তাপস বড়ুয়া

মহসিন সাহেব আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ফেসবুক লাইভে এসে নিজের দুঃখের কথা সকলকে জানিয়ে নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেছেন। মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে তোলপাড় চলছে। শেষমেশ বিটিআরসি কোর্টে গেছে এই ঘটনার যে ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, তার বিস্তার ঠেকাতে।
এই খবরগুলোর অনেকগুলোরই হেডলাইন ছিল—একজন চিত্রনায়কের শ্বশুর আত্মহত্যা করেছেন। যে মানুষটি মারা গেলেন নিজের হাতে, তিনি নিজেও তো একজন ব্যক্তি, আলাদা সত্তা। কার শ্বশুর, সেটা তো পরের কথা। দু-একটি পত্রিকা ছাড়া কেউই এই মানুষটিকে, যিনি একই সঙ্গে হত্যাকারী ও হত্যার শিকার, হেডলাইনে আনল না। অন্যের পরিচয়ে তাঁকে পরিচিত করানো হলো চিত্রনায়কের শ্বশুর হিসেবে।
অমনি ‘ঢি ঢি’ পড়ে গেল। চিত্রনায়ক বা তাঁর স্ত্রী এই মানুষটির নিঃসঙ্গতা কাটাতে কিছু করেননি, ইত্যাদি ইত্যাদি। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এসব সমালোচনাকারীর অনেকেই তাঁদের বৃদ্ধ মা-বাবাকে, অথবা একাকী মাকে বা একাকী বাবাকে শহরে নিজের কাছে না রেখে গ্রামে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনে বাধ্য করছেন। ব্যতিক্রম বাদে, কারও বাবা বা মা তো কারও শ্বশুর বা শাশুড়িও। নিজের বা নিজেদের মা-বাবা শ্বশুর-শাশুড়ির একাকিত্বের সময় কাছে টেনে না নিয়ে ‘গ্রামেই ওনারা ভালো থাকেন; ঢাকায় হাঁপিয়ে ওঠেন’ ইত্যাদি বলে দায় এড়ানো লোকেরাই সমস্বরে বলতে লাগলেন—এই মৃত্যুর পেছনে চিত্রনায়ক ও তাঁর স্ত্রীর পরোক্ষ দায় আছে বুঝিবা। এটাই সমাজমানস আজকাল।
মহসিন সাহেবের ক্ষেত্রে ব্যবসার খারাপ অবস্থা, শরীরের ক্যানসার, আর দীর্ঘদিন একা থাকা—সব মিলে তিনি হয়তো প্রচণ্ডভাবে ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। এই তিনটির যেকোনো একটিই মানুষের বিষণ্নতাকে উসকে দিতে যথেষ্ট। সেটা বেশি মাত্রায় গেলে এবং তিনি একবারে নিরাশ হয়ে গেলে আত্মহত্যার মতো মারাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—এমন উদাহরণ যথেষ্ট। বেশ কয়েক বছর আগে ব্যবসার ক্ষতি ও ঋণের ধাক্কা সামলাতে না পেরে কালান্দর কবীরের আত্মহত্যার খবর পত্রিকায় এসেছিল। আর্থিক ক্ষতি মাথায় নিয়ে রেললাইনের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়েছিলেন সুমন জাহিদ। পত্রিকায় খবর হয়েছিল। তিনি কিন্তু একা ছিলেন না। পত্রিকায় খবর হয় না, কিন্তু অর্থকষ্ট বা দুরারোগ্য ব্যাধির যন্ত্রণা নিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা সারা দেশে প্রচুর ঘটে।
মহসিন সাহেবও ভেবেছেন, এই জীবন যাপন করা, আর না করা একই কথা। তিনি নিজেকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের মধ্যে আলোচনায় বেশি আসছে তাঁর একাকিত্বের প্রসঙ্গটি।
শুধু কি পাশে মানুষ না থাকলে মানুষ একা হয়। এই শহরে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার দুই বোনের বছরের পর বছর স্বেচ্ছা-গৃহবন্দীত্ব এবং মৃতপ্রায় অবস্থায় একটি মানবাধিকার সংস্থার তাঁদেরকে বের করে নিয়ে আসার খবর আমরা জানি। আমাদের স্মৃতিসৌধের বরেণ্য স্থপতি মঈনুল ইসলাম জীবনের শেষ পর্যায়ে একটা ঘরেই থাকতেন। বেরোতেন না। সুতরাং, জীবনানন্দের কথায়, ‘সকল লোকের মাঝে থেকেও’ মানুষ একা হতে পারে। ‘বধূ শুয়েছিলো পাশে—শিশুটিও ছিলো;/প্রেম ছিলো, আশা ছিলো–জ্যোৎস্নায়’; তবু ভূত দেখতে পারে একজন মানুষ; একগোছা দড়ি হাতে যেতে পারে গাছতলায়। মানুষের মনের মধ্যে এক ‘বিপন্ন বিস্ময়’ খেলা করতেই পারে। সেটার কতটা সাইকোলজি, কতটা বায়োলজি, আর কতটা এই দুয়ের মিশ্রণে সাইকিয়াট্রি এই প্রশ্নের হয়তো কোনো সঠিক জবাব নেই। এর কতটা জেনেটিক, আর কতটা পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে জেনেটিক ব্যাপারটার সাথে পারিপার্শ্বিক অবস্থা যোগ হলে ব্যাপারটা প্রবল হয়ে ওঠে।
জীবনানন্দ লিখেছেন, ‘গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে/আরেকটি প্রভাতের ইশারায়/—অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে’। তবু কোনো কোনো মানুষ বেছে নেয় প্রস্থানের পথ। মানুষ একা হয়, সবার মধ্যে থেকেও হয়; কাছের লোকেরা কাছে না থাকলেও হয়। সকল লোকের মধ্যে থেকে যে আস্তে আস্তে গুটিয়ে যায়, তার একাকিত্বই সবচেয়ে দুর্বিষহ। কারণ, তার একাকিত্ব নিজের একান্ত গভীরে। চারপাশ বলে কিছু নেই সেই গহিনে। গভীর ডিপ্রেশনে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তার খুব বেশি। এসব মানুষেরা সব খারাপে নিজের দোষ খুঁজে পান। নিজেকে সবকিছুর জন্য দায়ী মনে করে শাস্তি দিতে চান। যদিও গভীর ডিপ্রেশনে থাকা, একেবারে ভেঙে পড়া মানুষদের আত্মহত্যা করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতাও অবশিষ্ট থাকে না। ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠার পথে সে কিছুটা ডিপ্রেশনে থাকা অবস্থায়ই যখন কিছুটা মনের জোর আস্তে আস্তে অর্জন করে, আত্মহত্যার ঝুঁকি তখন বেশি বলে মনে করেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট সাপোলস্কি, জীববিজ্ঞান ও মানুষের আচরণ নিয়ে যাঁর গভীর কাজ রয়েছে।
বিষণ্নতায় ভোগা মানুষ তার চারপাশের মানুষকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। তাদের জীবনকেও নিজের অজান্তে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দিতে পারে, বিষিয়ে তুলতে পারে। আবার এই কাছের মানুষদেরই তার দরকার হয় ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসার সময় আঁকড়ে ধরার জন্য। হাত বাড়ালে যদি সে আঁকড়ে ধরার মতো কিছু না পায়, সে সরে যেতে পারে দূর থেকে আরও দূরে।
