মাসুদ-উর রহমান
দল বা দেশ পরিচালনায়—এক ব্যক্তির, এক পরিবারের আধিপত্যের ঢং দেখানো গণতন্ত্র দেখেই অভ্যস্ত আমরা। সেটি যে শুধু গত ১৫ বছরেই দেখেছি—তা নয়, আগেও তা ছিল। যদি বলি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই, তাহলেও মিথ্যা বলা হবে না। অতি স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এই ঢং দেখানো গণতন্ত্রও ক্ষণে ক্ষণে হোঁচট খেয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দু-একবার আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু পরক্ষণেই ক্ষমতার চাকচিক্যময়তা, একচ্ছত্র আধিপত্য আমাদের তা ভুলিয়ে দিয়েছে, ঠেলে দিয়েছে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায়।
দলের প্রধান এবং সরকারপ্রধান যখন এক ব্যক্তি হয়ে যান, তখন রাজনীতি আর নীতির রাজা হয়ে উঠতে পারে না, হয়ে যায় রাজার নীতি। দলীয় ফোরাম কিংবা সরকারি—সেই একচ্ছত্র অধিপতির সামনে সংগতি-অসংগতি তুলে ধরার মতো সাহস অনেকেরই নেই, আর থাকাটাও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য যে বিপজ্জনক—তার দৃষ্টান্তও কম কিছু ছিল না, এখনো আছে। আর আছে বলেই বিভিন্ন সময়ে অসংগতি তুলে ধরার দুঃসাহস যাঁরা দেখিয়েছেন, তাঁরাই গর্তে পড়েছেন, ক্ষমতার বলয় থেকে ছিটকে পড়েছেন। ক্ষমতার দম্ভ, দলীয়করণ, বিরুদ্ধমতকে কোণঠাসা করাসহ হয়রানিমূলক রাজনীতির এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে একেবারে তৃণমূলে। ফলে নির্দিষ্ট কোনো ক্ষমতাধরকে কেন্দ্র করে সারা দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শাসন নামের এই দুঃশাসন অপরাধী তৈরিতে যেমন সহায়তা করেছে, তেমনি ধাবিত করেছে অনিয়মের দিকে নানান ভাবে, নানান ঢঙে।
একেবারে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পরিষদ, মাঠ প্রশাসন থেকে সচিবালয় তথা শাসনকাঠামোর প্রতিটি অংশে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়েছে অনিয়ম। আর সেই অনিয়ম থেকে বিস্তার লাভ করেছে দুর্নীতি। এই দুর্নীতি ক্যানসারের মতো সমগ্র দেহে ছড়িয়ে পড়াকে জনগণের চোখ থেকে আড়াল করতে বেপরোয়া হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মাঠ প্রশাসন। যে যার মতো করে আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পুরো শাসনব্যবস্থাকে দুঃশাসনে পরিণত করেছে।
বিরোধী দলগুলো গত ১৫ বছরের সাধনাতেও যে কঠিন কাজটি করতে পারেনি, সেটি করে দেখিয়েছে জুলাই-আগস্টে একদল ছাত্র। যাদের আমরা বলছি তারুণ্যের শক্তি! একের পর এক অভাবনীয় কর্মসূচি নিয়ে তারা এগিয়েছে, আর শাসক দল ক্ষমতার মোহে অন্ধ থেকে কিংবা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার ধনুর্ভঙ্গ পণ ছিল বলেই একের পর এক সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করায় কোটা সংস্কারের মতো একটি নিরীহ আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপলাভ করেছে। কেন করেছে? কারণ, তাতে আপামর জনসাধারণের সায় ছিল। কেন ছিল? কারণ, মানুষ বেশি বিরক্ত ছিল গত তিন-তিনটি অতিচালাকির নির্বাচন দেখে।
