মামুনুর রশীদ
সম্প্রতি হঠাৎ করেই ধর্ষণ, শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো বেড়ে গেছে। ফেসবুক সয়লাব হয়ে যাচ্ছে ধর্ষণ আর ধর্ষণের খবরে। বাংলাদেশের সমাজে ধর্ষণ নতুন কিছু নয়। প্রতিকারহীন এই রোগটি বহু বছর ধরেই চলে আসছে। বর্তমানে অবশ্য ফেসবুকের কল্যাণে দ্রুত প্রকাশ পাচ্ছে। পাশাপাশি ফেসবুকেই যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে এমন সব অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রকাশ হচ্ছে, যা ধর্ষণের জন্য প্ররোচনা দিচ্ছে। এই অরক্ষিত ফেসবুকই হঠাৎ করে ধর্ষণ বাড়িয়ে ফেলল কি না—প্রশ্ন জাগতেই পারে। কিছু খ্যাতনামা চিকিৎসকও এই বিজ্ঞাপনগুলোতে অংশ নিয়ে থাকেন। ডাক্তাররা এই ধরনের বিজ্ঞাপনের কাজে কী করে ব্যবহৃত হন, তা ভাবতেই অবাক লাগে।
দেশের একজন বিখ্যাত অভিনেতা নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ছিলেন। একটি বিজ্ঞাপনে অংশ নেওয়ার পর তাঁর লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তী জীবনে অবশ্য তাঁকে আর ডাক্তারি পেশায় যেতে হয়নি। অভিনয় করেই সারা জীবন কাটিয়েছেন। আমাদের দেশে কোনো ধরনের বাধানিষেধ নেই। এসব দেখতে দেখতেই আমাদের সন্তানেরা বড় হয়েছে। আবার এসব নিয়ে বেশি কথা বললে হিতে বিপরীতও হয়েছে। যেমন মাদকাসক্তি নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে। ফলাফলে মাদকের বিস্তর হয়েছে। রাজনীতিবিদ, পুলিশ, এমনকি সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এর মধ্যে জড়িয়ে গেছেন। ধর্ষণ, মাদকাসক্তি—দুই-ই সমানতালে বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে ধর্মও জড়িয়ে গেছে। কার কত স্ত্রী ছিল, বর্তমানেও হুজুরদের কতজন স্ত্রী আছে, তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই।
ফেসবুকের মতো আরেকটি শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে ওয়াজ। কিছু হুজুর এমনভাবে (অশ্লীল) নারীদের অবস্থান বর্ণনা করেন, তাতে তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ সবার মধ্যেই একধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সেই উত্তেজনা ওই ফেসবুকের চিকিৎসকদের মতোই। এ ব্যাপারে যত দিন সমাজের প্রতিটি মানুষ রুখে না দাঁড়াবে, তত দিন এই সমস্যার সমাধান হবে না।
ধর্ষণসংক্রান্ত খবরগুলো পড়ে আমার সাম্প্রতিক নেপাল সফরের কথা মনে পড়ছে। নেপালকে সুদূর প্রবাস বলব না, অদূর প্রবাসই বটে। কারণ, উড়ে যেতে কেবল এক ঘণ্টা কয়েক মিনিট লাগে। আমরা একসময় নেপালের আন্দোলন, সশস্ত্র অবস্থা এসব দেখে ভাবতাম দেশটা বোধ হয় গোল্লায় গেল। কিন্তু ঘটনা হয়ে গেল উল্টো। দীর্ঘ সময় নেপালে রাজতন্ত্র উচ্ছেদের জন্য লড়াই হয়েছে। সেটা সফলও হয়েছে। আমরাও কয়েক মাস আগে ছাত্র-জনতার একটি সফল অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এই অভ্যুত্থানের সাত মাস যেতে না যেতেই নানা ধরনের সামাজিক অস্থিরতা আমরা দেখছি।