আলবেয়ার কাম্যু বলেছেন, মানুষ প্রতি মুহূর্তে এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নেয়, সে আত্মহত্যা করবে কি-না। অন্য কথায়, সে বিবেচনা করে দেখে, এই যে জীবন তার, সেটা যাপন করার কোনো মানে আছে কি-না। যদি দেখে এই জীবন যাপনের কোনো মানে আর নেই। সে আত্মহত্যা করে। না হলে সে বেঁচে থাকে। অবচেতনে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।
এ তো গেল শারীরিকভাবে আত্মহত্যার কথা। কাম্যু আরেক ধরনের আত্মহত্যার কথা বলেছেন—বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মহত্যা। যা তার মন সায় দেয় না, সেটাও মেনে নেওয়া। সে জানে কাজটি ঠিক নয়; তবু সে মানিয়ে নেয়; কাজটি করা চালিয়ে যায়। এমন তো সব মানুষই করে, করতে হয়। কাম্যুর মতে বুদ্ধিজীবীরা বেশি করে।
নচিকেতা গেয়েছেন, ‘প্রতিদিন চুরি যায় মূল্যবোধের সোনা/আমাদের স্বপ্ন; আমাদের চেতনা/...এরপর কোনো রাতে চাকরটা অজ্ঞাতে/সামান্য টাকা নিয়ে ধরা পড়ে হাতেনাতে/সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে/চিৎকার করে বলে, “চোর, চোর, চোর…”।’ কোন চুরিটা বড় চুরি এটা নিয়ে ভাসা-ভাসা চিন্তা; অথবা চিন্তার প্রক্রিয়াকেই এড়িয়ে যাওয়া এবং স্রোতে গা-ভাসানো বোধ হয় কাম্যুর বলা বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মহত্যাই, যা আমরা প্রতিনিয়ত করে চলেছি।
ধরুন, আমেরিকায় একটি সামরিক ঘাঁটিতে কাজ করেন একজন মানুষ। তিনি সকালে স্যুট-টাই পরে অফিসে যান, পথে সন্তানকে স্কুলে নামিয়ে দেন। স্কুল গেটে সন্তানের কপালে চুমু খান। তার পর অফিসে গিয়ে স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে দেখে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকারী বোমারু বিমানের পাইলটদের পরামর্শ দেন, ঠিক কোন পয়েন্টে বোমা ফেলতে হবে। তারপর বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় স্ত্রীকে নিয়ে রোমান্টিক ডিনারে যান। রাতে দিব্যি ঘুমান। সকালে আবার একইরকম একটা দিন শুরু করেন। আমাদের শেখানো হয়েছে, এই মানুষটি স্বাভাবিক, ব্যালান্সড পার্সোনালিটির মানুষ। আর রাস্তায় যে মানুষটি অসংলগ্ন আচরণ করেন, অগোছালো কথা বলেন, কিন্তু অন্যের কোনো ক্ষতি করেন না, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ, মানসিক রোগী। এই ধারণা যে বিশ্বে প্রচলিত, সেখানে যে মারাত্মক কোনো একটা সমস্যা আছে—এটা বুঝতে ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘হিস্ট্রি অব ম্যাডনেস’ পড়া লাগে না।
আমরা সেই বিশ্বের, সেই সমাজের মানুষ। ভালো, আর মন্দের বিচারে আমরা খুব ওস্তাদ। ত্বরিত বিচার করে একজন কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারলেই আমরা সমস্বরে বলি, চেঁচিয়ে বলি—ওই যে, ও দোষী। এবং নিশ্চিত হই যে, দোষী লোকটা আমি নই; এটা প্রমাণ করতে পেরেছি।
আসুন তো, গত দু-তিন বছরের মধ্যে এই শহরে ঘটে যাওয়া আর অন্তত দুটো ঘটনা মনে করে নিই।
মগবাজারের খাইরুল ইসলাম আত্মহত্যা করেছিলেন। আর্থিক সংকট ছিল। মানসিক অসুস্থতা ছিল। সেগুলো তাঁকে আত্মহত্যাপ্রবণ হতে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু আত্মহত্যার আগে তিনি একটি খুন করেছেন। তিনি খুন করেছেন নিজের সন্তানকে। একজন বাবা তাঁর নিজের সন্তানকে খুন করেছেন নিজেকে খুন করার আগে। যে মানুষটার ওপরে তাঁর কোনো ক্ষোভ, কোনো রাগ, কোনো অপছন্দ ছিল না; উল্টো ছিল অকৃত্রিম ভালোবাসা। ভালোবাসা থেকেই তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ছিল। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর সেই অতি আদরের ধন মানুষের অনাদর, অবহেলা, এমনকি নির্যাতনের শিকার হবে—এই অনিশ্চয়তা তাঁর মনে গভীরভাবে বাসা বেঁধেছিল।
বিষয়টি নিছক একটি হত্যা এবং তার পরে হত্যাকারীর আত্মহত্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, এখানে হত্যার কারণ বিরাগ নয়; বরং অনুরাগ। ছেলেটি অটিস্টিক ছিল। এ রকম একজন সন্তানের বাবা-মায়ের সব সময়ের দুশ্চিন্তা হচ্ছে, আমাদের মৃত্যুর পর আমার এই সন্তানের কী হবে, সে কোথায় যাবে, কে তাকে দেখে রাখবে। এমন একটি সন্তানের প্রতি মা-বাবার আবেগ, ভালো লাগা স্বাভাবিক একজন সন্তানের চেয়ে বেশি থাকে বলে ধারণা করা যায়। কারণ, মা-বাবা জানেন, এই সন্তানের সারা জীবন তাঁকে দরকার হবে গায়ে গা ঘেঁষে থাকার। এই বোধ থেকেই মা-বাবার সার্বক্ষণিক চিন্তাই থাকে, আমি যখন থাকব না, তখন আমার সন্তানটি কোথায় যাবে? সে কি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবে? সে রকম ছবি কল্পনা করে নির্ঘুম রাত কাটানো বা আঁতকে ওঠা প্রতি মুহূর্তের ব্যাপার।
নিজে তিনি এমনিতেও মারা যেতে পারতেন, আর্থিক দুরবস্থাই হোক, আর মানসিক অসুস্থতাই হোক আত্মহত্যা তিনি করতে পারতেন। আত্মহত্যা কোনো গ্রহণযোগ্য বিষয় না হলেও আত্মহত্যা অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যু প্রিয়তম সন্তানের জীবনে যে দুঃখের অধ্যায় সৃষ্টি করবে, সেটা থেকে তাকে ‘মুক্তি’ দিয়ে নির্ভার হয়ে নিজেকে হত্যা করা বা আত্মহত্যা করার বিষয়টি আমাদের এই রাষ্ট্রকে, সমাজকে, আমাদের সবাইকে অপরাধী করে দেয়।
আমরা এমন একটি সমাজ বা রাষ্ট্র তৈরি করতে পারিনি, যেখানে একজন বাবা বা মা তাঁর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, যে অন্যদের সাথে কাড়াকাড়ি করে খেতে পারবে না, তাকে রেখে নিশ্চিন্তে চোখ বুঁজতে পারেন।
তার এক বছর আগে টিকাটুলিতে এক বৃদ্ধ তাঁর পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ত্রীকে খুন করেন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। পত্রপত্রিকায় খবর এসেছিল সত্তরোর্ধ্ব ওই মানুষটি স্ত্রীকে খুন করেছিলেন এমন একটি অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ থেকে যে, তিনি মারা গেলে স্ত্রীকে কে দেখে রাখবে!
