বিভুরঞ্জন সরকার
পৃথিবীতে যে কত কারণে কত দিবসের জন্ম হয়েছে, তার সবগুলো সম্পর্কে এখনো হয়তো অনেকেরই জানা হয়নি। সংবাদপত্রে কাজ করার কারণে আমাদের এমন সব দিবস সম্পর্কেও জানতে হয়, যা না জানলে অন্যদের তেমন কোনো লাভ-লোকসান আছে বলে মনে হয় না। তবে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবসের কথা আলাদা। এই দিবস নানা কারণে মানবসমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল মানুষের মাথা গরম স্বভাবটা বুঝি বেড়েছে। সেটা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে, নাকি এর অন্য কোনো সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-মতাদর্শিক-আঞ্চলিক-বৈশ্বিক কারণ আছে, তা অবশ্য আমি ভেবে দেখিনি। তবে নানা বিষয়েই যে আমরা মানবসমাজ অসহিষ্ণু, অধৈর্য, বেপরোয়া হয়ে উঠছি, সেটা তো কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারব না। আমরা কেউ আর পরের কথা শুনতে চাই না, নিজের কথা প্রবলভাবে শোনাতে চাই। অন্যের বিশ্বাসের প্রতি সামান্য শ্রদ্ধাবোধ নেই, নিজের বিশ্বাস চাপিয়ে দিতে চাই দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে। সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির জায়গা দখল করছে উগ্রতা, অসহনশীলতা।
সম্ভবত এ জন্যই প্রতিবছর ১৬ নভেম্বর আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস পালনের ব্যবস্থা হয়েছে। ইউনেসকো ঘোষিত এই দিবস পালনের লক্ষ্য হচ্ছে বহুমুখী সমাজে সহনশীলতা শিক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীর সব মানুষের সুষম ও শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন নিশ্চিত করা।
ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়, ১৯৯৫ সাল থেকে ‘আন্তর্জাতিক সহনশীলতা বর্ষ’ উদযাপন করা হবে। ১৯৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর ইউনেসকোর ২৮তম অধিবেশনে ‘সহনশীলতার মৌলিক নীতি ঘোষণা’ গৃহীত এবং প্রতিবছরের ১৬ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ইউনেসকো মনে করে, মানবসমাজ স্বাভাবিকভাবেই বৈচিত্র্যময় এবং এই বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে ভিন্ন মত ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে মানুষের মধ্যে সহনশীল মনোভাব প্রয়োজন। সমাজে বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার উপস্থিতি সংঘাতের পথকে প্রশস্ত করে না। বরং সহনশীল পরিবেশ এই সামাজিক বাস্তবতাকে সঠিক পথে পরিচালনার মাধ্যমে সমাজের অন্তর্নিহিত সক্ষমতা বাড়ায়।
‘সহনশীলতার মৌলিক নীতি ঘোষণা’য় বলা হয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সহনশীলতাকে বাস্তবায়ন করা। ‘সহনশীলতা হচ্ছে সবার অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদাকে উন্নত করার অপরিহার্য নীতি।’
ইউনেসকো ঘোষণা দিয়েছে, তাই বছরের এক দিন সহনশীলতা দিবস পালন করা এখন অনেকটা যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। তবে ব্যাপকভাবে নয়। গণমাধ্যমেও এই দিবস নিয়ে তেমন লেখা চোখে পড়ে না। সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো কর্মসূচি নেওয়ার কথা শোনা যায় না। কারণ কি এই যে আমরা যথেষ্ট সহনশীল? আমাদের আর নতুন করে সহনশীলতাচর্চার প্রয়োজন নেই? আসলে আমরাও তো দিনদিন অতিমাত্রায় অসহনশীল হয়ে পড়ছি। আমরা ভিন্নমতকে পাত্তা দিই না। বিরোধিতা পছন্দ করি না। বিরোধী দলকে নির্বাচনে না আসতে যা যা করার তা করি বিপুল আনন্দে। শুধু কি তাই? এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তো এক দলের মধ্যেই মারামারি, খুনোখুনি হচ্ছে।
