মহিউদ্দিন খান মোহন
দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো—আমাদের দেশে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ। এর ভাবার্থ সহজবোধ্য। গোয়ালে বহুসংখ্যক গরুর মধ্যে দু-একটি দুষ্ট গরু থাকলে গোয়ালে নানা ঝামেলা হতে পারে। যে জন্য গোয়ালের পরিবেশ ভালো রাখতে গোয়ালকে দুষ্ট গরুশূন্য করতে চায় সবাই। দুষ্ট গরুর লক্ষণ কী? এ ধরনের গরু মনিবের শাসন মানতে চায় না। দড়ি ছিঁড়ে পালাতে চায়, শস্যখেত দেখলেই হামলে পড়ে, থামাতে গেলে শিং উঁচিয়ে গুঁতোতে আসে, অযথা পালের মধ্যে গুঁতোগুঁতি-হুড়োহুড়ি করে। এ ধরনের গরুকে পালন করা বড্ড কঠিন। তারপরও গেরস্তকে সেই কঠিন কাজটি করতে হয় আপন স্বার্থেই। বেয়াড়া গরুকে বাঁধতে হয় শক্ত দড়ি দিয়ে, আর লাঠি হাতে একজন রাখালকে থাকতে হয় প্রহরায়। সে সঙ্গে মুখে এঁটে দিতে হয় ‘ঠুসি’, যাতে অন্যের শস্য সাবাড় করতে না পারে। এই ঠুসি তৈরি হয় বাঁশ-বেত সহযোগে। কোথাও কোথাও এটা ‘কাবারি’ নামেও পরিচিত। এতসব ঝক্কিঝামেলা সত্ত্বেও কেউ দুষ্ট গরুকে গোয়াল থেকে বের করে দেন না। কেননা, গোয়াল শূন্য পড়ে থাকলে লাভ নেই।
দুষ্ট গরুর মতো সমাজে কিছু দুষ্ট মানুষও আছে; যারা সব সময় বদচিন্তায় নিমগ্ন থাকে। তাদের দুষ্টমিগুলো নিছক দুষ্টমি নয়, অন্যের অনিষ্টচিন্তাপ্রসূত বদকর্ম, যা ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর ক্ষতির কারণ হতে পারে। সমাজে এই শ্রেণির মানুষ ‘দুষ্টলোক’ ‘বা ‘বদলোক’ হিসেবেই পরিচিত।
এদের চিন্তাচেতনাজুড়ে থাকে মানুষের অনিষ্ট করা, সমাজে ভেজাল লাগানো, শুভ উদ্যোগে বিঘ্ন ঘটানো বা ভালো কাজ ভন্ডুল করে দেওয়া। এরা কিন্তু কথাবার্তায় খুব পটু হয়। যে কারণে মানুষকে সহজেই পটিয়ে ফেলতে পারে। ‘দুষ্টলোকের মিষ্টি কথায় কখনো ভুলিতে নাই’ কথাটির প্রচলন হয়েছে বোধ হয় এ জন্যই। তারপরও সহজ-সরল মানুষেরা এদের খপ্পরে পড়ে ঝামেলায় জড়িয়ে যায়, কখনোবা হয় সর্বস্বান্ত।
তেমনি একটি গল্প পড়েছিলাম ক্লাস সেভেনের দ্রুত পঠন বইয়ে। গল্পটি হলো, সৈয়দ আলী ও মেহের আলী নামে দুই বন্ধু শহর থেকে এসে গ্রামে পাশাপাশি বাড়ি করে বসবাস করছে। তাদের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ভালো লাগল না গ্রামের এক মাতবরের। সে নিয়মিত কানপড়া দিয়ে দুই বন্ধুর বন্ধুত্বে ফাটল ধরায়। একপর্যায়ে মাতবর কুবুদ্ধি দিয়ে সৈয়দ আলীকে দিয়ে তার গাছের ডাল কাটার অপরাধে মেহের আলীর বিরুদ্ধে মামলা করায়। আর মেহের আলীকে দিয়ে তার মুরগি মেরে ফেলার দায়ে সৈয়দ আলীর বিরুদ্ধে মামলা করায়। দুই বন্ধুকে মামলায় জড়িয়ে ফায়দা লুটতে থাকে মাতবর। মামলার খরচ চালানোর জন্য সে দুই বন্ধুকেই টাকা হাওলাত দিতে থাকে। কয়েক বছর পর মামলার রায় হলো- গাছ কাটার অপরাধে মেহের আলীর জরিমানা পাঁচ টাকা, আর মুরগি হত্যার অপরাধে সৈয়দ আলীর জরিমানা হয় দশ টাকা। আদালত থেকে বাড়ি ফিরে দুই বন্ধু মামলার লাভ-ক্ষতির হিসাব কষতে বসে দেখে মামলার খরচ চালাতে গিয়ে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। হাওলাত দেওয়ার নামে মাতবর তাদের বসতবাড়ি ছাড়া সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিয়েছে।
