শাইখ সিরাজ
শেষ হতে চলল আরও একটি বছর, ২০২৪। বাংলাদেশ তো বটেই, সারা পৃথিবীতে নানা পটপরিবর্তন ঘটেছে। নতুন প্রেক্ষাপটে নানা পরিবর্তনে রচিত হচ্ছে অর্থনৈতিক পরিমণ্ডল। যেকোনো পরিবর্তন কিংবা সংকটে, কোনো কিছুতে থেমে নেই আমাদের কৃষি। নতুন নতুন উদ্যোগে উন্মোচন হচ্ছে এক একটি সম্ভাবনা। আমাদের উর্বরা মাটি, কৃষকের নিজস্ব উদ্ভাবনী জ্ঞান আর কর্মশক্তি মিলে এগিয়ে যেতে পারছি, বদলে দিতে পারছি কৃষিকে।
কৃষি এখন রূপান্তরিত হচ্ছে বাণিজ্যিকায়নে। কৃষক ছুটছেন বাণিজ্যিক লাভের আশায়। সারা বিশ্বে কৃষি হয়ে উঠেছে গতিশীল একটা পেশা, বিশেষ করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব যখন পড়ছে কৃষিতে।
শিল্পবিপ্লবের ইতিহাসে তিনটি বিপ্লবের কথা বলা হয়। ১৭৬০ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার মানুষকে এনে দেয় সহস্র বছরের গতি। ফলে উৎপাদন শিল্পে আসে আমূল পরিবর্তন। তৃতীয় শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয় ১৯৬০ সালে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভবের ফলে। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিভিন্ন শিল্প খাতে আনে অভাবনীয় পরিবর্তন। শিল্পের বিকাশে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি। কিন্তু যন্ত্র কি কৃষিতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেনি? ইতিহাস বলে লাঙলই ছিল কৃষির প্রথম যন্ত্র। পরে ধীরে ধীরে আধুনিক থেকে আধুনিকতর হয়েছে কৃষিযন্ত্র। এখন উন্নত কৃষি মানেই যন্ত্রনির্ভর কৃষি। জমি তৈরি থেকে ফসল বপন, ফসল তোলা, সংরক্ষণ—এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে যন্ত্রের ব্যবহার নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ধরন ও ধারণ। শুধু যন্ত্রই এখন শেষ কথা নয়। এই যন্ত্রের ব্যবহার স্বয়ংক্রিয় করে তোলাটিই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক প্রয়াস। ইউরোপের দেশগুলো খাদ্য-ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষে তারা এগিয়ে। জার্মানিতে কৃষকপর্যায়ে দেখেছি অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার। আর এই জার্মানিতেই সূচিত হয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারণা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবটি মূলত ডিজিটাল বিপ্লব। পূর্ববর্তী শিল্পবিপ্লবগুলোর ক্ষেত্রে মানুষ যন্ত্রকে পরিচালনা করছে; কিন্তু চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময়ে যন্ত্র নিজেই নিজেকে পরিচালনা করছে।
২০১৮ সালে চীনের শিনশিং কাউন্টির একটি গ্রামে কৃষকের খোঁজ করছিলাম। মাঠের পর মাঠ ফসল ফলে আছে, কিন্তু কৃষকের দেখা নেই। একটা মাঠে দেখলাম বিশাল এক ট্রাক্টর জমি চাষ করছে। ভাবলাম, যাহোক অবশেষে পাওয়া গেল কৃষকের সন্ধান। কিন্তু একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি সেই ট্রাক্টরে কোনো চালক নেই। বুঝতে পারলাম দূর থেকে রিমোটে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হচ্ছে এই যন্ত্র। কৃষিযন্ত্র উৎপাদনে চীন এগিয়েছে বহু পথ। প্রতিবছর চীনে অনুষ্ঠিত পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ কৃষিযন্ত্রের প্রদর্শনী জানান দেয়, গোটা পৃথিবী প্রতিনিয়ত প্রস্তুত হচ্ছে কৃষি তথা খাদ্য উৎপাদনের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়। পৃথিবীতে এযাবৎকালে যন্ত্র চলেছে মানুষের স্বয়ং উপস্থিতি ও পরিচালনায়। আজকের দিনে যন্ত্রকে দেওয়া হচ্ছে নিজে চালিত হওয়ার শক্তি। সেটিই বিজ্ঞানের আধুনিকতম উৎকর্ষ।