অথচ নেপালের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। সেখানে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ হয়েছে, তারপর সংসদ হয়েছে, চরম বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে, ঘন ঘন সরকার পতন হয়েছে। কিছুদিন আগে মাওপন্থী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। এখন কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) ক্ষমতায় আছে। এসব ইতিহাসের কথা। কিন্তু ওই অশান্ত পরিবেশ থেকে কী করে সেখানে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, যে দেশটিতে কখনো ঔপনিবেশিক শক্তি ঢুকতে পারেনি, ওই হিমালয় দেখেই ভয় পেয়েছে মোগল, পাঠান, ব্রিটিশ, ফরাসি সবাই? সুদীর্ঘ রাজতন্ত্রের শাসনকে পরাস্ত করে নিজেদের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটিয়ে কেমন করে গণতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব হলো? আপাতদৃষ্টিতে মানুষগুলো নিরীহ হলেও ভেতরে বড়ই গণতান্ত্রিক। অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস তারা অর্জন করেছে।
কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রামের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ কেন গণতন্ত্র ও সামাজিক স্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না? আমার
মনে হয়, এর একটি বড় কারণ সংস্কৃতিমনস্কতা। বাংলাদেশে আমরা যথেষ্ট সংস্কৃতিমনস্ক হয়ে উঠতে পারিনি বলেই আমার ধারণা।
নেপাল সেটা পেরেছে। যদিও সেখানে ভারতীয় সিনেমা ও টেলিভিশন জনপ্রিয়, তার মধ্যেও এখানে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন সাতটি মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় হয়ে থাকে। মঞ্চগুলোও দর্শকপূর্ণ। এসব মঞ্চ বেসরকারি। কিন্তু বড় মঞ্চও আছে। সেখানেও প্রতিদিনই অভিনয় হয়। আবার ছোট ছোট প্রশিক্ষণের স্কুলও গড়ে উঠেছে।
কাঠমান্ডুর বাইরেও থিয়েটারের চর্চার একটা আয়োজন চলছে। কাঠমান্ডু থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে ইটাহারি বলে একটি প্রদেশের রাজধানীতে গিয়েছিলাম। ১৩টি দেশ থেকে আসা এবং স্থানীয় দলগুলো নিয়ে আমাদের একটি নাট্যোৎসব হলো। নতুন একটি হলের উদ্বোধনও হলো। হলটির নাম ম্যাট্রিকস। এর মালিক বিক্রম শ্রী একজন স্থপতি ও ভাস্কর। মঞ্চটি ঘিরে নানা গাছপালা ও ভাস্কর্য। তার মধ্যেই নির্মাণ করেছেন সেই ছোট মঞ্চ। মঞ্চটিতে আমার অভিনয় করে ভালোই লাগল। দর্শকদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন। শুনলাম তাঁর এবং অন্য মন্ত্রীদেরও ভালো লেগেছে আমার অভিনয়। পরদিনই তিনি আবার এলেন। এবং সবাইকে নানা উপহার দিলেন। এই উৎসবের মূল ব্যক্তি অশেষ মাল্লা এই আয়োজনে আমাদের সহযাত্রী। তাঁর স্ত্রী সাবিত্রী কক্ষপতিও সর্বক্ষণ আমাদের সঙ্গে আছেন।
এর পরের যাত্রা অর্থাৎ আরও পরের গন্তব্য ধানকুটা। চারদিকে পাহাড়। চমৎকার প্রকৃতি। মাঝখানে শহর। শহরকে ছোট উপত্যকা বলা চলে। সেই ছোট উপত্যকায় একটা বড় এলাকাজুড়ে সভা-সমিতি আর অনুষ্ঠানের জায়গা। সেখানেই আমরা এবং এলাকার শিল্পীরা সংগীত, নৃত্য, নাটক করলাম, সবাই অভিনয় করলাম। সেই সঙ্গে শহরবাসীর প্রাণঢালা অভিনন্দন পেলাম। অভিনন্দন শুধু কথার নয়, সেই সঙ্গে পেলাম ছোট উপঢৌকন এবং নানা ধরনের খাদ্য। অশেষ মাল্লার জন্মস্থান এটি। ভীষণ জনপ্রিয় তিনি এখানে। মাত্র ৩০ বছর আগেও এখানে বিদ্যুৎ ছিল না। ছিল না কোনো পথঘাট। পাহাড়ের পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে যেতে হতো। এত সুউচ্চ পাহাড়, রীতিমতো ভয় পাওয়া লাগে! গাড়ি পিছলে পড়লে বাঁচার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। জীবনের ১৮টি বছর বিদ্যুৎহীন, পথঘাটহীন এই গ্রামে অশেষ মাল্লা জীবন কাটিয়েছেন, বর্তমানে কাঠমান্ডুতে থাকলেও ধানকুটাকে ভোলেননি। অশেষ মাল্লার পক্ষে এতসব আয়োজন একা করা সম্ভব নয়। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কিছু নাট্যকার, অভিনেতা, সংগীতশিল্পী—যার নাম যথার্থই সর্বনাম। সঙ্গে অবশ্য আছে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। চমৎকার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। কিছু মানুষের সঙ্গে অনেক আনন্দদায়ক ঘটনাও হয়েছে। সেগুলো পরে কখনো লিখব।
