জুবায়ের হাসান
১৬ নভেম্বর কতগুলো ভারতীয় মিডিয়া একযোগে খবর ছেপেছে, ‘ইন্ডিয়ান আমেরিকানস টু আর্জ ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর স্যাংশন অ্যাগেইনস্ট বাংলাদেশ’। অর্থাৎ ভারতীয় আমেরিকানরা ট্রাম্প প্রশাসনকে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানাবেন। একসঙ্গে অনেকগুলো ভারতীয় মিডিয়ায় এমন খবর প্রকাশিত হওয়ায় সহজেই অনুমান করা যায় যে এটা একটি সিন্ডিকেট নিউজ হাউস থেকে বিতরণ করা খবর। বস্তুত সব হারানো আওয়ামী লীগ ও তার বিদেশি মিত্ররা যে যেভাবে পারছে সেভাবেই নিজেরা নিজেদের মনকে চাঙা করতে চাইছে।
ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের মধ্য থেকে কয়েকজন লোক ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় থেকেই তাঁর পেছনে লেগে থেকে বাংলাদেশবিরোধী কী করা যায়, সেই চেষ্টায় লিপ্ত থেকেছেন। তাঁদের চেষ্টার ফসল হিসেবে গত ৩১ অক্টোবর ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকান হিন্দুদের ভোট বাগিয়ে নিতে দিওয়ালি উদ্যাপন অনুষ্ঠানে একটি টুইট করেন। সেখানে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি বাংলাদেশের হিন্দু, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত সহিংস হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।’
ট্রাম্পের এ টুইটের পরদিন ভারতের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পত্রপত্রিকা সংবাদ শিরোনাম করে, ‘ট্রাম্প কনডেমস ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট মাইনরিটিস ইন বাংলাদেশ’। আর এ খবর বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মনমরা আওয়ামী মন চাঙা হয়ে ওঠে। এরপর সে মনে আনন্দের ভাটা পড়ে। তবে ৫ নভেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ায় আবার সে মন চাঙা হয়। আবার ভাটা পড়ে। এভাবে চলতে চলতে এবার সেই মনভাঙা আওয়ামী লীগকে চাঙা রাখতে প্রকাশিত হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করার চেষ্টার ওই চমকানো সংবাদ। খবরে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর সে দেশের ইন্ডিয়ান আমেরিকান কমিউনিটির মেম্বাররা তাঁর কাছে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য নালিশ করবেন। তাঁরা ট্রাম্পকে অবগত করবেন যে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হচ্ছে এবং তাদের মন্দির ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ইন্ডিয়ান আমেরিকান কমিউনিটির ডা. ভরত বাড়ই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি বাংলাদেশের ওপর মার্কিন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী এবং তাঁদের কমিউনিটি এ কার্য সাধনে সারা দেশে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ডা. ভরত তাঁর আশাবাদের কারণ হিসেবে বলেন, যেহেতু ট্রাম্প ইতিপূর্বে তাঁর নির্বাচনী প্রচারকালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করে টুইট করেছিলেন, তাই তিনি এবার অবশ্যই পদক্ষেপ নেবেন।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিগত চার বছরে রাশিয়া-চীনসহ আরও অনেক দেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। তিনি নিখুঁত যাচাই-বাছাইপূর্বক সেসব দেশের বিভিন্ন পণ্যের ওপর আমদানি শুল্কহার বাড়িয়েছেন। সেসব দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানকে করেছেন কালো তালিকাভুক্ত। এমতাবস্থায় নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসে সেই নিষেধাজ্ঞার হার আরও কতটা বৃদ্ধি করবেন, তা দেখার জন্য খানিকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, জো বাইডেন ইতিমধ্যেই এ কাজের অনেকটাই সেরে ফেলেছেন। এখন ট্রাম্পকে দেখতে হবে আর কোথাও ফাঁক আছে কি না, নতুন আর কী করা যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর গত মেয়াদে (২০১৭-২০২১ সালে) চীনের ওপর যতটা বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন, জো বাইডেন তাঁর শাসনামলে তা শুধু বহালই রাখেননি, বরং কতক ক্ষেত্রে আরও বৃদ্ধি করেন।