বিশ্বব্যাপীই কৃষির যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে পৃথিবী। কার চেয়ে কে কতটা উৎকর্ষ সাধন করতে পারে, চলছে সেই প্রতিযোগিতা। আমাদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বড় সাফল্যটি হিসাব করা হয় জমি কর্ষণে। পৃথিবীর প্রাচীনতম আবিষ্কার ভূমি কর্ষণের ক্ষেত্রে এখন থেকে শত বছর আগে এই ভূমিতে যে ট্রাক্টর এসেছিল, সেই জায়গায় আমরা শতভাগের কাছাকাছি ব্যবহার পূর্ণ করতে পেরেছি ধরে নেওয়া হয়। যদিও দুর্গম এমন অঞ্চলও রয়েছে যেখানে এখনো ট্রাক্টর পৌঁছায়নি। দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের চিত্র হলো জমি চাষে ৯৫ ভাগ, সেচব্যবস্থায় ৯৫, ফসল তোলা বা হারভেস্টে ১ দশমিক ৫, ধানমাড়াইয়ে ৯৫, রোপণে শূন্য দশমিক ৫ ভাগের কম। মূল সংকটের জায়গাটি এখানেই। ফসল উৎপাদন-পূর্ববর্তী যান্ত্রিকীকরণে যে অগ্রগতি অর্জন করেছি, উৎপাদন ও তার পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণে পিছিয়ে থাকায় আমাদের বিপুল পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে চীনের চাংসায় বসেছিল এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি যন্ত্রপাতির মেলা। কৃষি শিল্পায়নে প্রয়োজনীয় বিশালাকারের যন্ত্রপাতির পাশাপাশি মেলায় ছিল ক্ষুদ্র আকারে কৃষির জন্য নানা উপকরণ। এক্সপো সেন্টারের বিশাল প্রান্তরজুড়ে ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতির বিভিন্ন স্টল। ক্রেতা ঘুরে ঘুরে খুঁজে নিচ্ছেন নিজেদের প্রয়োজনীয় উপকরণ। কৃষি উৎপাদন তথা কৃষি অর্থনীতির বহুমুখী উন্নয়নের জন্য এই ধরনের আয়োজন নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। উন্নত দেশগুলোতে যন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া কৃষিকাজের কথা ভাবতেও পারে না। এ ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল কিংবা অনুন্নত দেশগুলো পিছিয়ে আছে নানা কারণে। তাই বিশাল এই প্রদর্শনীর অংশগ্রহণকারীদের কাছে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাজার। মেলায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অনেক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকারচারাল মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আলিমুল এহসান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘চীন সরকার নীতিসহায়তা দিয়ে যেভাবে তাদের কৃষিযন্ত্র উৎপাদন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তা আমাদের জন্য অনুসরণীয়।’
শুধু যন্ত্রপাতির প্রদর্শনীই নয়, মেলার অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আছে সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম। ক্ষুদ্র কৃষিযন্ত্রের প্রসারবিষয়ক এক সেমিনারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চিন্তকেরা অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য শুনে বুঝতে পারি সারা পৃথিবীই এখন নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদনের কথা ভাবছে। তাই ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতির চাহিদা বাড়ছে। বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের চাহিদাও। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই চীনের যন্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে।
এখন গোটা পৃথিবীই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে আমাদের দেশেও শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছেন কৃষিতে। কৃষিযন্ত্রের সঙ্গে আধুনিকতম প্রযুক্তি সংযুক্তির বিষয়ে কত দূর অগ্রসর হচ্ছে আমাদের স্থানীয় কোম্পানিগুলো, সে বিষয়েও কথা বলেছিলাম প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আলিমুল এহসান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন, কৃষি আর আগের মতো থাকছে না। যান্ত্রিকীকরণের উৎকর্ষই এই পরিবর্তনের জায়গাটি দখল করছে। এখানকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সেটি গভীরভাবেই বিবেচনায় আনতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জরুরি।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা পথ হাঁটলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কিংবা স্মার্ট কৃষির পথে আমাদের কোনো রকম অগ্রগতি নেই। নেই তেমন কোনো গবেষণা কিংবা প্রচেষ্টা। ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কৃষিতে আমাদের নিজস্ব অংশগ্রহণের প্রশ্নে আমাদের অবস্থান অনেক দূরে। এই দূরত্ব ঘুচিয়ে আনতে হবে। আগামীর পৃথিবী কৃষি বাণিজ্যের পৃথিবী। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে যান্ত্রিক কৃষিতে এগোতে না পারলে বিশ্ববাণিজ্যে এবারও আমাদের পিছিয়ে থাকতে হবে।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো আধুনিক প্রযুক্তিকে দ্রুত কাজে লাগাচ্ছে বাণিজ্যিক স্বার্থে। এর জন্য সুদূরপ্রসারী গবেষণা, মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি পরিস্থিতি মাথায় রেখে প্রস্তুত হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রস্তুত হচ্ছে চীন। এখানে সব মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিযন্ত্রের বিশাল একটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আমরা কৃষি যন্ত্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে এগিয়ে না যেতে পারলে শুধু ক্রেতা হিসেবেই আধুনিক প্রযুক্তির সুফল ভোগ করতে হবে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের প্রশ্নে সবার সমান অধিকার রয়েছে। এই অধিকার নিয়ে আমাদেরও শামিল হওয়া দরকার অত্যাধুনিক স্মার্ট কৃষির মিশনে। আসছে নতুন বছরটি হোক বাংলাদেশের প্রযুক্তি কৃষির প্রসারের।
শেষ হতে চলল আরও একটি বছর, ২০২৪। বাংলাদেশ তো বটেই, সারা পৃথিবীতে নানা পটপরিবর্তন ঘটেছে। নতুন প্রেক্ষাপটে নানা পরিবর্তনে রচিত হচ্ছে অর্থনৈতিক পরিমণ্ডল। যেকোনো পরিবর্তন কিংবা সংকটে, কোনো কিছুতে থেমে নেই আমাদের কৃষি। নতুন নতুন উদ্যোগে উন্মোচন হচ্ছে এক একটি সম্ভাবনা। আমাদের উর্বরা মাটি, কৃষকের নিজস্ব উদ্ভাবনী জ্ঞান আর কর্মশক্তি মিলে এগিয়ে যেতে পারছি, বদলে দিতে পারছি কৃষিকে।
কৃষি এখন রূপান্তরিত হচ্ছে বাণিজ্যিকায়নে। কৃষক ছুটছেন বাণিজ্যিক লাভের আশায়। সারা বিশ্বে কৃষি হয়ে উঠেছে গতিশীল একটা পেশা, বিশেষ করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রভাব যখন পড়ছে কৃষিতে।
শিল্পবিপ্লবের ইতিহাসে তিনটি বিপ্লবের কথা বলা হয়। ১৭৬০ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয়। বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যবহার মানুষকে এনে দেয় সহস্র বছরের গতি। ফলে উৎপাদন শিল্পে আসে আমূল পরিবর্তন। তৃতীয় শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হয় ১৯৬০ সালে তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভবের ফলে। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিভিন্ন শিল্প খাতে আনে অভাবনীয় পরিবর্তন। শিল্পের বিকাশে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি। কিন্তু যন্ত্র কি কৃষিতেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেনি? ইতিহাস বলে লাঙলই ছিল কৃষির প্রথম যন্ত্র। পরে ধীরে ধীরে আধুনিক থেকে আধুনিকতর হয়েছে কৃষিযন্ত্র। এখন উন্নত কৃষি মানেই যন্ত্রনির্ভর কৃষি। জমি তৈরি থেকে ফসল বপন, ফসল তোলা, সংরক্ষণ—এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে যন্ত্রের ব্যবহার নেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ধরন ও ধারণ। শুধু যন্ত্রই এখন শেষ কথা নয়। এই যন্ত্রের ব্যবহার স্বয়ংক্রিয় করে তোলাটিই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক প্রয়াস। ইউরোপের দেশগুলো খাদ্য-ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষে তারা এগিয়ে। জার্মানিতে কৃষকপর্যায়ে দেখেছি অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার। আর এই জার্মানিতেই সূচিত হয়েছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধারণা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবটি মূলত ডিজিটাল বিপ্লব। পূর্ববর্তী শিল্পবিপ্লবগুলোর ক্ষেত্রে মানুষ যন্ত্রকে পরিচালনা করছে; কিন্তু চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময়ে যন্ত্র নিজেই নিজেকে পরিচালনা করছে।