২০১৪-এর নির্বাচনের পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন এটি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন, শিগগিরই আরেকটি নির্বাচন দেওয়া হবে, কিন্তু শিগগির তো হয়ইনি উল্টো পাঁচ বছর পর আরও চালাকি করে সবাইকে নির্বাচনে যুক্ত করে, সবার চোখে ধুলো দিয়ে মধ্যরাতে নির্বাচনের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছে। বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অধিকার হরণসহ দমন-পীড়নের পাশাপাশি দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের কটূক্তিপূর্ণ, তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্যও সমানতালে চলেছে। ‘খেলা হবে খেলা হবে’র মতো কুৎসিত স্লোগান স্বয়ং দলের মধ্যেই সমালোচিত হয়েছে। এরপরও গণতন্ত্র টিকে যেত যদি ২০২৪-এর আমি-ডামি নির্বাচন না হতো।
২০২৪-এর নির্বাচনের পরের কথাগুলো আরও নিদারুণ! এ বছর না সেই বছর—মানুষ বাঁচে কয় বছর? ১৫ বছর তো গেল, সামনে আরও পাঁচ বছর, কবে হবে আন্দোলন? তাতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা যতটা অপমানিত হলো, দ্বিগুণ উৎসাহিত হলো সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা—মনে করল তাঁরা দুর্দমনীয়! ২০৪১ সাল তো বটেই, ক্ষমতার স্নিগ্ধ ছায়া যে হতে চলেছে আরও দীর্ঘায়িত। কথায় আছে না—সূর্যের চেয়ে বালুর উত্তাপ বেশি! সেই উত্তাপে তৃণমূলের নেতাদের ক্ষমতার দম্ভ, ক্ষমতার অপব্যবহার আরও দ্বিগুণ উদ্যমে চলতে থাকল।
ইতিহাসের সত্য হচ্ছে, যত দুঃশাসনই হোক, তা ১০ বছরের বেশি এই ভূখণ্ডে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। লৌহমানব খ্যাত আইয়ুব খানেরও পতন হয়েছে ১০ বছরের মাথায়। ৯ বছরের মাথায় পতন হয়েছে আরেক স্বৈরশাসক এরশাদের। ইতিহাসের সত্য মেনে ২০১৪ সালের বাজে নির্বাচনের ১০ বছর পর ২০২৪ সালেই পড়ে গেল আমি-ডামির সরকার। শুধু যে পড়ে গেল তা-ই না, সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রী-নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জাতীয় মসজিদের ইমাম সাহেবকেও পালাতে হলো। একে আপনি কী বলবেন, ইতিহাসের শিক্ষা নাকি প্রকৃতির প্রতিশোধ!
শাসক দল প্রতি পদে পদে ভুল করেছে, আর সেই ভুলের ফাঁক গলে ঢুকে পড়েছে পরম প্রতিক্রিয়াশীলেরা। তারা আড়ালে থেকে মাস্টারমাইন্ডের ভূমিকা পালন করে বোকা বানিয়েছে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে। রাতারাতি বোল পাল্টানো ছদ্মবেশী আন্দোলনকারীদের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই হোক কিংবা দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনার কারণে হোক—হতাশ জনগোষ্ঠী রাস্তায় নেমে এসেছে। পতন নিশ্চিত করেছে তাদের ভাষায় ‘ফ্যাসিবাদের’।
যে আওয়ামী লীগকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে দেশ চালানোর অপবাদ দিই, এবারের আন্দোলনকারীদের একাংশও ঠিক তা-ই করল। তারাও ’৭১-কে পুঁজি করে একাত্তরের স্লোগান ধারণ করে জাতীয় সংগীতসহ একাত্তরের জাগরণী গান গেয়ে, জাতীয় পতাকা মাথায় বেঁধে, হাতে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আবহ সৃষ্টি করে অনেকটা ধোঁকাবাজি করে পুরো বাংলাদেশকে এক করে সরকারের পতন নিশ্চিত করল। ‘ধোঁকাবাজি’ শব্দটি লিখতে আসলে বাধ্য হলাম—এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তা না হলে ৫ আগস্টের পর কেন একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত ভাস্কর্যগুলোও আক্রমণের শিকার হলো? কেন ৫ আগস্টের পরপরই জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত আমাদের সংবিধান বদলে ফেলার সুর উঠল? কেন কোনো এক পার্টির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার কণ্ঠে শুনতে হলো, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস আমরা মানি না, আমরা নতুন বিজয় দিবসের অনুসন্ধান করছি!