অবশ্য যেসব দেশ সহনশীলতা দিবস পালন করছে, সেসব দেশে সহনশীলতার চর্চা বাড়ছে তা কিন্তু জোর দিয়ে বলার মতো অবস্থা হয়নি। সহনশীলতা বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? এক কথায় বললে বলতে হয়, ধৈর্য না হারিয়ে, নিজের রাগ-ক্রোধ সংবরণ করে উদারতার উদাহরণ তৈরি করাই সহনশীলতার লক্ষণ। সব মানুষ একরকম নয়। সব মানুষের ধর্মবিশ্বাস এক নয়, সব মানুষের ভাষা এক নয়, সব মানুষের সংস্কৃতি এক নয়, সব মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও এক নয়। কিন্তু এই সব ভিন্নতা নিয়ে মানুষকে এক পৃথিবীতে, এক দেশে, আরও ছোট করে বললে এক পাড়ায় বসবাস করতে হয়। এই যে নানা ভিন্নতা নিয়ে পাশাপাশি বসবাস, তার জন্যই প্রয়োজন বিরোধের বদলে সমঝোতা। মানুষ নিজেদের ও সমাজের কল্যাণের জন্য পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। এই পারস্পরিক নির্ভরতাই তো দ্বন্দ্ব-বিরোধের পরিবর্তে একতাবদ্ধভাবে থাকতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করার কথা। কিন্তু তা না হয়ে মানুষ কেন বিরোধাত্মক মনোভাবসম্পন্ন হয়ে উঠল?
স্বার্থচিন্তা, অসংযত লোভ ও নানা ভেদজ্ঞানই হয়তো মানুষকে ক্রমাগত সংকীর্ণ ও অসংযত হওয়ার পথে ঠেলতে ঠেলতে এখন একটা চরম হানাহানি ও উগ্রতার বাতাবরণ তৈরি করেছে। সহনশীলতা একটি সামাজিক মূল্যবোধ। সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে সহনশীলতাও আর থাকতে পারে না। মানুষ ক্রমাগত জ্ঞানবিজ্ঞানে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশা মানুষকে পেয়ে বসেছে। মানুষ যতই অজানাকে জানছে, ততই তার মধ্যে অস্থিরতাও বাড়ছে। আরও জানার আগ্রহ মানুষের তৃপ্তি কেড়ে নিয়েছে। সারাক্ষণ তার মধ্যে চাওয়া-পাওয়ার তীব্রতা বাড়ছে। মনের মধ্যে চাপ বাড়ছে। আর এই ক্রমবর্ধমান চাপ মানুষের জীবনকে ধৈর্যহীন করে তুলছে। ধৈর্যের অভাব একদিকে মানুষের আত্মবিশ্বাস টলিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে তার সাহসও কমিয়ে দিচ্ছে। ও বুঝি আমাকে ছাড়িয়ে গেল, আমি বুঝি তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়লাম; ওর হলো, আমার হলো না—এমনতর সব ঘটনার তাড়া মানুষকে সহনশীল থাকতে দিচ্ছে না। বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসীরা পরস্পরকে শত্রু ভাবছে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে অবিশ্বাস বাড়ছে, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ বাড়ছে, সম্পদের বণ্টন সুষম হচ্ছে না—সবকিছুর মিলিত ফল হিংসা। হিংসা থেকেই উগ্রতা, জঙ্গিবাদের জন্ম।
আমি শ্রেষ্ঠ, আমার ধর্ম শ্রেষ্ঠ, আমার বিশ্বাসই চরম সত্য—এমন অন্ধত্ব দায়বদ্ধতার ঘাটতি তৈরি করছে। আমার সঙ্গে সবাইকে একমত হতে হবে, আমার কথা সবাইকে মেনে চলতে হবে, না হলেই গলা থেকে মাথা আলাদা করে দেওয়ার চিন্তা পৃথিবীকে শক্তিমত্তার মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। অন্যের সঙ্গে কিছু ভাগ করে নেওয়ার মনোভাবকে এখন একধরনের দুর্বলের চিত্তবিকার বলে উপহাস করা হয়। পৃথিবী নাকি শক্তের ভক্ত, নরমের যম! তাই শক্তিচর্চার অবাধ আয়োজন বিকারগ্রস্ত এক সময়ের মধ্যে এনে ফেলেছে মানবসভ্যতাকে।