২০১৮ সালে চীনের শিনশিং কাউন্টির একটি গ্রামে কৃষকের খোঁজ করছিলাম। মাঠের পর মাঠ ফসল ফলে আছে, কিন্তু কৃষকের দেখা নেই। একটা মাঠে দেখলাম বিশাল এক ট্রাক্টর জমি চাষ করছে। ভাবলাম, যাহোক অবশেষে পাওয়া গেল কৃষকের সন্ধান। কিন্তু একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি সেই ট্রাক্টরে কোনো চালক নেই। বুঝতে পারলাম দূর থেকে রিমোটে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হচ্ছে এই যন্ত্র। কৃষিযন্ত্র উৎপাদনে চীন এগিয়েছে বহু পথ। প্রতিবছর চীনে অনুষ্ঠিত পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ কৃষিযন্ত্রের প্রদর্শনী জানান দেয়, গোটা পৃথিবী প্রতিনিয়ত প্রস্তুত হচ্ছে কৃষি তথা খাদ্য উৎপাদনের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়। পৃথিবীতে এযাবৎকালে যন্ত্র চলেছে মানুষের স্বয়ং উপস্থিতি ও পরিচালনায়। আজকের দিনে যন্ত্রকে দেওয়া হচ্ছে নিজে চালিত হওয়ার শক্তি। সেটিই বিজ্ঞানের আধুনিকতম উৎকর্ষ।
বিশ্বব্যাপীই কৃষির যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে পৃথিবী। কার চেয়ে কে কতটা উৎকর্ষ সাধন করতে পারে, চলছে সেই প্রতিযোগিতা। আমাদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বড় সাফল্যটি হিসাব করা হয় জমি কর্ষণে। পৃথিবীর প্রাচীনতম আবিষ্কার ভূমি কর্ষণের ক্ষেত্রে এখন থেকে শত বছর আগে এই ভূমিতে যে ট্রাক্টর এসেছিল, সেই জায়গায় আমরা শতভাগের কাছাকাছি ব্যবহার পূর্ণ করতে পেরেছি ধরে নেওয়া হয়। যদিও দুর্গম এমন অঞ্চলও রয়েছে যেখানে এখনো ট্রাক্টর পৌঁছায়নি। দেশের কৃষি যান্ত্রিকীকরণের চিত্র হলো জমি চাষে ৯৫ ভাগ, সেচব্যবস্থায় ৯৫, ফসল তোলা বা হারভেস্টে ১ দশমিক ৫, ধানমাড়াইয়ে ৯৫, রোপণে শূন্য দশমিক ৫ ভাগের কম। মূল সংকটের জায়গাটি এখানেই। ফসল উৎপাদন-পূর্ববর্তী যান্ত্রিকীকরণে যে অগ্রগতি অর্জন করেছি, উৎপাদন ও তার পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণে পিছিয়ে থাকায় আমাদের বিপুল পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে চীনের চাংসায় বসেছিল এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি যন্ত্রপাতির মেলা। কৃষি শিল্পায়নে প্রয়োজনীয় বিশালাকারের যন্ত্রপাতির পাশাপাশি মেলায় ছিল ক্ষুদ্র আকারে কৃষির জন্য নানা উপকরণ। এক্সপো সেন্টারের বিশাল প্রান্তরজুড়ে ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতির বিভিন্ন স্টল। ক্রেতা ঘুরে ঘুরে খুঁজে নিচ্ছেন নিজেদের প্রয়োজনীয় উপকরণ। কৃষি উৎপাদন তথা কৃষি অর্থনীতির বহুমুখী উন্নয়নের জন্য এই ধরনের আয়োজন নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। উন্নত দেশগুলোতে যন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া কৃষিকাজের কথা ভাবতেও পারে না। এ ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল কিংবা অনুন্নত দেশগুলো পিছিয়ে আছে নানা কারণে। তাই বিশাল এই প্রদর্শনীর অংশগ্রহণকারীদের কাছে বাংলাদেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাজার। মেলায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অনেক উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকারচারাল মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারাস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আলিমুল এহসান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘চীন সরকার নীতিসহায়তা দিয়ে যেভাবে তাদের কৃষিযন্ত্র উৎপাদন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তা আমাদের জন্য অনুসরণীয়।’
শুধু যন্ত্রপাতির প্রদর্শনীই নয়, মেলার অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আছে সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম। ক্ষুদ্র কৃষিযন্ত্রের প্রসারবিষয়ক এক সেমিনারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চিন্তকেরা অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য শুনে বুঝতে পারি সারা পৃথিবীই এখন নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদনের কথা ভাবছে। তাই ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতির চাহিদা বাড়ছে। বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রের চাহিদাও। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই চীনের যন্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে।