মজার ব্যাপার হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর আরও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে তা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্য রপ্তানির বাজারকে আরও সম্প্রসারিত করবে। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রকে তো কোনো না কোনো দেশ থেকে চীনা পণ্যের সমমূল্যেই আমদানি করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ গাঁটের পয়সা খরচ করে বাড়তি মূল্যে পণ্য কিনতে চাইবে না। এ ক্ষেত্রে চীনা পণ্যের বিকল্প হলো বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্য। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চয়ই চাইবেন না, সুলভ মূল্যে পণ্য আমদানির বিকল্প তৈরি না করে শুধু চোখ বন্ধ রেখে চীনা পণ্যের ওপর শুল্কহার ক্রমাগত বাড়িয়ে দেওয়া। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প এটাও চাইবেন না যে কথায় কথায় নানা দেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্ভিক্ষের অবস্থায় ফেলে দেওয়া। সুতরাং ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শুল্কহার বাড়িয়ে দিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে ভারতও একটা সুযোগ পাবে। তাই ব্যবসায়িকভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। তাই বাংলাদেশকে এই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে ফেলার উদ্দেশ্যেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের এ বায়বীয় ইস্যু টেনে আনা হয়েছে।
ভোটের আগে ভোটারের মন জয়ের আশায় অনেক কথার চয়নিকা রচিত হয়। যাকে বলা হয় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। কিন্তু জিতে যাওয়ার পর সেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বলা কথাগুলোর সংশোধনী পর্ব শুরু হয়। ফলে বাদ পড়ে যায় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অনেক কিছুই। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সাবেক মার্কিন ঝানু কূটনীতিবিদ হেনরি কিসিঞ্জার তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। অতঃপর দর্শকদের কৌতূহল মেটাতে হেনরি কিসিঞ্জার যান সিএনএনের অফিসে। হোস্ট ফরিদ জাকারিয়া জানতে চান, কেমন ট্রাম্পকে তিনি দেখলেন? অর্থাৎ ট্রাম্প সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন কী? হেনরি কিসিঞ্জার উত্তর দেন, এমন ট্রাম্পকে তিনি দেখে এলেন, যিনি নানা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার অবস্থা থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিতে সবচেয়ে বাস্তব উত্তম নীতি ও কৌশল (পলিসি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি) কী হতে পারে, তা খুঁজছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙা করতে সংরক্ষণবাদী নীতি গ্রহণের পক্ষপাতী। এটি তাঁর অ্যান্টি গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়নবিরোধী অবস্থান। তিনি ২০১৭ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নর্থ আমেরিকা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (নাফটা) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প নাফটা ভেঙে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা—এই তিন দেশের একটি বিশেষ বাণিজ্যিক জোট গড়ে তোলেন। আর ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ ভেঙে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে গড়ে তোলে বিশেষ বাণিজ্যিক জোট।
উল্লেখ্য, ১২টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ মুক্তবাণিজ্য জোট। টিপিপির এই ১২টি দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনের মোট পরিমাণ ছিল বিশ্ববাণিজ্যের ৪০ শতাংশ। কিন্তু এ ধরনের অবাধ বাণিজ্য জোট যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পুরোপুরি অনুকূল না হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প তা থেকে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু তাতে যুক্তরাষ্ট্র পড়ে আরেক বিপদে। চীন এখন এই জোটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্র বাইরে থেকে জোট সদস্যদের চাপ দিয়ে যাচ্ছে, যেন চীনকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করা হয়।
