন্য বড় পরীক্ষা।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি কেবল ভূরাজনৈতিক নয়; এটি নৈতিক, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ না করে, পরিস্থিতি আরও সংকীর্ণ ও বিপজ্জনক হবে। রাষ্ট্রীয় হত্যার হুমকি, জাতিসংঘের ওপর চাপ, ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব অস্বীকার—সব মিলিয়ে বিশ্বকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি করছে। এই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নইলে শুধু ফিলিস্তিন নয়, বৈশ্বিক নৈতিকতা, আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবাধিকারের ভিত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সর্বোপরি ইসরায়েলের এই হুমকি শুধু একটি উগ্রমনা নেতার বক্তৃতা নয়; এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তির অমোঘ প্রভাবের উদাহরণ। এটি রাষ্ট্রীয় নীতি, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের কার্যকারিতা পুনর্মূল্যায়নের তাগিদ দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রাধান্য কি তারা নিশ্চিত করবে, নাকি শক্তিশালী রাষ্ট্রের উসকানি ও হত্যার হুমকি নিয়ে নীরব থাকবে?

ব্যাপক গৃহযুদ্ধের শিকার মিয়ানমার। সেখানে দুই ধরনের গৃহযুদ্ধ চলছে। একটা হচ্ছে বিভিন্ন অ-বামার জাতিসত্তার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বামারদের। বামাররা হচ্ছে মিয়ানমারের প্রধান জাতি। এই যুদ্ধের একদিকে আছে কারেন, কাচিন, শান, তাঙ, রাখাইন ইত্যাদি জাতিসত্তার গেরিলা দলগুলো এবং অপরদিকে আছে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয়
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
৬ ঘণ্টা আগে
ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন...
৬ ঘণ্টা আগে
একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির...
৭ ঘণ্টা আগেড. জাহাঙ্গীর আলম সরকার

একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রচলিত নীতিমালার ওপর সরাসরি প্রতিফলিত হচ্ছে। শিল্পায়ন-উত্তর বিশ্বব্যবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন আজ এমন এক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে, যা আধুনিক রাষ্ট্রের অস্তিত্বগত ভিত্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিশেষত, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে সমুদ্রস্তরের ক্রমবর্ধমান উত্থান বিশ্বের বহু নিম্নভূমি ও দ্বীপরাষ্ট্রের জন্য এক গভীর অস্তিত্ববাদী সংকটের জন্ম দিয়েছে। উপকূলীয় ক্ষয়, লবণাক্ততার বিস্তার, পানযোগ্য পানির ঘাটতি এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস—এই সম্মিলিত প্রভাব দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জনবসতি, কৃষি উৎপাদনব্যবস্থা ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করছে। এর ফলে নিরাপত্তা-ধারণা আর শুধু সামরিক সক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা কৌশলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং খাদ্যনিরাপত্তা, মানবনিরাপত্তা এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য উপাদানে পরিণত হচ্ছে।
মালদ্বীপ, কিরিবাতি, টুভালু, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ কিংবা বঙ্গোপসাগরীয় দ্বীপাঞ্চলের মতো অঞ্চলগুলোতে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ভূমি হারানোর আশঙ্কা নিছক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচ্য নয়; বরং এটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমানা, নাগরিকত্বের ধারাবাহিকতা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মতো মৌলিক রাষ্ট্রীয় প্রশ্ন উত্থাপন করছে। কোনো রাষ্ট্রের ভূখণ্ড যদি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়, তবে সেই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, তার সমুদ্রসীমা, এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (ইইজেড) এবং সামুদ্রিক সম্পদের ওপর অধিকার কীভাবে সংরক্ষিত থাকবে—এই প্রশ্নগুলোর সুস্পষ্ট উত্তর আন্তর্জাতিক আইনের বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে এখনো অনুপস্থিত।
পরিবেশগত সংকট থেকে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা
আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেলের বিভিন্ন মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয়েছে যে গত এক শতাব্দীতে বৈশ্বিক সমুদ্রস্তর উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও ত্বরান্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বরফগলন, তাপীয় সম্প্রসারণ এবং চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাবলির ফলে উপকূলীয় ক্ষয় ও লবণাক্ততার বিস্তার দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর কৃষি, পানীয় জল এবং মানববসতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর পরিণতিতে কিছু রাষ্ট্র কার্যত ‘ডুবে যাওয়া রাষ্ট্র’তে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