আওয়ামী লীগ একাত্তরের চেতনা বিক্রি করে রাজনীতি করেছে বলে সে দোষ একাত্তরের না, দোষ আওয়ামী লীগের। তেমনি ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করা হলে দোষ ধর্মের হয় না। দোষ হয় ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিকদের। একাত্তরের পরাজিত শক্তি শুরু থেকেই ছাত্রদের ওপর ভর করে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে একের পর এক বিতর্কিত বিষয় জাতির সামনে নিয়ে আসছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এখন পুরোপুরি তাদের আয়ত্তে সেই তারুণ্যের শক্তির একাংশ।
একাংশ বলছি এই কারণে, ৫ আগস্ট পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ছিল পুরো বাংলাদেশ, আর এখন সরকারে এবং সরকারের বাইরে বিভিন্ন পদধারী হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের জনাকয়েক। এমনকি যে মেয়েরা বিক্ষোভের দিনগুলোতে প্রতিদিন ছিল সম্মুখ সারিতে, তাদেরও দু-একজন ছাড়া বাকি সবাই অন্তরালে। কেন?
এ ‘কেন’র উত্তর খুঁজতে ব্যর্থ হলে ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের সব অর্জন ব্যর্থ হবে। কেননা, অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সাময়িকভাবে সফল হওয়া যায়, কিন্তু সে সফলতা টেকসই হয় না।
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
দল বা দেশ পরিচালনায়—এক ব্যক্তির, এক পরিবারের আধিপত্যের ঢং দেখানো গণতন্ত্র দেখেই অভ্যস্ত আমরা। সেটি যে শুধু গত ১৫ বছরেই দেখেছি—তা নয়, আগেও তা ছিল। যদি বলি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই, তাহলেও মিথ্যা বলা হবে না। অতি স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এই ঢং দেখানো গণতন্ত্রও ক্ষণে ক্ষণে হোঁচট খেয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দু-একবার আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি, কিন্তু পরক্ষণেই ক্ষমতার চাকচিক্যময়তা, একচ্ছত্র আধিপত্য আমাদের তা ভুলিয়ে দিয়েছে, ঠেলে দিয়েছে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায়।
দলের প্রধান এবং সরকারপ্রধান যখন এক ব্যক্তি হয়ে যান, তখন রাজনীতি আর নীতির রাজা হয়ে উঠতে পারে না, হয়ে যায় রাজার নীতি। দলীয় ফোরাম কিংবা সরকারি—সেই একচ্ছত্র অধিপতির সামনে সংগতি-অসংগতি তুলে ধরার মতো সাহস অনেকেরই নেই, আর থাকাটাও রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য যে বিপজ্জনক—তার দৃষ্টান্তও কম কিছু ছিল না, এখনো আছে। আর আছে বলেই বিভিন্ন সময়ে অসংগতি তুলে ধরার দুঃসাহস যাঁরা দেখিয়েছেন, তাঁরাই গর্তে পড়েছেন, ক্ষমতার বলয় থেকে ছিটকে পড়েছেন। ক্ষমতার দম্ভ, দলীয়করণ, বিরুদ্ধমতকে কোণঠাসা করাসহ হয়রানিমূলক রাজনীতির এই সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছে একেবারে তৃণমূলে। ফলে নির্দিষ্ট কোনো ক্ষমতাধরকে কেন্দ্র করে সারা দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শাসন নামের এই দুঃশাসন অপরাধী তৈরিতে যেমন সহায়তা করেছে, তেমনি ধাবিত করেছে অনিয়মের দিকে নানান ভাবে, নানান ঢঙে।