এতে মনে করার সুযোগ রয়েছে, রাষ্ট্র বা সমাজ তাঁর অবর্তমানে তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে রাখবে এই আস্থা এই মানুষগুলোর ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীনতা থেকে তাঁরা হত্যা এবং আত্মহত্যার মতো গুরুতর বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়লেও এ রকম মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, তাঁদের মানসিক ভারসাম্যহীনতার সাথে এই অনিশ্চয়তার চাপের গুরুতর সংযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত অনিশ্চয়তা থেকে অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং সময়ের সাথে সাথে জীবনের অন্যান্য চাপে সেটা বাড়তে বাড়তে একসময় চূড়ান্ত ঘটনাগুলো তাঁরা ঘটিয়েছেন।
অবশ্য এই প্রশ্ন করাই যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন স্বজনদের জন্য রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের সাপোর্ট পাওয়ার আশা আদৌ কি এ দেশের মানুষ কখনো করেছে? রাষ্ট্রের কাছ থেকে এ ধরনের সাপোর্ট পাওয়া যাবে এই বিশ্বাস, এই আস্থা কি কখনো এ দেশের মানুষের ছিল? স্বপ্ন থাকতে পারে, প্রত্যাশা থাকতে পারে; আস্থা গড়ে ওঠার মতো কোনো পরিবেশ কখনোই হয়তো ছিল না।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী পাবনার হাসপাতালটি পরিচিতি পেয়েছে ‘পাগলা গারদ’ হিসেবে; চিকিৎসা কেন্দ্র নয়। এতেই মানসিক রোগ ও রোগীদের প্রতি আমাদের মনোভাব বোঝা যায়।
কিন্তু সমাজের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ছিল। সেটা আমরা কয়েক দশক আগেও তো দেখেছি। সেই বিশ্বাসের ভিত্তি ছিল এ ধরনের মানুষের প্রতি সমাজের মানুষের সদয় আচরণ। অবজ্ঞা ছিল অনেকের মধ্যেই; কিন্তু হিংস্রতা ছিল না। এদের নির্যাতন করে বিকৃত আনন্দ পাওয়ার ব্যাপারটিকে সমাজ খারাপ চোখে দেখত। শুধু গ্রামে কেন, শহরেও এ ধরনের কোনো মানুষ থাকলে তাঁকে মহল্লার সবাই চিনতেন, তাঁর প্রতি সদয় আচরণ করতেন। এ কারণে একজন এ রকম শিশুর মা বা বাবা অন্তত ভাবতে পারতেন, চারপাশের পরিচিত মানুষদের মধ্যে সে থাকবে। সম্মান না পেলেও সুরক্ষা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে। সেই পরিস্থিতি দিন দিন বদলে যাচ্ছে। খারাপের দিকে যাচ্ছে।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী পাবনার হাসপাতালটি পরিচিতি পেয়েছে ‘পাগলা গারদ’ হিসেবে; চিকিৎসা কেন্দ্র নয়। এতেই মানসিক রোগ ও রোগীদের প্রতি আমাদের মনোভাব বোঝা যায়। তাদের গারদে আটকে রাখাকে স্বাভাবিক বলে আমরা মনে করতে শিখেছি। সেখানকার রোগীরা সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরও বছরের পর বছর পরিবার তাদের ফিরিয়ে নিতে চায় না বলে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে বহুবার।
ঢাকার আদাবরের মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে পাওয়া গেছে নির্যাতন কেন্দ্র। সাউন্ড প্রুফ রুম তৈরি করা হয়েছে, যাতে নির্যাতনের সময় ভিকটিমের চিৎকার, কান্না বাইরে থেকে শোনা না যায়। অদৃশ্য এমন এক সাউন্ডপ্রুফ ঘরে আমরা সবাই আছি, নির্যাতিত হচ্ছি জীবনের নানা প্রতিকূলতা দ্বারা। কান্নার শব্দ অন্যের কাছে পৌঁছাবার কোনো সুযোগ আমাদের নেই।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ট্যাবু দূর করাটা বোধ হয় প্রথম এবং প্রধান কাজ এখন। মানুষ যেন মনে করে, শরীরের মতো মনও খারাপ হতে পারে। সে কথা সবাইকে জানালে, চিকিৎসা নিলে ক্ষতির কিছু নেই, লজ্জার কিছু নেই। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা মানুষের হাতের নাগালে আনাটা প্রচণ্ড জরুরি।
আর দরকার রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগে প্রচুর সংখ্যায় বৃদ্ধাশ্রম, প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র, যেখানে তাঁদের সঙ্গ দেওয়ার লোক থাকবে, যত্ন নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে, চিকিৎসা সুবিধা থাকবে। তাঁদের কাছের মানুষেরা জানবেন, ‘আমি না থাকলেও সে খুব খারাপ থাকবে না।’ বেসরকারি উদ্যোগেও এগুলো হতে পারে। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গেলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ কমবে। একা হয়ে যাওয়া একজন বয়স্ক মানুষ সেখানে থাকলে সমবয়সীদের সঙ্গ পাবেন; নতুন বন্ধুবান্ধব হবে; সুখ-দুঃখের গল্প করে সময় কাটবে। একেবারে একা থাকা, কথা বলার মতো কাউকে না পাওয়ার চেয়ে সেটা অনেক ভালো। সমাজে বৃদ্ধাশ্রম ব্যাপারটা নিয়ে যে ট্যাবু আছে, সেটা দূর করতে হবে।
আদর্শ পরিস্থিতিতে, সবাই পারিবারিক পরিবেশে যত্ন-আত্তির মধ্যে থাকবেন—এই সমাধান যে প্রায় হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে, এই কঠিন সত্যটি মেনে নিয়েই আমাদের পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য পরিবর্তিত সমাধান খুঁজতে হবে।
লেখক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ও কলাম লেখক

মহসিন সাহেব আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ফেসবুক লাইভে এসে নিজের দুঃখের কথা সকলকে জানিয়ে নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেছেন। মূলধারার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে তোলপাড় চলছে। শেষমেশ বিটিআরসি কোর্টে গেছে এই ঘটনার যে ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, তার বিস্তার ঠেকাতে।
এই খবরগুলোর অনেকগুলোরই হেডলাইন ছিল—একজন চিত্রনায়কের শ্বশুর আত্মহত্যা করেছেন। যে মানুষটি মারা গেলেন নিজের হাতে, তিনি নিজেও তো একজন ব্যক্তি, আলাদা সত্তা। কার শ্বশুর, সেটা তো পরের কথা। দু-একটি পত্রিকা ছাড়া কেউই এই মানুষটিকে, যিনি একই সঙ্গে হত্যাকারী ও হত্যার শিকার, হেডলাইনে আনল না। অন্যের পরিচয়ে তাঁকে পরিচিত করানো হলো চিত্রনায়কের শ্বশুর হিসেবে।
অমনি ‘ঢি ঢি’ পড়ে গেল। চিত্রনায়ক বা তাঁর স্ত্রী এই মানুষটির নিঃসঙ্গতা কাটাতে কিছু করেননি, ইত্যাদি ইত্যাদি। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এসব সমালোচনাকারীর অনেকেই তাঁদের বৃদ্ধ মা-বাবাকে, অথবা একাকী মাকে বা একাকী বাবাকে শহরে নিজের কাছে না রেখে গ্রামে নিঃসঙ্গ জীবনযাপনে বাধ্য করছেন। ব্যতিক্রম বাদে, কারও বাবা বা মা তো কারও শ্বশুর বা শাশুড়িও। নিজের বা নিজেদের মা-বাবা শ্বশুর-শাশুড়ির একাকিত্বের সময় কাছে টেনে না নিয়ে ‘গ্রামেই ওনারা ভালো থাকেন; ঢাকায় হাঁপিয়ে ওঠেন’ ইত্যাদি বলে দায় এড়ানো লোকেরাই সমস্বরে বলতে লাগলেন—এই মৃত্যুর পেছনে চিত্রনায়ক ও তাঁর স্ত্রীর পরোক্ষ দায় আছে বুঝিবা। এটাই সমাজমানস আজকাল।
মহসিন সাহেবের ক্ষেত্রে ব্যবসার খারাপ অবস্থা, শরীরের ক্যানসার, আর দীর্ঘদিন একা থাকা—সব মিলে তিনি হয়তো প্রচণ্ডভাবে ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। এই তিনটির যেকোনো একটিই মানুষের বিষণ্নতাকে উসকে দিতে যথেষ্ট। সেটা বেশি মাত্রায় গেলে এবং তিনি একবারে নিরাশ হয়ে গেলে আত্মহত্যার মতো মারাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—এমন উদাহরণ যথেষ্ট। বেশ কয়েক বছর আগে ব্যবসার ক্ষতি ও ঋণের ধাক্কা সামলাতে না পেরে কালান্দর কবীরের আত্মহত্যার খবর পত্রিকায় এসেছিল। আর্থিক ক্ষতি মাথায় নিয়ে রেললাইনের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়েছিলেন সুমন জাহিদ। পত্রিকায় খবর হয়েছিল। তিনি কিন্তু একা ছিলেন না। পত্রিকায় খবর হয় না, কিন্তু অর্থকষ্ট বা দুরারোগ্য ব্যাধির যন্ত্রণা নিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা সারা দেশে প্রচুর ঘটে।
মহসিন সাহেবও ভেবেছেন, এই জীবন যাপন করা, আর না করা একই কথা। তিনি নিজেকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের মধ্যে আলোচনায় বেশি আসছে তাঁর একাকিত্বের প্রসঙ্গটি।