যারা শক্তির জোরে বিশ্বাসী, তাদের যুক্তির জোরে আস্থাশীল করে তোলার চেষ্টা হতে পারে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবসের একটি লক্ষ্য। অন্যের বিশ্বাস, অধিকার, মর্যাদাকে স্বীকার করে নিতে হবে। নিয়ম মানায় অভ্যস্ত হতে হবে। একে অপরের বোকামি বা পাকামিকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঔদার্য শিখতে হবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর সব অসাধারণ কাজগুলো হয়েছে শক্তি দিয়ে যতটা না, তার চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধি দিয়ে। সহনশীলতাকে দুর্বলতা না ভেবে শক্তি হিসেবে ভাবতে হবে। এটা ধ্বংসের শক্তি নয়, সৃষ্টির শক্তি। ধর্ম রক্ষার জন্য ছুরি হাতে, বন্দুক হাতে না ছুটে সৌহার্দ্যের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর এর জন্য দরকার ধৈর্য, সহনশীলতা।
শেষ করি জালালউদ্দিন রুমিকে উদ্ধৃত করে: ‘ধৈর্য মানে শুধু বসে বসে অপেক্ষা করা নয়, ধৈর্য মানে ভবিষ্যৎকে দেখতে পাওয়া। ধৈর্য মানে কাঁটার দিকে তাকিয়ে গোলাপকে দেখা, রাতের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে দিনের আলোকে দেখা।’
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
পৃথিবীতে যে কত কারণে কত দিবসের জন্ম হয়েছে, তার সবগুলো সম্পর্কে এখনো হয়তো অনেকেরই জানা হয়নি। সংবাদপত্রে কাজ করার কারণে আমাদের এমন সব দিবস সম্পর্কেও জানতে হয়, যা না জানলে অন্যদের তেমন কোনো লাভ-লোকসান আছে বলে মনে হয় না। তবে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবসের কথা আলাদা। এই দিবস নানা কারণে মানবসমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল মানুষের মাথা গরম স্বভাবটা বুঝি বেড়েছে। সেটা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে, নাকি এর অন্য কোনো সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-মতাদর্শিক-আঞ্চলিক-বৈশ্বিক কারণ আছে, তা অবশ্য আমি ভেবে দেখিনি। তবে নানা বিষয়েই যে আমরা মানবসমাজ অসহিষ্ণু, অধৈর্য, বেপরোয়া হয়ে উঠছি, সেটা তো কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারব না। আমরা কেউ আর পরের কথা শুনতে চাই না, নিজের কথা প্রবলভাবে শোনাতে চাই। অন্যের বিশ্বাসের প্রতি সামান্য শ্রদ্ধাবোধ নেই, নিজের বিশ্বাস চাপিয়ে দিতে চাই দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে। সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির জায়গা দখল করছে উগ্রতা, অসহনশীলতা।
সম্ভবত এ জন্যই প্রতিবছর ১৬ নভেম্বর আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস পালনের ব্যবস্থা হয়েছে। ইউনেসকো ঘোষিত এই দিবস পালনের লক্ষ্য হচ্ছে বহুমুখী সমাজে সহনশীলতা শিক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীর সব মানুষের সুষম ও শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন নিশ্চিত করা।
ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়, ১৯৯৫ সাল থেকে ‘আন্তর্জাতিক সহনশীলতা বর্ষ’ উদযাপন করা হবে। ১৯৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর ইউনেসকোর ২৮তম অধিবেশনে ‘সহনশীলতার মৌলিক নীতি ঘোষণা’ গৃহীত এবং প্রতিবছরের ১৬ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ইউনেসকো মনে করে, মানবসমাজ স্বাভাবিকভাবেই বৈচিত্র্যময় এবং এই বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে ভিন্ন মত ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে মানুষের মধ্যে সহনশীল মনোভাব প্রয়োজন। সমাজে বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার উপস্থিতি সংঘাতের পথকে প্রশস্ত করে না। বরং সহনশীল পরিবেশ এই সামাজিক বাস্তবতাকে সঠিক পথে পরিচালনার মাধ্যমে সমাজের অন্তর্নিহিত সক্ষমতা বাড়ায়।