একেবারে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পরিষদ, মাঠ প্রশাসন থেকে সচিবালয় তথা শাসনকাঠামোর প্রতিটি অংশে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়েছে অনিয়ম। আর সেই অনিয়ম থেকে বিস্তার লাভ করেছে দুর্নীতি। এই দুর্নীতি ক্যানসারের মতো সমগ্র দেহে ছড়িয়ে পড়াকে জনগণের চোখ থেকে আড়াল করতে বেপরোয়া হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মাঠ প্রশাসন। যে যার মতো করে আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পুরো শাসনব্যবস্থাকে দুঃশাসনে পরিণত করেছে।
বিরোধী দলগুলো গত ১৫ বছরের সাধনাতেও যে কঠিন কাজটি করতে পারেনি, সেটি করে দেখিয়েছে জুলাই-আগস্টে একদল ছাত্র। যাদের আমরা বলছি তারুণ্যের শক্তি! একের পর এক অভাবনীয় কর্মসূচি নিয়ে তারা এগিয়েছে, আর শাসক দল ক্ষমতার মোহে অন্ধ থেকে কিংবা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার ধনুর্ভঙ্গ পণ ছিল বলেই একের পর এক সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করায় কোটা সংস্কারের মতো একটি নিরীহ আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপলাভ করেছে। কেন করেছে? কারণ, তাতে আপামর জনসাধারণের সায় ছিল। কেন ছিল? কারণ, মানুষ বেশি বিরক্ত ছিল গত তিন-তিনটি অতিচালাকির নির্বাচন দেখে।
২০১৪-এর নির্বাচনের পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন এটি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন, শিগগিরই আরেকটি নির্বাচন দেওয়া হবে, কিন্তু শিগগির তো হয়ইনি উল্টো পাঁচ বছর পর আরও চালাকি করে সবাইকে নির্বাচনে যুক্ত করে, সবার চোখে ধুলো দিয়ে মধ্যরাতে নির্বাচনের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছে। বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অধিকার হরণসহ দমন-পীড়নের পাশাপাশি দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের কটূক্তিপূর্ণ, তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্যও সমানতালে চলেছে। ‘খেলা হবে খেলা হবে’র মতো কুৎসিত স্লোগান স্বয়ং দলের মধ্যেই সমালোচিত হয়েছে। এরপরও গণতন্ত্র টিকে যেত যদি ২০২৪-এর আমি-ডামি নির্বাচন না হতো।
২০২৪-এর নির্বাচনের পরের কথাগুলো আরও নিদারুণ! এ বছর না সেই বছর—মানুষ বাঁচে কয় বছর? ১৫ বছর তো গেল, সামনে আরও পাঁচ বছর, কবে হবে আন্দোলন? তাতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা যতটা অপমানিত হলো, দ্বিগুণ উৎসাহিত হলো সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা—মনে করল তাঁরা দুর্দমনীয়! ২০৪১ সাল তো বটেই, ক্ষমতার স্নিগ্ধ ছায়া যে হতে চলেছে আরও দীর্ঘায়িত। কথায় আছে না—সূর্যের চেয়ে বালুর উত্তাপ বেশি! সেই উত্তাপে তৃণমূলের নেতাদের ক্ষমতার দম্ভ, ক্ষমতার অপব্যবহার আরও দ্বিগুণ উদ্যমে চলতে থাকল।
ইতিহাসের সত্য হচ্ছে, যত দুঃশাসনই হোক, তা ১০ বছরের বেশি এই ভূখণ্ডে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। লৌহমানব খ্যাত আইয়ুব খানেরও পতন হয়েছে ১০ বছরের মাথায়। ৯ বছরের মাথায় পতন হয়েছে আরেক স্বৈরশাসক এরশাদের। ইতিহাসের সত্য মেনে ২০১৪ সালের বাজে নির্বাচনের ১০ বছর পর ২০২৪ সালেই পড়ে গেল আমি-ডামির সরকার। শুধু যে পড়ে গেল তা-ই না, সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রী-নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জাতীয় মসজিদের ইমাম সাহেবকেও পালাতে হলো। একে আপনি কী বলবেন, ইতিহাসের শিক্ষা নাকি প্রকৃতির প্রতিশোধ!