শুধু কি পাশে মানুষ না থাকলে মানুষ একা হয়। এই শহরে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার দুই বোনের বছরের পর বছর স্বেচ্ছা-গৃহবন্দীত্ব এবং মৃতপ্রায় অবস্থায় একটি মানবাধিকার সংস্থার তাঁদেরকে বের করে নিয়ে আসার খবর আমরা জানি। আমাদের স্মৃতিসৌধের বরেণ্য স্থপতি মঈনুল ইসলাম জীবনের শেষ পর্যায়ে একটা ঘরেই থাকতেন। বেরোতেন না। সুতরাং, জীবনানন্দের কথায়, ‘সকল লোকের মাঝে থেকেও’ মানুষ একা হতে পারে। ‘বধূ শুয়েছিলো পাশে—শিশুটিও ছিলো;/প্রেম ছিলো, আশা ছিলো–জ্যোৎস্নায়’; তবু ভূত দেখতে পারে একজন মানুষ; একগোছা দড়ি হাতে যেতে পারে গাছতলায়। মানুষের মনের মধ্যে এক ‘বিপন্ন বিস্ময়’ খেলা করতেই পারে। সেটার কতটা সাইকোলজি, কতটা বায়োলজি, আর কতটা এই দুয়ের মিশ্রণে সাইকিয়াট্রি এই প্রশ্নের হয়তো কোনো সঠিক জবাব নেই। এর কতটা জেনেটিক, আর কতটা পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে জেনেটিক ব্যাপারটার সাথে পারিপার্শ্বিক অবস্থা যোগ হলে ব্যাপারটা প্রবল হয়ে ওঠে।
জীবনানন্দ লিখেছেন, ‘গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে/আরেকটি প্রভাতের ইশারায়/—অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে’। তবু কোনো কোনো মানুষ বেছে নেয় প্রস্থানের পথ। মানুষ একা হয়, সবার মধ্যে থেকেও হয়; কাছের লোকেরা কাছে না থাকলেও হয়। সকল লোকের মধ্যে থেকে যে আস্তে আস্তে গুটিয়ে যায়, তার একাকিত্বই সবচেয়ে দুর্বিষহ। কারণ, তার একাকিত্ব নিজের একান্ত গভীরে। চারপাশ বলে কিছু নেই সেই গহিনে। গভীর ডিপ্রেশনে চলে যাওয়ার ঝুঁকি তার খুব বেশি। এসব মানুষেরা সব খারাপে নিজের দোষ খুঁজে পান। নিজেকে সবকিছুর জন্য দায়ী মনে করে শাস্তি দিতে চান। যদিও গভীর ডিপ্রেশনে থাকা, একেবারে ভেঙে পড়া মানুষদের আত্মহত্যা করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতাও অবশিষ্ট থাকে না। ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠার পথে সে কিছুটা ডিপ্রেশনে থাকা অবস্থায়ই যখন কিছুটা মনের জোর আস্তে আস্তে অর্জন করে, আত্মহত্যার ঝুঁকি তখন বেশি বলে মনে করেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট সাপোলস্কি, জীববিজ্ঞান ও মানুষের আচরণ নিয়ে যাঁর গভীর কাজ রয়েছে।
বিষণ্নতায় ভোগা মানুষ তার চারপাশের মানুষকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। তাদের জীবনকেও নিজের অজান্তে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দিতে পারে, বিষিয়ে তুলতে পারে। আবার এই কাছের মানুষদেরই তার দরকার হয় ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসার সময় আঁকড়ে ধরার জন্য। হাত বাড়ালে যদি সে আঁকড়ে ধরার মতো কিছু না পায়, সে সরে যেতে পারে দূর থেকে আরও দূরে।
আলবেয়ার কাম্যু বলেছেন, মানুষ প্রতি মুহূর্তে এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নেয়, সে আত্মহত্যা করবে কি-না। অন্য কথায়, সে বিবেচনা করে দেখে, এই যে জীবন তার, সেটা যাপন করার কোনো মানে আছে কি-না। যদি দেখে এই জীবন যাপনের কোনো মানে আর নেই। সে আত্মহত্যা করে। না হলে সে বেঁচে থাকে। অবচেতনে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া চলতেই থাকে।
এ তো গেল শারীরিকভাবে আত্মহত্যার কথা। কাম্যু আরেক ধরনের আত্মহত্যার কথা বলেছেন—বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মহত্যা। যা তার মন সায় দেয় না, সেটাও মেনে নেওয়া। সে জানে কাজটি ঠিক নয়; তবু সে মানিয়ে নেয়; কাজটি করা চালিয়ে যায়। এমন তো সব মানুষই করে, করতে হয়। কাম্যুর মতে বুদ্ধিজীবীরা বেশি করে।
নচিকেতা গেয়েছেন, ‘প্রতিদিন চুরি যায় মূল্যবোধের সোনা/আমাদের স্বপ্ন; আমাদের চেতনা/...এরপর কোনো রাতে চাকরটা অজ্ঞাতে/সামান্য টাকা নিয়ে ধরা পড়ে হাতেনাতে/সকলে সমস্বরে, একরাশ ঘৃণা ভরে/চিৎকার করে বলে, “চোর, চোর, চোর…”।’ কোন চুরিটা বড় চুরি এটা নিয়ে ভাসা-ভাসা চিন্তা; অথবা চিন্তার প্রক্রিয়াকেই এড়িয়ে যাওয়া এবং স্রোতে গা-ভাসানো বোধ হয় কাম্যুর বলা বুদ্ধিবৃত্তিক আত্মহত্যাই, যা আমরা প্রতিনিয়ত করে চলেছি।
ধরুন, আমেরিকায় একটি সামরিক ঘাঁটিতে কাজ করেন একজন মানুষ। তিনি সকালে স্যুট-টাই পরে অফিসে যান, পথে সন্তানকে স্কুলে নামিয়ে দেন। স্কুল গেটে সন্তানের কপালে চুমু খান। তার পর অফিসে গিয়ে স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে দেখে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকারী বোমারু বিমানের পাইলটদের পরামর্শ দেন, ঠিক কোন পয়েন্টে বোমা ফেলতে হবে। তারপর বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় স্ত্রীকে নিয়ে রোমান্টিক ডিনারে যান। রাতে দিব্যি ঘুমান। সকালে আবার একইরকম একটা দিন শুরু করেন। আমাদের শেখানো হয়েছে, এই মানুষটি স্বাভাবিক, ব্যালান্সড পার্সোনালিটির মানুষ। আর রাস্তায় যে মানুষটি অসংলগ্ন আচরণ করেন, অগোছালো কথা বলেন, কিন্তু অন্যের কোনো ক্ষতি করেন না, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ, মানসিক রোগী। এই ধারণা যে বিশ্বে প্রচলিত, সেখানে যে মারাত্মক কোনো একটা সমস্যা আছে—এটা বুঝতে ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘হিস্ট্রি অব ম্যাডনেস’ পড়া লাগে না।
আমরা সেই বিশ্বের, সেই সমাজের মানুষ। ভালো, আর মন্দের বিচারে আমরা খুব ওস্তাদ। ত্বরিত বিচার করে একজন কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারলেই আমরা সমস্বরে বলি, চেঁচিয়ে বলি—ওই যে, ও দোষী। এবং নিশ্চিত হই যে, দোষী লোকটা আমি নই; এটা প্রমাণ করতে পেরেছি।
আসুন তো, গত দু-তিন বছরের মধ্যে এই শহরে ঘটে যাওয়া আর অন্তত দুটো ঘটনা মনে করে নিই।
মগবাজারের খাইরুল ইসলাম আত্মহত্যা করেছিলেন। আর্থিক সংকট ছিল। মানসিক অসুস্থতা ছিল। সেগুলো তাঁকে আত্মহত্যাপ্রবণ হতে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু আত্মহত্যার আগে তিনি একটি খুন করেছেন। তিনি খুন করেছেন নিজের সন্তানকে। একজন বাবা তাঁর নিজের সন্তানকে খুন করেছেন নিজেকে খুন করার আগে। যে মানুষটার ওপরে তাঁর কোনো ক্ষোভ, কোনো রাগ, কোনো অপছন্দ ছিল না; উল্টো ছিল অকৃত্রিম ভালোবাসা। ভালোবাসা থেকেই তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ছিল। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর সেই অতি আদরের ধন মানুষের অনাদর, অবহেলা, এমনকি নির্যাতনের শিকার হবে—এই অনিশ্চয়তা তাঁর মনে গভীরভাবে বাসা বেঁধেছিল।
বিষয়টি নিছক একটি হত্যা এবং তার পরে হত্যাকারীর আত্মহত্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, এখানে হত্যার কারণ বিরাগ নয়; বরং অনুরাগ। ছেলেটি অটিস্টিক ছিল। এ রকম একজন সন্তানের বাবা-মায়ের সব সময়ের দুশ্চিন্তা হচ্ছে, আমাদের মৃত্যুর পর আমার এই সন্তানের কী হবে, সে কোথায় যাবে, কে তাকে দেখে রাখবে। এমন একটি সন্তানের প্রতি মা-বাবার আবেগ, ভালো লাগা স্বাভাবিক একজন সন্তানের চেয়ে বেশি থাকে বলে ধারণা করা যায়। কারণ, মা-বাবা জানেন, এই সন্তানের সারা জীবন তাঁকে দরকার হবে গায়ে গা ঘেঁষে থাকার। এই বোধ থেকেই মা-বাবার সার্বক্ষণিক চিন্তাই থাকে, আমি যখন থাকব না, তখন আমার সন্তানটি কোথায় যাবে? সে কি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবে? সে রকম ছবি কল্পনা করে নির্ঘুম রাত কাটানো বা আঁতকে ওঠা প্রতি মুহূর্তের ব্যাপার।
নিজে তিনি এমনিতেও মারা যেতে পারতেন, আর্থিক দুরবস্থাই হোক, আর মানসিক অসুস্থতাই হোক আত্মহত্যা তিনি করতে পারতেন। আত্মহত্যা কোনো গ্রহণযোগ্য বিষয় না হলেও আত্মহত্যা অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যু প্রিয়তম সন্তানের জীবনে যে দুঃখের অধ্যায় সৃষ্টি করবে, সেটা থেকে তাকে ‘মুক্তি’ দিয়ে নির্ভার হয়ে নিজেকে হত্যা করা বা আত্মহত্যা করার বিষয়টি আমাদের এই রাষ্ট্রকে, সমাজকে, আমাদের সবাইকে অপরাধী করে দেয়।
আমরা এমন একটি সমাজ বা রাষ্ট্র তৈরি করতে পারিনি, যেখানে একজন বাবা বা মা তাঁর বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, যে অন্যদের সাথে কাড়াকাড়ি করে খেতে পারবে না, তাকে রেখে নিশ্চিন্তে চোখ বুঁজতে পারেন।
তার এক বছর আগে টিকাটুলিতে এক বৃদ্ধ তাঁর পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ত্রীকে খুন করেন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। পত্রপত্রিকায় খবর এসেছিল সত্তরোর্ধ্ব ওই মানুষটি স্ত্রীকে খুন করেছিলেন এমন একটি অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ থেকে যে, তিনি মারা গেলে স্ত্রীকে কে দেখে রাখবে!