গত ৫৪ বছরে আমরা মানুষকে মানবিক এবং গণতান্ত্রিক করতে পারিনি। চিন্তা নয়, একধরনের হুজুগ ও প্রতিশোধপরায়ণতা নিয়েই চলছি। অবশ্য এ কথাও ঠিক, রাষ্ট্রটাকেই তো গণতান্ত্রিক করতে পারিনি। ১৯৭১ সালে দুই লাখ নারী তাঁদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। কোনো কারণ নেই। সেসব ভুলে গিয়ে নৃশংস পাকিস্তানিদের মতো এখনো কোনো মানুষ একই আচরণ করবে, এসব ভাবলে আমাদের জাতি রাষ্ট্রটির চেতনা নিয়ে প্রশ্ন জাগে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
সম্প্রতি হঠাৎ করেই ধর্ষণ, শিশু নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো বেড়ে গেছে। ফেসবুক সয়লাব হয়ে যাচ্ছে ধর্ষণ আর ধর্ষণের খবরে। বাংলাদেশের সমাজে ধর্ষণ নতুন কিছু নয়। প্রতিকারহীন এই রোগটি বহু বছর ধরেই চলে আসছে। বর্তমানে অবশ্য ফেসবুকের কল্যাণে দ্রুত প্রকাশ পাচ্ছে। পাশাপাশি ফেসবুকেই যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে এমন সব অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রকাশ হচ্ছে, যা ধর্ষণের জন্য প্ররোচনা দিচ্ছে। এই অরক্ষিত ফেসবুকই হঠাৎ করে ধর্ষণ বাড়িয়ে ফেলল কি না—প্রশ্ন জাগতেই পারে। কিছু খ্যাতনামা চিকিৎসকও এই বিজ্ঞাপনগুলোতে অংশ নিয়ে থাকেন। ডাক্তাররা এই ধরনের বিজ্ঞাপনের কাজে কী করে ব্যবহৃত হন, তা ভাবতেই অবাক লাগে।
দেশের একজন বিখ্যাত অভিনেতা নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ছিলেন। একটি বিজ্ঞাপনে অংশ নেওয়ার পর তাঁর লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তী জীবনে অবশ্য তাঁকে আর ডাক্তারি পেশায় যেতে হয়নি। অভিনয় করেই সারা জীবন কাটিয়েছেন। আমাদের দেশে কোনো ধরনের বাধানিষেধ নেই। এসব দেখতে দেখতেই আমাদের সন্তানেরা বড় হয়েছে। আবার এসব নিয়ে বেশি কথা বললে হিতে বিপরীতও হয়েছে। যেমন মাদকাসক্তি নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে। ফলাফলে মাদকের বিস্তর হয়েছে। রাজনীতিবিদ, পুলিশ, এমনকি সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এর মধ্যে জড়িয়ে গেছেন। ধর্ষণ, মাদকাসক্তি—দুই-ই সমানতালে বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে ধর্মও জড়িয়ে গেছে। কার কত স্ত্রী ছিল, বর্তমানেও হুজুরদের কতজন স্ত্রী আছে, তা নিয়ে আলোচনার শেষ নেই।
ফেসবুকের মতো আরেকটি শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে ওয়াজ। কিছু হুজুর এমনভাবে (অশ্লীল) নারীদের অবস্থান বর্ণনা করেন, তাতে তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ সবার মধ্যেই একধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সেই উত্তেজনা ওই ফেসবুকের চিকিৎসকদের মতোই। এ ব্যাপারে যত দিন সমাজের প্রতিটি মানুষ রুখে না দাঁড়াবে, তত দিন এই সমস্যার সমাধান হবে না।