দ্বীপরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সংকট
রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদান—ভূখণ্ড, জনসংখ্যা, সরকার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি—এর মধ্যে ভূখণ্ড যদি স্থায়ীভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তবে রাষ্ট্রের আইনগত অস্তিত্ব ও মর্যাদা কীভাবে নির্ধারিত হবে—এই প্রশ্ন আন্তর্জাতিক আইনের জন্য এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ। সমুদ্রস্তরের উত্থানের ফলে দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর স্থায়ী ভূখণ্ড সংকুচিত হলে তাদের সামুদ্রিক সীমানা, বিশেষত ইইজেড ও সামুদ্রিক সম্পদের অধিকার নিয়ে নতুন ধরনের আইনি ও ভূরাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সীমান্ত ও সম্পদকেন্দ্রিক বিরোধ এবং শক্তির পুনর্বিন্যাস অনিবার্য হয়ে ওঠে।
জলবায়ু শরণার্থী
সমুদ্রস্তরের উচ্চতার অন্যতম গভীর মানবিক পরিণতি হলো জলবায়ু শরণার্থী সংকটের উদ্ভব। দ্বীপ ও উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠী যখন নিজ ভূমিতে বসবাসের সক্ষমতা হারায়, তখন তারা অভ্যন্তরীণ অথবা আন্তর্জাতিক অভিবাসনে বাধ্য হয়। তবে আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনে ‘জলবায়ু শরণার্থী’ নামে কোনো স্বীকৃত শ্রেণি না থাকায় এসব বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী আইনি সুরক্ষা, নাগরিক অধিকার ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে একধরনের আইনগত শূন্যতার মুখোমুখি হয়।
এই বাস্তুচ্যুতি শুধু মানবিক সংকটেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং এটি গন্তব্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য সামাজিক চাপ, অর্থনৈতিক বোঝা এবং ক্ষেত্রবিশেষে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাঝুঁকিরও সৃষ্টি করে। দক্ষিণ এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকার উপকূলীয় দেশগুলোতে এর ভূরাজনৈতিক অভিঘাত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা
জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় জোট জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নীতিকাঠামো ও অর্থনৈতিক তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও, দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর অস্তিত্ব সংকট মোকাবিলায় এখনো কোনো বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক আইনগত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর ঐতিহাসিক কার্বন নিঃসরণের দায় স্বীকার এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবির মধ্যে দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে প্রায়ই অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে কিছু দ্বীপরাষ্ট্র বিকল্প কূটনৈতিক কৌশল অনুসরণ করছে—যেমন ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের ধারণা, বিদেশে ভূমি ক্রয়, কিংবা ‘রাষ্ট্র নির্বাসনে’ থাকার তাত্ত্বিক প্রস্তাব। এসব উদ্যোগ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাকে নতুনভাবে পুনর্বিবেচনার সুযোগ সৃষ্টি করছে।
ভবিষ্যৎ ভূরাজনৈতিক অভিঘাত
সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি বিশ্বরাজনীতিতে শক্তির ভারসাম্য পুনর্গঠনের সম্ভাবনা বহন করে। সামুদ্রিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ, নৌপথের নিরাপত্তা, সামরিক ঘাঁটির কৌশলগত অবস্থান এবং মানবিক হস্তক্ষেপ—সব ক্ষেত্রেই জলবায়ু পরিবর্তন এক নীরব কিন্তু গভীর ভূরাজনৈতিক চালিকাশক্তিতে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ ও কূটনীতির প্রচলিত ধারণার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ‘জলবায়ু নিরাপত্তা’ নামক নতুন এক কৌশলগত বাস্তবতা।
কাজেই, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য নিছক পরিবেশগত দুর্যোগ নয়; এটি তাদের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব, নিরাপত্তাকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মৌলিক ভিত্তিকে গভীরভাবে চ্যালেঞ্জ করছে। জলবায়ু শরণার্থী সংকট এবং সমুদ্রসীমা ঘিরে উদ্ভূত বিরোধ ভবিষ্যৎ ভূরাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ও অনিবার্য অধ্যায়ে পরিণত হবে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব সহানুভূতিশীল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কার্যকর ও বাধ্যতামূলক আইনগত কাঠামো, ন্যায্য কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং দায়বদ্ধ বৈশ্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দ্বীপরাষ্ট্রগুলো ইতিহাসের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে না গিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের পূর্ণ মর্যাদাসম্পন্ন অংশ হিসেবে টিকে থাকতে পারে।