এতে মনে করার সুযোগ রয়েছে, রাষ্ট্র বা সমাজ তাঁর অবর্তমানে তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে রাখবে এই আস্থা এই মানুষগুলোর ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীনতা থেকে তাঁরা হত্যা এবং আত্মহত্যার মতো গুরুতর বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়লেও এ রকম মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, তাঁদের মানসিক ভারসাম্যহীনতার সাথে এই অনিশ্চয়তার চাপের গুরুতর সংযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত অনিশ্চয়তা থেকে অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং সময়ের সাথে সাথে জীবনের অন্যান্য চাপে সেটা বাড়তে বাড়তে একসময় চূড়ান্ত ঘটনাগুলো তাঁরা ঘটিয়েছেন।
অবশ্য এই প্রশ্ন করাই যায়, মানসিক ভারসাম্যহীন স্বজনদের জন্য রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের সাপোর্ট পাওয়ার আশা আদৌ কি এ দেশের মানুষ কখনো করেছে? রাষ্ট্রের কাছ থেকে এ ধরনের সাপোর্ট পাওয়া যাবে এই বিশ্বাস, এই আস্থা কি কখনো এ দেশের মানুষের ছিল? স্বপ্ন থাকতে পারে, প্রত্যাশা থাকতে পারে; আস্থা গড়ে ওঠার মতো কোনো পরিবেশ কখনোই হয়তো ছিল না।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী পাবনার হাসপাতালটি পরিচিতি পেয়েছে ‘পাগলা গারদ’ হিসেবে; চিকিৎসা কেন্দ্র নয়। এতেই মানসিক রোগ ও রোগীদের প্রতি আমাদের মনোভাব বোঝা যায়।
কিন্তু সমাজের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ছিল। সেটা আমরা কয়েক দশক আগেও তো দেখেছি। সেই বিশ্বাসের ভিত্তি ছিল এ ধরনের মানুষের প্রতি সমাজের মানুষের সদয় আচরণ। অবজ্ঞা ছিল অনেকের মধ্যেই; কিন্তু হিংস্রতা ছিল না। এদের নির্যাতন করে বিকৃত আনন্দ পাওয়ার ব্যাপারটিকে সমাজ খারাপ চোখে দেখত। শুধু গ্রামে কেন, শহরেও এ ধরনের কোনো মানুষ থাকলে তাঁকে মহল্লার সবাই চিনতেন, তাঁর প্রতি সদয় আচরণ করতেন। এ কারণে একজন এ রকম শিশুর মা বা বাবা অন্তত ভাবতে পারতেন, চারপাশের পরিচিত মানুষদের মধ্যে সে থাকবে। সম্মান না পেলেও সুরক্ষা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে। সেই পরিস্থিতি দিন দিন বদলে যাচ্ছে। খারাপের দিকে যাচ্ছে।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী পাবনার হাসপাতালটি পরিচিতি পেয়েছে ‘পাগলা গারদ’ হিসেবে; চিকিৎসা কেন্দ্র নয়। এতেই মানসিক রোগ ও রোগীদের প্রতি আমাদের মনোভাব বোঝা যায়। তাদের গারদে আটকে রাখাকে স্বাভাবিক বলে আমরা মনে করতে শিখেছি। সেখানকার রোগীরা সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরও বছরের পর বছর পরিবার তাদের ফিরিয়ে নিতে চায় না বলে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে বহুবার।
ঢাকার আদাবরের মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে পাওয়া গেছে নির্যাতন কেন্দ্র। সাউন্ড প্রুফ রুম তৈরি করা হয়েছে, যাতে নির্যাতনের সময় ভিকটিমের চিৎকার, কান্না বাইরে থেকে শোনা না যায়। অদৃশ্য এমন এক সাউন্ডপ্রুফ ঘরে আমরা সবাই আছি, নির্যাতিত হচ্ছি জীবনের নানা প্রতিকূলতা দ্বারা। কান্নার শব্দ অন্যের কাছে পৌঁছাবার কোনো সুযোগ আমাদের নেই।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ট্যাবু দূর করাটা বোধ হয় প্রথম এবং প্রধান কাজ এখন। মানুষ যেন মনে করে, শরীরের মতো মনও খারাপ হতে পারে। সে কথা সবাইকে জানালে, চিকিৎসা নিলে ক্ষতির কিছু নেই, লজ্জার কিছু নেই। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা মানুষের হাতের নাগালে আনাটা প্রচণ্ড জরুরি।
আর দরকার রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগে প্রচুর সংখ্যায় বৃদ্ধাশ্রম, প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র, যেখানে তাঁদের সঙ্গ দেওয়ার লোক থাকবে, যত্ন নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে, চিকিৎসা সুবিধা থাকবে। তাঁদের কাছের মানুষেরা জানবেন, ‘আমি না থাকলেও সে খুব খারাপ থাকবে না।’ বেসরকারি উদ্যোগেও এগুলো হতে পারে। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গেলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ কমবে। একা হয়ে যাওয়া একজন বয়স্ক মানুষ সেখানে থাকলে সমবয়সীদের সঙ্গ পাবেন; নতুন বন্ধুবান্ধব হবে; সুখ-দুঃখের গল্প করে সময় কাটবে। একেবারে একা থাকা, কথা বলার মতো কাউকে না পাওয়ার চেয়ে সেটা অনেক ভালো। সমাজে বৃদ্ধাশ্রম ব্যাপারটা নিয়ে যে ট্যাবু আছে, সেটা দূর করতে হবে।
আদর্শ পরিস্থিতিতে, সবাই পারিবারিক পরিবেশে যত্ন-আত্তির মধ্যে থাকবেন—এই সমাধান যে প্রায় হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে, এই কঠিন সত্যটি মেনে নিয়েই আমাদের পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য পরিবর্তিত সমাধান খুঁজতে হবে।
লেখক: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত ও কলাম লেখক

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৮ মিনিট আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
২০ মিনিট আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
২৩ মিনিট আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়েছেন বৃদ্ধ, নারী ও স্কুলগামী শিশুরা। সংযোগ সড়ক না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা টাকা তুলে মইয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আবার মই বেয়ে উঠতে গিয়ে কয়েকজন গুরুতর দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ কোটি ৭ লাখ টাকা। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৪ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় মিথুন এন্টারপ্রাইজ। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্যটি আরও কৌতূহল উদ্দীপক। প্রকল্পের ঠিকাদারের দাবি, মাটি না পাওয়ায় তাঁরা সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারেননি।
অতীতেও আমাদের দেশে এ রকম অসংখ্য সেতুর হদিস পাওয়া গেছে। যেখানে কোনো জনবসতি বা রাস্তা নেই, সেখানে সেতু তৈরি করার অনেক নজির রয়েছে। যাঁরা এসব সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাঁরা জনগণের কথা যে ভাবেন না, সেটা স্পষ্ট। সেতুর নামে যেখানে খুশি সেখানে একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে জনগণের করের টাকা কীভাবে নিজেদের পকেটে ঢোকানো যায়, তাঁরা সেই চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অথচ দেশের অনেক জায়গায় সেতুর প্রয়োজন হলেও সেসব জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে না। এতে বছরের পর বছর চলে গেলেও কারও কোনো দুশ্চিন্তা হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই ওই সব এলাকার জনগণকে বাঁশের সাঁকো, কাঠের সেতু কিংবা নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে দেখা যায়। আবার সংস্কারের অভাবে অনেক সেতু জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
দেশের মানুষের যোগাযোগের কথা চিন্তা করে সরকারি উদ্যোগে অনেক সেতুই নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এসব সেতু আদৌ জনগণের কল্যাণে আসছে কি না, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোনো ভাবনা নেই। তবে সেতু নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠী যে নিজেদের লাভের জন্য এ ধরনের অপকর্ম করছে, তা ব্যাখ্যা না করলেও চলে।
সেতু নির্মাণের নামে জনগণের অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সেতু নির্মাণ করতে হবে প্রকৃত অর্থেই জনগণের কথা মাথায় রেখে। আর যে সেতু নির্মাণ করে এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসে না, উল্টো দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। এখন সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে বাধ্য করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

রাষ্ট্র বা সমাজ তাঁর অবর্তমানে তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে রাখবে এই আস্থা এই মানুষগুলোর ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীন স্বজনদের জন্য রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের সাপোর্ট পাওয়ার আশা আদৌ কি এ দেশের মানুষ কখনো করেছে?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
২০ মিনিট আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
২৩ মিনিট আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেজাহীদ রেজা নূর

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি। একজন প্রার্থী ছিলেন, তাঁকেই উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা বেছে নিয়েছি!’