সমাজের মতো রাজনৈতিক অঙ্গনেও দুষ্টলোকের কমতি নেই, বরং খানিকটা বেশিই। চলতি সময়ে রাজনীতির মাঠে যেসব খেলোয়াড় দেখা যায়, তাদের বেশির ভাগই ‘ফাউল প্লেয়ার’—এমন একটি ধারণা জনমনে বদ্ধমূল হয়ে আছে। কেন এমন ধারণা, বোধকরি তার ব্যাখ্যা দরকার পড়ে না। তাদের কর্মকাণ্ডই এর মূল কারণ। আর এই দুষ্টলোকদের উৎপাত-উপদ্রব কতটা উচ্চগ্রামে উঠতে পারে, তার নজির তো স্থাপিত হয়েছে বিগত বছরগুলোতে। কোনো বিশেষ দল বা সরকারের সময়কে কটাক্ষ করে লাভ নেই। বরং বলা যায়, সব সরকারের আমলেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-পাতিনেতা কিংবা নেতার হাতাদের দোর্দণ্ড প্রতাপে নিরীহ মানুষকে থাকতে হয় তটস্থ হয়ে। বাধ্য হয় চোখ বন্ধ করে, মুখে কুলুপ এঁটে, অবনত মস্তকে মাটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দিন গুজরান করতে।
প্রতাপশালী এই লোকগুলো রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পরিচিত, তবে নিজেকে জাহির করেন নেতা হিসেবে। দল ক্ষমতায় থাকলে এরা একেকজন হয়ে ওঠেন এলাকার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। থানার ওসি, উপজেলার ইউএনও, জেলার ডিসি-এসপিরা হয়ে যান তাঁদের হুকুম-বরদার। ‘নেতা’ যা বলেন, ‘তথাস্ত’ বলে ওনারা তাই পালন করেন বিনা বাক্যব্যয়ে। গ্রাম্য হাটবাজার, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, বাস-টেম্পোস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, মাছের আড়ত, গরুর হাট ইজারা, সরকারি নির্মাণকাজের টেন্ডার সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করেন নেতা নামধারী ওই ‘প্যারাসাইট’ বা ‘পরজীবী’রা। এদের কাজকর্ম দলের জন্য ক্ষতিকর হলেও দলগুলো এদের নিয়ন্ত্রণে তেমন পদক্ষেপ নেয় না। কখনো গর্হিত অপরাধ করে ফেললে কারও কারও ঘাড়ের ওপর বহিষ্কারের খড়্গ নেমে আসে। তবে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে আবার তাঁরা ফিরে আসেন যথাস্থানে। কথিত এই নেতাদের বড় নেতারাও চটাতে চান না, বরং তোয়াজ করেন। কারণ, রাজনীতির ময়দানে তাঁরা যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কিংবা বজায় রাখতে, ভোটের সময় ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভরতে এরা অতীব প্রয়োজনীয়। ফলে এদের কদর কখনো কমে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্ভবত বিষয়টি সম্যক উপলব্ধি করে থাকবেন। তিনি হয়তো বুঝতে পারছেন, দলের মধ্যে থাকা দুষ্টলোকের কর্মকাণ্ড দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর সে জন্যই তিনি ওইসব দুষ্টলোককে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তৃণমূলের নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন। ১৮ ডিসেম্বর দেশের কয়েকটি জেলার নেতা-কর্মীদের কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘আপনার অধীনে অনেক নেতা-কর্মী থাকবে। তাদের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। পরিবারের দুষ্ট বাচ্চাদের যেমন টাইট দিয়ে রাখতে হয়, তেমনি দলের ভেতরও দুষ্টরা আছে, থাকতে পারে। আমাদের এই দুষ্টদের টাইট দিয়ে রাখতে হবে। তারা হয়তো দলের অনেক ক্ষতি করে ফেলেছে।’ (আজকের পত্রিকা, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪)। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের বক্তব্য নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী। কেননা, ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে আগামী নির্বাচনে তাঁর দল বিএনপির সরকার গঠনের বিষয়টি একরকম নিশ্চিত। তাই দল ক্ষমতায় যাওয়ার পর যাতে নেতা-কর্মীদের আচরণ-কাজকর্ম লাগামহীন হয়ে না পড়ে, তজ্জন্যই তিনি এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করে থাকবেন।
তবে প্রশ্ন হলো, নেতা-কর্মীরা তাঁর এ সতর্কবাণীকে কতটা আমলে নেবে। লক্ষ করা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির একশ্রেণির নেতা-কর্মী দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন সব কাজকর্ম করেছেন, যেগুলো পতিত আওয়ামী লীগ কর্মীদের অপকর্মের একেবারে ফটোকপি, যা জনমনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অবশ্য বিএনপির হাইকমান্ড শুরু থেকেই এসব অপকাণ্ডের বিষয়ে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি। কিন্তু তাতেও লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি। এখনো মাঝেমধ্যেই এ-সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে উঠে আসে।
দলের মধ্যে থাকা দুষ্টলোকদের ‘টাইট’ দেওয়ার কথা বলেছেন তারেক রহমান। তবে, এই টাইট শুধু তৃণমূলে দিলে চলবে না। দলের সর্বস্তরে এ নীতির প্রতিফলন ঘটাতে হবে। অবশ্য ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’ প্রবাদের শতভাগ বাস্তবায়ন রাজনৈতিক দলে সম্ভব নয়। কেননা, পশম বাছতে গিয়ে তো কম্বলের অস্তিত্ব বিপন্ন করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাই ‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন’ নীতি অবলম্বন করে অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি সৎ, আদর্শবান, দেশপ্রেমিক ও সমাজে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দলে জায়গা করে দিতে হবে। তাহলেই দলের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।
দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো—আমাদের দেশে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ। এর ভাবার্থ সহজবোধ্য। গোয়ালে বহুসংখ্যক গরুর মধ্যে দু-একটি দুষ্ট গরু থাকলে গোয়ালে নানা ঝামেলা হতে পারে। যে জন্য গোয়ালের পরিবেশ ভালো রাখতে গোয়ালকে দুষ্ট গরুশূন্য করতে চায় সবাই। দুষ্ট গরুর লক্ষণ কী? এ ধরনের গরু মনিবের শাসন মানতে চায় না। দড়ি ছিঁড়ে পালাতে চায়, শস্যখেত দেখলেই হামলে পড়ে, থামাতে গেলে শিং উঁচিয়ে গুঁতোতে আসে, অযথা পালের মধ্যে গুঁতোগুঁতি-হুড়োহুড়ি করে। এ ধরনের গরুকে পালন করা বড্ড কঠিন। তারপরও গেরস্তকে সেই কঠিন কাজটি করতে হয় আপন স্বার্থেই। বেয়াড়া গরুকে বাঁধতে হয় শক্ত দড়ি দিয়ে, আর লাঠি হাতে একজন রাখালকে থাকতে হয় প্রহরায়। সে সঙ্গে মুখে এঁটে দিতে হয় ‘ঠুসি’, যাতে অন্যের শস্য সাবাড় করতে না পারে। এই ঠুসি তৈরি হয় বাঁশ-বেত সহযোগে। কোথাও কোথাও এটা ‘কাবারি’ নামেও পরিচিত। এতসব ঝক্কিঝামেলা সত্ত্বেও কেউ দুষ্ট গরুকে গোয়াল থেকে বের করে দেন না। কেননা, গোয়াল শূন্য পড়ে থাকলে লাভ নেই।