সুতরাং বাণিজ্যিক জোট গড়ে তোলা কিংবা তা ভেঙে দেওয়া, কোনো দেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা অথবা কোনো দেশকে বিশেষ বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়া, এসব কাজ বর্তমান দুনিয়ায় আর সহজসাধ্য নয়। এটা ঠিক যে চীনের উত্থান ঠেকাতে ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করবেন। এতে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ছোট ছোট দেশগুলোর গুরুত্ব বাড়বে। যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হবে। তবে চীনও বসে থাকবে না। ফলে বিশ্ববাণিজ্য ও রাজনীতিতে যা কিছু ঘটবে তাতে বাংলাদেশের জন্য দর-কষাকষির এক চমৎকার ক্ষেত্র তৈরি হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শুরু করা সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধকে মোকাবিলার জন্য চীন প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। যার প্রমাণ পাওয়া গেল ১৬ নভেম্বর ২০২৪-এ পেরুর লিমায় অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (অ্যাপেক) সম্মেলনে। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সাইড লাইনে বৈঠক করলেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে। তাঁরা দুজনে বিভেদ ভুলে নতুন যুগের চাহিদা পূরণে গঠনমূলক ও স্থিতিশীল সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য আরও বৈঠক চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। অতএব বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। শুধু দর-কষাকষি করাটা জানতে হবে।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
১৬ নভেম্বর কতগুলো ভারতীয় মিডিয়া একযোগে খবর ছেপেছে, ‘ইন্ডিয়ান আমেরিকানস টু আর্জ ট্রাম্প অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফর স্যাংশন অ্যাগেইনস্ট বাংলাদেশ’। অর্থাৎ ভারতীয় আমেরিকানরা ট্রাম্প প্রশাসনকে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানাবেন। একসঙ্গে অনেকগুলো ভারতীয় মিডিয়ায় এমন খবর প্রকাশিত হওয়ায় সহজেই অনুমান করা যায় যে এটা একটি সিন্ডিকেট নিউজ হাউস থেকে বিতরণ করা খবর। বস্তুত সব হারানো আওয়ামী লীগ ও তার বিদেশি মিত্ররা যে যেভাবে পারছে সেভাবেই নিজেরা নিজেদের মনকে চাঙা করতে চাইছে।
ইন্ডিয়ান আমেরিকানদের মধ্য থেকে কয়েকজন লোক ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় থেকেই তাঁর পেছনে লেগে থেকে বাংলাদেশবিরোধী কী করা যায়, সেই চেষ্টায় লিপ্ত থেকেছেন। তাঁদের চেষ্টার ফসল হিসেবে গত ৩১ অক্টোবর ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকান হিন্দুদের ভোট বাগিয়ে নিতে দিওয়ালি উদ্যাপন অনুষ্ঠানে একটি টুইট করেন। সেখানে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি বাংলাদেশের হিন্দু, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত সহিংস হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।’
ট্রাম্পের এ টুইটের পরদিন ভারতের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পত্রপত্রিকা সংবাদ শিরোনাম করে, ‘ট্রাম্প কনডেমস ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট মাইনরিটিস ইন বাংলাদেশ’। আর এ খবর বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মনমরা আওয়ামী মন চাঙা হয়ে ওঠে। এরপর সে মনে আনন্দের ভাটা পড়ে। তবে ৫ নভেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ায় আবার সে মন চাঙা হয়। আবার ভাটা পড়ে। এভাবে চলতে চলতে এবার সেই মনভাঙা আওয়ামী লীগকে চাঙা রাখতে প্রকাশিত হয়েছে, বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করার চেষ্টার ওই চমকানো সংবাদ। খবরে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর সে দেশের ইন্ডিয়ান আমেরিকান কমিউনিটির মেম্বাররা তাঁর কাছে বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য নালিশ করবেন। তাঁরা ট্রাম্পকে অবগত করবেন যে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হচ্ছে এবং তাদের মন্দির ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ইন্ডিয়ান আমেরিকান কমিউনিটির ডা. ভরত বাড়ই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি বাংলাদেশের ওপর মার্কিন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী এবং তাঁদের কমিউনিটি এ কার্য সাধনে সারা দেশে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ডা. ভরত তাঁর আশাবাদের কারণ হিসেবে বলেন, যেহেতু ট্রাম্প ইতিপূর্বে তাঁর নির্বাচনী প্রচারকালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করে টুইট করেছিলেন, তাই তিনি এবার অবশ্যই পদক্ষেপ নেবেন।