ভোটারের ভোটের স্বাধীনতা বলতে এ রকম একটি আবহই বিরাজ করত সেখানে। আমাদের দেশে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে নির্বাচন। নানা রাজনৈতিক মতাবলম্বী দল অংশ নেবে নির্বাচনে। ফলে, আমাদের নির্বাচন সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একপেশে হবে না। তাই তা নিয়ে কৌতুক করার সুযোগই থাকবে না নিশ্চয়ই।
রাশিয়ায় নির্বাচন নিয়ে ইদানীং নতুন নতুন কৌতুকের জন্ম হচ্ছে। একটু হালকা চালে সে কৌতুকগুলো বলে আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কথা বলব। সেগুলো অবশ্য কৌতুককর হবে না।
রাশিয়ার মানুষ নিজেদেরই প্রশ্ন করে, ‘আমাদের দেশে নির্বাচন আর লটারির মধ্যে পার্থক্য কী?’ নিজেকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণ ভেবে নিজেই উত্তর দেয়, ‘লটারিতে অন্তত ভিন্ন ফল হওয়ার একটা সুযোগ থাকে।’
আরেকটি প্রশ্ন-উত্তর:
— রাশিয়ায় নির্বাচন সব সময় ‘সৎ’ভাবে হয় কেন?
— কারণ ভোট শুরু হওয়ার আগেই সবাই জানে ফল কী হবে।
পরের কৌতুকটা রাজনীতির একটা মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে। কোন দেশের জন্য তা কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। কিন্তু প্রশ্ন যেমন, উত্তরও তেমন:
— নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আর রূপকথার মধ্যে পার্থক্য কী?
— রূপকথায় শেষ পর্যন্ত ভালোই জেতে।
স্বৈরাচারী নির্বাচনে কীভাবে প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়, তা নিয়ে কৌতুকে বলা হচ্ছে:
নির্বাচনে একজনই প্রার্থী ছিল। তবু
ব্যালট পেপারে দুইটা অপশন ছিল: ‘পক্ষে’ আর ‘খুবই পক্ষে’।
রাশিয়াকে সরিয়ে রাখা যাক। জর্জ অরওয়েলের নামে একটা উদ্ধৃতি ঘুরে বেড়ায় অন্তর্জালে। তিনি বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ লোক, চোর, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারকদের পক্ষে ভোট দেয়, তারা তাদের শিকার নয়—তারা তাদের সহযোগী।’
কিন্তু জর্জ অরওয়েল এ রকম কথা কোথাও বলেছেন, এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। কেউ না কেউ এ রকম কিছু বলে তা অরওয়েলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। অরওয়েল বলে থাকুন আর না-ই থাকুন, কথাটা কিন্তু মিথ্যে নয়। খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল কাছাকাছি এ ধরনের কথা অনেকেই বলেছেন। যেমন মার্কিন উদ্ভাবক, ভিডিও গেম ডিজাইনার, প্রকৌশলী রালফ বেয়ার বলেছিলেন, ‘শৈশবের প্রধান সুবিধা হলো অজ্ঞানতা। তুমি এখনো জানো না যে পৃথিবীটি চালায় প্রতারক, চোর, মিথ্যাবাদী, বিশ্বাসঘাতক, খুনি এবং দুষ্টজনেরা।’
একটু ভিন্নভাবে মেক্সিকোর বিপ্লবের নেতা এমিলিয়ানো সাপাতা বলেছিলেন, ‘আমি চোর এবং খুনিকে ক্ষমা করতে পারি, কিন্তু বিশ্বাসঘাতককে কখনো না।’
এ রকম অনেক কথাই আছে যেগুলো শুনতে ভালো লাগে। বিশ্বাসও হয়। কিন্তু সৎ মানুষের খোঁজ করতে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।
এই জায়গায় এসেই আমাদের একটু সতর্ক হতে হয়। কৌতুক থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হয়। আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন একেবারে হয়নি, তা নয়। কিন্তু রাজনীতির মাঠে দিনের পর দিন সংসদে যাওয়ার জন্য যে মানুষগুলো প্রস্তুত হয়েছেন এবং নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কালোটাকার মালিক। এভাবে কথাটা বললে অবশ্য সেটাও হয়ে ওঠে কৌতুক। বরং বলা যায়, কালোটাকা ছাড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন, আর তাতে জেতা প্রায় অসম্ভব।
কালোটাকার মালিকদের কথা বললে আবার আমাকে নস্টালজিয়া পেয়ে বসে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমি রাশিয়ায় ছিলাম। দশকের শুরুতেই ধরাশায়ী হয়েছিল কমিউনিস্ট শাসন। সারা বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোয় তখন চলছিল ভাঙন। পশ্চিমা বিশ্বের মদদ ছিল তাতে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের স্থবিরতা এবং স্বৈরাচারও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর পতনের জন্য অনেকাংশে দায়ী—এ কথা না বললে সত্যের অপলাপ হবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পর একটা সময় এসেছিল, যখন হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল নব্য রুশরা। এই নব্য রুশদের কেউ বেরিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি থেকে, কেউ তাদের ছাত্রসংগঠন কমসোমল থেকে, কেউ পার্টি না করলেও কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জমিয়ে পুঁজির পাহাড়ে উঠে বসে পড়েছিল। এই নব্য রুশরা ‘জাতে’ উঠতে চাইত। তারা সে সময়ের বিলাসবহুল ‘মার্সিডিস ৬০০’ গাড়ি কিনত, সেটাই চালাত। এ রকম গাড়ি দেখলেই বোঝা যেত, এই লোক নির্ঘাত নব্য রুশ। তারা গলায় পরত মোটা সোনার চেইন। আর শরীরে জড়াত গাঢ় গোলাপি জ্যাকেট। এক পুরুষে অভিজাত হওয়ার খায়েশ মেটাতে
চাইত তারা। তাদের নিয়ে একটা কৌতুক বলে নেওয়া যাক।
দুই নব্য রুশের দেখা হয়েছে মস্কোতে। প্রথমজনের নিখুঁত স্যুটের সঙ্গে একটি মানানসই টাই দেখে দ্বিতীয় নব্য রুশ প্রশ্ন করছে, ‘এই টাই তুমি কোথায় কিনেছ? কত দিয়ে কিনেছ?’
প্রথম নব্য রুশ বলল, ‘টাইটা আমি কিনেছি প্যারিস থেকে, ১০০০ ডলার পড়েছে দাম।’
চুক চুক করে দ্বিতীয়জন বলল, ‘আরে! কী বোকা তুমি! লন্ডনে কিনলে এই একই টাই তুমি ২০০০ ডলারে কিনতে পারতে!’