ধর্ষণসংক্রান্ত খবরগুলো পড়ে আমার সাম্প্রতিক নেপাল সফরের কথা মনে পড়ছে। নেপালকে সুদূর প্রবাস বলব না, অদূর প্রবাসই বটে। কারণ, উড়ে যেতে কেবল এক ঘণ্টা কয়েক মিনিট লাগে। আমরা একসময় নেপালের আন্দোলন, সশস্ত্র অবস্থা এসব দেখে ভাবতাম দেশটা বোধ হয় গোল্লায় গেল। কিন্তু ঘটনা হয়ে গেল উল্টো। দীর্ঘ সময় নেপালে রাজতন্ত্র উচ্ছেদের জন্য লড়াই হয়েছে। সেটা সফলও হয়েছে। আমরাও কয়েক মাস আগে ছাত্র-জনতার একটি সফল অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এই অভ্যুত্থানের সাত মাস যেতে না যেতেই নানা ধরনের সামাজিক অস্থিরতা আমরা দেখছি।
অথচ নেপালের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। সেখানে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ হয়েছে, তারপর সংসদ হয়েছে, চরম বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে, ঘন ঘন সরকার পতন হয়েছে। কিছুদিন আগে মাওপন্থী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। এখন কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) ক্ষমতায় আছে। এসব ইতিহাসের কথা। কিন্তু ওই অশান্ত পরিবেশ থেকে কী করে সেখানে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, যে দেশটিতে কখনো ঔপনিবেশিক শক্তি ঢুকতে পারেনি, ওই হিমালয় দেখেই ভয় পেয়েছে মোগল, পাঠান, ব্রিটিশ, ফরাসি সবাই? সুদীর্ঘ রাজতন্ত্রের শাসনকে পরাস্ত করে নিজেদের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব মিটিয়ে কেমন করে গণতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব হলো? আপাতদৃষ্টিতে মানুষগুলো নিরীহ হলেও ভেতরে বড়ই গণতান্ত্রিক। অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস তারা অর্জন করেছে।
কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রামের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ কেন গণতন্ত্র ও সামাজিক স্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না? আমার
মনে হয়, এর একটি বড় কারণ সংস্কৃতিমনস্কতা। বাংলাদেশে আমরা যথেষ্ট সংস্কৃতিমনস্ক হয়ে উঠতে পারিনি বলেই আমার ধারণা।
নেপাল সেটা পেরেছে। যদিও সেখানে ভারতীয় সিনেমা ও টেলিভিশন জনপ্রিয়, তার মধ্যেও এখানে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন সাতটি মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় হয়ে থাকে। মঞ্চগুলোও দর্শকপূর্ণ। এসব মঞ্চ বেসরকারি। কিন্তু বড় মঞ্চও আছে। সেখানেও প্রতিদিনই অভিনয় হয়। আবার ছোট ছোট প্রশিক্ষণের স্কুলও গড়ে উঠেছে।
কাঠমান্ডুর বাইরেও থিয়েটারের চর্চার একটা আয়োজন চলছে। কাঠমান্ডু থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে ইটাহারি বলে একটি প্রদেশের রাজধানীতে গিয়েছিলাম। ১৩টি দেশ থেকে আসা এবং স্থানীয় দলগুলো নিয়ে আমাদের একটি নাট্যোৎসব হলো। নতুন একটি হলের উদ্বোধনও হলো। হলটির নাম ম্যাট্রিকস। এর মালিক বিক্রম শ্রী একজন স্থপতি ও ভাস্কর। মঞ্চটি ঘিরে নানা গাছপালা ও ভাস্কর্য। তার মধ্যেই নির্মাণ করেছেন সেই ছোট মঞ্চ। মঞ্চটিতে আমার অভিনয় করে ভালোই লাগল। দর্শকদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন। শুনলাম তাঁর এবং অন্য মন্ত্রীদেরও ভালো লেগেছে আমার অভিনয়। পরদিনই তিনি আবার এলেন। এবং সবাইকে নানা উপহার দিলেন। এই উৎসবের মূল ব্যক্তি অশেষ মাল্লা এই আয়োজনে আমাদের সহযাত্রী। তাঁর স্ত্রী সাবিত্রী কক্ষপতিও সর্বক্ষণ আমাদের সঙ্গে আছেন।