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিগত চার বছরে রাশিয়া-চীনসহ আরও অনেক দেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। তিনি নিখুঁত যাচাই-বাছাইপূর্বক সেসব দেশের বিভিন্ন পণ্যের ওপর আমদানি শুল্কহার বাড়িয়েছেন। সেসব দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানকে করেছেন কালো তালিকাভুক্ত। এমতাবস্থায় নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসে সেই নিষেধাজ্ঞার হার আরও কতটা বৃদ্ধি করবেন, তা দেখার জন্য খানিকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, জো বাইডেন ইতিমধ্যেই এ কাজের অনেকটাই সেরে ফেলেছেন। এখন ট্রাম্পকে দেখতে হবে আর কোথাও ফাঁক আছে কি না, নতুন আর কী করা যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর গত মেয়াদে (২০১৭-২০২১ সালে) চীনের ওপর যতটা বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন, জো বাইডেন তাঁর শাসনামলে তা শুধু বহালই রাখেননি, বরং কতক ক্ষেত্রে আরও বৃদ্ধি করেন।
মজার ব্যাপার হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর আরও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে তা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্য রপ্তানির বাজারকে আরও সম্প্রসারিত করবে। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রকে তো কোনো না কোনো দেশ থেকে চীনা পণ্যের সমমূল্যেই আমদানি করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ গাঁটের পয়সা খরচ করে বাড়তি মূল্যে পণ্য কিনতে চাইবে না। এ ক্ষেত্রে চীনা পণ্যের বিকল্প হলো বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের পণ্য। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চয়ই চাইবেন না, সুলভ মূল্যে পণ্য আমদানির বিকল্প তৈরি না করে শুধু চোখ বন্ধ রেখে চীনা পণ্যের ওপর শুল্কহার ক্রমাগত বাড়িয়ে দেওয়া। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প এটাও চাইবেন না যে কথায় কথায় নানা দেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে দুর্ভিক্ষের অবস্থায় ফেলে দেওয়া। সুতরাং ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শুল্কহার বাড়িয়ে দিলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাড়বে। তবে এ ক্ষেত্রে ভারতও একটা সুযোগ পাবে। তাই ব্যবসায়িকভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। তাই বাংলাদেশকে এই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে ফেলার উদ্দেশ্যেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের এ বায়বীয় ইস্যু টেনে আনা হয়েছে।
ভোটের আগে ভোটারের মন জয়ের আশায় অনেক কথার চয়নিকা রচিত হয়। যাকে বলা হয় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। কিন্তু জিতে যাওয়ার পর সেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বলা কথাগুলোর সংশোধনী পর্ব শুরু হয়। ফলে বাদ পড়ে যায় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অনেক কিছুই। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সাবেক মার্কিন ঝানু কূটনীতিবিদ হেনরি কিসিঞ্জার তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। অতঃপর দর্শকদের কৌতূহল মেটাতে হেনরি কিসিঞ্জার যান সিএনএনের অফিসে। হোস্ট ফরিদ জাকারিয়া জানতে চান, কেমন ট্রাম্পকে তিনি দেখলেন? অর্থাৎ ট্রাম্প সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন কী? হেনরি কিসিঞ্জার উত্তর দেন, এমন ট্রাম্পকে তিনি দেখে এলেন, যিনি নানা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার অবস্থা থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দিতে সবচেয়ে বাস্তব উত্তম নীতি ও কৌশল (পলিসি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি) কী হতে পারে, তা খুঁজছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন অর্থনীতিকে চাঙা করতে সংরক্ষণবাদী নীতি গ্রহণের পক্ষপাতী। এটি তাঁর অ্যান্টি গ্লোবালাইজেশন বা বিশ্বায়নবিরোধী অবস্থান। তিনি ২০১৭ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই নর্থ আমেরিকা ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (নাফটা) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প নাফটা ভেঙে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা—এই তিন দেশের একটি বিশেষ বাণিজ্যিক জোট গড়ে তোলেন। আর ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ ভেঙে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে গড়ে তোলে বিশেষ বাণিজ্যিক জোট।