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নতুন গোঁফ উঠলে যেমন বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় সদ্য তরুণ, তেমনি নব্য ক্ষমতার স্বাদ পেলে নব্য রাজনীতিবিদেরাও এমন সব কাণ্ড করতে থাকেন, যা অনেক কৌতুকের জন্ম দেয়।
বলে রাখা ভালো, সেই নব্য রুশরা এখন ইতিহাস। তারা বর্তমানে অচল। তাই তাদের নিয়ে নতুন কোনো কৌতুক তৈরি হয় না।
২. নির্বাচন নিয়ে কথা বলার আগে একটু হালকা আলাপ করে নিলাম। রাজনৈতিকভাবে জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি, এ অবস্থায় মানসিক চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, নির্বাচিত দল ক্ষমতা হাতে নেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অর্থনীতিতে গতি আনা, জনমনে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজগুলো তারা করবে নিশ্চয়ই। এর জন্য সবচেয়ে আগে দরকার নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিকভাবে দেশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে কি না, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
ভালো নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তাঁরা ভয়ভীতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন। প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবেন, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। কোনো শক্তি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা থাকছে কি না। এগুলো খুবই জরুরি প্রশ্ন। দেশের মানুষকে বিভাজিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে পড়বে।
ভোটকেন্দ্রে ও তার আশপাশের এলাকার পরিবেশও অনেক কথা বলে দেবে। এবারের নির্বাচনের দিকে বিশ্ববাসীর নজর থাকবে। গায়ের জোরে কিংবা কৌশল করে কেউ যদি নির্বাচনী রায় ছিনতাই করতে চায়, তাহলে সেই নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।
নজর রাখতে হবে প্রশাসনের দিকে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি দলনিরপেক্ষ আচরণ না করে, কিংবা কোনো না কোনো দলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে সে নির্বাচন একেবারেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সব দলের প্রতি নির্বাচনী বিধির একই রকম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
বিরোধী মতের কণ্ঠ রোধ করার কথা আগের জামানায় যেমন শোনা গেছে, এই জামানায়ও শোনা যায়। ফলে সব দলের জন্য সমান প্রচারের সুযোগ, সভা-সমাবেশ, পোস্টার ইত্যাদির ব্যাপারে নির্দেশনা থাকতে হবে, যেন সবাই নির্ভয়ে তার কাজটা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশন কতটা স্বাধীন ও কার্যকর থাকবে, সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ভোট গ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণায় স্বচ্ছতা না থাকলে পরবর্তীকালে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদেরই তার জবাবদিহি করতে হবে। নিকট-অতীতে এই অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে, তাদের স্বচ্ছতা বজায় রাখা, কাউকে ছাড় না দেওয়া।
নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে স্থিতিশীল সরকার ক্ষমতায় আসুক। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হোক, ক্ষমতার রদবদল হোক সাংবিধানিকভাবে। আবার নির্বাচন হোক, সবাই তাতে যুক্ত হোক, উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাক, ভোটার নির্ভয়ে তাঁর রায় প্রদান করুন। ফিরে আসুক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এবং সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিক নির্বাচিত সরকার। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটাক্ষ করার প্রবণতা বন্ধ হোক।

রাষ্ট্র বা সমাজ তাঁর অবর্তমানে তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে রাখবে এই আস্থা এই মানুষগুলোর ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীন স্বজনদের জন্য রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের সাপোর্ট পাওয়ার আশা আদৌ কি এ দেশের মানুষ কখনো করেছে?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৮ মিনিট আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
২৩ মিনিট আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেশোয়েব সাম্য সিদ্দিক

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে একই সময়ে মৌলিক খাদ্যপণ্যের দাম স্থির হয়নি বরং অনেক ক্ষেত্রেই আরও বেড়েছে। এই অদ্ভুত বৈপরীত্যই আমাদের বাজারব্যবস্থার গভীর সমস্যার দিকগুলো তুলে ধরে।
এই প্রশ্ন আমার কাছে অর্থনীতির শুষ্ক বিশ্লেষণ নয়, এটি মানুষের প্রতিদিনের সংগ্রামের বাস্তব গল্প। বাজারে যাওয়ার আগে মানুষ ভাবে আজ কি একটু স্বস্তি মিলবে? মাছ, চাল, ডাল, তেল—এসবের দাম গত পাঁচ বছরে যে মাত্রায় বেড়েছে, তা কেবল সংখ্যা নয়, তা মানুষের জীবনমানের ক্ষয়, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও আমাদের দেশে কেন কমছে না—এই সাধারণ প্রশ্নটাই এখন নীতিনির্ধারণের সবচেয়ে জরুরি আলোচ্য হওয়া উচিত।
আমার পর্যবেক্ষণে প্রধান সমস্যা শুরু হয় আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থার অদক্ষতা দিয়ে। যেসব দেশে বৈশ্বিক মূল্যহ্রাস দ্রুত বাজারে প্রতিফলিত হয়, সেখানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় গড়ে দুই থেকে পাঁচ দিন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে একই কাজ সম্পন্ন করতে গড়ে ১০ থেকে ১২ দিন লাগে। বন্দরে অতিরিক্ত অপেক্ষা, ডেমারেজ চার্জ, শিপিং বিলম্ব এবং কাগজপত্রের জটিলতা যোগ হতে হতে আমদানি করা পণ্যের খরচ বাড়তেই থাকে। ফলে বিদেশে দাম কমলেও দেশে খুচরা পর্যায়ে সেই সুবিধা ভোক্তার সামনে পৌঁছায় না।
দ্বিতীয় সমস্যা টাকার অবমূল্যায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাকার মান ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০২৪ থেকে ২০২৫ সময়ে প্রায় ১৪ শতাংশ কমলেও বাংলাদেশে তেলের দাম কমেনি। কারণ, আমদানি মূল্য ডলারে নির্ধারিত হয়। টাকার অবমূল্যায়ন বৈশ্বিক মূল্যহ্রাসকে দেশের বাজারে প্রায় নিষ্ফল করে দেয়।
তৃতীয় সমস্যা প্রতিযোগিতাহীন বাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ দেখিয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সময়ে চাল, তেল, চিনি, ডালসহ প্রধান পণ্যের বাজার কিছুসংখ্যক গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাজারে নতুন আমদানিকারক বা পরিবেশকদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হলে মূল্যহ্রাসের চাপ তৈরি হয় না। প্রতিযোগিতা না থাকলে দাম কমার বদলে একই থাকে। আমার মতে, এই বাজারসংকোচনই মূলধারার ভোক্তামূল্যকে দীর্ঘমেয়াদি অস্থির অবস্থায় আটকে রাখে।
চতুর্থ বড় সমস্যা তদারকি দুর্বলতা। ভোক্তা অধিদপ্তর বা প্রশাসনের হঠাৎ অভিযান বাজারে সাময়িক প্রভাব ফেলে, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে সব আগের অবস্থায় ফিরে যায়। কারণ, একটি স্থায়ী, তথ্যভিত্তিক, নিয়মচালিত তদারকি ব্যবস্থা নেই। প্রতিটি বাজারে মূল্য পরিবর্তনের তথ্য নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে সিন্ডিকেটের পক্ষে কৃত্রিম মূল্য নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সহজ হয়ে পড়ে।
পঞ্চমত, তথ্যের অস্বচ্ছতা। বিবিএস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির মূল্যতথ্য একই সময়ে এক নয়। কোন জেলায় কত স্টক আছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে কোথায় আছে, কোন ব্যবসায়ী কতটুকু মজুত রেখেছে—এসব তথ্যের কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ড বাংলাদেশে নেই। ফলে নীতিনির্ধারকেরা অনেক সময় অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। তথ্যহীনতা বাজারের স্বচ্ছতাকে দুর্বল করে এবং সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।
অনেকে বলবেন, শুধু অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুয়েজ খাল-সংকট, পরিবহন ব্যয় ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাও প্রভাব ফেলে। সেটি সত্য। তবে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে যখন খাদ্যমূল্য বিশ্বব্যাপী টানা নিম্নমুখী, তখন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ এই সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি, কারণ অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল এবং নীতি সমন্বয় অনুপস্থিত।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ভোক্তারা কিছু মৌলিক পণ্যের জন্য এখনো আন্তর্জাতিক মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিচ্ছেন। সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা হলেও বাংলাদেশে সেটি ছিল ১৩০ থেকে ১৬০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা কেজি থাকলেও বাংলাদেশে একই সময়ে ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা। এই অতিরিক্ত ব্যয়ের বোঝা মানুষের জীবনযাত্রাকে চরম অনিরাপদ করে তুলছে। আমার নিজের পর্যবেক্ষণ বলে, মধ্যবিত্তের মাস শেষে ঘাটতি স্থায়ী রূপ নিয়েছে, নিম্নবিত্তের খাদ্য গ্রহণ কমেছে, আর দরিদ্র মানুষের হাতে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সামর্থ্য কমে গেছে।