শাসক দল প্রতি পদে পদে ভুল করেছে, আর সেই ভুলের ফাঁক গলে ঢুকে পড়েছে পরম প্রতিক্রিয়াশীলেরা। তারা আড়ালে থেকে মাস্টারমাইন্ডের ভূমিকা পালন করে বোকা বানিয়েছে সাধারণ ছাত্র-জনতাকে। রাতারাতি বোল পাল্টানো ছদ্মবেশী আন্দোলনকারীদের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই হোক কিংবা দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনার কারণে হোক—হতাশ জনগোষ্ঠী রাস্তায় নেমে এসেছে। পতন নিশ্চিত করেছে তাদের ভাষায় ‘ফ্যাসিবাদের’।
যে আওয়ামী লীগকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করে দেশ চালানোর অপবাদ দিই, এবারের আন্দোলনকারীদের একাংশও ঠিক তা-ই করল। তারাও ’৭১-কে পুঁজি করে একাত্তরের স্লোগান ধারণ করে জাতীয় সংগীতসহ একাত্তরের জাগরণী গান গেয়ে, জাতীয় পতাকা মাথায় বেঁধে, হাতে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আবহ সৃষ্টি করে অনেকটা ধোঁকাবাজি করে পুরো বাংলাদেশকে এক করে সরকারের পতন নিশ্চিত করল। ‘ধোঁকাবাজি’ শব্দটি লিখতে আসলে বাধ্য হলাম—এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তা না হলে ৫ আগস্টের পর কেন একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত ভাস্কর্যগুলোও আক্রমণের শিকার হলো? কেন ৫ আগস্টের পরপরই জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত আমাদের সংবিধান বদলে ফেলার সুর উঠল? কেন কোনো এক পার্টির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার কণ্ঠে শুনতে হলো, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস আমরা মানি না, আমরা নতুন বিজয় দিবসের অনুসন্ধান করছি!
আওয়ামী লীগ একাত্তরের চেতনা বিক্রি করে রাজনীতি করেছে বলে সে দোষ একাত্তরের না, দোষ আওয়ামী লীগের। তেমনি ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করা হলে দোষ ধর্মের হয় না। দোষ হয় ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিকদের। একাত্তরের পরাজিত শক্তি শুরু থেকেই ছাত্রদের ওপর ভর করে নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে একের পর এক বিতর্কিত বিষয় জাতির সামনে নিয়ে আসছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এখন পুরোপুরি তাদের আয়ত্তে সেই তারুণ্যের শক্তির একাংশ।
একাংশ বলছি এই কারণে, ৫ আগস্ট পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ছিল পুরো বাংলাদেশ, আর এখন সরকারে এবং সরকারের বাইরে বিভিন্ন পদধারী হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের জনাকয়েক। এমনকি যে মেয়েরা বিক্ষোভের দিনগুলোতে প্রতিদিন ছিল সম্মুখ সারিতে, তাদেরও দু-একজন ছাড়া বাকি সবাই অন্তরালে। কেন?
এ ‘কেন’র উত্তর খুঁজতে ব্যর্থ হলে ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের সব অর্জন ব্যর্থ হবে। কেননা, অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সাময়িকভাবে সফল হওয়া যায়, কিন্তু সে সফলতা টেকসই হয় না।
লেখক: কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মী
গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দুই দিনের ব্যবধানে দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। গত ২২ ডিসেম্বর প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ঢাকায় একের পর এক ছিনতাই, চলাচলে ভয়’। এর আগে ২০ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল ‘স্বস্তি ফিরছে না জনমনে
১৮ ঘণ্টা আগেমানুষ পুরোনোকে বিদায় দেয় আর নতুনকে বরণ করে নেয়। এটি একটি চিরাচরিত প্রথা। সময়কে সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, সপ্তাহ, মাস ও বছর ধরেই পৃথিবীতে একটি সিস্টেমে চলমান আছে। বলা হয় সময়ের গাছপাথর নেই। খ্রিষ্টীয় বছর বৈশ্বিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটাকে ধরেই চলছে সারা বিশ্ব। বাংলা বর্ষের পরিবর্তিত সময়গুলো নিয়ে
১৮ ঘণ্টা আগেরোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো রিওভাইরাস শনাক্ত করেছে। শনিবার আজকের পত্রিকায় ‘দেশে প্রথমবারের মতো রিওভাইরাস শনাক্ত’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। পাঁচ রোগীর শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে, যদিও তাঁদের বড় কোনো জটিলতা দেখা যায়নি।
১৮ ঘণ্টা আগেড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান ২৫ ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’-এর সমন্বয়ক। জনপ্রশাসনে আন্তক্যাডার বৈষম্য ও বিরোধ, প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি বাকি ক্যাডারদের ক্ষোভ এবং তাঁদের অন্যান্য দাবি-দাওয়ার বিষয় নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলেছেন।
২ দিন আগে