উল্লেখ্য, ১২টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ মুক্তবাণিজ্য জোট। টিপিপির এই ১২টি দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনের মোট পরিমাণ ছিল বিশ্ববাণিজ্যের ৪০ শতাংশ। কিন্তু এ ধরনের অবাধ বাণিজ্য জোট যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পুরোপুরি অনুকূল না হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প তা থেকে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু তাতে যুক্তরাষ্ট্র পড়ে আরেক বিপদে। চীন এখন এই জোটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্র বাইরে থেকে জোট সদস্যদের চাপ দিয়ে যাচ্ছে, যেন চীনকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করা হয়।
সুতরাং বাণিজ্যিক জোট গড়ে তোলা কিংবা তা ভেঙে দেওয়া, কোনো দেশের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা অথবা কোনো দেশকে বিশেষ বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়া, এসব কাজ বর্তমান দুনিয়ায় আর সহজসাধ্য নয়। এটা ঠিক যে চীনের উত্থান ঠেকাতে ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করবেন। এতে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ছোট ছোট দেশগুলোর গুরুত্ব বাড়বে। যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ হবে। তবে চীনও বসে থাকবে না। ফলে বিশ্ববাণিজ্য ও রাজনীতিতে যা কিছু ঘটবে তাতে বাংলাদেশের জন্য দর-কষাকষির এক চমৎকার ক্ষেত্র তৈরি হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শুরু করা সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধকে মোকাবিলার জন্য চীন প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। যার প্রমাণ পাওয়া গেল ১৬ নভেম্বর ২০২৪-এ পেরুর লিমায় অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (অ্যাপেক) সম্মেলনে। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সাইড লাইনে বৈঠক করলেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে। তাঁরা দুজনে বিভেদ ভুলে নতুন যুগের চাহিদা পূরণে গঠনমূলক ও স্থিতিশীল সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য আরও বৈঠক চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। অতএব বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। শুধু দর-কষাকষি করাটা জানতে হবে।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
আমার যখন জন্ম হয়, সেই বছরই পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেছেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। ক্ষুব্ধ স্বদেশ তখন আন্দোলনে ফেটে পড়েছিল। তৃণমূল থেকে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল।
৬ ঘণ্টা আগেসরকার পরিবর্তনের ঘটনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কিছু প্রতারক চক্র দুস্থ, দরিদ্র ও অসহায় মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেযেকোনো সামাজিক বিষয় বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি, তখন কখনো কখনো তত্ত্ব দিয়ে তার ব্যাখ্যা করি, আবার কখনো কখনো বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সে বিষয় বা সমস্যার বিশ্লেষণ করি। তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা...
১ দিন আগেগাজার সবচেয়ে সুপরিচিত ফুটবল স্টেডিয়ামটি এখন বিশৃঙ্খলায় ভরা। মাঠ ও বসার জায়গায় বাস্তুচ্যুত লোকের বন্যা। সবার পিঠে ব্যাগ আর কিছু কাপড়। কেউ অসুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করছেন বা আহত আত্মীয়দের নিয়ে চলেছেন। আবার কেউ কেউ একা হাঁটছেন, খালি পায়েই হেঁটে চলেছেন।
১ দিন আগে