আমার মতে সমাধান সুস্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য। কাস্টমস ও আমদানি প্রক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশন জরুরি, কারণ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধির চাপ তৈরি হয় বন্দরের অকার্যকারিতা ও কাগজপত্রের জটিলতা থেকে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সময় যদি বর্তমান ১০ থেকে ১২ দিন থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা যায়, তবে আমদানি করা পণ্যের মোট ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, অটোমেটেড ডকুমেন্ট যাচাই এবং ঝামেলামুক্ত অনলাইন অনুমোদনব্যবস্থা চালু করলে পণ্যের প্রবাহ দ্রুত হবে, মজুত ব্যয় কমবে এবং খুচরা বাজারে দাম স্বাভাবিকভাবে নেমে আসবে। একইভাবে বাজারে নতুন আমদানিকারক ও পরিবেশকের প্রবেশ সহজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বর্তমান বাজারকাঠামোতে কিছু গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং নতুন উদ্যোক্তারা আমদানি লাইসেন্স, এলসি বা বিতরণ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়েন। এই বাধা দূর করতে পারলে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম কমার স্বাভাবিক চাপ তৈরি হবে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি একটি কেন্দ্রীয় মূল্যতথ্য ড্যাশবোর্ড তৈরি করা জরুরি, কারণ কোথায় কত স্টক আছে, কোন পণ্য কখন বন্দরে এসেছে বা ছাড় হয়েছে এবং কোন স্তরে দাম বাড়ছে বা কমছে—এসব তথ্য বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় নীতি গ্রহণে বিলম্ব হয়। একক ড্যাশবোর্ডে আমদানি থেকে খুচরা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ রিয়েল-টাইমে দেখা গেলে সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া সম্ভব হবে, অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং বাজারে কারসাজির সুযোগ কমে যাবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিদপ্তরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে স্থায়ী, পেশাদার ও তথ্যনির্ভর তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, ডেটা অ্যানালিটিকস ব্যবহার, ক্ষমতায়ন এবং বড় ব্যবসা-গোষ্ঠীর অনিয়ম শনাক্তের পর দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এমন স্থায়ী নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে কোনো সিন্ডিকেট দীর্ঘ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না এবং দাম স্বাভাবিকভাবেই নেমে আসবে।
সবশেষে বলতে হয়, বাজার কেবল অর্থনীতির হিসাব নয়, এটি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন, নিম্নবিত্তের অপূর্ণতা এবং দরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন লড়াই, সবকিছু মিলেই বাজারকে মানবিকভাবে বুঝতে হবে। নীতি যদি মানুষের মুখের আহার না বোঝে, তবে সেই নীতি অর্থনীতিকে নিরাপদ রাখতে পারে না। বিশ্ববাজারে দাম কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে কমছে না। এটি বাজারের সমস্যা নয়, নীতির সমস্যা। আমরা চাইলে এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি। সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে মানুষের কষ্ট কমবে, বাজার ঠিক হবে এবং অর্থনীতি আরও স্থিতিশীল পথে ফিরবে। এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

রাষ্ট্র বা সমাজ তাঁর অবর্তমানে তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে রাখবে এই আস্থা এই মানুষগুলোর ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীন স্বজনদের জন্য রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের সাপোর্ট পাওয়ার আশা আদৌ কি এ দেশের মানুষ কখনো করেছে?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৮ মিনিট আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
২০ মিনিট আগে
বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

বিজয় দিবস পার হলো। আরও একটি বিজয়ের আনন্দ যুক্ত হলো স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের মনে। যদিও এই বছরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধপক্ষের নানা প্রচারণার দেখা পাওয়া গেছে, কিন্তু দেশের মানুষ তাতে খুব বেশি বিভ্রান্ত হয়েছে, এমনটা বলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এখন পর্যন্ত এতটাই সজীব যে, ইচ্ছে করলেই এই ইতিহাসকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যাবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সুকৌশলে এমন সব প্রশ্নের জন্ম দেওয়া হয়, যার উত্তর তারা নিজেরা জানলেও সে উত্তরকে আড়ালে রেখে নতুন বয়ান তৈরির ধূর্ততাও পরিলক্ষিত হয়। সম্প্রতি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দায় পাকিস্তানি হানাদার ও আলবদর, আলশামসের কাঁধ থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও দেখা গেছে। এই কাজটি মূলত তারাই করতে চাইছে, যারা একাত্তরের পরাজয়ের গ্লানি এখনো হজম করে উঠতে পারেনি। এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বাংলাদেশের সূত্রের কাছে না গেলেও চলবে। আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরকারী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি এবং সে সময়ের ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা রাও ফরমান আলী তাদের বইগুলোয় একে অপরকে দোষারোপ করতে গিয়ে নিজেদের ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন। নিয়াজির অফিসের সামনে রাও ফরমান আলী দেখেছেন কাদালেপা মাইক্রোবাস, রাও ফরমান আলীর ডায়েরিতে দেখা গেছে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা। কেউ কেউ রাও ফরমান আলীকে অনুরোধ করে সেই তালিকা থেকে বুদ্ধিজীবীদের নাম কাটিয়েছেন বলেও প্রমাণ আছে। এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই শিক্ষিত কোনো মানুষ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না বলে মত প্রকাশ করলে তা সত্যের অপলাপই হয়। এ ধরনের বক্তব্য আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার ন্যক্কারজনক প্রয়াস হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বাংলা ও বাঙালির বীরত্বগাথাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা জরুরি। দেশের ক্ষমতা যার হাতে থাকে, সে-ই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস রচনা করতে চায়। কিন্তু তারা ভুলে যায়, ইতিহাসের সত্যগুলো প্রকাশিত হবেই। স্বাধিকার আন্দোলনের পথ ধরে আসা স্বাধীনতার সময়টিতে কার নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত হয়, কার ওপর দেশবাসী রেখেছিল আস্থা, পাকিস্তানিদের চালানো অপারেশন সার্চলাইট, সার্চ অ্যান্ড ডেস্ট্রয় এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বর্ণনা পাওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। বাঙালির এই জনযুদ্ধকে খাটো করে দেখানো কিংবা পাকিস্তানি বাহিনীর মহিমাকীর্তন কোনো ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাতে পারবে না। সব পক্ষের উচিত, ইতিহাসের সত্যকে আড়াল না করে নতুন করে জীবন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা।
আমাদের দেশ একটা অস্থির সময় পার করছে। এই সময়টিতে পুরো জাতির ঐক্য প্রয়োজন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে বিজয়ী পক্ষ এত বেশি বিভক্ত হয়ে রয়েছে যে তাদের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় সব অঙ্গনে স্থিতিশীলতা আসবে—এমন আশা এখন পায়ের নিচে শক্ত মাটি পাচ্ছে না। ন্যূনতম কিছু বিষয়ে একমত হতে হলে জাতিকে সামগ্রিকভাবেই দেখতে হবে। সেদিকেই হতে হবে দেশের যাত্রা।

রাষ্ট্র বা সমাজ তাঁর অবর্তমানে তাঁর ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে রাখবে এই আস্থা এই মানুষগুলোর ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীন স্বজনদের জন্য রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের সাপোর্ট পাওয়ার আশা আদৌ কি এ দেশের মানুষ কখনো করেছে?
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
সংযোগ সড়ক না থাকলে সেতু নির্মাণ করলে তা এলাকার জনগণের কোনো কাজে আসে না। এ রকম একটা অপ্রয়োজনীয় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় সেরার খালের ওপর। কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে সেতুটি নির্মাণ করা হয় বছরখানেক আগে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় ঝুঁকি নিয়ে মই বেয়ে সেতু পারাপার...
১৮ মিনিট আগে
নির্বাচনের প্রসঙ্গ এলেই প্রথমে আমার মনে পড়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রচলিত কৌতুকগুলোর কথা। ছিল লৌহশাসন, অথচ সেই শাসনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসত দমফাটানো কৌতুক। সে সময়ের কৌতুকের একটাই বলি এখানে। একজন ভোটারকে টেলিভিশনের এক কর্মী প্রশ্ন করায় তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভোট দিয়েছি।
২০ মিনিট আগে
২০২৫ সালে বাজারে ঢুকলেই যে চাপ লাগে, তা শুধু দামের নয়, মানুষের দৈনন্দিন লড়াইয়ের অনুভূতিও। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, সয়াবিন তেল, ডাল, চিনিসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ১২ থেকে ১৮ শতাংশ কমেছে। এফএওর খাদ্যমূল্য সূচক ২০২৪ সালে টানা ১২ মাস কমেছে এবং ২০২৫ সালেও সেই ধারা চলছে।
২৩ মিনিট আগে