এখন গোটা পৃথিবীই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে আমাদের দেশেও শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছেন কৃষিতে। কৃষিযন্ত্রের সঙ্গে আধুনিকতম প্রযুক্তি সংযুক্তির বিষয়ে কত দূর অগ্রসর হচ্ছে আমাদের স্থানীয় কোম্পানিগুলো, সে বিষয়েও কথা বলেছিলাম প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আলিমুল এহসান চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন, কৃষি আর আগের মতো থাকছে না। যান্ত্রিকীকরণের উৎকর্ষই এই পরিবর্তনের জায়গাটি দখল করছে। এখানকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সেটি গভীরভাবেই বিবেচনায় আনতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া জরুরি।
কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা পথ হাঁটলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কিংবা স্মার্ট কৃষির পথে আমাদের কোনো রকম অগ্রগতি নেই। নেই তেমন কোনো গবেষণা কিংবা প্রচেষ্টা। ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কৃষিতে আমাদের নিজস্ব অংশগ্রহণের প্রশ্নে আমাদের অবস্থান অনেক দূরে। এই দূরত্ব ঘুচিয়ে আনতে হবে। আগামীর পৃথিবী কৃষি বাণিজ্যের পৃথিবী। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে যান্ত্রিক কৃষিতে এগোতে না পারলে বিশ্ববাণিজ্যে এবারও আমাদের পিছিয়ে থাকতে হবে।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো আধুনিক প্রযুক্তিকে দ্রুত কাজে লাগাচ্ছে বাণিজ্যিক স্বার্থে। এর জন্য সুদূরপ্রসারী গবেষণা, মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি পরিস্থিতি মাথায় রেখে প্রস্তুত হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রস্তুত হচ্ছে চীন। এখানে সব মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিযন্ত্রের বিশাল একটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। আমরা কৃষি যন্ত্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে এগিয়ে না যেতে পারলে শুধু ক্রেতা হিসেবেই আধুনিক প্রযুক্তির সুফল ভোগ করতে হবে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান-বিজ্ঞান অর্জনের প্রশ্নে সবার সমান অধিকার রয়েছে। এই অধিকার নিয়ে আমাদেরও শামিল হওয়া দরকার অত্যাধুনিক স্মার্ট কৃষির মিশনে। আসছে নতুন বছরটি হোক বাংলাদেশের প্রযুক্তি কৃষির প্রসারের।
‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে— নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে?’—বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ গানটি লিখেছিলেন শিশুদের স্বাধীনতার আনন্দে উদ্বেলিত করে মানসিক স্বাস্থ্য গঠনের জন্য। খুবই সুন্দর সুর ও ছন্দে গানটি গাওয়া হচ্ছে শত বছর যাবৎ।
১৫ ঘণ্টা আগেপশ্চিম বাংলার স্থানীয় বাঙালিরা পূর্ববঙ্গীয়দের সম্পর্কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য মনোভাব পোষণ করতেন। তার নজির আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জেনেছি। বহু আগে থেকে কলকাতাসহ ভারত ভ্রমণের ফলে কিছু ব্যক্তির সঙ্গে আলাপে তাঁদের মনোভাব জেনেছি। করোনার আগে শান্তিপুর লোকাল ট্রেনে ফুলিয়া থেকে শিয়ালদহ ফেরার পথে শান্তিপুরের স
১৫ ঘণ্টা আগেআমাদের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা ও বিদেশমুখিতা নিয়ে আজকের পত্রিকায় ২২ ডিসেম্বর, রোববার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘চিকিৎসাসেবায় বিদেশমুখিতা: আমাদের উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে ২১ ডিসেম্বর। সেই আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে দেশের চিকিৎসা
১৫ ঘণ্টা আগেতথ্যের অফুরন্ত ভান্ডার থাকা সত্ত্বেও আজ লেখাটির ইতি টানব। আশা করব, ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্মের কেউ একজন আমার হাত থেকে রিলে রেসের ব্যাটনটি তুলে নেবেন এবং ইতিহাসের এই স্বল্প আলোকপাত করা বিষয়টি নিয়ে গভীর গবেষণা করবেন।
২ দিন আগে