দুষ্ট গরুর মতো সমাজে কিছু দুষ্ট মানুষও আছে; যারা সব সময় বদচিন্তায় নিমগ্ন থাকে। তাদের দুষ্টমিগুলো নিছক দুষ্টমি নয়, অন্যের অনিষ্টচিন্তাপ্রসূত বদকর্ম, যা ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর ক্ষতির কারণ হতে পারে। সমাজে এই শ্রেণির মানুষ ‘দুষ্টলোক’ ‘বা ‘বদলোক’ হিসেবেই পরিচিত।
এদের চিন্তাচেতনাজুড়ে থাকে মানুষের অনিষ্ট করা, সমাজে ভেজাল লাগানো, শুভ উদ্যোগে বিঘ্ন ঘটানো বা ভালো কাজ ভন্ডুল করে দেওয়া। এরা কিন্তু কথাবার্তায় খুব পটু হয়। যে কারণে মানুষকে সহজেই পটিয়ে ফেলতে পারে। ‘দুষ্টলোকের মিষ্টি কথায় কখনো ভুলিতে নাই’ কথাটির প্রচলন হয়েছে বোধ হয় এ জন্যই। তারপরও সহজ-সরল মানুষেরা এদের খপ্পরে পড়ে ঝামেলায় জড়িয়ে যায়, কখনোবা হয় সর্বস্বান্ত।
তেমনি একটি গল্প পড়েছিলাম ক্লাস সেভেনের দ্রুত পঠন বইয়ে। গল্পটি হলো, সৈয়দ আলী ও মেহের আলী নামে দুই বন্ধু শহর থেকে এসে গ্রামে পাশাপাশি বাড়ি করে বসবাস করছে। তাদের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ভালো লাগল না গ্রামের এক মাতবরের। সে নিয়মিত কানপড়া দিয়ে দুই বন্ধুর বন্ধুত্বে ফাটল ধরায়। একপর্যায়ে মাতবর কুবুদ্ধি দিয়ে সৈয়দ আলীকে দিয়ে তার গাছের ডাল কাটার অপরাধে মেহের আলীর বিরুদ্ধে মামলা করায়। আর মেহের আলীকে দিয়ে তার মুরগি মেরে ফেলার দায়ে সৈয়দ আলীর বিরুদ্ধে মামলা করায়। দুই বন্ধুকে মামলায় জড়িয়ে ফায়দা লুটতে থাকে মাতবর। মামলার খরচ চালানোর জন্য সে দুই বন্ধুকেই টাকা হাওলাত দিতে থাকে। কয়েক বছর পর মামলার রায় হলো- গাছ কাটার অপরাধে মেহের আলীর জরিমানা পাঁচ টাকা, আর মুরগি হত্যার অপরাধে সৈয়দ আলীর জরিমানা হয় দশ টাকা। আদালত থেকে বাড়ি ফিরে দুই বন্ধু মামলার লাভ-ক্ষতির হিসাব কষতে বসে দেখে মামলার খরচ চালাতে গিয়ে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। হাওলাত দেওয়ার নামে মাতবর তাদের বসতবাড়ি ছাড়া সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিয়েছে।
সমাজের মতো রাজনৈতিক অঙ্গনেও দুষ্টলোকের কমতি নেই, বরং খানিকটা বেশিই। চলতি সময়ে রাজনীতির মাঠে যেসব খেলোয়াড় দেখা যায়, তাদের বেশির ভাগই ‘ফাউল প্লেয়ার’—এমন একটি ধারণা জনমনে বদ্ধমূল হয়ে আছে। কেন এমন ধারণা, বোধকরি তার ব্যাখ্যা দরকার পড়ে না। তাদের কর্মকাণ্ডই এর মূল কারণ। আর এই দুষ্টলোকদের উৎপাত-উপদ্রব কতটা উচ্চগ্রামে উঠতে পারে, তার নজির তো স্থাপিত হয়েছে বিগত বছরগুলোতে। কোনো বিশেষ দল বা সরকারের সময়কে কটাক্ষ করে লাভ নেই। বরং বলা যায়, সব সরকারের আমলেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-পাতিনেতা কিংবা নেতার হাতাদের দোর্দণ্ড প্রতাপে নিরীহ মানুষকে থাকতে হয় তটস্থ হয়ে। বাধ্য হয় চোখ বন্ধ করে, মুখে কুলুপ এঁটে, অবনত মস্তকে মাটির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে দিন গুজরান করতে।