একবিংশ শতাব্দীর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় জলবায়ু পরিবর্তন আর শুধুই পরিবেশ সংরক্ষণ বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার সীমিত পরিসরে আবদ্ধ কোনো ইস্যু নয়; বরং এটি ক্রমেই একটি কাঠামোগত বৈশ্বিক সংকটে রূপান্তরিত হয়েছে, যার প্রভাব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, সীমান্ত নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রচলিত নীতিমালার ওপর সরাসরি প্রতিফলিত হচ্ছে। শিল্পায়ন-উত্তর বিশ্বব্যবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন আজ এমন এক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে, যা আধুনিক রাষ্ট্রের অস্তিত্বগত ভিত্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিশেষত, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে সমুদ্রস্তরের ক্রমবর্ধমান উত্থান বিশ্বের বহু নিম্নভূমি ও দ্বীপরাষ্ট্রের জন্য এক গভীর অস্তিত্ববাদী সংকটের জন্ম দিয়েছে। উপকূলীয় ক্ষয়, লবণাক্ততার বিস্তার, পানযোগ্য পানির ঘাটতি এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস—এই সম্মিলিত প্রভাব দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জনবসতি, কৃষি উৎপাদনব্যবস্থা ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করছে। এর ফলে নিরাপত্তা-ধারণা আর শুধু সামরিক সক্ষমতা বা প্রতিরক্ষা কৌশলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না; বরং খাদ্যনিরাপত্তা, মানবনিরাপত্তা এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য উপাদানে পরিণত হচ্ছে।
মালদ্বীপ, কিরিবাতি, টুভালু, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ কিংবা বঙ্গোপসাগরীয় দ্বীপাঞ্চলের মতো অঞ্চলগুলোতে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ভূমি হারানোর আশঙ্কা নিছক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচ্য নয়; বরং এটি রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমানা, নাগরিকত্বের ধারাবাহিকতা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মতো মৌলিক রাষ্ট্রীয় প্রশ্ন উত্থাপন করছে। কোনো রাষ্ট্রের ভূখণ্ড যদি ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়, তবে সেই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, তার সমুদ্রসীমা, এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (ইইজেড) এবং সামুদ্রিক সম্পদের ওপর অধিকার কীভাবে সংরক্ষিত থাকবে—এই প্রশ্নগুলোর সুস্পষ্ট উত্তর আন্তর্জাতিক আইনের বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে এখনো অনুপস্থিত।
পরিবেশগত সংকট থেকে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা
আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেলের বিভিন্ন মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হয়েছে যে গত এক শতাব্দীতে বৈশ্বিক সমুদ্রস্তর উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও ত্বরান্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বরফগলন, তাপীয় সম্প্রসারণ এবং চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাবলির ফলে উপকূলীয় ক্ষয় ও লবণাক্ততার বিস্তার দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর কৃষি, পানীয় জল এবং মানববসতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর পরিণতিতে কিছু রাষ্ট্র কার্যত ‘ডুবে যাওয়া রাষ্ট্র’তে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
দ্বীপরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সংকট
রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদান—ভূখণ্ড, জনসংখ্যা, সরকার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি—এর মধ্যে ভূখণ্ড যদি স্থায়ীভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তবে রাষ্ট্রের আইনগত অস্তিত্ব ও মর্যাদা কীভাবে নির্ধারিত হবে—এই প্রশ্ন আন্তর্জাতিক আইনের জন্য এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ। সমুদ্রস্তরের উত্থানের ফলে দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর স্থায়ী ভূখণ্ড সংকুচিত হলে তাদের সামুদ্রিক সীমানা, বিশেষত ইইজেড ও সামুদ্রিক সম্পদের অধিকার নিয়ে নতুন ধরনের আইনি ও ভূরাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সীমান্ত ও সম্পদকেন্দ্রিক বিরোধ এবং শক্তির পুনর্বিন্যাস অনিবার্য হয়ে ওঠে।
জলবায়ু শরণার্থী