‘সহনশীলতার মৌলিক নীতি ঘোষণা’য় বলা হয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সহনশীলতাকে বাস্তবায়ন করা। ‘সহনশীলতা হচ্ছে সবার অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদাকে উন্নত করার অপরিহার্য নীতি।’
ইউনেসকো ঘোষণা দিয়েছে, তাই বছরের এক দিন সহনশীলতা দিবস পালন করা এখন অনেকটা যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। তবে ব্যাপকভাবে নয়। গণমাধ্যমেও এই দিবস নিয়ে তেমন লেখা চোখে পড়ে না। সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো কর্মসূচি নেওয়ার কথা শোনা যায় না। কারণ কি এই যে আমরা যথেষ্ট সহনশীল? আমাদের আর নতুন করে সহনশীলতাচর্চার প্রয়োজন নেই? আসলে আমরাও তো দিনদিন অতিমাত্রায় অসহনশীল হয়ে পড়ছি। আমরা ভিন্নমতকে পাত্তা দিই না। বিরোধিতা পছন্দ করি না। বিরোধী দলকে নির্বাচনে না আসতে যা যা করার তা করি বিপুল আনন্দে। শুধু কি তাই? এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তো এক দলের মধ্যেই মারামারি, খুনোখুনি হচ্ছে।
অবশ্য যেসব দেশ সহনশীলতা দিবস পালন করছে, সেসব দেশে সহনশীলতার চর্চা বাড়ছে তা কিন্তু জোর দিয়ে বলার মতো অবস্থা হয়নি। সহনশীলতা বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? এক কথায় বললে বলতে হয়, ধৈর্য না হারিয়ে, নিজের রাগ-ক্রোধ সংবরণ করে উদারতার উদাহরণ তৈরি করাই সহনশীলতার লক্ষণ। সব মানুষ একরকম নয়। সব মানুষের ধর্মবিশ্বাস এক নয়, সব মানুষের ভাষা এক নয়, সব মানুষের সংস্কৃতি এক নয়, সব মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও এক নয়। কিন্তু এই সব ভিন্নতা নিয়ে মানুষকে এক পৃথিবীতে, এক দেশে, আরও ছোট করে বললে এক পাড়ায় বসবাস করতে হয়। এই যে নানা ভিন্নতা নিয়ে পাশাপাশি বসবাস, তার জন্যই প্রয়োজন বিরোধের বদলে সমঝোতা। মানুষ নিজেদের ও সমাজের কল্যাণের জন্য পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। এই পারস্পরিক নির্ভরতাই তো দ্বন্দ্ব-বিরোধের পরিবর্তে একতাবদ্ধভাবে থাকতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করার কথা। কিন্তু তা না হয়ে মানুষ কেন বিরোধাত্মক মনোভাবসম্পন্ন হয়ে উঠল?
স্বার্থচিন্তা, অসংযত লোভ ও নানা ভেদজ্ঞানই হয়তো মানুষকে ক্রমাগত সংকীর্ণ ও অসংযত হওয়ার পথে ঠেলতে ঠেলতে এখন একটা চরম হানাহানি ও উগ্রতার বাতাবরণ তৈরি করেছে। সহনশীলতা একটি সামাজিক মূল্যবোধ। সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে সহনশীলতাও আর থাকতে পারে না। মানুষ ক্রমাগত জ্ঞানবিজ্ঞানে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশা মানুষকে পেয়ে বসেছে। মানুষ যতই অজানাকে জানছে, ততই তার মধ্যে অস্থিরতাও বাড়ছে। আরও জানার আগ্রহ মানুষের তৃপ্তি কেড়ে নিয়েছে। সারাক্ষণ তার মধ্যে চাওয়া-পাওয়ার তীব্রতা বাড়ছে। মনের মধ্যে চাপ বাড়ছে। আর এই ক্রমবর্ধমান চাপ মানুষের জীবনকে ধৈর্যহীন করে তুলছে। ধৈর্যের অভাব একদিকে মানুষের আত্মবিশ্বাস টলিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে তার সাহসও কমিয়ে দিচ্ছে। ও বুঝি আমাকে ছাড়িয়ে গেল, আমি বুঝি তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়লাম; ওর হলো, আমার হলো না—এমনতর সব ঘটনার তাড়া মানুষকে সহনশীল থাকতে দিচ্ছে না। বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসীরা পরস্পরকে শত্রু ভাবছে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে অবিশ্বাস বাড়ছে, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ বাড়ছে, সম্পদের বণ্টন সুষম হচ্ছে না—সবকিছুর মিলিত ফল হিংসা। হিংসা থেকেই উগ্রতা, জঙ্গিবাদের জন্ম।