প্রতাপশালী এই লোকগুলো রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পরিচিত, তবে নিজেকে জাহির করেন নেতা হিসেবে। দল ক্ষমতায় থাকলে এরা একেকজন হয়ে ওঠেন এলাকার দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। থানার ওসি, উপজেলার ইউএনও, জেলার ডিসি-এসপিরা হয়ে যান তাঁদের হুকুম-বরদার। ‘নেতা’ যা বলেন, ‘তথাস্ত’ বলে ওনারা তাই পালন করেন বিনা বাক্যব্যয়ে। গ্রাম্য হাটবাজার, লঞ্চঘাট, ফেরিঘাট, বাস-টেম্পোস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, মাছের আড়ত, গরুর হাট ইজারা, সরকারি নির্মাণকাজের টেন্ডার সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করেন নেতা নামধারী ওই ‘প্যারাসাইট’ বা ‘পরজীবী’রা। এদের কাজকর্ম দলের জন্য ক্ষতিকর হলেও দলগুলো এদের নিয়ন্ত্রণে তেমন পদক্ষেপ নেয় না। কখনো গর্হিত অপরাধ করে ফেললে কারও কারও ঘাড়ের ওপর বহিষ্কারের খড়্গ নেমে আসে। তবে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে আবার তাঁরা ফিরে আসেন যথাস্থানে। কথিত এই নেতাদের বড় নেতারাও চটাতে চান না, বরং তোয়াজ করেন। কারণ, রাজনীতির ময়দানে তাঁরা যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কিংবা বজায় রাখতে, ভোটের সময় ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভরতে এরা অতীব প্রয়োজনীয়। ফলে এদের কদর কখনো কমে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্ভবত বিষয়টি সম্যক উপলব্ধি করে থাকবেন। তিনি হয়তো বুঝতে পারছেন, দলের মধ্যে থাকা দুষ্টলোকের কর্মকাণ্ড দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর সে জন্যই তিনি ওইসব দুষ্টলোককে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তৃণমূলের নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন। ১৮ ডিসেম্বর দেশের কয়েকটি জেলার নেতা-কর্মীদের কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘আপনার অধীনে অনেক নেতা-কর্মী থাকবে। তাদের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। পরিবারের দুষ্ট বাচ্চাদের যেমন টাইট দিয়ে রাখতে হয়, তেমনি দলের ভেতরও দুষ্টরা আছে, থাকতে পারে। আমাদের এই দুষ্টদের টাইট দিয়ে রাখতে হবে। তারা হয়তো দলের অনেক ক্ষতি করে ফেলেছে।’ (আজকের পত্রিকা, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪)। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের বক্তব্য নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী। কেননা, ব্যতিক্রম কিছু না ঘটলে আগামী নির্বাচনে তাঁর দল বিএনপির সরকার গঠনের বিষয়টি একরকম নিশ্চিত। তাই দল ক্ষমতায় যাওয়ার পর যাতে নেতা-কর্মীদের আচরণ-কাজকর্ম লাগামহীন হয়ে না পড়ে, তজ্জন্যই তিনি এ সতর্কবাণী উচ্চারণ করে থাকবেন।
তবে প্রশ্ন হলো, নেতা-কর্মীরা তাঁর এ সতর্কবাণীকে কতটা আমলে নেবে। লক্ষ করা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির একশ্রেণির নেতা-কর্মী দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন সব কাজকর্ম করেছেন, যেগুলো পতিত আওয়ামী লীগ কর্মীদের অপকর্মের একেবারে ফটোকপি, যা জনমনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অবশ্য বিএনপির হাইকমান্ড শুরু থেকেই এসব অপকাণ্ডের বিষয়ে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে দলটি। কিন্তু তাতেও লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি। এখনো মাঝেমধ্যেই এ-সংক্রান্ত খবর গণমাধ্যমে উঠে আসে।