এর পরের যাত্রা অর্থাৎ আরও পরের গন্তব্য ধানকুটা। চারদিকে পাহাড়। চমৎকার প্রকৃতি। মাঝখানে শহর। শহরকে ছোট উপত্যকা বলা চলে। সেই ছোট উপত্যকায় একটা বড় এলাকাজুড়ে সভা-সমিতি আর অনুষ্ঠানের জায়গা। সেখানেই আমরা এবং এলাকার শিল্পীরা সংগীত, নৃত্য, নাটক করলাম, সবাই অভিনয় করলাম। সেই সঙ্গে শহরবাসীর প্রাণঢালা অভিনন্দন পেলাম। অভিনন্দন শুধু কথার নয়, সেই সঙ্গে পেলাম ছোট উপঢৌকন এবং নানা ধরনের খাদ্য। অশেষ মাল্লার জন্মস্থান এটি। ভীষণ জনপ্রিয় তিনি এখানে। মাত্র ৩০ বছর আগেও এখানে বিদ্যুৎ ছিল না। ছিল না কোনো পথঘাট। পাহাড়ের পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে যেতে হতো। এত সুউচ্চ পাহাড়, রীতিমতো ভয় পাওয়া লাগে! গাড়ি পিছলে পড়লে বাঁচার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। জীবনের ১৮টি বছর বিদ্যুৎহীন, পথঘাটহীন এই গ্রামে অশেষ মাল্লা জীবন কাটিয়েছেন, বর্তমানে কাঠমান্ডুতে থাকলেও ধানকুটাকে ভোলেননি। অশেষ মাল্লার পক্ষে এতসব আয়োজন একা করা সম্ভব নয়। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কিছু নাট্যকার, অভিনেতা, সংগীতশিল্পী—যার নাম যথার্থই সর্বনাম। সঙ্গে অবশ্য আছে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। চমৎকার কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। কিছু মানুষের সঙ্গে অনেক আনন্দদায়ক ঘটনাও হয়েছে। সেগুলো পরে কখনো লিখব।
গত ৫৪ বছরে আমরা মানুষকে মানবিক এবং গণতান্ত্রিক করতে পারিনি। চিন্তা নয়, একধরনের হুজুগ ও প্রতিশোধপরায়ণতা নিয়েই চলছি। অবশ্য এ কথাও ঠিক, রাষ্ট্রটাকেই তো গণতান্ত্রিক করতে পারিনি। ১৯৭১ সালে দুই লাখ নারী তাঁদের সম্ভ্রম হারিয়েছেন। কোনো কারণ নেই। সেসব ভুলে গিয়ে নৃশংস পাকিস্তানিদের মতো এখনো কোনো মানুষ একই আচরণ করবে, এসব ভাবলে আমাদের জাতি রাষ্ট্রটির চেতনা নিয়ে প্রশ্ন জাগে।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ইতিহাসের নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। জনগণের সামনে আবারও এসেছে গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ। দেড় হাজার শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য ছাত্র-জনতার অঙ্গহানির বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা ২৪-এ রচিত হলো, তা ৫ আগস্টের কয়েক দিন আগেও ছিল প্রায়
৫ ঘণ্টা আগেহঠাৎ বা আকস্মিক একটি সরকারের পতন ঘটতে পারে। একটি আন্দোলন অভ্যুত্থানেও পরিণত হতে পারে। কিন্তু একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের স্বাধীনতা ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত হলেও এর পেছনে রয়েছে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। ১৯৪৭-এর মধ্য আগস্টে ষড়যন্ত্রের দেশভাগের মধ্য দি
১২ ঘণ্টা আগেঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল বন্ধের দিন শনিবার প্রাইভেট পড়তে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক শিশু। স্কুলেরই একজন সহকারী শিক্ষক এই অনাচারটি ঘটিয়েছেন।
১২ ঘণ্টা আগেমানুষ স্বভাবতই স্মৃতিকাতর। মার্চ মাস এলে আমিও স্বাভাবিকভাবেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। মনে পড়ে, একাত্তরের উত্তাল মার্চের দিনগুলোর কথা এবং পরের ৯ মাসের কথা। একাত্তরের গণহত্যা কেমন ভয়ংকর আর বীভৎস ছিল, তা আমাদের সবারই জানা। মেহেরুন্নেসা নামে এক নারী কবিতা লিখতেন। তাঁর কথা কেউ এখন আর মনে করে না। গণহত্যার
১ দিন আগে