আমি শ্রেষ্ঠ, আমার ধর্ম শ্রেষ্ঠ, আমার বিশ্বাসই চরম সত্য—এমন অন্ধত্ব দায়বদ্ধতার ঘাটতি তৈরি করছে। আমার সঙ্গে সবাইকে একমত হতে হবে, আমার কথা সবাইকে মেনে চলতে হবে, না হলেই গলা থেকে মাথা আলাদা করে দেওয়ার চিন্তা পৃথিবীকে শক্তিমত্তার মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। অন্যের সঙ্গে কিছু ভাগ করে নেওয়ার মনোভাবকে এখন একধরনের দুর্বলের চিত্তবিকার বলে উপহাস করা হয়। পৃথিবী নাকি শক্তের ভক্ত, নরমের যম! তাই শক্তিচর্চার অবাধ আয়োজন বিকারগ্রস্ত এক সময়ের মধ্যে এনে ফেলেছে মানবসভ্যতাকে।
যারা শক্তির জোরে বিশ্বাসী, তাদের যুক্তির জোরে আস্থাশীল করে তোলার চেষ্টা হতে পারে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবসের একটি লক্ষ্য। অন্যের বিশ্বাস, অধিকার, মর্যাদাকে স্বীকার করে নিতে হবে। নিয়ম মানায় অভ্যস্ত হতে হবে। একে অপরের বোকামি বা পাকামিকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঔদার্য শিখতে হবে। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর সব অসাধারণ কাজগুলো হয়েছে শক্তি দিয়ে যতটা না, তার চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধি দিয়ে। সহনশীলতাকে দুর্বলতা না ভেবে শক্তি হিসেবে ভাবতে হবে। এটা ধ্বংসের শক্তি নয়, সৃষ্টির শক্তি। ধর্ম রক্ষার জন্য ছুরি হাতে, বন্দুক হাতে না ছুটে সৌহার্দ্যের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর এর জন্য দরকার ধৈর্য, সহনশীলতা।
শেষ করি জালালউদ্দিন রুমিকে উদ্ধৃত করে: ‘ধৈর্য মানে শুধু বসে বসে অপেক্ষা করা নয়, ধৈর্য মানে ভবিষ্যৎকে দেখতে পাওয়া। ধৈর্য মানে কাঁটার দিকে তাকিয়ে গোলাপকে দেখা, রাতের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে দিনের আলোকে দেখা।’
লেখক: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
একদিন ভোরবেলা জাকারবার্গ লক্ষ করলেন যে পৃথিবীতে একটা ছোট্ট দেশে তাঁর সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হচ্ছে। সামনের ফ্লোরটায় দেখলেন দেশটা ছোট বটে, কিন্তু জনসংখ্যা বেশি। আর এই দেশের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুকে দেখতে পেলেন অসংখ্য বার্তা—সবই রাজনৈতিক এবং ছবিতে এ বিষয়ে বিপুল জনগণের
১০ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৩ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাদের নেতা-কর্মীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করে অসংখ্য আন্দোলনকারীকে হত্যা ও অনেকের জীবন বি
১০ ঘণ্টা আগেবেশ কিছুদিন ধরেই অস্থির হয়ে আছে মোহাম্মদপুর। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপর এই অঞ্চলে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে না থাকায় একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী বাড়িতে বাড়িতে ডাকাতি করতে উৎসাহী হয়ে উঠেছিল। এলাকাবাসী তখন রাত জেগে নিজেদের এলাকা পাহারা দিয়েছিলেন।
১০ ঘণ্টা আগে৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে সংস্কারের আহ্বান শোনা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরেই। সব ক্ষেত্রে। চলচ্চিত্রাঙ্গনেও এই সংস্কারের জোয়ার এসে লেগেছে। জোয়ারের আগে মূলধারার চলচ্চিত্রের লোকজন নানাভাবে জড়িত ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে। অভ্যুত্থান শুরুর পর তাঁদের মনে হয়েছে ভবিষ্যৎ বুঝি অন্ধকারে প্রবেশ করতে যাচ্
১ দিন আগে