দলের মধ্যে থাকা দুষ্টলোকদের ‘টাইট’ দেওয়ার কথা বলেছেন তারেক রহমান। তবে, এই টাইট শুধু তৃণমূলে দিলে চলবে না। দলের সর্বস্তরে এ নীতির প্রতিফলন ঘটাতে হবে। অবশ্য ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’ প্রবাদের শতভাগ বাস্তবায়ন রাজনৈতিক দলে সম্ভব নয়। কেননা, পশম বাছতে গিয়ে তো কম্বলের অস্তিত্ব বিপন্ন করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাই ‘দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন’ নীতি অবলম্বন করে অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি সৎ, আদর্শবান, দেশপ্রেমিক ও সমাজে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দলে জায়গা করে দিতে হবে। তাহলেই দলের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।
প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাবনিকাশ করলেই অগ্রগতি আর অবনতির খতিয়ান পাওয়া যায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ২০২৪ সালের শেষপাদে এসে কী পেল, আর নতুন বছরে কী-ইবা পেতে যাচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করছে এ দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের এগিয়ে যাওয়া। এ বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে দেড় দশকের পুরোনো ও স্বৈরাচারী শাসন
১৯ ঘণ্টা আগেবিশ্বের মানচিত্রে ছোট্ট একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পরিচিতি বিশ্ববাসীর কাছে নানান কারণে গুরুত্বপূর্ণ। ভৌগোলিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কোনো দিক থেকেই এই দেশকে এখন অবহেলা করার অবকাশ নেই। এর অন্যতম যৌক্তিক কারণ হচ্ছে, এ দেশের বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম জনসংখ্যা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেখানে চ
১৯ ঘণ্টা আগে‘বাংলাদেশের বাজারে ভেজাল পণ্যের প্রভাব এবং জনস্বাস্থ্যে এর ক্ষতিকর দিক’ নিয়ে সম্প্রতি ঢাকায় একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হলো। কিছু জানা তথ্য, কিছু অজানা তথ্য প্রকাশিত হলো এই সেমিনারে। ভেজাল পণ্য রোধ করার জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় যে সচেতনতা, সে কথাও ব্যক্ত করা হলো বারবার। এখানেই সবচেয়ে বড় গেরোটা রয়েছে। এই সচে
১৯ ঘণ্টা আগেবড়দিনের সপ্তাহ চলছে। গতকাল সারা বিশ্বেই পালিত হয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব। আমাদের দেশেও শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আনন্দের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল বড়দিন। আমারও বেশ কয়েকবার সৌভাগ্য হয়েছে একবারে গ্রামে হাজার হাজার খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীর মাঝে বড়দিনের উৎসবে অংশ নেওয়ার। এর মধ্যে রয়েছে বরি
২ দিন আগে