সমুদ্রস্তরের উচ্চতার অন্যতম গভীর মানবিক পরিণতি হলো জলবায়ু শরণার্থী সংকটের উদ্ভব। দ্বীপ ও উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠী যখন নিজ ভূমিতে বসবাসের সক্ষমতা হারায়, তখন তারা অভ্যন্তরীণ অথবা আন্তর্জাতিক অভিবাসনে বাধ্য হয়। তবে আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনে ‘জলবায়ু শরণার্থী’ নামে কোনো স্বীকৃত শ্রেণি না থাকায় এসব বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী আইনি সুরক্ষা, নাগরিক অধিকার ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে একধরনের আইনগত শূন্যতার মুখোমুখি হয়।
এই বাস্তুচ্যুতি শুধু মানবিক সংকটেই সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং এটি গন্তব্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য সামাজিক চাপ, অর্থনৈতিক বোঝা এবং ক্ষেত্রবিশেষে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাঝুঁকিরও সৃষ্টি করে। দক্ষিণ এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকার উপকূলীয় দেশগুলোতে এর ভূরাজনৈতিক অভিঘাত ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক সীমাবদ্ধতা
জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় জোট জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নীতিকাঠামো ও অর্থনৈতিক তহবিল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও, দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর অস্তিত্ব সংকট মোকাবিলায় এখনো কোনো বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক আইনগত ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর ঐতিহাসিক কার্বন নিঃসরণের দায় স্বীকার এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবির মধ্যে দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে প্রায়ই অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে কিছু দ্বীপরাষ্ট্র বিকল্প কূটনৈতিক কৌশল অনুসরণ করছে—যেমন ডিজিটাল সার্বভৌমত্বের ধারণা, বিদেশে ভূমি ক্রয়, কিংবা ‘রাষ্ট্র নির্বাসনে’ থাকার তাত্ত্বিক প্রস্তাব। এসব উদ্যোগ আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাকে নতুনভাবে পুনর্বিবেচনার সুযোগ সৃষ্টি করছে।
ভবিষ্যৎ ভূরাজনৈতিক অভিঘাত
সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি বিশ্বরাজনীতিতে শক্তির ভারসাম্য পুনর্গঠনের সম্ভাবনা বহন করে। সামুদ্রিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ, নৌপথের নিরাপত্তা, সামরিক ঘাঁটির কৌশলগত অবস্থান এবং মানবিক হস্তক্ষেপ—সব ক্ষেত্রেই জলবায়ু পরিবর্তন এক নীরব কিন্তু গভীর ভূরাজনৈতিক চালিকাশক্তিতে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ ও কূটনীতির প্রচলিত ধারণার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ‘জলবায়ু নিরাপত্তা’ নামক নতুন এক কৌশলগত বাস্তবতা।
কাজেই, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য নিছক পরিবেশগত দুর্যোগ নয়; এটি তাদের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব, নিরাপত্তাকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মৌলিক ভিত্তিকে গভীরভাবে চ্যালেঞ্জ করছে। জলবায়ু শরণার্থী সংকট এবং সমুদ্রসীমা ঘিরে উদ্ভূত বিরোধ ভবিষ্যৎ ভূরাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ও অনিবার্য অধ্যায়ে পরিণত হবে। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব সহানুভূতিশীল ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কার্যকর ও বাধ্যতামূলক আইনগত কাঠামো, ন্যায্য কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং দায়বদ্ধ বৈশ্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দ্বীপরাষ্ট্রগুলো ইতিহাসের মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে না গিয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের পূর্ণ মর্যাদাসম্পন্ন অংশ হিসেবে টিকে থাকতে পারে।

ব্যাপক গৃহযুদ্ধের শিকার মিয়ানমার। সেখানে দুই ধরনের গৃহযুদ্ধ চলছে। একটা হচ্ছে বিভিন্ন অ-বামার জাতিসত্তার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে বামারদের। বামাররা হচ্ছে মিয়ানমারের প্রধান জাতি। এই যুদ্ধের একদিকে আছে কারেন, কাচিন, শান, তাঙ, রাখাইন ইত্যাদি জাতিসত্তার গেরিলা দলগুলো এবং অপরদিকে আছে মিয়ানমারের কেন্দ্রীয়
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
৬ ঘণ্টা আগে
ভারতের মালয়ালমভাষী উপকূলীয় রাজ্য কেরালা জনসংখ্যার বিচারে দেশটির ১৪তম বৃহৎ রাজ্য। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যের একটি বড় পার্থক্য হলো, এখানে বাম মতাদর্শের প্রভাব বেশি। কংগ্রেসেরও আধিপত্য রয়েছে। সে তুলনায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রভাব কিছুদিন...
৬ ঘণ্টা আগে
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের সাম্প্রতিক মন্তব্য কেবল মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির জন্য নয়, বরং পুরো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকাঠামোর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যদি জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোতে থাকে...
৭ ঘণ্টা আগে